ভাল এবং মন্দ উভয় সময়েই ঈশ্বরের পরিচর্যায় সংযুক্ত থাকা
মিশেল এবং ববেট মুলার দ্বারা কথিত
“আপনার জন্য দুঃসংবাদ আছে,” চিকিৎসক বলেছিলেন। “আফ্রিকায় আপনার মিশনারী জীবন সম্পর্কে আপনি ভুলে যেতে পারেন।” আমার স্ত্রী, ববেটের দিকে তাকিয়ে তিনি বলেছিলেন, “আপনার স্তন ক্যানসার হয়েছে।”
আমরা ভীষণভাবে হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম। অনেকগুলি বিষয় আকস্মিকভাবে আমাদের মনে এসেছিল। আমরা ভেবেছিলাম যে চিকিৎসকের কাছে এই যাওয়া হবে কেবল এক সাধারণ পরীক্ষা মাত্র। আমাদের পশ্চিম আফ্রিকার বেনিনে ফেরার টিকিট কেনা হয়ে গিয়েছিল। এক সপ্তাহের মধ্যেই সেখানে ফিরে যাব বলে আমরা আশা করেছিলাম। আমাদের ২৩ বছরের বিবাহিত জীবনে আমরা ভাল এবং মন্দ উভয় সময়েরই সম্মুখীন হয়েছিলাম। দ্বিধাগ্রস্ত ও ভীত আমরা, এখন ক্যানসারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার জন্য নিজেদের প্রস্তুত করলাম।
প্রথম থেকে শুরু করা যাক। মেশেল ১৯৪৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ও ববেট ১৯৪৫ সালের আগস্ট মাসে জন্মগ্রহণ করেছিল। আমরা ফ্রান্সে বড় হয়ে উঠেছিলাম ও ১৯৬৭ সালে বিবাহ করেছিলাম। আমরা প্যারিসে বাস করতাম। ১৯৬৮ সালের প্রথম দিকে এক সকালে, ববেটের কাজে যেতে দেরি হয়েছিল। এক মহিলা তার দরজায় আসে ও তাকে একটি ধর্মীয় ব্রোশার দেয়; যেটি সে গ্রহণ করেছিল। তারপর সেই মহিলা বলেছিল: “আমি কি আমার স্বামীকে নিয়ে আপনার ও আপনার স্বামীর সাথে কথা বলার জন্য ফিরে আসতে পারি?”
ববেট তার কাজ সম্পর্কে চিন্তা করছিল। সে চাইছিল যে এই মহিলা যেন চলে যায়, তাই সে বলেছিল “ঠিক আছে, ঠিক আছে।”
মিশেল বর্ণনা করে: “ধর্মের প্রতি আমার কোন আগ্রহ ছিল না, কিন্তু এই ব্রোশারটি আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল এবং এটি আমি পড়েছিলাম। কিছুদিন পরে, সেই মহিলা জোসলীন লিমওঁয়া তার স্বামী ক্লডের সাথে ফিরে এসেছিলেন। তিনি বাইবেল ব্যবহারে খুব দক্ষ ছিলেন। তিনি আমার সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিলেন। আমি গভীরভাবে প্রভাবিত হয়েছিলাম।
“ববেট একজন ভাল ক্যাথলিক হওয়া সত্ত্বেও তার কাছে কোন বাইবেল ছিল না, যেটি অবশ্য ক্যাথলিকদের জন্য অস্বাভাবিক কিছু ছিল না। সে ঈশ্বরের বাক্য দেখে ও পড়ে খুব রোমাঞ্চিত হয়েছিল। আমাদের অধ্যয়ন থেকে আমরা শিখেছিলাম যে অধিকাংশ ধর্মীয় মতবাদগুলি যা আমরা শিখে এসেছি তা ছিল মিথ্যা। আমরা যা শিখছিলাম সেবিষয়ে আমাদের আত্মীয় ও বন্ধুদের সাথে আমরা কথা বলতে শুরু করেছিলাম। ১৯৬৯ সালের জানুয়ারি মাসে আমরা যিহোবার বাপ্তিস্মিত সাক্ষী হয়েছিলাম। তার অল্প কিছু দিন পরেই আমাদের নয় জন আত্মীয় ও বন্ধুরা বাপ্তিস্ম নিয়েছিল।”
