এক ধার্মিক নতুন জগতে মুক্তি
“শান্তির বাহুল্যে আমোদ করিবে।”—গীতসংহিতা ৩৭:১১.
১, ২. (ক) আমাদের দিনে যিহোবার মুক্তি কিভাবে প্রাচীনকালের মুক্তিগুলি থেকে পৃথক হবে? (খ) কিধরনের জগতে যিহোবা তাঁর লোকেদের নিয়ে যাবেন?
যিহোবা হলেন মুক্তির ঈশ্বর। প্রাচীনকালে, তিনি বিভিন্ন পরিস্থিতিগুলিতে তাঁর লোকেদের মুক্ত করেছিলেন। সেই মুক্তি ছিল সাময়িক, কারণ ঐ ঘটনাগুলির কোনটিতেই যিহোবা শয়তানের সমগ্র জগতের বিরুদ্ধে স্থায়ীভাবে তাঁর বিচার সম্পাদন করেননি। কিন্তু আমাদের দিনে, যিহোবা তাঁর সমস্ত দাসেদের জন্য সর্বমহৎ মুক্তি সম্পন্ন করবেন। এই সময়ে তিনি পৃথিবীব্যাপী শয়তানের সমস্ত ব্যবস্থা নিশ্চিহ্ন করবেন এবং তিনি তাঁর দাসেদের একটি স্থায়ী, ধার্মিক নতুন জগতে নিয়ে আসবেন।—২ পিতর ২:৯; ৩:১০-১৩.
২ যিহোবা প্রতিজ্ঞা করেন: “ক্ষণকাল, পরে দুষ্ট লোক আর নাই, . . . কিন্তু মৃদুশীলেরা দেশের [“পৃথিবীর,” NW] অধিকারী হইবে, এবং শান্তির বাহুল্যে আমোদ করিবে।” (গীতসংহিতা ৩৭:১০, ১১) কত দিনের জন্য? “ধার্ম্মিকেরা দেশের [“পৃথিবীর,” NW] অধিকারী হইবে, তাহারা নিয়ত তথায় বাস করিবে।” (গীতসংহিতা ৩৭:২৯; মথি ৫:৫) কিন্তু, তা ঘটার পূর্বে, এই জগৎ এমন মহাক্লেশ ভোগ করবে যা আগে কখনও হয়নি।
সেই “মহাক্লেশ”
৩. যীশু কিভাবে “মহাক্লেশ”-কে বর্ণনা করেছিলেন?
৩ ১৯১৪ সালে এই জগৎ এর “শেষ কালে” প্রবেশ করেছে। (২ তীমথিয় ৩:১-৫, ১৩) আমরা এখন সেই সময়ের ৮৩তম বছরে রয়েছি এবং যখন এর শেষ প্রায় সন্নিকটে তখন যীশু যেমন ভাববাণী করেছিলেন, তেমনি নিম্নোক্ত বিষয়টি ঘটবে: “এরূপ ‘মহাক্লেশ উপস্থিত হইবে, যেরূপ জগতের আরম্ভ অবধি এ পর্য্যন্ত কখনও হয় নাই, কখনও হইবেও না’।” (মথি ২৪:২১) হ্যাঁ, এমনকি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের চেয়েও মন্দতর, যখন প্রায় পাঁচ কোটি জীবন কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। কতই না এক জগৎ-আলোড়নকারী সময় দ্রুত নিকটবর্তী হচ্ছে!
৪. “মহতী বাবিল” কেন ঈশ্বরের বিচারের সম্মুখীন হয়?
