যদিও শোকার্ত, কিন্তু আমরা আশাহত নই
“আমরা চাহি না যে, যাহারা নিদ্রাগত হয়, তাহাদের বিষয়ে তোমরা অজ্ঞাত থাক; যেন যাহাদের প্রত্যাশা নাই, সেই অন্য সকল লোকের মত তোমরাও দুঃখার্ত্ত না হও।”—১ থিষলনীকীয় ৪:১৩.
১. নিয়মিতভাবে মানবজাতি কোন্ অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়ে থাকে?
আপনি কি আপনার কোন প্রিয়জনকে মৃত্যুতে হারিয়েছেন? বয়স ব্যতিরেকে, আমরা সকলেই প্রায় আত্মীয় অথবা বন্ধুর মৃত্যুতে দুঃখিত হয়েছি। হতে পারে আমাদের পিতামহ-মাতামহী, পিতা অথবা মাতা, আমাদের সাথী অথবা আমাদের সন্তান। বার্দ্ধক্য, রোগ এবং দুর্ঘটনার দ্বারা প্রায়ই মৃত্যু ঘটে থাকে। অপরাধ, দৌরাত্ম্য ও যুদ্ধ আমাদের যাতনা আর শোককে আরও বাড়িয়ে তোলে। প্রতি বছর সমগ্র পৃথিবীতে, গড়ে প্রায় পাঁচ কোটির বেশি লোক মারা যায়। ১৯৯৩ সালে দৈনিক গড় ছিল ১,৪০,২৫০ জন। মৃত্যুর এই সঙ্কেত ধ্বনি বন্ধুদের এবং পরিবারকে প্রভাবিত করে, আর হারানোর এই অনুভূতি অত্যন্ত গভীর হয়ে ওঠে।
২. শিশুদের মৃত্যুর মধ্যে অস্বাভাবিক ব্যপারটি কীড়ঢ়?
২ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের, ক্যালিফর্নিয়ার এক বাবা-মায়ের প্রতি কি আমাদের সহানুভূতি জেগে ওঠে না যারা তাদের একমাত্র গর্ভবতী মেয়েকে একটি গাড়ির দুর্ঘটনায় মর্মান্তিকভাবে হারায়? এক ধাক্কায়, তারা তাদের একমাত্র মেয়ে ও তার শিশুটি যেটি তাদের প্রথম নাতি বা নাতনি হত তাকে হারায়। যে ব্যক্তিটি মৃত্যুর শিকার হয়, তার স্বামী নিজের স্ত্রী ও তার প্রথম ছেলে বা মেয়েকে হারায়। পিতামাতার পক্ষে তাদের সন্তান, ছোট বা বড় যাই হোক না কেন, তাকে হারানো এক অত্যন্ত অস্বাভাবিক ব্যাপার। তাদের পিতামাতার মৃত্যুর আগে কোন শিশুর মৃত্যু হওয়াটা কোন স্বাভাবিক বিষয় নয়। আমরা প্রত্যেকেই জীবনকে ভালবাসি। অতএব, মৃত্যু হল এক প্রকৃত শত্রু।—১ করিন্থীয় ১৫:২৬.
মৃত্যু মানব পরিবারে প্রবেশ করে
৩. হেবলের মৃত্যু সম্ভবত কিভাবে আদম ও হবাকে প্রভাবিত করেছিল?
