আবাসিক বিদ্যালয়ে—আপনার সন্তানের কি যাওয়া উচিত?
কল্পনা করুন আপনি এক উন্নয়নশীল দেশের একটি ছোট্ট শহরে বাস করেন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আপনার বেশ কয়েকটি সন্তান আছে, কিন্তু ১২ বছর বয়সে, তারা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে উত্তীর্ণ হবে। আপনার এলাকায়, মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলিতে অত্যধিক ছাত্রছাত্রী, অপর্যাপ্ত সাজসরঞ্জাম এবং অল্প কিছু শিক্ষক রয়েছেন। ধর্মঘটের কারণে বিদ্যালয়গুলি কখনও কখনও সপ্তাহের পর সপ্তাহ এবং একসাথে মাসের পর মাস বন্ধ থাকে।
কেউ হয়ত একটি আকর্ষণীয় ব্রোশার আপনার হাতে দেয় যেটি ঐ শহরের একটি আবাসিক বিদ্যালয়ের বিষয়ে বর্ণনা করে। ছবিতে আপনি খুশি, মার্জিত পোশাকের ছাত্রছাত্রীদের, সুসজ্জিত শ্রেণীকক্ষে, গবেষণাগার এবং গ্রন্থাগারগুলিতে অধ্যয়ন করতে দেখতে পাচ্ছেন। ছাত্রছাত্রীরা কমপিউটার ব্যবহার করছে এবং পরিষ্কার ও আকর্ষণীয় শয্যা-সংবলিত কক্ষগুলিতে অবসর কাটাচ্ছে। আপনি পড়লেন যে বিদ্যালয়ের একটি লক্ষ্য হল ছাত্রছাত্রীদের “যে বিষয়টিতে তারা দক্ষ তাতে সর্বোচ্চ শিক্ষামান সম্পন্ন করতে” সাহায্য করা। আপনি আরও পড়লেন: “সমস্ত ছাত্রছাত্রীরা আচরণ সম্বন্ধীয় নিয়মাবলী মেনে চলার ক্ষেত্রে নির্দেশিত, ঠিক যা পরিবারের মধ্যে স্বভাবতই আশা করা হয় যেখানে ভদ্রতা, শিষ্টাচার, পিতামাতা এবং বয়স্কদের প্রতি সম্মান, সহযোগিতা, সহিষ্ণুতা, দয়া, সততা, বিশ্বস্ততার উপর জোর দেওয়া হয়েছে।”
হাস্যমুখর একটি কিশোরের কথা উদ্ধৃত করা হয়, যে বলেছে: “আমার পিতামাতা আমাকে জীবনে সর্বোত্তম বিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ দিয়েছিলেন।” একটি মেয়ে বলে: “বিদ্যালয় হল উদ্দীপনামূলক এবং উত্তেজনামূলক। এখানে স্বাভাবিকভাবেই শিক্ষা লাভ হয়।” আপনি কি আপনার ছেলে অথবা মেয়েকে এইধরনের এক আবাসিক বিদ্যালয়ে পাঠাবেন?
