মৃত্যুর পরে জীবন—কিভাবে, কোথায়, কখন?
মানবজাতির সৃষ্টিকর্তা এবং জীবনদাতা তাঁর ব্যক্তিগত নিশ্চয়তা দেন যে মানুষের মৃত্যু অনন্তকালের জন্য জীবনকে অপরিহার্যভাবে শেষ করে দেয় না। অধিকন্তু, ঈশ্বর আমাদের আশ্বাস দেন শুধুমাত্র পরবর্তী আর এক সীমিত জীবনকালের জন্য পুনরায় বেঁচে থাকা নয়, বরঞ্চ আর কখনও আবার মৃত্যুর মুখোমুখি না হওয়ার প্রত্যাশা নিয়ে বেঁচে থাকা সম্ভব! প্রেরিত পৌল তা স্পষ্টভাবে, এমনকি নিশ্চয়তার সাথে বলেছিলেন: “এই বিষয়ে [ঈশ্বর] সকলের বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ দিয়াছেন, ফলতঃ মৃতগণের মধ্য হইতে তাঁহাকে [খ্রীষ্ট যীশুকে] উঠাইয়াছেন।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।)—প্রেরিত ১৭:৩১.
অবশ্য, এটি এখনও তিনটি মূল প্রশ্নকে উত্তরহীন অবস্থায় রাখে: কিভাবে একজন মৃত ব্যক্তি জীবন ফিরে পেতে পারে? এটি কখন ঘটবে? কোথায় সেই নতুন জীবন অস্তিত্বপ্রাপ্ত হবে? জগদ্ব্যাপী, এই প্রশ্নগুলির বিভিন্ন উত্তর দেওয়া হয়েছে, কিন্তু বিষয়টি সম্পর্কীয় সত্যকে নির্ণয় করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ চাবি হচ্ছে, তাদের মৃত্যুর সময়ে মানুষের কী হয় তা যথার্থভাবে বোঝা।
অমরতা কি উত্তর?
একটি ব্যাপক প্রচলিত বিশ্বাস হল যে সকল মানুষের একটি অংশ অমর এবং শুধুমাত্র তাদের দেহগুলি মারা যায়। আপনি নিশ্চয়ই এইধরনের একটি দাবি শুনে থাকবেন। এই অংশটিকে যেটি অমর হিসাবে দাবি করা হয়ে থাকে বিভিন্নভাবে “প্রাণ” অথবা “আত্মা” বলে উল্লেখ করা হয়। বলা হয়ে থাকে যে এটি দেহের মৃত্যু হওয়ার পরও জীবিত থাকে এবং অন্য কোথাও বেঁচে থাকে। স্পষ্টতই, এরূপ বিশ্বাস বাইবেল থেকে উদ্ভূত হয়নি। এটি সত্য যে, প্রাচীন ইব্রীয় বাইবেল চরিত্রগুলি মৃত্যুর পরে জীবনের জন্য উৎসুকভাবে প্রত্যাশা করেছিলেন, কিন্তু তা তাদের কোন অমর অংশের জীবিত অবস্থায় থাকার দ্বারা নয়। তারা নিশ্চয়তার সাথে পুনরুত্থানের অলৌকিক ঘটনার মাধ্যমে পার্থিব জীবনে ভবিষ্যতে ফিরে আসার জন্য উৎসুকভাবে প্রত্যাশা করেছিলেন।
কূলপতি অব্রাহাম হলেন এক উল্লেখযোগ্য উদাহরণ যার মৃতদের ভবিষ্যৎ পুনরুত্থানে বিশ্বাস ছিল। তার পুত্র ইস্হাককে বলিরূপে উৎসর্গ করতে অব্রাহামের ইচ্ছুক মনোভাবের বর্ণনা দিয়ে, ইব্রীয় ১১:১৭-১৯ পদ আমাদের বলে: “বিশ্বাসে অব্রাহাম পরীক্ষিত হইয়া ইস্হাককে উৎসর্গ করিয়াছিলেন; . . . তিনি মনে স্থির করিয়াছিলেন, ঈশ্বর মৃতগণের মধ্য হইতেও উত্থাপন করিতে সমর্থ; আবার তিনি তথা হইতে দৃষ্টান্তরূপে তাঁহাকে ফিরিয়া পাইলেন,” কারণ ঈশ্বর চাননি যে ইস্হাক বলিকৃত হোক। ইস্রায়েলীয়দের প্রাথমিক বিশ্বাস যে তারা পরবর্তী সময়ে পুনরায় জীবনে ফিরে আসবে সে সম্বন্ধে আরও সাক্ষ্য দিয়ে (এক আত্মিক রাজ্যে জীবনের তাৎক্ষণিক অনুবর্তনের পরিবর্তে), ভাববাদী হোশেয় লিখেছিলেন: “পাতালের [মানবজাতির সাধারণ কবর] হস্ত হইতে আমি তাহাদিগকে উদ্ধার করিব, মৃত্যু হইতে আমি তাহাদিগকে মুক্ত করিব।”—হোশেয় ১৩:১৪.
