যিহোবা ক্লান্ত ব্যক্তিকে শক্তি দেন
“যাহারা সদাপ্রভূর অপেক্ষা করে, তাহারা উত্তরোত্তর নূতন শক্তি পাইবে; তাহারা ঈগল পক্ষীর ন্যায় পক্ষসহকারে ঊর্দ্ধে উঠিবে।”—যিশাইয় ৪০:৩১.
১, ২. যারা তাঁর উপর নির্ভর করে যিহোবা তাদের কী দেন এবং এখন আমরা কী বিবেচনা করব?
আকাশে পক্ষীদের মধ্যে ঈগল হল সবচেয়ে বেশি ক্ষমতাশালী পাখি। এমনকি তাদের ডানার ঝাপটা ব্যতীত বহুদূর পর্যন্ত তারা উড়ে যেতে পারে। ডানার সাহায্যে যা হয়ত দুমিটারের বেশি প্রসারিত হতে পারে, “পাখিদের রাজা,” স্বর্ণ ঈগল যা “সকল ঈগলদের মধ্যে মনে ছাপ ফেলার মত একটি ঈগল; ছোট পাহাড় ও সমতলভূমির উপর দিয়ে উড়ে চলে এবং ঘন্টার পর ঘন্টা পাহাড়ের শৈলশিরার উপর উড়তে থাকে তারপর আরও উর্দ্ধে উঠে যায় যতক্ষণ পর্যন্ত না এটি আকাশে ছোট দাগের মত দেখায়।”—দি আদুবোন সোসাইটি এনসাইক্লোপিডিয়া অফ নর্থ আমেরিকা বার্ডস্।
২ ঈগলের উড়ার ক্ষমতার কথা মনে রেখে যিশাইয় লিখেছিলেন: “[যিহোবা] ক্লান্ত ব্যক্তিকে শক্তি দেন, ও শক্তিহীন লোকের বল বৃদ্ধি করেন। তরুণেরা ক্লান্ত ও শ্রান্ত হয়, যুবকেরা স্খলিত, স্খলিত হয়; কিন্তু যাহারা সদাপ্রভুর অপেক্ষা করে, তাহারা উত্তরোত্তর নূতন শক্তি পাইবে; তাহারা ঈগল পক্ষীর ন্যায় পক্ষসহকারে ঊর্দ্ধে উঠিবে; তাহারা দৌড়িলে শ্রান্ত হইবে না; তাহারা গমন করিলে ক্লান্ত হইবে না।” (যিশাইয় ৪০:২৯-৩১) যারা তাঁর উপর আস্থা রাখে যিহোবা তাদের অগ্রসর হতে শক্তি দেন ঠিক যেমন উড্ডীয়মান ঈগল পক্ষীকে ক্লান্তিহীন ডানা দেন, এটা জানা কতই সান্ত্বনাদায়ক! ক্লান্ত ব্যক্তিকে শক্তি দিতে তিনি যে ব্যবস্থা করেছেন তার কয়েকটি এখন বিবেচনা করুন।
প্রার্থনার শক্তি
৩, ৪. (ক) যীশু তাঁর শিষ্যদের কী করতে উৎসাহ দেন? (খ) আমাদের প্রার্থনার উত্তরে যিহোবা কী করবেন বলে আমরা আশা করতে পারি?
