আপনি কি আধ্যাত্মিকভাবে উত্তম আহার করেন?
“মানুষের সবচেয়ে মৌলিক চাহিদা হচ্ছে এক উত্তম খাদ্যতালিকা। . . . পর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্য ছাড়া, আমরা মারা যাব।”
—খাদ্য ও পুষ্টি (ইংরাজি)।
সেই মূল সত্যটিই, ক্ষুধায় মৃতপ্রায় পুরুষ, মহিলা এবং শিশুদের যারা এই “মানুষের সবচেয়ে মৌলিক চাহিদা” থেকে বঞ্চিত, তাদের চেহারার জীবন্ত চিত্র তুলে ধরে। অন্যেরা কিছু মাত্রায় এই চাহিদা মেটাতে সক্ষম, কিন্তু তা সত্ত্বেও তারা গুরুতরভাবে পুষ্টিহীনতায় রয়েছে। তথাপি, অনেকে যারা ভাল খেতে পায়, প্রায়ই অস্বাস্থ্যকর খাদ্যগ্রহণেই নিজেদের পরিতৃপ্ত রাখে, যা সামান্যই প্রকৃত পুষ্টি যোগায়। স্বাস্থ্যকর আহার (ইংরাজি) জানায়, “খাদ্য, এটি আমাদের সত্বাধিকারের অন্যতম সর্বাপেক্ষা অপব্যবহার বলে মনে হয়।”
আধ্যাত্মিক খাদ্যের ক্ষেত্রে এটি একটু ভিন্ন—ঈশ্বরের বাক্য বাইবেলে সত্য পাওয়া যায়। এমনকি কোন কোন লোকের সবচেয়ে মৌলিক আধ্যাত্মিক পুষ্টির অভাব রয়েছে; তারা আধ্যাত্মিকভাবে অনাহারে থাকে। আবার অন্যেরা প্রাপ্তিসাধ্য আধ্যাত্মিক খাদ্যের সুযোগ গ্রহণে স্বাভাবিকভাবেই অবহেলা করে। আপনার সম্বন্ধে কী? আপনি কি ব্যক্তিগতরূপে আধ্যাত্মিকভাবে উত্তম আহার করেন? অথবা এটি কি এমন হতে পারে যে আপনি আধ্যাত্মিক পুষ্টি থেকে নিজেকে বঞ্চিত করছেন? এই ব্যাপারে আমাদের নিজেদের ক্ষেত্রে সৎ হওয়া গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এমনকি আমাদের জন্য দৈহিক খাদ্যের চেয়ে আধ্যাত্মিক খাদ্যের আরও বেশি প্রয়োজন।—মথি ৪:৪.
আধ্যাত্মিক বৃদ্ধির জন্য খাদ্য
খাদ্য ও পুষ্টি, একটি পাঠ্যপুস্তক যা এক সঠিক খাদ্যতালিকা গ্রহণ করার গুরুত্ব সম্বন্ধে আলোচনা করে এবং উত্তম আহারের পক্ষে এটি আমাদের তিনটি কারণ যুগিয়ে থাকে। একটি হচ্ছে, “বৃদ্ধি সাধন এবং ক্ষয়প্রাপ্ত ও জীর্ণ দেহ কোষগুলির মঙ্গল সাধন করার জন্য” আমাদের খাদ্যের প্রয়োজন। আপনি কি জানেন যে আপনার জীবনের প্রতিটি দিনে, আপনার এক লক্ষ কোটি দেহকোষগুলি অচল হয়ে পড়ে এবং তা স্থানান্তরণের প্রয়োজন হয়? সঠিক বৃদ্ধি এবং দৈহিক রক্ষণাবেক্ষণের জন্য উত্তম খাদ্যের প্রয়োজন।
এটি আধ্যাত্মিকভাবেও সত্য। যখন প্রেরিত পৌল ইফিষে স্থিত মণ্ডলীর প্রতি লিখেছিলেন, উদাহরণস্বরূপ, তিনি জোর দিয়েছিলেন কিভাবে প্রত্যেক খ্রীষ্টানের একজন ‘সিদ্ধ পুরুষ’ হওয়ার জন্য উত্তম আধ্যাত্মিক খাদ্যের প্রয়োজন। (ইফিষীয় ৪:১১-১৩) যখন আমরা সঠিকভাবে নিজেদের জন্য পুষ্টিকর আধ্যাত্মিক খাদ্য গ্রহণ করি, তখন আমরা আর দুর্বল শিশুদের ন্যায় থাকি না যারা নিজেদের রক্ষা করতে অসমর্থ ও সর্বপ্রকার বিপদের শিকার হয়ে পড়ে। (ইফিষীয় ৪:১৪) বরঞ্চ, আমরা সবল প্রাপ্তবয়স্ক রূপে গড়ে উঠি এবং বিশ্বাসের জন্য এক কঠিন লড়াই করতে সক্ষম হই, কারণ আমরা “বিশ্বাসের . . . বাক্যে পোষিত।”—১ তীমথিয় ৪:৬.