অতএব, এই সহজাত মানব অমরতার ধারণা কখন যিহূদীদের চিন্তাধারা এবং বিশ্বাসে চলে আসে? এনসাইক্লোপিডিয়া জুডাইকা স্বীকার করে যে “সম্ভবত গ্রীক প্রভাবের অধীনে প্রাণের অমরতার মতবাদটি যিহূদী ধর্মে চলে এসেছিল।” তৎসত্ত্বেও, ধর্মপ্রাণ যিহূদীরা খ্রীষ্টের সময় পর্যন্ত ভবিষ্যৎ পুনরুত্থানে বিশ্বাস এবং প্রত্যাশা করত। আমরা এটি তার ভাই লাসারের মৃত্যুতে যীশুর সাথে মার্থার কথোপকথন থেকে স্পষ্টভাবে দেখতে পাই: “মার্থা যীশুকে কহিলেন, প্রভু, আপনি যদি এখানে থাকিতেন, আমার ভাই মরিত না। . . . যীশু তাঁহাকে কহিলেন, তোমার ভাই আবার উঠিবে। মার্থা তাঁহাকে কহিলেন, আমি জানি, শেষ দিনে পুনরুত্থানে সে উঠিবে।”—যোহন ১১:২১-২৪.
মৃতদের অবস্থা
এই ক্ষেত্রেও, বিষয়টি সম্পর্কে অনুমান করার কোন প্রয়োজন নেই। বাইবেলের সহজ সত্য হল যে মৃতেরা সম্পূর্ণভাবে কোনপ্রকার অনুভূতি অথবা জ্ঞান ছাড়াই “ঘুমন্ত,” অচেতন অবস্থায় রয়েছে। বাইবেলে এই সত্যটি জটিল, দুর্বোধ্য পন্থায় উপস্থাপন করা হয়নি। এই সহজবোধ্য শাস্ত্রপদগুলি বিবেচনা করুন: “জীবিত লোকেরা জানে যে, তাহারা মরিবে; কিন্তু মৃতেরা কিছুই জানে না, . . . তোমার হস্ত যে কোন কার্য্য করিতে পায়, তোমার শক্তির সহিত তাহা কর; কেননা তুমি যে স্থানে যাইতেছ, সেই পাতালে কোন কার্য্য কি সঙ্কল্প, কি বিদ্যা কি প্রজ্ঞা, কিছুই নাই।” (উপদেশক ৯:৫, ১০) “তোমরা নির্ভর করিও না রাজন্যগণে, বা মনুষ্য-সন্তানে, যাহার নিকটে ত্রাণ নাই। তাহার শ্বাস [“আত্মা,” NW] নির্গত হয়, সে নিজ মৃত্তিকায় প্রতিগমন করে; সেই দিনেই তাহার সঙ্কল্প সকল নষ্ট হয়।”—গীতসংহিতা ১৪৬:৩, ৪.
