নিষ্ঠার চ্যালেঞ্জের সাথে মোকাবিলা করা
“সেই নূতন মনুষ্যকে পরিধান কর, যাহা সত্যের ধার্ম্মিকতায় ও সাধুতায় [“নিষ্ঠায়,” NW] ঈশ্বরের সাদৃশ্যে সৃষ্ট হইয়াছে।”—ইফিষীয় ৪:২৪.
১. যিহোবা ঈশ্বরের প্রতি নিষ্ঠা দেখাতে কেন আমরা বাধিত?
নিষ্ঠার চ্যালেঞ্জকে মোকাবিলা করার অনেক দিক রয়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল যিহোবা ঈশ্বরের প্রতি নিষ্ঠা রক্ষা করার চ্যালেঞ্জকে মোকাবিলা করা। সত্যই, এই পরিপ্রেক্ষিতে যে যিহোবা কে এবং তিনি আমাদের জন্য কী করেছেন এবং তাঁর প্রতি আমাদের উৎসর্গীকরণের জন্য আমরা নিষ্ঠা রক্ষা করতে বাধিত। কিভাবে আমরা যিহোবা ঈশ্বরের প্রতি নিষ্ঠা দেখাতে পারি? একটি মুখ্য উপায় হল যিহোবার ধার্মিক নীতিগুলির প্রতি নিষ্ঠাবান্ হয়ে।
২, ৩. নিষ্ঠা এবং ধার্মিকতার মধ্যে কী সম্পর্ক রয়েছে?
২ সেই চ্যালেঞ্জকে মোকাবিলা করার জন্য আমাদের অবশ্যই ১ পিতর ১:১৫, ১৬ পদে যা লেখা আছে তা মেনে চলতে হবে: “যিনি তোমাদিগকে আহ্বান করিয়াছেন, সেই পবিত্রতমের ন্যায় আপনারাও সমস্ত আচার ব্যবহারে পবিত্র হও; কেননা লেখা আছে, ‘তোমরা পবিত্র হইবে, কারণ আমি পবিত্র।’” যিহোবা ঈশ্বরের প্রতি নিষ্ঠা, আমাদের চিন্তাধারা, কথাবার্তা এবং কার্যগুলি তাঁর পবিত্র ইচ্ছানুযায়ী নিয়ে এসে আমাদের সব সময় তাঁর প্রতি বাধ্য হতে প্রণোদিত করবে। এর অর্থ হল উত্তম সংবেদ বজায় রাখা যা ১ তীমথিয় ১:৩-৫ পদ আমাদের আদেশ দেয়: “সেই আদেশের পরিণাম [ভিন্ন মতবাদ শিক্ষা অথবা মিথ্যা গল্পের প্রতি মনোযোগ দেওয়া নয়] প্রেম, যাহা শুচি হৃদয়, সৎসংবেদ ও অকল্পিত বিশ্বাস হইতে উৎপন্ন।” সত্য, আমরা কেউ সিদ্ধ নই, কিন্তু আমাদের সর্বোত্তম করতে চেষ্টা করা উচিত, তাই নয় কী?
৩ যিহোবার প্রতি নিষ্ঠা আমাদের স্বার্থপরভাবে তাঁর ধার্মিক নীতিগুলির সাথে আপোশ করা থেকে বিরত করবে। সত্যই, নিষ্ঠা আমাদের কপট হওয়া থেকে বিরত করবে। নিষ্ঠা হল সেই বিষয়টি যা গীতরচকের মনে ছিল যখন তিনি গেয়েছিলেন: “হে সদাপ্রভু, তোমার পথ আমাকে শিক্ষা দেও, আমি তোমার সত্যে চলিব; তোমার নাম ভয় করিতে আমার চিত্তকে একাগ্র কর।” (গীতসংহিতা ৮৬:১১) নিষ্ঠা দাবি করে যা ভালভাবে বর্ণনা করা হয়েছে এইভাবে “যা বলবৎ করা যায় না তার প্রতি বাধ্য হওয়া।”
৪, ৫. নিষ্ঠা আমাদের কোন্ ভুল কাজ করা থেকে বিরত করবে?
