“তোমার হস্ত শিথিল না হউক”
“তোমার হস্ত শিথিল না হউক। তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমার মধ্যবর্ত্তী; সেই বীর পরিত্রাণ করিবেন।”—সফনিয় ৩:১৬, ১৭.
১. একজন বাইবেলের পণ্ডিত সফনিয়ের ভাবিষ্যদ্বাণী সম্বন্ধে কী বলেছিলেন?
সফনিয়ের ভবিষ্যদ্বাণী সা.শ.পূ. সপ্তম ও ষষ্ঠ শতাব্দীতে তার প্রাথমিক পরিপূর্ণতার চেয়েও আরও বেশি কিছুর প্রতি ইঙ্গিত করেছিল। সফনিয়ের উপর মন্তব্য করতে গিয়ে, অধ্যাপক সি. এফ. কীল লিখেছিলেন: “সফনিয়ের ভবিষ্যদ্বাণী . . . কেবলমাত্র সমগ্র পৃথিবীর উপর সার্বিক বিচারের ঘোষণা দিয়েই শুরু হয় না যা যিহোবার লোকেদের বিরুদ্ধে বিরোধিতার ফলেই জাতিদের উপর বর্ষিত হবে, কিন্তু এটি যিহোবার সমগ্র মহান ও ভয়ঙ্কর দিনে ক্রমাগতভাবে চলতে থাকবে।”
২. সফনিয়ের দিনের পরিস্থিতির সাথে আজকের দিনে খ্রীষ্টীয়জগতের পরিস্থিতির কী মিল আছে?
২ আজকে, যিহোবার বিচারমূলক সিদ্ধান্ত হল সফনিয়ের দিনের চাইতেও আরও ব্যাপক হারে জাতিগণকে ধ্বংসের জন্য একত্রিত করা। (সফনীয় ৩:৮) সেই দেশগুলি যারা খ্রীষ্টান হিসাবে নিজেদের দাবি করে তারাই বিশেষ করে ঈশ্বরের চোখে অপরাধী। ঠিক যেমন যিরূশালেমকে তার অবিশ্বস্ততার জন্য যিহোবার কাছে সাংঘাতিক মূল্য দিতে হয়েছিল, তেমনি খ্রীষ্টীয়জগৎকেও তার লাম্পট্যের জন্য ঈশ্বরের কাছে অবশ্যই উত্তর দিতে হবে। সফনিয়ের দিনে ঐশিক বিচারগুলি যেভাবে যিহূদা ও যিরূশালেমের প্রতি ঘোষিত হয়েছিল তা আজ আরও অধিকতররূপে গির্জা ও খ্রীষ্টীয়জগতের সম্প্রদায়গুলির উপর প্রযোজ্য। তারাও তাদের পবিত্র উপাসনাকে ঈশ্বর-নিন্দনীয় মতবাদের দ্বারা দূষিত করেছে যার মধ্যে অধিকাংশেরই উৎস হল পৌত্তলিকতা। তারা যুদ্ধের এক আধুনিক বেদির উপর তাদের স্বাস্থ্যবান লক্ষ লক্ষ সন্তানদের বলি দিয়েছে। এছাড়া, রূপক যিরূশালেমের অধিবাসীরা তাদের তথাকথিত খ্রীষ্টতত্ত্বের সাথে জ্যোতিষীবিদ্যা, প্রেতচর্চার অভ্যাস এবং অবনিত যৌন অনৈতিকতার সংমিশ্রণ করেছে যা হল বাল উপাসনার সমতুল্য।—সফনিয় ১:৪, ৫.
৩. আজকের দিনের বহু জাগতিক নেতা ও রাজনৈতিক সরকারগুলির সম্বন্ধে কী বলা যায় এবং সফনিয় কী ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন?
