তারা যিহোবার ইচ্ছা পালন করেছিলেন
একটি ছোট মেয়ে যে সাহসের সাথে কথা বলেছিল
ইস্রায়েল ও সিরিয়ার মধ্যে পরস্পরের প্রতি সম্পর্ক সা.শ.পূ. দশম শতাব্দীতে ভাল ছিল না। লড়াইয়ের প্রাদুর্ভাব এত বেশি সাধারণ ছিল যে যখন তিন বছর দৌরাত্ম্যহীন অবস্থায় অতিবাহিত হয়েছিল তখন তা এক ঐতিহাসিক নথিস্বরূপ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।—১ রাজাবলি ২২:১.
বিশেষত ওই সময়ে ভয়াবহ ছিল সিরিয়ার লুণ্ঠনকারীদের দল যা একশ সৈন্যের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছিল। এই সৈনিকেরা ইস্রায়েলীয়দের আকস্মিক আক্রমণ ও লুণ্ঠন করেছিল, অনেককে অপহরণ ও দাস হিসাবে বন্দী করে নিয়ে গিয়েছিল—এমনকি শিশুদেরও।
এই রকম এক আক্রমণের সময় “একটি ছোট বালিকাকে” নির্দয়ভাবে তার ঈশ্বর-ভয়শীল পরিবার থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়। (২ রাজাবলি ৫:২) সিরিয়ায় নিয়ে গিয়ে তাকে এমন লোকেদের সাথে থাকতে বাধ্য করা হয়েছিল যাদের সে ভয় করত ও যারা সম্পূর্ণ অপরিচিত ছিল—সেই লোকেরা যারা সূর্য, চাঁদ, নক্ষত্র, গাছ, উদ্ভিদ ও এমনকি পাথরের উপাসনা করত। তারা কতই না পৃথক ছিল তার পরিবার ও বন্ধুদের থেকে যারা একমাত্র সত্য ঈশ্বর যিহোবার উপাসনা করত! কিন্তু, এমনকি এই অপরিচিত পরিবেশেও এই মেয়েটি যিহোবাকে উপাসনার ব্যাপারে উল্লেখযোগ্য সাহস প্রদর্শন করেছিল। পরিণতিস্বরূপ, সে সিরিয়ার রাজার অধীনে কার্যরত এক প্রধান সেনাপতির জীবন সম্পূর্ণরূপে পরিবর্তিত করতে পেরেছিল। আসুন আমরা দেখি কিভাবে।
নির্ভীকভাবে কথা বলার সাহস
বাইবেলের বিবরণে এই ছোট মেয়েটির নাম পাওয়া যায় না। সে নামানের স্ত্রীর পরিচারিকা হয়েছিল, যিনি ছিলেন রাজা দ্বিতীয় বেন-হেদেদের অধীনে এক সাহসী প্রধান সেনাপতি। (২ রাজাবলি ৫:১) যদিও তিনি উচ্চ সম্মানিত ব্যক্তি ছিলেন, তবুও নামানের ঘৃণ্য কুষ্ঠ রোগ হয়েছিল।
সম্ভবত সেই মেয়েটির সম্মানসূচক আচরণ, নামানের স্ত্রীকে পরিচালিত করেছিল তাকে বিশ্বাস করতে। তিনি হয়ত মেয়েটিকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘ইস্রায়েলে কুষ্ঠ রোগীদের জন্য কি করা হয়?’ এই ইস্রায়েলীয় মেয়েটি সাহসের সাথে বলতে দ্বিধাবোধ করেনি: “শমরিয়ায় যে ভাববাদী আছেন, তাঁহার সহিত যদি আমার প্রভুর সাক্ষাৎ হইত, তবে তিনি তাঁহাকে কুষ্ঠ হইতে উদ্ধার করিতেন।”—২ রাজাবলি ৫:৩.
এই মেয়েটির কথাগুলি শিশুসুলভ কল্পনা ভেবে বর্জন করা হয়নি। বিপরীতে, তারা রাজা বেন-হেদেদকে বিষয়টি জানিয়েছিলেন, যিনি নামানকে ও আরও অন্যান্য লোকেদের শমরিয়া থেকে ১৫০ কিলোমিটার পথ যাত্রা করে সেই ভাববাদীর খোঁজ করতে পাঠিয়েছিলেন।—২ রাজাবলি ৫:৪, ৫.
নামানের আরোগ্যলাভ
নামান ও তার লোকেরা ইস্রায়েলের রাজা যিহোরামের কাছে গিয়েছিল বেন-হেদেদের কাছ থেকে পরিচয়পত্র ও প্রচুর পরিমাণ আর্থিক উপহার নিয়ে। এটি আশ্চর্যের নয় যে গো-উপাসক রাজা যিহোরাম ঈশ্বরের ভাববাদীর উপর বিশ্বাস প্রদর্শন করেননি যা সেই পরিচারক মেয়েটি করেছিল। পরিবর্তে, তিনি ভেবেছিলেন নামান বিবাদ উৎপন্ন করার জন্য এসেছে। যখন ঈশ্বরের ভাববাদী ইলীশায় যিহোরামের আশঙ্কার কথা শোনেন, তিনি তৎক্ষণাৎ সংবাদ পাঠিয়েছিলেন এই অনুরোধ করে যে, যেন রাজা নামানকে তার গৃহে পাঠান।—২ রাজাবলি ৫:৬-৮.
