ওয়াচটাওয়ার অনলাইন লাইব্রেরি
ওয়াচটাওয়ার
অনলাইন লাইব্রেরি
বাংলা
  • বাইবেল
  • প্রকাশনাদি
  • সভা
  • w৯৬ ৮/১ পৃষ্ঠা ২১-২৫
  • পুরস্কারের প্রতি দৃষ্টি এবং হৃদয় নিবদ্ধ রাখা

এই বাছাইয়ের সঙ্গে কোনো ভিডিও প্রাপ্তিসাধ্য নেই।

দুঃখিত, ভিডিওটা চালানো সম্বভব হচ্ছে না।

  • পুরস্কারের প্রতি দৃষ্টি এবং হৃদয় নিবদ্ধ রাখা
  • ১৯৯৬ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • উপশিরোনাম
  • অনুরূপ বিষয়বস্ত‌ু
  • পূর্ণ-সময় পরিচর্যা
  • আমাদের কার্যভারের প্রতি
  • নতুন কার্যভারগুলি
  • যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসা
  • পুনরায় গিলিয়েড স্কুলে
  • আর্জেন্টিনায় কর্মভারপ্রাপ্ত হওয়া
  • পুনরায় যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যাবর্তন
  • প্রথমে রাজ্যের বিষয়ে চেষ্টা করা—এক সুরক্ষিত ও সুখী জীবন
    ২০০৩ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • আমার সৃষ্টিকর্তাকে ক্রমাগত সেবা করার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ
    ২০০৫ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • বাবামা আমাদের ঈশ্বরকে ভালবাসতে শিখিয়েছিলেন
    ১৯৯৯ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • আমার বাবামায়ের পদচিহ্ন অনুসরণ করে
    ১৯৯৫ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
আরও দেখুন
১৯৯৬ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
w৯৬ ৮/১ পৃষ্ঠা ২১-২৫

পুরস্কারের প্রতি দৃষ্টি এবং হৃদয় নিবদ্ধ রাখা

এডিথ মাইকেল দ্বারা কথিত

সময়টি ছিল ১৯৩০ এর দশকের প্রথমদিক, যখন আমরা যুক্তরাষ্ট্রে, মিসৌরীর সেন্ট লুইসের নিকটে বাস করতাম, তখন যিহোবার সাক্ষীদের একজন আমাদের সাথে সাক্ষাৎ করেছিলেন। ঠিক তখনই কাপড় শুকানোর দড়িটি ছিঁড়ে যায় এবং মায়ের উজ্জ্বল সাদা কাপড়গুলি মাটিতে পড়ে যায়। তিনি অর্পিত বইগুলি গ্রহণ করেন কেবল যাতে সেই মহিলা চলে যান আর তারপর সেগুলিকে বইয়ের তাকে রেখে দেন ও সেগুলির কথা ভুলে যান।

সেই বছরগুলি ছিল অর্থনৈতিক দিক দিয়ে কষ্টের সময় এবং বাবাকে কাজ থেকে বহিস্কৃত করা হয়েছিল। একদিন তিনি জিজ্ঞেস করেন পড়ার জন্য ঘরে কিছু আছে কি না। মা তাকে সেই বইগুলির সম্বন্ধে বলেন। তিনি সেগুলি পড়া শুরু করেন এবং কিছুক্ষণ পর তিনি চীৎকার করে ওঠেন, “গিন্নী, এটিই সত্য!”

“আঃ, এটি একটি ধর্ম ঠিক অন্যান্য ধর্মগুলির মত, যারা পয়সা চায়,” তিনি উত্তর দেন। কিন্তু, বাবা তাকে বসার জন্য এবং তার সাথে শাস্ত্রগুলি দেখার জন্য অনুরোধ করেন। যখন তিনি তা করেন, তিনিও প্রভাবিত হন। এরপর তারা সাক্ষীদের খুঁজতে থাকেন এবং আবিষ্কার করেন যে তারা সেন্ট লুইসের মধ্যভাগের কাছেই একটি ভাড়া করা হলে মিলিত হয়েছে, যে হলটি নাচ এবং অন্যান্য অনুষ্ঠানের জন্যও ব্যবহার করা হত।