৩ খ্রীষ্টীয়জগতের অনেক রাজনৈতিক নেতারা গির্জার মধ্যে বিশিষ্ট ব্যক্তি হতে ভালবাসে। কিন্তু ঠিক যিহূদার “অধ্যক্ষ”-দের মত অনেকেই “গর্জ্জনকারী সিংহ” ও হিংস্র ‘কেন্দুয়া ব্যাঘ্রের’ ন্যায় লোকেদের প্রতারণা করে থাকে। (সফনিয় ৩:১-৩) সেই ব্যক্তিবিশেষদের রাজনৈতিক ভৃত্যেরা “আপনাদের প্রভুর গৃহ দৌরাত্ম্যে ও ছলনায় পরিপূর্ণ করে।” (সফনিয় ১:৯) উৎকোচ ও দুর্নীতি বিদ্যমান। আর খ্রীষ্টীয়জগতের ভিতরে ও বাইরের রাজনৈতিক সরকারগুলি ক্রমবর্ধমান সংখ্যায় যিহোবার বাহিনীগণের লোকেদের, অর্থাৎ তাঁর সাক্ষীদের বিরুদ্ধে ‘অহমিকা প্রকাশ করছে’ এবং তাদের এক অবজ্ঞাত “সম্প্রদায়” হিসাবে গণ্য করছে। (সফনিয় ২:৮; প্রেরিত ২৪:৫, ১৪, মঙ্গলবার্তা) এই সমস্ত রাজনৈতিক নেতা ও তাদের অনুগামীদের সম্বন্ধে সফনিয় ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন: “সদাপ্রভুর ক্রোধের দিনে তাহাদের রৌপ্য কি তাহাদের সুবর্ণ তাহাদিগকে উদ্ধার করিতে পারিবে না; কিন্তু তাঁহার অন্তর্জ্বালার তাপে সমস্ত দেশ অগ্নি-ভক্ষিত হইবে, কেননা তিনি দেশ-নিবাসী সকলের বিনাশ, হাঁ, ভয়ানক সংহার করিবেন।”—সফনিয় ১:১৮.
“সদাপ্রভুর ক্রোধের দিনে . . . গুপ্তস্থানে রক্ষা”
৪. কী দেখায় যে যিহোবার মহাদিনে রক্ষাপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা থাকবে, কিন্তু তাদের কী করতে হবে?
৪ সা.শ.পূ. সপ্তম শতাব্দীতে যিহূদার সব অধিবাসীরাই ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়নি। ঠিক একই রকমভাবে, যিহোবার মহাদিনেও রক্ষাপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা থাকবে। তাদের উদ্দেশ্যে যিহোবা তাঁর ভাববাদী সফনিয়ের মাধ্যমে বলেছিলেন: “কেননা দণ্ডাজ্ঞা সফল হইবার সময় হইল, দিন ত তুষের ন্যায় উড়িয়া যাইতেছে; সদাপ্রভুর ক্রোধাগ্নি তোমাদের উপরে আসিয়া পড়িল, সদাপ্রভুর ক্রোধের দিন তোমাদের উপর আসিয়া পড়িল। হে দেশস্থ সমস্ত নম্র লোক, তাঁহার শাসন পালন করিয়াছ যে তোমরা, তোমরা সদাপ্রভুর অন্বেষণ কর, ধর্ম্মের অনুশীলন কর, নম্রতার অনুশীলন কর; হয় ত সদাপ্রভুর ক্রোধের দিনে তোমরা গুপ্তস্থানে রক্ষা পাইবে।”—সফনিয় ২:২, ৩.
৫. এই শেষকালের সময়ে কারা প্রথম সফনিয়ের সতর্কবাণীর প্রতি কর্ণপাত করেছিল এবং যিহোবা তাদের কিভাবে ব্যবহার করেছেন?