৩ যীশু তাঁর শিষ্যদের ‘সর্ব্বদাই প্রার্থনা করতে, নিরুৎসাহ না হতে’ উপদেশ দিয়েছিলেন। (লূক ১৮:১) যখন জীবনের চাপগুলিকে অত্যধিক বলে মনে হয়, তখন যিহোবার কাছে অন্তরের কথা ব্যক্ত করা কি প্রকৃতপক্ষে আমাদের পুনরায় শক্তি ফিরে পেতে এবং হাল ছেড়ে দেওয়াকে এড়াতে সাহায্য করতে পারে? হ্যাঁ, কিন্তু কিছু জিনিস আছে যা আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে।
৪ আমাদের প্রার্থনার উত্তরে আমরা যিহোবার কাছ থেকে যা আশা করি সেই সম্বন্ধে আমাদের অবশ্যই বাস্তবধর্মী হতে হবে। একজন খ্রীষ্টান যিনি খুব বিষণ্ণ হয়ে পড়েছিলেন, পরে বলেন: “অন্যান্য অসুস্থতার মত এই ক্ষেত্রেও যিহোবা বর্তমান সময়ে অলৌকিক কার্য সাধন করেন না। কিন্তু তার মোকাবিলা করতে এবং সুস্থ হতে যা আমাদের এই ব্যবস্থায় সম্ভব তা পেতে তিনি আমাদের সাহায্য করেন।” কেন তার প্রার্থনা পার্থক্যের সৃষ্টি করেছিল তা ব্যাখ্যা করে তিনি আরও বলেন: “২৪-ঘন্টাই পবিত্র আত্মা চাওয়ার সুযোগ আমার ছিল।” কিন্তু, যিহোবা জীবনের চাপগুলি থেকে আমাদের রক্ষা করেন না যা আমাদের হতাশ করতে পারে, কিন্তু তিনি “যাহারা তাঁহার কাছে যাচ্ঞা করে, তাহাদিগকে পবিত্র আত্মা দান” করেন। (লূক ১১:১৩; গীতসংহিতা ৮৮:১-৩) সেই আত্মা যে কোন পরীক্ষা অথবা চাপ যার সম্মুখীন আমরা হই তার মোকাবিলা করতে আমাদের সমর্থ করে। (১ করিন্থীয় ১০:১৩) যদি প্রয়োজন হয়, যতক্ষণ পর্যন্ত না নতুন জগতে ঈশ্বরের রাজ্য যেটি খুব সন্নিকটে, সমস্ত কষ্টকর সমস্যাগুলিকে সরিয়ে দেয় ততক্ষণ তা সহ্য করতে এটি আমাদের “পরাক্রমের উৎকর্ষ” দিয়ে পরিপূর্ণ করতে পারে।—২ করিন্থীয় ৪:৭.
৫. (ক) আমাদের প্রার্থনাকে কার্যকারী করে তোলার জন্য, কোন্ দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রয়োজন? (খ) মাংসের দুর্বলতার সাথে লড়াই করার সময় আমরা কিভাবে প্রার্থনা করতে পারি? (গ) আমাদের অবিরত ও নির্দিষ্ট প্রার্থনাগুলি যিহোবার কাছে কী অর্থ রাখে?
৫ কিন্তু, আমাদের প্রার্থনাকে কার্যকারী করতে হলে আমাদের অবশ্যই অধ্যবসায়ী ও স্বাতন্ত্র্যদায়ক হতে হবে। (রোমীয় ১২:১২) উদাহরণস্বরূপ, মাংসিক দুর্বলতাগুলির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার দরুণ আপনি যদি কখনও কখনও পরিশ্রান্ত হয়ে পড়েন, প্রতিটি দিনের শুরুতে, যিহোবার কাছে প্রার্থনা আপনাকে সেই নির্দিষ্ট দুর্বলতা এড়াতে সাহায্য করবে। একইভাবে সারাদিন এবং প্রতি রাত্রে ঘুমাতে যাওয়ার আগে প্রার্থনা করুন। যদি পুনরায় ভুল করেন, তার ক্ষমার জন্য যিহোবার কাছে প্রার্থনা করুন, পুনরায় ভুল করার পিছনে কারণগুলি বলুন এবং ভবিষ্যতে এই পরিস্থিতিগুলি এড়াতে আপনি কী করতে পারেন তাও বলুন। “প্রার্থনা শ্রবণকারী”-র কাছে এইধরনের অধ্যবসায় ও নির্দিষ্ট প্রার্থনা যুদ্ধে জয়ী হওয়ার জন্য আপনার আন্তরিক ইচ্ছাকে প্রদর্শন করবে।—গীতসংহিতা ৬৫:২; লূক ১১:৫-১৩.
৬. এমনকি যখন আমরা প্রার্থনা করতে অযোগ্যবোধ করি তখনও কেন আমরা যথার্থভাবে আশা করতে পারি যে যিহোবা আমাদের প্রার্থনা শুনবেন?