৩ মানব ইতিহাসের প্রায় ছয় হাজার বছর ধরে পাপ ও মৃত্যু রাজা হিসাবে রাজত্ব করে চলেছে, বিশেষ করে যখন থেকে আমাদের প্রথম মানব পিতামাতা আদম ও হবা বিদ্রোহ করে। (রোমীয় ৫:১৪; ৬:১২, ২৩) বাইবেল আমাদের জানায় না যে তারা কিধরনের প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল যখন তাদের পুত্র সন্তান হেবল তার ভাই কয়িনের দ্বারা নিহত হয়। এটা অবশ্যই তাদের জন্য মর্মান্তিক অভিজ্ঞতার এক একাধিক কারণ ছিল। এখানে, তারা প্রথম মনুষ্য মৃত্যুর সম্মুখীন হয় যা তারা তাদের নিজের সন্তানের মুখে প্রতিফলিত হতে দেখে। তারা নিজেদের বিদ্রোহ এবং ক্রমাগতভাবে স্বাধীন ইচ্ছার অপব্যবহারের ফল দেখতে পায়। কয়িন, ঈশ্বরের কাছ থেকে সতর্কবাণী পাওয়া সত্ত্বেও প্রথম ভ্রাতৃঘাতক হয়। আমরা জানি যে হবা নিশ্চয়ই হেবলের মৃত্যুতে গভীরভাবে প্রভাবিত হয়েছিল কারণ যখন সে শেথের জন্ম দেয় তখন সে বলেছিল: “কয়িন কর্ত্তৃক হত হেবলের পরিবর্ত্তে ঈশ্বর আমাকে আর এক সন্তান দিলেন।”—আদিপুস্তক ৪:৩-৮, ২৫.
৪. হেবলের মৃত্যুর পর আত্মার অমরত্বমূলক কল্পনা কেন সান্ত্বনার বিষয় হতে পারেনি?
৪ আমাদের প্রথম মানব পিতামাতাও তাদের উপরে দেওয়া ঈশ্বরের দন্ডাজ্ঞার বাস্তবতাকে প্রত্যক্ষ করে—এইভাবে যে তারা যদি বিদ্রোহী ও অবাধ্য হয় তাহলে তারা “অবশ্যই মরিবে।” শয়তানের মিথ্যা কথা বলা সত্ত্বেও, তখনও আপাতদৃষ্টিতে আত্মার অমরত্ব সম্বন্ধীয় যে কল্পনা তার উদ্ভব হয়নি, তাই তারা এর থেকে কোন মিথ্যা সান্ত্বনা পেতে পারেনি। ঈশ্বর আদমকে বলেছিলেন: “তুমি মৃত্তিকায় প্রতিগমন. . .তুমি ত তাহা হইতেই গৃহীত হইয়াছ; কেননা তুমি ধূলি এবং ধূলিতে প্রতিগমন করিবে।” তিনি কোন অমর আত্মা হিসাবে স্বর্গে, নরকে, বিস্মৃত অবস্থা, সূচাগ্নীতে অথবা অন্য কোন স্থানে ভবিষ্যৎ অস্তিত্বের কথা উল্লেখ করেননি। (আদিপুস্তক ২:১৭; ৩:৪, ৫, ১৯) জীবিত প্রাণ যারা পাপ করে, আদম ও হবার পরিশেষে মৃত্যু হবে এবং তারা অস্তিত্বহীনতায় চলে যাবে। রাজা শলোমন অনুপ্রাণিত হয়ে লিখেছিলেন: “জীবিত লোকেরা জানে যে তাহারা মরিবে; কিন্তু মৃতেরা কিছুই জানে না, এবং তাহাদের আর কোন ফলও হয় না, কারণ লোকে তাহাদের বিষয় ভুলিয়া গিয়াছে। তাহাদের প্রেম, তাহাদের দ্বেষ ও তাহাদের ঈর্ষা সকলই বিনষ্ট হইয়া গিয়াছে; সূর্য্যের নীচে যে কোন কার্য্য করা যায়, তাহাতে কোন কালেও তাহাদের আর কোন অধিকার হইবে না।”—উপদেশক ৯:৫, ৬.
৫. মৃতদের জন্য প্রকৃত আশা কী?
