মাইকেল ফ্যারাডে এক বৈজ্ঞানিক এবং বিশ্বাসের ব্যক্তি
“তড়িৎবিদ্যার জনক।” “সর্বকালের সর্বমহান গবেষণামূলক বিজ্ঞানী।” এগুলি হচ্ছে মাইকেল ফ্যারাডে সম্বন্ধে দুটি বর্ণনা, যিনি ১৭৯১ সালে ইংল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন এবং যার তড়িৎ-চুম্বকীয় আবেশ তত্ত্বের আবিষ্কার বৈদ্যুতিক মোটর এবং শক্তি উৎপাদনের সম্প্রসারণকে অগ্রসর করেছে।
ফ্যারাডে, লন্ডনের রয়াল ইন্স্টিটিউশনে একাগ্রভাবে রসায়ন এবং পদার্থবিদ্যার উপর বিস্তারিতভাবে বক্তৃতা দিয়েছিলেন। বিজ্ঞানকে জনপ্রিয় করে তোলার জন্য তার বক্তৃতাগুলি যুবক ব্যক্তিদের বিজ্ঞানের জটিল ধারণাগুলিকে আত্মস্থ করতে সাহায্য করেছিল। তিনি অসংখ্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রশংসা লাভ করেছিলেন। তথাপি তিনি আত্ম প্রচার করা এড়িয়ে চলতেন। তিনি অত্যন্ত ধার্মিক ব্যক্তি ছিলেন, যিনি তার তিন কক্ষবিশিষ্ট গৃহের নিরিবিলিতে এবং তার পরিবার ও সহবিশ্বাসীদের সাহচর্যে সবচেয়ে সুখী ব্যক্তি ছিলেন। তিনি যা বর্ণনা করেছেন সেই অনুসারে, ফ্যারাডে “স্যান্ডেম্যানীয় . . . নামে পরিচিত খ্রীষ্টানদের একটি খুব ছোট এবং উপেক্ষিত সম্প্রদায়ের” সদস্য ছিলেন। তারা কারা ছিলেন? তারা কি বিশ্বাস করতেন? আর এটি কিভাবে ফ্যারাডেকে প্রভাবিত করেছিল?
স্যান্ডেম্যানীয়রা
মাইকেল ফ্যারাডে: স্যান্ডেম্যানীয় এবং বিজ্ঞানী নামক বইয়ের লেখক জেফ্রি ক্যান্টার উল্লেখ করেন, “ফ্যারাডে পরিবার এবং স্যান্ডেম্যানীয় গির্জার সাথে প্রাথমিক যোগাযোগ মাইকেল ফ্যারাডের ঠাকুরদাদা থেকেই সমর্থিত হয়ে আসছিল।” তারা ভ্রমণশীল গির্জাবিরোধী সম্প্রদায়ের এক পরিচারকের অনুগামীদের সাথে মেলামেশা করতেন যার সঙ্গীরা স্যান্ডেম্যানীয় বিশ্বাস সম্বন্ধে প্রচার করেছিল।
রবার্ট স্যানডেম্যান (১৭১৮-৭১) ইডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র ছিলেন যিনি গণিত, গ্রীক এবং অন্যান্য ভাষা অধ্যয়ন করতেন, এমন সময় একদিন তিনি প্রাক্তন প্রেস্বিটারিয়ানের পরিচারক জন গ্লাসের প্রচার শোনেন। তিনি যা শুনেছিলেন তা বিশ্ববিদ্যালয় ত্যাগ করে তার শহর পার্থে প্রত্যাবর্তন করার এবং গ্লাস ও তার সঙ্গীদের সাথে যোগ দেওয়ার কারণ হয়ে উঠেছিল।
জন গ্লাস ১৭২০-র দশকে, চার্চ অফ্ স্কটল্যান্ডের কিছু শিক্ষা সম্বন্ধে সন্দেহ পোষণ করতে শুরু করেন। ঈশ্বরের বাক্যের অধ্যয়ন, তাকে এই সিদ্ধান্তে আসতে পরিচালিত করেছিল যে বাইবেলের ইস্রায়েল জাতি, একটি আত্মিক জাতিকে প্রতিনিধিত্ব করে যার নাগরিকেরা বিভিন্ন জাতি থেকে এসেছিল। কোথাও প্রত্যেক জাতির জন্য পৃথক একটি করে গির্জা থাকার যুক্তি তিনি খুঁজে পাননি।
