যিহোবা নিষ্ঠার সাথে কাজ করেন
পিটার পেলিসার দ্বারা কথিত
এটি ছিল ১৯৮৫ সালের ডিসেম্বর মাস। আমাদের উত্তেজনা চরম পর্যায়ে পৌঁছেছিল যখন আমরা কেনিয়া, নাইরোবির আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করতে শুরু করেছিলাম। গাড়ি করে শহরের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার সময়ে পরিচিত দৃশ্য ও শব্দগুলির দ্বারা জেগে ওঠা স্মৃতিগুলি প্লাবিত হয়েছিল।
আমরা যিহোবার সাক্ষীদের “বিশ্বস্ততা রক্ষাকারী” জেলা সম্মেলনে যোগদান করার জন্য কেনিয়ায় এসেছিলাম। বার বছর আগে আমার স্ত্রী এবং আমি আমাদের প্রচার কাজের উপর নিষেধাজ্ঞার কারণে কেনিয়া ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলাম। আমরা সেখানে বেথেলে থাকতাম, যে নামটি যিহোবার সাক্ষীদের শাখা ব্যবস্থাকে দেওয়া হয়ে থাকে। কতই না এক মনোরম চমক আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিল যখন আমরা সেখানে পরিদর্শনের জন্য ফিরে এসেছিলাম!
এক অল্পবয়স্কা সাক্ষী বেথেলে দুপুরের খাবার তৈরি করতে সাহায্য করত যাকে আমরা তার দুই বছর বয়স থেকে জানতাম। বেথেল পরিবারের অন্তত ছয়জন সদস্য ছিল সেই ব্যক্তিরা, যাদের আমরা তাদের ছোটবেলা থেকে জানতাম। এখন তাদের যুবক অবস্থায়, তাদের পরিবারের সাথে এখনও সকলে পরিচর্যায় সক্রিয় রয়েছে, এটি দেখা কতই না আনন্দের বিষয় ছিল! আমাদের ঈশ্বর যিহোবা বাইবেলের প্রতিজ্ঞার সাথে সামঞ্জস্য রেখে তাদের প্রতি যত্ন নিয়েছেন: “তুমি নিষ্ঠাবানের সাথে নিষ্ঠার সাথে কাজ করবে।” (২ শমূয়েল ২২:২৬, NW) আমার প্রাথমিক জীবন এবং এই যুবকেরা যে পুরস্কৃত জীবন যাপন করছে তার মধ্যে কতই না এক বৈপরীত্য আমি দেখেছিলাম!
উদ্দেশ্যহীন প্রাথমিক জীবন
আমি ১৯১৮ সালের ১৪ই আগস্ট ইংল্যাণ্ডের স্কারবোরায় জন্মগ্রহণ করেছিলাম। দুই বছর পরে আমার মা এবং সৎ বোন কানাডায় চলে যায়, তাই আমি পরবর্তী তিন বছর আমার বাবা, তার মা এবং তার বোনের সাথে বাস করেছিলাম। যখন আমি পাঁচ বছরের ছিলাম আমার মা আমাকে জোর করে কানাডার মনট্রিলে নিয়ে গিয়েছিল। চার বছর পরে সে আমাকে বাবার সাথে বাস করার এবং বিদ্যালয়ে যোগ দেওয়ার জন্য ইংল্যান্ডে পাঠিয়ে দিয়েছিল।
আমার মা এবং সৎ বোন প্রত্যেক ছয় মাস অন্তর আমাকে লিখত। তাদের চিঠির শেষে তারা তাদের এই ইচ্ছা প্রকাশ করত যে আমি যেন একজন উত্তম নাগরিক হই, রাজা এবং দেশের প্রতি নিষ্ঠাবান থাকি। আমার উত্তর সম্ভবত তাদের হতাশ করেছিল কারণ আমি লিখেছিলাম যে আমি বিশ্বাস করি জাতীয়তাবাদ এবং যুদ্ধ অন্যায়। তথাপি, কোন স্পষ্ট নির্দেশনা না থাকায় আমার কিশোরাবস্থার বছরগুলি আমি কেবলমাত্র এক উদ্দেশ্যহীন অবস্থায় কাটিয়েছিলাম।