শিক্ষা ও আধ্যাত্মিকতা
সমস্ত যত্নবান পিতামাতারা তাদের সন্তানদের জীবনে এক শুভসূচনা করাতে চান এবং সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে পুঙ্খানুপুঙ্খ, ভারসাম্যমূলক শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ। প্রায়ই জাগতিক শিক্ষাগুলি ভবিষ্যৎ চাকুরির সুযোগগুলি খুলে দেয় এবং কিশোর-কিশোরীদের তাদের নিজেদের প্রতি এবং তাদের ভবিষ্যৎ পরিবারের প্রতি যত্ন নিতে সক্ষম এক প্রাপ্তবয়স্ক হতে সাহায্য করে।
‘যদি আবাসিক বিদ্যালয় কিছু নৈতিক নির্দেশনাসহ এক উত্তম শিক্ষার প্রস্তাব দিয়ে থাকে, তবে কেন এর সুযোগ গ্রহণ করব না?’ আপনি হয়ত জিজ্ঞাসা করতে পারেন। এই প্রশ্নের উত্তরে, খ্রীষ্টীয় পিতামাতাদের প্রার্থনাপূর্বক অতীব গুরুত্বপূর্ণ এক বিষয়ে বিবেচনা করা উচিত—তাদের সন্তানদের আধ্যাত্মিক মঙ্গল সম্পর্কে। যীশু খ্রীষ্ট জিজ্ঞাসা করেছিলেন: “বস্তুতঃ মনুষ্য যদি সমুদয় জগৎ লাভ করিয়া আপন প্রাণ খোয়ায়, তবে তাহার কি লাভ হইবে?” (মার্ক ৮:৩৬) অবশ্যই, এতে কোনই উপকার নেই। অতএব, তাদের সন্তানদের আবাসিক বিদ্যালয়ে পাঠানোর পূর্বে, খ্রীষ্টীয় পিতামাতাদের এই বিষয়ে বিবেচনা করা উচিত যে তাদের সন্তানদের অনন্ত জীবনের প্রত্যাশার উপরে এর কী প্রভাব হতে পারে।
অন্যান্য ছাত্রদের প্রভাব
কিছু নির্দিষ্ট আবাসিক বিদ্যালয়ের হয়ত প্রভাবকারী শিক্ষামান রয়েছে। কিন্তু যারা এইধরনের বিদ্যালয়গুলিতে পড়াশুনা করে অথবা সম্ভবত এমনকি যারা তা পরিচালনা করে তাদের নৈতিক মান সম্পর্কে কী বলা যায়? যে ধরনের লোকেরা এই ‘শেষ কালে’ প্রচুর পরিমাণে থাকবে তাদের সম্পর্কে প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “শেষ কালে বিষম সময় উপস্থিত হইবে। কেননা মনুষ্যেরা আত্মপ্রিয়, অর্থপ্রিয়, আত্মশ্লাঘী, অভিমানী, ধর্ম্মনিন্দক, পিতামাতার অবাধ্য, অকৃতজ্ঞ, অসাধু, স্নেহরহিত, ক্ষমাহীন, অপবাদক, অজিতেন্দ্রিয়, প্রচণ্ড, সদ্বিদ্বেষী, বিশ্বাসঘাতক, দুঃসাহসী, গর্ব্বান্ধ, ঈশ্বরপ্রিয় নয়, বরং বিলাসপ্রিয় হইবে; লোকে ভক্তির অবয়বধারী, কিন্তু তাহার শক্তি অস্বীকারকারী হইবে; তুমি এরূপ লোকদের হইতে সরিয়া যাও।”—২ তীমথিয় ৩:১-৫.
এই নৈতিক এবং আধ্যাত্মিক অবনতি বিশ্বব্যাপী, তাই বাইবেলের নীতিগুলির দ্বারা জীবনযাপন করা যিহোবার সাক্ষীদের কাছে এক প্রতিদ্বন্দ্বিতা উপস্থিত করে। ছাত্রছাত্রীরা যারা প্রতিদিন ঘরে ফিরে আসে তারা দেখে যে এমনকি জাগতিক সহপাঠীদের সাথে স্বল্প মেলামেশাও তাদের আধ্যাত্মিকতার উপর শক্তিশালী নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এমনকি তাদের পিতামাতাদের কাছ থেকে প্রত্যহ সমর্থন, পরামর্শ এবং উৎসাহ পাওয়ার পরও, ঐ প্রভাব প্রতিরোধ করা একজন সাক্ষী সন্তানের পক্ষে বেশ সংগ্রামমূলক হতে পারে।