৬ কিন্তু, কখনও কখনও যারা পরিশ্রান্ত হয়ে পড়েছেন তারা হয়ত প্রার্থনা করতে অযোগ্য বলে মনে করতে পারেন। একজন খ্রীষ্টীয় স্ত্রী যিনি ওই রকম মনে করেছিলেন পরে বলেন: “সেটি খুবই বিপজ্জনক চিন্তাধারা, কারণ এটির অর্থ হল যে আমরা আমাদের নিজেদের বিচার করার ভার তুলে নিয়েছি, কিন্তু বিচার করা আমাদের কাজ নয়।” বাস্তবিকপক্ষে, “ঈশ্বর স্বয়ং বিচারকর্ত্তা।” (গীতসংহিতা ৫০:৬) বাইবেল আমাদের আশ্বাস দেয় যে যদিও “আমাদের হৃদয় . . . আমাদিগকে দোষী করে, ঈশ্বর আমাদের হৃদয় অপেক্ষা মহান্, এবং সকলই জানেন।” (১ যোহন ৩:২০) এটা জানা কতই না সান্ত্বনাজনক যে যখন আমরা হয়ত প্রার্থনা করতে নিজেদের অযোগ্য বলে মনে করছি, কিন্তু যিহোবা হয়ত আমাদের সম্বন্ধে সেরকম বোধ করেন না! তিনি আমাদের সম্বন্ধে “সকলই জানেন” যার অন্তর্ভুক্ত হল আমাদের জীবনের সেই পরিস্থিতিগুলি যা হয়ত আমাদের মধ্যে অযোগ্যভাব গড়ে তুলতে পারে। (গীতসংহিতা ১০৩:১০-১৪) তাঁর দয়া ও বোধগম্যতার গভীরতা তাঁকে তাদের প্রার্থনা শুনতে পরিচালিত করে যাদের “ভগ্ন ও চূর্ণ অন্তঃকরণ।” (গীতসংহিতা ৫১:১৭) তিনি কি সাহায্যের জন্য আমাদের আর্তনাদ না শুনে থাকতে পারেন, যেখানে তিনি সেই ব্যক্তিকে তিরষ্কার করেন যে “দরিদ্রের ক্রন্দনে কর্ণ রোধ করে”?—হিতোপদেশ ২১:১৩.
ভ্রাতৃসমাজের প্রেমময় উষ্ণতা
৭. (ক) শক্তি ফিরে পাওয়ার আরেকটি কোন্ ব্যবস্থা যিহোবা আমাদের জন্য করেছেন? (খ) ভ্রাতৃসমাজের সম্বন্ধে কোন্ বিষয়টি জানা আমাদের দৃঢ়তা দিতে পারে?
৭ শক্তি ফিরে পাওয়ার জন্য যিহোবার আরেকটি ব্যবস্থা হল আমাদের খ্রীষ্টীয় ভ্রাতৃসমাজ। জগদ্ব্যাপী ভাই ও বোনেদের পরিবারের অংশ হওয়া কতই না এক মূল্যবান সুযোগ! (১ পিতর ২:১৭) যখন জীবনের চাপ আমাদের ভারগ্রস্ত করে তোলে, তখন আমাদের ভ্রাতৃসমাজের প্রেমময় উষ্ণতা শক্তি ফিরে পেতে আমাদের সাহায্য করতে পারে। কিভাবে? আমরা একা যে চাপের মোকাবিলা করছি না, এটি জানাই দৃঢ়তার বিষয় হতে পারে। এবিষয়ে কোন সন্দেহ নেই যে, আমাদের ভাই বোনেদের মধ্যে অনেকে একই ধরনের চাপ ও পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছে এবং আমাদেরই মত একই ধরনের অনুভূতি তাদের হয়েছে। (১ পিতর ৫:৯) এটি জানা খুবই নিশ্চয়তাজনক যে আমাদের উপর যা ঘটছে তা অসাধারণ নয় এবং আমাদের অনুভূতিও অস্বাভাবিক নয়।
৮. (ক) কোন্ উদাহরণ দেখায় যে আমরা আমাদের ভ্রাতৃসমাজের মধ্যে প্রয়োজনীয় সাহায্য ও সান্ত্বনা পেতে পারি? (খ) কিভাবে আপনি ব্যক্তিগতরূপে ‘প্রকৃত বন্ধুদের” কাছ থেকে সাহায্য অথবা সান্ত্বনা পেয়েছেন?