তারপর ১৯৩৯ সালের জুলাই মাসে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার ছয় সপ্তাহ আগে, আমাকে ব্রিটিশ সৈন্যবাহিনীতে যোগ দিতে হয়। আমি মাত্র ২০ বছরের ছিলাম। আমার সৈন্যদলকে শীঘ্রই উত্তর ফ্রান্সে পাঠানো হয়েছিল। যখন জার্মান বিমানপোত আমাদের আক্রমণ করেছিল আমরা যুবকেরা আমাদের বন্দুককে তুলে ধরি এবং তাদের উদ্দেশ্যে গুলি করি। এটি একটি আতঙ্কিত জীবন ছিল। অগ্রসরমান জার্মান সৈন্যদের সম্মুখে আমরা পশ্চাদপসারণ করি আর ১৯৪০ সালের জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে যাদের ডানকির্কে পরিত্যাগ করা হয়েছিল আমি তাদের মধ্যে ছিলাম। সমুদ্র-তটে ছিন্নবিচ্ছিন্ন অসংখ্য মৃতদেহের দৃশ্য এখনও আমি আতঙ্কের সাথে স্মরণ করতে পারি। আমি সেই দুঃস্বপ্ন থেকে রক্ষা পেয়েছিলাম আর একটি ছোট মালবাহী জাহাজে করে পূর্ব ইংল্যান্ডের হারিচে পৌঁছেছিলাম।
পরবর্তী বছর, ১৯৪১ সালের মার্চ মাসে আমাকে ভারতে পাঠানো হয়েছিল। সেখানে আমি একজন যান্ত্রিক কারিগর হিসাবে প্রশিক্ষণ পাই। একটি সংক্রমণের কারণে কিছু সময় হাসপাতালে থাকার পর আমি ভারতের রাজধানী দিল্লীর একটি সৈন্য বিভাগে স্থানান্তরিত হই। ঘর থেকে অনেক দূরে এবং তখনও ভাল অনুভব না করায় আমি ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে চিন্তা করতে শুরু করি। বিশেষ করে আমি ভাবতাম যে আমাদের কী হয় যখন আমরা মারা যাই।
এক নতুন নিষ্ঠা অনুশীলন করা
বের্ট গেল নামে এক সহ-ইংরেজ দিল্লীতে আমার ঘরের সাথী ছিল। একদিন সে বলেছিল যে “ধর্ম দিয়াবলের কাছ থেকে এসেছিল,” এমন একটি মন্তব্য যা আমার আগ্রহকে জাগিয়েছিল। তার স্ত্রী একজন যিহোবার সাক্ষী হয়েছিল এবং কখনও কখনও সে তাকে বাইবেল প্রকাশনাদি পাঠাত। এগুলির মধ্যে একটি ছিল আশা (ইংরাজি) নামক পুস্তিকাটি যেটি আমার আগ্রহকে জাগিয়ে তুলেছিল। পুনরুত্থানের আশা সম্পর্কে এর আলোচনা আমাকে প্রশান্তির এক প্রকৃত অনুভূতি প্রদান করেছিল।
১৯৪৩ সালের কিছু আগে বের্ট, টেডি গ্রুবের্ট নামে এক অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান অসামরিক ব্যক্তির সাথে কথা বলেছিল যে আমাদের সাথে সৈন্যশিবিরে কাজ করত। আমরা জেনে আশ্চর্য হয়েছিলাম যে টেডি একজন যিহোবার সাক্ষী ছিল। যদিও ১৯৪১ সালে যিহোবার সাক্ষীদের প্রকাশনাদির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল, সে আমাদের দিল্লীতে যিহোবার সাক্ষীদের দ্বারা পরিচালিত সভাগুলিতে নিয়ে গিয়েছিল। সেই ছোট মণ্ডলীতে আমার জীবনে প্রথমবার আমি অকৃত্রিম, উষ্ণ সাহচর্য খুঁজে পেয়েছিলাম। বেসিল স্টাটোস গ্রীসের একজন বয়স্ক খ্রীষ্টান ভাই আমার প্রতি ব্যক্তিগত আগ্রহ দেখিয়েছিলেন এবং আমার প্রশ্নগুলির উত্তর দিয়েছিলেন। কেন আমরা বৃদ্ধ হই ও মারা যাই, পুনরুত্থান এবং ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাত ধার্মিকতার নতুন জগৎ সম্পর্কিত প্রশ্নগুলির স্পষ্ট বাইবেলের উত্তরগুলি তিনি প্রদান করেছিলেন।—প্রেরিত ২৪:১৫; রোমীয় ৫:১২; ২ পিতর ৩:১৩; প্রকাশিত বাক্য ২১:৩, ৪.