৪ “মহাক্লেশ” বিস্ময়কররূপে হঠাৎ, “এক ঘন্টার মধ্যেই” আসবে। (প্রকাশিত বাক্য ১৮:১০) এর সূচনা সমস্ত মিথ্যা ধর্মের উপর ঈশ্বরের বিচার সম্পাদনের দ্বারা চিহ্নিত হবে, যাকে ঈশ্বরের বাক্য “মহতী বাবিল” বলে আখ্যাত করে। (প্রকাশিত বাক্য ১৭:১-৬, ১৫) প্রাচীন বাবিলের প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল মিথ্যা ধর্ম। আধুনিক বাবিল তার প্রাচীন প্রতিমূর্তির মত এবং মিথ্যা ধর্মের বিশ্ব সাম্রাজ্যকে প্রতিনিধিত্ব করে। রাজনৈতিক সংগঠনগুলির সাথে আপোশ করার দ্বারা সে বেশ্যার ভূমিকা পালন করেছে। সে তাদের যুদ্ধগুলিকে সমর্থন করেছে এবং বিরোধী পক্ষের বিপরীতে সৈন্যদের আশীর্বাদ করেছে, ফলস্বরূপ একই ধর্মের লোকেরা একে অপরকে হত্যা করেছে। (মথি ২৬:৫১, ৫২; ১ যোহন ৪:২০, ২১) সে তার অনুগামীদের কলুষিত অভ্যাসগুলি উপেক্ষা করেছে এবং সত্য খ্রীষ্টানদের তাড়না করেছে।—প্রকাশিত বাক্য ১৮:৫, ২৪.
৫. কিভাবে “মহাক্লেশ” শুরু হবে?
৫ রাজনৈতিক সংগঠনগুলি যখন হঠাৎ “মহতী বাবিল”-কে আক্রমণ করবে, তখন “মহাক্লেশ” শুরু হবে। তারা “সেই বেশ্যাকে ঘৃণা করিবে, এবং তাহাকে অনাথা ও নগ্না করিবে, তাহার মাংস ভক্ষণ করিবে, এবং তাহাকে আগুনে পোড়াইয়া দিবে।” (প্রকাশিত বাক্য ১৭:১৬) অতঃপর, তার প্রাক্তন সমর্থকেরা “তাহার জন্য রোদন ও বক্ষে করাঘাত করিবে।” (প্রকাশিত বাক্য ১৮:৯-১৯) কিন্তু যিহোবার দাসেরা দীর্ঘদিন যাবৎ এটি প্রত্যাশা করে এসেছে এবং তারা বিস্ময়ে ঘোষণা করবে: “হাল্লিলূয়া, . . . কারণ যে মহাবেশ্যা আপন বেশ্যাক্রিয়া দ্বারা পৃথিবীকে ভ্রষ্ট করিত, তিনি তাহার বিচার করিয়াছেন, তাহার হস্ত হইতে আপন দাসগণের রক্তপাতের পরিশোধ লইয়াছেন।”—প্রকাশিত বাক্য ১৯:১, ২.
ঈশ্বরের দাসেরা আক্রান্ত হয়
৬, ৭. যখন “মহাক্লেশ” এর সময়ে আক্রমণ করা হবে তখন কেন যিহোবার দাসেরা নিশ্চিত থাকতে পারে?
৬ মিথ্যা ধর্মকে ধ্বংস করে, রাজনৈতিক সংগঠনগুলি যিহোবার দাসেদের প্রতি ফিরবে। শয়তান, ‘মাগোগ দেশীয় গোগ’ সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী বলে: “আমি সেই শান্তিযুক্ত লোকদের কাছে যাইব, তাহারা নির্ভয়ে বাস করিতেছে।” তাদের সহজ শিকার হিসাবে চিন্তা করে সে “বিক্রমী সৈন্যসামন্ত . . . মেঘের ন্যায় দেশ আচ্ছাদন” করে, এমনভাবে তাদের আক্রমণ করবে। (যিহিষ্কেল ৩৮:২, ১০-১৬) যিহোবার লোকেরা জানে যে এই আক্রমণ ব্যর্থ হবে কারণ তারা যিহোবাতে আস্থা রাখে।
৭ যখন ফরৌণ ও তার সৈন্যদল মনে করেছিল যে তারা ঈশ্বরের দাসেদের লোহিত সাগরে ফাঁদে ফেলেছে, তখন যিহোবা অলৌকিকভাবে তাঁর লোকেদের মুক্ত এবং মিশরের সৈন্যদের ধ্বংস করেছিলেন। (যাত্রাপুস্তক ১৪:২৬-২৮) “মহাক্লেশ” এর সময়ে, যখন জাতিগণ মনে করবে যে তারা যিহোবার লোকেদের ফাঁদে ফেলেছে, তখন তিনি পুনরায় অলৌকিকভাবে উদ্ধার করতে সক্রিয় হবেন: “সেই দিন . . . আমার কোপাগ্নি আমার নাসিকায় উঠিবে, . . . কারণ আমি নিজ অন্তর্জ্বালায় ও রোষানলে বলিয়াছি।” (যিহিষ্কেল ৩৮:১৮, ১৯) “মহাক্লেশ” এর চরম পর্যায় তখন আসন্ন হবে!