তাহলে, সেই সন্তানদের অবস্থা কী হয় যাদেরকে তাদের বাড়ি থেকে আবাসিক বিদ্যালয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয়? তারা বিচ্ছিন্ন এবং প্রেমময় পিতামাতাদের নিয়মিত আধ্যাত্মিক সমর্থন থেকে বঞ্চিত হয়। যেহেতু তারা তাদের সহপাঠীদের সাথে দিনের ২৪ ঘন্টাই অতিবাহিত করে, তাই সহপাঠীদের কথা মেনে চলার চাপ তাদের অল্পবয়স্ক মন এবং হৃদয়ের উপর প্রচণ্ড প্রভাব ফেলে যা, সম্ভবত যারা বাড়িতে থাকে সেই ছাত্রছাত্রীদের তুলনায় অনেক বেশি। একজন ছাত্র বলে: “বস্তুত, একজন আবাসিকবাসী সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিপদের মধ্যে বাস করে।”
পৌল লিখেছিলেন: “ভ্রান্ত হইও না, কুসংসর্গ শিষ্টাচার নষ্ট করে।” (১ করিন্থীয় ১৫:৩৩) খ্রীষ্টীয় পিতামাতাদের এই চিন্তায় ভ্রান্ত হওয়া উচিত নয় যে তাদের সন্তানেরা সেই সব সঙ্গীদের যারা ঈশ্বরের সেবা করে না তাদের সাথে মেলামেশা করে চললেও কখনই আধ্যাত্মিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। একটি নির্দিষ্ট সময়ের পরে, ধার্মিক সন্তানেরা খ্রীষ্টীয় মূল্য সম্পর্কে উদাসীন হতে পারে এবং আধ্যাত্মিক বিষয়ে সমস্ত উপলব্ধিবোধ হারাতে পারে। কখনও কখনও তাদের সন্তানেরা আবাসিক বিদ্যালয় ত্যাগ না করা পর্যন্ত এই বিষয়টি পিতামাতাদের কাছে স্পষ্ট হয় না। তখন বিষয়গুলি সংশোধন করার জন্য প্রায় ক্ষেত্রেই খুব দেরি হয়ে যায়।
ক্লেমেন্টের অভিজ্ঞতাটি দৃষ্টান্তস্বরূপ। সে বর্ণনা করে: “আবাসিক বিদ্যালয়ে যাওয়ার পূর্বে, আমার সত্যের প্রতি প্রেম ছিল এবং ভাইয়েদের সাথে ক্ষেত্রের পরিচর্যায় যেতাম। আমি বিশেষভাবে আমাদের পারিবারিক বাইবেল অধ্যয়ন এবং মণ্ডলীর বুকস্টাডিতে অংশগ্রহণ করা উপভোগ করতাম। কিন্তু ১৪ বছর বয়সে একবার যখন আমি আবাসিক বিদ্যালয়ে যাই, আমি সম্পূর্ণভাবে সত্যকে পরিত্যাগ করি। আমার সমগ্র পাঁচ বছর আবাসিক বিদ্যালয়ে থাকাকালীন সময়ে, আমি কখনও সভাগুলিতে যোগ দিইনি। কুসংসর্গের ফলস্বরূপ, আমি নেশাকর ওষুধ, ধুমপান এবং প্রচুর মদ্যপানের সাথে জড়িয়ে পড়ি।”
শিক্ষকদের প্রভাব
যে কোন বিদ্যালয়ে নীতিগতভাবে কলুষিত শিক্ষকেরা থাকতে পারেন, যারা তাদের কর্তৃত্বপদের অপব্যবহার করেন। কেউ কেউ নিষ্ঠুর এবং কর্কশ, আবার অন্যেরা তাদের ছাত্রদের যৌন কাজে ব্যবহার করে। আবাসিক বিদ্যালয়গুলিতে এইরূপ শিক্ষকদের কার্যকলাপ খুব সম্ভবত অবিবৃত থেকে যায়।
যাইহোক, অধিকাংশ শিক্ষকেরা সন্তানদের সমাজের একজন ফলপ্রসূ সদস্য হতে, তাদের চতুর্দিকের পৃথিবীর জন্য তাদেরকে উপযুক্ত করতে, মানিয়ে নিতে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য আন্তরিকভাবে চেষ্টা করেন। কিন্তু এই ক্ষেত্রেও সাক্ষী সন্তানদের জন্য আরেকটি সমস্যা রয়েছে। জগতের মূল্যবোধ সর্বদা খ্রীষ্টীয় নীতিগুলির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। যখন শিক্ষকেরা ছাত্রদের এই জগতের উপযোগী হতে উৎসাহ দেয়, যীশু বলেছিলেন যে তাঁর অনুগামীরা “জগতের নয়।”—যোহন ১৭:১৬.
