যীশু সম্বন্ধে সন্দেহগুলি কি যুক্তিযুক্ত?
নাসরতীয় যীশু কি সত্যই অলৌকিক কাজগুলি সম্পাদন করেছিলেন? যেমন তাঁর শিষ্যেরা ঘোষণা করেছিলেন, তিনি কি সত্যই মৃত্যু থেকে পুনরুত্থিত হয়েছিলেন? তিনি কি আদৌ জীবিত ছিলেন? আমাদের এই আধুনিক যুগে, অনেকেই মনে হয় দৃঢ়তার সাথে এই প্রশ্নগুলির উত্তর দিতে পারে না। কেন? কারণ তারা যীশু সম্বন্ধে সন্দেহ ধরে রাখে আর সন্দেহ হল অনিশ্চয়তার অনুভূতি, অর্থাৎ কোন্টা সত্যি বা সম্ভাব্য তা বুঝতে না পারা। কিন্তু, যীশু সম্বন্ধে অনিশ্চয়তার অনুভূতিগুলি কি যুক্তিযুক্ত? আসুন দেখি।
যীশু সম্বন্ধে সন্দেহগুলি কিভাবে বপন করা হয়েছিল
বিশেষ কিছু জার্মান ঈশ্বরতত্ত্ববিদেরা উনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে এবং বিংশ শতাব্দীর শুরুতে যীশুকে “প্রাচীন গির্জার এক কল্পিত ব্যক্তি” হিসাবে বর্ণনা করেন। তাদের এই যীশুর ঐতিহাসিকতাকে অস্বীকার করা এই শতাব্দীর শুরুতে পন্ডিতদের মধ্যে এক বাদবিবাদের সৃষ্টি করে যা জনসাধারণের কাছে সেই সময়ে এসে পৌঁছায় এবং আজকের দিনেও এর এক প্রভাব রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, জার্মানীতে সাম্প্রতিক এক সমীক্ষা দেখায় যে, যাদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয় তাদের মধ্যে শুধু ৩ শতাংশ বিশ্বাস করে যে যীশু “কখনও জীবিত ছিলেন না” এবং “প্রেরিতেরা তাঁকে উদ্ভাবন করেছিলেন।” হ্যাঁ, এই শতাব্দীর শুরুতে যীশু সম্বন্ধে সন্দেহের যে বীজ বপন করা হয়েছিল তা এখন পর্যন্ত লোকেদের হৃদয়ে উর্বর জমি খুঁজে পায়।
যীশুকে যে “উদ্ভাবন” করা হয়েছিল এই পরিসমাপ্তি কেন যুক্তিযুক্ত নয়? বাইবেল পন্ডিত উল্ফগাঙ্গ ট্রিলিঙ্গ মন্তব্য করেন: “যীশু যে কখনও জীবিত ছিলেন সে বিষয়ে যে বাদানুবাদ, আর এক কথায় বলতে গেলে তিনি যে ঐতিহাসিক অথবা কল্পিত ব্যক্তি ছিলেন তার মীমাংসা হয়ে গেছে। পান্ডিত্য পদ্ধতিতে এই প্রশ্নটি মীমাংসিত হয়েছে, অন্ততপক্ষে এমনভাবে হয়েছে যে গম্ভীরমনা লোকেরা এটিকে আনুমানিক বিষয়রূপ সমস্যা বলে দেখবে না।” তবুও, কিছু ব্যক্তি রয়েছে যারা যীশু যে কখনও অস্তিত্বে ছিলেন সে বিষয়ে সন্দেহ করে। তাই, আসুন আমরা পরীক্ষা করে দেখি যে কী করে আমরা যীশুর ঐতিহাসিকতা প্রমাণ করতে পারি এবং তার সাথে সাথে অন্যান্য সন্দেহগুলি মিটিয়ে দিতে পারি।
প্রামাণিক সাক্ষ্য যা সন্দেহগুলিকে খণ্ডন করে