স্কটল্যান্ডের, ডান্ডির বাইরে টেইলিং-এ তার গির্জার শিক্ষায় সন্তুষ্ট না হয়ে গ্লাস, চার্চ অফ স্কটল্যান্ড থেকে সরে আসেন এবং তার নিজের সভাগুলি সংগঠিত করেন। প্রায় ১০০ জন লোক তার সাথে যোগ দিত এবং শুরু থেকেই তারা তাদের অবস্থানে একতা বজায় রাখার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। তারা তাদের প্রতি হয়ত ঘটতে পারে এমন যে কোন ধরনের ভিন্নতা নিষ্পত্তির জন্য মথি ১৮ অধ্যায় ১৫ থেকে ১৭ পদে লিপিবদ্ধ খ্রীষ্টের নির্দেশগুলি অনুসরণ করার সিদ্ধান্ত নেন। এরপর তারা সাপ্তাহিক সভাগুলির আয়োজন করেন যেখানে অনুরূপ বিশ্বাসের ব্যক্তিরা প্রার্থনা এবং অনুপ্রেরণার জন্য সমবেত হত।
যখন বিভিন্ন দল থেকে, এক সন্তোষজনক সংখ্যক ব্যক্তিরা নিয়মিতভাবে সভাতে যোগ দিতে আরম্ভ করে তখন তাদের উপাসনাকে তত্ত্বাবধান করার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। কিন্তু কারা যোগ্য ছিলেন? জন গ্লাস এবং তার সহযোগীরা এই বিষয়ে প্রেরিত পৌল যা লিখেছিলেন তার উপর বিশেষ মনোযোগ প্রদান করেন। (১ তীমথিয় ৩:১-৭; তীত ১:৫-৯) তারা লক্ষ্য করেন যে কোথাও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা বা ইব্রীয় এবং গ্রীক বোঝার প্রয়োজনীতার কথা উল্লেখ নেই। তাই শাস্ত্রীয় পরিলেখের উপর প্রার্থনাপূর্বক চিন্তা করার পর তারা যোগ্য পুরুষদের প্রাচীন হিসাবে মনোনীত করেন। যারা চার্চ অফ স্কটল্যান্ডের বিশ্বস্ত অনুগামী ছিলেন তারা এটিকে “প্রায় ঈশ্বরনিন্দা” হিসাবে মনে করেছিলেন কারণ অশিক্ষিত ব্যক্তিরা “সুঁচ হয়ে ঢুকে ফাল হয়ে বেরোনোর মত” বাইবেল বোঝে বলে ও এর সংবাদ প্রচার করার জন্য দাবি করে। যখন ১৭৩৩ খ্রীষ্টাব্দে, গ্লাস এবং তার সহবিশ্বাসীরা পার্থ শহরে তাদের নিজস্ব সভা গৃহ নির্মাণ করেন তখন তাদেরকে সেই শহর থেকে বিতাড়িত করার জন্য, স্থানীয় পাদ্রিরা ম্যাজিস্ট্রেটদের উপর চাপ প্রয়োগ করার পদক্ষেপ নেয়। কিন্তু তারা ব্যর্থ হয় এবং আন্দোলন বৃদ্ধি পায়।
রবার্ট স্যানডেম্যান গ্লাসের বড় মেয়েকে বিবাহ করেন এবং ২৬ বছর বয়সে তিনি গ্লাসিটদের পার্থ মণ্ডলীর প্রাচীন নিযুক্ত হন। প্রাচীন হিসাবে তার উপর এত বেশি দায়িত্ব ছিল যে তিনি তার সমস্ত সময় পালকের কাজে নিয়োজিত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। পরবর্তীকালে, তার স্ত্রীর মৃত্যুর পর, একটি আত্মজীবনীমূলক খসড়া উল্লেখ করে, রবার্ট “আনন্দের সাথে প্রভুকে সেবা করার জন্য যে কোন ধরনের কাজ করতেই সম্মত ছিলেন।”
স্যানডেম্যানীয়বাদ বিস্তার লাভ করে
স্যান্ডেম্যান উদ্যোগের সাথে স্কটল্যান্ড থেকে ইংল্যান্ড পর্যন্ত তার কাজকে সম্প্রসারিত করেন, যেখানে নতুন সহবিশ্বাসীদের দল বৃদ্ধি পায়। সেই সময়ে, ইংরেজ ক্যালভিনবাদীদের মধ্যে মতান্তর বিদ্যমান ছিল। তাদের মধ্যে কেউ কেউ বিশ্বাস করত যে তারা পরিত্রাণের জন্য পূর্বেই নিরূপিত ছিল। অপর দিকে, স্যানডেম্যান তাদের পক্ষ অবলম্বন করেন যারা সেই ধারণা পোষণ করত যে বিশ্বাস হচ্ছে একটি আবশ্যকীয় শর্ত। এই মতকে সমর্থন করে তিনি একটি পুস্তক প্রকাশ করেন যা চারবার পুনর্মুদ্রণ করা হয় এবং যেটির দুইটি যুক্তরাষ্ট্রীয় সংস্করণও প্রকাশিত হয়। জিওফ্রে ক্যান্টোরের মতানুসারে, এই খণ্ডটির প্রকাশনা ছিল “একমাত্র সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা যা স্কটল্যান্ডে এর সীমাবদ্ধ আরম্ভ সত্ত্বেও [স্যানডেম্যানীয়] সম্প্রদায়টিকে আরও বিস্তৃত করে তুলেছিল।”