সন্তানদের বাইবেলের নীতিগুলি অনুসরণের কারণে যদি সমস্যা উপস্থিত হয় সেই ক্ষেত্রে কী? যদি সন্তানেরা স্থানীয় বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করে এবং বাড়িতেই থাকে, তাহলে তারা তাদের পিতামাতাদের সাথে সেই বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করতে পারে। অপরপক্ষে, পিতামাতারা তাদের সন্তানদের পরিচালিত এবং সম্ভবত শিক্ষকের সাথে কথা বলতে পারেন। ফলস্বরূপ সমস্যা এবং ভুল বোঝাবুঝি সাধারণভাবে দ্রুত সমাধান হয়।
আবাসিক বিদ্যালয়গুলির ক্ষেত্রে এটি একটি ভিন্ন বিষয়। এইরূপ ছাত্রছাত্রীরা সর্বদা তাদের শিক্ষকদের নিয়ন্ত্রণের অধীনে থাকে। যদি সন্তানেরা খ্রীষ্টীয় নীতিগুলির স্বপক্ষে কোন পদক্ষেপ নেয়, তাহলে অবশ্যই পিতামাতাদের প্রত্যেকদিনের সমর্থন ছাড়াই তাদের তা করতে হবে। কখনও কখনও, সন্তানেরা এই পরিস্থিতিগুলির মধ্যেও ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ত থাকে। কিন্তু, প্রায়ই তারা তা করে না। সম্ভবত একজন সন্তান শিক্ষকের ইচ্ছার কাছে নতি স্বীকার করে।
যাতায়াতের বাধানিষেধ
বিশ্ববিদ্যালয়গুলির বিপরীতে যেখানে সাধারণতঃ ছাত্রছাত্রীদের তাদের খুশি মত বাইরে যাওয়া এবং আসার স্বাধীনতা থাকে, আবাসিক বিদ্যালয়গুলিতে সন্তানদের উপর যাতায়াতে বাধানিষেধ দেওয়া হয়ে থাকে। এইধরনের অধিকাংশ বিদ্যালয়ই ছাত্রছাত্রীদের রবিবার ছাড়া বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকা ত্যাগ করার অনুমতি দেয় না এবং এমনকি কিছু কিছু বিদ্যালয় তাও অনুমোদন করে না। এরু নামে ১১ বছর বয়স্ক একজন আবাসিক বিদ্যালয় ছাত্রী বলে: “বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষেরা কখনও আমাদের বাইরে সভাগুলিতে এবং কোনমতেই ক্ষেত্রের পরিচর্যায় যাওয়ার অনুমতি দেয় না। বিদ্যালয়ের ভিতরে কেবলমাত্র ক্যাথলিক এবং মুসলিমদের জন্য উপাসনার ব্যবস্থা রয়েছে। প্রত্যেক ছাত্রীকে এই দুইটির মধ্যে একটিকে বেছে নিতে হবে নতুবা শিক্ষিকা এবং ছাত্রী উভয়ের কাছ থেকে তীব্র বিরোধিতার সম্মুখীন হতে হয়। ছাত্রীদের জাতীয় সংগীত এবং গির্জার ধর্মীয় গানগুলি গাইতেও জোর করা হয়।”
যখন পিতামাতারা তাদের সন্তানদের এইধরনের বিদ্যালয়ে ভর্তি করেন, তখন তারা তাদের তরুণ সন্তানদের কোন্ ধারণায় পরিচালিত করেন? ধারণাটি স্পষ্টরূপে এই যে, জাগতিক শিক্ষা উপাসনার জন্য একত্রিত হওয়া এবং শিষ্য-করণের কাজে অংশগ্রহণ করার থেকে আরও গুরুত্বপূর্ণ—এমনকি ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ত থাকার চাইতেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।—মথি ২৪:১৪; ২৮:১৯, ২০; ২ করিন্থীয় ৬:১৪-১৮; ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫.