বাবা ও মা আমাকে সাথে করে নিয়ে গিয়েছিলেন—আমি তখন প্রায় তিন বছরের ছিলাম—এবং তারা হলটি খুঁজে পান, কিন্তু তখন সেখানে একটি নাচের অনুষ্ঠান চলছিল। সভাগুলি কখন অনুষ্ঠিত হয়, বাবা তার সময় জানেন এবং তারপর আমরা ফিরে আসি। এছাড়াও আমরা যেখানে থাকতাম তার নিকটেই সাপ্তাহিক বাইবেল অধ্যয়নে যোগ দেওয়া আরম্ভ করি। এই অধ্যয়নটি অনুষ্ঠিত হত তার বাড়িতে যে মহিলাটি প্রথম আমাদের সাথে সাক্ষাৎ করেছিলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করেন, “আপনি কেন আপনার ছেলেদেরকেও নিয়ে আসেন না?” মা লজ্জা পাচ্ছিলেন বলতে যে, তাদের জুতো নেই। পরিশেষে যখন তা তিনি ব্যাখ্যা করেছিলেন, জুতোর ব্যবস্থা করা হয়েছিল এবং আমার ভাইয়েরা আমাদের সাথে সভাগুলিতে যোগদান করা শুরু করে।

আমাদের বাড়ির কাছেই মাকে প্রচারের জন্য একটি এলাকা দেওয়া হয় এবং তিনি ঘরে ঘরে পরিচর্যার কাজ আরম্ভ করেন। আমি তার সাথে যেতাম ও তার পিছনে লুকিয়ে থাকতাম। মা গাড়ি চালানো শেখার আগে আমরা এক কিলোমিটারেরও বেশি পথ হেঁটে যেতাম বাস ধরার জন্য যা আমাদের সেন্ট লুইসে সভাগুলিতে নিয়ে যেত। এমনকি যখন সেখানে তুষারপাত হত, তবুও আমরা কখনও সভাগুলিকে বাদ দিইনি।

১৯৩৪ সালে মা এবং বাবা বাপ্তিস্ম নেন। আমিও বাপ্তিস্ম নিতে চেয়েছিলাম এবং যতক্ষণ না মা একজন বয়স্ক সাক্ষীর সঙ্গে আমার সাথে এই বিষয়ে কথা বলার জন্য বলেন আমি বার বার তাকে অনুরোধ করতে থাকি। তিনি আমাকে আমি যেন বুঝতে পারি এমনভাবে অনেক প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেন। তারপর তিনি আমার বাবামাকে বললেন যে আমাকে বাপ্তিস্ম নিতে বাধা দেওয়া উচিত নয়; কারণ তা হয়ত আমার আধ্যাত্মিক বৃদ্ধিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। সুতরাং, পরবর্তী গ্রীষ্মে যখন আমার বয়স মাত্র ছয় বছর ছিল, আমি বাপ্তাইজিত হয়েছিলাম।

আমি গৃহ এবং সুখ (ইংরাজি) এই পুস্তিকাটিকে খুবই পছন্দ করতাম যেটিকে আমি সবসময় আমার কাছে রাখতাম, এমনকি যখন আমি ঘুমাতাম তখনও সেটিকে আমার বালিশের নিচে রেখে দিতাম। আমি বার বার মাকে এটি পড়ার জন্য অনুরোধ করতাম যতক্ষণ না আমি এটিকে মুখস্থ করে ফেলি। এর পিছনে পরমদেশে সিংহের সাথে একটি ছোট মেয়ের ছবি ছিল। আমি বলতাম যে সেই ছোট মেয়েটি হচ্ছি আমি। সেই ছবিটি আমাকে ঈশ্বরের নতুন জগতে জীবনের সেই পুরস্কারের প্রতি দৃষ্টি রাখতে সাহায্য করেছিল।

আমি খুবই লাজুক ছিলাম এমনকি যদিও আমি হয়ত কাঁপতাম, তবুও আমি সবসময় মণ্ডলীর প্রহরীদুর্গ পাঠে প্রশ্নগুলির উত্তর দিতাম।

দুঃখের সাথে বলতে হয়, বাবা তার চাকুরি হারাবেন বলে ভীত ছিলেন, তাই তিনি সাক্ষীদের সাহচর্য ত্যাগ করেন। আমার ভাইয়েরাও তাই করেছিল।