আপনার ক্ষেত্রে কি তা সত্য? আপনি কি আধ্যাত্মিকভাবে বেড়ে উঠেছেন? অথবা আপনি কি এখনও আধ্যাত্মিকভাবে একজন শিশুর মত—দুর্বল, সম্পূর্ণরূপে অন্যদের উপর নির্ভরশীল এবং পূর্ণরূপে খ্রীষ্টীয় দায়িত্বগুলি গ্রহণ করতে অসমর্থ? বোধগম্যভাবে, আমাদের মধ্যে খুব কম জনই সর্বসম্মতভাবে স্বীকার করবে যে আমরা আধ্যাত্মিকভাবে একজন শিশুর মত, কিন্তু নিষ্কপট আত্ম-পরীক্ষা যথার্থ। প্রথম শতাব্দীতে কোন কোন অভিষিক্ত খ্রীষ্টানেরা তদ্রূপ ছিল। যদিও তাদের নিজেদের “শিক্ষক” হওয়া, ঈশ্বরের বাক্য যা বলে তা অন্যদের শেখাতে ইচ্ছুক ও সমর্থ হওয়া উচিত ছিল, প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “কেহ যে তোমাদিগকে ঈশ্বরীয় বচনকলাপের আদিম কথার অক্ষরমালা শিক্ষা দেয়, ইহা তোমাদের পক্ষে পুনর্ব্বার আবশ্যক হইয়াছে; এবং তোমরা এমন লোক হইয়া পড়িয়াছ, যাহাদের দুগ্ধে প্রয়োজন, কঠিন খাদ্যে নয়।” আপনি যদি আধ্যাত্মিকভাবে বেড়ে উঠতে চান, উত্তম ও কঠিন আধ্যাত্মিক খাদ্যের জন্য আকাঙ্ক্ষা গড়ে তুলুন। আধ্যাত্মিক শিশু খাদ্যে সন্তুষ্ট হবেন না!—ইব্রীয় ৫:১২.