যেখানে প্রচারকদের প্রয়োজন ছিল সেখানে পরিচর্যা করা
আমাদের বাপ্তিস্মের অল্প কিছু দিন পরেই আমরা চিন্তা করি: ‘আমাদের কোন সন্তান নেই। তাই কেন আমরা পূর্ণ-সময়ের পরিচর্যায় অংশ নিচ্ছি না?’ তাই ১৯৭০ সালে আমরা আমাদের চাকুরি ছেড়ে দিই, নিয়মিত অগ্রগামী হিসাবে নাম লেখাই এবং মধ্য ফ্রান্সের নেভার্স এর কাছে ম্যানিয়া-লোর্ম নামক ছোট শহরে চলে যাই।
এটি ছিল এক কঠিন কার্যভার। বাইবেল অধ্যয়নে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের খুঁজে পাওয়া কঠিন ছিল। আমরা কোন জাগতিক কাজ খুঁজে পায়নি, সুতরাং আমাদের খুব অল্পই অর্থ ছিল। কখনও কখনও আমাদের খাওয়ার জন্য শুধুমাত্র আলু থাকত। শীতকালে তাপমাত্রা শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে আরও ২২ ডিগ্রি নিচে নেমে যেত। সেখানে আমরা যে সময় অতিবাহিত করেছিলাম তাকে আমরা সাতটা কৃশ গাভীর সময় বলে উল্লেখ করেছিলাম।—আদিপুস্তক ৪১:৩.
যিহোবা আমাদের সংরক্ষিত রেখেছিলেন। একদিন যখন আমাদের খাবার একেবারে শেষ হয়ে গিয়েছিল, ডাকপিয়ন ববেটের বোনের কাছ থেকে আসা চীসের একটি বড় বাক্স দিয়ে যায়। আরেকদিন আমরা প্রচার থেকে বাড়ি ফিরে এসে দেখেছিলাম কিছু বন্ধু ৫০০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে আমাদের দেখতে এসেছিল। আমাদের কঠিন পরিস্থিতির কথা শুনে এই ভাইয়েরা আমাদের জন্য তাদের দুই গাড়ি ভর্তি খাবার নিয়ে এসেছিল।
দেড় বছর পর সমিতি আমাদের বিশেষ অগ্রগামী হিসাবে নিযুক্ত করেছিল। পরবর্তী চার বছর ধরে আমরা প্রথমে নেভার্সে, পরে ট্রয়ে এবং পরিশেষে মন্টিনি লা-মেটস নামক স্থানগুলিতে পরিচর্যা করেছিলাম। ১৯৭৬ সালে মিশেল দক্ষিণ-পশ্চিম ফ্রান্সে সীমা অধ্যক্ষ হিসাবে পরিচর্যা করার জন্য নিযুক্ত হয়েছিল।
দুই বছর পরে, সীমা অধ্যক্ষদের জন্য অনুষ্ঠিত এক বিদ্যালয়ে আমরা ওয়াচ টাওয়ার সোসাইটির কাছ থেকে একটি চিঠি পাই যেখানে আমাদের মিশনারী হিসাবে বিদেশে যাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল; চিঠিটিতে বলা হয়েছিল আমরা চাড ও বুরকিনা ফাসোর (তখন আপার ভোল্টা) মধ্যে নির্বাচন করতে পারি। আমরা চাড মনোনীত করি। শীঘ্রই আমরা আরেকটি চিঠি পেয়েছিলাম যার দ্বারা আমাদের তাহিতি শাখার অধীনে কাজ করার জন্য কার্যভার দেওয়া হয়েছিল। আমরা বিশাল মহাদেশ আফ্রিকাতে যেতে চেয়েছিলাম, কিন্তু শীঘ্রই আমরা নিজেদের একটি ছোট দ্বীপে খুঁজে পায়!
দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরে পরিচর্যা করা
তাহিতি দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের একটি সুন্দর গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দ্বীপ। যখন আমরা সেখানে পৌঁছালাম প্রায় একশ জন ভাই আমাদের সাথে দেখা করতে বিমান বন্দরে এসেছিল। তারা আমাদের লিস ফুল দিয়ে অভিনন্দন জানায় আর তাই ফ্রান্স থেকে এক দীর্ঘ যাত্রার পরে ক্লান্ত হওয়া সত্ত্বেও আমরা খুব খুশি ছিলাম।
তাহিতিতে পৌঁছানোর চার মাস পরে আমরা একটি ছোট পালতোলা নৌকা যেটি শুকনো নারকেলে পূর্ণ ছিল সেটিতে আরোহণ করি। পাঁচ দিন পরে আমরা আমাদের নতুন কর্মক্ষেত্র—মার্কুইসাস দ্বীপপুঞ্জের নুকু হিভা দ্বীপে পৌঁছাই। ওই দ্বীপে প্রায় ১,৫০০ জন লোক বাস করত, কিন্তু সেখানে কোন ভাইয়েরা ছিল না। কেবলমাত্র আমরা।
সেই সময়ে পরিস্থিতি ছিল প্রাথমিক পর্যায়ের। আমরা কংক্রীট ও বাঁশের তৈরি একটি ছোট বাড়িতে বাস করতাম। কোন বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা সেখানে ছিল না। আমাদের একটি জলের কল ছিল যেটি কখনও কখনও কাজ করত, কিন্তু তার জল ছিল কাদামিশ্রিত। অধিকাংশ সময় পাত্রে জমিয়ে রাখা বৃষ্টির জল আমরা ব্যবহার করতাম। কোন পাকা রাস্তা সেখানে ছিল না, কেবলমাত্র কাঁচা রাস্তা ছিল।
দ্বীপের দূরবর্তী অঞ্চলগুলিতে পৌঁছানোর জন্য আমাদের ঘোড়া ভাড়া করতে হত। ঘোড়ার পিঠে বসবার জায়গাটা ছিল কাঠ দিয়ে তৈরি—যা ছিল খুবই অস্বস্তিকর, বিশেষ করে ববেটের জন্য যেহেতু সে আগে কখনও ঘোড়ায় চড়েনি। আমরা রাস্তায় এসে পড়া বাঁশ কাটবার জন্য ভোজালি সাথে নিয়ে যেতাম। ফ্রান্সের জীবনধারা থেকে এটি একটি বড় পরিবর্তন ছিল।
যদিও কেবলমাত্র আমরা দুজন উপস্থিত থাকতাম, আমরা রবিবারে সভা করতাম। প্রথমদিকে যতদিন কেবলমাত্র আমরা দুজন ছিলাম অন্যান্য সভাগুলি হত না। কেবলমাত্র একসাথে সভার বিষয়বস্তুগুলি পড়া ছাড়া।
কিছু মাস পরে আমরা স্থির করি যে এইভাবে চলতে দেওয়া ভাল নয়। মিশেল বর্ণনা করে: “আমি ববেটকে বলেছিলাম, ‘আমাদের অবশ্যই সঠিকভাবে পোশাক পরা উচিত। তুমি ওখানে বস আর আমি এখানে বসব। আমি প্রার্থনা করে শুরু করব আর তারপর আমরা ঐশিক পরিচর্যা বিদ্যালয় ও পরিচর্যা সভা করব। আমি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করব ও তুমি উত্তর দেবে যদিও ঘরেতে কেবলমাত্র তুমিই থাকবে।’ এটি করা উত্তম ছিল আর আমরা তা করেছিলাম কারণ যেহেতু সেখানে কোন মণ্ডলী ছিল না, তাই আমাদের পক্ষে আধ্যাত্মিকভাবে শিথিল হয়ে যাওয়া সহজ ছিল।”