যখন নামান ইলীশায়ের গৃহে পৌঁছান, ভাববাদী এক দূত পাঠিয়েছিলেন যে তাকে বলে: “আপনি গিয়া সাত বার যর্দ্দনে স্নান করুন, আপনার নূতন মাংস হইবে, ও আপনি শুচি হইবেন।” (২ রাজাবলি ৫:৯, ১০) নামান ক্রুদ্ধ হয়েছিলেন। অলৌকিক ও জাঁকজমকপূর্ণ কোন প্রদর্শন প্রত্যাশা করে তিনি জিজ্ঞাসা করেছিলেন: “ইস্রায়েলের সমস্ত জলাশয় হইতে দম্মেশকের অবানা ও পর্পর নদী কি উত্তম নয়? আমি কি তাহাতে স্নান করিয়া শুচি হইতে পারি না?” নামান ক্রোধের সাথে ইলীশায়ের গৃহ থেকে প্রস্থান করেন। কিন্তু যখন নামানের দাসেরা তার সাথে যুক্তি করেছিল, পরিশেষে তিনি মেনে নিয়েছিলেন। যর্দন নদীতে সাত বার স্নান করার পর, “ক্ষুদ্র বালকের ন্যায় তাঁহার নূতন মাংস হইল, ও তিনি শুচি হইলেন।” ২ রাজাবলি ৫:১১-১৪.
ইলীশায়ের কাছে ফিরে গিয়ে নামান বলেছিলেন: “দেখুন, আমি এখন জানিতে পারিলাম, সমস্ত পৃথিবীতে আর কোথাও ঈশ্বর নাই, কেবল ইস্রায়েলের মধ্যে আছেন।” নামান শপথ গ্রহণ করেছিলেন যে তিনি “সদাপ্রভু ব্যতিরেকে অন্য দেবতার উদ্দেশ্যে হোম কিম্বা বলিদান আর করিবে না।”—২ রাজাবলি ৫:১৫-১৭.
আমাদের জন্য শিক্ষা
নামান কখনই ভাববাদী ইলীশায়ের কাছে যেতেন না যদি না সেই ছোট পরিচারক মেয়েটি সাহসের সাথে কথা বলত। আজকে, অনেক অল্পবয়স্ক যুবক-যুবতীরা একইভাবে পদক্ষেপ নিয়ে থাকে। বিদ্যালয়ে, তারা এমন সহ-ছাত্রছাত্রীদের দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকে যাদের ঈশ্বরের সেবায় কোন রকম আগ্রহ নেই। তবুও তারা নির্ভীকভাবে তারা কী বিশ্বাস করে সে সম্বন্ধে বলে থাকে। এদের মধ্যে অনেকে তা করা শুরু করে উল্লেখযোগ্য রকম কম বয়সে।
অষ্ট্রেলিয়ার পাঁচ বছরের একটি মেয়ে অ্যালেকজান্দ্রার কথা বিবেচনা করুন। যখন সে বিদ্যালয়ে যাওয়া শুরু করেছিল, তার মা শিক্ষকের সাথে একটি সাক্ষাতের ব্যবস্থা করেছিলেন যিহোবার সাক্ষীদের বিশ্বাস সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করার জন্য। কিন্তু অ্যালেকজান্দ্রার মা অপ্রত্যাশিতভাবে আশ্চর্য হয়ে গিয়েছিলেন। “আমি ইতিমধ্যেই আপনাদের অনেক বিশ্বাসের সাথে পরিচিত, যেমন অ্যালেকজান্দ্রা বিদ্যালয়ে কোন্ বিষয়গুলি করবে ও কোনগুলি করবে না,” শিক্ষক বলেছিলেন। অ্যালেকজান্দ্রার মা অভিভূত হয়েছিলেন যেহেতু বিদ্যালয়ে অন্য কোন সাক্ষী ছেলে-মেয়ে ছিল না। “অ্যালেকজান্দ্রা তার বিশ্বাস সম্বন্ধে আমাদের জানিয়েছে,” শিক্ষক ব্যাখ্যা করেছিলেন। হ্যাঁ, এই ছোট মেয়েটির তার শিক্ষকের সাথে ইতিমধ্যেই এক কৌশলপূর্ণ আলোচনা হয়েছিল।
এইধরনের যুবক-যুবতীরা নির্ভীকভাবে কথা বলে থাকে। আর এইভাবে তারা গীতসংহিতা ১৪৮:১২, ১৩ পদের সাথে সামঞ্জস্য রেখে কাজ করে: “যুবকগণ ও যুবতী সকল; বৃদ্ধগণ ও বালক বালিকা-সমূহ; সকলে সদাপ্রভুর নামের প্রশংসা করুক, কেননা কেবল তাঁহারই নাম উন্নত, তাঁহার প্রভা পৃথিবীর ও স্বর্গের উপরিস্থ।”