এছাড়াও আমরা এক বিপদসংকুল জগতে প্রতিদিন পরীক্ষাগুলির দ্বারা যে কোন ক্ষতির সম্মুখীন হই, তা মেরামত করার জন্য আমাদের এই কঠিন আধ্যাত্মিক খাদ্যের প্রয়োজন। সেগুলি আমাদের আধ্যাত্মিক শক্তিকে নিস্তেজ করে দিতে পারে। কিন্তু ঈশ্বর সেই শক্তিকে পুনর্জীবিত করতে পারেন। পৌল বলেছিলেন: “আমরা নিরুৎসাহ হই না, কিন্তু আমাদের বাহ্য মনুষ্য যদ্যপি ক্ষীণ হইতেছে, তথাপি আন্তরিক মনুষ্য দিন দিন নূতনীকৃত হইতেছে।” (২ করিন্থীয় ৪:১৬) আমরা “দিন দিন নূতনীকৃত” হই কিভাবে? অংশতঃ, ব্যক্তিগত এবং দলগতভাবে শাস্ত্রীয় ও বাইবেল-ভিত্তিক প্রকাশনাদি অধ্যয়নের মাধ্যমে ঈশ্বরের বাক্য থেকে নিয়মিতভাবে খাদ্য গ্রহণের দ্বারা তা হয়ে থাকে।
আধ্যাত্মিক শক্তির জন্য খাদ্য
এছাড়াও “তাপ ও শক্তি উৎপন্ন করতে” খাদ্যের প্রয়োজন হয়। খাদ্য আমাদের দেহকে সুষ্ঠভাবে কার্য করার জন্য জ্বালানী সরবরাহ করে। যদি আমরা অল্প পরিমাণে আহার করি, আমরা সামান্যই শক্তি পাব। আমাদের খাদ্যতালিকাতে লৌহের অভাব, আমাদের মধ্যে ক্লান্তি এবং অবসন্নতার সৃষ্টি করতে পারে। কখনও কখনও যখন আধ্যাত্মিক কাজের ক্ষেত্র আসে তখন কি আপনি এইরকম অনুভব করেন? একজন খ্রীষ্টান হওয়ায় যে দায়িত্বগুলি আসে সেগুলি সম্পাদন করতে আপনার কি কোন অসুবিধা আছে? কেউ কেউ যারা যীশু খ্রীষ্টের অনুগামী বলে দাবি করে তারা আরও ভাল করার ক্ষেত্রে পরিশ্রান্ত হয়ে পড়ে আর খ্রীষ্টীয় কাজগুলির জন্য মানসিক শক্তির অভাব বোধ করে। (যাকোব ২:১৭, ২৬) যদি আপনি মনে করেন এটি আপনার ক্ষেত্রে সত্য, তাহলে সমাধান হয়ত বৃহত্তররূপে আপনার আধ্যাত্মিক খাদ্যতালিকার উন্নতি করা অথবা আপনার আধ্যাত্মিক খাদ্য গ্রহণকে বৃদ্ধি করার মধ্যে শায়িত আছে।—যিশাইয় ৪০:২৯-৩১; গালাতীয় ৬:৯.
অল্প পরিমাণে আধ্যাত্মিক আহারের অভ্যাস গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বোকামি করবেন না। শতাব্দীগুলি ধরে শয়তান যে সর্বাধিক প্রবঞ্চণার কাজে নিয়োজিত রয়েছে, সেটি হল লোকেদের এই বিষয়ে প্রত্যয়িত করা যে তাদের জন্য বাইবেল পড়া এবং এর থেকে যথার্থ জ্ঞান গ্রহণ করার কোন প্রয়োজন নেই। শত্রু নগরগুলি দখলের জন্য আক্রমণকারী সৈন্যদের দ্বারা ব্যবহৃত এক বহু-প্রাচীন কৌশলকে সে ব্যবহার করে—তাদেরকে খাদ্য থেকে বঞ্চিত এবং অনাহারে রেখে আত্মসমর্পণে বাধ্য করা। কিন্তু সে এই কৌশলকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়েছে। সে তাদের প্রবঞ্চনা করে, অনাহারের মধ্যে “অবরোধ” করে রাখে, সেই সময় যখন তারা প্রচুর স্বাস্থ্যকর আধ্যাত্মিক খাদ্যের দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকে। কোন আশ্চর্যের বিষয় নয় যে বহু লোকেই তার আক্রমণের শিকারে পরিণত হয়!—ইফিষীয় ৬:১০-১৮.
আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্যের জন্য খাদ্য
খাদ্য ও পুষ্টি বলে, আমাদের খাদ্যের প্রায়োজন সম্পর্কে তৃতীয় কারণটি হল, “দেহের স্বাস্থ্যকে নিয়ন্ত্রিত করা . . . এবং রোগ প্রতিরোধ করা।” উত্তম খাদ্যের দ্বারা স্বাস্থ্যের উপকারিতা সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যক্ষ হয় না। আমরা যখন এক উত্তম ভোজ শেষ করি, আমরা কদাচিৎ চিন্তা করি যে ‘আমার হৃদপিণ্ড (অথবা আমার যকৃতদ্বয় অথবা আমার পেশী ও এইরূপ অন্যান্য অংশ) বিপুল পরিমাণে উপকৃত হয়েছে।’ তথাপি, এক বিস্তৃত কাল পর্যন্ত খাদ্য ছাড়া থাকতে চেষ্টা করলে, আপনার স্বাস্থ্যের পরিণতি স্পষ্টতঃ প্রতীয়মান হবে। কী পরিণতি? চিকিৎসা সংক্রান্ত একটি সহায়ক পুস্তক বলে, “অতি সাধারণ প্রতিচ্ছবি হচ্ছে নেতিবাচক: স্বাস্থ্যবান হওয়ায় ব্যর্থতা, সামান্য রোগসংক্রমণকে প্রতিরোধ করতে ব্যর্থতা, শক্তি অথবা উদ্দীপনার অভাব।” এক তুলনামূলক আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্যহীনতা যা কিছু সময়ের জন্য প্রাচীন ইস্রায়েলীয়দের সংক্রামিত করেছিল। তাদের সম্পর্কে যিশাইয় ভাববাদী বলেছিলেন: “সমুদয় মস্তক ব্যথিত ও সমুদয় হৃদয় দুর্ব্বল হইয়াছে। পায়ের তালু অবধি মস্তক পর্য্যন্ত কোন স্থানে স্বাস্থ্য নাই।”—যিশাইয় ১:৫, ৬.
উত্তম আধ্যাত্মিক খাদ্য আমাদের এইরূপ আধ্যাত্মিক দুর্বলতা এবং আধ্যাত্মিক রোগসংক্রমণের পরিণতি থেকে প্রতিরোধ করার ক্ষমতা প্রদান করে। ঈশ্বরের কাছ থেকে জ্ঞান আমাদের আধ্যাত্মিকভাবে এক উত্তম অবস্থা বজায় রাখতে সাহায্য করে—যদি আমরা এটি গ্রহণ করি! যীশু খ্রীষ্ট এর উপর মন্তব্য করেছিলেন যে কিভাবে তাঁর দিনে অধিকাংশ লোকেরা তাদের পূর্বপুরুষদের উপযুক্ত আধ্যাত্মিক খাদ্য গ্রহণে অবহেলা করার বিষয় থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেনি। তিনি যে সত্য শিক্ষা দিচ্ছিলেন তারাও সেগুলি গ্রহণ করতে অগ্রাহ্য করেছিল। এর পরিণাম কী হয়? যীশু বলেছিলেন: “এই লোকদের হৃদয় অসাড় হইয়াছে, শুনিতে তাহাদের কর্ণ ভারী হইয়াছে, ও তাহারা চক্ষু মুদ্রিত করিয়াছে, পাছে তাহারা চক্ষে দেখে, আর কর্ণে শুনে, হৃদয়ে বুঝে, এবং ফিরিয়া আইসে, আর আমি তাহাদিগকে সুস্থ করি।” (মথি ১৩:১৫) ঈশ্বরের বাক্যের সুস্থ করার শক্তি থেকে অধিকাংশেরা কখনও উপকৃত হয়নি। তারা আধ্যাত্মিকভাবে অসুস্থ থেকে গিয়েছিল। এমনকি কিছু অভিষিক্ত খ্রীষ্টানেরাও “দুর্ব্বল ও পীড়িত” হয়ে পড়েছিল। (১ করিন্থীয় ১১:৩০) আমরা যেন কখনও সেই আধ্যাত্মিক খাদ্য যা ঈশ্বর সরবরাহ করছেন তার প্রতি অবজ্ঞা না দেখাই।—গীতসংহিতা ১০৭:২০.