আমাদের খ্রীষ্টীয় সভাগুলিতে লোকেদের একত্র করতে সময় লেগেছিল। প্রথম আট মাস আমরা শুধু দুজন ছিলাম। পরে আমরা অন্য এক জন, দুজন, কখনও তিন জনের সাথে একত্রিত হতাম। এক বছর আমরা দুজন প্রভুর সান্ধ্যভোজের বাৎসরিক অনুষ্ঠান উদ্যাপন শুরু করি। দশ মিনিট পর, কিছু লোকেরা আসে, সুতরাং আমি থামি ও আবার পুনরায় বক্তৃতা শুরু করি।
আজকে মার্কুইসাস দ্বীপপুঞ্জে ৩টি মণ্ডলী ও ৪২ জন প্রকাশক আছে। যদিও কাজের বৃহত্তম অংশ আমাদের উত্তরসূরীদের দ্বারা সম্পাদিত হয়েছিল, কিছু লোকেদের সাথে আমরা তখন যোগাযোগ করেছিলাম যারা এখন বাপ্তাইজিত হয়েছে।
আমাদের ভাইয়েরা মহামূল্যবান
নুকু হিভায় আমরা ধৈর্য শিক্ষা করেছিলাম। অত্যন্ত প্রধান প্রয়োজনীয় বস্তুগুলি ছাড়া সমস্ত কিছুর জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হত। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনি একটি বই পেতে চান, আপনাকে তার জন্য লিখতে হবে, তারপর সেটি পাওয়ার জন্য দুই অথবা তিন মাস অপেক্ষা করতে হবে।
আর একটি বিষয় যা আমরা শিখেছিলাম তা হল আমাদের ভাইয়েরা মহামূল্যবান। যখন আমরা তাহিতিতে যেতাম ও সভায় গিয়ে আমাদের ভাইয়েদের গান গাইতে শুনতাম, তখন আমরা কেঁদে ফেলতাম। এটি সত্য হতে পারে যে কখনও কিছু ভাইয়েদের সাথে থাকা কঠিন হয়, কিন্তু যখন আপনি একা তখন আপনি উপলব্ধি করবেন ভ্রাতৃসমাজের সাথে থাকা কত উত্তম। ১৯৮০ সালে সমিতি স্থির করে আমরা যেন তাহিতিতে ফিরে গিয়ে সীমার কাজে অংশগ্রহণ করি। সেখানে আমরা ভাইয়েদের উষ্ণ আতিথেয়তা ও প্রচার কাজে তাদের প্রেম দ্বারা প্রচুরভাবে উৎসাহিত হয়েছিলাম। আমরা তিন বছর তাহিতিতে সীমার কাজে ব্যয় করেছিলাম।
দ্বীপ থেকে দ্বীপে
এরপর আমরা প্রশান্ত মহাসাগরের অপর আর এক দ্বীপ রায়াটীয়ার মিশনারী গৃহে কার্যভার প্রাপ্ত হই ও সেখানে আমরা প্রায় দুবছর থাকি। রায়াটীয়ার পর আমাদের টুয়ামোটু দ্বীপপুঞ্জে সীমার কাজের জন্য পাঠানো হয়। আমরা নৌকা করে ৮০টি দ্বীপের ২৫টিতে পরিদর্শন করি। ববেটের জন্য এটি কঠিন ছিল। যতবার তাকে নৌকায় করে ভ্রমণ করতে হত প্রত্যেকবার সে অসুস্থ হয়ে পড়ত।
ববেট বলে: “এটি ভয়ঙ্কর ছিল! নৌকায় থাকাকালীন সমস্ত সময় আমি অসুস্থ থাকতাম। যদি আমরা পাঁচদিন সমুদ্রে থাকতাম তাহলে পাঁচদিনই আমি অসুস্থ থাকতাম। কোন ওষুধই আমার ক্ষেত্রে কাজ করত না। তবু আমার অসুস্থতা সত্ত্বেও আমি মনে করতাম সমুদ্র খুব সুন্দর। এটি এক মনোরম দৃশ্য ছিল। ডলফিনগুলি নৌকার সাথে দৌড়াত। তারা প্রায়ই লাফিয়ে জলের উপরে আসত যদি আপনি হাত তালি দেন!”