৪ যিহোবা ঈশ্বরের প্রতি নিষ্ঠা আমাদের এমন কিছু করা থেকেও বিরত করবে যা তাঁর নাম এবং রাজ্যের প্রতি নিন্দা নিয়ে আসতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, দুইজন ভাই একবার নিজেদের মধ্যে এত সমস্যায় জড়িয়ে পড়ে যে তারা জাগতিক আদালতে যায়। ন্যায়াধীশ জিজ্ঞাসা করেন, ‘তোমরা দুইজনই কি যিহোবার সাক্ষী?’ স্পষ্টত তিনি বুঝতে পারছিলেন না যে আদালতে তারা কী করছে। সেটি কতই না নিন্দনীয় বিষয় ছিল! যিহোবা ঈশ্বরের প্রতি নিষ্ঠা, এই ভাইদের জন্য প্রেরিত পৌলের উপদেশ মেনে চলার কারণস্বরূপ হওয়া উচিত ছিল: “তোমরা যে পরস্পরের বিরুদ্ধে বিচার চাও, ইহাতে তোমাদের বিশেষ ক্ষতি হইতেছে। বরং অন্যায় সহ্য কর না কেন? বরং বঞ্চিত হও না কেন?” (১ করিন্থীয় ৬:৭) অবশ্যই, যিহোবা ঈশ্বরের প্রতি নিষ্ঠার পথ হল যিহোবা এবং তাঁর সংগঠনের নিন্দা নিয়ে আসার চাইতে ব্যক্তিগত ক্ষতি স্বীকার করা।
৫ যিহোবা ঈশ্বরের প্রতি নিষ্ঠার অন্তর্ভুক্ত হল লোকের ভয়ের নিচে নতি স্বীকার না করা। “লোক-ভয় ফাঁদজনক; কিন্তু যে সদাপ্রভুতে বিশ্বাস করে, সে উচ্চে স্থাপিত হইবে।” (হিতোপদেশ ২৯:২৫) তাই, আমরা নির্যাতনের মুখে আপোশ করি না, কিন্তু প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়ান, মালাউই, ইথিওপিয়া এবং অন্যান্য আরও দেশের যিহোবা সাক্ষীদের উদাহরণ অনুসরণ করি।
৬. নিষ্ঠা কাদের সাথে আমাদের মেলামেশা করা থেকে বিরত করবে?
৬ আমরা যদি যিহোবা ঈশ্বরের প্রতি নিষ্ঠাবান্ হই তাহলে যারা তাঁর শত্রু তাদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করা আমরা এড়িয়ে চলব। তাই জন্য শিষ্য যাকোব লিখেছিলেন: “হে ব্যভিচারিণীগণ, তোমরা কি জান না যে, জগতের মিত্রতা ঈশ্বরের সহিত শত্রুতা? সুতরাং যে কেহ জগতের মিত্র হইতে বাসনা করে, সে আপনাকে ঈশ্বরের শত্রু করিয়া তুলে।” (যাকোব ৪:৪) আমাদের রাজা দায়ূদের মত নিষ্ঠা থাকা উচিত যখন তিনি বলেছিলেন: “হে সদাপ্রভু যাহারা আমাকে দ্বেষ করে, আমি কি তাহাদিগকে দ্বেষ করি না? যাহারা তোমার বিরুদ্ধে উঠে, তাহাদের প্রতি কি বিরক্ত হই না? আমি যার পর নাই দ্বেষে তাহাদিগকে দ্বেষ করি; তাহাদিগকে আমারই শত্রু মনে করি।” (গীতসংহিতা ১৩৯:২১, ২২) আমরা স্বেচ্ছাচারী পাপীদের সাথে মেলামেশা করতে চাই না, কারণ তাদের সাথে আমাদের কোন মিল নেই। ঈশ্বরের প্রতি নিষ্ঠা কি আমাদের যিহোবার শত্রুদের সাথে ব্যক্তিগতরূপে অথবা টেলিভিশনের মাধ্যমে মেলামেশা করতে বিরত করবে না?