আধ্যাত্মিক দূষণ
আধ্যাত্মিক অনাহারে থাকার আশঙ্কা ব্যতিরেকেও, আমাদের আরেকটি বিপদ সম্পর্কে সতর্ক থাকা প্রয়োজন—তা হল যে ধরনের খাদ্য আমরা গ্রহণ করি, হয়ত সেইগুলিই দূষিত হতে পারে। বিপদজনক পৈশাচিক ধারণাগুলির দ্বারা সংক্রামিত শিক্ষাগুলি গ্রহণ আমাদের খুব সহজেই বিষাক্ত করতে পারে, ঠিক যেমন জীবাণু অথবা বিষাক্ত পদার্থযুক্ত দৈহিক খাদ্য তা করতে পারে। (কলসীয় ২:৮) এই বিষাক্ত খাদ্য শনাক্ত করা সবসময় সহজ নয়। একজন বিশেষজ্ঞ বলেন, “খাদ্য, যেটি হয়ত কখনও কখনও সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যকর বলে মনে হতে পারে, কিন্তু তার মধ্যে লুকিয়ে থাকে রোগ উৎপন্নকারী জীবাণু।” সুতরাং আমরা আমাদের রূপক খাদ্যের উৎসকে পরীক্ষা করে দেখলে ভাল করব, এটি মনে রেখে, যে কিছু সাহিত্য যেমন ধর্মভ্রষ্ট লেখাগুলি, অশাস্ত্রীয় শিক্ষা ও দর্শনগুলির ভূমিকার দ্বারা সংক্রামিত হতে পারে। কিছু খাদ্য প্রস্তুতকারকেরা এমনকি তাদের উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিভ্রান্তিকর লেবেল ব্যবহার করার দ্বারা ক্রেতাদের প্রতারণা করে থাকে। আমরা নিশ্চয়ই প্রত্যাশা করতে পারি যে শয়তান, সেই মহা প্রতারক, তাই করবে। অতএব, নিশ্চিত হোন যে আপনি এমন এক নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে রূপক খাদ্য পাচ্ছেন, যা আপনাকে “বিশ্বাসে নিরাময়” রাখে।—তীত ১:৯, ১৩.
থমাস অ্যাডামস, সপ্তদশ শতাব্দীর এক প্রচারক, তার সময়ের লোকেদের সম্পর্কে বলেছিলেন: “তারা নিজেরা তাদের দাঁত দিয়ে নিজেদের কবর খনন করেছে।” অন্য কথায়, তারা যা আহার করেছিল তাই তাদেরকে হত্যা করেছিল। তাই নিশ্চিত হোন যে আপনি আধ্যাত্মিকভাবে যা আহার করেন তা যেন আপনাকে হত্যা না করে। উত্তম আধ্যাত্মিক খাদ্য সরবারহের জন্য অন্বেষণ করুন। “কেন অখাদ্যের নিমিত্ত রৌপ্য তৌল করিতেছ?” যিহোবা ঈশ্বর তাদের জিজ্ঞাসা করেছিলেন যারা যখন তাঁর লোক হিসাবে দাবি করে মিথ্যা শিক্ষক এবং ভাক্তভাববাদীদের প্রতি ফিরেছিল। “শুন, আমার কথা শুন, উত্তম ভক্ষ্য ভোজন কর, পুষ্টিকর দ্রব্যে তোমাদের প্রাণ আপ্যায়িত হউক। কর্ণপাত কর, আমার নিকটে আইস; শ্রবণ কর, তোমাদের প্রাণ সঞ্জীবিত হইবে।”—যিশাইয় ৫৫:২, ৩; তুলনা করুন যিরমিয় ২:৮, ১৩.