পাঁচ বছর সীমায় কাজ করার পরে আমরা পুনরায় দুবছরের জন্য তাহিতিতে কার্যভার প্রাপ্ত হই আর আবার আমাদের প্রচার কাজের জন্য একটি ভাল সময় অতিবাহিত করি। দেড় বছরের মধ্যে আমাদের মণ্ডলী ৩৫ থেকে দ্বিগুণ হয়ে ৭০-এ দাঁড়ায়। তাদের মধ্যে বারো জন যাদের সাথে আমরা বাইবেল অধ্যয়ন করেছিলাম আমরা চলে আসার কিছু আগেই বাপ্তিস্মিত হয়। তাদের মধ্যে কিছু জন এখন মণ্ডলীতে প্রাচীন হিসাবে পরিচর্যা করছে।
দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরে আমরা সর্বমোট ১২ বছর অতিবাহিত করি। তারপর আমরা সমিতি থেকে একটি চিঠি পাই যাতে বলা হয় দ্বীপপুঞ্জগুলিতে আর মিশনারীর প্রয়োজন নেই কারণ সেখানে মণ্ডলীগুলি সুদৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত। তাহিতিতে যখন আমরা গিয়েছিলাম তখন সেখানে প্রায় ৪৫০ জন প্রকাশক ছিল আর আমরা যখন চলে আসি তখন সেখানে প্রকাশক সংখ্যা ১,০০০ জনেরও বেশি দাঁড়ায়।
অবশেষে আফ্রিকায়!
আমরা ফ্রান্সে ফিরে আসি এবং দেড় মাস পরে সমিতি আমাদের নতুন কার্যভার প্রদান করে—পশ্চিম আফ্রিকার বেনিনে। আমরা ১৩ বছর আগে আফ্রিকায় যেতে চেয়েছিলাম তাই আমরা খুব খুশি হই।
আমরা ১৯৯০ সালের ৩রা নভেম্বর বেনিনে পৌঁছেছিলাম, আর রাজ্যের প্রচারের বিরুদ্ধে ১৪ বছরের নিষেধাজ্ঞা তুলে দেবার পর প্রথম মিশনারীদের মধ্যে একজন হিসাবে আমরা সেখানে পৌঁছাই। এটি খুব রোমাঞ্চকর ছিল। আমাদের সেখানে বসবাস করতে কোন সমস্যা ছিল না কারণ জীবনধারা প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপের মতই ছিল। লোকেরা খুবই বন্ধুত্বপূর্ণ ও অতিথিপরায়ণ ছিল। আপনি রাস্তায় দাঁড়াতে ও যে কোন ব্যক্তির সাথে কথা বলতে পারতেন।
আমরা বেনিনে পৌঁছানোর কয়েক সপ্তাহ পরেই ববেট তার স্তনে স্ফীতি লক্ষ্য করেছিল। সুতরাং আমরা নতুন স্থাপিত শাখা অফিসের কাছাকাছি একটি ছোট আরোগ্যশালায় গিয়েছিলাম। চিকিৎসক তাকে পরীক্ষা করেন ও বলেন খুব শীঘ্রই তার অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন। পরের দিন আমরা আর একটি আরোগ্যশালায় যাই যেখানে আমরা একজন ইউরোপীয় চিকিৎসককে দেখতে পাই, যিনি ফ্রান্সের একজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ। তিনিও বলেন আমাদের তাড়াতাড়ি ফ্রান্সে ফিরে যাওয়া উচিত যেন ববেটের অস্ত্রোপচার হতে পারে। দুই দিন পরে আমরা ফ্রান্স অভিমুখী একটি প্লেনে ছিলাম।
বেনিন পরিত্যাগ করতে হওয়ায় আমরা দুঃখিত হই। দেশে পুনরায় ধর্মীয় স্বাধীনতা পাওয়ার পর ভাইয়েরা নতুন মিশনারীদের পেয়ে উচ্ছ্বসিত হয়েছিল আর আমরাও সেখানে খুব আনন্দিত ছিলাম। তাই কিছু সপ্তাহ পরেই সেই দেশ ছেড়ে চলে আসতে হওয়ায় আমরা ভেঙে পড়েছিলাম।