৫ ওই বাক্যগুলি কতই না সত্য! বস্তুতপক্ষে, দুশো বা তিনশো বছর আগে জীবিত পূর্বপুরুষদের কথা কে মনে রাখে? প্রায়ই এমনকি তাদের কবরস্থানটি পর্যন্ত অজ্ঞেয় অথবা উপেক্ষিত পড়ে থাকে। এর অর্থ কি এই যে আমাদের প্রিয় মৃতজনদের জন্য কোন আশা নেই? না কখনই তা নয়। মার্থা, যীশুকে তার মৃত ভাই লাসার সম্বন্ধে বলেছিলেন: “আমি জানি, শেষ দিনে পুনরুত্থানে সে উঠিবে।” (যোহন ১১:২৪) ইব্রীয় লোকেরা বিশ্বাস করত যে ভবিষ্যৎ কালে ঈশ্বর মৃতদের পুনরুত্থিত করবেন। কিন্তু, তা তাদের প্রিয় মৃতজনদের হারানোর ব্যথায় শোকার্ত হওয়া থেকে থামাতে পারে নি।—ইয়োব ১৪:১৩.
বিশ্বস্ত পুরুষ ও নারীরা যারা শোক প্রকাশ করেছিলেন
৬, ৭. অব্রাহাম ও যাকোব মৃত্যুর প্রতি কিধরনের প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন?
৬ প্রায় চার হাজার বছর আগে, যখন অব্রাহামের স্ত্রী সারার মৃত্যু হয়, তখন “অব্রাহাম সারার নিমিত্তে শোক ও রোদন করিতে আসিলেন।” ঈশ্বরের সেই বিশ্বস্ত দাস তার প্রিয় ও বিশ্বস্ত স্ত্রীকে হারানোর জন্য গভীর অনুভূতি প্রকাশ করেছিলেন। যদিও তিনি এক সাহসী ও কর্মঠ ব্যক্তি ছিলেন, তবুও শোক হেতু চোখের জল ফেলতে তিনি লজ্জাবোধ করেননি।—আদিপুস্তক ১৪:১১-১৬; ২৩:১, ২.
৭ যাকোবের ক্ষেত্রটিও ঠিক একই ধরনের। যখন তাকে ছলনাপূর্বক বুঝানো হয়েছিল যে তার পুত্র যোষেফ বন্য পশুর দ্বারা হত হয়েছে, তখন তিনি কিধরনের প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন? আমরা আদিপুস্তক ৩৭:৩৪, ৩৫ পদে পড়ি: “তখন যাকোব আপন বস্ত্র চিরিয়া কটিদেশে চট পরিধান করিয়া পুত্ত্রের জন্য অনেক দিন পর্য্যন্ত শোক করিলেন। আর তাঁহার সমস্ত পুত্ত্রকন্যা উঠিয়া তাঁহাকে সান্ত্বনা করিতে যত্ন করিলেও তিনি প্রবোধ না মানিয়া কহিলেন, আমি শোক করিতে করিতে পুত্ত্রের নিকটে পাতালে নামিব। এইরূপে তাহার পিতা তাহার জন্য রোদন করিলেন।” হ্যাঁ, প্রিয়জন যখন মারা যায় তখন তার জন্য শোক প্রকাশ করা হল মনুষ্যত্বের প্রকাশ ও একটি স্বাভাবিক ব্যাপার।
৮. ইব্রীয়রা প্রায়ই কিভাবে তাদের শোক প্রকাশ করত?
৮ অনেকে হয়ত ভাবতে পারে যে আধুনিক অথবা স্থানীয় মান অনুসারে, যাকোবের এই প্রতিক্রিয়াটি ছিল অতিরঞ্জিত এবং অতিনাটকীয়। কিন্তু তিনি ছিলেন এক ভিন্ন সময় ও সাংস্কৃতির প্রজন্ম। তার শোকের প্রকাশ—অর্থাৎ চট পরিধান করা—এই অভ্যাসটি প্রথম বাইবেলে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু, ইব্রীয় শাস্ত্রাবলিতে যেমন বর্ণনা করা হয়েছে, শোকের প্রকাশ রোদন, স্তোত্র লেখা এবং এমনকি ছাইয়ের মধ্যে অবস্থান করার মাধ্যমেও করা হত। বস্তুতপক্ষে, ইব্রীয়রা তাদের আন্তরিক শোক প্রকাশকে দমিয়ে রাখত না।a—যিহিষ্কেল ২৭:৩০-৩২; আমোষ ৮:১০.