অতএব, এটি বোঝা যায় যে, কেন যীশু খ্রীষ্ট মৃত্যুকে ঘুম হিসাবে উল্লেখ করেছিলেন। প্রেরিত যোহন যীশু ও তাঁর শিষ্যদের মধ্যে এক কথোপকথন সম্বন্ধে লিপিবদ্ধ করেন: “তিনি . . . তাঁহাদিগকে বলিলেন, আমাদের বন্ধু লাসার নিদ্রা গিয়াছে, কিন্তু আমি নিদ্রা হইতে তাহাকে জাগাইতে যাইতেছি। তখন শিষ্যেরা তাঁহাকে কহিলেন, প্রভু, সে যদি নিদ্রা গিয়া থাকে, তবে রক্ষা পাইবে। যীশু তাঁহার মৃত্যুর বিষয় বলিয়াছিলেন, কিন্তু তাঁহারা মনে করিলেন যে, তিনি নিদ্রাঘটিত বিশ্রামের কথা বলিতেছেন। অতএব যীশু তখন স্পষ্টরূপে তাঁহাদিগকে কহিলেন, লাসার মরিয়াছে।”—যোহন ১১:১১-১৪.
সম্পূর্ণ ব্যক্তিটি মারা যায়
মানব মৃত্যুর প্রক্রিয়া শুধু দেহের মৃত্যুকে নয়, বরঞ্চ সম্পূর্ণ ব্যক্তিকে জড়িত করে। বাইবেলের স্পষ্ট উক্তিগুলি অনুসারে, আমরা অবশ্যই এই উপসংহারে আসব যে মানুষ একটি অমর প্রাণের অধিকারী নয় যা তার দেহের মৃত্যু সত্ত্বেও রক্ষা পেতে পারে। শাস্ত্র পরিষ্কারভাবে ইঙ্গিত দেয় যে প্রাণ মারা যেতে পারে। “দেখ, সমস্ত প্রাণ আমার; যেমন পিতার প্রাণ, তদ্রূপ সন্তানের প্রাণও আমার; যে প্রাণী পাপ করে, সেই মরিবে।” (যিহিষ্কেল ১৮:৪) “অমর” বা “অমরতা” শব্দগুলি সম্বন্ধে কোথাও বলা হয় না যে সেগুলি মানবজাতির মধ্যে সহজাতভাবে রয়েছে।
নিউ ক্যাথলিক এনসাইক্লোপিডিয়া বাইবেলে যে ইব্রীয় ও গ্রীক শব্দগুলি “প্রাণ” হিসাবে অনুবাদিত হয়েছে তার উপর এই আগ্রহজনক পটভূমি সরবরাহ করে: “OT [পুরাতন নিয়ম]-এ প্রাণ হল নেফিস আর NT [নতুন নিয়ম]-এ [সাইকী]। . . . যে মূল উৎস থেকে নেফিস এসেছে সম্ভবত তার অর্থ নিঃশ্বাস গ্রহণ এবং এইভাবে . . . যেহেতু নিঃশ্বাস মৃতদের থেকে জীবিতদের পৃথক করে, তাই নেফিস এর অর্থ জীবন অথবা স্বয়ং অথবা শুধুমাত্র ব্যক্তিগত জীবন। . . . পুরাতন নিয়মে দেহ এবং প্রাণের মধ্যে কোন দ্বি-বিভাজন [দুটি অংশে বিভক্ত] নেই। একজন ইস্রায়েলীয় বিষয়গুলিকে সার্বিক দিক দিয়ে প্রত্যক্ষভাবে দেখত আর তাই সে মানুষদের সংযোজিত হিসাবে নয়, বরঞ্চ এক ব্যক্তি হিসাবে বিবেচনা করত। নেফিস শব্দটি, যদিও আমাদের শব্দ প্রাণ দ্বারা অনুবাদিত হয়েছে, কিন্তু তা কখনও অর্থ করে না যে সেই প্রাণ দেহ অথবা এক স্বতন্ত্র ব্যক্তি থেকে পৃথক। . . . [সাইকী] শব্দটি হল নতুন নিয়মের শব্দ যা নেফিস এর অনুরূপ। এটির অর্থ জীবনের উৎস, স্বয়ং জীবন অথবা জীবন্ত প্রাণী হতে পারে।”