৮ ভ্রাতৃসমাজের এই প্রেমময় উষ্ণতার মধ্যে আমরা ‘প্রকৃত বন্ধুদের’ পেতে পারি যারা, যখন আমরা অসুবিধায় পড়ি তখন প্রয়োজনীয় সাহায্য ও সান্ত্বনা দিয়ে থাকে। (হিতোপদেশ ১৭:১৭) প্রায়ই, কেবলমাত্র কয়েকটি সদয় কথা অথবা বিবেচনামূলক কাজই যথেষ্ট। একজন খ্রীষ্টান যিনি নিজেকে অযোগ্য বলে মনে করার মনোভাবের সাথে যুদ্ধ করছিলেন তিনি স্মরণ করেন: “আমার কিছু বন্ধুরা ছিল যারা আমাকে আমার নিজের সম্বন্ধে ইতিবাচক বিষয়গুলি তুলে ধরত যাতে করে নেতিবাচক চিন্তাধারাকে আমি কাটিয়ে উঠতে পারি।” (হিতোপদেশ ১৫:২৩) অল্পবয়সী কন্যার মৃত্যুর পর একজন ভগ্নীর পক্ষে মণ্ডলীর সভাগুলিতে গান গাওয়া খুবই অসম্ভব হয়ে পড়ে, বিশেষকরে যে গানগুলির মধ্যে পুনরুত্থানের কথা উল্লেখ করা আছে। “একবার,” ভগ্নীটি স্মরণ করেন, “একজন বোন যিনি পাশে বসেছিলেন তিনি আমাকে কাঁদতে দেখেন। তিনি আমার কাছে আসেন, আমার কাঁধের উপর হাত রাখেন এবং আমার সাথে গানের বাকি অংশটুকু গান। ভাই ও বোনেদের প্রতি আমার প্রেম এতই উথলিয়ে উঠেছিল যে আমি উপলব্ধি করেছিলাম যে কিংডম হলেতেই আমরা সাহায্য পেতে পারি।”
৯, ১০. (ক) ভ্রাতৃসমাজের মধ্যে আমরা কিভাবে প্রেমময় উষ্ণতা গড়ে তুলতে পারি? (খ) কাদের বিশেষকরে গঠনমূলক সাহচর্যের প্রয়োজন? (গ) যাদের সাহায্যের প্রয়োজন তাদের জন্য আমরা কী করতে পারি?
৯ অবশ্য, খ্রীষ্টীয় ভ্রাতৃসমাজের মধ্যে প্রেমময় উষ্ণতা বজায় রাখার দায়িত্ব আমাদের প্রত্যেকেরই রয়েছে। সুতরাং, আমাদের হৃদয়কে “প্রশস্ত” করা উচিত যাতে করে আমাদের সকল ভাইবোনেদের আমরা এরমধ্যে অন্তর্ভুক্ত করতে পারি। (২ করিন্থীয় ৬:১৩) যারা ক্লান্ত হয়ে পড়েছে তাদের পক্ষে এটা জানা কতই না দুঃখদায়ক হবে যে তাদের প্রতি ভ্রাতৃসমাজের প্রেম শীতল হয়ে পড়েছে! তবুও, কয়েকজন খ্রীষ্টান জানান যে তারা নিঃসঙ্গ ও পরিত্যক্তবোধ করছে। একজন ভগ্নী যার স্বামী সত্যের বিরোধী ছিল, তিনি আবেদন জানান: “এমন কে আছে যে গঠনমূলক বন্ধুত্ব, উৎসাহ ও প্রেমপূর্ণ সাহচর্য চায় না বা তার প্রয়োজন নেই? দয়া করে আমাদের ভাই ও বোনেদের মনে করিয়ে দিন যে তাদের প্রয়োজন আমাদের রয়েছে!” হ্যাঁ, বিশেষকরে তাদের যাদের জীবনের পরিস্থিতি তাদের ভারগ্রস্ত করে তুলেছে—যাদের অবিশ্বাসী সাথী আছে, একক পিতামাতা, যাদের দীর্ঘ দিন ধরে কোন স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যা রয়েছে, বৃদ্ধেরা ও অন্যান্যেরা—এদের গঠনমূলক সহভাগিতার প্রয়োজন আছে। আমাদের মধ্যে কাউকে কি এবিষয়ে মনে করিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন আছে?
১০ সাহায্য করার জন্য আমরা কী করতে পারি? প্রেম প্রদর্শনের ক্ষেত্রে আসুন আমরা প্রশস্ত হই। আতিথেয়তা দেখানোর সময়, আমরা যেন তাদের ভুলে না যাই যাদের উৎসাহের প্রয়োজন আছে। (লূক ১৪:১২-১৪; ইব্রীয় ১৩:২) পরিস্থিতি তাদের এটি গ্রহণ করতে দেবে না এটি ভেবে না নিয়ে তাদের নিমন্ত্রণ করুন না কেন? এর পর তাদের সিদ্ধান্ত নিতে দিন। এমনকি যদি তারা এটি গ্রহণ নাও করতে পারে, তবুও তারা নিঃসন্দেহে এটি জেনে উৎসাহিত হবে যে অন্যেরা তাদের কথা ভেবেছে। শক্তি ফিরে পাওয়ার জন্য হয়ত এটাই তাদের প্রয়োজন।
১১. যারা ভারগ্রস্ত তাদের কোন্ উপায়ে হয়ত সাহায্যের প্রয়োজন হতে পারে?
