আন্তিয়খিয়ার থিয়োফিলাস কে ছিলেন?
“তুমি আমাকে খ্রীষ্টান বল, যেন এই নামধারণ করা খারাপ, কিন্তু আমার পক্ষে আমি শপথ করছি যে আমি একজন খ্রীষ্টীয় এই নামধারণ করছি এবং ঈশ্বরের প্রিয় ও এই আশা করছি যে ঈশ্বরের কাছে কার্যকারী হব।”
থিয়োফিলাস নিজের তিন খণ্ড থিয়োফিলাস টু অটোলাইকাস বইটি পরিচিত করেছিলেন। দ্বিতীয় শতাব্দীর ধর্মভ্রষ্টতার বিরুদ্ধে এটি ছিল তার প্রথম প্রতিরক্ষা। থিয়োফিলাস সাহসের সাথে নিজেকে খ্রীষ্টের অনুসরণকারী হিসাব শনাক্ত করেন। তিনি মনে হয় দৃঢ়প্রত্যয়ী ছিলেন তার কাজকে গুছিয়ে নিতে যাতে করে তিনি “ঈশ্বরের প্রিয়” হতে পারেন, যেটি ছিল গ্রীক ভাষায় তার নামের অর্থ। তাহলে থিয়োফিলাস কে ছিলেন? তিনি কখন জীবিত ছিলেন? আর তিনি কী সম্পন্ন করেছিলেন?
ব্যক্তিগত ইতিহাস
থিয়োফিলাসের ব্যক্তিগত ইতিহাস সম্বন্ধে খুব কমই জানা যায়। তিনি ন-খ্রীষ্টীয় পিতামাতার কাছে বড় হয়েছিলেন। থিয়োফিলাস পরে খ্রীষ্টীয়তত্ত্বে পরিবর্তন করেন, কিন্তু তা কেবল শাস্ত্র পুঙ্খানুপুঙ্খ অধ্যয়ন করার পরে। সিরিয়ান আন্তিয়খিয়াতে তিনি বিশপ হন যা এখন তুরস্কের অ্যানটাকইয়া নামে জানা যায়।
যীশুর আদেশ মেনে চলে প্রথম-শতাব্দীর খ্রীষ্টানেরা আন্তিয়খিয় জনসাধারণের কাছে প্রচার করেছিল। লূক তাদের সফলতা লিপিবদ্ধ করেছিল এই বলে: “প্রভুর হস্ত তাহাদের সহবর্ত্তী ছিল, এবং বহুসংখ্যক লোক বিশ্বাস করিয়া প্রভুর প্রতি ফিরিল।” (প্রেরিত ১১:২০, ২১) ঐশিকভাবে নির্দেশিত যীশু খ্রীষ্টের অনুকরণকারীদের খ্রীষ্টান বলে জানা গিয়েছিল। এই নামকরণটি প্রথমে সিরিয়ান আন্তিয়খিয়ার প্রতি প্রয়োগ করা হয়েছিল। (প্রেরিত ১১:২৬) প্রথম শতাব্দীতে, প্রেরিত পৌল সিরিয়ান আন্তিয়খিয়াতে পরিদর্শন করেছিলেন যা পরে তার মুখ্য কার্যালয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। বার্ণবা এবং পৌল, যোহন মার্ক সহ তারা তাদের প্রথম মিশনারী পরিদর্শন আন্তিয়খিয়া থেকে শুরু করেছিলেন।
আন্তিয়খিয়ার প্রাথমিক খ্রীষ্টানেরা প্রেরিতদের দ্বারা তাদের শহর পরিদর্শনে অবশ্যই খুব উৎসাহপ্রাপ্ত হয়েছিল। ঈশ্বরের বাক্যের সত্যের প্রতি তাদের উৎসাহের সাথে অনুকূল প্রতিক্রিয়া নিঃসন্দেহে পরিচালক গোষ্ঠীর প্রথম শতাব্দীর প্রতিনিধিদের বিশ্বাস-দৃঢ়কারী পরিদর্শনের জন্য হয়েছিল। (প্রেরিত ১১:২২, ২৩) আন্তিয়খিয়ার এত বসবাসকারীদের যিহোবা ঈশ্বরের প্রতি তাদের জীবনকে উৎসর্গ করতে দেখা অবশ্যই তাদের জন্য উৎসাহজনক ছিল! কিন্তু, তার ১০০ বছরেরও পরে থিয়োফিলাস আন্তিয়খিয়াতে বাস করতে শুরু করেন।