তাই আপনি লক্ষ্য করতে পারেন যে মৃত্যুর সময়ে, পূর্বের জীবিত ব্যক্তি অথবা জীবন্ত প্রাণ অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ে। দেহ কবরপ্রাপ্ত এবং পরিণামস্বরূপ ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে ক্রমশঃ অথবা দাহ করার দ্বারা দ্রুত “ধূলিতে” অথবা পৃথিবীর উপাদানগুলিতে প্রতিগমন করে। যিহোবা আদমকে বলেছিলেন: “তুমি ধূলি, এবং ধূলিতে প্রতিগমন করিবে।” (আদিপুস্তক ৩:১৯) তাহলে, কিভাবে, মৃত্যুর পরে জীবন সম্ভব? এটি সম্ভব কারণ যে ব্যক্তি মারা গেছেন তিনি ঈশ্বরের স্মরণে আছেন। মানুষ সৃষ্টি করার অলৌকিক ক্ষমতা এবং দক্ষতা যিহোবার রয়েছে, তাই আশ্চর্য হওয়া উচিত নয় যে তিনি তাঁর স্মৃতিতে প্রত্যেক ব্যক্তির জীবন ধারার এক রেকর্ড সংরক্ষণ করতে পারেন। হ্যাঁ, তাদের পুনরায় জীবিত হওয়ার সকল প্রত্যাশাগুলি ঈশ্বরের উপর নির্ভর করে।
এটিই হচ্ছে “আত্মা” শব্দটির অর্থ, যে সম্বন্ধে বলা হয়েছে এটি যিনি দিয়েছেন সেই সত্য ঈশ্বরের কাছে ফিরে যায়। এই পরিণতির বর্ণনা দিয়ে, উপদেশক বইটির অনুপ্রাণিত লেখক ব্যাখ্যা করেন: “আর ধূলি পূর্ব্ববৎ মৃত্তিকাতে প্রতিগমন করিবে; এবং আত্মা যাঁহার দান, সেই ঈশ্বরের কাছে প্রতিগমন করিবে।”—উপদেশক ১২:৭.
একমাত্র ঈশ্বরই একজনকে জীবিত করতে পারেন। যখন ঈশ্বর এদনে মানুষকে সৃষ্টি করে তার নাসিকায় “প্রাণবায়ু” প্রবেশ করান তখন আদমের ফুসফুস বায়ু দ্বারা পূর্ণ করার সাথে সাথে যিহোবা তার দেহের মধ্যে সমস্ত কোষগুলিকে সক্রিয় করতে জীবনী-শক্তি প্রদান করেন। (আদিপুস্তক ২:৭) কারণ এই জীবনী-শক্তি গর্ভধারণ এবং জন্মদান প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পিতামাতা থেকে সন্তানদের মধ্যে সঞ্চারিত হতে পারে, তাই এক মনুষ্য জীবন যথার্থভাবে ঈশ্বরের কাছ থেকে আসে, অবশ্য, তা সে পিতামাতার মাধ্যমে লাভ করে।
পুনরুত্থান—এক আনন্দপূর্ণ সময়
পুনরুত্থানকে পুনরায় দেহধারণ হিসাবে বিভ্রান্ত হওয়া উচিত নয়, যার কোন সমর্থন পবিত্র শাস্ত্রে খুঁজে পাওয়া যায় না। পুনরায় দেহধারণ হল এমন একটি বিশ্বাস যে একজন ব্যক্তি মৃত্যুর পরে, একবার অথবা একাধিকবার ধারাবাহিক অস্তিত্বগুলির মাধ্যমে পুনর্জন্ম লাভ করে। এটি বলা হয়ে থাকে যে অস্তিত্বের উচ্চ অথবা নিম্ন পর্যায় একজনের পূর্ববর্তী জীবনের সাথে তুলনীয়, আনুমানিকভাবে পূর্ববর্তী জীবনকালে কিধরনের রেকর্ড গড়ে তোলা হয়েছিল তার উপর নির্ভর করে। এই বিশ্বাস অনুসারে, একজন হয়ত মানুষ অথবা একটি পশু হিসাবে “পুনর্জন্ম” লাভ করতে পারে। এটি বাইবেলের শিক্ষার সাথে সম্পূর্ণভাবে সংঘাতমূলক।