অন্যান্য গ্লাসিট প্রাচীনদের সাথে স্যানডেম্যান, ১৭৬৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ করেন, যে পরিদর্শনটি আরও বেশি মতান্তর এবং বিরোধিতা নিয়ে এসেছিল। তৎসত্ত্বেও এটি, কানেকটিকাটের ডেনবারিতে সমমনোভাবাপন্ন খ্রীষ্টানদের একটি দল প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ফলস্বরূপ হয়।a সেখানে ১৭৭১ সালে স্যানডেম্যান মারা যান।
ফ্যারাডের ধর্মীয় বিশ্বাসগুলি
যুবক মাইকেল তার পিতামাতার কাছ থেকে স্যানডেম্যানীয় শিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন। তিনি জেনেছিলেন যে স্যানডেম্যানীয়রা, তাদের কাছ থেকে নিজেদেরকে পৃথক রাখতেন যারা বাইবেলের শিক্ষাকে অনুশীলন করত না। উদাহরণস্বরূপ, তারা তাদের বিবাহ অনুষ্ঠানকে আইনতঃ প্রয়োজনীয়তার মধ্যে সীমাবদ্ধ করা বেছে নেওয়ার দ্বারা, অ্যাংলিকান বিবাহ অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া প্রত্যাখ্যান করেন।
সরকারের প্রতি বশ্যতা স্বীকার করেও, রাজনীতিতে নিরপেক্ষতা বজায় রাখা ছিল স্যানডেম্যানীয়দের বৈশিষ্ট্য। সমাজের সম্মানিত সদস্য হয়েও তারা কদাচিৎ সামাজিক পদ গ্রহণ করতেন। কিন্তু কয়েকটি ক্ষেত্রে যেখানে তারা তা গ্রহণ করেছিলেন, সেখানে তারা দলীয় রাজনীতিকে এড়িয়ে চলেছিলেন। এই দৃঢ় অবিচলতা তাদের উপর নিন্দা নিয়ে এসেছিল। (তুলনা করুন যোহন ১৭:১৪.) স্যানডেম্যানীয়রা বিশ্বাস করতেন যে সরকার হিসাবে ঈশ্বরের স্বর্গীয় রাজ্যই হচ্ছে সিদ্ধ ব্যবস্থা। ক্যান্টোর উল্লেখ করেন, তারা রাজনীতিকে “নৈতিকতা বিবর্জিত একটি তুচ্ছ, অশ্লীল কার্যপ্রণালী,” হিসাবে গণ্য করতেন।
যদিও অন্যদের থেকে পৃথক ছিলেন, তবুও তারা কখনও ফরীশীদের মনোভাব পোষণ করতেন না। তারা ঘোষণা করেছিলেন: “প্রাচীন ফরীশীদের মনোভাব এবং অভ্যাসকে পরিহার করা আমরা সম্পূর্ণভাবে প্রয়োজনীয় বলে বিবেচনা করি, তাহলে আমরা শাস্ত্র, পাপ অথবা নৈতিক বাধ্যবাধকতা হিসাবে যা নির্দেশ করে তার চেয়ে অধিক নির্দেশ করা এবং মানুষের পরম্পরাগত বিধি অথবা কৌশলে পরিহার করার যুক্তি দ্বারা ঐশিক আজ্ঞাকে ব্যর্থ করা এড়াতে পারব।”
যদি তাদের সদস্যদের মধ্যে কেউ মাতাল, প্রতারক, ব্যভিচারী অথবা অন্য কোন গুরুতর পাপ অভ্যাস করত তাহলে সে ক্ষেত্রে তারা সমাজচ্যুত করার শাস্ত্রীয় প্রথাকে অবলম্বন করেছিলেন। যদি সেই পাপী প্রকৃতই অনুতপ্ত হত তাহলে তারা তাকে পুনরায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করতেন। অন্যথা, তারা “সেই দুষ্টকে বাহির করিয়া দেও,” এই শাস্ত্রীয় আদেশটিকে অনুসরণ করতেন।—১ করিন্থীয় ৫:৫, ১১, ১৩.