৫ জগতের এই শেষ সময়, প্রথমেই যারা এই ভবিষ্যদ্বাণীমূলক আহ্বানটির প্রতি কর্ণপাত করেছিল তারা হল আত্মিক ইস্রায়েলের অবশিষ্টাংশ, অভিষিক্ত খ্রীষ্টানেরা। (রোমীয় ২:২৮, ২৯; ৯:৬; গালাতীয় ৬:১৬) ধার্মিকতা ও নম্রতার অনুশীলন করার দরুন এবং যিহোবার বিচারমূলক সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করার দরুন, তাদের মহতী বাবিল, মিথ্যা ধর্মের বিশ্ব সাম্রাজ্যের থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল এবং ১৯১৯ সালে তাদের ঐশিক অনুগ্রহে ফিরিয়ে আনা হয়েছিল। সেই সময় থেকে এবং বিশেষ করে ১৯২২ সাল থেকে, বিশ্বস্ত অবশিষ্টাংশেরা নির্ভীকতার সাথে গির্জা ও খ্রীষ্টজগতের সম্প্রদায় এবং রাজনৈতিক জাতির বিরুদ্ধে যিহোবার বিচার বার্তা ঘোষণা করে আসছে।
৬. (ক) বিশ্বস্ত অবশিষ্টাংশদের সম্বন্ধে সফনিয় কী ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন? (খ) এই ভবিষ্যদ্বাণী কিভাবে পরিপূর্ণতা লাভ করেছিল?
৬ এই বিশ্বস্ত অবশিষ্টাংশদের সম্বন্ধে, সফনিয় ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন: “আমি তোমার মধ্যে দীনদুঃখী এক জাতিকে অবশিষ্ট রাখিব; তাহারা সদাপ্রভুর নামের শরণ লইবে। ইস্রায়েলের অবশিষ্ট লোক অন্যায় করিবে না, মিথ্যাকথা বলিবে না, এবং তাহাদের মুখে প্রতারক জিহ্বা থাকিবে না; বস্তুতঃ তাহারা চরিবে ও শয়ন করিবে, তাহাদিগকে ভয় দেখাইবার কেহ থাকিবে না।” (সফনিয় ৩:১২, ১৩) এই অভিষিক্ত খ্রীষ্টানেরা সর্বসময় যিহোবার নামকে সামনে রেখেছিল, কিন্তু বিশেষ করে ১৯৩১ সাল থেকে, যখন তারা যিহোবার সাক্ষী নামকরণটি গ্রহণ করে। (যিশাইয় ৪৩:১০-১২) যিহোবার সার্বভৌমত্বের বিচার্য বিষয়টিকে আলোকপাত করার দ্বারা, তারা ঐশিক নামের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেছিল আর এটি তাদের কাছে এক সুরক্ষা প্রমাণিত হয়েছিল। (হিতোপদেশ ১৮:১০) যিহোবা তাদের প্রচুর পরিমাণে আধ্যাত্মিক খাদ্য যুগিয়েছেন এবং তারা নির্ভয়ে আধ্যাত্মিক পরমদেশে অবস্থান করতে পেরেছে।—সফনিয় ৩:১৬, ১৭.
“সমস্ত জাতির মধ্যে . . . কীর্ত্তির ও প্রশংসার পাত্র”
৭, ৮. (ক) আত্মিক ইস্রায়েলের অবশিষ্টাংশদের উপর আর কোন্ ভবিষ্যদ্বাণী পরিপূর্ণতা লাভ করেছিল? (খ) লক্ষাধিক লোক কী উপলব্ধি করেছে আর এই ক্ষেত্রে আপনার নিজস্ব অনুভূতি কী?