ইতিহাসবেত্তা ইউসেবিয়াস উল্লেখ করেন যে, খ্রীষ্টের প্রেরিতদের সময় থেকে গণনা করলে থিয়োফিলাস ছিলেন আন্তিয়খিয়ার ষষ্ঠ বিশপ। থিয়োফিলাস অনেক মৌখিক আলোচনা এবং গির্জার বিরুদ্ধে বিবৃতি লিপিবদ্ধ করেছিলেন। তাকে তার দিনের বারোর অধিক খ্রীষ্টীয় অ্যাপোলজিস্টদের মধ্যে গণনা করা হয়।
তার লেখার দিকে দেখা
তার প্রথম বাক্যের প্রতি প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে, থিয়োফিলাস পৌত্তলিক অটোলাইকাসকে লিখেছিলেন এই কথাগুলি দিয়ে শুরু করে: “এক বাক্পটু জিহ্বা এবং অলংকারবহূল ধারা নিয়ে আসে, কিন্তু এইধরনের প্রশংসা মূল্যহীন এবং সেই মন্দ লোকেদের খুশি করে যাদের মন কলূষিত হয়ে গেছে।” থিয়োফিলাস ব্যাখ্যা করেন: “যে ব্যক্তি সত্যকে ভালবাসে সে অলংকারপূর্ণ কথাবার্তায় মনোযোগ দেয় না, বরং সেই বাক্যের প্রকৃত অর্থ পরীক্ষা করে . . . তুমি আমাকে শূন্য বাক্য দ্বারা আক্রমণ করেছ, তোমাদের কাঠের ও পাথরের দেবতার বিষয়ে শ্লাঘা করেছ, হাতুড়ি পিটিয়েছ এবং ছাঁচে ফেলেছ, খোদাই এবং উৎকীরণ করেছ, যা দেখেও না শোনেও না কারণ তারা মূর্তিবিশেষ লোকেদের হাতের কাজ।”—তুলনা করুন গীতসংহিতা ১১৫:৪-৮.
থিয়োফিলাস মূর্তিপূজার ভুল ধারণাকে প্রকাশ করেছিলেন। তার নিজস্ব ধারা অনুযায়ী তিনি বাক্পটুতায় কিন্তু অনাবশ্যকভাবে সত্য ঈশ্বরের প্রকৃত প্রকৃতি বলার চেষ্টা করেন। তিনি বলেন: “ঈশ্বরের দেহ অবর্ণনীয় এবং মাংসিক চক্ষু দ্বারা দেখা যায় না। কারণ তাঁর গৌরব বোধাতীত, মহানতা দুর্বোধ্য, উচ্চতা ধারণাতীত, শক্তি অতুলনীয়, প্রজ্ঞা অনুপম, সাধুতা অননুকরণীয়, দয়া অনুচ্চার্য।”
ঈশ্বরের বর্ণনায় যোগ দিয়ে, থিয়োফিলাস আরও বলেন: “তিনি কিন্তু প্রভু, কারণ তিনি বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের উপর শাসন করেন; পিতা, কারণ তিনি সর্বপ্রথম, গঠনকারী এবং নির্মাণকর্তা, কারণ তিনি হলেন বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টিকর্তা এবং নির্মাণকর্তা; সর্বোচ্চ, কারণ তিনি সবার উর্দ্ধে; এবং সর্বশক্তিমান কারণ তিনি একাই রাজত্ব ও সকলকে গ্রহণ করেন।”
তারপর, ঈশ্বরের বিশিষ্ট কৃতকার্যতার উপর দৃষ্টি কেন্দ্রীভূত করে, থিয়োফিলাস তার যা হল পুঙ্খানুপুঙ্খ এবং কিছুটা মাত্রায় পুনরাবৃত্তি ধারায় তিনি আরও বলেন: “কারণ স্বর্গ হল তাঁর কার্যাবলী, পৃথিবী তাঁর সৃষ্টি, সমুদ্র তাঁর হাতের কাজ; মানব তাঁর দ্বারা গঠিত এবং তাঁর প্রতিমূর্তি; সূর্য, চাঁদ এবং নক্ষত্রগণ হল তাঁর সৃষ্টি, যা চিহ্নের, ঋতু, দিন এবং বছরের জন্য তৈরি যাতে করে তা মানবজাতির জন্য দাসের কাজ করতে পারে; ঈশ্বর সেই সব বস্তুগুলি সৃষ্টি করেছিলেন যা অস্তিত্বে ছিল না যাতে করে তাঁর কাজের মাধ্যমে তাঁর মহানতা জানা যেতে পারে এবং বোঝা যেতে পারে।”
তার দিনের মিথ্যা দেবতাদের বিরুদ্ধে থিয়োফিলাসের আক্রমণের ইঙ্গিত দেখা যেতে পারে অটোলাইকাসের প্রতি তার বাক্যের দ্বারা: “যাদের নাম তুমি বলছ উপাসনা করছ, সেগুলি হল মৃত ব্যক্তিদের নাম। . . . আর এরা কিধরনের ব্যক্তি ছিল? স্যাটার্ন কী নরখাদক নয় নিজের ছেলেমেয়েদের কী ধ্বংস করে এবং খেয়ে ফেলে না? আর যদি তুমি তার ছেলে জুপিটারের কথা বল, . . . সে কিভাবে ছাগলের দ্বারা স্তন্যপান করেছিল . . . আর তার অন্যান্য কর্মগুলি,—তার অজাচার, তার পারদারিকতা এবং কাম।”
তার যুক্তি সম্বন্ধে আরও বলতে গিয়ে থিয়োফিলাস পৌত্তলিক প্রতিমাপূজার বিরুদ্ধে তার দৃষ্টিভঙ্গিকে জোরাল করেন। তিনি লেখেন: “আমি মিশরীয়দের দ্বারা উপাসিত বৃহৎ সংখ্যার পশু, উভয় সরীসৃপ, গৃহপালিত পশু, আর হিংস্র পশু, পাখি ও নদীর মাছ সম্বন্ধে কি পুনরাবৃত্তি করব . . . গ্রীক এবং অন্যান্য রাষ্ট্রগুলি, তারা পাথর ও কাঠ এবং অন্যান্য বস্তুগত পদার্থকে উপাসনা করে থাকে।” “কিন্তু ঈশ্বর, জীবন্ত এবং সত্য ঈশ্বরকে, আমি উপাসনা করি,” থিয়োফিলাস ঘোষণা করেন।—তুলনা করুন ২ শমূয়েল ২২:৪৭; প্রেরিত ১৪:১৫; রোমীয় ১:২২, ২৩.
মূল্যবান প্রমাণ
থিয়োফিলাসের তিন-খণ্ডের লেখাগুলি যা অটোলাইকাসকে অসংগত প্রমাণ করে তাতে উপদেশ এবং উৎসাহ আছে যা বৈশিষ্ট্যপূর্ণ এবং পুঙ্খানুপুঙ্খ। থিয়োফিলাস অন্যান্য লেখাগুলি হারমোজিনস এবং মারসিয়োনের বিরুদ্ধে লিখেছিলেন। সুসমাচারের উপর মন্তব্য করে তিনি শিক্ষা এবং উপদেশের বই লিখেছিলেন। কিন্তু অটোলাইকাসের তিনটি মাত্র বই, একটি ম্যানুস্ক্রিপ্ট সংরক্ষণ করা রয়েছে।
প্রথম বইটি লেখা হয়েছিল অটোলাইকাসের প্রতি দোষ স্বীকার যা খ্রীষ্টীয় ধর্মের প্রতিরক্ষায় ছিল। দ্বিতীয় বইটিতে অটোলাইকাস প্রচলিত হেদেন ধর্ম, অনুমান, দার্শনিক এবং কবিদের বিরুদ্ধে যুক্তি প্রদর্শন। থিয়োফিলাসের তৃতীয় বইটিতে হেদেন সাহিত্যকে তুলনা করা হয়েছে শাস্ত্রের সাথে।
