“সত্য ও শান্তি ভালবাসিও”!
“বাহিনীগণের সদাপ্রভুর এই বাক্য আমার নিকটে উপস্থিত হইল, . . . সত্য ও শান্তি ভালবাসিও।”—সখরিয় ৮:১৮, ১৯.
১, ২. (ক) শান্তির পরিপ্রেক্ষিতে মানবজাতির রেকর্ড কী দেখায়? (খ) কেন এই বর্তমান জগৎ প্রকৃত শান্তি দেখতে পাবে না?
“জগতে কখনও শান্তি আসেনি। কোথাও না কোথাও—এবং প্রায়ই বহু স্থানে এক সাথে—সবসময়ই যুদ্ধ হয়ে এসেছে।” এই কথা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের, ম্যাসাচুসেটস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, মিলটন মেয়ার বলেন। মানবজাতির বিষয় এটা কতই না এক দুঃখজনক মন্তব্য! এটা সত্যি যে, মানুষ শান্তি চেয়েছিল। রাজনীতিবিদ্রা বিভিন্ন উপায়ে এটিকে বজায় রাখার চেষ্টা করেছিল, রোমীয়দের সময়কালীন প্যাক্স রোমানা থেকে আরম্ভ করে, ঠাণ্ডা লড়াইয়ের সময় “মিউচুয়ালি অ্যাসিওর্ড ডিস্ট্রাকসন” নামক পন্থাটি পর্যন্ত তারা গ্রহণ করেছিল। পরিশেষে, যদিও তাদের সমস্ত প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। বহু শতাব্দী আগে যেমন যিশাইয় ব্যক্ত করেছিলেন, ‘সন্ধির দূতগণ তীব্র রোদন করিতেছে।’ (যিশাইয় ৩৩:৭) কেন এটি হয়েছিল?
২ এর কারণ হল বিদ্বেষ ও লোভের অনুপস্থিতিতেই স্থায়ী শান্তি আসবে; সত্যই হবে এর ভিত্তি। শান্তি কখনও মিথ্যার ভিত্তিতে গড়ে উঠতে পারে না। এই কারণেই যিহোবা, প্রাচীন ইস্রায়েলের ক্ষেত্রে পুনর্প্রতিষ্ঠা ও শান্তির প্রতিজ্ঞা করার সময় বলেছিলেন: “দেখ, আমি তাহার দিকে নদীর ন্যায় শান্তি ও উত্থলিত বন্যার ন্যায় জাতিগণের প্রতাপ বহাইব।” (যিশাইয় ৬৬:১২) এই যুগের দেব, শয়তান দিয়াবল হল “নরঘাতক”, খুনী এবং “মিথ্যাবাদী ও তাহার পিতা।” (যোহন ৮:৪৪; ২ করিন্থীয় ৪:৪) এই জগতে যেখানে এধরনের দেব রয়েছে সেখানে কিভাবে শান্তি থাকতে পারে?
৩. বিক্ষুব্ধ জগতে থাকা সত্ত্বেও, যিহোবা তাঁর লোকেদের কোন্ উল্লেখযোগ্য উপহার দিয়েছেন?
৩ উল্লেখযোগ্য বিষয় হল যে, শয়তানের এই যুদ্ধ-বিধ্বস্ত জগতে থাকা সত্ত্বেও যিহোবা তাঁর লোকেদের শান্তি দিয়ে থাকেন। (যোহন ১৭:১৬) সা.শ.পূ. ষষ্ঠ শতাব্দীতে, যিরমিয়ের মাধ্যমে তিনি তাঁর প্রতিজ্ঞা পালন করেছিলেন এবং তাঁর বিশেষ জাতিকে “শান্তি ও সত্য” দিয়েছিলেন যখন তিনি তাদের নিজের দেশে পুনর্প্রতিষ্ঠিত করেন। (যিরমিয় ৩৩:৬) আর আজকের এই শেষকালে, তিনি তাঁর লোকেদের “শান্তি ও সত্য” দিয়েছেন তাদের নিজস্ব “দেশ”-এ, অথবা পার্থিব আধ্যাত্মিক স্থানে, এমনকি যদিও তারা আজ অবধি জগতের সবচাইতে নিকৃষ্ট সময় বাস করে এসেছে। (যিশাইয় ৬৬:৮; মথি ২৪:৭-১৩; প্রকাশিত বাক্য ৬:১-৮) সখরিয় ৮ অধ্যায়ের উপর ক্রমাগতভাবে যতই আমরা আলোচনা করে যাব, এই ঈশ্বর-দত্ত শান্তি ও সত্যের প্রতি আরও গভীর উপলব্ধিবোধ আমরা অর্জন করতে পারব আর বুঝতে পারব যে এটি বজায় রাখতে হলে আমাদের কী করতে হবে।
‘তোমাদের হস্ত সবল হউক’
৪. কিভাবে সখরিয় ইস্রায়েলীয়দের উৎসাহ দিয়েছিলেন কাজ করতে যদি তারা শান্তি উপভোগ করতে চায়?