১১ যারা ভারগ্রস্ত তাদের হয়ত অন্য রকমভাবেও সাহায্যের প্রয়োজন হতে পারে। একজন একক মায়ের হয়ত এক অভিজ্ঞ ভাইয়ের সাহায্যের প্রয়োজন তার পিতৃহীন ছেলের প্রতি আগ্রহ নেওয়ার ক্ষেত্রে। (যাকোব ১:২৭) গুরুতরভাবে অসুস্থ কোন ভাই বা বোনের হয়ত কেনাকাটা অথবা ঘরের কাজ করার জন্য সাহায্যের প্রয়োজন হতে পারে। কোন বৃদ্ধের হয়ত সাহচর্যের অথবা ক্ষেত্রের পরিচর্যায় বার হওয়ার জন্য সাহায্যের প্রয়োজন হতে পারে। যখন এইধরনের সাহায্যের প্রয়োজন হয়, তখন প্রকৃতরূপে ‘আমাদের প্রেমে যথার্থতার পরীক্ষা’ আসে। (২ করিন্থীয় ৮:৮) সময় ও প্রচেষ্টার দরকার হয় বলে এই দুস্থদের কাছ থেকে সরে না গিয়ে, অপরের প্রয়োজনের প্রতি সংবেদনশীল ও সাড়া দেওয়ার মাধ্যমে আসুন আমরা খ্রীষ্টীয় প্রেমের এই পরীক্ষা যেন উত্তীর্ণ হতে পারি।
ঈশ্বরের বাক্যের শক্তি
১২. শক্তি ফিরে পেতে ঈশ্বরের বাক্য আমাদের কিভাবে সাহায্য করে?
১২ একজন ব্যক্তি যদি খাওয়া বন্ধ করে দেয় তাহলে সে শীঘ্রই তার শক্তি অথবা ক্ষমতা হারাবে। এর সাথে সামঞ্জস্য রেখে, আরেকটি উপায় যিহোবা আমাদের শক্তি যোগান এটি দেখার দ্বারা যে আমরা যেন উপযুক্ত পরিমাণে আধ্যাত্মিক খাদ্য পাই। (যিশাইয় ৬৫:১৩, ১৪) কোন্ আধ্যাত্মিক খাদ্য তিনি আমাদের দিয়েছেন? সবচাইতে প্রধান হল, তাঁর বাক্য, বাইবেল। (মথি ৪:৪; তুলনা করুন ইব্রীয় ৪:১২.) শক্তি ফিরে পেতে এটি আমাদের কিভাবে সাহায্য করতে পারে? যখন চাপ ও সমস্যাগুলি আমাদের শক্তিকে নষ্ট করে দেয় তখন বাইবেলের সময়কার বিশ্বস্ত পুরুষ ও নারীদের অনুভূতি ও বাস্তব অভিজ্ঞতাগুলি পড়ার দ্বারা আমরা শক্তি পেতে পারি। যদিও এগুলি বিশ্বস্ততার এক উল্লেখযোগ্য উদাহরণ, কিন্তু তারা ছিল “আমাদের ন্যায় সুখদুঃখভোগী” মনুষ্য। (যাকোব ৫:১৭; প্রেরিত ১৪:১৫) আমাদের মত তারাও পরীক্ষা ও চাপের সম্মুখীন হয়েছিল। কয়েকটি উদাহরণের কথা বিবেচনা করুন।
১৩. কোন্ শাস্ত্রীয় উদাহরণগুলি দেখায় যে বাইবেলের সময়কার বিশ্বস্ত নারী ও পুরুষদের অনুভূতি ও অভিজ্ঞতাগুলি আমাদেরই মত?
১৩ পূর্বপুরুষ আব্রাহাম, তার স্ত্রীর মৃত্যুতে অত্যন্ত শোক প্রকাশ করেছিলেন, যদিও পুনরুত্থানের উপর তার বিশ্বাস ছিল। (আদিপুস্তক ২৩:২; তুলনা করুন ইব্রীয় ১১:৮-১০, ১৭-১৯.) অনুতপ্ত দায়ূদ ভেবেছিলেন যে তার পাপের জন্য তিনি যিহোবার পরিচর্যা করার ক্ষেত্রে অযোগ্য। (গীতসংহিতা ৫১:১১) মোশির মধ্যে অক্ষমতার এক অনুভূতি ছিল। (যাত্রাপুস্তক ৪:১০) ইপাফ্রদীত নিরাশ হয়ে পড়েছিলেন যখন তিনি জানতে পারেন যে গুরুতর অসুস্থতা তাকে ‘খ্রীষ্টের কার্য্য’ করার ক্ষেত্রে সীমিত করে তুলেছে। (ফিলিপীয় ২:২৫-৩০) পৌলকে তার অসিদ্ধ মাংসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হয়েছিল। (রোমীয় ৭:২১-২৫) ইবদিয়া ও সুন্তুখী, ফিলিপীয় মণ্ডলীর দুজন অভিষিক্ত বোন, তাদেরও একে অপরের সাথে মানিয়ে চলার সমস্যা ছিল। (ফিলিপীয় ১:১; ৪:২, ৩) এটা জানা কতই না উৎসাহের বিষয় যে এই বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের আমাদেরই মত অনুভূতি ও অভিজ্ঞতা ছিল, কিন্তু তবুও তারা হাল ছেড়ে দেননি! এমনকি যিহোবাও তাদের ছেড়ে দেননি।
১৪. (ক) তাঁর বাক্য থেকে শক্তি অর্জন করার জন্য যিহোবা কোন্ মাধ্যমটি ব্যবহার করেছেন? (খ) কেন প্রহরীদুর্গ ও সচেতন থাক! পত্রিকাগুলি সামাজিক, পারিবারিক ও মানসিক বিষয়ের উপর প্রবন্ধগুলি প্রকাশ করে থাকে?