পূর্ণ-সময় পরিচর্যা

মায়ের সাথে অগ্রগামী বা পূর্ণ-সময় পরিচর্যাকারীরা ছিলেন যারা আমাদের বাড়ির পশ্চাদ্‌ভাগের উঠানে তাদের ভ্রাম্যমাণ গাড়ি রাখতেন এবং স্কুলের পর আমি তাদের সাথে পরিচর্যায় যোগ দিতাম। শীঘ্রই আমি অগ্রগামী হতে চেয়েছিলাম, কিন্তু বাবা এতে বাধা দেন এই মনে করে যে আমার আরও জাগতিক শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত। আমাকে অগ্রগামীর কাজে অনুমতি দেওয়ার জন্য, অবশেষে মা তাকে রাজি করিয়েছিলেন। তাই, ১৯৪৩ সালের জুন মাসে যখন আমার বয়স ১৪ বছর, আমি পূর্ণ-সময়ের পরিচর্যা কাজ শুরু করি। পরিবারের খরচে কিছু সাহায্য করার জন্য, আমি আংশিক সময়ের জাগতিক কাজ করতাম এবং কখনও কখনও পূর্ণ-সময়ের কাজও করতাম। তা সত্ত্বেও, আমি প্রচার কার্যে মাসিক ১৫০ ঘন্টার লক্ষ্যে পৌঁছাতাম।

কালক্রমে, আমি ডরথী ক্রেডেন নামে এক অগ্রগামী সাথী খুঁজে পাই, যিনি ১৭ বছর বয়সে, ১৯৪৩ সালের জুন মাসে অগ্রগামীর কাজ শুরু করেছিলেন। তিনি একজন ধর্মপ্রাণ ক্যাথলিক ছিলেন, কিন্তু ছয় মাস বাইবেল অধ্যয়ন করার পরই তিনি বাপ্তাইজিত হয়েছিলেন। অনেক বছর পর্যন্ত তিনি আমার এবং আমি তার উৎসাহ এবং শক্তির উৎস ছিলাম। আমরা দুজন মাংসিক বোনের চেয়েও আরও বেশি ঘনিষ্ঠ হয়েছিলাম।

আমরা ১৯৪৫ সালের শুরুতে, একত্রে অগ্রগামীর কাজ করতাম মিসৌরীর ছোট শহরগুলিতে যেখানে কোন মণ্ডলী ছিল না। বৌলিং গ্রীনে আমরা একটি সভাগৃহের ব্যবস্থা করি; মা এসেছিলেন এবং আমাদের সাহায্য করেছিলেন। তারপর আমরা প্রত্যেক সপ্তাহে সেই শহরের সমস্ত বাড়িগুলিতে যেতাম এবং জনসাধারণের বক্তৃতায় লোকেদের আমন্ত্রণ জানাতাম, যার ব্যবস্থা আমরা করতাম সেন্ট লুইস থেকে ভাইয়েদের বক্তৃতা দেওয়ার জন্য নিয়ে এসে। প্রতি সপ্তাহে আমাদের উপস্থিতির সংখ্যা থাকত ৪০ থেকে ৫০ জনের মধ্যে। পরে আমরা লুজিয়ানাতেও একই ব্যবস্থা করেছিলাম, যেখানে আমরা একটি মেসোনিক মন্দির ভাড়া করেছিলাম। হলের ভাড়া পূরণ করার জন্য আমরা দান বাক্স রাখতাম এবং প্রতি সপ্তাহে সমস্ত খরচ প্রদান করা হত।

তারপর আমরা মিসৌরীর, মেক্সিকোতে যাই যেখানে আমরা একটি দোকানের সামনের কক্ষ ভাড়া করি। আমরা সেটি সেখানকার ছোট মণ্ডলীটিকে ব্যবহার করার জন্য ব্যবস্থা করি। অট্টালিকাটির সাথে সংযুক্ত কিছু কক্ষ ছিল যেখানে আমরা বাস করতাম। আমরা মেক্সিকোতেও জনসাধারণের বক্তৃতা দানের ব্যবস্থা করার জন্য সাহায্য করি। তারপর আমরা সেই অঙ্গরাজ্যের রাজধানী, জেফারসন শহরে যাই, যেখানে আমরা প্রত্যেকটি সপ্তাহের দিনে সকালে সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে তাদের অফিসে গিয়ে সাক্ষাৎ করতাম। আমরা কিংডম হলের উপরের তলার একটি কক্ষে স্টেলা উইলির সাথে থাকতাম, যিনি আমাদের কাছে মায়ের মত ছিলেন।

সেখান থেকে আমরা তিনজন ফেস্ট্যাস্‌ এবং ক্রাইস্ট্যোল শহরে গিয়েছিলাম যে শহর দুটি একটি অপরটির নিকটবর্তী ছিল। সেখানে এক আগ্রহী পরিবারের বাড়ির পিছনে, একটি মুরগির খামার যেটিকে বাসের জন্য পরিবর্তিত করা হয়েছিল সেখানে আমরা থাকতাম। যেহেতু সেখানে কোন বাপ্তাইজিত পুরুষ ছিল না, তাই আমরাই সমস্ত সভাগুলি পরিচালনা করতাম। আংশিক সময়ের কাজ হিসাবে আমরা প্রসাধন সামগ্রী বিক্রি করতাম। আমাদের বস্তুগত সম্পদ খুব অল্প ছিল। বস্তুতপক্ষে, আমাদের জুতো সারানোর সামর্থ ছিল না, তাই প্রতিদিন সকালবেলা আমরা সেগুলির ভিতরে নতুন শক্ত কাগজ দিয়ে পরতাম এবং প্রতি রাতে প্রত্যেকে আমাদের একমাত্র পোশাকটি ধুতাম।