৪ সখরিয় ৮ অধ্যায়ে, ষষ্ঠবার আমরা যিহোবার এক উত্তেজনামূলক ঘোষণা শুনতে পাই: “বাহিনীগণের সদাপ্রভু এই কথা কহেন, বাহিনীগণের সদাপ্রভুর গৃহের ভিত্তিমূল স্থাপনকালীন ভাববাদীদের মুখে এই বর্ত্তমান কালে এই সকল কথা শুনিতে পাইতেছ যে তোমরা, তোমাদের হস্ত সবল হউক; মন্দির নির্ম্মিত হইবে। বস্তুতঃ সেই দিনের পূর্ব্বে মনুষ্যের বেতন ছিল না, পশুর ভাড়াও ছিল না; এবং যে কেহ ভিতরে আসিত কিম্বা বাহিরে যাইত, বিপক্ষ লোকের জন্য তাহার কিছুই শান্তি হইত না; আর আমি প্রত্যেক জনকে আপন আপন প্রতিবাসীর বিপক্ষে প্রেরণ করিতাম।”—সখরিয় ৮:৯, ১০.
৫, ৬. (ক) ইস্রায়েলীয়দের নিরুৎসাহের ফলে, ইস্রায়েলের পরিস্থিতি কেমন দাঁড়িয়েছিল? (খ) যদি তাঁর উপাসনাকে প্রথম স্থান দেয়, তাহলে ইস্রায়েলের উদ্দেশ্যে কোন্ পরিবর্তন আনবেন বলে যিহোবা প্রতীজ্ঞা করেছিলেন?
৫ সখরিয় এই কথাগুলি বলেন যখন যিরূশালেমে মন্দিরটি পুনর্নিমিত হয়। এর আগে, ইস্রায়েলীয়রা, যারা বাবিলন থেকে ফিরে আসে তারা নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েছিল এবং মন্দির নির্মাণের কাজ বন্ধ করে দিয়েছিল। যেহেতু তারা নিজেদের সুখের প্রতি দৃষ্টি দিয়েছিল অতএব তাদের উপর যিহোবার কোন আশীর্বাদ ও শান্তি ছিল না। যদিও তারা তাদের জমি চাষ ও দ্রাক্ষাক্ষেত্রের যত্ন নিয়েছিল কিন্তু তারা সমৃদ্ধি পায়নি। (হগয় ১:৩-৬) তারা যেন ঠিক “বেতন” ছাড়াই কাজ করেছিল।
৬ এখন মন্দির পুনর্নির্মিত হওয়াতে, সখরিয় যিহূদীদের “সবল” হতে উৎসাহ দেন যিহোবার উপাসনাকে প্রথম স্থানে রাখার ক্ষেত্রে। যদি তারা তা করত তাহলে কী হত? “এখন আমি এই লোকদের অবশিষ্টাংশের প্রতি পূর্ব্বকার দিন-সমূহের ন্যায় ব্যবহার করিব না, ইহা বাহিনীগণের সদাপ্রভু বলেন। কেননা শান্তিযুক্ত বীজ হইবে, দ্রাক্ষালতা ফলবতী হইবে, ভূমি আপন শস্য উৎপন্ন করিবে, ও আকাশ আপন শিশির দান করিবে; আর আমি এই লোকদের অবশিষ্টাংশকে এই সকলের অধিকারী করিব। আর হে যিহূদা-কুল ও ইস্রায়েল-কুল, জাতিগণের মধ্যে তোমরা যেমন অভিশাপস্বরূপ ছিলে, তেমনি আমি তোমাদিগকে নিস্তার করিব, আর তোমরা আশীর্ব্বাদস্বরূপ হইবে; ভয় করিও না; তোমাদের হস্ত সবল হউক।” (সখরিয় ৮:১১-১৩) যদি ইস্রায়েল দৃঢ় সঙ্কল্প নিয়ে কাজ করে, তাহলে সে সমৃদ্ধি লাভ করবে। পূর্বে, জাতিগণ যখন অভিশাপের কোন উদাহরণ দিতে চাইত ইস্রায়েলের প্রতি ইঙ্গিত করত। কিন্তু এখন ইস্রায়েল হবে আশীর্বাদের এক উদাহরণ। ‘নিজেদের হাত সবল করার’ কতই না উত্তম কারণ!