ঘৃণ্য অপরাধী হিসাবে যীশুর কলঙ্কজনক হত্যা, “যীশুর ঐতিহাসিকতার বিরোধীদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে সন্দেহনাশক যুক্তি” যোগায়, ট্রিলিঙ্গ বলেন। কেন? কারণ সেই হত্যাটি “যিহূদী এবং ন-যিহূদীদের মধ্যে নতুন বিশ্বাস ছড়ানকে ব্যাহত, এমনকি বাধা দেয়।” (তুলনা করুন ১ করিন্থীয় ১:২৩.) মশীহ যীশুর হত্যা যদি উভয় যিহূদী এবং ন-যিহূদীদের জন্য এত বড় অসম্মানের বিষয় হয়, তাহলে তা অবশ্যই প্রেরিতদের উদ্ভাবনা নয়! এছাড়াও, যীশুর মৃত্যু যে ঐতিহাসিক ঘটনা সেই বিষয়ে শুধুমাত্র চারটি সুসমাচার লেখকই প্রামাণিকতা প্রতিপন্ন করেননি, কিন্তু রোমীয় লেখক টাসিটাস এবং যুইশ তালমুডও করেছে।a
যীশুর জীবনের অন্যান্য ঘটনাগুলিও সুসমাচার লেখকদের বিশ্বাসযোগ্যতার অভ্যন্তরীণ প্রমাণ দেয়, ফলত তারা যা কিছু তাঁর সম্বন্ধে বলে তার ক্ষেত্রেও এটি সত্য। উদাহরণস্বরূপ, যীশুর অনুগামীরা কি তাঁর নাসরৎ থেকে আসাকে উদ্ভাবন করত, এমন একটি জায়গা যা তুচ্ছ ছিল? অথবা বিশ্বাসযোগ্য সাথী, যিহূদার দ্বারা বিশ্বাসঘাতকতাকে কি তারা মিথ্যাভাবে উদ্ভাবন করতে পারত? যীশু তাঁর অবশিষ্ট শিষ্যদের দ্বারা কাপুরুষের মত পরিত্যক্ত হবেন এই কল্পকথা কি বিশ্বাস করা বাস্তব সম্মত? শিষ্যেরা যে এই বিশেষ ঘটনাগুলিকে তৈরি করবে যা ক্ষতিকারক এবং পরে তা দেশ দেশান্তরে ঘোষণা করবে এই বিষয়টিও সত্যই অযৌক্তিক! এছাড়াও, যীশু যে শিক্ষা পদ্ধতি অবলম্বন করেছিলেন তা অদ্বিতীয় ছিল। প্রথম শতাব্দীর যে যিহূদী সাহিত্য তাঁর উদাহরণের তুলনায় কিছুই ছিল না। কোন্ নামহীন ব্যক্তি পর্বতে দত্ত উপদেশের মত শ্রেষ্ঠ কিছু “উদ্ভাবন” করতে পারে? এই যুক্তিগুলি যীশুর জীবন সম্বন্ধীয় রিপোর্টগুলি সম্পর্কে সুসমাচার লেখকদের বিশ্বাসযোগ্যতাকে আরও জোরাল করে।
যীশুর ঐতিহাসিকতা সম্বন্ধে বহিরাগত প্রমাণও রয়েছে। চারটি লিখিত সুসমাচার তাঁকে নির্দিষ্ট, সঠিকরূপে পুঙ্খানুপুঙ্খ, যথার্থভাবে ঐতিহাসিক পটভূমিকায় বর্ণনা করেছে। জায়গা, যেমন বৈৎলেহম এবং গালীল; বিখ্যাত ব্যক্তিবিশেষেরা এবং দলগুলি, যেমন পন্তীয় পীলাত এবং ফরীশীরা; সাথে সাথে যিহূদী প্রথা এবং অন্যান্য বিশেষত্বগুলি কেবলমাত্র এক পরিকল্পিত বিষয় হতে পারে না। এগুলি প্রথম শতাব্দীর জীবন গঠনের এক অংশ ছিল এবং সেগুলি বাইবেল সংক্রান্ত নয় এমন উৎস এবং প্রত্নতত্ত্বসম্বন্ধীয় অনুসন্ধান দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে।
তাহলে, উভয় অর্থাৎ অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে যে, যীশু হলেন একজন ঐতিহাসিক ব্যক্তি।
কিন্তু, বেশ কিছু লোক তাঁকে কেন্দ্র করে যে অলৌকিক কাজগুলি রয়েছে সে সম্বন্ধে সন্দেহ প্রকাশ করে। উপরে উল্লেখিত সমীক্ষা অনুযায়ী জার্মান গির্জায় যায় এমন ব্যক্তিদের মধ্যে খুব অল্পসংখ্যক লোক যীশুর অলৌকিক কাজগুলি এবং তাঁর পুনরুত্থান যে “সত্যিই ঘটেছিল” তা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে। যীশু সম্বন্ধীয় অলৌকিক কাজগুলি এবং পুনরুত্থান সম্বন্ধে সন্দেহ কি যুক্তিযুক্ত?