৮. যিহোবা দুষ্টদের বিনাশ করার পূর্বে কোন্ অতিপ্রাকৃত ঘটনাগুলি ঘটবে এবং কী ফলাফল হবে?
৮ “মহাক্লেশ” শুরু হওয়ার একটি নির্দিষ্ট পর্যায়ে, কিন্তু এই জগতের অবশিষ্ট অংশের উপরে যিহোবা তাঁর বিচার সম্পাদন করার পূর্বে, অতিপ্রাকৃত ঘটনাগুলি ঘটবে। তাদের উপর যে প্রভাব আসবে তা লক্ষ্য করুন: “তখন মনুষ্যপুত্ত্রের চিহ্ন আকাশে দেখা যাইবে, আর তখন পৃথিবীর সমুদয় গোষ্ঠী বিলাপ করিবে, এবং ‘মনুষ্যপুত্ত্রকে আকাশীয় মেঘরথে পরাক্রম ও মহা প্রতাপে আসিতে’ দেখিবে।” (মথি ২৪:২৯, ৩০) “সূর্য্যে, চন্দ্রে ও নক্ষত্রগণে নানা চিহ্ন প্রকাশ পাইবে, . . . ভয়ে, এবং ভূমণ্ডলে যাহা যাহা ঘটবে তাহার আশঙ্কায়, মানুষের প্রাণ উড়িয়া যাইবে।”—লূক ২১:২৫, ২৬.
“তোমাদের মুক্তি সন্নিকট”
৯. যখন অতিপ্রাকৃত ঘটনাগুলি ঘটবে তখন কেন যিহোবার দাসেরা ‘মাথা তুলতে’ পারে?
৯ সেই নির্দিষ্ট সময়ে, লূক ২১:২৮ পদের ভবিষ্যদ্বাণীটি প্রযোজ্য হবে। যীশু বলেছিলেন: “এ সকল ঘটনা আরম্ভ হইলে তোমরা ঊর্দ্ধ্বদৃষ্টি করিও, মাথা তুলিও, কেননা তোমাদের মুক্তি সন্নিকট।” ঈশ্বরের শত্রুরা ভয়ে কাঁপতে থাকবে কারণ তারা জানবে, যে অতিপ্রাকৃত ঘটনাগুলি ঘটছে তা যিহোবার কাছ থেকে আসছে। কিন্তু যিহোবার দাসেরা আনন্দ করবে কারণ তারা জানে যে তাদের মুক্তি সন্নিকট।
১০. ঈশ্বরের বাক্য কিভাবে “মহাক্লেশ” এর চরম পর্যায় সম্বন্ধে বর্ণনা করে?