৭. (ক) কোন্ রোমাঞ্চকর পরিবর্তন যিহোবার লোকেরা অভিজ্ঞতা করেছিল যা ১৯৯৫ সালের পরিচর্যা বছরে চরম পর্যায় পৌঁছায়? (খ) বার্ষিক রিপোর্টের দিকে তাকালে কোন্ দেশগুলিতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে প্রকাশক, অগ্রগামী ও গড় প্রতি ঘন্টা দেখা যায়?
৭ আজকের দিন সম্বন্ধে কী বলা যায়? ১৯১৯ সালের পূর্ববর্তী বছরগুলিতে যিহোবার লোকেদের মধ্যে উদ্যোগের এক অভাব ছিল। তারা প্রথম বিশ্বযুদ্ধে সম্পূর্ণরূপে নিরপেক্ষতার পদক্ষেপ নেয়নি এবং রাজা যীশু খ্রীষ্টের অনুগামী হওয়ার পরিবর্তে মানুষের অনুগামী হওয়ার প্রবণতা তাদের মধ্যে ছিল। এর ফলে কয়েকজন সংগঠনের ভিতর ও বাইরে থেকে আসা বিরোধিতার জন্য নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েছিল। এরপর, ১৯১৯ সালে যিহোবার সাহায্যে তারা তাদের হস্ত সবল করতে পেরেছিল। (সখরিয় ৪:৬) যিহোবা তাদের শান্তি দেন এবং তারা প্রচুরভাবে সমৃদ্ধশালী হয়। এটি তাদের গত ৭৫ বছরের রেকর্ডে দেখা যায় যা ১৯৯৫ সালের পরিচর্যা বছরে চরম পর্যায় পৌঁছায়। দলগতভাবে যিহোবার সাক্ষীরা জাতীয়তাবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, কুসংস্কার এবং অন্য যে কোন ধরনের বিদ্বেষকে বর্জন করে চলে। (১ যোহন ৩:১৪-১৮) তারা আন্তরিক উদ্যোগের সাথে তাঁর আত্মিক মন্দিরে যিহোবার পরিচর্যা করে থাকে। (ইব্রীয় ১৩:১৫; প্রকাশিত বাক্য ৭:১৫) কেবল গত বছরেই তারা একশো কোটি ঘন্টা অপরের কাছে তাদের স্বর্গীয় পিতার সম্বন্ধে বলতে ব্যয় করেছে! প্রতি মাসে, তারা ৪৮,৬৫,০৬০টি বাইবেল অধ্যয়ন পরিচালনা করেছে। গড়ে প্রতি মাসে ৬,৬৩,৫২১ জন অগ্রগামীর কাজে অংশ গ্রহণ করেছে। যখন খ্রীষ্টজগতের পরিচারকেরা এমন কোন লোকেদের উদাহরণ দিতে চায় যারা তাদের উপাসনার ক্ষেত্রে সত্যই উদ্যোগী তখন অনেক সময় তারা যিহোবার সাক্ষীদের কথা উল্লেখ করে।
৮. “শান্তিযুক্ত বীজ” থেকে প্রতিটি খ্রীষ্টান কিভাবে উপকার লাভ করতে পারে?