কেন কেউ কেউ যীশুর অলৌকিক কাজগুলি সন্দেহ করে
মথি ৯:১৮-৩৬ পদ রিপোর্ট করে যে যীশু অলৌকিকভাবে অসুস্থদের সুস্থ করেন, মৃতদের পুনরুত্থান করেন এবং ভূতদের বিতাড়িত করেন। অধ্যাপক হুগো স্টোডিংগার, এক ইতিহাসবিদ্, মন্তব্য করেন: “এটি একেবারেই অবিশ্বাসনীয় এবং ইতিহাসের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখতে গেলে অসম্ভব যে এই অস্বাভাবিক রিপোর্টগুলি হল প্রাণবন্ত কল্পনাশক্তির উৎপন্ন বস্তু।” কেন? কারণ যখন সর্বপ্রথম সুসমাচার লেখা হয় তখন এই অলৌকিক কাজগুলির প্রত্যক্ষদর্শীরা জীবিত ছিল! আরও প্রমাণ পাওয়া যায়, যা স্টোডিংগার বলেন তা হল এই যে যিহূদী বিরোধীরা “যীশু যে এই অসাধারণ কাজগুলি করেছিলেন তা কখনও অস্বীকার করেনি।” অন্যান্য প্রমাণ ব্যতিরেকে শুধু যদি আমরা বহিরাগত প্রমাণ অনুযায়ী বিচার করি, তাহলে আমরা দেখব যে যীশুর অলৌকিক কাজগুলি সত্যই আমাদের বিশ্বাসের যোগ্য।—২ তীমথিয় ৩:১৬.
যদিও, “অধিকাংশ জার্মানবাসীরা বিশ্বাস করে যে যীশু অসুস্থদের সুস্থ করেছিলেন,” কিন্তু অনেকে এই আরোগ্য করার পিছনে যে শক্তি রয়েছে, সে সম্বন্ধে সন্দেহ প্রকাশ করেছে। উদাহরণস্বরূপ, এক অতিপরিচিত জার্মান ঈশ্বরতত্ত্ববিদ্ জনসাধারণে বলেন যে, যীশুর দ্বারা সম্পাদিত আরোগ্যসাধন তা সম্মোহনবিদ্যার শক্তির দ্বারা হয়েছিল ও যে সব লোকেরা মানসিকভাবে হতাশ ছিল তাদের তা প্রভাবিত করেছিল। এটি কি এক বিশ্বাসযোগ্য ব্যাখ্যা?
একবার বিবেচনা করে দেখুন। মার্ক ৩:৩-৫ পদ রিপোর্ট করে যে যীশু এক ব্যক্তির শুষ্ক হাতকে সুস্থ করেছিলেন। কিন্তু শুষ্ক হাত কি মানসিকভাবে হতাশার ফল? অবশ্যই নয়। অতএব, এই সুস্থতা সম্মোহনবিদ্যার ফলে হতে পারে না। তাহলে কী যীশুকে অলৌকিক কাজ করতে সমর্থ করেছিল? অধ্যাপক স্টোডিংগার স্বীকার করেন: “যদি এমন আইন না থাকে যা সম্পূর্ণরূপে বৈধ এবং যদি একজন পূর্ণরূপে ঈশ্বরকে অস্বীকার না করে, তাহলে মৌলিক সম্ভাবনা বাদ দেওয়া যায় না যে ঈশ্বর, যাঁর শক্তি মানুষের থেকে বেশি এমন জিনিসগুলি করতে পারেন যা সাধারণ নয়।” হ্যাঁ, বাস্তবিকই “ঈশ্বরের শক্তি”-র সাহায্যে যীশু আক্ষরিকভাবে যারা অসুস্থ ছিল তাদের সুস্থ করেছিলেন। তাই তাঁর অলৌকিক কাজগুলির সত্যতা সন্দেহ করার কোন কারণ নেই।—লূক ৯:৪৩; মথি ১২:২৮.