“পুনরুত্থান” শব্দটি গ্রীক শব্দ আনাসটাসিস থেকে অনুবাদিত হয়েছে, যার আক্ষরিক অর্থ হল “আবার উঠে দাঁড়ানো।” (গ্রীকের ইব্রীয় অনুবাদকেরা ইব্রীয় শব্দদ্বয় টেকিয়াথ হেমানথিম্ দ্বারা আনাসটাসিস শব্দটি অনুবাদ করেছেন, যার অর্থ হল “মৃতদের পুনরুজ্জীবন।”) পুনরুত্থান এক ব্যক্তির জীবন ধারার পুনর্কার্যাবলীকে জড়িত করে, যে জীবন ধারা ঈশ্বর তাঁর স্মরণে রেখেছেন। এক ব্যক্তির জন্য ঈশ্বরের ইচ্ছা অনুসারে, সেই ব্যক্তি হয় এক মানব দেহ অথবা আত্মিক দেহ ফিরে পাবে; তবুও তার মৃত্যুর সময়ে যেরূপ ছিল সেই একইরূপ ব্যক্তিত্ব এবং স্মৃতি লাভ করার দ্বারা সে তার ব্যক্তিগত পরিচয় মনে রাখবে।
হ্যাঁ, বাইবেল দুই ধরনের পুনরুত্থানের বিষয়ে বলে। একটি হল আত্মিক দেহ নিয়ে স্বর্গে পুনরুত্থান; এটি অপেক্ষাকৃত অল্প কিছুজনের জন্য। যীশু খ্রীষ্ট এরূপ পুনরুত্থান লাভ করেছিলেন। (১ পিতর ৩:১৮) আর তিনি ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে তাঁর পদচিহ্ন অনুসরণকারীদের মধ্যে নির্বাচিত জনেরা তা লাভ করবে যা বিশ্বস্ত প্রেরিতদের দিয়ে শুরু হয় যাদের কাছে তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন: “আমি তোমাদের জন্য স্থান প্রস্তুত করিতে যাইতেছি। . . . আমি . . . পুনর্ব্বার আসিব, এবং আমার নিকটে তোমাদিগকে লইয়া যাইব; যেন, আমি যেখানে থাকি, তোমরাও সেই খানে থাক।” (যোহন ১৪:২, ৩) বাইবেল এটিকে “প্রথম পুনরুত্থান” হিসাবে উল্লেখ করে, সময় এবং পদমর্যাদার ক্ষেত্রে প্রথম। তাই যারা স্বর্গীয় জীবনে পুনরুত্থিত হবেন তাদের সম্বন্ধে শাস্ত্র বর্ণনা দেয় যে তারা ঈশ্বরের যাজক এবং খ্রীষ্ট যীশুর সাথে রাজত্বকারী রাজা হিসাবে শাসন করবেন। (প্রকাশিত বাক্য ২০:৬) “প্রথম পুনরুত্থান” সীমিত সংখ্যক ব্যক্তিদের জন্য আর শাস্ত্র প্রকাশ করে যে বিশ্বস্ত পুরুষ এবং স্ত্রীদের মধ্যে থেকে শুধু ১,৪৪,০০০ জনকে গ্রহণ করা হবে। তাদের বিশ্বাস সম্পর্কে অন্যদের কাছে সাক্ষ্য বহন করার ক্ষেত্রে সক্রিয় থেকে, তাদের যিহোবা ঈশ্বর এবং খ্রীষ্ট যীশুর প্রতি মৃত্যু পর্যন্ত সম্পূর্ণভাবে বিশ্বস্তার প্রমাণ দিতে হবে।—প্রকাশিত বাক্য ১৪:১, ৩, ৪.