১০ তখন যিহোবা শয়তানের ব্যবস্থার উপর মৃত্যুসুলভ আঘাত আনবেন: “আমি মহামারী ও রক্ত দ্বারা বিচারে তাহার সহিত বিবাদ করিব, এবং তাহার উপরে, তাহার সকল সৈন্যদলের উপরে . . . প্লাবনকারী ধারাসম্পাত ও বড় বড় করকা, অগ্নি ও গন্ধক বর্ষণ করিব। . . . তাহাতে তাহারা জানিবে যে, আমিই সদাপ্রভু।” (যিহিষ্কেল ৩৮:২২, ২৩) শয়তানের ব্যবস্থার সকল চিহ্ন ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে যাবে। ঈশ্বর-উপেক্ষাকারী লোকেদের সমগ্র মানব সমাজটি সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হবে। সেটিই হচ্ছে হর্মাগিদোন, “মহাক্লেশ” এর চরম পর্যায়।—যিরমিয় ২৫:৩১-৩৩; ২ থিষলনীকীয় ১:৬-৮; প্রকাশিত বাক্য ১৬:১৪, ১৬; ১৯:১১-২১.
১১. যিহোবার দাসেরা কেন “মহাক্লেশ” এর মধ্য দিয়ে মুক্তি পাবে?
১১ পৃথিবীব্যাপী লক্ষ লক্ষ যিহোবার উপাসকেরা “মহাক্লেশ” এর মধ্য দিয়ে মুক্তি পাবে। এরাই “প্রত্যেক জাতির ও বংশের ও প্রজাবৃন্দের ও ভাষার” মধ্যে থেকে বেরিয়ে এসে “বিস্তর লোক” গঠন করেছে। কেন তারা এইরূপ একটি অভূতপূর্ব উপায়ে মুক্তি পাবে? কারণ তারা “দিবারাত্র” যিহোবার “আরাধনা করে।” তাই তারা এই জগতের শেষ থেকে রক্ষা পায় এবং এক ধার্মিক নতুন জগতে প্রবেশ করে। (প্রকাশিত বাক্য ৭:৯-১৫) এইভাবে, তারা যিহোবার প্রতিজ্ঞার পরিপূর্ণতা দেখে: “সদাপ্রভুর অপেক্ষায় থাক, তাঁহার পথে চল; তাহাতে তিনি তোমাকে দেশের অধিকার ভোগের জন্য উন্নত করিবেন; দুষ্টগণের উচ্ছেদ হইলে তুমি তাহা দেখিতে পাইবে।”—গীতসংহিতা ৩৭:৩৪.
নতুন জগৎ
১২. হর্মাগিদোনে রক্ষাপ্রাপ্তেরা কিসের জন্য প্রত্যাশা করতে পারে?
১২ সেই সময়টি কতই না রোমাঞ্চকর হবে—দুষ্টতার উচ্ছেদ এবং সমগ্র মানব ইতিহাসের সর্বাপেক্ষা গৌরবময় যুগের সূচনা! (প্রকাশিত বাক্য ২০:১-৪) হর্মাগিদোনে রক্ষাপ্রাপ্তেরা ঈশ্বরের তৈরি এক উজ্জ্বল, পরিচ্ছন্ন সভ্যতায়, এক নতুন জগতে, এমন এক পৃথিবীতে যা পরমদেশে রূপান্তরিত হবে সেখানে প্রবেশ করতে পারায় যিহোবার কাছে কতই না কৃতজ্ঞ হবে! (লূক ২৩:৪৩) আর কোনক্রমেই তাদের কখনও মৃত্যু বরণ করতে হবে না! (যোহন ১১:২৬) বস্তুতপক্ষে, তখন থেকে যিহোবা যতদিন থাকবেন ততদিন পর্যন্ত তাদের বেঁচে থাকার বিস্ময়কর, চমৎকার প্রত্যাশা থাকবে!
১৩. যীশু পৃথিবীতে আরোগ্যকরণের যে কাজ আরম্ভ করেছিলেন তা কিরূপে পুনরায় করবেন?