১৯৪২ সালে প্রকাশিত শান্তি—এটি কি চিরস্থায়ী হতে পারে? (ইংরাজি) পুস্তিকাটি বিশেষভাবে আমার আগ্রহকে জাগিয়ে তুলেছিল। এটি জাতিপুঞ্জকে ‘সিন্দূরবর্ণ পশু’ হিসাবে চিহ্নিত করেছিল। (প্রকাশিত বাক্য ১৭:৩) প্রকাশিত বাক্য ১৭ অধ্যায় ১১ পদ উদ্ধৃত করে এই পুস্তিকাটি বলেছিল: “এখন এটি বলা যেতে পারে যে সংঘটি ‘ছিল এবং এখন নেই।’” এটি আরও বলে: “জাগতিক জাতিগুলির সংঘ আবার উত্থিত হবে।” ১৯৪৫ সালে তিন বছরেরও বেশি পরে, ঠিক এই বিষয়টিই ঘটেছিল, যখন রাষ্ট্রসংঘ গঠিত হয়!
সাক্ষীদের সাহিত্যের উপর নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন আমি আমার নতুন বন্ধুদের সাহায্য করতে পেরেছিলাম। যখন শান্তি—এটি কি চিরস্থায়ী হতে পারে পুস্তিকাটির একটি বাক্স এসে পৌঁছেছিল, মণ্ডলী এটিকে সুরক্ষিত অবস্থায় রাখার জন্য আমাকে দিয়েছিল। নিষিদ্ধ সাহিত্যের জন্য সৈন্যশিবিরে কে তা খুঁজবার কথা ভাববে? প্রত্যেকবার যখন আমি সভায় উপস্থিত হতাম, ভাইয়েদের সরবরাহ করার জন্য আমি কিছু পুস্তিকা আমার সাথে নিয়ে যেতাম। আমি এমনকি তাদের ব্যক্তিগত বাইবেল সাহিত্যাদি লুকিয়ে রাখতাম যখন তারা তাদের ঘরে অনুসন্ধান হওয়ার আশঙ্কা করত। পরিশেষে, ১৯৪৪ সালের ১১ই ডিসেম্বর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছিল।
খ্রীষ্টীয় শিক্ষাগুলির প্রতি আমার নিষ্ঠা পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছিল ১৯৪৩ সালে বড়দিন উদ্যাপনের সময়ে, যা আমাদের সৈন্যবাহিনীর বিচ্ছিন্ন দলের জন্য সংগঠিত করা হয়েছিল। আমি অংশগ্রহণ করতে অস্বীকার করেছিলাম যেহেতু আমি জেনেছিলাম যে যীশু ডিসেম্বর মাসের ঠাণ্ডায় জন্মগ্রহণ করেননি এবং প্রাথমিক খ্রীষ্টানেরা বড়দিন উদ্যাপন করেননি।—তুলনা করুন লূক ২:৮-১২.
যখন ১৯৪৪ সালের ২৭ থেকে ৩১শে ডিসেম্বর জুব্বুলপোরে (জব্বলপুর) “ঐক্যবদ্ধ ঘোষণাকারীগণ” জেলা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল, আমি ১৫০ জন যোগদানকারীদের মধ্যে ছিলাম। অনেক সম্মেলন প্রতিনিধিরা দিল্লী থেকে ট্রেনে করে ভ্রমণ করেছিলেন, যেটি ৬০০ কিলোমিটারের চেয়েও বেশি দূরত্বের যাত্রা। খোলা-হাওয়ায় সেই অপূর্ব পরিবেশটিকে আমি কখনও ভুলতে পারব না যেখানে আমি যিহোবার সংগঠনকে কার্যকারী দেখেছিলাম।
সম্মেলন প্রতিনিধিদের জন্য বিদ্যালয় আবাসস্থানে বসবাসের ব্যবস্থা করা হয়েছিল যেখানে আমরা খ্রীষ্টীয় গানগুলি গেয়েছিলাম এবং আনন্দময় খ্রীষ্টীয় সাহচর্য উপভোগ করেছিলাম। সেই সম্মেলন চলাকালীন আমি সাধারণ্যে প্রচার কাজে অংশগ্রহণ করতে শুরু করেছিলাম, এমন একটি কাজ যা সবসময়ের জন্য আমার কাছে অত্যন্ত প্রিয়।