ঠিক যেমন আমেরিকান পিপলস এনসাইক্লোপিডিয়া বলে, সবচেয়ে বড় অলৌকিক কাজ—যীশুর পুনরুত্থান—যদি ঘটে থাকে তাহলে সুসমাচারে উল্লেখিত অন্যান্য অলৌকিক কাজগুলিও “সম্ভাবনার পর্যায়ে” পড়ে। যীশু কি সত্যই মৃত্যু থেকে উঠেছিলেন?
যীশুর পুনরুত্থান সম্বন্ধে সন্দেহগুলি কি যুক্তিযুক্ত?
একটি দৃঢ় অবস্থাগত প্রমাণ সম্বন্ধে বিবেচনা করুন যা যীশুর পুনরুত্থান সম্বন্ধে সত্যতাকে সমর্থন করে—তাঁর শূন্য কবর। বস্তুতপক্ষে, যীশুর যে শূন্য কবর আবিষ্কৃত হয়েছিল, তা তার সমসাময়িকদের দ্বারা, এমনকি তাঁর বিরোধীদের দ্বারা অবিতর্কিত থেকে গেছে। (মথি ২৮:১১-১৫) ভ্রান্তি খুব সহজেই উন্মুক্ত করা যেত! উপরোক্ত বইটি যথার্থ পরিসমাপ্তিতে আসে: “শূন্য কবরের কোন বৈধ ব্যাখ্যা সম্বন্ধে মন্তব্য করা হয়নি শুধুমাত্র বাইবেলের এই উক্তি ছাড়া, ‘তিনি এখানে নাই; কেননা তিনি উঠিয়াছেন’ (মথি ২৮:৬)।”
কিছু ব্যক্তি এই অভিযোগ করে যে শুধুমাত্র যীশুর শিষ্যেরা সর্বত্র ঘোষণা করেছিলেন যে তিনিই হলেন পুনরুত্থিত মশীহ। তারা তা করেছিল। কিন্তু তাদের বার্তার বিশ্বাসযোগ্যতা কি এক ঐতিহাসিকভাবে প্রামাণিত সত্যের ভিত্তিতে ছিল না, বিশেষ করে যীশুর মৃত্যু ও পুনরুত্থান সম্বন্ধে? অবশ্যই। প্রেরিত পৌল এই সংযোগ সম্বন্ধে অবগত ছিলেন যখন তিনি লিখেছিলেন: “খ্রীষ্ট যদি উত্থাপিত না হইয়া থাকেন, তাহা হইলে ত আমাদের প্রচারও বৃথা, তোমাদের বিশ্বাসও বৃথা। আবার আমরা যে ঈশ্বরের সম্বন্ধে মিথ্যা সাক্ষী, ইহাই প্রকাশ পাইতেছে; কারণ আমরা ঈশ্বরের বিষয়ে এই সাক্ষ্য দিয়াছি যে, তিনি খ্রীষ্টকে উত্থাপন করিয়াছেন।”—১ করিন্থীয় ১৫:১৪, ১৫; তুলনা করুন যোহন ১৯:৩৫; ২১:২৪; ইব্রীয় ২:৩.