কোন কোন আবাসিক বিদ্যালয়ে, সাক্ষী ছাত্রছাত্রীরা একত্রে বাইবেল অধ্যয়ন করার ব্যবস্থা করে, কিন্তু তবুও এটি করা প্রায়ই কঠিন হয়ে থাকে। ব্লেসইন নামে এক তরুণী, যার বয়স ১৬ বছর, সে যে আবাসিক বিদ্যালয়ে থাকে সেটির সম্পর্কে বলে: “প্রতিদিন তথা-কথিত খ্রীষ্টানেরা প্রার্থনার জন্য একত্র হয়। আমরা সাক্ষীরা আমাদের অধ্যয়নের জন্য তাদের কাছে অনুনয় করতাম, কিন্তু উচ্চশ্রেণীর ছাত্রছাত্রীরা আমাদের বলে যে আমাদের সংগঠন স্বীকৃত নয়। তারপর তারা আমাদের তাদের সাথে প্রার্থনা করতে জোর করার চেষ্টা করে। যদি আমরা অস্বীকার করি, তারা আমাদের শাস্তি দেয়। শিক্ষকদের কাছে আবেদন করলে তা বিষয়টিকে আরও মন্দতর করে তোলে। তারা আমাদের সব ধরনের হীনকর নাম ধরে ডাকে এবং আমাদের শাস্তি দেওয়ার জন্য উচ্চশ্রেণীর ছাত্রছাত্রীদেরকে বলে।”
পৃথকরূপে গণ্য হওয়া
যখন আবাসিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা স্পষ্টরূপে যিহোবার সাক্ষী বলে পরিচিত হয়, তখন এটি তাদের সুবিধার্থে কাজ করতে পারে। বিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষেরা হয়ত বাধ্যতামূলক মিথ্যা ধর্মীয় কার্যকলাপ যা সাক্ষীদের বিশ্বাসের বিরুদ্ধে হয়ে থাকে তাতে অংশগ্রহণ করা থেকে অব্যহতি দিতে পারেন। সহছাত্রছাত্রীরা হয়ত তাদের অস্বাস্থ্যকর কার্যাবলী এবং কথাবার্তায় জড়িত করতে চেষ্টা করা থেকে বিরত থাকতে পারে। সহছাত্রছাত্রীদের এবং শিক্ষকদের সাক্ষ্য দেওয়ার সুযোগ হয়ত খুলে যেতে পারে। অধিকন্তু, যারা খ্রীষ্টীয় নীতিগুলির দ্বারা জীবনযাপন করে তারা অশ্লীল অন্যায় কাজের জন্য সন্দেহভাজন হয় না এবং তারা কখনও কখনও শিক্ষক ও সহছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে সম্মান অর্জন করে থাকে।
যাইহোক এই সমস্ত বিষয় সবসময় এইরূপ হয় না। পৃথক হিসাবে গণ্য হওয়া প্রায়ই কিশোর-কিশোরীকে, ছাত্রছাত্রী এবং একইভাবে শিক্ষক শিক্ষিকাদের কাছে তাড়না ও উপহাসের এক লক্ষ্যবস্তু করে তোলে। ইয়াংকা, ১৫ বছরের একটি ছেলে যে আবাসিক বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করে, সে বলে: “বিদ্যালয়ে, আপনি যদি একজন যিহোবার সাক্ষী বলে পরিচিত হন, আপনি আক্রমণের লক্ষ্যস্থল হবেন। যেহেতু তারা আমাদের আধ্যাত্মিক এবং নৈতিক স্থিতি সম্পর্কে জানে, তারা আমাদের ফাঁদে ফেলবার জন্য চেষ্টা করে।”
পিতামাতা হিসাবে দায়িত্ব
কোন শিক্ষক, বিদ্যালয় অথবা কলেজ যিহোবার উৎসর্গীকৃত দাস হতে সন্তানদের গড়ে তোলার দায়িত্ব পালনে সঠিকভাবে চেষ্টা করতে পারে না। এটি তাদের কাজ কিম্বা দায়িত্বও নয়। ঈশ্বরের বাক্য নির্দেশ করে যে পিতামাতারা নিজেরাই তাদের সন্তানদের আধ্যাত্মিক প্রয়োজনীয়তার প্রতি যত্ন নেবেন। পৌল লিখেছিলেন: “পিতারা, তোমরা আপন আপন সন্তানদিগকে ক্রুদ্ধ করিও না, বরং প্রভুর [“যিহোবার,” NW] শাসনে ও চেতনা প্রদানে তাহাদিগকে মানুষ করিয়া তুল।” (ইফিষীয় ৬:৪) কিভাবে পিতামাতারা এই ঐশিক পরামর্শকে প্রয়োগ করতে পারেন, যদি তাদের সন্তানেরা কোন এক আবাসিক বিদ্যালয়ে থাকে যেখানে তাদের সাথে দেখা করা সম্ভবত মাসে এক অথবা দুইবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়?