ইংল্যান্ডে পূর্ণ-সময়ের পরিচর্যা
১৯৪৬ সালে আমি ইংল্যান্ডে ফিরে আসি আর শীঘ্রই ওলভারটন মণ্ডলীর সাথে মেলামেশা করতে শুরু করি। যদিও আমরা মাত্র দশজন রাজ্যের প্রকাশক ছিলাম, এরা আমাকে গৃহ পরিবেশের মত অনুভব করতে সাহায্য করেছিল আর আমি সেই সমরূপ পরিতৃপ্তি উপভোগ করেছিলাম যা ভারতে আমাদের ভাইয়েদের মধ্যে থাকার সময় আমার ছিল। ভিরা ক্লিফটন মণ্ডলীতে একজন অকৃত্রিম, আন্তরিক ব্যক্তি হিসাবে উল্লেখযোগ্য ছিল। যখন আমি জেনেছিলাম যে সেও এক অগ্রগামী, পূর্ণ-সময়ের পরিচারকদের যেমন ডাকা হত, হওয়ার জন্য আমার ইচ্ছার অংশী, তখন ১৯৪৭ সালের ২৪শে মে আমরা বিবাহ করেছিলাম। আমি একটি ক্যারাভেন অথবা চলমান গৃহ তৈরি করেছিলাম আর পরবর্তী বছরে আমরা আমাদের প্রথম অগ্রগামী কার্যভার গ্রহণ করেছিলাম হাংটিঙ্গডন নামে এক মফস্বল শহরে।
ওই দিনগুলিতে খুব সকালবেলায় আমরা গ্রামের এলাকাগুলিতে পৌঁছানোর জন্য আমাদের সাইকেলে চড়ে বের হতাম। আমাদের প্রচারের সম্পূর্ণ দিনটি কেবলমাত্র কিছুক্ষণের জন্য দ্রুত মধ্যাহ্ন খাবারের বিরতিতে বিঘ্নিত হত। সাইকেল করে বাড়ি ফেরার সময় বাতাস যত তীব্র গতিতে বয়ে চলুক না কেন অথবা যত জোরেই বৃষ্টি পড়ুক না কেন, আমরা প্রভুর কাজে সুখী ও সন্তুষ্ট ছিলাম।
কিছু সময় পরে আমরা আমাদের পরিচর্যাকে প্রসারিত করা এবং অন্য দেশের লোকেদের সাথে “সুসমাচার” বন্টন করে নেওয়ার জন্য আকুল আকাঙ্ক্ষা অনুভব করি। (মথি ২৪:১৪) তাই আমরা আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক, সাউথ ল্যানসিংয়ের গিলিয়েড মিশনারী স্কুলে যোগদানের জন্য আবেদন করি। অবশেষে, আমরা গিলিয়েডের ২৬তম ক্লাসের জন্য গৃহীত হই যেটি ১৯৫৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে স্নাতক হয়েছিল।
আফ্রিকায় এক প্রসারিত পরিচর্যা
আমাদের মিশনারী কার্যভার ছিল আফ্রিকার উত্তর রোডেশিয়ায় (বর্তমানে জাম্বিয়া)। পৌঁছানোর অল্প কিছু পরেই, সেই দেশের বেথেলে সেবা করার জন্য আমাদের ডাকা হয়। বেথেলে আমার কাজের অংশ হিসাবে আমি পূর্ব আফ্রিকার সাথে যোগাযোগ রক্ষার বিষয়টি দেখাশোনা করতাম। ১৯৫৬ সালে কেনিয়ায়—এই পূর্ব আফ্রিকার দেশগুলির মধ্যে একটিতে—মাত্র চার জন সাক্ষী ছিল, যেখানে উত্তর রোডেশিয়ায় ২৪,০০০ এরও অনেক বেশি জন ছিল। ভিরা এবং আমি চিন্তা করতে শুরু করেছিলাম যে সেই জায়গায় সেবা করা কতই না উত্তম হবে যেখানে বৃহত্তর প্রয়োজন ছিল।