যখন আমরা ফ্রান্সে পৌঁছাই শল্য চিকিৎসক ববেটকে পরীক্ষা করেন ও নিশ্চিত হন যে তার অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন। চিকিৎসক খুব তাড়াতাড়ি একটি ছোট অস্ত্রোপচার করেন ও পরের দিন ববেটকে হাসপতাল থেকে ছেড়ে দেন। আমরা ভেবেছিলাম যে এটাই সবকিছু ছিল।
আট দিন পরে, আমরা শল্য চিকিৎসকের সাথে দেখা করি। তখন তিনি বিষয়টি প্রকাশ করেন যে ববেটের স্তন ক্যানসার হয়েছে।
সেই সময় সে কেমন অনুভব করেছিলেন তা বর্ণনা করতে গিয়ে ববেট বলে: “প্রথমে আমি মিশেলের চেয়ে কম হতাশ হয়েছিলাম। কিন্তু এই দুঃসংবাদের পর আমার কোন অনুভূতি ছিল না। আমি কাঁদতেও পারিনি। হাসতেও পারিনি। আমি ভেবেছিলাম আমি মরে যাব। আমি মনে করতাম ক্যানসার মৃত্যুর সমতুল্য। আমার দৃষ্টিভঙ্গি ছিল আমাদের যা কিছু করার আছে তা করে নিতে হবে।”
ক্যানসারের সাথে যুদ্ধ
আমরা শুক্রবারে এই দুঃসংবাদটি শুনেছিলাম আর ববেটের দ্বিতীয় অস্ত্রোপচারটি মঙ্গলবারে হওয়ার ছিল। আমরা ববেটের দিদির বাড়িতে বাস করছিলাম, কিন্তু তিনিও অসুস্থ ছিলেন তাই আমরা তার ছোট ঘরে আর থাকতে পারলাম না।
আমরা কোথায় যাব তা ভাবছিলাম। তখন আমাদের মনে পড়েছিল ইভ ও ব্রিজিট মারডার কথা যে দম্পতির সাথে আমরা একসময় থাকতাম। সেই দম্পতি আমাদের প্রতি খুব আতিথ্যপূর্ণ ছিল। সুতরাং আমরা ফোন করে এভকে বললাম ববেটের অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন আর আমরা এখনও জানি না আমরা কোথায় থাকব। আমরা তাকে এও বলেছিলাম যে মিশেলের একটি চাকুরির প্রয়োজন আছে।
ইভ তার বাড়ির চারপাশেই মিশেলকে কাজ দিয়েছিল। ভাইয়েরা অনেক দয়াপূর্ণ কাজ দ্বারা আমাদের সমর্থন ও উৎসাহিত করেছিলেন। তারা আমাদের আর্থিকভাবেও সাহায্য করেছিলেন। ববেটের চিকিৎসার খরচ সমিতি দিয়েছিল।
অস্ত্রোপচার খুব জটিল ছিল। চিকিৎসক সেই স্ফীত অংশ ও স্তন বাদ দিয়েছিলেন। তারা তৎক্ষণাৎ কিমোথেরাপি শুরু করেছিলেন। এক সপ্তাহ পরে ববেট হাসপাতাল থেকে ছাড়া পায়, কিন্তু তাকে তিন সপ্তাহ অন্তর ক্রমাগত চিকিৎসার জন্য যেতে হত।
ববেটের চিকিৎসা চলাকালীন সময়ে মণ্ডলীর ভাইয়েরা খুব সাহায্যকারী হয়েছিল। একজন বোন যারও স্তন ক্যানসার হয়েছিল সে আমাদের কাছে মহা উৎসাহস্বরূপ হয়েছিল। সে ববেটকে বলেছিল কী আশা করা যায় ও তা তাকে অনেক স্বস্তি দিয়েছিল।
তবুও আমরা আমাদের ভবিষ্যতের জন্য চিন্তিত ছিলাম। তা বুঝে মিশেল ও জাঁ সেলেরইয়া খাওয়ার জন্য আমাদের একটি রেস্তরাঁয় নিয়ে যায়।
আমরা তাদের বলেছিলাম আমাদের মিশনারী কাজ ছেড়ে দিতে হবে আর আমরা কখনই আফ্রিকায় ফিরে যেতে পারব না। কিন্তু ভাই সেলেরী বলেছিলেন: “কী? কে বলেছে যে আপনাদের ছেড়ে দিতে হবে? পরিচালক গোষ্ঠী? ফ্রান্সের ভাইয়েরা? কে বলেছে?”
“কেউ বলেনি,” আমি উত্তর দিয়েছিলাম, “আমিই বলছি।”
“না, না!” ভাই সেলেরইয়া বলেছিলেন। “আপনারা ফিরে যাবেন!”