পরিস্থিতিগুলি ভিন্ন হতে পারে, কিন্তু খ্রীষ্টীয় পিতামাতারা এই অনুপ্রাণিত বক্তব্যের সাথে মিল রেখে কাজ করতে প্রাণপণ প্রচেষ্টা করবেন: “কিন্তু কেহ যদি আপনার সম্পর্কীয় লোকদের বিশেষতঃ নিজ পরিজনগণের জন্য চিন্তা না করে, তাহা হইলে সে বিশ্বাস অস্বীকার করিয়াছে, এবং অবিশ্বাসী অপেক্ষা অধম হইয়াছে।”—১ তীমথিয় ৫:৮.
কোন বিকল্প কি আছে?
পিতামাতারা কী করতে পারেন যদি প্রতীয়মান হয় যে তাদের সামনে দুইটি নির্বাচনের বিষয় রয়েছে—আবাসিক বিদ্যালয় অথবা অপর্যাপ্তভাবে সজ্জিত এক স্থানীয় বিদ্যালয়? কিছু পিতামাতারা যারা নিজেদের এইধরনের পরিস্থিতির মধ্যে দেখতে পান, তারা তাদের সন্তানদের শিক্ষার জন্য স্থানীয় বিদ্যালয়ের পরিবর্তে ব্যক্তিগত শিক্ষার ব্যবস্থা করেন। অন্যান্য পিতামাতারা তাদের সন্তানদের গৃহে নিজেরা শিক্ষা দেওয়ার জন্য সময় করে নেন।
কখনও কখনও পিতামাতারা বিশেষভাবে তাদের সন্তানেরা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়ার বয়সগত যোগ্যতা অর্জন করার আগে থেকেই উত্তমভাবে পরিকল্পনা করার দ্বারা সমস্যাগুলি এড়িয়ে থাকেন। যদি আপনার ছোট সন্তান থাকে অথবা পরিবার গঠন করার বিষয় পরিকল্পনা করছেন, তাহলে আপনার এলাকায় পর্যাপ্তরূপে সজ্জিত একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় আছে কি না তা হয়ত আপনাকে খুঁজে দেখতে হবে। যদি না থাকে, তাহলে যেখানে একটি আছে তার কাছাকাছি বসবাস করা হয়ত সম্ভবপর হতে পারে।
যেমন পিতামাতারা ভালভাবে জানেন যে, যিহোবার প্রতি সন্তানের মধ্যে প্রেম গড়ে তুলতে দক্ষতা, ধৈর্য এবং যথেষ্ট সময়ের প্রয়োজন আছে। যদি একজন সন্তান গৃহে থাকাকালে তা কঠিন হয়, তাহলে সন্তান অনেক দূরে থাকলে এটি আরও কতই না কঠিন হবে! যেহেতু একটি সন্তানের অনন্ত জীবন জড়িত আছে, পিতামাতাদের অবশ্যই গুরুতররূপে এবং প্রার্থনাপূর্বক সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে তাদের তরুণ সন্তানদের আবাসিক বিদ্যালয়ে দেওয়া উপযুক্ত অথবা ঝুঁকিপূর্ণ হবে। আবাসিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার উপকারিতার জন্য একজন সন্তানের আধ্যাত্মিক আগ্রহকে বিসর্জন দেওয়া কতই না অদূরদর্শিতা হবে! এটি একটি তুচ্ছ বস্তু রক্ষার্থে জলন্ত গৃহের দিকে ধাবমান হওয়ার মত হবে—যার পরিণাম কেবলমাত্র আগুনে শেষ হয়ে যাওয়া।
ঈশ্বরের বাক্য বলে: “সতর্ক লোক বিপদ দেখিয়া আপনাকে লুকায়, কিন্তু অবোধ লোকেরা অগ্রে গিয়া দণ্ড পায়।” (হিতোপদেশ ২২:৩) পরবর্তীকালে সংশোধন করার পরিবর্তে, মন্দ পরিস্থিতির প্রতিরোধ করা উত্তম। সেই সম্পর্কে চিন্তা করা বিজ্ঞতার কাজ হবে যদি আপনি নিজেকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘আমার সন্তানের কি আবাসিক বিদ্যালয়ে যাওয়া উচিত?’