৭ যিহোবার নামের প্রতি ও তাঁর বাক্যের ধার্মিক নীতিগুলির সাথে অবশিষ্টাংশদের গভীর সম্পর্ক উপেক্ষিত হয়নি। আন্তরিক লোকেরা এই জগতের রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতৃত্বের দুর্নীতি ও কপটতার সাথে অবশিষ্টাংশদের আচরণের পার্থক্য লক্ষ্য করেছে। যিহোবা “[আত্মিক] ইস্রায়েলের অবশিষ্টাংশ”-কে আশীর্বাদ করেছেন। তিনি তাদেরকে তাঁর নাম বহন করার সুযোগ দিয়ে সম্মানিত করেছেন এবং পৃথিবীর লোকেদের মাঝে তিনি তাদের সুনাম অর্জন করতে সাহায্য করেছেন। এটি ঠিক সফনিয়ের ভাববাণীর মত হয়েছিল: “সেই সময়ে আমি তোমাদিগকে আনিব, সেই সময় তোমাদিগকে সংগ্রহ করিব; কারণ আমি পৃথিবীস্থ সমস্ত জাতির মধ্যে তোমাদিগকে কীর্ত্তির ও প্রশংসার পাত্র করিব; কেননা তখন আমি তোমাদের দৃষ্টিগোচরে তোমাদিগকে বন্দিদশা হইতে ফিরাইয়া আনিব, ইহা সদাপ্রভু কহেন।”—সফনিয় ৩:২০
৮ আক্ষরিকভাবে লক্ষাধিক লোক ১৯৩৫ সাল থেকে, উপলব্ধি করে আসছে যে অবশিষ্টাংশদের উপর যিহোবার আশীর্বাদ আছে। তারা আনন্দের সাথে এই আত্মিক যিহূদী বা ইস্রায়েলীয়দের অনুসরণ করে এই বলে যে: “আমরা তোমাদের সহিত যাইব, কেননা আমরা শুনিলাম, ঈশ্বর তোমাদের সহবর্ত্তী।” (সখরিয় ৮:২৩) এই “অপর মেষ”-রা অভিষিক্ত অবশিষ্টাংশদের মধ্যে “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্ দাস” রূপে দেখতে পায়, যারা খ্রীষ্টের দ্বারা মনোনীত ও “নিজ [পার্থিব] পরিজনের উপর নিযুক্ত।” তারা ধন্যবাদপূর্বক “উপযুক্ত সময়ে” এই দাস শ্রেণীর দ্বারা প্রস্তুত করা আধ্যাত্মিক খাদ্য গ্রহণ করে থাকে।—যোহন ১০:১৬, NW; মথি ২৪:৪৫-৪৭.
৯. কোন্ “ওষ্ঠ” লক্ষাধিক লোক শিখতে পেরেছে এবং অপর মেষেরা অভিষিক্ত অবশিষ্টাংশদের সাথে “একযোগে” কোন্ মহান কাজে অংশ নিচ্ছে?
৯ অবশিষ্টাংশদের সাথে, এই লক্ষাধিক অপর মেষেরা “বিশুদ্ধ ওষ্ঠ” অনুসারে জীবনধারণ করতে ও তা বলতে শিখছে।a যিহোবা সফনিয়ের মাধ্যমে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন: “তৎকালে আমি জাতিগণকে বিশুদ্ধ ওষ্ঠ দিব, যেন তাহারা সকলেই সদাপ্রভুর নামে ডাকে ও একযোগে তাঁহার আরাধনা করে।” (সফনিয় ৩:৯) হ্যাঁ, এই অপর মেষেরা একতাবদ্ধভাবে “একযোগে” “ক্ষুদ্র মেষপাল” এর অভিষিক্ত সদস্যদের সাথে “সর্ব্বজাতির কাছে সাক্ষ্য দিবার নিমিত্ত রাজ্যের এই সুসমচার” প্রচার করার এক গুরুত্বপূর্ণ কাজে অংশ নেওয়ার দ্বারা যিহোবার পরিচর্যা করছে।—লূক ১২:৩২; মথি ২৪:১৪.
“প্রভুর দিন . . . আসিবে”
১০. কোন্ বিষয় অভিষিক্ত অবশিষ্টাংশেরা সর্বসময় নিশ্চিত ছিল এবং শ্রেণীগতভাবে কোন্ জিনিসটি প্রত্যক্ষ করতে তারা বেঁচে থাকবে?