মিশনারীদের ওয়াচটাওয়ার বাইবেল স্কুল অফ গিলিয়েডের ১২তম ক্লাসে যোগদানের জন্য, ১৯৪৮ সালের প্রথমদিকে যখন আমার বয়স ছিল ১৯ বছর, আমি এবং ডরথী আমন্ত্রণ পাই। পাঁচ মাসের কোর্সের পর, ১৯৪৯ সালের ৬ই ফেব্রুয়ারি, একশ জন ছাত্র স্নাতক হন। সেই সময়টি ছিল খুবই সুখের সময়। আমার বাবামা ক্যালিফোর্নিয়াতে চলে গিয়েছিলেন এবং সেখানে উপস্থিত থাকার জন্য মা এত দূর থেকে এসেছিলেন।

আমাদের কার্যভারের প্রতি

ইতালিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছিল ২৮ জন স্নাতক এবং আমি ও ডরথী সহ ৬ জন স্নাতক কর্মভার পেয়েছিলাম মিলান শহরে। ইতালির জাহাজ ভালকানিয়া-তে চড়ে আমরা, ১৯৪৯ সালের ৪ঠা মার্চ নিউ ইয়র্ক ত্যাগ করি। যাত্রা করতে ১১ দিন সময় লেগেছিল এবং উত্তাল সমুদ্র আমাদের অধিকাংশকেই অসুস্থ করে ফেলেছিল। ভাই বেনান্টি আমাদের সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য এবং ট্রেনে করে মিলানে নিয়ে যাবার জন্য জেনোয়ার সমুদ্র বন্দরে এসেছিলেন।

যখন আমরা মিলানের মিশনারী গৃহে এসে পৌঁছেছিলাম, আমরা দেখি যে ইতালির একটি ছোট মেয়ে আমাদের প্রত্যেকের ঘরে ফুল সাজিয়ে রেখেছে। কিছু বছর পর মরিয়ো মিরোফিনো নামক এই মেয়েটি গিলিয়েডে যোগ দিয়ে ইতালিতে ফিরে এসেছিল এবং আমি ও সে একত্রে একটি মিশনারী গৃহে একসাথে সেবা করতাম!

মিলানে পৌঁছানোর পরের দিন সকালে আমরা স্নানঘরের জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকাই। আমাদের গৃহের পিছনের রাস্তায় অনেক কক্ষসম্বলিত একটি বড় অট্টালিকা দেখতে পাই। একজন মার্কিন বোমানিক্ষেপকারী দুর্ঘটনাক্রমে সেখানে একটি বোমা ফেলে, যার ফলে সেখানে বসবাসকারী ৮০টি পরিবার নিহত হয়। আর একবার, একটি কারখানা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয় এবং সেই বোমাটি একটি স্কুলে এসে আঘাত করে এবং ৫০০ জন ছেলেমেয়ে নিহত হয়। তাই সেখানকার লোকেরা আমেরিকাবাসীদের প্রতি খুব একটা সন্তুষ্ট ছিলেন না।

লোকেরা যুদ্ধের কারণে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। অনেকে বলেছিল যে যদি আরেকটি যুদ্ধ শুরু হয়, তাহলে তারা বোমা-প্রতিরোধী আশ্রয়ে না গিয়ে বরঞ্চ, নিজেদের ঘরে থাকবে এবং গ্যাস ছেড়ে সেখানেই মৃত্যুবরণ করবে। আমরা তাদের আশ্বস্ত করেছিলাম যে আমরা সেখানে যুক্তরাষ্ট্র বা অন্য কোন মনুষ্য-নির্মিত সরকারের প্রতিনিধি হিসাবে আসিনি বরঞ্চ, ঈশ্বরের রাজ্য যা সমস্ত যুদ্ধ এবং দুঃখ-কষ্টের পরিসমাপ্তি আনবে তা জানাতে এসেছি।