১৩ যীশু, যাঁকে যিহোবা স্বর্গীয় রাজা হিসাবে নিযুক্ত করেছেন, তিনি অলৌকিক আশীর্বাদগুলি তত্ত্বাবধান করবেন যা মুক্তিপ্রাপ্তেরা উপভোগ করবে। পৃথিবীতে থাকাকালে, তিনি অন্ধদের চক্ষু এবং বধিরদের কর্ণ খুলেছিলেন এবং “সর্ব্বপ্রকার রোগ ও সর্ব্বপ্রকার ব্যাধি” আরোগ্য করেছিলেন। (মথি ৯:৩৫; ১৫:৩০, ৩১) নতুন জগতে, তিনি সেই মহা আরোগ্য কাজ পুনরায় শুরু করবেন, কিন্তু তা হবে বিশ্বব্যাপী মাত্রায়। ঈশ্বরের প্রতিনিধি হিসাবে, তিনি এই প্রতিজ্ঞাটি পরিপূর্ণ করবেন: “[ঈশ্বর] তাহাদের সমস্ত নেত্রজল মুছাইয়া দিবেন; এবং মৃত্যু আর হইবে না; শোক বা আর্ত্তনাদ বা ব্যথাও আর হইবে না; কারণ প্রথম বিষয় সকল লুপ্ত হইল।” (প্রকাশিত বাক্য ২১:৪) পুনরায় আর কখনও চিকিৎসক অথবা অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্নকারীর প্রয়োজন হবে না।—যিশাইয় ২৫:৮; ৩৩:২৪.
১৪. যিহোবার যে দাসেরা ইতিমধ্যেই মারা গিয়েছে তাদের জন্য কোন্ মুক্তি আসবে?
১৪ এছাড়া ঈশ্বরের সেই বিশ্বস্ত দাসেরাও মুক্ত হবে যারা অতীতে মারা গিয়েছিল। নতুন জগতে, তারা কবরের কবল থেকে উদ্ধার পাবে। যিহোবা নিশ্চয়তা দেন: “ধার্ম্মিক অধার্ম্মিক উভয় প্রকার লোকের পুনরুত্থান হইবে।” (প্রেরিত ২৪:১৫) সম্ভবত, “ধার্ম্মিক” ব্যক্তিরা প্রথমে পুনরুত্থিত হবে এবং পরমদেশ বিস্তৃত করার কাজে অংশ গ্রহণ করবে। বহু পূর্বের সেই সমস্ত বিশ্বস্ত মৃত ব্যক্তিরা যারা এখন জীবনে ফিরে এসেছেন তাদের কাছ থেকে অভিজ্ঞতাগুলি শোনা হর্মাগিদোনে রক্ষাপ্রাপ্তদের জন্য কতই না মনোরম হবে!—যোহন ৫:২৮, ২৯.
১৫. নতুন জগতে অভিজ্ঞতা করা হবে এমন কিছু অবস্থার বর্ণনা দিন।
১৫ সকলে যারা জীবিত থাকবে তারা তখন গীতরচক, যিহোবা সম্পর্কে যা বলেছিলেন তা অভিজ্ঞতা করবে: “তুমিই আপন হস্ত মুক্ত করিয়া থাক, সমুদয় প্রাণীর বাঞ্ছা পূর্ণ করিয়া থাক।” (গীতসংহিতা ১৪৫:১৬) আর ক্ষুধা থাকবে না: পৃথিবী ভারসাম্যপূর্ণ বাস্তুতন্ত্রসহ পুনর্স্থাপিত হবে এবং প্রচুররূপে উৎপাদন করবে। (গীতসংহিতা ৭২:১৬) আর গৃহহীন লোকেরা থাকবে না: “লোকেরা গৃহ নির্ম্মাণ করিয়া তাহার মধ্যে বসতি করিবে” এবং প্রত্যেক জন “আপন আপন দ্রাক্ষালতার ও আপন আপন ডুমুরবৃক্ষের তলে” বসবে “কেহ তাহাদিগকে ভয় দেখাইবে না।” (যিশাইয় ৬৫:২১, ২২; মীখা ৪:৪) আর ভয় থাকবে না: কোন যুদ্ধ, দৌরাত্ম্য অথবা অপরাধ থাকবে না। (গীতসংহিতা ৪৬:৮, ৯; হিতোপদেশ ২:২২) “সমস্ত পৃথিবী শান্ত ও সুস্থির হইয়াছে, সকলে উচ্চৈঃস্বরে আনন্দগান করিতেছে।”—যিশাইয় ১৪:৭.