যিহোবার প্রতিরক্ষায় আসা
৭. নিষ্ঠা আমাদের যিহোবা সম্বন্ধে কী করতে সাহায্য করবে এবং ইলীহূ কিভাবে এটি করেছিলেন?
৭ নিষ্ঠা আমাদের যিহোবা ঈশ্বরের প্রতিরক্ষায় আসতে প্রণোদিত করবে। আমাদের জন্য ইলীহূ কী উত্তমই এক উদাহরণ! ইয়োব ৩২:২, ৩ পদ আমাদের বলে: “ইলীহূর ক্রোধ প্রজ্বলিত হইল; ইয়োবের প্রতি তাঁহার ক্রোধ প্রজ্বলিত হইল, কারণ তিনি ঈশ্বর অপেক্ষা আপনাকে ধার্ম্মিক জ্ঞান করিয়াছিলেন। আবার তাঁহার তিন জন বন্ধুর প্রতি তাঁহার ক্রোধ প্রজ্বলিত হইল, কারণ তাঁহারা উত্তর করিতে না পারিয়াও ইয়োবকে দোষী করিয়াছিলেন।” ইয়োব ৩২ থেকে ৩৭ অধ্যায়ে ইলীহূ যিহোবার প্রতিরক্ষায় আসে। উদাহরণস্বরূপ, তিনি বলেছিলেন: “আপনি আমার প্রতি একটু ধৈর্য্য করুন, আমি আপনাকে শিক্ষা দিব, কারণ ঈশ্বরের পক্ষে আমার আরও কথা আছে। . . . আমার নির্ম্মাতার উপর ধর্ম্মগুণ বর্ত্তাইব। . . . তিনি ধার্ম্মিকদের হইতে চক্ষু ফিরান না।”—ইয়োব ৩৬:২-৭.
৮. কেন আমাদের যিহোবার প্রতিরক্ষায় আসা প্রয়োজন?
৮ যিহোবার প্রতিরক্ষায় আসার কেন প্রয়োজন আছে? আজকে, আমাদের ঈশ্বর যিহোবাকে অনেক দিক দিয়ে ঈশ্বরনিন্দা করা হচ্ছে। এটি দাবি করা হয় যে তাঁর অস্তিত্ব নেই, তিনি ত্রিত্বের অংশ, তিনি অনন্তকালীন লোকেদের নরকাগ্নিতে নির্যাতন করেন, তিনি জগৎকে পরিবর্তন করার দুর্বল প্রচেষ্টা করছেন, তিনি মানবজাতি সম্বন্ধে চিন্তিত নন এবং আরও এইরকম। আমরা তাঁর প্রতি আমাদের নিষ্ঠা প্রদর্শন করি তাঁর প্রতিরক্ষায় এসে এবং এই প্রমাণ করে যে যিহোবার অস্তিত্ব আছে; তিনি জ্ঞানী, ন্যায়বিচারক, সর্বশক্তিমান্ এবং প্রেমময় ঈশ্বর; সবকিছু করার জন্য তাঁর নিরূপিত সময় রয়েছে এবং যখন তাঁর নিরূপিত সময় আসবে তিনি সব রকমের দুষ্টতাকে শেষ করে দেবেন এবং সম্পূর্ণ পৃথিবীকে এক পরমদেশে পরিণত করবেন। (উপদেশক ৩:১) এর জন্য প্রয়োজন হল আমরা প্রতিটি সুযোগে যিহোবার নাম এবং তাঁর রাজ্যের সম্বন্ধে সাক্ষ্য দিই।
যিহোবার সংগঠনের প্রতি নিষ্ঠা
৯. কোন্ বিষয়গুলির ক্ষেত্রে কিছু ব্যক্তি নিষ্ঠার অভাবকে প্রদর্শন করেছে?