নিঃসন্দেহে, মৃতদের পুনরুত্থান তাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের সময় যারা স্বর্গীয় জীবনে পুনরুত্থিত হয়। কিন্তু সেখানেই আনন্দের শেষ নয়, কেননা এই পৃথিবীতেও জীবনে পুনরুত্থিত হওয়ার বিষয়ে প্রতিজ্ঞা করা হয়েছে। সেই পুনরুত্থিতেরা এক অগণিত সংখ্যক ব্যক্তিদের সাথে যোগ দেবে যারা বর্তমান বিধিব্যবস্থার শেষ থেকে রক্ষা পাবে। স্বর্গীয় পুনরুত্থানের জন্য যোগ্যতাসম্পন্ন স্বল্প সংখ্যক ব্যক্তিদের দেখার পর, প্রেরিত যোহনকে একটি দর্শন দেওয়া হয় “প্রত্যেক জাতির ও বংশের ও প্রজাবৃন্দের ও ভাষার বিস্তর লোক, তাহা গণনা করিতে সমর্থ কেহ ছিল না।” যখন লক্ষ লক্ষ, সম্ভবত কোটি কোটি ব্যক্তিরা পৃথিবীতে জীবন ফিরে পাবে তখন কতই না এক আনন্দের সময় হবে!—প্রকাশিত বাক্য ৭:৯, ১৬, ১৭.
এটি কখন হবে?
যে কোন আনন্দ বা সুখ স্বল্পস্থায়ী হবে যদি মৃতেরা এমন একটি পৃথিবীতে জীবন ফিরে পায় যা বিবাদ, রক্তপাত, দূষণ এবং হিংস্রতা দ্বারা পরিপূর্ণ—বর্তমান পরিস্থিতির মত। না, পুনরুত্থান অবশ্যই “নূতন পৃথিবী” প্রতিষ্ঠিত হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। কল্পনা করুন, সেই লোকেরা এবং প্রতিষ্ঠানগুলি থেকে পরিষ্কৃত একটি গ্রহ, যেটি এখনও পর্যন্ত যেন মনে হয় পৃথিবীকে ধ্বংস করতে এবং এর আদিম সৌন্দর্যকে নষ্ট করতে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ আর তদুপরি যেটি এর অধিবাসীদের উপর অবর্ণিত দুর্দশা নিয়ে এসেছে।—২ পিতর ৩:১৩; প্রকাশিত বাক্য ১১:১৮.
এটি স্পষ্ট প্রতীয়মান যে, মানবজাতির সাধারণ পুনরুত্থানের সময় এখনও সামনে অপেক্ষারত। তবুও সুসংবাদ হচ্ছে এটি খুব বেশি দূরে নয়। সত্য, যে এটিকে অবশ্যই বর্তমান মন্দ বিধিব্যবস্থার শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু, প্রচুর সাক্ষ্য প্রমাণ করে যে “মহাক্লেশ” এর আকস্মিক শুরু নিকটেই, “সর্ব্বশক্তিমান্ ঈশ্বরের সেই মহাদিনের যুদ্ধার্থে” পৌঁছানোর দ্বারা—যেটিকে সাধারণভাবে হর্মাগিদোন হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। (মথি ২৪:৩-১৪, ২১; প্রকাশিত বাক্য ১৬:১৪, ১৬) এটি এই মনোরম গ্রহ, পৃথিবী থেকে সমস্ত দুষ্টতা অপসারণ করবে। এরপর খ্রীষ্ট যীশুর হাজার বছরের রাজত্বকাল আসবে, যখন পৃথিবীকে ক্রমান্বয়ে পরমদেশে পরিণত করা হবে।
বাইবেল প্রকাশ করে যে এই হাজার বছরের রাজত্বের সময়ে, মৃত মানুষদের পুনরুত্থান হবে। তারপর পৃথিবীতে থাকাকালীন সময়ে যীশু যে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন তার পরিপূর্ণতা ঘটবে: “ইহাতে আশ্চর্য্য মনে করিও না; কেননা এমন সময় আসিতেছে, যখন কবরস্থ সকলে তাঁহার রব শুনিবে, এবং . . . পুনরুত্থানের জন্য বাহির হইয়া আসিবে।”—যোহন ৫:২৮, ২৯.