৮ তাদের এই উদ্যোগের জন্যই, যিহোবা তাঁর লোকেদের “শান্তিযুক্ত বীজ” দিয়ে থাকেন। প্রতিটি ব্যক্তি যারা এই বীজকে গড়ে তুলবে তারা তাদের হৃদয়ের ও জীবনের মধ্যে শান্তিকে বৃদ্ধি পেতে দেখবে। প্রতিটি বিশ্বাসী খ্রীষ্টানেরা যারা যিহোবা ও সহখ্রীষ্টানদের সাথে শান্তির অনুধাবন করে তারা সেই সব লোকেদের সত্য ও শান্তির অংশীদার হয় যারা যিহোবার নাম ধারণ করে। (১ পিতর ৩:১১; তুলনা করুন যাকোব ৩:১৮) এটি কি এক উত্তম বিষয় নয়?
“ভয় করিও না”
৯. তাঁর লোকেদের সাথে আচরণের ক্ষেত্রে পরিবর্তন সম্বন্ধে যিহোবা কী প্রতিজ্ঞা করেছিলেন?
৯ এখন আমরা যিহোবার সপ্তম ঘোষণাটি পড়ি। সেটি কী? “বাহিনীগণের সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তোমাদের পিতৃপুরুষেরা আমাকে ক্রুদ্ধ করাতে আমি যেমন তোমাদের অমঙ্গল সাধনের সঙ্কল্প করিলাম, অনুশোচনা করিলাম না, বাহিনীগণের সদাপ্রভু কহেন, তেমনি ফিরিয়া এই সময়ে যিরূশালেমের ও যিহূদা-কুলের মঙ্গল সাধনের সঙ্কল্প করিলাম; তোমরা ভয় করিও না।”—সখরিয় ৮:১৪, ১৫.
১০. যিহোবার সাক্ষীদের কোন্ রেকর্ড দেখায় যে তারা ভয় পায়নি?
১০ যদিও প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় যিহোবার লোকেরা আধ্যাত্মিক অর্থে ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়েছিল, কিন্তু যেটা ঠিক সেটাই তারা অন্তর থেকে করতে চেয়েছিল। অতএব, যিহোবা, কিছু অনুশাসন বলবৎ করার পর, তাদের সাথে তাঁর আচরণের ধারা পরিবর্তন করেন। (মালাখি ৩:২-৪) আজকে, আমরা যখন ফিরে তাকাই তখন তিনি যা করেছেন তার জন্য আমরা তাকে ঐকান্তিকভাবে ধন্যবাদ দিই। এটা সত্য যে, আমরা ‘সমুদয় জাতির কাছে দ্বেষ করার পাত্র হয়ে উঠেছি।’ (মথি ২৪:৯) অনেকে কারাবদ্ধ হয়েছে এবং কিছু লোক তাদের বিশ্বাসের জন্য মৃত্যু পর্যন্ত বরণ করেছে। প্রায়ই আমরা উদাসীনতা অথবা বিরোধিতার মুখোমুখি হই। কিন্তু আমরা ভীত নই। আমরা জানি যে যিহোবা দৃশ্য অথবা অদৃশ্য যে কোন বিরোধিতার থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী। (যিশাইয় ৪০:১৫; ইফিষীয় ৬:১০-১৩) আমরা এই বাক্যগুলি পালন করার থেকে কখনই বিরত হব না: “সদাপ্রভুর অপেক্ষায় থাক; সাহস কর, তোমার অন্তঃকরণ সবল হউক।”—গীতসংহিতা ২৭:১৪.
“আপন আপন প্রতিবাসীর কাছে সত্য বলিও”
১১, ১২. যিহোবা তাঁর লোকেদের যেভাবে আশীর্বাদ করেন তা পূর্ণ মাত্রায় যদি আমরা পেতে চাই, তাহলে আমাদের ব্যক্তিগতভাবে কোন্ বিষয়টি মনে রাখতে হবে?
১১ যিহোবার আশীর্বাদ সম্পূর্ণরূপে পেতে হলে, কয়েকটি জিনিস আমাদের মনে রাখা উচিত। সখরিয় বলেছিলেন: “তোমরা এই সকল কার্য্য করিও, আপন আপন প্রতিবাসীর কাছে সত্য বলিও, তোমাদের নগর-দ্বারে সত্য ও শান্তিজনক বিচার করিও। আর মনে মনে আপন আপন প্রতিবাসীর অনিষ্ট চিন্তা করিও না, এবং মিথ্যা দিব্য ভালবাসিও না; কেননা এই সকল আমি ঘৃণা করি, ইহা সদাপ্রভু বলেন।”—সখরিয় ৮:১৬, ১৭.