১৪ তাঁর বাক্যের থেকে শক্তি সঞ্চয় করার জন্য, বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্ দাস শ্রেণীকে যিহোবা ব্যবহার করেন যাতে করে আমরা “উপযুক্ত সময়ে খাদ্য” ক্রমাগতভাবে পেয়ে যেতে পারি। (মথি ২৪:৪৫) বহুদিন ধরে বিশ্বস্ত দাস বাইবেলের সত্যকে রক্ষা করতে ও মানুষের একমাত্র আশা হিসাবে ঈশ্বরের রাজ্যকে প্রচার করতে প্রহরীদুর্গ ও সচেতন থাক! পত্রিকাগুলি ব্যবহার করে এসেছে। বিশেষকরে গত কয়েক দশক ধরে, এই পত্রিকাগুলি সামাজিক, পারিবারিক ও মানসিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা, যার সম্মুখীন এমনকি ঈশ্বরের লোকেরা পর্যন্ত হয়ে থাকে, সেই বিষয়ের উপর সময়োপযোগী শাস্ত্রীয় প্রবন্ধগুলিকে প্রকাশ করে এসেছে। এই তথ্যগুলি কোন্ উদ্দেশ্যে ছাপা হয়েছে? অবশ্যই যারা এই প্রতিদ্বন্দ্বিতার মোকাবিলা করছে তাদের সাহায্য করার জন্য, যাতে করে ঈশ্বরের বাক্য থেকে তারা শক্তি ও উৎসাহ পেতে পারে। কিন্তু এই প্রবন্ধগুলি আমাদের সেই সব ভাইবোনেদের প্রতিও সঠিক উপলব্ধি বজায় রাখতে সাহায্য করে যারা এগুলির মোকাবিলা করছে। এর ফলে আমরা পৌলের বাক্য আরও ভালভাবে প্রয়োগ করার জন্য উপযুক্ত হব যা বলে: “ক্ষীণসাহসদিগকে সান্ত্বনা কর, দুর্ব্বলদিগের সাহায্য কর, সকলের প্রতি দীর্ঘসহিষ্ণু হও।”—১ থিষলনীকীয় ৫:১৪.
প্রাচীনেরা যারা “বাত্যা হইতে আচ্ছাদন”
১৫. যারা প্রাচীন হিসাবে কাজ করছে তাদের সম্বন্ধে যিশাইয় কী ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন এবং এটি তাদের উপর কোন্ দায়িত্বভার আরোপ করে?
১৫ যখন আমরা শ্রান্ত হয়ে পড়ি, তখন আমাদের সাহায্য করার জন্য যিহোবা আরেকটি সাহায্য দিয়েছেন—তা হল মণ্ডলীর প্রাচীনেরা। তাদের সম্বন্ধে ভাববাদী যিশাইয় লেখেন: “যেমন বাত্যা হতে আচ্ছাদন, ও ঝটিকা হতে অন্তরাল, যেমন শুষ্ক স্থানে জলস্রোত ও শ্রান্তিজনক ভূমিতে কোন প্রকাণ্ড শৈলের ছায়া, এক জন মনুষ্যকে অবশ্যই তা হতে হবে।” (যিশাইয় ৩২:১, ২ NW) সুতরাং, যিহোবা তাদের বিষয় যা ভাববাণী করেছিলেন, প্রাচীনদের দায়িত্ব রয়েছে সেই অনুসারে চলা। অপরের জন্য সান্ত্বনা ও সতেজতার এক উৎস তাদের “অবশ্যই তা হতে হবে” এবং তারা “এক জন অন্যের ভার [অথবা, “অসুবিধাজনক বস্তুগুলি”; আক্ষরিকভাবে “ভারী বস্তুগুলি”] বহন” করতে ইচ্ছুক হবে। (গালাতীয় ৬:২, NW, পাদটীকা) এটা তারা কিভাবে করতে পারে?