১০ অভিষিক্ত অবশিষ্টাংশেরা ক্রমাগতভাবে প্রেরিত পিতরের অনুপ্রাণিত উক্তিটি মনে রেখেছে: “প্রভু নিজ প্রতিজ্ঞা বিষয়ে দীর্ঘসূত্রী নহেন—যেমন কেহ কেহ দীর্ঘসূত্রিতা জ্ঞান করে—কিন্তু তোমাদের পক্ষে তিনি দীর্ঘসহিষ্ণু; কতকগুলি লোক যে বিনষ্ট হয়, এমন বাসনা তাঁহার নাই; বরং সকলে যেন মনপরিবর্ত্তন পর্য্যন্ত পঁহুছিতে পায়, এই তাঁহার বাসনা। কিন্তু প্রভুর দিন চোরের ন্যায় আসিবে।” (২ পিতর ৩৯, ১০) আমাদের দিনে যিহোবার দিন আসা সম্বন্ধে বিশ্বস্ত দাস শ্রেণীর সদস্যেরা কখনও কোন সন্দেহ পোষণ করেনি। সেই মহাদিন শুরু হবে খ্রীষ্টীয়জগৎ, রূপক যিরূশালেমের উপর এবং মহতী বাবিলের বাকি অংশের উপর ঈশ্বরের বিচার সম্পন্ন হওয়ার দ্বারা।—সফনিয় ১:২-৪; প্রকাশিত বাক্য ১৭:১, ৫; ১৯:১, ২.
১১, ১২. (ক) অবশিষ্টাংশদের উপর সফনিয়ের ভাববাণীর আর কোন্ অংশটি পরিপূর্ণতা লাভ করেছে? (খ) অভিষিক্ত অবশিষ্টাংশেরা কিভাবে “তোমার হস্ত শিথিল না হউক” এই আহ্বানের প্রতি সাড়া দিয়েছিল?
১১ বিশ্বস্ত অবশিষ্টাংশেরা আনন্দিত হয়েছিল যখন ১৯১৯ সালে মহতী বাবিল, মিথ্যা ধর্মের বিশ্ব সাম্রাজ্যের আধ্যাত্মিক বন্দীত্বের থেকে মুক্তি পেয়েছিল। তারা সফনিয়ের ভাববাণীর পরিপূর্ণতা উপভোগ করেছিল: “হে সিয়োন-কন্যা, আনন্দগান কর; হে ইস্রায়েল, জয়ধ্বনি কর; হে যিরূশালেম-কন্যা, আনন্দ কর, সর্ব্বান্তঃকরণে উল্লাস কর। সদাপ্রভু তোমার দণ্ড সকল দূর করিয়াছেন, তোমার শত্রুকে সরাইয়া দিয়াছেন; ইস্রায়েলের রাজা সদাপ্রভু তোমার মধ্যবর্ত্তী; তুমি আর অমঙ্গলের ভয় করিবে না। সেই দিন যিরূশালেমকে এই কথা বলা যাইবে, ভয় করিও না; হে সিয়োন, তোমার হস্ত শিথিল না হউক। তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমার মধ্যবর্ত্তী; সেই বীর পরিত্রাণ করিবেন।”—সফনিয় ৩:১৪-১৭.
১২ যিহোবা যে তাদের মধ্যবর্তী এই বিষয় সম্বন্ধে নিশ্চয়তা ও প্রচুর পরিমাণে প্রমাণ পাওয়ার দরুন, অভিষিক্ত অবশিষ্টাংশেরা তাদের ঐশিক কাজকে সম্পন্ন করার জন্য নির্ভয়ে এগিয়ে গেছে। তারা রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করেছে এবং খ্রীষ্টীয়জগৎ, মহতী বাবিলের বাকি অংশ এবং শয়তানের সমগ্র দুষ্ট বিধিব্যবস্থার বিরুদ্ধে যিহোবার বিচার ঘোষণা করেছে। অনেক বাধা সত্ত্বেও ১৯১৯ সালের দশক থেকে, অটল থাকার দ্বারা তারা এই ঐশিক আদেশটি মেনে চলেছে: “ভয় করিও না; হে সিয়োন। তোমার হস্ত শিথিল না হউক।” কোটি কোটি ট্র্যাক্ট, পত্রিকা, বই ও পুস্তিকা যা যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে, তা বিতরণ করার ক্ষেত্রে তারা তাদের হস্তকে শিথিল করেনি। অপর মেষের কাছে তারা এক বিশ্বাস-অনুপ্রাণিত আদর্শ, যারা ১৯৩৫ সাল থেকে, লক্ষাধিক সংখ্যায় তাদের সাথে একত্রিত হয়েছে।
“তোমার হস্ত শিথিল না হউক”
১৩, ১৪. (ক) কেন কিছু যিহূদীরা যিহোবাকে পরিচর্যা করার থেকে সরে গিয়েছিল এবং কিভাবে এটি প্রকাশ পেয়েছিল? (খ) আমাদের পক্ষে কোন্ জিনিসটি করা বিজ্ঞের কাজ হবে না এবং কোন্ কাজে আমরা আমাদের হস্তকে শিথিল হতে দেবো না?