পুনরুত্থানের আশার প্রভাব
পুনরুত্থানের এই প্রত্যাশা ভবিষ্যতের জন্য কতই না এক চমৎকার আশা—এমন একটি সময় যখন মৃতেরা জীবন ফিরে পাবে! এটি আমাদের কতই না উৎসাহিত করে যখন আমরা বার্ধক্যের কঠোরতা, অসুস্থতা, অপ্রত্যাশিত চরম দুর্দশা ও দুঃখ এবং প্রতিদিনের চাপসমূহ ও জীবনের সমস্যাগুলির সম্মুখীন হই! এটি মৃত্যুর হুলকে সরিয়ে দেয়—দুঃখকে সম্পূর্ণভাবে দূর করে নয়, কিন্তু যাদের ভবিষ্যতের জন্য কোন আশা নেই তাদের থেকে আমাদের পৃথক করে। প্রেরিত পৌল পুনরুত্থানের আশার এই সান্ত্বনাদায়ক প্রভাব এই বাক্যগুলির দ্বারা স্বীকার করেছিলেন: “হে ভ্রাতৃগণ, আমরা চাহি না যে, যাহারা নিদ্রাগত হয়, তাহাদের বিষয়ে তোমরা অজ্ঞাত থাক; যেন যাহাদের প্রত্যাশা নাই, সেই অন্য সকল লোকের মত তোমরা দুঃখার্ত্ত না হও। কেননা আমরা যখন বিশ্বাস করি যে, যীশু মরিয়াছেন, এবং উঠিয়াছেন, তখন জানি, ঈশ্বর যীশু দ্বারা নিদ্রাগত লোকদিগকেও সেইরূপে তাঁহার সহিত আনয়ন করিবেন।”—১ থিষলনীকীয় ৪:১৩, ১৪.
আমরা হয়ত ইতিমধ্যেই প্রাচ্যের লোক ইয়োবের দ্বারা কৃত একটি পর্যবেক্ষণের সত্যতা অভিজ্ঞতা করেছি: “মনুষ্য ক্ষয়শীল গলিত বস্তুর ন্যায়, কীটকুট্টিত বস্ত্রের সদৃশ। অবলাজাত মনুষ্য অল্পায়ু ও উদ্বেগে পরিপূর্ণ। সে পুষ্পের ন্যায় প্রস্ফুটিত হয়ে ম্লান হয়; অস্থায়ী ছায়ার ন্যায় সে স্থির থাকে না।” (ইয়োব ১৩:২৮–১৪:২, নিউ ইন্টারন্যাশন্যাল ভারসন) আমরাও জীবনের অনিশ্চয়তা এবং কঠোর বাস্তব “কাল ও দৈব” যা আমাদের যে কারও প্রতি ঘটতে পারে সে সম্বন্ধে সচেতন। (উপদেশক ৯:১১) অবশ্যই, আমাদের কেউই মৃত্যুর মুখোমুখি হওয়ার চিন্তাকে উপভোগ করি না। তবুও, পুনরুত্থানের নিশ্চিত আশা মৃত্যু ভয়ে অতিরিক্তভাবে আচ্ছন্ন হওয়া থেকে বিরত থাকতে আমাদের সাহায্য করে।
অতএব, উৎসাহিত হোন! মৃত্যুর সম্ভাব্য ঘুমকে অতিক্রম করে অলৌকিক পুনরুত্থানের মাধ্যমে জীবন ফিরে পাওয়ার দিকে তাকান। নিশ্চয়তার সাথে অন্তহীন ভবিষ্যৎ জীবনের প্রত্যাশার জন্য প্রতীক্ষা করুন আর এইরূপ আশীর্বাদের সময়টি যে নিকট ভবিষ্যতেই তা জানার আনন্দকে এর সাথে যুক্ত করুন।