[২৮ পৃষ্ঠার বাক্স]
আবাসিক বিদ্যালয় সম্বন্ধে যুবক সাক্ষীদের প্রতিক্রিয়া
“আবাসিক বিদ্যালয়ে সাক্ষী ছেলেমেয়েরা আধ্যাত্মিক মেলামেশা থেকে বিচ্ছিন্ন। এটি অন্যায় কাজ করার জন্য প্রচণ্ড চাপসহ খুবই প্রতিকূল পরিবেশ।”—রোটেমি, যে ১১ থেকে ১৪ বছর বয়সে আবাসিক বিদ্যালয়ে ছিল।
“খ্রীষ্টীয় সভাগুলিতে যোগ দেওয়া অস্বাভাবিকভাবে কঠিন ছিল। আমি শুধুমাত্র রবিবারে যোগ দিতে পারতাম, আর তা করতে আমাকে লুকিয়ে পালাতে হত, যখন ছাত্রেরা গির্জায় যাওয়ার জন্য লাইন দিত। আমি কখনও সুখী ছিলাম না, যেহেতু বাড়িতে থাকাকালীন আমি মণ্ডলীর সমস্ত সভাগুলিতে যোগ দিতাম আর শনিবার এবং রবিবারগুলিতে আমি ক্ষেত্র পরিচর্যার জন্য বের হতাম। বিদ্যালয় গঠনমূলক অভিজ্ঞতা ছিল না। আমি অনেক কিছু থেকে বঞ্চিত হয়েছি।”—ইষ্টের, যে শিক্ষিকার কাছ থেকে নিত্যনৈমিত্তিকভাবে বেতের মার খেত কারণ সে বিদ্যালয়ে গির্জার উপাসনায় অংশগ্রহণ করত না।
“আবাসিক বিদ্যালয়ে সহছাত্রছাত্রীদের সাক্ষ্য দেওয়া সহজ কাজ ছিল না। পৃথকরূপে গণ্য হওয়াও সহজ সাধ্য ছিল না। আমি দলটিকে অনুসরণ করতে চেয়েছিলাম। আমি সভাগুলিতে যেতে এবং ক্ষেত্রের পরিচর্যায় যোগ দিতে সমর্থ হলে সম্ভবত আমি আরও সাহসী হতে পারতাম। কিন্তু আমি তা করতে পারতাম কেবলমাত্র যখন আমি ছুটি পেতাম যা শুধুমাত্র বছরে তিনবার ছিল। যদি আপনার একটি বাতি থাকে যেটিতে পুনরায় তেল ভরা না হয়, তাহলে আলো ক্ষীণ হতে থাকবে। বিদ্যালয়ে ঠিক তাই হয়।”—লারা, যে ১১ থেকে ১৬ বছর বয়সে আবাসিক বিদ্যালয়ে থেকেছিল।
“এখন আমি আর আবাসিক বিদ্যালয়ে নেই, তাই আমি খুশি যে আমি সব সভাগুলিতে যোগ দিতে, ক্ষেত্রের পরিচর্যায় অংশগ্রহণ করতে এবং প্রতিদিনের শাস্ত্রপদটি পরিবারের অবশিষ্ট সকলের সাথে উপভোগ করতে পারি। যদিও বিদ্যালয়ে থাকাকালীন কিছু সুবিধা ছিল, কিন্তু যিহোবার সাথে আমার সম্পর্কের তুলনায় আর কিছুই অধিক গুরুত্বপূর্ণ নয়।”—নয়মী, যে আবাসিক বিদ্যালয় থেকে তাকে বের করে আনার জন্য তার বাবাকে বোঝাতে পেরেছিল।