৯ এখন আমরা যিহোবার দৃশ্যত সংগঠনের প্রতি নিষ্ঠাবান্ হওয়ার বিষয়েতে আসি। অবশ্যই, আমাদের এর প্রতি নিষ্ঠা দেখান উচিত যার অন্তর্ভুক্ত হল “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্ দাস,” যার মাধ্যমে খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীতে আধ্যাত্মিকভাবে খাদ্য প্রদান করা হয়। (মথি ২৪:৪৫-৪৭) ধরুন যদি এমন কিছু ওয়াচ টাওয়ার প্রকাশনাদির মধ্যে বের হয় যা আমরা বুঝছি না অথবা সেই সময়ে একমত নই। আমরা কী করব? আমরা কি অসন্তুষ্ট হব এবং সংগঠন ছেড়ে চলে যাব? এইরকম করেছিল যখন কিছু ব্যক্তি যখন অনেক বছর আগে দ্যা ওয়াচ টাওয়ার নতুন চুক্তিকে মিলেনিয়ামের সাথে প্রয়োগ করেছিল। প্রহরীদুর্গ নিরপেক্ষতা সম্বন্ধে যা বলেছিল সে বিষয়ে অন্যেরা অসন্তুষ্ট হয়েছিল। যারা এই বিষয়গুলির উপর উঁছোট খেয়েছিল তারা যদি সংগঠনের এবং তাদের ভাইদের প্রতি নিষ্ঠাবান্ হত তাহলে তারা যিহোবা ঈশ্বরের উপর অপেক্ষা করত বিষয়গুলি পরিষ্কার করার জন্য যা তিনি তাঁর নিরূপিত সময়ে করেছিলেন। তাই, নিষ্ঠা অন্তর্ভুক্ত করে ধৈর্য সহকারে অপেক্ষা করাকে যতক্ষণ না আরও বোধগম্যতা বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান দাস দ্বারা প্রকাশিত হয়।
১০. নিষ্ঠা আমাদের কোন্ বিষয়ে কৌতূহলী হওয়া থেকে বিরত করবে?
১০ যিহোবার দৃশ্যত সংগঠনের প্রতি নিষ্ঠা দেখানোর অর্থ হল ধর্মভ্রষ্টদের সাথে কোনরকম সম্বন্ধ না রাখা। নিষ্ঠাবান্ খ্রীষ্টানেরা এই সব ব্যক্তিরা কী বলে সেই সম্বন্ধে কৌতুহলী হয় না। সত্য, পৃথিবীতে তাঁর কাজ পরিচালনা করার জন্য যিহোবা ঈশ্বর যাদের ব্যবহার করছেন তারা সিদ্ধ নন। কিন্তু ঈশ্বরের বাক্য আমাদের কী করতে বলে? ঈশ্বরের সংগঠন পরিত্যাগ করতে? না। ভ্রাতৃস্নেহ আমাদের নিষ্ঠা বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং আমাদের ‘অন্তঃকরণে পরস্পর একাগ্র ভাবে প্রেম করে’ চলা উচিত।—১ পিতর ১:২২.
নিষ্ঠাবান্ প্রাচীনদের প্রতি নিষ্ঠা
১১. নিষ্ঠা আমাদের কোন্ নেতিবাচক চিন্তা করা থেকে সতর্ক হতে সাহায্য করবে?
১১ যখন মণ্ডলীতে কিছু বলা অথবা করা হয় যা হয়ত আমাদের বুঝতে অসুবিধা হয়, নিষ্ঠা আমাদের উদ্দেশ্য বিচার করা থেকে বিরত করবে এবং সাহায্য করবে যে বিষয়টি হয়ত বিচারমূলক ছিল। নিযুক্ত প্রাচীনদের এবং সহবিশ্বাসীদের ভুলত্রুটির পরিবর্তে তাদের ভাল গুণাবলির উপর চিন্তা করা কি আরও উত্তম নয়? হ্যাঁ, আমরা এইধরনের নেতিবাচক চিন্তাধারার বিরুদ্ধে সাবধান হব কারণ তা নিষ্ঠাবান্ হওয়ার পরিচয় দেয় না! নিষ্ঠা আমাদের সাহায্য করবে পৌলের নির্দেশ ‘কাহারও নিন্দা না করা,’ মেনে চলতে।—তীত ৩:১, ২.
১২, ১৩. প্রাচীনদের কোন্ বিশেষ চ্যালেঞ্জের সাথে মোকাবিলা করতে হয়?