১৬. যারা নিজেদের প্রার্থনা করার ক্ষেত্রে অযোগ্য বলে মনে করে তাদের প্রাচীনেরা কিভাবে সাহায্য করতে পারে?
১৬ আগে যেমন উল্লেখ করা হয়েছে, অনেক সময় একজন ব্যক্তি যখন শ্রান্ত হয়ে পড়েছে তখন সে হয়ত প্রার্থনা করতে নিজেকে অযোগ্য বলে মনে করতে পারে। প্রাচীনেরা কী করতে পারে? তারা সেই ব্যক্তিটির সাথে ও তার জন্য প্রার্থনা করতে পারে। (যাকোব ৫:১৪) শ্রান্ত ব্যক্তির কর্ণগোচরে যিহোবার কাছে শুধু এটি বলা যে তিনি যেন তাকে সাহায্য করেন বোঝাতে যে সে যিহোবার কত প্রিয়পাত্র এটাই একটা সান্ত্বনার বিষয় হতে পারে। একজন প্রাচীনের মুখে গভীর, হৃদয়গ্রাহী প্রার্থনা শোনাই হয়ত একজন দুঃখিত ব্যক্তিকে দৃঢ়তা ও আস্থা গড়ে তুলতে সাহায্য করতে পারে। তাকে হয়ত এই যুক্তি দেখিয়ে সাহায্য করা যেতে পারে যে যদি প্রাচীনেরা নিশ্চিত থাকেন যে তার হয়ে প্রার্থনা যিহোবা শুনবেন তাহলে একই আস্থা সেই ব্যক্তিরও থাকতে পারে।
১৭. কেন প্রাচীনদের সংবেদনশীল শ্রোতা হতে হবে?
১৭ “প্রত্যেক জন শ্রবণে সত্বর, কথনে ধীর . . . হউক,” যাকোব ১:১৯ পদ বলে। শ্রান্ত ব্যক্তিদের শক্তি ফিরিয়ে আনার জন্য, প্রাচীনদের অবশ্যই সংবেদনশীল শ্রোতা হতে হবে। কয়েকটি ক্ষেত্রে মণ্ডলীর সদস্যেরা হয়ত এমন কিছু সমস্যা বা চাপের মোকাবিলা করছে যার সমাধান এই বিধিব্যবস্থার মধ্যে হওয়া সম্ভব নয়। তাদের হয়ত সমস্যা “সমাধান” করার প্রয়োজন নেই, কিন্তু কেবল একজন উত্তম শ্রোতার কাছে তা বলা—এমন একজন যে তাদের বলবে না যে তাদের কিধরনের মনোভাব থাকা উচিত, কিন্তু তারা কোনরকম বিচার না করেই তা শুনবে।—লূক ৬:৩৭; রোমীয় ১৪:১৩.
১৮, ১৯. (ক) তৎপরতার সাথে শোনার মাধ্যমে কিভাবে একজন প্রাচীন শ্রান্ত ব্যক্তির ভারকে আরও ভারী করার থেকে এড়িয়ে চলতে পারে? (খ) যখন প্রাচীনেরা “সমমনা”র মনোভাব দেখায় তখন তার ফল কী দাঁড়ায়?