স্যানডেম্যানীয়রা রক্ত থেকে পৃথক থাকার বিষয়ে বাইবেলের আদেশের প্রতি বাধ্য ছিলেন। (প্রেরিত ১৫:২৯) জন গ্লাস যুক্তি দেখান যে, প্রথম মানুষদের সদসদ্-জ্ঞানদায়ক বৃক্ষের ফল খাওয়া নিষিদ্ধ করতে ঈশ্বর যেমন আদেশ দিয়েছিলেন, ঠিক তেমনি খ্রীষ্টানেরা রক্তের বাধ্যবাধকতার ব্যাপারে ঈশ্বরের বশ্যতা স্বীকার করতে বাধ্য। (আদিপুস্তক ২:১৬, ১৭) রক্ত সম্বন্ধীয় ঈশ্বরের আদেশ অমান্য করার অর্থ খ্রীষ্টের রক্তের যথার্থ ব্যবহার অর্থাৎ পাপের প্রায়শ্চিত্তকে প্রত্যাখ্যান করারই সমরূপ। গ্লাস উপসংহার করেন এই বলে: “রক্ত ভোজন করার এই নিষিদ্ধতা সর্বসময়ের জন্য ছিল এবং এখনও এই আদেশের সর্বমহান এবং সর্বোচ্চ গুরুত্ব রয়েছে।”
স্যানডেম্যানীয়দের শাস্ত্রের উপর যুক্তি, তাদেরকে অনেক লুক্কায়িত ফাঁদ এড়াতে সাহায্য করেছিল। উদাহরণস্বরূপ, আমোদপ্রমোদের ক্ষেত্রে তারা খ্রীষ্টের শিক্ষাকে নির্দেশনা হিসাবে দেখতেন। তারা বলেছিলেন, “যেখানে খ্রীষ্ট কোন আইন তৈরি করেননি সেখানে আমরা আইন তৈরি করার মত ধৃষ্টতা দেখাই না অথবা যা তিনি দিয়েছেন তার কোনটিই অগ্রাহ্য করি না। সুতরাং যেহেতু, আমরা কোথাও খুঁজে পাই না যে সাধারণ্যে অথবা ব্যক্তিগতভাবে আমোদপ্রমোদ নিষিদ্ধ; ফলে আমরা যে কোন আমোদপ্রমোদকে ন্যায্য বলে গণ্য করি যতক্ষণ পর্যন্ত না তা প্রকৃতই পাপপূর্ণ পরিস্থিতির সাথে সংযুক্ত থাকে।”
যদিও স্যানডেম্যানীয়রা যথার্থভাবে শাস্ত্রের উপর ভিত্তি করা অনেক ধারণাকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করেছিলেন, তবুও তারা সত্য খ্রীষ্টানদেরকে চিহ্নিত করার প্রধান কার্যক্রম অর্থাৎ প্রত্যেককে যে অপরের কাছে রাজ্য সম্বন্ধীয় সুসমাচার প্রচার করা উচিত তার গুরুত্বকে বুঝতে পারেননি। (মথি ২৪:১৪) তথাপি, তাদের সভাগুলি সকলের জন্য উন্মুক্ত ছিল এবং তারা সকলকে যারা তাদের প্রত্যাশার কারণ সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করত তাদের উত্তর দিতে প্রচেষ্টা করতেন।—১ পিতর ৩:১৫.
কিভাবে বিশ্বাসের এই ধারা বিজ্ঞানী মাইকেল ফ্যারাডেকে প্রভাবিত করেছিল?