যীশুর সময় শোক প্রকাশ
৯, ১০ (ক) লাসারের মৃত্যুর প্রতি যীশু কিধরনের প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন? (খ) যীশুর এই প্রতিক্রিয়া তাঁর সম্বন্ধে আমাদের কী জানায়?
৯ যীশুর প্রাথমিক শিষ্যদের সম্বন্ধে আমরা কী বলতে পারি? উদাহরণস্বরূপ, যখন লাসারের মৃত্যু হয় তখন তার বোনেরা অর্থাৎ মার্থা ও মরিয়ম তার মৃত্যুতে শোক এবং রোদন করেছিলেন। সেই স্থানে সিদ্ধ মানুষ যীশু যখন উপস্থিত হন তখন তিনি কিধরনের প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন? যোহনের বিবরণ জানায়: “যীশু যেখানে ছিলেন, মরিয়ম যখন সেখানে আসিলেন, তখন তাঁহাকে দেখিয়া তাঁহার চরণে পড়িয়া বলিলেন, প্রভু, অপনি যদি এখানে থাকিতেন, আমার ভাই মরিত না। যীশু যখন দেখিলেন, তিনি রোদন করিতেছেন, ও তাঁহার সঙ্গে সঙ্গে যে যিহূদীরা আসিয়াছিল, তাহারাও রোদন করিতেছে, তখন আত্মাতে উত্তেজিত হইয়া উঠিলেন ও উদ্বিগ্ন হইলেন, আর কহিলেন, তাহাকে কোথায় রাখিয়াছ? তাঁহারা কহিলেন, প্রভু আসিয়া দেখুন। যীশু কাঁদিলেন।”—যোহন ১১:৩২-৩৫.
১০ “যীশু কাঁদিলেন।” ওই কয়েকটি বাক্য যীশুর মনুষ্যত্ব, দয়া, অনুভূতির সম্বন্ধে অনেক কিছু বলে। যদিও পুনরুত্থানের আশা সম্বন্ধে তিনি সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিত ছিলেন, তবুও “যীশু কাঁদিলেন।” (যোহন ১১:৩৫, কিং জেমস ভারসান) বিবরণটি বলে যে প্রত্যক্ষদর্শীরা মন্তব্য করেছিল: “দেখ, ইনি [লাসারকে] কেমন ভাল বাসিতেন।” অবশ্যই, এক সিদ্ধ মানুষ হয়েও যদি যীশু তাঁর বন্ধুকে হারানোর জন্য রোদন করে থাকেন, তাহলে আজকের দিনে যদি কোন পুরুষ বা নারী শোক ও রোদন করে, তাহলে তা কোন লজ্জার বিষয় নয়।—যোহন ১১:৩৬.
মৃতদের জন্য কী আশা?
১১. (ক) শোক সম্বন্ধে বাইবেলে দেওয়া উদাহরণগুলির থেকে আমরা কী শিখতে পারি? (খ) যাদের কোন আশা নেই তাদের মত আমরা কেন শোক প্রকাশ করি না?