১৮ প্রাচীনেরা, যারা সত্বর শ্রবণ করে তারা হয়ত অজান্তে শ্রান্ত ব্যক্তিদের চাপ বৃদ্ধি করাকে কমিয়ে তুলতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যদি কোন ভাই বা বোন কয়েকটি সভাতে উপস্থিত না থাকে অথবা ক্ষেত্রের পরিচর্যায় তারা যদি শিথিল হয়ে পড়ে, তাহলে পরিচর্যায় আরও অতিরিক্ত কিছু করা অথবা সভাগুলিতে নিয়মিতভাবে আসা সম্বন্ধে তাদের কি প্রকৃতই উপদেশের প্রয়োজন আছে? হয়ত আছে। কিন্তু সম্পূর্ণ পরিস্থিতি কি আপনার কাছে স্পষ্ট? স্বাস্থ্যের সমস্যা কি ক্রমশই বৃদ্ধি পেয়েছে? পারিবারিক দায়িত্বগুলির ক্ষেত্রে কি সম্প্রতি কোন পরিবর্তন ঘটেছে? অন্যান্য পরিস্থিতি অথবা চাপগুলি কি তাকে ভারগ্রস্ত করে তুলেছে? মনে রাখবেন যে, অধিক কিছু না করতে পারার দরুন একজন ব্যক্তি হয়ত ইতিমধ্যেই নিজেকে অত্যন্ত দোষী বলে মনে করতে পারে।
১৯ তাহলে, ভাই বা বোনকে আপনি কিভাবে সাহায্য করতে পারেন? সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া এবং উপদেশ দেওয়ার আগে, শুনুন! (হিতোপদেশ ১৮:১৩) বিবেচনামূলক প্রশ্নগুলির সাহায্যে সেই ব্যক্তিটির হৃদয়ের অনুভূতিকে ‘বার করে আনার’ চেষ্টা করুন। (হিতোপদেশ ২০:৫) এই অনুভূতিগুলিকে উপেক্ষা করবেন না—এইগুলিকে স্বীকার করুন। শ্রান্ত ব্যক্তিদের আবার হয়ত নিশ্চয়তা দেওয়ার দরকার আছে যে যিহোবা আমাদের বিষয় চিন্তা করেন এবং বোঝেন যে এক এক সময় আমাদের পরিস্থিতি আমাদের সীমাবদ্ধ করে তোলে। (১ পিতর ৫:৭) যখন প্রাচীনেরা এইধরনের “সমমনা” মনোভাব শ্রান্ত ব্যক্তিদের প্রতি দেখিয়ে থাকেন তখন তারা ‘তাদের প্রাণের জন্য বিশ্রাম পায়।’ (১ পিতর ৩:৮; মথি ১১:২৮-৩০) যখন তারা এইধরনের সতেজতা পাবে, তখন তাদের আরও অধিক কিছু করতে বলার প্রয়োজন হবে না; যথার্থভাবে সাধ্যমত যিহোবাকে সেবা করতে হৃদয়ই তাদের অনুপ্রাণিত করবে।—তুলনা করুন ২ করিন্থীয় ৮:১২; ৯:৭.
২০. যেহেতু এই দুষ্ট বংশের শেষ সন্নিকট, অতএব আমরা কী করতে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হব?
২০ অবশ্যই আমরা মানব ইতিহাসের সবচাইতে কঠিন সময় বাস করছি। যতই আমরা শেষকালের গভীরে প্রবেশ করছি ততই শয়তানের জগতে বাস করার চাপ আমাদের উপর বৃদ্ধি পাচ্ছে। মনে রাখবেন যে, এক শিকারী সিংহের মত, দিয়াবল অপেক্ষা করে আছে আমরা যেন শ্রান্ত হয়ে পড়ি এবং হাল ছেড়ে দিই যাতে করে আমাদের এক সহজ শিকার বানাবার সুযোগ সে নিতে পারে। আমরা কতই না কৃতজ্ঞ যে যিহোবা ক্লান্ত ব্যক্তিদের শক্তি দান করে থাকেন! ক্রমাগতভাবে এগিয়ে চলার শক্তি সরবরাহ করা, ঠিক যেন ক্ষমতাশালী উড্ডীয়মান ঈগল পাখির মত ডানা তিনি আমাদের দিয়েছেন, এই ব্যবস্থাগুলির পূর্ণ সুযোগ যেন আমরা নিই। যেহেতু এই দুষ্ট বংশের শেষ এত কাছে এগিয়ে এসেছে, অতএব অনন্তজীবনরূপ—পুরস্কারের এই দৌড়ে আমাদের এখন থেমে থাকার সময় নয়।—ইব্রীয় ১২:১.
আপনার উত্তর কী?
◻ আমাদের প্রার্থনার উত্তরে যিহোবার কাছ থেকে আমরা কী আশা করতে পারি?
◻ আমাদের খ্রীষ্টীয় ভ্রাতৃসমাজ থেকে আমরা কোন্ উপায়ে শক্তি অর্জন করতে পারি?
◻ কিভাবে ঈশ্বরের বাক্য আমাদের শক্তি অর্জন করতে সাহায্য করতে পারে?
◻ শ্রান্ত ব্যক্তিদের শক্তি ফিরিয়ে আনার জন্য প্রাচীনেরা কী করতে পারে?
[১৭ পৃষ্ঠার চিত্র]
আতিথেয়তা দেখানোর সময়, আসুন আমরা যেন তাদের না ভুলে যাই যাদের উৎসাহের প্রয়োজন আছে
[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]
প্রাচীনেরা যিহোবার কাছে প্রার্থনা করতে পারে সেই সব শ্রান্ত ব্যক্তিদের সাহায্য করতে যাতে করে তারা বুঝতে পারে যে তিনি তাদের কতখানি ভালবাসেন