তারপর, অপ্রত্যাশিতভাবে আমি গিলিয়েড স্কুলের জন্য আর একটি আমন্ত্রণ পেয়েছিলাম, এইবারে অধ্যক্ষের জন্য দশ মাসের কার্যধারা। ভিরাকে উত্তর রোডেশিয়ায় রেখে আমি নিউ ইয়র্ক শহরে যেখানে সেই সময় গিলিয়েড স্কুল অবস্থিত ছিল সেখানে ভ্রমণ করেছিলাম। ১৯৬২ সালের নভেম্বর মাসে সেটি শেষ করার পর, আমি একটি শাখা দপ্তর প্রতিষ্ঠিত করার জন্য কেনিয়ায় কার্যভারপ্রাপ্ত হই। এই সময়ের মধ্যে কেনিয়ায় একশ জনেরও বেশি সাক্ষী ছিল।
ভিরার সাথে সাক্ষাৎ করার উদ্দেশ্যে উত্তর রোডেশিয়ায় ফিরে আসার সময় আমার কেনিয়ার নাইরোবিতে কিছু সময়ের জন্য থামার কথা ছিল। কিন্তু যখন আমি পৌঁছাই ২৫তম ক্লাসের এক গিলিয়েড স্নাতক বিল নিসবেট এই সংবাদসহ আমার সাথে সাক্ষাৎ করেছিলেন যে, ঠিক এখনই কেনিয়ায় প্রবেশ করার জন্য আধিকারিকের অনুমতি পাওয়ার এক সুযোগ আছে। আমরা অভিবাসন কর্তৃপক্ষদের সমীপবর্তী হই এবং মাত্র কিছু মিনিটের মধ্যেই আমি পাঁচ বছর কাজ করার জন্য অনুমতি লাভ করি। সুতরাং আমি আর কখনও উত্তর রোডেশিয়ায় ফিরে যায়নি, কিন্তু ভিরা নাইরোবিতে আমার সাথে যোগ দিয়েছিল।
সোহিলি ভাষা শিক্ষার পাঠক্রম শেষ করার পর নাইরোবির ছোট মণ্ডলীর সাথে আমরা পরিচর্যায় যোগ দিই। কখনও কখনও আমরা আমাদের সোহিলি উপস্থাপনা পড়া শেষ করলে গৃহকর্তা বিস্মিত হয়ে বলত, “আমি ইংরাজি বুঝি না!” এটি সত্ত্বেও আমরা অধ্যবসায়ী ছিলাম এবং ক্রমশ ভাষার প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করেছিলাম।
আমাদের এলাকায় বড় বড় বাসভবনগুলি ছিল যেগুলির এইধরনের বাইবেলের নামগুলি ছিল যেমন যিরূশালেম ও জেরিকো। আগ্রহ শীঘ্রই বিকশিত হয়েছিল এবং এইসমস্ত অঞ্চলগুলি থেকে অনেক নতুন রাজ্য প্রকাশকেরা এসেছিল। ওই লোকেদের উপর বাইবেল সত্যের কতই না উল্লেখযোগ্য এক প্রভাব ছিল! উপজাতীয় শ্রেষ্ঠত্বের অনুভূতি অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল যখন রাজ্যের প্রতি নিষ্ঠা যিহোবার লোকেদের মধ্যে একতা নিয়ে এসেছিল। এমনকি আন্তঃ-উপজাতীয় বিবাহও সংঘটিত হয়েছিল, এমন কিছু যেটি ন-সাক্ষীদের কাছে খুবই অস্বাভাবিক ছিল।
নতুন রাজ্য ঘোষণাকারীরা উদ্যোগের সাথে সত্যকে আলিঙ্গন করেছিল। উদাহরণস্বরূপ, সেমসন বাইবেল সত্য তার গৃহ এলাকায় পরিব্যাপ্ত করার জন্য এত বেশি উৎসুক ছিল যে সেখানে অগ্রগামীদের পাঠানোর জন্য সে বারংবার অনুরোধ করতেই থাকে। বস্তুতপক্ষে, সে তাদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করার জন্য ইউকামবানি অঞ্চলে তার ঘরকে প্রসারিত করেছিল। শীঘ্রই সেখানে রাজ্য প্রকাশকদের এক নতুন মণ্ডলী স্থাপিত হয়েছিল।
বেশ কয়েকবার আমি পূর্ব আফ্রিকার দেশ ইথিওপিয়ার ভাইয়েদের সাথে সাক্ষাৎ করি। তারা কারাবন্ধন, প্রহার এবং অবিরত অতন্দ্র নজর সত্ত্বেও পরিচর্যায় মাসে গড়ে ২০ ