মর্যাদাপূর্ণভাবে স্মরণার্থক সভা উদ্যাপন করুন
এটি ছিল সা.শ. ৩৩ সালে ১৪ই নিশান তারিখের সন্ধ্যাবেলা, যখন যীশু স্মরণার্থক সভা প্রবর্তন করেছিলেন।a তিনি সবেমাত্র তাঁর ১২ জন প্রেরিতের সাথে নিস্তারপর্ব পালন শেষ করেছেন আর সেই কারণে আমরা তারিখটি সম্বন্ধে নিশ্চিত হতে পারি। বিশ্বাসঘাতক যিহূদাকে বিদায় দেওয়ার পর, যীশু “রুটি লইয়া আশীর্ব্বাদপূর্ব্বক ভাঙ্গিলেন এবং তাঁহাদিগকে দিলেন, আর কহিলেন, তোমরা লও, ইহা আমার শরীর। পরে তিনি পানপাত্র লইয়া ধন্যবাদপূর্ব্বক তাঁহাদিগকে দিলেন, এবং তাঁহারা সকলেই তাহা হইতে পান করিলেন। আর তিনি তাঁহাদিগকে কহিলেন, ইহা আমার রক্ত, নূতন নিয়মের রক্ত, যাহা অনেকের জন্য পাতিত হয়।”—মার্ক ১৪:২২-২৪.
এর গুরুত্বের কারণে যীশু তাঁর শিষ্যদের তাঁর মৃত্যুর স্মরণার্থক সভা উদ্যাপন করতে আদেশ দিয়েছিলেন। (লূক ২২:১৯; ১ করিন্থীয় ১১:২৩-২৬) তাঁর বলিদানই ছিল একমাত্র ব্যবস্থা যা মানবজাতিকে উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত পাপ ও মৃত্যুর অভিশাপ থেকে মুক্ত করতে পারত। (রোমীয় ৫:১২; ৬:২৩) যে রুটি ও দ্রাক্ষারস তিনি ব্যবহার করেছিলেন তা তাঁর সিদ্ধ দেহ ও তাঁর রক্তের প্রতীকস্বরূপ ছিল। সঠিক দিনটি জানার ফলে আমরা প্রত্যেক বছর যথাযথ দিনে অনুষ্ঠানটি উদ্যাপন করতে পারি, ঠিক যেমন যিহূদী নিস্তারপর্ব পালন করা হত। কিন্তু আমরা অবশ্যই তা মর্যাদাপূর্ণভাবে করব। কেন?
যারা এই রুটি ও দ্রাক্ষারসের প্রতীক গ্রহণ করে তাদের সম্বন্ধে প্রেরিত পৌল বলেছিলেন “প্রভুর মৃত্যু প্রচার করিয়া থাক, যে পর্য্যন্ত তিনি না আইসেন।” (১ করিন্থীয় ১১:২৬, বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) তাই এই উদ্যাপনে যীশুর মৃত্যু ও মানবজাতির জন্য তা কী অর্থ বহন করে তার উপর আলোকপাত করা হয়। এই অনুষ্ঠান গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি সেই সময় যার মাধ্যমে ঈশ্বরের মঙ্গলভাব এবং যিহোবা ও তাঁর পুত্রের প্রতি আমাদের যে উপলব্ধি থাকা উচিত তা প্রতিফলিত করে। (রোমীয় ৫:৮; তীত ২:১৪; ১ যোহন ৪:৯, ১০) তাই পৌল সতর্ক করেছিলেন: “অতএব যে কেহ অযোগ্যরূপে প্রভুর রুটী ভোজন কিম্বা পানপাত্রে পান করিবে, সে প্রভুর শরীরের ও রক্তের দায়ী হইবে।”—১ করিন্থীয় ১১:২৭.
মর্যাদাপূর্ণভাবে—কেমন করে?
স্পষ্টতই, ঈশ্বর সন্তুষ্ট হবেন না যদি আমরা আপত্তিকর অভ্যাসে লিপ্ত থেকে অথবা এটিকে পৌত্তলিক প্রথারূপে অবলম্বন করে অনুষ্ঠানটি অপবিত্র করি। (যাকোব ১:২৭; ৪:৩, ৪) এটিকে ইস্টারের সময়ের জনপ্রিয় ঘটনায় পরিণত করা থেকে বিরত থাকতে হবে। যীশুর নির্দেশ “ইহা [তাঁহার] স্মরণার্থে করিও” অনুসরণ করে আমাদের কেবলমাত্র তিনি যেভাবে স্মরণার্থক সভা প্রবর্তন করেছিলেন সেইভাবেই তা পালন করতে হবে। (লূক ২২:১৯; ১ করিন্থীয় ১১:২৪, ২৫) খ্রীষ্টীয়জগতের গির্জাগুলিতে যেমন উদ্যাপনের সাথে জমকালো সাজসজ্জা যুক্ত করা হয়েছে তা বাদ দেওয়া উচিত। নিউ ক্যাথলিক এনসাইক্লোপিডিয়া স্বীকার করে যে “আজকে খ্রীষ্টের নৈশভোজোৎসব-পর্ব (মাস) যীশু ও তাঁর শিষ্যদের দ্বারা অনুসৃত অত্যন্ত সাধারণ অনুষ্ঠানের থেকে ভীষণভাবে পৃথক।” আর খ্রীষ্টের নৈশভোজোৎসব-পর্ব (মাস) বারংবার, এমনকি প্রত্যেকদিন, পালন করে খ্রীষ্টীয়জগৎ যীশুর প্রকৃত অভিপ্রায় থেকে ভ্রষ্ট হয়েছে ও এটিকে একটি সাধারণ ঘটনায় পরিণত করেছে।
পৌল করিন্থীয় খ্রীষ্টানদের অমর্যাদাপূর্ণভাবে অংশগ্রহণ করা সম্বন্ধে লিখেছিলেন কারণ মণ্ডলীতে প্রভুর সান্ধ্যভোজ সম্বন্ধে একটি সমস্যা দেখা দিয়েছিল। কয়েকজন এর পবিত্রতার প্রতি মর্যাদা দেয়নি। তারা তাদের সন্ধ্যাবেলার খাবার তাদের সাথে নিয়ে আসত আর সভার আগে বা সভা চলাকালীন তা খেত। প্রায়ই তারা অতিরিক্ত ভোজন ও পান করত। এটি তাদের তন্দ্রাচ্ছন্ন করত ও তাদের বোধশক্তিকে নিস্তেজ করে দিত। মানসিক ও আধ্যাত্মিকভাবে সজাগ না থাকায় তারা ‘শরীর চিনতে পারেনি’ আর তাই “প্রভুর শরীরের ও রক্তের দায়ী” হয়েছিল। এই মধ্যবর্তী সময়ে, যারা সন্ধ্যাবেলার খাবার খেত না তারাও ক্ষুধার্ত ও বিক্ষিপ্তচিত্ত হত। প্রকৃতপক্ষে তাদের কেউই প্রতীক গ্রহণের এই গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান উপলব্ধি সহকারে ও সম্পূর্ণ অনুভব করার পরিস্থিতিতে থাকত না—যে উদ্যাপন ছিল প্রভুর মৃত্যুর স্মরণে। এর ফলস্বরূপ তাদের বিরুদ্ধে বিচার এসেছিল, কারণ তারা অশ্রদ্ধা প্রদর্শন করেছিল, এমনকি এর প্রতি অবজ্ঞা দেখিয়েছিল।—১ করিন্থীয় ১১:২৭-৩৪.
বিচক্ষণতা প্রয়োজনীয়
কয়েকজন স্মরণার্থক প্রতীক গ্রহণ করে, যদিও পরে তারা উপলব্ধি করে যে তাদের তা করা উচিত ছিল না। যারা সঠিকভাবে স্মরণার্থক প্রতীক গ্রহণ করে তারা ঈশ্বরের দ্বারা মনোনীত ও ঈশ্বরের আত্মার প্রামাণিক সাক্ষ্য তাদের আছে। (রোমীয় ৮:১৫-১৭; ২ করিন্থীয় ১:২১, ২২) এটি তাদের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত বা সঙ্কল্প নয় যা তাদের যোগ্য করে। ঈশ্বর ১,৪৪,০০০ জনের একটি সীমিত সংখ্যা স্থির করেছেন যারা স্বর্গে খ্রীষ্টের সাথে রাজত্ব করবে, যারা খ্রীষ্টের মুক্তিরমূল্য থেকে উপকৃত হবে তাদের তুলনায় এটি আপেক্ষিকভাবে একটি ক্ষুদ্র সংখ্যা। (প্রকাশিত বাক্য ১৪:১, ৩) এই নির্বাচন যীশুর দিনে শুরু হয়েছিল, সুতরাং আজকে খুব অল্প সংখ্যক অংশগ্রহণকারী আছে। আর যেহেতু তাদের কিছুজনের মৃত্যু হয় তাই সেই সংখ্যা কমতে থাকা উচিত।
কেন একজন ভুলভাবে প্রতীক গ্রহণ করতে পারে? এটি পূর্ববর্তী ধর্মীয় বিশ্বাস—যে, সমস্ত বিশ্বস্ত ব্যক্তিরা স্বর্গে যায় সেই কারণে হতে পারে। অথবা এটি উচ্চাকাঙ্ক্ষা বা স্বার্থপরতার কারণে—এই মনোভাব যে একজন অন্যদের চেয়ে বেশি যোগ্য—এবং নিজেকে উল্লেখযোগ্য হিসাবে প্রতিপন্ন করার ইচ্ছা থেকেও হতে পারে। সম্ভবত এটি দৃঢ় আবেগ যা কঠিন সমস্যা অথবা বিষাদের কারণে উৎপন্ন হয় যা একজনকে পৃথিবীতে জীবনের প্রতি অনাগ্রহী করে তোলে, তার ফলস্বরূপ হতে পারে। এটি এই কারণেও হতে পারে যে স্বর্গীয় আহ্বানপ্রাপ্ত একজনের সাথে বন্ধুত্ব থাকা। আমাদের সকলের স্মরণে রাখা প্রয়োজন যে সিদ্ধান্ত একমাত্র ঈশ্বরেরই, আমাদের নয়। (রোমীয় ৯:১৬) সুতরাং এক ব্যক্তি “পরীক্ষা” করার পর যদি বোঝে যে প্রকৃতই প্রতীক গ্রহণ করা তার উচিত নয়, তাহলে তার এখনই বিরত হওয়া উচিত।—১ করিন্থীয় ১১:২৮.
এটি আশাজনক যে ঈশ্বর মানবজাতির অধিকাংশের জন্য পরমদেশ পৃথিবীতে অনন্তকালীন জীবন দান করেছেন। এটি একটি মহান আশীর্বাদ যা আমরা প্রত্যাশা করতে পারি ও যার প্রতি আমরা সহজে সাড়া দিতে পারি। (আদিপুস্তক ১:২৮; গীতসংহিতা ৩৭:৯, ১১) এই পৃথিবীতে বিশ্বস্ত ব্যক্তিরা তাদের পুনরুত্থিত প্রিয়জনদের সাথে পুনর্মিলিত হবে ও প্রাচীন ধার্মিক ব্যক্তিদের যেমন অব্রাহাম, সারা, মোশি, রাহব, দায়ূদ ও যোহন বাপ্তাইজকের সাথে মিলিত হবে—যাদের সকলেরই যীশুর পূর্বে মৃত্যু হয়েছিল যিনি স্বর্গের দ্বার উন্মুক্ত করেছিলেন।—মথি ১১:১১; তুলনা করুন ১ করিন্থীয় ১৫:২০-২৩.
পার্থিব আশা সম্পন্ন ব্যক্তিরা এমনকি যদিও তারা রুটি ও দ্রাক্ষারস গ্রহণে অংশ নেয় না, তারা তাদের উপস্থিতি ও শ্রদ্ধাপূর্ণ মনোযোগ দ্বারা মর্যাদাপূর্ণভাবে প্রভুর সান্ধ্যভোজ উদ্যাপন করে থাকে। তারাও খ্রীষ্টের বলিদানের দ্বারা উপকৃত হয়, যেটি তাদের ঈশ্বরের সামনে এক অনুমোদনযোগ্য অবস্থায় থাকতে সাহায্য করে। (প্রকাশিত বাক্য ৭:১৪, ১৫) যেহেতু তারা প্রদত্ত আলোচনা শোনে, পবিত্র বস্তুর প্রতি তাদের উপলব্ধি শক্তিশালী হয় এবং সর্বক্ষেত্রে ঈশ্বরের লোকেদের সাথে একতায় থাকার ইচ্ছা বৃদ্ধি পায়।
এই বছরে ২রা এপ্রিল, মঙ্গলবার সূর্যাস্তের পর পৃথিবীব্যাপী যিহোবার সাক্ষীদের ৭৮,০০০টিরও বেশি মণ্ডলীগুলিতে স্মরণার্থক সভা পালিত হবে। আপনি কি উপস্থিতদের মধ্যে একজন হবেন?
[পাদটীকাগুলো]
a যিহূদী দিন সন্ধ্যাবেলা শুরু হত। আমাদের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ১৪ই নিশান ৩১শে মার্চ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যাবেলা থেকে শুরু হয়ে ১লা এপ্রিল শুক্রবার সন্ধ্যাবেলা সূর্যাস্ত পর্যন্ত চলত। স্মরণার্থক সভা প্রবর্তন করা হয়েছিল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যাবেলা এবং যীশুর মৃত্যু ঘটেছিল সেই একই যিহূদী দিনে, শুক্রবার বিকালবেলা। তিনি তৃতীয় দিনে, রবিবার ভোরবেলায় পুনরুত্থিত হয়েছিলেন।
[৮ পৃষ্ঠার চিত্র]
যিহোবার সাক্ষীরা বছরে একবার স্মরণার্থক সভা উদ্যাপন করে