১২ প্রাচীনদের ক্ষেত্রে নিষ্ঠা হল এক বিশেষ চ্যালেঞ্জস্বরূপ। একটি হল গোপনীয়তা বজায় রাখার বিষয়। মণ্ডলীর কোন সদস্য প্রাচীনের কাছে কোন গোপন কথা বলতে পারে। সেই ব্যক্তির প্রতি নিষ্ঠা প্রাচীনকে গোপনীয় রাখার নীতি উলঙ্ঘন করা থেকে বিরত করবে। তিনি হিতোপদেশ ২৫:৯ পদের উপদেশ মেনে চলবেন: “কিন্তু পরের গুপ্ত কথা প্রকাশ করিও না।” এর অর্থ হল তার নিজের এমনকি স্ত্রীর কাছেও নয়!
১৩ প্রাচীনদের নিষ্ঠার অন্যান্য পরীক্ষাও মোকাবিলা করার আছে। তারা কি লোকেদের সন্তুষ্ট করবে অথবা তারা কি সাহস এবং নম্রতার সাথে তাদের সাহায্য করবে যাদের সংশোধনের প্রয়োজন, এমনকি তারা যদি তাদের নিকট আত্মীয় অথবা ঘনিষ্ঠ বন্ধুবান্ধবও হয়? যিহোবার সংগঠনের প্রতি নিষ্ঠা দ্বারা আমরা যারা প্রাচীন তারা প্রণোদিত হব তাদের সাহায্য করতে যাদের আধ্যাত্মিক সাহায্যের প্রয়োজন। (গালাতীয় ৬:১, ২) যদিও আমরা দয়াশীল হব, নিষ্ঠা আমাদের সহপ্রাচীনদের সাথে অকপট হতে সাহায্য করবে ঠিক যেমন পৌল প্রেরিত পিতরের সাথে অকপটভাবে কথা বলেছিলেন। (গালাতীয় ২:১১-১৪) অপরপক্ষে, অধ্যক্ষদের সতর্ক হতে হবে, পাছে তারা অনভিজ্ঞরূপে কাজ করে অথবা পক্ষপাতিত্ব দেখায় অথবা কোন রকমভাবে তাদের কর্তৃত্বকে অপব্যবহার করে, তারা তাদের অধীনে যারা রয়েছে তাদের কাছে ঈশ্বরের সংগঠনের প্রতি নিষ্ঠাবান্ হওয়া কঠিন করে তুলতে পারে।—ফিলিপীয় ৪:৫.
১৪, ১৫. কোন্ বিষয়গুলি মণ্ডলীর সদস্যদের নিষ্ঠাকে হয়ত পরীক্ষা করতে পারে?
১৪ মণ্ডলীর এবং এর প্রাচীনদের প্রতি নিষ্ঠার চ্যালেঞ্জকে মোকাবিলা করার বিষয়টির অন্যান্য দিকগুলি রয়েছে। যদি কোন সমস্যাপূর্ণ পরিস্থিতি মণ্ডলীতে গড়ে ওঠে, সেই সময়ে আমাদের যিহোবা এবং যারা তাঁকে প্রতিনিধিত্ব করছে তাদের প্রতি নিষ্ঠা দেখানোর সুযোগ হয়। (প্রহরীদুর্গ জুন ১৫, ১৯৮৭, পৃষ্ঠা ১৫-১৭ দেখুন।) যখন কাউকে সমাজচ্যুত করা হয়, নিষ্ঠা আমাদের প্রাচীনদের সমর্থন করতে প্রণোদিত করে, এই চিন্তা না করে যে, যে সিদ্ধান্তটি নেওয়া হয়েছিল তার যথার্থ কারণ ছিল কি না।
১৫ মণ্ডলীর প্রতি নিষ্ঠা আমাদের যে কোন পরিস্থিতি এবং ক্ষমতা অনুযায়ী পাঁচটি সভায় যোগদান করতে বলে। নিষ্ঠা থাকার অর্থ শুধুমাত্র নিয়মিতরূপে উপস্থিত হওয়া নয়, কিন্তু প্রস্তুতি করা এবং যেরকম সুযোগ হয় গঠনমূলক মন্তব্য করা।—ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫.