আধ্যাত্মিক খাদ্যের এক প্রাচুর্য
নিশ্চিতভাবেই উত্তম আধ্যাত্মিক খাদ্যের কোনও অভাব নেই। যীশু খ্রীষ্ট যেমন ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, বর্তমানে তাঁর বিশ্বস্ত এবং বুদ্ধিমান দাস শ্রেণী আছে যা “উপযুক্ত সময়ে খাদ্য” প্রদানে ব্যস্ত রয়েছে প্রত্যেকের জন্য যে তা পেতে চায়। (মথি ২৪:৪৫) যিশাইয় ভাববাদীর মাধ্যমে যিহোবা প্রতিজ্ঞা করেছিলেন: “দেখ, আমার দাসেরা ভোজন করিবে, কিন্তু তোমরা ক্ষুধার্ত্ত থাকিবে; . . . আমার দাসেরা চিত্তের সুখে আনন্দরব করিবে।” বস্তুতপক্ষে, তিনি তাদের জন্য খাদ্যের এক ভোজ প্রস্তুত করার প্রতিজ্ঞা করেন যারা তা গ্রহণ করতে চায়। “বাহিনীগণের সদাপ্রভু . . . সর্ব্বজাতির নিমিত্ত উত্তম উত্তম খাদ্য দ্রব্যের এক ভোজ, পুরাতন দ্রাক্ষারসের, মেদোযুক্ত উত্তম খাদ্য দ্রব্যের . . . এক ভোজ প্রস্তুত করিবেন।”—যিশাইয় ২৫:৬; ৬৫:১৩, ১৪.
তথাপি, এই বিষয়টিও চিন্তা করুন: আমরা এক ভোজেও, অনাহারে মারা যেতে পারি! আমরা খাদ্য দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকা সত্ত্বেও গুরুতরভাবে অপুষ্টি ভোগ করতে পারি, যদি আমরা প্রকৃতপক্ষে এর থেকে কিছু খাদ্য গ্রহণে নিজেদের সক্রিয় করে না তুলি। এই বিষয়ে হিতোপদেশ ২৬:১৫ পদটি এই আক্ষরিক বর্ণনাটি প্রদান করে: “অলস থালে হস্ত ডুবায়, পুনর্ব্বার মুখে তুলিতে তাহার ক্লেশ বোধ হয়।” কী এক করুন পরিস্থিতি! আধ্যাত্মিক খাদ্যগ্রহণে আমাদের সাহায্য করার জন্য পরিকল্পিত ঈশ্বরের বাক্যের এবং বাইবেল প্রকাশনাদির ব্যক্তিগত অধ্যয়নে নিজেদের সক্রিয় রাখার ক্ষেত্রে আমরাও অনুরূপভাবে অত্যধিক অলস হয়ে পড়তে পারি। অথবা খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীর সভাগুলির জন্য প্রস্তুত হওয়া কিংবা অংশগ্রহণ করার ক্ষেত্রেও আমরা পরিশ্রান্ত হয়ে পড়তে পারি।
উত্তম আহারের অভ্যাসগুলি
তাহলে, আমাদের উত্তম আধ্যাত্মিক আহারের অভ্যাসগুলি গড়ে তোলার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। কিন্তু, বাস্তব বিষয়টি হল যে, অনেকে তাদের আধ্যাত্মিক খাদ্যগ্রহণে অনিচ্ছা প্রদর্শন করে, এমনকি কেউ কেউ নিজেদের সম্পূর্ণভাবে অনাহারে রাখে। তারা সেই ধরনের ব্যক্তিদের মত হতে পারে যারা এক উপযুক্ত খাদ্যতালিকার গুরুত্বের প্রতি দৃষ্টি দেয় না, যে অবধি না তারা শেষ জীবনে তার পরিণতি ভোগ করে। যদিও আমরা জানি যে উত্তম আহার জীবনের জন্য অপরিহার্য, তথাপি আমাদের আহারের অভ্যাস সম্পর্কে আমরা