প্রথম শতাব্দীতে অনেক লোক ছিলেন যারা প্রসিদ্ধ ছিলেন এবং যারা যীশুকে মৃত্যুর পরে দেখা গিয়েছিল সেই সম্বন্ধে সাক্ষ্য দিতে পারতেন। এদের মধ্যে ছিলেন ১২ জন প্রেরিত এবং পৌল ও সেই সাথে ৫০০ জন প্রত্যক্ষদর্শীরা।b (১ করিন্থীয় ১৫:৬) এছাড়াও মনে করুন যে মত্তথিয় অবিশ্বস্ত প্রেরিত যিহূদার স্থান নিতে কী কারণবশত যোগ্যতা পূর্ণ করতে পেরেছিলেন। প্রেরিত ১:২১-২৩ পদ বলে যে মত্তথিয় যীশুর পুনরুত্থান এবং তাঁর প্রাথমিক ঘটনাগুলি সম্বন্ধে সাক্ষ্য দিতে পারতেন। যদি যীশুর জীবন এবং পুনরুত্থান প্রামাণিক সত্য না হয়ে গল্প হত, তাহলে এই পদে নিযুক্ত হওয়ার জন্য যে প্রয়োজনীয়তা তা সম্পূর্ণরূপে অর্থহীন হত।
যেহেতু প্রথম শতাব্দীর অনেক প্রত্যক্ষদর্শীরা যীশুর জীবন, অলৌকিক কাজগুলি, মৃত্যু এবং পুনরুত্থান সম্বন্ধে সাক্ষ্য দিতে পারত, তাই উপরোক্ত প্রতিবন্ধকগুলি থাকা সত্ত্বেও খ্রীষ্টতত্ত্ব রোমীয় সাম্রাজ্যে সর্বত্র খুব সহজেই তুলনামূলকভাবে খুবই দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়েছিল। তাঁর শিষ্যেরা কঠোর সময়, নির্যাতন এবং এমনকি মৃত্যু সহ্য করতে ইচ্ছুক ছিলেন যাতে করে পুনরুত্থান এবং তা থেকে উদ্ভাবিত মৌলিক সত্য সর্বত্র ঘোষণা করতে পারেন। কোন্ সত্য? তা হল যে তাঁর পুনরুত্থান সম্ভব হয়েছে শুধুমাত্র ঈশ্বরের শক্তির মাধ্যমে। আর কেন যিহোবা ঈশ্বর যীশুকে মৃত্যু থেকে পুনরুত্থান করেছিলেন? এর উত্তর দেখায় যে ঐতিহাসিক যীশু কে ছিলেন।
যিরূশালেমে বিস্মিত হয়ে যাওয়া যিহূদীদের কাছে পঞ্চাশত্তমীর দিনে প্রেরিত পিতর মুক্তকন্ঠে ঘোষণা করেছিলেন: “এই যীশুকেই ঈশ্বর উঠাইয়াছেন, আমরা সকলেই এই বিষয়ের সাক্ষী। অতএব তিনি ঈশ্বরের দক্ষিণ হস্ত দ্বারা উচ্চীকৃত হওয়াতে, এবং পিতার নিকট হইতে অঙ্গীকৃত পবিত্র আত্মা প্রাপ্ত হওয়াতে, এই যাহা তোমরা দেখিতেছ ও শুনিতেছ, তাহা তিনি সেচন করিলেন। কেননা দায়ূদ স্বর্গারোহণ করেন নাই, কিন্তু আপনি এই কথা বলেন, ‘প্রভু আমার প্রভুকে কহিলেন, তুমি আমার দক্ষিণে বস, যাবৎ আমি তোমার শত্রুগণকে তোমার পাদপীঠ না করি।’ অতএব ইস্রায়েলের সমস্ত কূল নিশ্চয় জ্ঞাত হউক যে, যাঁহাকে তোমরা ক্রুশে দিয়াছিলে, সেই যীশুকেই ঈশ্বর প্রভু ও খ্রীষ্ট উভয়ই করিয়াছেন।” (প্রেরিত ২:৩২-৩৬) হ্যাঁ, যিহোবা নাসরতীয় যীশুকে “প্রভু ও খ্রীষ্ট উভয়ই করিয়াছেন।” ঈশ্বরের উদ্দেশ্যের এই অংশে তাঁর যে ভূমিকা সে সম্বন্ধে সন্দেহগুলি কি যুক্তিযুক্ত?