১২ যিহোবা আমাদের সত্য কথা বলতে উৎসাহিত করছেন। (ইফিষীয় ৪:১৫, ২৫) তিনি সেইসব ব্যক্তিদের প্রার্থনা শোনেন না যারা অনিষ্টকরণের কথা চিন্তা করে, নিজের ব্যক্তিগত সুবিধার জন্য সত্যকে লুকিয়ে রাখে অথবা মিথ্যা দিব্য দেয়। (হিতোপদেশ ২৮:৯) যেহেতু তিনি ধর্মভ্রষ্টতাকে ঘৃণা করেন, তাই তিনি চান যে আমরা যেন বাইবেলের সত্যকে ধরে রাখি। (গীতসংহিতা ২৫:৫; ২ যোহন ৯- ১১) এছাড়াও, ইস্রায়েলের নগর-দ্বারে প্রাচীন ব্যক্তিদের মত, প্রাচীনেরা যারা বিচার সংক্রান্ত বিষয় পরিচালনা করছেন তাদের উচিত ব্যক্তিগত ধারণার উপর নয়, বরঞ্চ বাইবেল সত্যের উপর ভিত্তি করে উপদেশ ও সিদ্ধান্ত নেওয়া। (যোহন ১৭:১৭) যিহোবা চান যে খ্রীষ্টীয় পালক হিসাবে তারা যেন “শান্তিজনক বিচার”এর অনুধাবন করেন এবং সংঘর্ষে লিপ্ত দুটি দলের মধ্যে শান্তি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেন এবং অনুতপ্ত পাপীদের ঈশ্বরের সাথে আবার শান্তি ফিরে পেতে সাহায্য করেন। (যাকোব ৫:১৪, ১৫; যিহূদা ২৩) একই সাথে তারা, মণ্ডলীতে শান্তি বজায় রাখেন, সাহসের সাথে সেইসব ব্যক্তিদের বহিষ্কার করে দেন যারা ইচ্ছাকৃতভাবে অন্যায় কাজ করার দ্বারা শান্তিকে বিঘ্নিত করছে।—১ করিন্থীয় ৬:৯, ১০.
“আনন্দ আমোদ”
১৩. (ক) উপবাস সম্বন্ধে কোন্ পরিবর্তনের কথা সখরিয় ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন? (খ) ইস্রায়েলে কোন্ উপবাস পালন করা হত?
১৩ এখন, আমরা অষ্টম গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণাটি শুনি: “বাহিনীগণের সদাপ্রভু এই কথা কহেন, চতুর্থ, পঞ্চম, সপ্তম ও দশম মাসের যে সকল উপবাস, সে সকল যিহূদা-কূলের জন্য আনন্দ, আমোদ এবং মঙ্গলোৎসব হইয়া উঠিবে; অতএব তোমরা সত্য ও শান্তি ভালবাসিও।” (সখরিয় ৮:১৯) মোশির নিয়মের অধীনে, ইস্রায়েলীয়রা তাদের পাপের প্রতি দুঃখ প্রকাশ করার জন্য প্রায়শ্চিত্তের দিন উপবাস করত। (লেবীয়পুস্তক ১৬:২৯-৩১) সখরিয়ের দ্বারা উল্লেখিত চারটি উপবাস, আপাতদৃষ্টিতে পালন করা হত বিশেষকরে যিরূশালেমের বিজয় ও ধ্বংসকে কেন্দ্র করে। (২ রাজাবলি ২৫:১-৪, ৮, ৯, ২২-২৬) এখন যদিও, মন্দির পুনর্নির্মাণ করা হয়ে গেছে এবং যিরূশালেমও পুনর্বার জনসংখ্যায় ভরে গেছে। শোক এখন আনন্দে এবং উপবাসগুলি উৎসবে পরিণত হয়েছে।
১৪, ১৫. (ক) স্মরণার্থক উৎসব কিভাবে এক আনন্দের কারণ, আর তা আমাদের কোন্ বিষয়টিকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া উচিত? (খ) বার্ষিক রিপোর্টে যেমন দেখা যায়, কোন্ দেশগুলিতে স্মরণার্থক দিবসের উপস্থিতির সংখ্যা উল্লেখযোগ্য?