স্যানডেম্যানীয় ফ্যারাডে
তার উল্লেখযোগ্য আবিষ্কারের জন্য যদিও তিনি সম্মানিত, স্মরণীয় এবং শ্রদ্ধার যোগ্য ছিলেন, তবুও মাইকেল ফ্যারাডে এক সাধারণ জীবন যাপন করতেন। যখন বিখ্যাত ব্যক্তিরা মারা যেতেন এবং যে সমস্ত জনসাধারণের উপস্থিতি তাদের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় প্রত্যাশা করা হত সেখানে, ফ্যারাডে ছিলেন একজন উল্লেখযোগ্য অনুপস্থিত ব্যক্তি, যাকে তার বিবেক সেখানে উপস্থিত হতে এবং চার্চ অফ ইংল্যান্ডের উপাসনার সাথে জড়িত হওয়াকে অনুমোদন করত না।
একজন বিজ্ঞানী হিসাবে ফ্যারাডে সেটির প্রতিই দৃঢ়ভাবে লেগে থাকতেন যা তিনি সত্য বলে প্রদর্শন করতে পারতেন। তাই তিনি পণ্ডিত ব্যক্তিদের, যারা নিজেদের অনুমান এবং যুক্তিকে প্রাধান্য দিতেন, ঘনিষ্ঠ সাহচর্য এড়িয়ে চলতেন। যেমন তিনি একদিন এক শ্রোতাকে বলেছিলেন, ‘একটি মৌলিক তথ্য কখনও আমাদের ব্যর্থ করে না, এর প্রমাণ সর্বদা সত্য।’ তিনি বিজ্ঞানকে ‘সতর্কভাবে পর্যবেক্ষণ ভিত্তিক তথ্যের উপর’ নির্ভরশীল বলে বর্ণনা করেছিলেন। প্রকৃতির মৌলিক শক্তির উপর একটি উপস্থাপনা শেষ করার পর ফ্যারাডে তার শ্রোতাদের উৎসাহিত করেন তাঁর প্রতি দৃষ্টিপাত করতে “যিনি সেগুলি সৃষ্টি করেছেন।” তারপর তিনি খ্রীষ্টীয় প্রেরিত পৌলের কথা উদ্ধৃতি করেন: “জগৎ সৃষ্টি থেকে তাঁর অদৃশ্য বিষয়গুলি স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে আর সৃষ্ট বিষয়গুলির দ্বারা এমনকি তাঁর অনন্ত পরাক্রম এবং ঈশ্বরত্ব বোধগম্য হচ্ছে।”—রোমীয় ১:২০, কিং জেমস্ ভারসন।
যা ফ্যারাডেকে অন্যান্য বিজ্ঞানীদের থেকে পৃথক করেছিল তা হচ্ছে ঈশ্বরের অনুপ্রাণিত বাক্য থেকে এবং অনুরূপভাবে প্রকৃতির পুস্তক থেকে তার শেখার আকাঙ্ক্ষা। ক্যান্টোর মন্তব্য করেন, “স্যানডেম্যানবাদের মাধ্যমে তিনি ঈশ্বরের নৈতিক আইনের প্রতি এবং অনন্ত জীবনের প্রতিজ্ঞার প্রতি বাধ্য থেকে বেঁচে থাকার উপায় আবিষ্কার করেছিলেন। বিজ্ঞানের মাধ্যমে, তিনি বিশ্বকে পরিচালনার জন্য ঈশ্বর যে প্রাকৃতিক নিয়ম স্থির করেছেন তার নিবিড় সান্ন্যিধ্যে এসেছিলেন।” ফ্যারাডে বিশ্বাস করতেন, “বাইবেলের চূড়ান্ত কর্তৃত্ব বিজ্ঞানের দ্বারা অবমূল্যায়িত হতে পারে না, কিন্তু বিজ্ঞানকে যদি প্রকৃত খ্রীষ্টীয় উপায়ে অনুশীলন করা হয়, তাহলে তা ঈশ্বরের অন্যান্য পুস্তককেও অত্যুজ্জ্বল করে তুলবে।”
ফ্যারাডে বিনয়ের সাথে অনেক সম্মানকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন যা তাকে অন্যান্যেরা প্রদান করতে চেয়েছিলেন। তিনি দৃঢ়ভাবে নাইট-উপাধির প্রতি অনাগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। তিনি শুধুমাত্র একজন ‘সাধারণ শ্রী ফ্যারাডে’ হিসাবে থাকতে চেয়েছিলেন। তিনি একজন প্রাচীন হিসাবে তার কার্যক্রমের প্রতি অধিক সময় নিয়োগ করেছিলেন, যার অন্তর্ভুক্ত ছিল নিয়মিত রাজধানী থেকে নরফোক গ্রাম, যেখানে সম বিশ্বাসীদের একটি ছোট দল বাস করত সেখানে ভ্রমণ করা।