যীশুর বর্তমান ভূমিকাকে কেন সন্দেহ করা?
কিভাবে যীশুর শনাক্তিকরণ এবং ভূমিকা সম্বন্ধে সব সন্দেহগুলিকে খণ্ডন করা যেতে পারে? এই সত্য দ্বারা যে তিনি স্পষ্টত এক সত্য ভাববাদী ছিলেন। তিনি যুদ্ধবিগ্রহ, দুর্ভিক্ষ, ভূমিকম্প, অপরাধ এবং প্রেমের অভাব যা আমরা আজকে দেখতে পাই তার সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। এছাড়াও, তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন: “সর্ব্ব জাতির কাছে সাক্ষ্য দিবার নিমিত্ত রাজ্যের এই সুসমাচার সমুদয় জগতে প্রচার করা যাইবে; আর তখন শেষ উপস্থিত হইবে।” (মথি ২৪:৩-১৪) এই সকল ভবিষ্যদ্বাণীর পূর্ণতা দেখায় যে যীশু হলেন পুনরুত্থিত খ্রীষ্ট, যিনি “শত্রুদের মধ্যে” অদৃশ্যভাবে শাসন করছেন এবং শীঘ্রই তিনি ঈশ্বরের নতুন জগৎ নিয়ে আসবেন।—গীতসংহিতা ১১০:১, ২; দানিয়েল ২:৪৪; প্রকাশিত বাক্য ২১:১-৫.
আগের চাইতে এখন আরও অনেক জরুরিরূপে মানবজাতির এমন এক উদ্ধারকর্তার প্রয়োজন যার কাছে অতিমানবীয় প্রজ্ঞা রয়েছে। মানবজাতিকে রক্ষা করতে যীশুই যে হলেন যথার্থভাবে নির্বাচিত সেই ব্যক্তি সে বিষয়ে কেন আমরা সন্দেহ করব? যোহন, যিনি প্রভাব বিস্তারকারী অলৌকিক কাজগুলির এবং যীশুর পুনরুত্থানের প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন, তিনি ঘোষণা করেছিলেন: “আর আমরা দেখিয়াছি ও সাক্ষ্য দিতেছি যে, পিতা পুত্ত্রকে জগতের ত্রাণকর্ত্তা করিয়া প্রেরণ করিয়াছেন।” (১ যোহন ৪:১৪; তুলনা করুন যোহন ৪:৪২.) ঠিক যেমন আমাদের যীশুর অস্তিত্ব, অলৌকিক কাজগুলি, মৃত্যু এবং পুনরুত্থানকে সন্দেহ করার কোন যুক্তিযুক্ত ভিত্তি নেই, তেমনি আমাদের কাছে সন্দেহ করার কোন কারণ নেই যে তিনি যিহোবা ঈশ্বরের দ্বারা ন্যায়সঙ্গত রাজা হিসাবে তাঁর দক্ষিণ হস্তে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। নিঃসন্দেহে নাসরতীয় যীশু হলেন ঈশ্বরের রাজ্যের রাজা এবং “জগতের ত্রাণকর্ত্তা।”—মথি ৬:১০.
[পাদটীকাগুলো]
a তালমুডে যীশুর প্রতি পলেমির যে ইঙ্গিত তা কিছু পন্ডিত সত্য বলে মনে করেন। অপরপক্ষে, টাসিটাস, সুটোনিয়াস, প্লাইনি দ্যা ইয়াংগার এবং ফ্লাভিইয়াস যোসিফাসের দ্বারা অন্তত একটি ইঙ্গিত সাধারণতভাবে যীশুর ঐতিহাসিক অস্তিত্বের প্রমাণ হিসাবে গ্রহণ করা হয়।
b একটি ঘটনায়, পুনরুত্থিত যীশু তাঁর শিষ্যদের সাথে মাছ খেয়েছিলেন যেটি প্রমাণ করে যে তাঁর আবির্ভাব শুধুমাত্র দর্শন ছিল না, যা কিছু লোকে যেমন আজকের দিনে দাবি করে।—লূক ২৪:৩৬-৪৩.