১১ বাইবেলের এই উদাহরণগুলি থেকে আমরা কী শিখতে পারি? আমরা এটাই শিখি যে শোক করা হল মানবিক এবং স্বাভাবিক আর আমাদের এই শোককে প্রকাশ করতে আমরা যেন লজ্জা না পাই। এমনকি পুনরুত্থানের আশা থাকা সত্ত্বেও, প্রিয়জনের মৃত্যু হল একটা বিরাট ক্ষতি যা গভীরভাবে অনুভূত হয়। বছরের পর বছর, হয়ত বা দশকের পর দশক ধরে এক নিবিড় সম্পর্ক ও সহচার্য হঠাৎ করে এবং মর্মান্তিকভাবে শেষ হয়ে যায়। এটা সত্যি, যে আমরা সেইরকমভাবে শোক প্রকাশ করি না যেভাবে সেই সব ব্যক্তিরা শোক প্রকাশ করে যাদের কোন আশা নেই অথবা যাদের মিথ্যা আশাগুলি আছে। (১ থিষলনীকীয় ৪:১৩) এছাড়াও, আমরা কোন কল্পনার দ্বারা বিভ্রান্ত হই না যে মানুষের অমর আত্মা রয়েছে অথবা সে অন্য কোন এক দেহ ধারণ করে অস্তিত্বে আছে। আমরা জানি যে যিহোবা প্রতিজ্ঞা করেছেন ‘নূতন আকাশমন্ডলের ও নূতন পৃথিবীর যেখানে ধার্মিকতা বসতি করে।’ (২ পিতর ৩:১৩) ঈশ্বর “[আমাদের] সমস্ত নেত্রজল মুছাইয়া দিবেন; এবং মৃত্যু আর হইবে না; শোক বা আর্ত্তনাদ বা ব্যথাও আর হইবে না; কারণ প্রথম বিষয় সকল লুপ্ত হইল।”—প্রকাশিত বাক্য ২১:৪.
১২. পৌল কিভাবে পুনরুত্থানের প্রতি তার বিশ্বাস প্রদর্শন করেছিলেন?
১২ যারা মারা গেছে তাদের জন্য কী আশা আছে?b আমাদের সান্ত্বনা ও আশা দেওয়ার জন্য খ্রীষ্টীয় লেখক পৌল অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন যখন তিনি লিখেছিলেন: “শেষ শত্রু যে মৃত্যু, সেও বিলুপ্ত হইবে।” (১ করিন্থীয় ১৫:২৬) দ্যা নিউ ইংলিশ বাইবেল জানায়: “শেষ শত্রু যে ধ্বংস হবে সে হল মৃত্যু।” পৌল কেন এই বিষয়ে এতটা নিশ্চিত ছিলেন? কারণ তিনি সেই ব্যক্তির দ্বারা ধর্মান্তরিত ও শিক্ষিত হয়েছিলেন অর্থাৎ যীশু খ্রীষ্ট যিনি মৃত্যুর থেকে পুনরুত্থিত হয়েছিলেন। (প্রেরিত ৯:৩-১৯) এটাও একটি কারণ যার জন্য পৌল বলতে পেরেছিলেন: “মনুষ্য [আদম] দ্বারা যখন মৃত্যু আসিয়াছে, তখন আবার মনুষ্য [যীশু] দ্বারা মৃতগণের পুনরুত্থান আসিয়াছে। কারণ আদমে যেমন সকলে মরে, তেমনি আবার খ্রীষ্টেই সকলে জীবনপ্রাপ্ত হইবে।”—১ করিন্থীয় ১৫:২১, ২২.
১৩. প্রত্যক্ষদর্শীরা লাসারের পুনরুত্থানের প্রতি কিধরনের প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল?