১৩ যিহোবার মহাদিনের জন্য যখন ‘আমরা অপেক্ষায় থাকি’, তখন সফনিয়ের ভাববাণীর থেকে আমরা কিভাবে বাস্তবধর্মী সাহায্য পেতে পারি? প্রথমত, আমরা সফনিয়ের দিনের সেই যিহূদীদের মত যেন না হই যারা যিহোবার দিনের আসন্নতা সম্বন্ধে সন্দেহ পোষণ করার জন্য যিহোবার অনুগামী হওয়ার থেকে নিজেদের সরিয়ে রেখেছিল। সেই যিহূদীরা সম্ভবত খোলাখুলিভাবে তাদের সন্দেহকে প্রকাশ করেনি, কিন্তু তাদের কার্যকলাপ প্রকাশ করেছিল যে তারা প্রকৃতপক্ষে বিশ্বাস করেনি যে যিহোবার মহাদিন সন্নিকট। যিহোবার অপেক্ষায় থাকার পরিবর্তে তারা ধন সঞ্চয় করার কাজে নিজেদের ব্যস্ত রেখেছিল।—সফনিয় ১:১২, ১৩; ৩:৮.
১৪ হৃদয়ের মধ্যে সন্দেহের বীজ বপন করার সময় এখন নয়। যিহোবার দিনের আগমনকে মন ও হৃদয় থেকে সরিয়ে ফেলা হবে খুবই মূর্খতার কাজ। (২ পিতর ৩:১-৪, ১০) যিহোবার অনুগামী হওয়া অথবা ‘আমাদের হস্ত শিথিল’ করাকে আমাদের এড়িয়ে চলতে হবে। এর অন্তর্ভুক্ত হল বিশেষ করে আমাদের “সুসমাচার” প্রচার করার ক্ষেত্রে “শিথিল হস্তে কর্ম্ম” না করা।—হিতোপদেশ ১০:৪; মার্ক ১৩:১০.
অনীহার সাথে লড়াই করা
১৫. যিহোবার পরিচর্যায় আমাদের হস্ত শিথিল করার কারণ কী হতে পারে এবং সফনিয়ের ভবিষ্যদ্বাণীতে এই সমস্যাটি কিভাবে ভাববাণী করা হয়েছিল?
১৫ দ্বিতীয়ত, আমাদের উচিত অনীহার দুর্বলতাজনক প্রভাব থেকে নিজেদের রক্ষা করা। পাশ্চাত্যের বহু দেশে, আধ্যাত্মিক বিষয়ের প্রতি উদাসীনতা কয়েকজন সুসমাচার প্রচারকের ক্ষেত্রে এক নিরুৎসাহের কারণ হয়ে থাকে। সফনিয়ের সময়ে এইধরনের উদাসীনতা বিদ্যমান ছিল। তাঁর ভাববাদীর মাধ্যমে যিহোবা বলেছিলেন: “আমি . . . সন্ধান করিব . . . যাহারা মনে মনে বলে, সদাপ্রভু মঙ্গলও করিবেন না, অমঙ্গলও করিবেন না।” (সফনিয় ১:১২) কেম্ব্রিজ বাইবেল ফর স্কুলস অ্যান্ড কলেজেস, নামক বইয়ে, এ. বি. ডেভিডসন এই অংশটির উপর লিখতে গিয়ে সেই সব লোকেদের প্রতি নির্দেশ করেন যারা “এক অনুভূতিহীন অনীহার মধ্যে অথবা মানব জাতির ক্ষেত্রে মহান শক্তির কোন রকম হস্তক্ষেপ সম্বন্ধে এমনকি বিশ্বাসহীনতার মধ্যে ডুবে যায়।”
১৬. খ্রীষ্টীয়জগতের গির্জার সদস্যদের মধ্যে কিধরনের মানসিক অবস্থা বিদ্যমান, কিন্তু কিধরনের উৎসাহ যিহোবা আমাদের দিয়েছেন?