১৬. নতুন জগতে কেন ধার্মিকতা পরিব্যাপ্ত হবে?
১৬ নতুন জগতে, শয়তানের অপপ্রচারের মাধ্যমকে দূর করা হবে। পরিবর্তে, “জগন্নিবাসীরা ধার্ম্মিকতা শিক্ষা করিবে।” (যিশাইয় ২৬:৯; ৫৪:১৩) বছরের পর বছর হিতকর আধ্যাত্মিক নির্দেশনার দ্বারা “সমুদ্র যেমন জলে আচ্ছন্ন, তেমনি পৃথিবী সদাপ্রভু-বিষয়ক জ্ঞানে পরিপূর্ণ হইবে।” (যিশাইয় ১১:৯) মানবজাতির মধ্যে গঠনমূলক চিন্তাধারা এবং কাজগুলি পরিব্যাপ্ত হবে। (ফিলিপীয় ৪:৮) কল্পনা করুন, অপরাধ, অহঙ্কার, ঈর্ষা থেকে মুক্ত লোকেদের এক বিশ্বব্যাপী সমাজ—এক আন্তর্জাতিক ভ্রাতৃসমাজ যেখানে সকলে ঈশ্বরের আত্মার ফল উৎপন্ন করে। বস্তুতপক্ষে, এমনকি এখনই বিরাট জনতা এইরূপ গুণাবলিগুলি উৎপন্ন করছে।—গালাতীয় ৫:২২, ২৩.
এত বিলম্ব কেন?
১৭. দুষ্টতা শেষ করার পূর্বে কেন যিহোবা এত বিলম্ব করছেন?
১৭ কিন্তু, কেন যিহোবা দুষ্টতা দূর এবং তাঁর লোকেদের মুক্ত করে নতুন জগতে প্রবেশ করাতে এত বিলম্ব করেছেন? যা সম্পাদিত হওয়ার ছিল তা বিবেচনা করুন। যিহোবার সার্বভৌমত্বকে প্রতিপাদন করা, তাঁর শাসন করার অধিকার হল সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ। যথেষ্ট সময় অতিক্রান্ত হতে অনুমোদন করার দ্বারা তিনি নিঃসন্দেহে প্রদর্শন করেছেন যে তাঁর সার্বভৌমত্ব ব্যতীত মানব শাসন এক চরম ব্যর্থতা হিসাবে প্রমাণিত হয়েছে। (যিরমিয় ১০:২৩) সুতরাং যিহোবা এখন মানব শাসনের স্থানে খ্রীষ্টের অধীনে তাঁর স্বর্গীয় রাজ্য স্থাপনে সম্পূর্ণরূপে ন্যায্য প্রতিপন্ন হন।—দানিয়েল ২:৪৪; মথি ৬:৯, ১০.
১৮. কখন অব্রাহামের বংশধরেরা কনান দেশ অধিকার করেছিল?
১৮ এই সমস্ত শতাব্দীগুলি ধরে যা ঘটেছে তা অব্রাহামের সময়ে যা ঘটেছিল তার অনুরূপ। যিহোবা অব্রাহামকে বলেছিলেন যে তার বংশধরেরা কনান দেশ অধিকার করবে—কিন্তু চারশত বছরের মধ্যে তা হয়নি “কেননা ইমোরীয়দের অপরাধ এখনও সম্পূর্ণ হয় নাই।” (আদিপুস্তক ১২:১-৫; ১৫:১৩-১৬) এখানে ‘ইমোরীয়’ (এক প্রভাবশালী বংশ) শব্দটি সম্ভবত সমগ্র কনানের লোকেদের চিত্রিত করে। তাই যিহোবা তাঁর লোকেদের কনান অধিকার করতে সমর্থ করার পূর্বে প্রায় চার শতাব্দী কেটে যায়। ইত্যবসরে যিহোবা কনানের জাতিগুলিকে তাদের সমাজকে গড়ে তুলতে দেন। এর ফল কী হয়?