১৩ ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে যীশুর শিক্ষা আমাদের অনেক সান্ত্বনা ও আশা দেয়। উদাহরণস্বরূপ, লাসারের ক্ষেত্রে তিনি কী করেছিলেন? তিনি সেই কবরে যান যেখানে লাসারের দেহ চার দিন যাবৎ পড়ে ছিল। তিনি প্রার্থনা করলেন, “ইহা বলিয়া তিনি উচ্চরবে ডাকিয়া বলিলেন, লাসার, বাহিরে আইস। তাহাতে সেই মৃত ব্যক্তি বাহিরে আসিলেন; তাঁহার চরণ ও হস্ত কবর-বস্ত্রে বদ্ধ ছিল, এবং মুখ গামছায় বাঁধা ছিল। যীশু তাহাদিগকে কহিলেন, ইহাকে খুলিয়া দেও, ও যাইতে দেও।” আপনি মার্থা ও মরিয়মের মুখে যে আশ্চর্য ও আনন্দ প্রকাশ পেয়েছিল তা কি কল্পনা করতে পারছেন? প্রতিবেশীরা যখন এই অলৌকিক ঘটনাটি দেখেছিল তখন তারা কতই না আশ্চর্যান্বিত হয়েছিল! এটা কোন অবাক হওয়ার বিষয় নয় যে অনেক প্রত্যক্ষদর্শীরা যীশুর উপর বিশ্বাস স্থাপন করেছিল। কিন্তু, তাঁর ধর্মীয় শত্রুরা, “তাঁহাকে বধ করিবার মন্ত্রণা করিতে লাগিল।”—যোহন ১১:৪১-৫৩.
১৪. লাসারের পুনরুত্থান কিসের পূর্বাভাস ছিল?
১৪ যীশু অনেক প্রত্যক্ষদর্শীর সামনে এই অভূতপূর্ব পুনরুত্থান করেছিলেন। এটি ছিল ভবিষ্যৎ পুনরুত্থানের একটি পূর্বাভাসমাত্র যার বিষয় তিনি একসময়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, যখন তিনি বলেন: “ইহাতে আশ্চর্য্য মনে করিও না; কেননা এমন সময় আসিতেছে, যখন কবরস্থ সকলে তাঁহার রব শুনিবে, এবং যাহারা সৎকার্য্য করিয়াছে, তাহারা জীবনের পুনরুত্থানের জন্য, ও যাহারা অসৎকার্য্য করিয়াছে, তাহারা বিচারের পুনরুত্থানের জন্য বাহির হইয়া আসিবে।”—যোহন ৫:২৮, ২৯.
১৫. যীশুর পুনরুত্থান সম্বন্ধে পৌল ও অননিয়ের কাছে কিধরনের প্রমাণ ছিল?
১৫ আগে যেমন উল্লেখ করা হয়েছে প্রেরিত পৌল পুনরুত্থানে বিশ্বাস করতেন। কিসের ভিত্তিতে? পূর্বে তিনি ছিলেন এক কুখ্যাত শৌল, খ্রীষ্টানদের তাড়নাকারী। তার নাম ও পরিচয় বিশ্বাসীদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি করত। যাই হোক না কেন, তিনি কি সেই ব্যক্তি ছিলেন না যিনি খ্রীষ্টীয় শহীদ স্টিফানকে পাথর ছুড়ে হত্যা করার পক্ষে সমর্থন জানিয়েছিলেন? (প্রেরিত ৮:১; ৯:১, ২, ২৬) কিন্তু দম্মেশকের পথে যাওয়ার সময়, পুনরুত্থিত যীশু তাকে সচেতনতায় ফিরিয়ে আনেন এবং সাময়িকভাবে তাকে অন্ধ করে দেন। শৌল একটি কন্ঠস্বর শোনেন যা তার কাছে বলে: “শৌল, শৌল, কেন আমাকে তাড়না করিতেছ? তিনি কহিলেন, প্রভু, আপনি কে? প্রভু কহিলেন, আমি যীশু, যাঁহাকে তুমি তাড়না করিতেছ।” সেই একই পুনরুত্থিত যীশু অননিয়, যিনি দম্মেশকে বাস করতেন, তাকে আদেশ দেন সেই গৃহে, যেখানে শৌল প্রার্থনা করছিলেন সেখানে যেতে এবং তার দৃষ্টি ফিরিয়ে দিতে। তাই, ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার পরিপ্রেক্ষিতে শৌল এবং অননিয় উভয়েরই পুনরুত্থানে বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ ছিল।—প্রেরিত ৯:৪, ৫, ১০-১২.