কেন অসতর্ক হতে পারি, সে সম্পর্কে স্বাস্থ্যকর আহার (ইংরাজি) এই কারণ প্রদান করে: “সমস্যাটি হচ্ছে, যেমন অসতর্কভাবে রাস্তা পার হলে তার আকস্মিক ফল ঘটে তেমন, [অস্বাস্থ্যকর আহারের অভ্যাসের এক পরিণতিস্বরূপ] স্বাস্থ্যের অবনতি দ্রুত ঘটে না। পরিবর্তে, খুব ধীরে ধীরে, গোপনে একজনের স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটিয়ে রোগসংক্রমণ হয়ত আরও সহজ করে এবং অস্থিগুলি আরও কমজোর করে, ক্ষত ও নিরাময় ও রোগ থেকে আরোগ্য লাভ হয়ত ধীরগতি হতে পারে।”
কোন চরম ক্ষেত্রে একজন হয়ত, এমন এক যুবতী মহিলা যিনি ক্ষুধাহীনতা রোগে ভুগছেন, তার মত হতে পারে। তিনি নিজে নিজেকে প্রত্যয়িত করেন যে তার অল্প খাবার দরকার এবং তাতেই তিনি সম্পূর্ণ ভাল আছেন, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তিনি শারীরিকভাবে ক্ষয়ের দিকে চলেছেন। পরিশেষে, তিনি খাবারের প্রতি তার সমস্ত স্পৃহা হারিয়ে ফেলেন। “এটি এক ভয়ানক পরিস্থিতি,” একটি চিকিৎসা সম্বন্ধীয় সহায়ক পুস্তক বলে। কেন? “যদিও রোগী কদাচিৎ অনাহারে আক্ষরিকভাবে মারা যান, তিনি চরমভাবে অপুষ্টিকর পর্যায়ে উপনীত হন এবং স্বভাবতই সামান্য সংক্রমণের শিকার হতে পারেন।”
একজন খ্রীষ্টীয় মহিলা স্বীকার করেছিলেন: “আমি অনেক বছর ধরে নিয়মিত সভার প্রস্তুতি এবং ব্যক্তিগত অধ্যয়নের প্রয়োজন আছে জেনে সংগ্রাম করেছিলাম, তথাপি কখনও তা করতে সক্ষম হইনি।” অবশেষে তিনি পরিবর্তন করেছিলেন, কিন্তু কেবলমাত্র তখনই যখন তিনি সম্পূর্ণভাবে তার পরিস্থিতির জরুরি অবস্থাকে শনাক্ত করেন যাতে তিনি ঈশ্বরের বাক্যের একজন উত্তম ছাত্রী হয়েছিলেন।
তাহলে, সেই উপদেশ যা প্রেরিত পিতর দিয়েছিলেন, তা হৃদয়ে গ্রহণ করুন। “নবজাত শিশুদের” ন্যায় হয়ে “সেই পারমার্থিক অমিশ্রিত দুগ্ধের লালসা কর, যেন তাহার গুণে পরিত্রাণের জন্য বৃদ্ধি পাও।” (১ পিতর ২:২) হ্যাঁ, ‘লালসা করা’—এক প্রবল আকাঙ্ক্ষা গড়ে তোলা—আপনার মন ও হৃদয় ঈশ্বরের জ্ঞানে পরিপূর্ণ করার জন্য। আধ্যাত্মিক প্রাপ্তবয়স্কদেরও সেই লালসার জন্য প্রশিক্ষণ চালিয়ে যাওয়া প্রয়োজন। আধ্যাত্মিক খাদ্যকে ‘আপনার সত্বাধিকারের এক অন্যতম সর্বাপেক্ষা অপব্যবহার’ হতে দেবেন না। আধ্যাত্মিকভাবে উত্তম আহার করুন আর সেই সমস্ত “নিরাময় বাক্য” যা ঈশ্বরের বাক্য, বাইবেলে পাওয়া যায় তার দ্বারা সম্পূর্ণ উপকার লাভ করুন।—২ তীমথিয় ১:১৩, ১৪.
[২৮ পৃষ্ঠার চিত্র]
আপনার কি খাদ্যতালিকার উন্নতি করার প্রয়োজন আছে?