১৪ আজকে, সখরিয়ের দ্বারা অথবা নিয়মে উল্লেখিত উপবাসগুলি, আমরা পালন করি না। যেহেতু যীশু আমাদের পাপের জন্য তাঁর নিজের জীবন দিয়েছেন, আমরা প্রায়শ্চিত্তের মহান দিনের আশীর্বাদগুলি উপভোগ করছি। আমাদের পাপের মোচন হয়েছে, কেবল আপেক্ষিকভাবে নয়, কিন্তু সম্পূর্ণভাবে। (ইব্রীয় ৯:৬-১৪) স্বর্গীয় মহাযাজক, যীশু খ্রীষ্টের, আদেশ অনুসারে আমরা খ্রীষ্টীয় ক্যালেন্ডারে একমাত্র উৎসব হিসাবে তাঁর মৃত্যুর স্মরণার্থক দিবস পালন করে থাকি। (লূক ২২:১৯, ২০) প্রতি বছর আমরা যখন এই উৎসবটি পালন করি তখন আমরা কি “আনন্দ আমোদ” উপভোগ করি না?
১৫ গত বছর, ১,৩১,৪৭,২০১ জন স্মরণার্থক দিবস পালন করার জন্য একত্রিত হয় যা ১৯৯৪ সালের তুলনায় ৮,৫৮,২৮৪ জন বেশি। কতই না এক বৃহৎ সংখ্যা! যিহোবার সাক্ষীদের ৭৮,৬২০টি মণ্ডলীগুলিতে অসাধারণ সংখ্যায় মানুষেরা তাদের কিংডম হলে এই উৎসবে যোগদান করার সময় আনন্দের বিষয়টি কল্পনা করে দেখুন। অবশ্যই, প্রত্যেকে যারা উপস্থিত ছিল তারা অনুপ্রাণিত হয় ‘সত্য ও শান্তি ভালবাসতে’ যখন তারা সেই ব্যক্তির মৃত্যুকে স্মরণ করে যিনি হলেন “পথ ও সত্য ও জীবন” এবং যিনি এখন যিহোবার “শান্তিরাজ” হিসাবে শাসন করছেন! (যোহন ১৪:৬; যিশাইয় ৯:৬) সেইসব দেশ যেগুলি অশান্তি ও যুদ্ধের দ্বারা বিধ্বস্ত সেখানকার মানুষদের কাছে এই উৎসব এক বিশেষ অর্থ রাখে। আমাদের কিছু ভাইয়েরা ১৯৯৫ সালে অবর্ণনীয় ভীতির সম্মুখীন হয়। কিন্তু তবুও, ‘সমস্ত চিন্তার অতীত যে ঈশ্বরের শান্তি, তা তাদের হৃদয় ও মন খ্রীষ্ট যীশুতে রক্ষা করেছে।’—ফিলিপীয় ৪:৭.
‘চল আমরা সদাপ্রভুর কাছে বিনতি করি’
১৬, ১৭. কিভাবে জাতিগণের পক্ষে “সদাপ্রভুর কাছে বিনতি” করা সম্ভব?
১৬ স্মরণার্থক দিবসে যোগদানকারী সেইসব লক্ষাধিক ব্যক্তিরা কোথা থেকে আসল? যিহোবার নবম ঘোষণাটি এর ব্যাখ্যা দেয়: “বাহিনীগণের সদাপ্রভু এই কথা কহেন, ইহার পরে নানা জাতি এবং অনেক নগরের নিবাসীরা আসিবে। এক নগরের নিবাসীরা অন্য নগরে গিয়া এই কথা বলিবে, চল আমরা সদাপ্রভুর কাছে বিনতি করিতে ও বাহিনীগণের সদাপ্রভুর অন্বেষণ করিতে শীঘ্র যাই; আমিও যাইব। আর অনেক দেশের লোক ও বলবান জাতিগণ বাহিনীগণের সদাপ্রভুর অন্বেষণ করিতে ও সদাপ্রভুর কাছে বিনতি করিতে যিরূশালেমে আসিবে।”—সখরিয় ৮:২০-২২.