১৬, ১৭. (ক) আমরা কিভাবে জানতে পারি যে পৌল গ্রীকদের বংশপরাম্পরাগত আত্মার অমরত্বে বিশ্বাস করতেন না? (খ) বাইবেল কিধরনের দৃঢ় আশা দিয়ে থাকে? (ইব্রীয় ৬:১৭-২০)
১৬ লক্ষ্য করুন যে শৌল, অর্থাৎ প্রেরিত পৌল কিভাবে উত্তর দিয়েছিলেন যখন তাড়িত খ্রীষ্টান হিসাবে তাকে রাজ্যপাল ফীলিক্সের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। আমরা প্রেরিত ২৪:১৫ পদে পড়ি: “আমি ঈশ্বরে এই প্রত্যাশা করিতেছি যে, ধার্ম্মিক অধার্ম্মিক উভয় প্রকার লোকের পুনরুত্থান হইবে।” পৌল কোন পৌত্তলিক গ্রীক মতবাদ অনুসারে সংলগ্নিত মানব আত্মার অমরত্ব যা আপাতদৃষ্টিতে কাল্পনিক পরবর্তী জীবনে অথবা পৃথিবীর কোন নিম্নস্থ জগতে বেঁচে থাকবে, এটা বিশ্বাস করতেন না। তিনি পুনরুত্থানে বিশ্বাস করতেন আর তার উপর বিশ্বাস স্থাপন সম্বন্ধে শিক্ষা দিতেন। এর অর্থ কিছু লোকের জন্য স্বর্গে খ্রীষ্টের সাথে আত্মিক প্রাণী হিসাবে অমরত্ব লাভ করা আর অধিকাংশের জন্য সিদ্ধ পৃথিবীতে জীবন ফিরে পাওয়া।—লূক ২৩:৪৩; ১ করিন্থীয় ১৫:২০-২২, ৫৩, ৫৪; প্রকাশিত বাক্য ৭:৪, ৯, ১৭; ১৪:১, ৩.
১৭ অতএব বাইবেল আমাদের কাছে স্পষ্ট প্রতিজ্ঞা করে এবং দৃঢ় আশা প্রদান করে যে পুনরুত্থানের মাধ্যমে, অনেকে তাদের প্রিয়জনদের আবার এই পৃথিবীতে অথচ এক ভিন্ন পরিস্থিতিতে দেখতে পাবে।—২ পিতর ৩:১৩; প্রকাশিত বাক্য ২১:১-৪.
শোকসন্তপ্ত ব্যক্তিদের জন্য বাস্তবধর্মী সাহায্য
১৮. (ক) “ঈশ্বরীয় ভয়” জেলা সম্মেলনগুলিতে কিধরনের সাহায্যকারী বস্তু প্রকাশিত হয়েছিল? (বাক্সটি দেখুন।) (খ) এখন কোন্ প্রশ্নগুলির উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন আছে?