থিয়োফিলাসের তৃতীয় বইয়ের শুরুতে, অটোলাইকাস মনে করেছিল যে সত্যের বাক্য হল কল্পকথা। থিয়োফিলাস অটোলাইকাসকে সমালোচনা করে, এই দাবি করেন: “তুমি মুর্খদের সানন্দ সহ্য কর। অন্যথা, তুমি তাহলে মুর্খ ব্যক্তিদের দ্বারা প্ররোচিত হয়ে শূন্য বাক্যের দ্বারা প্রভাবিত হতে না এবং প্রচলিত গুজবকে বিশ্বাস করতে না।
সেই “প্রচলিত গুজব” কী? থিয়োফিলাস সেই উৎসটিকে প্রকাশ করেন। মিথ্যাবাদীরা “যাদের জিহ্বা ঈশ্বরহীন তারা আমাদের অভিযোগ করে, [আমরা] যারা ঈশ্বরের উপাসক আর যাদের খ্রীষ্টান বলা হয়, এই দোষারোপ করা হয় যে আমাদের স্ত্রীয়েরা হল সর্বসাধারণের জন্য এবং যৌন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়; আর আমরা এমনকি আমাদের নিজের বোনেদের সাথে অজাচার করি আর সবচেয়ে ঘৃণার্হ এবং হিংস্র হল যে আমরা মানুষের মাংস খাই।” তথাকথিত দ্বিতীয়-শতাব্দীর খ্রীষ্টানদের প্রতি সম্পূর্ণ পৌত্তলিক দৃষ্টিভঙ্গির সাথে থিয়োফিলাস লড়াই করার চেষ্টা করেন। তিনি ঈশ্বরের অনুপ্রাণিত বাক্যে প্রাপ্ত সত্যের আলো ব্যবহার করেন।—মথি ৫:১১, ১২.
ঈশ্বরের বাক্যের সাথে থিয়োফিলাসের সুপরিচিতির প্রতি প্রমাণ দেখতে পাই যখন ইব্রীয় এবং গ্রীক উভয় বাইবেল পদের প্রতি তার প্রায়ই ব্যবহার এবং ইঙ্গিত আমরা লক্ষ্য করি। সুসমাচারের পুস্তকের প্রতি তিনি প্রথম মন্তব্যকারীদের মধ্যে একজন ছিলেন। শাস্ত্রের প্রতি তার বহু ইঙ্গিত তখনকার দিনের প্রচলিত চিন্তাধারার প্রতি প্রচুর অন্তর্দৃষ্টি দেয়। পৌত্তলিক দর্শনবিদ্যার উপর প্রচুর উৎকৃষ্টতা দেখাতে তিনি অনুপ্রাণিত লেখাগুলির সাথে তার অন্তরঙ্গতা ব্যবহার করেন।
থিয়োফিলাসের লেখার ব্যবস্থা, শিক্ষার ধারা এবং পুনরাবৃত্ত ধারা অনেক লোকের মনে প্রশ্ন রেখে যেতে পারে। কতদূর পর্যন্ত পূর্বে ব্যক্ত ধর্মভ্রষ্টতা তার দৃষ্টিভঙ্গির যাথার্থ্যতাকে প্রভাবিত করেছিল, তা আমরা এখন বলতে পারব না। (২ থিষলনীকীয় ২:৩-১২) কিন্তু, তার মৃত্যুর সময়ে প্রায় সা.শ. ১৮২ সালে তিনি এক ক্লান্তিহীন অ্যাপোলজিস্ট হয়ে ওঠেন যার লেখাগুলি আমাদের আধুনিক যুগের প্রকৃত খ্রীষ্টানদের জন্য আগ্রহের বিষয়।
[৩০ পৃষ্ঠার চিত্র]
থিয়োফিলাস সাহসের সাথে অটোলাইকাসের যুক্তিকে খণ্ডন করেছিলেন
[২৮ পৃষ্ঠার চিত্র সৌজন্যে]
Illustrations on pages 28 and 30 reproduced from Illustrirte Pracht - Bibel/Heilige Schrift des Alten und Neuen Testaments, nach der deutschen Uebersetzung D. Martin Luther’s