কিমোথেরাপি রশ্মি সঞ্চারিত করার মাধ্যমে করা হত, যা ১৯৯১ সালের আগস্ট মাসের শেষদিকে সমাপ্ত হয়েছিল। চিকিৎসকেরা বলেছিলেন যে আমাদের আফ্রিকায় ফিরে যেতে কোন বাধা নেই, যদি নিয়মিত পরীক্ষার জন্য ববেটের ফ্রান্সে পক্ষে ফ্রান্সে যাওয়া সম্ভব হতে পারে।
বেনিনে ফিরে যাওয়া
সুতরাং আমরা ব্রুকলিন প্রধান কার্যালয়ে চিঠি লিখেছিলাম মিশনারী কাজে পুনরায় যোগদানের অনুমতি চেয়ে। আমরা তাদের উত্তর শুনতে উদ্বিগ্ন ছিলাম। দিনগুলি যেন খুব ধীরে অতিবাহিত হচ্ছিল। পরিশেষে, মেশেল আর অপেক্ষা করতে না পেরে ব্রুকলিনে ফোন করেছিল আর জিজ্ঞাসা করেছিল তারা আমাদের চিঠি পেয়েছে কি না। তারা জানিয়েছিলেন যে তারা তা বিবেচনা করেছেন—আমরা বেনিনে ফিরে যেতে পারি! আমরা যিহোবার প্রতি কতই না কৃতজ্ঞ হয়েছিলাম!
মেরডা পরিবার এই সুসংবাদটি উদ্যাপনের জন্য এক সামাজিক মেলামেশার ব্যবস্থা করেন। ১৯৯১ সালের নভেম্বর মাসে আমরা বেনিনে ফিরে যাই আর ভাইয়েরা এক ভোজের ব্যবস্থা করার দ্বারা আমাদের স্বাগত জানায়!
ববেট এখন ভাল আছে। সম্পূর্ণ চিকিৎসাগত পরীক্ষার জন্য আমরা কিছু সময় অন্তর অন্তর ফ্রান্সে যেতাম ও চিকিৎসক ক্যানসারের আর কোন চিহ্ন পাননি। আমরা আমাদের মিশনারী কাজে ফিরে যেতে খুশি হয়েছিলাম। বেনিনে আমরা প্রয়োজনীয়তা বুঝেছিলাম আর যিহোবা আমাদের কাজ আশীর্বাদযুক্ত করেছেন। ফিরে যাওয়ার পর আমরা ১৪ জন ব্যক্তিকে বাপ্তিস্ম নিতে সাহায্য করেছি। তাদের মধ্যে পাঁচজন নিয়মিত অগ্রগামী ও একজন পরিচারক দাস হিসাবে নিযুক্ত আছেন। আমরা আমাদের ছোট মণ্ডলীকে বৃদ্ধি পেতে ও তারপর দুটি মণ্ডলীতে বিভক্ত হতে দেখেছি।
বছরের পর বছর আমরা স্বামী স্ত্রী, যিহোবার সেবা করেছি এবং অনেক আশীর্বাদ উপভোগ করেছি ও অনেক ভাল লোকেদের জানতে পেরেছি। কিন্তু আমরা কঠিন পরিস্থিতি সফলতার সাথে সহ্য করতেও যিহোবার দ্বারা শিক্ষিত ও শক্তিপ্রাপ্ত হয়েছি। ইয়োবের মত আমরাও সবসময় বুঝিনি কেন বিষয়টি এমন ঘটেছিল, কিন্তু আমরা জানতাম যিহোবা সর্বদা আমাদের সাহায্য করার জন্য প্রস্তুত। ঈশ্বরের বাক্য যেমন বলে: “দেখ, সদাপ্রভুর হস্ত এমন খাট নয় যে, তিনি পরিত্রাণ করিতে পারেন না; তাঁহার কর্ণ এমন ভারী নয় যে, তিনি শুনিতে পান না।”—যিশাইয় ৫৯:১.
[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]
বেনিনে স্থানীয় পোশাক পরিহিত মিশেল ও ববেট মুলার
[২৫ পৃষ্ঠার চিত্র]
গ্রীষ্মমণ্ডলীয় তাহিতিতে পোলিনেসিয়ানদের মধ্যে মিশনারী কাজ