বিবাহের ক্ষেত্রে নিষ্ঠা
১৬, ১৭. বিবাহিত খ্রীষ্টানদের নিষ্ঠার কোন চ্যালেঞ্জের সাথে মোকাবিলা করতে হয়?
১৬ আর কার কাছে আমরা নিষ্ঠা দেখাতে বাধ্য? যদি আমরা বিবাহিত হই, আমাদের বিবাহের অঙ্গীকার অনুসারে, আমাদের বিবাহের সাথীর প্রতি নিষ্ঠাবান্ হওয়ার চ্যালেঞ্জের সাথে মোকাবিলা করতে হবে। আমাদের সাথীর প্রতি নিষ্ঠা আমাদের নিজের স্ত্রী অথবা স্বামীর চাইতে অন্যান্য নারী অথবা পুরুষের প্রতি আরও মনোরম হওয়ার ভুল করা থেকে বিরত করবে। আমাদের সাথীর প্রতি নিষ্ঠা থাকার অর্থের সাথে বাহিরের লোকেদের কাছে আমাদের সাথীদের দুর্বলতা অথবা দোষত্রুটি প্রকাশ না করাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। আমাদের নিজেদের সাথীর সাথে ভাববিনিময়ের পথ খুলে রাখার চেষ্টা করা যা সুবর্ণ নিয়ম অনুসারে আমাদের করা উচিত, তার চাইতে আমাদের অন্যদের কাছে অভিযোগ করা খুব সহজ। (মথি ৭:১২) প্রকৃতপক্ষে, বৈবাহিক অবস্থা আমাদের খ্রীষ্টীয় নিষ্ঠার প্রতি এক প্রকৃত চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করে।
১৭ নিষ্ঠার এই চ্যালেঞ্জকে মোকাবিলা করার জন্য আমাদের শুধুমাত্র অসংগত আচরণ করা এড়িয়ে চলতে হবে তাই নয়, কিন্তু আমাদের চিন্তাধারা অথবা অনুভূতিকেও রক্ষা করতে হবে। (গীতসংহিতা ১৯:১৪) উদাহরণস্বরূপ, যদি আমাদের প্রতারণাপূর্ণ হৃদয় আনন্দ এবং উত্তেজনার জন্য লোভী হয়, তাহলে স্বার্থপরভাবে প্রশংসা করার পর্যায় থেকে কামনা করার পথে যাওয়া আমাদের জন্য খুব সহজ হয়। বৈবাহিক বিশ্বস্ততার উপর জোর দিয়ে রাজা শলোমন রূপকভাবে স্বামীদের ‘নিজ জলাশয়ের জল পান করতে’ উপদেশ দিয়েছিলেন। (হিতোপদেশ ৫:১৫) আর যীশু বলেছিলেন: “যে কেহ কোন স্ত্রীলোকের প্রতি কামভাবে দৃষ্টিপাত করে, সে তখনই মনে মনে তাহার সহিত ব্যভিচার করিল।” (মথি ৫:২৮) স্বামীরা যারা নিজেদের অশ্লীল বিষয়গুলিকে মনোনয়ন করে, তাদের পারদারিকতায় লিপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে যার ফলে তারা তাদের স্ত্রীদের প্রতারণা করে এবং অবিশ্বস্ত হয়ে থাকে। একই কারণে একজন স্ত্রী হয়ত টিভি সিরিয়ালের চিন্তার সাথে যুক্ত হতে পারে যেখানে পারদারিক বিষয়গুলি দেখানো হয়, ফলত সে হয়ত তার স্বামীর প্রতি অবিশ্বস্ত হতে প্রলোভিত হতে পারে। কিন্তু, আমাদের সাথীর প্রতি প্রকৃত নিষ্ঠাবান্ হলে আমরা বিবাহের বন্ধনকে শক্তিশালী করব এবং যিহোবা ঈশ্বরকে খুশি করার প্রচেষ্টাতে আমরা একে অপরকে সাহায্য করব।
নিষ্ঠাবান্ হওয়ার ক্ষেত্রে সাহায্যসকল
১৮. কিসের প্রতি উপলব্ধিবোধ আমাদের নিষ্ঠাবান্ হতে সাহায্য করবে?