সেই বিরাট শহর মিলানে প্রায় ২০ জন সদস্যের একমাত্র মণ্ডলী মিশনারী গৃহে সমবেত হত। প্রচার কাজের জন্য তখনও পর্যন্ত কোন এলাকা নির্ধারণ করা হয়নি, তাই আমরা একটি বড় অট্টালিকায় সাক্ষ্য দেওয়া শুরু করি। প্রথম দ্বারেই আমরা মিঃ জনডিনাটির সাক্ষাৎ পাই যিনি চাইছিলেন তার স্ত্রী যেন গির্জা ত্যাগ করেন, ফলে তিনি আমাদের একটি প্রকাশনা গ্রহণ করেন। মিসেস জনডিনাটি ছিলেন একজন আন্তরিক মহিলা, যার অনেক প্রশ্ন ছিল। তিনি বলেন, “আপনারা যখন ইতালিয় ভাষা শিখবেন, আমি আনন্দিত হব কারণ তাহলে আপনারা আমাকে বাইবেল শেখাতে পারবেন।”

তাদের গৃহের ছাদ উঁচু ছিল এবং আলো ছিল ক্ষীণ, তাই রাতের বেলায় বাইবেল পড়ার সময় আলোর কাছাকাছি আসার জন্য তিনি তার চেয়ারটি টেবিলের উপর উঠিয়ে পড়তেন। তিনি জিজ্ঞাসা করেন, “আমি যদি আপনাদের সাথে বাইবেল অধ্যয়ন করি, তাহলে কি আমি এখনও গির্জায় যেতে থাকব?” আমরা তাকে বলেছিলাম সেটি সম্পূর্ণ তার নিজস্ব সিদ্ধান্ত। তিনি রবিবার সকালে গির্জায় যেতেন এবং বিকেলে আমাদের সভাগুলিতে আসতেন। তারপর একদিন তিনি বলেন, “আমি আর কখনও গির্জায় যাব না।”

“কেন?” আমরা জিজ্ঞাসা করি।

“কারণ তারা বাইবেল থেকে শিক্ষা দেয় না এবং আমি আপনাদের সাথে বাইবেল অধ্যয়ন করে সত্য খুঁজে পেয়েছি।” তিনি বাপ্তাইজিত হয়েছিলেন এবং অনেক মহিলাদের সাথে অধ্যয়ন করেছিলেন যারা প্রতিদিন গির্জায় যেত। পরে তিনি আমাদের বলেছিলেন যে আমরা যদি তাকে গির্জায় যেতে মানা করতাম, তাহলে তিনি অধ্যয়ন বন্ধ করে দিতেন এবং সম্ভবত কখনই সত্য শিখতে পারতেন না।

নতুন কার্যভারগুলি

কিছু সময় পর ডরথী ও আমি এবং তার সাথে অন্যান্য আরও চারজন মিশনারীকে ইতালির শহর ট্রিয়েষ্টেতে কার্যভার দেওয়া হয়, যেটি তখন ব্রিটিশ এবং আমেরিকার সৈন্যবাহিনী দ্বারা অধিকৃত ছিল। সেখানে মাত্র দশ জন সাক্ষী ছিলেন, কিন্তু এই সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছিল। আমরা ট্রিয়েষ্টেতে তিন বছর প্রচার করেছিলাম এবং যখন আমরা সেখান থেকে চলে আসি সেখানে ৪০ জন রাজ্যের প্রকাশক ছিল যাদের মধ্যে দশ জন ছিল অগ্রগামী।

আমাদের পরবর্তী কার্যভার ছিল ভেরোনা শহরে, যেখানে কোন মণ্ডলী ছিল না। কিন্তু যখন গির্জা জাগতিক কর্তৃপক্ষকে চাপ প্রয়োগ করে, আমাদের জোরপূর্বক সেই স্থান ত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছিল। ডরথী এবং আমি রোমে কার্যভারপ্রাপ্ত হই। সেখানে আমরা আসবাবপত্রে সজ্জিত একটি ঘর ভাড়া নিই এবং ভ্যাটিকানের নিকটবর্তী এলাকাতে কাজ করি। যখন আমরা সেখানে ছিলাম, ডরথী জন চিমিক্লিস্‌কে বিয়ে করার জন্য লেবাননে যায়। আমরা প্রায় ১২ বছর একসাথে ছিলাম এবং সত্যিই আমি তার অনুপস্থিতি অনুভব করতাম।