১৯, ২০. কনানীয়রা কিধরনের সমাজগুলি গড়ে তুলেছিল?
১৯ হেন্রী এইচ. হ্যালি প্রণীত বাইবেলের পুস্তিকা (ইংরাজি), মন্তব্য করে যে মগিদ্দোতে প্রত্নতত্ত্ববিদেরা বালের স্ত্রী দেবী, অষ্টারোতের একটি মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পেয়েছিলেন। তিনি লেখেন: “এই মন্দির থেকে অল্প কিছু দূরেই একটি কবরস্থান ছিল, যেখানে শিশুদের যাদের এই মন্দিরে বলি দেওয়া হয়েছিল তাদের দেহাবশেষ সহ অনেক বড় মুখ বিশিষ্ট বোতল পাওয়া গিয়েছিল . . . বাল এবং অষ্টারোতের ভাববাদীরা ছিল ছোট শিশুদের নিযুক্ত হত্যাকারী।” “অপর একটি ভয়ঙ্কর অভ্যাস ছিল [যেটিকে] তারা ‘ভিত্তি বলিদান’ বলত। যখন একটি গৃহ নির্মাণ করা হত, তখন একটি শিশুকে বলিদান দেওয়া হত এবং তার দেহকে দেওয়ালে গেঁথে দেওয়া হত।”
২০ হ্যালি মন্তব্য করেন: “বাল, অষ্টারোৎ এবং অন্যান্য কনানীয় দেবতাদের উপাসনায় অধিক অসংযত উচ্ছৃঙ্খল উৎসব বিদ্যমান ছিল; তাদের মন্দিরগুলি অনৈতিকতার কেন্দ্র ছিল। . . . চরিত্রহীনতায় লিপ্ত হয়ে কনানীয়রা উপাসনা করত . . . আর তারপর, তাদের প্রথম-জাত সন্তানদের হত্যা করে, এই একই দেবতাদের কাছে বলিরূপে উৎসর্গ করত। বৃহৎ আকারে, কনান দেশ জাতীয় পর্যায়ে সদোম ও ঘমোরার রূপ ধারণ করেছিল বলে মনে হয়। . . . এইরূপ জঘন্য নোংরা এবং বর্বর সভ্যতার কি আরও অধিক অস্তিত্বশীল থাকার অধিকার ছিল? . . . যে প্রত্নতত্ত্ববিদেরা কনান শহরের ধ্বংসস্তূপ খনন করেন তারা চিন্তা করেন যে কেন ঈশ্বর তাদের যে সময় ধ্বংস করেন তার আগে করেননি।”—তুলনা করুন ১ রাজাবলি ২১:২৫, ২৬.
২১. কনানীয়দের এবং আমাদের দিনের পরিস্থিতির মধ্যে কী সাদৃশ্য রয়েছে?
২১ ইমোরীয়দের দুষ্টতা “সম্পূর্ণ” হয়েছিল। তাই যিহোবা তখন তাদের সম্পূর্ণ ধ্বংস করার জন্য পূর্ণরূপে ন্যায্য ছিলেন। আজকের দিনেও একই বিষয় প্রযোজ্য। এই জগৎ দৌরাত্ম্য, অনৈতিকতা এবং ঈশ্বরের আইন অমান্যের দ্বারা পরিপূর্ণ। আর যেহেতু প্রাচীন কনানের বীভৎস শিশু বলিদানে আমরা যথার্থভাবে আতঙ্কিত হই, ঠিক সেই সময় এই জগতের যুদ্ধগুলিতে কোটি কোটি যুবক লোকেদের বলিদান সম্বন্ধে কী বলা যায়, যা কনানের যে কোন কিছুর চেয়ে আরও অধিক মন্দ? নিশ্চিতভাবে, যিহোবা এখন এই দুষ্ট ব্যবস্থার শেষ নিয়ে আসার ক্ষেত্রে পূর্ণরূপে ন্যায্য প্রতিপন্ন হন।
আরও ভিন্ন কিছু সম্পন্ন করা
২২. আমাদের সময়ে যিহোবার ধৈর্যের মাধ্যমে কী সম্পন্ন হয়েছে?