১৮ এই চারটি ক্ষেত্রে নিষ্ঠা হওয়ার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে কী আমাদের সাহায্য করবে: যিহোবার প্রতি, তাঁর সংগঠনের প্রতি, মণ্ডলীর প্রতি এবং আমাদের বিবাহ সাথীর প্রতি নিষ্ঠা? একটি সাহায্য হল এটি উপলব্ধি করা যে নিষ্ঠার চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করার সাথে যিহোবার সার্বিক সার্বভৌমত্ব জড়িত রয়েছে। হ্যাঁ, নিষ্ঠাবান্ হওয়ার দ্বারা আমরা দেখাই যে যিহোবা হলেন সার্বিক সার্বভৌম। এর ফলে আমাদের আত্ম-মর্যাদা থাকবে এবং যিহোবার নতুন জগতে অনন্ত জীবনের আশাও থাকবে। আমরা নিজেদের নিষ্ঠাবান্ থাকতে সাহায্য করতে পারি যদি আমরা নিষ্ঠার উত্তম উদাহরণগুলি বিবেচনা করি, যিহোবা থেকে শুরু করে বাইবেলে এবং ওয়াচ টাওয়ার প্রকাশনাদিতে যার অন্তর্ভুক্ত হল বর্ষপুস্তক (ইংরাজি) যাদের বিষয় উল্লেখ করে সেই বিবরণগুলি।
১৯. আমাদের নিষ্ঠাবান্ হওয়ার বিষয়ে বিশ্বাস কী ভূমিকা পালন করে?
১৯ যিহোবা ঈশ্বরের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস এবং তাঁকে অসন্তুষ্ট করার ভয় আমাদের সাহায্য করবে নিষ্ঠার চ্যালেঞ্জকে মোকাবিলা করতে। ঈশ্বরের বাক্য মনোযোগ সহকারে অধ্যয়ন করে এবং খ্রীষ্টীয় পরিচর্যায় অংশগ্রহণ করে আমরা যিহোবার প্রতি আমাদের আস্থা এবং তার প্রতি ভয়কে জোরাল করি। এটি আমাদের সাহায্য করবে পৌলের উপদেশের সাথে সামঞ্জস্য রেখে কাজ করতে যা ইফিষীয় ৪:২৩, ২৪ পদে লেখা আছে: “আপন আপন মনের ভাবে যেন ক্রমশঃ নবীনীকৃত হও, এবং সেই নূতন মনুষ্যকে পরিধান কর, যাহা সত্যের ধার্ম্মিকতায় ও সাধুতায় [“নিষ্ঠায়,” NW] ঈশ্বরের সাদৃশ্যে সৃষ্ট হইয়াছে।”
২০. সর্বোপরি, যিহোবার প্রতি এবং অন্য সকলের যাদের প্রতি আমরা নিষ্ঠা দেখাতে বাধিত কোন্ গুণাবলি আমাদের সাহায্য করবে নিষ্ঠাবান্ হতে?
২০ যিহোবার গুণাবলির প্রতি উপলব্ধিবোধ আমাদের সাহায্য করবে নিষ্ঠাবান্ হতে। সর্বোপরি, আমাদের স্বর্গীয় পিতার প্রতি নিঃস্বার্থ প্রেম এবং তিনি আমাদের জন্য যা কিছু করেছেন তার প্রতি কৃতজ্ঞতাবোধ, সম্পূর্ণ হৃদয় ও প্রাণ ও মন ও শক্তি দিয়ে তাঁকে ভালবাসা আমাদের তাঁর প্রতি নিষ্ঠাবান্ হতে সাহায্য করবে। এছাড়া, যীশু যে প্রেম সম্বন্ধে বলেছিলেন যা তাঁর অনুসরণকারীদের থাকা উচিত তা থাকা আমাদের সাহায্য করবে মণ্ডলীতে এবং আমাদের পরিবারের সকল খ্রীষ্টানদের প্রতি নিষ্ঠাবান্ হতে। অন্যভাবে বলতে গেলে, এর অর্থ হল স্বার্থপর অথবা নিঃস্বার্থ হওয়া। নিষ্ঠাহীন মানে স্বার্থপরতা। নিষ্ঠার অর্থ হল নিঃস্বার্থ হওয়া।—মার্ক ১২:৩০, ৩১; যোহন ১৩:৩৪, ৩৫.