রোমের অন্য অংশে নিউ এপিয়ান ওয়ে নামক এক জায়গায়, ১৯৫৫ সালে একটি নতুন মিশনারী গৃহ খোলা হয়। সেই গৃহের চারজনের মধ্যে একজন ছিল মরিয়ো মিরোফিনো, সেই মেয়েটি যে, আমরা যে রাতে মিলানে পৌঁছেছিলাম আমাদের ঘরে ফুল সাজিয়েছিল। শহরের এই এলাকাতে একটি নতুন মণ্ডলী গঠন করা হয়েছিল। সেই গ্রীষ্মে রোমে আন্তর্জাতিক সম্মেলন শেষ হবার পর আমার জার্মানীর নোরেবার্গের সম্মেলনে যোগ দেবার সুযোগ হয়েছিল। তাদের সাথে সাক্ষাৎ করা কতই না রোমাঞ্চকর ছিল যারা হিটলারের শাসনের অধীনে অনেক অত্যাচার সহ্য করেছিল!

যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসা

স্বাস্থ্যজনিত সমস্যার কারণে আমি, ১৯৫৬ সালে অসুস্থতাজনিত ছুটিতে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসি। কিন্তু আমি কখনও বর্তমানে ও তাঁর নতুন জগতে অন্তহীনভাবে যিহোবাকে সেবা করার পুরস্কার থেকে আমার দৃষ্টি সরিয়ে নিইনি। আমি আবার ইতালিতে ফিরে যাবার পরিকল্পনা করি। যাইহোক, আমার সাথে অর্‌ভেল মাইকেলের সাক্ষাৎ হয় যিনি যিহোবার সাক্ষীদের নিউ ইয়র্ক, ব্রুকলিনের প্রধান কার্যালয়ে সেবা করছিলেন। নিউ ইয়র্ক শহরে ১৯৫৮ সালের আন্তর্জাতিক সম্মেলন শেষ হবার পর আমরা বিবাহ করি।

এর অল্প কিছুদিন পর, আমরা ভারজিনিয়ার রয়েল ফ্রন্টে যাই যেখানে আমরা একটি ছোট মণ্ডলীতে সেবা করা উপভোগ করি। কিংডম হলের পিছনে একটি ছোট গৃহে আমরা থাকতাম। অবশেষে, ১৯৬০ সালে আমাদের বিল পরিশোধ করার জন্য জাগতিক চাকুরি খুঁজতে ব্রুকলিনে ফিরে আসা প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে। রাতের বেলা আমরা বিভিন্ন ব্যাংকে কাজ করতাম, যাতে আমরা পূর্ণ-সময় পরিচর্যা কাজে লেগে থাকতে পারি।

যখন আমরা ব্রুকলিনে ছিলাম, আমার বাবা মারা যান এবং আমার শাশুড়ীর হালকা ধরনের স্ট্রোক হয়। সুতরাং, আমরা আমাদের মায়েদের নিকটে অরেগনে ফিরে যেতে সিদ্ধান্ত নিই। আমরা দুজনেই আংশিক সময়ের চাকুরি খুঁজে নিই এবং সেখানে আমাদের অগ্রগামীর পরিচর্যা চালিয়ে যেতে থাকি। আমরা এবং আমাদের মায়েরা ১৯৬৪ সালের শেষের দিকে ওয়াচ টাওয়ার সমিতির বার্ষিক সভাতে যোগদানের জন্য পেনসিলভেনিয়ার পিট্‌সবার্গে যাই।

হোড্‌ দ্বীপ পরিদর্শনের সময় আমরা একজন সীমা অধ্যক্ষ অরলেন মিয়ার এবং তার স্ত্রীর দ্বারা সেই অঙ্গরাজ্যের রাজধানী, প্রভিডেন্সে যাবার জন্য উৎসাহিত হই, যেখানে রাজ্যের প্রকাশকদের অনেক বেশি প্রয়োজন ছিল। আমাদের মায়েরা আমাদের এই নতুন কার্যভার গ্রহণের জন্য উৎসাহিত করেন, তাই আমরা অরেগনে ফিরে আমাদের পরিবারের অধিকাংশ দ্রব্যাদি বিক্রি করি এবং সেখানে চলে যাই।

পুনরায় গিলিয়েড স্কুলে

ইয়াংকী স্টেডিয়ামের সম্মেলনে আমরা যোগদান করি ১৯৬৫ সালের গ্রীষ্মের সময়ে। সেখানে আমরা বিবাহিত দম্পতি হিসাবে গিলিয়েড স্কুলের জন্য আবেদন করি। প্রায় এক মাস পর আমরা আবেদনপত্র পেয়ে চমৎকৃত হই যেটি ৩০ দিনের মধ্যে ফেরত পাঠাতে হবে। যেহেতু মায়ের স্বাস্থ্য ভাল ছিল না, তাই আমি একটি দূর দেশে যেতে উদ্বিগ্ন ছিলাম। কিন্তু তিনি আমাকে উৎসাহিত করেন: “ঐ আবেদনপত্রগুলি ভর্তি কর। তোমরা জান যে যিহোবার কাছ থেকে আগত পরিচর্যার যে কোন সুযোগ তোমাদের সর্বদা গ্রহণ করা উচিত!”