২২ এই শেষ কালে যিহোবার ধৈর্য আরও কিছু সম্পন্ন করছে। তিনি বিরাট জনতাকে একত্রিত হতে এবং শিক্ষিত হতে সময় দিচ্ছেন, যারা ইতিমধ্যেই সংখ্যায় পঞ্চাশ লক্ষেরও অধিক। যিহোবার পরিচালনাধীনে তারা একটি প্রগতিশীল সংগঠনে পরিণত হয়েছে। পুরুষ, নারী এবং যুবক-যুবতীরা অন্যান্যদের বাইবেলের সত্যগুলি শিক্ষা দিতে প্রশিক্ষিত হচ্ছে। তাদের সভাগুলি এবং বাইবেল প্রকাশনাদির মাধ্যমে, তারা ঈশ্বরের প্রেমময় পন্থাগুলি সম্বন্ধে শেখে। (যোহন ১৩:৩৪, ৩৫; কলসীয় ৩:১৪; ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫) এছাড়াও, “সুসমাচার” এর প্রচারকে সমর্থন করার জন্য তারা নির্মাণ-কৌশল, বৈদ্যুতিক, মুদ্রণ এবং অন্যান্য ক্ষেত্রগুলিতে তাদের দক্ষতা গড়ে তুলছে। (মথি ২৪:১৪) সম্ভবত এইরূপ শিক্ষা এবং নির্মাণ দক্ষতা নতুন জগতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হবে।
২৩. এই সময়ে বেঁচে থাকা কেন এক সুযোগস্বরূপ?
২৩ হ্যাঁ, আজকের দিনে যিহোবা তাঁর দাসেদের প্রস্তুত করছেন, যাতে করে শীঘ্রই তারা “মহাক্লেশ” অতিক্রম করে এক ধার্মিক নতুন জগতে প্রবেশ করতে পারে। তখন সেখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে শয়তান ও তাঁর দুষ্ট জগৎ, কোন অসুস্থতা, দুঃখ এবং মৃত্যু থাকবে না। এইরূপে প্রবল উদ্দীপনা এবং আনন্দ নিয়ে ঈশ্বরের লোকেরা একটি পরমদেশ নির্মাণের আনন্দময় কাজ এগিয়ে নিয়ে যাবে, যেখানে প্রত্যেকটি দিন হবে এক তীব্র ‘আমোদের।’ যুগের এই চরম পর্যায়ে বেঁচে থাকা, যিহোবাকে জানা ও সেবা করা এবং শীঘ্রই আমরা ‘আমাদের মাথা তুলব, কেননা আমাদের মুক্তি সন্নিকট’ তা উপলব্ধি করার জন্য আমরা কতই না সুযোগপ্রাপ্ত!—লূক ২১:২৮; গীতসংহিতা ১৪৬:৫.
পুনরালোচনার প্রশ্নগুলি
◻ “মহাক্লেশ” কী এবং এটি কিভাবে শুরু হবে?
◻ যিহোবার দাসেদের উপর গোগের আক্রমণ কেন ব্যর্থ হবে?
◻ “মহাক্লেশ” কিভাবে শেষ হবে?
◻ নতুন জগৎ কোন্ অপূর্ব উপকারগুলি প্রদান করবে?
◻ এই ব্যবস্থার শেষ আনার পূর্বে কেন যিহোবা এত বিলম্ব করছেন?
[১৬ পৃষ্ঠার চিত্র]
সমগ্র পৃথিবী এক পরমদেশে রূপান্তরিত হবে