১৬ পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে, বিশেষ করে উন্নতশীল দেশগুলিতে অনীহা বিশেষভাবে বিদ্যমান। এমনকি খ্রীষ্টীয়জগতের গির্জার সদস্যেরাও বিশ্বাস করে না যে যিহোবা ঈশ্বর আমাদের এই বর্তমান দিনে মানবজাতির বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবেন। রাজ্যের সুসমাচার নিয়ে তাদের কাছে আমাদের পৌঁছানোর প্রচেষ্টাকে তারা না হয় সন্দিগ্ধ হাসির মাধ্যমে অথবা “আমি আগ্রহী নই!” এইধরনের কর্কশ মন্তব্য করার দ্বারা অবজ্ঞা করে থাকে। এইধরনের পরিস্থিতিতে, অধ্যবসায়ের সাথে সাক্ষ্য দেওয়ার কাজ করে যাওয়া একটা প্রকৃতই প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক কাজ হতে পারে। এটা আমাদের ধৈর্যের পরীক্ষা নেয়। সফনিয়ের ভবিষ্যদ্বাণীর মাধ্যমে যিহোবা তাঁর বিশ্বস্ত লোকেদের শক্তি যোগান এই বলে: “তোমার হস্ত শিথিল না হউক। তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমার মধ্যবর্ত্তী; সেই বীর পরিত্রাণ করিবেন, তিনি তোমার বিষয়ে পরম আনন্দ করিবেন; তিনি প্রেমভরে মৌনী হইবেন, আনন্দগান দ্বারা তোমার বিষয়ে উল্লাস করিবেন।”—সফনিয় ৩:১৬, ১৭.
১৭. অপর মেষেদের মধ্যে যারা নবাগত তাদের কোন্ উত্তম উদাহরণ মেনে চলা উচিত এবং কিভাবে?
১৭ যিহোবার লোকেদের আধুনিক দিনের ইতিহাসের মধ্যে এটা হল এক বাস্তব সত্য যে অবশিষ্টাংশ এবং সেইসঙ্গে অপর মেষদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত বয়স্ক ব্যক্তিরা, এই শেষকালে অভূতপূর্ব একত্রীকরণ কাজ সম্পাদন করেছে। দশকের পর দশক ধরে এই সমস্ত বিশ্বস্ত খ্রীষ্টানেরা সহিষ্ণুতা দেখিয়ে এসেছে। এদের মধ্যে অধিকাংশ, নিজেদের নিরুৎসাহ করে দেওয়ার জন্য কোনরকম অনীহাকে প্রশয় দেয়নি। সুতরাং অপর মেষদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত নবাগতেরা যেন আধ্যাত্মিক বিষয়ের প্রতি অনীহাকে প্রশ্রয় দিয়ে নিজেদের নিরুৎসাহিত করে না তোলে যা আজ বহুদেশে খুবই বিদ্যমান। তারা যেন তাদের ‘হস্তকে শিথিল,’ অথবা অকেজো না করে তোলে। তারা যেন প্রতিটি সুযোগে প্রহরীদুর্গ, সচেতন থাক! এবং অন্যান্য প্রকাশনাদি বিতরণ করে যা বিশেষভাবে মেষতুল্য লোকেদের যিহোবার দিন ও তাঁর আশীর্বাদ সম্বন্ধে যে সত্য তা শিখতে সাহায্য করার জন্য লিখিত হয়েছে।
মহাদিনের অপেক্ষায় থাকতে থাকতে অগ্রসর হওয়া!