মাইকেল ফ্যারাডে ১৮৬৭ সালের ২৫শে আগস্ট মারা যান এবং তাকে উত্তর লন্ডনের হাইগেটে কবর দেওয়া হয়। আত্মজীবনী লেখক জন টমাস আমাদের বলেন যে ফ্যারাডে “ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে, অন্যান্য যে কোন প্রকৃতি বিজ্ঞানীর চেয়ে সমষ্ঠিগতভাবে আরও অধিক মৌলিক বৈজ্ঞানিক কৃতিত্ব প্রদান করেছেন এবং তার আবিষ্কারগুলির ব্যবহারিক ফলগুলি সভ্য জীবনের স্বাভাবিক প্রকৃতিকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে।” ফ্যারাডের বিধবা স্ত্রী, সারা লিখেছিলেন: “আমি শুধুমাত্র নতুন নিয়মকে তার জীবনের পথপ্রদর্শক এবং বিধি হিসাবে উল্লেখ করতে পারি; কারণ তিনি এটিকে ঈশ্বরের বাক্য হিসাবে বিবেচনা করতেন . . . যা বর্তমানকালের খ্রীষ্টানদেরও একই বন্ধনে আবদ্ধ করে রাখে যেমন রাখত যখন তা লেখা হয়েছিল”—একজন মহান বিজ্ঞানীর প্রতি যথার্থ সাক্ষ্য যিনি একাগ্রভাবে তার বিশ্বাসানুযায়ী জীবনযাপন করেছিলেন।
[পাদটীকাগুলো]
a যুক্তরাষ্ট্রের স্যানডেম্যানিয়ান বা গ্লাসিটদের অবশিষ্ট শেষ দলটি এই শতাব্দীর শুরুতে অস্তিত্বহীন হয়ে যায়।
[২৯ পৃষ্ঠার বাক্স]
ব্রিটেনের রয়েল ইন্স্টিটিউশনের অধ্যাপক হিসাবে অধিষ্ঠিত থাকার সময় মাইকেল ফ্যারাডে বিজ্ঞানকে এমনভাবে পরিচিত করিয়েছিলেন যে এমনকি অল্পবয়স্করাও তা বুঝতে পারত। সহঅধ্যাপকদের প্রতি তার উপদেশগুলি ব্যবহারিক পরার্মশ অন্তর্ভুক্ত করে যা আধুনিক দিনের যে খ্রীষ্টানেরা জনসাধারণ্যে শিক্ষা দেন তাদের পক্ষে বিবেচনা করা উত্তম।
◻ “বক্তব্য দ্রুত ও ত্বরান্বিত এবং পরিশেষে দুর্বোধ্য হওয়া উচিত নয়, বরঞ্চ ধীর এবং গঠনমূলক হওয়া উচিত।”
◻ একজন বক্তার তার শ্রোতাদের আগ্রহ জাগিয়ে তুলতে প্রচেষ্টা করা উচিত “বক্তৃতার সূচনা এবং সূক্ষ্ণ ক্রমের এক ধারাবাহিক বিষয় দিয়ে যা শ্রোতাদের দ্বারা অলক্ষিত থাকে এবং যতক্ষণ পর্যন্ত বিষয়টির প্রয়োজন হয় এটিকে জীবন্ত রাখুন।”
◻ “একজন বক্তা প্রবলভাবে তার চারিত্রিক মর্যাদার একেবারে নিম্নে পতিত হয় যখন সে এতখানি নিচে নেমে যায় যে সে তার বক্তব্যে করতালি এবং প্রশংসা দাবি করে।”
◻ পরিলেখ ব্যবহার করার ক্ষেত্রে: “আমি সর্বদা নিজেকে বাধ্য করি . . . কাগজে [বিষয়টির] একটি পরিকল্পনা লিখতে এবং তারপর অন্যান্য অংশগুলি স্মরণ করে বা সম্বন্ধযুক্ত করে অথবা অন্য কোনভাবে পূর্ণ করে। . . . আমার অধিক এবং কম গুরুত্বপূর্ণ শিরোনামগুলি ক্রমান্বয়ে সাজানো আছে এবং আমি এর মাধ্যমেই আমার বিষয়বস্তুর উপর কাজ করি।”
[২৬ পৃষ্ঠার চিত্র সৌজন্যে]
Both pictures: By courtesy of the Royal Institution