ওই বিষয়টি এটি নিশ্চিত করেছিল। আমরা আবেদনপত্র ভর্তি করি এবং সেগুলিকে পাঠিয়ে দিই। কত বিস্ময়করই না ছিল ৪২তম ক্লাসে যোগদানের আমন্ত্রণ গ্রহণ করা, যেটি ১৯৬৬ সালের ২৫শে এপ্রিল শুরু হয়েছিল! গিলিয়েড স্কুল তখন নিউ ইয়র্ক, ব্রুকলিনে অবস্থিত ছিল। পাঁচ মাসের চেয়েও কম সময় পর, ১৯৬৬ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর আমরা ১০৬ জন স্নাতক হয়েছিলাম।

আর্জেন্টিনায় কর্মভারপ্রাপ্ত হওয়া

স্নাতক হবার দুই দিন পর আমরা পেরুভিয়ার বিমানে আর্জেন্টিনার পথে ছিলাম। যখন আমরা বুয়েনস এয়ার্সে পৌঁছাই তখন শাখা অধ্যক্ষ, চার্লস আইসেনহাওয়ার আমাদের সাথে বিমানবন্দরে সাক্ষাৎ করেন। তিনি আমাদের কাস্টম্‌সে সহযোগিতা করেন এবং তারপর শাখায় নিয়ে যান। সমস্ত জিনিসপত্র খোলা এবং গোছানোর জন্য আমাদের একদিন সময় ছিল; তারপর আমাদের স্প্যানিশ ক্লাস শুরু হয়। প্রথম মাসে আমরা প্রতিদিন এগার ঘন্টা করে স্প্যানিশ ভাষা অধ্যয়ন করতাম। দ্বিতীয় মাসে আমরা প্রতিদিন চার ঘন্টা করে ভাষা অধ্যয়ন এবং ক্ষেত্রের পরিচর্যায় অংশ গ্রহণ করা শুরু করি।

পাঁচ মাস আমরা বুয়েনস এয়ার্সে ছিলাম এবং তারপর আমরা উত্তরের একটি বড় শহর রোজারিওতে, যেখানে ট্রেনে যেতে চার ঘন্টা লাগে সেখানে কার্যভারপ্রাপ্ত হই। সেখানে ১৫ মাস সেবা করার পর আমাদের আরও উত্তরে উষ্ণ মরুভূমি অঞ্চলের একটি শহর, সান্টিয়াগো ডেল ইষ্টেরোতে পাঠানো হয়। আমরা যখন সেখানে ছিলাম, ১৯৭৩ সালের জানুয়ারি মাসে আমার মা মারা যান। আমি চার বছর ধরে তাকে দেখিনি। যা আমাকে আমার শোক সহ্য করতে সাহায্য করেছিল তা হচ্ছে পুনরুত্থানের নিশ্চিত আশা এবং সেই সাথে এই বিষয়টি জানা যে আমি সেখানেই পরিচর্যা করছিলাম যা আমার মা চেয়েছিলেন।—যোহন ৫:২৮, ২৯; প্রেরিত ২৪:১৫.

সান্টিয়াগো ডেল ইষ্টেরোর লোকেরা বন্ধুত্বপূর্ণ ছিল এবং বাইবেল অধ্যয়ন শুরু করা সহজ ছিল। ১৯৬৮ সালে যখন আমরা এসেছিলাম, তখন প্রায় ২০ বা ৩০ জন সভাগুলিতে উপস্থিত থাকত, কিন্তু আট বছর পর আমাদের মণ্ডলীতে একশরও বেশি সদস্য ছিল। এছাড়াও, নিকটবর্তী শহরগুলিতে ২৫ থেকে ৫০ জন প্রকাশক সম্বলিত আরও দুটি নতুন মণ্ডলী ছিল।