১৭ যেসব লোকেরা স্মরণার্থক দিবসে যোগদান করেছে তারা “বাহিনীগণের সদাপ্রভুর অন্বেষণ” করতে চায়। এদের মধ্যে অনেকেই হল তাঁর উৎসর্গীকৃত, বাপ্তাইজিত দাস। যোগদানকারীদের মধ্যে লক্ষাধিক রয়েছে যারা এখনও সেই পর্যায় এসে পৌঁছায়নি। কয়েকটি দেশে স্মরণার্থক দিবসে উপস্থিতির সংখ্যা রাজ্যের প্রকাশকের সংখ্যার চাইতে চার বা পাঁচগুণ বেশি ছিল। অধিক সংখ্যার এই আগ্রহী ব্যক্তিদের সাহায্যের প্রয়োজন আছে যাতে করে তারা ক্রমাগতভাবে উন্নতি করে যেতে পারে। আসুন আমরা তাদের শেখাই এই জ্ঞানে আনন্দ করতে যে যীশু আমাদের পাপের জন্য মৃত্যু বরণ করেছেন এবং এখন তিনি ঈশ্বরের রাজ্যের অধীনে শাসন করছেন। (১ করিন্থীয় ৫:৭, ৮; প্রকাশিত বাক্য ১১:১৫) আর আসুন আমরা তাদের যিহোবা ঈশ্বরের কাছে নিজেদের উৎসর্গ করতে ও তাঁর মনোনীত রাজার কাছে বশ্যতা স্বীকার করতে উৎসাহ দিই। এইভাবে তারা “সদাপ্রভুর কাছে বিনতি করিতে” পারবে।—গীতসংহিতা ১১৬:১৮, ১৯; ফিলিপীয় ২:১২, ১৩.
“জাতিগণের সর্ব্ব ভাষাবাদী দশ দশ পুরুষ”
১৮, ১৯. (ক) সখরিয় ৮:২৩ পদের বর্তমান দিনের পরিপূর্ণতার ক্ষেত্রে কারা “এক যিহূদী পুরুষ”? (খ) কারা আজকের দিনে “দশ দশ পুরুষ” যারা “এক যিহূদী পুরুষের বস্ত্রের অঞ্চল ধরিয়া” আছে?
১৮ সখরিয় আট অধ্যায়ে শেষবারের মত আমরা পড়ি: “বাহিনীগণের সদাপ্রভু এই কথা কহেন।” যিহোবার শেষ ঘোষণাটি কী? “তৎকালে জাতিগণের সর্ব্ব ভাষাবাদী দশ দশ পুরুষ এক এক যিহূদী পুরুষের বস্ত্রের অঞ্চল ধরিয়া এই কথা কহিবে, আমরা তোমাদের সহিত যাইব, কেননা আমরা শুনিলাম, ঈশ্বর তোমাদের সহবর্ত্তী।” (সখরিয় ৮:২৩) সখরিয়ের দিনে, স্বাভাবিক ইস্রায়েলরা ছিল ঈশ্বরের মনোনীত জাতি। কিন্তু, প্রথম শতাব্দীতে, ইস্রায়েল যিহোবার মশীহকে প্রত্যাখ্যান করেছিল। অতএব, আমাদের ঈশ্বর “এক যিহূদী”—এক নতুন ইস্রায়েলকে—তাঁর বিশেষ লোক হিসাবে বেছে নিয়েছিলেন, আত্মিক যিহূদীদের নিয়ে গঠিত “ঈশ্বরের ইস্রায়েল।” (গালাতীয় ৬:১৬; যোহন ১:১১; রোমীয় ২:২৮, ২৯) এর সর্বমোট সংখ্যাটি হবে ১,৪৪,০০০ জন, যাদের স্বর্গীয় রাজ্যে যীশুর সাথে শাসন করার জন্য মানবজাতির মধ্যে থেকে বেছে নেওয়া হয়েছে। —প্রকাশিত বাক্য ১৪:১, ৪.