২১. কিভাবে নিষ্ঠার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা বিষয়টির সারসংক্ষেপ করা যেতে পারে?
২১ সারসংক্ষেপ: নিষ্ঠা হল এক উৎকৃষ্ট গুণাবলি যা যিহোবা ঈশ্বর, যীশু খ্রীষ্ট এবং যিহোবার সকল সত্য সেবকদের দ্বারা প্রদর্শিত। যিহোবা ঈশ্বরের সাথে উত্তম সম্পর্ক রাখাতে, তাঁর ধার্মিক চাহিদাগুলি মেনে চলে জীবনযাপন করে, তাঁর শত্রুদের সাথে কোন বিষয় সংযুক্ত না থেকে, রীতিগত এবং রীতিবহির্ভূতভাবে সাক্ষ্যদান করার দ্বারা যিহোবার প্রতিরক্ষায় এসে তাঁর প্রতি নিষ্ঠার চ্যালেঞ্জে আমাদের অবশ্যই পৌঁছাতে হবে। যিহোবার দৃশ্যত সংগঠনের প্রতি নিষ্ঠাবান্ হওয়ার চ্যালেঞ্জও আমাদের অবশ্যই মোকাবিলা করতে হবে। আমাদের অবশ্যই মণ্ডলীর এবং বিবাহ সাথীদের প্রতি নিষ্ঠাবান্ হতে হবে। নিষ্ঠার চ্যালেঞ্জকে সফলতার সাথে মোকাবিলা করার দ্বারা আমরা যিহোবার সার্বভৌমত্বকে মহিমান্বিত করায় অংশ এবং বিচার্য বিষয়ে তাঁর পক্ষ নিয়ে থাকি। এর ফলে আমরা তাঁর অনুগ্রহ এবং অনন্ত জীবনের পুরস্কার লাভ করব। প্রেরিত পৌল ঈশ্বরীয় ভক্তি সম্বন্ধে যা বলেছিলেন তা আমাদের নিষ্ঠার চ্যালেঞ্জকে মোকাবিলা করা সম্বন্ধেও বলা যেতে পারে। এটি এখনকার জীবন ও ভবিষ্যতে যা আসতে চলেছে, উভয়ের জন্য উপকারী।—গীতসংহিতা ১৮:২৫; ১ তীমথিয় ৪:৮.
আপনি কিভাবে উত্তর দেবেন?
◻ কোন্ কোন্ উপায়ে আমরা ঈশ্বরের প্রতি নিষ্ঠার চ্যালেঞ্জকে মোকাবিলা করতে পারি?
◻ যিহোবার সংগঠনের প্রতি নিষ্ঠা আমাদের কাছ থেকে কী আশা করে?
◻ প্রাচীনেরা কিভাবে নিষ্ঠার চ্যালেঞ্জকে মোকাবিলা করতে পারেন?
◻ নিষ্ঠার সাথে অন্তর্ভুক্ত কোন্ চ্যালেঞ্জ বিবাহিত খ্রীষ্টানদের অবশ্যই মোকাবিলা করতে হবে?
◻ কোন্ গুণাবলি আমাদের নিষ্ঠার চ্যালেঞ্জকে মোকাবিলা করতে সাহায্য করবে?
[১৭ পৃষ্ঠার চিত্র]
মণ্ডলীর সদস্যদের প্রতি নিষ্ঠা প্রাচীনদের গোপনীয় কথা প্রকাশ করা থেকে বিরত করে
[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]
একজনের সাথীর প্রতি নিষ্ঠা বিবাহের বন্ধনকে শক্তিশালী করে