পুনরায় যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যাবর্তন

স্বাস্থ্যজনিত সমস্যার কারণে, ১৯৭৬ সালে আমরা বিশেষ অগ্রগামী হিসাবে পুনরায় যুক্তরাষ্ট্রের—উত্তর ক্যারোলিনার ফ্যাটিভাইলে কার্যভারপ্রাপ্ত হই। মধ্য এবং দক্ষিণ আমেরিকা, ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্র, পুয়ের্টোরিকো এবং এমনকি স্পেন থেকে আসা অনেক স্প্যানিশ ভাষাভাষী লোকেরা সেখানে ছিল। আমাদের অনেক বাইবেল অধ্যয়ন ছিল এবং খুব শীঘ্রই একটি স্প্যানিশ মণ্ডলী শুরু হয়। আমরা প্রায় আট বছর সেই কার্যভারে নিযুক্ত ছিলাম।

কিন্তু আমাদের, আমার শাশুড়ী যিনি খুব বয়স্ক এবং কিছুটা অক্ষম ছিলেন তার কাছাকাছি থাকার প্রয়োজন ছিল। তিনি অরেগনের পোর্টল্যান্ডে থাকতেন, তাই আমরা ওয়াশিংটনের ভেনকৌভারের একটি স্প্যানিশ মণ্ডলীতে আমাদের নতুন কার্যভার গ্রহণ করলাম যেটি পোর্টল্যান্ড থেকে বেশি দূরে ছিল না। ১৯৮৩ সালের ডিসেম্বর মাসে যখন আমরা পৌঁছেছিলাম তখন মণ্ডলীটি ছোট ছিল, কিন্তু এখন আমরা অনেক নতুন ব্যক্তিদের দেখতে পাচ্ছি।

আমি আমার পূর্ণ-সময় পরিচর্যার ৫৩ বছর পূর্ণ করেছি ১৯৯৬ সালের জুন মাসে এবং আমার স্বামী তার ৫৫ বছরের পরিচর্যা সম্পন্ন করেছেন ১৯৯৬ সালের ১লা জানুয়ারিতে। বিগত এই অনেক বছরগুলিতে শত শত ব্যক্তিদের ঈশ্বরের বাক্যের সত্যের জ্ঞান সম্বন্ধে জানাতে এবং তাদের জীবনকে যিহোবার কাছে উৎসর্গীকৃত করতে সাহায্য করার জন্য আমার সুযোগ হয়েছিল। এদের মধ্যে অনেকেই এখন প্রাচীন এবং পূর্ণ-সময় পরিচারক হিসাবে সেবা করছেন।

মাঝে মাঝে আমাকে জিজ্ঞাসা করা হয় সন্তান না থাকার অভাব আমি অনুভব করি কি না। প্রকৃতপক্ষে, যিহোবা আমাকে অনেক আধ্যাত্মিক সন্তান এবং নাতিনাতনীদের দিয়ে আশীর্বাদ করেছেন। হ্যাঁ, আমার জীবন যিহোবার সেবায় সমৃদ্ধ এবং পরিপূর্ণ হয়েছে। আমি যিপ্তহের কন্যার কথা বর্ণনা করতে পারি যে, তার জীবন মন্দিরের কাজে ব্যয় করেছিল এবং সেবার মহান সুযোগের কারণে তার কখনও সন্তান ছিল না।—বিচারকর্ত্তৃগণ ১১:৩৮-৪০.

আমার এখনও যিহোবার কাছে উৎসর্গীকরণের বিষয়টি মনে আছে যখন আমি কেবলমাত্র একটি ছোট মেয়ে ছিলাম। আমার মনে পরমদেশের সেই ছবি এখনও ঠিক তেমনই জীবন্ত আছে যেমন সেটি তখন ছিল। আমার দৃষ্টি এবং হৃদয় এখনও ঈশ্বরের নতুন জগতে অন্তহীন জীবনের পুরস্কারের প্রতি নিবদ্ধ। হ্যাঁ, আমার যিহোবাকে সেবা করার আকাঙ্ক্ষা শুধুমাত্র ৫০ বছরের জন্য নয়, কিন্তু অনন্তকালীন—তাঁর রাজ্যের শাসনের অধীনে।

[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

আমার কাঁধে হাত রেখে ডরথী ক্রেডেন এবং সহঅগ্রগামীরা, ১৯৪৩ সালে

[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

ইটালীর রোমে, সহমিশনারীদের সাথে, ১৯৫৩ সালে

[২৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

আমার স্বামীর সাথে

    বাংলা প্রকাশনা (১৯৮৯-২০২৬)
    লগ আউট
    লগ ইন
    • বাংলা
    • শেয়ার
    • পছন্দসমূহ
    • Copyright © 2025 Watch Tower Bible and Tract Society of Pennsylvania
    • ব্যবহারের শর্ত
    • গোপনীয়তার নীতি
    • গোপনীয়তার সেটিং
    • JW.ORG
    • লগ ইন
    শেয়ার