১৮, ১৯. (ক) মথি ২৪:১৩ এবং যিশাইয় ৩৫:৩, ৪ পদে আমরা ধৈর্যের কোন্ উৎসাহ পাই? (খ) যিহোবার পরিচর্যায় একতাবদ্ধভাবে এগিয়ে চললে আমরা কিভাবে আশীর্বাদযুক্ত হব?
১৮ যীশু বলেছিলেন: “যে কেহ শেষ পর্য্যন্ত স্থির থাকিবে, সেই পরিত্রাণ পাইবে।” (মথি ২৪:১৩) অতএব, আমরা যখন যিহোবার মহাদিনের অপেক্ষায় থাকি তখন কোন “দুর্ব্বল হস্ত” অথবা “কম্পিত জানু” থাকলে চলবে না! (যিশাইয় ৩৫:৩, ৪) সফনিয়ের ভবিষ্যদ্বাণী যিহোবার সম্বন্ধে আশ্বাসের সাথে বলে: “সেই বীর পরিত্রাণ করিবেন।” (সফনিয় ৩:১৭) হ্যাঁ, যিহোবা “মহাক্লেশ” এর চরম পর্যায়ের থেকে “বিস্তর লোক”-কে রক্ষা করবেন, যখন তিনি তাঁর পুত্রকে আদেশ দেবেন সেইসব রাজনৈতিক দেশগুলিকে ধ্বংস করতে যারা তাঁর লোকেদের বিরুদ্ধে “অহমিকা প্রকাশ করেছে।”—প্রকাশিত বাক্য ৭:৯, ১৪; সফনিয় ২:১০, ১১, NW; গীতসংহিতা ২:৭-৯.
১৯ যিহোবার মহাদিন যতই এগিয়ে আসছে, আমরা যেন উদ্যোগের সাথে এগিয়ে চলি এবং “একযোগে” তাঁর সেবা করি! (সফনিয় ৩:৯) যদি আমরা তা করি, তাহলেই আমরা এবং অগণিত আরও অনেকে “সদাপ্রভুর ক্রোধের দিনে . . . গুপ্তস্থানে রক্ষা” পাওয়ার পথে থাকতে পারব এবং তাঁর নামের পবিত্রকরণকে প্রত্যক্ষ করতে পারব।
[পাদটীকাগুলো]
a “বিশুদ্ধ ওষ্ঠ” সম্বন্ধে পূর্ণ আলোচনার জন্য, প্রহরীদুর্গ (ইংরাজি) এপ্রিল ১, ১৯৯১, পৃষ্ঠা ২০-৫ এবং মে ১, ১৯৯১, পৃষ্ঠা ১০-২০ দেখুন।
পর্যালোচনার মাধ্যেমে
◻ কোন্ কোন্ দিক দিয়ে খ্রীষ্টীয়জগতের ধর্মীয় পরিস্থিতির সাথে সফনিয়ের দিনের মিল রয়েছে?
◻ আজকের দিনের বহু রাজনৈতিক নেতাদের সাথে কিভাবে সফনিয়ের দিনের জাগতিক “অধ্যক্ষ”-দের মিল দেখা যায়?
◻ সফনিয় পুস্তকে উল্লেখিত কোন্ প্রতিজ্ঞাগুলি অবশিষ্টাংশদের উপর পরিপূর্ণতা লাভ করেছে?
◻ লক্ষাধিক লোক কোন্ বিষয়টি উপলব্ধি করেছে?
◻ যিহোবার পরিচর্যায় কেন আমাদের হস্তকে শিথিল করতে দেওয়া উচিত নয়?
[১৫ পৃষ্ঠার চিত্র]
সফনিয়ের মত, অভিষিক্ত খ্রীষ্টানদের বিশ্বস্ত অবশিষ্টাংশেরা নির্ভয়ে যিহোবার বিচার ঘোষণা করে এসেছে
[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]
“অপর মেষ” কখনও নিজেদের নিরুৎসাহ করতে লোকেদের অনীহাকে প্রশয় দেয়নি