১৯ এই ১,৪৪,০০০ মধ্যে অধিকাংশই ইতিমধ্যে বিশ্বস্ততার সাথে মৃত্যু বরণ করেছে এবং তাদের স্বর্গীয় পুরস্কার লাভ করেছে। (১ করিন্থীয় ১৫:৫১, ৫২; প্রকাশিত বাক্য ৬:৯-১১) এদের অবশিষ্টাংশ পৃথিবীতে রয়েছে এবং তারা এই দেখে আনন্দ পাচ্ছে যে “দশ দশ পুরুষ” যারা “যিহূদী” ব্যক্তিটির সাথে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা অবশ্যই হল “প্রত্যেক জাতির ও বংশের ও প্রজাবৃন্দের ও ভাষার বিস্তর লোক।”—প্রকাশিত বাক্য ৭:৯; যিশাইয় ২:২, ৩; ৬০:৪-১০, ২২.
২০, ২১. যতই এই জগতের শেষ কাছের দিকে এগিয়ে আসছে, আমরা কিভাবে যিহোবার সাথে শান্তি বজায় রাখতে পারি?
২০ যতই এই জগতের শেষ অবশ্যম্ভাবীরূপে এগিয়ে আসছে, খ্রীষ্টজগৎ ঠিক যিরমিয়ের দিনে যিরূশালেমের মত প্রতিপন্ন হচ্ছে: “শান্তির অপেক্ষা করিলাম, কিছুই মঙ্গল হইল না; আরোগ্যকালের অপেক্ষা করিলাম, আর দেখ, উদ্বেগ!” (যিরমিয় ১৪:১৯) এই উদ্বেগ চরম পর্যায় পৌঁছাবে যখন জাতিগুলি মিথ্যা ধর্মের প্রতি দৃষ্টি দেবে এবং ভয়াবহরূপে তার ধ্বংস আনবে। এর কিছু সময় পরেই, জাতিগুলিও ঈশ্বরের শেষ যুদ্ধ, হর্মাগিদোনে, ধ্বংস প্রাপ্ত হবে। (মথি ২৪:২৯, ৩০; প্রকাশিত বাক্য ১৬:১৪, ১৬; ১৭:১৬-১৮; ১৯:১১-২১) কতই না এক উচ্ছৃঙ্খলতার সময় এটি হবে!
২১ এই সমস্ত কিছু থেকে, যিহোবা তাদেরই রক্ষা করবেন যারা সত্যকে ভালবাসে এবং “শান্তিযুক্ত বীজ” গড়ে তোলার চেষ্টা করে। (সখরিয় ৮:১২; সফনিয় ২:৩) অতএব, আসুন আমরা তাঁর লোকেদের দেশে নিরাপদে বাস করি, জনসাধারণ্যে উদ্যোগের সাথে তাঁর প্রশংসা করি এবং যতখানি সম্ভব লোকেদের সাহায্য করি “সদাপ্রভুর কাছে বিনতি” করতে। আমরা যদি তা করি, তাহলে সর্বদা যিহোবার শান্তি উপভোগ করতে পারব। হ্যাঁ, “সদাপ্রভু আপন প্রজাদিগকে বল দিবেন; সদাপ্রভু আপন প্রজাদিগকে শান্তি দিয়া আশীর্বাদ করিবেন।”—গীতসংহিতা ২৯:১১.
আপনি কি ব্যাখ্যা করতে পারেন?
◻ কিভাবে ঈশ্বরের লোকেরা ‘তাদের হস্ত সবল করেছিল’ সখরিয়ের দিনে? আজকের দিনে?
◻ তাড়না, বিরোধিতা এবং উদাসীনতার প্রতি আমরা কিভাবে সাড়া দেব?
◻ ‘আপন আপন প্রতিবাসীর কাছে সত্য বলার’ অন্তর্ভুক্ত কী?
◻ কিভাবে একজন ব্যক্তি “সদাপ্রভুর কাছে বিনতি করিতে” পারে?
◻ সখরিয় ৮:২৩ পদের পরিপূর্ণতাস্বরূপ মহানন্দের কোন্ কারণ দেখা যায়?
[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]
গত বছরে, যিহোবার সাক্ষীরা লোকেদের কাছে ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে বলার জন্য ১,১৫,০৩,৫৩,৪৪৪ ঘন্টা ব্যয় করেছে