১৮ এখন আমাদের সাথে রয়েছে সেই স্মৃতিগুলি আর তার সাথে আমাদের শোক। এই শোকসন্তপ্ত কঠিন মুহূর্তগুলিকে কাটিয়ে ওঠার জন্য আমরা কী করতে পারি? যারা শোকার্ত তাদের সাহায্য করার জন্য অন্যেরা কী করতে পারে? এছাড়াও ক্ষেত্র পরিচর্যায়, যে সব সহৃদয় ব্যক্তিদের সাথে আমাদের দেখা হয় যাদের প্রকৃত কোন আশা নেই অথচ যারা শোকার্ত, তাদের সাহায্য করার জন্য আমরা কী করতে পারি? আর বাইবেল থেকে আমরা কিধরনের সান্ত্বনা পেতে পারি বিশেষ করে সেই সব প্রিয় ব্যক্তিদের সম্বন্ধে যারা মৃত্যুতে ঘুমিয়ে আছে? পরবর্তী প্রবন্ধটি এই বিষয়ে কিছু প্রস্তাব দেবে।
[পাদটীকাগুলো]
a বাইবেলের সময় শোক সম্বন্ধে আরও তথ্য পাওয়ার জন্য, ওয়াচটাওয়ার বাইবেল অ্যান্ড ট্র্যাক্ট সোসাইটি অফ নিউ ইয়র্ক, ইনক. দ্বারা প্রকাশিত শাস্ত্রের প্রতি অন্তর্দৃষ্টি (ইংরাজি), খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৪৪৬-৭ দেখুন।
b বাইবেলে পুনরুত্থানের আশা সম্বন্ধে আরও তথ্য পাওয়ার জন্য, শাস্ত্রের প্রতি অন্তর্দৃষ্টি, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৭৮৩-৯৩ দেখুন।
আপনি কি উত্তর দিতে পারবেন?
◻ কেন বলা যেতে পারে যে মৃত্যু হল এক শত্রু?
◻ বাইবেলের সময় ঈশ্বরের দাসেরা কিভাবে তাদের শোক প্রকাশ করত?
◻ প্রিয়জন যারা মারা গিয়েছে তাদের জন্য কী আশা আছে?
◻ পুনরুত্থানে বিশ্বাস করা পৌলের কোন্ দৃঢ় কারণ ছিল?
[৮, ৯ পৃষ্ঠার বাক্স]
শোকার্ত ব্যক্তিদের জন্য বাস্তবধর্মী সাহায্য
১৯৯৪-৯৫ সালে অনুষ্ঠিত “ঈশ্বরীয় ভয়” সম্মেলনে, ওয়াচ টাওয়ার সোসাইটি আপনার কোন প্রিয়জন যখন মারা যায় (ইংরাজি) নামক একটি নতুন ব্রোশারের প্রকাশ ঘোষণা করেছিল। এই উৎসাহজনক প্রকাশনাটি এমনভাবে লিখিত যা সমস্ত জাতি ও ভাষার লোকেদের সান্ত্বনা দিতে পারে। আপনি হয়ত ইতিমধ্যেই লক্ষ্য করেছেন যে এটি মৃত্যু ও মৃতদের পরিস্থিতি সম্বন্ধে বাইবেলের সরল ব্যাখ্যাকে তুলে ধরে। এর চাইতেও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হল এই যে এটি বিশেষ করে পরিষ্কৃত পরমদেশ পৃথিবীতে খ্রীষ্ট যীশুর মাধ্যমে, জীবনে পুনরুত্থান সম্বন্ধে ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাকে আলোকপাত করে। যারা শোকার্ত তাদের জন্য এটি প্রকৃতই সান্ত্বনা নিয়ে আসে। অতএব, খ্রীষ্টীয় পরিচর্যাতেও এটি বিশেষভাবে সাহায্যকারী হওয়া উচিত যা আগ্রহকে জাগিয়ে তুলবে এবং আরও অনেক গৃহ বাইবেল অধ্যয়নের সূত্রপাত করবে। প্রতিটি অংশের শেষে একটি বাক্সের মধ্যে বিচক্ষণতার সাথে কয়েকটি প্রশ্ন দেওয়া আছে যাতে করে যে কোন আন্তরিক শোকার্ত ব্যক্তিদের সাথে তা সহজেই পুনরালোচনা করা যায়।
[৮ পৃষ্ঠার চিত্র]
লাসারের যখন মৃত্যু হয়, যীশু কেঁদেছিলেন
[৯ পৃষ্ঠার চিত্র]
যীশু লাসারকে মৃত্যু থেকে পুনরুত্থিত করেছিলেন
[৭ পৃষ্ঠার চিত্র সৌজন্যে]
First Mourning, by W. Bouguereau, from original glass plate in Photo-Drama of Creation, 1914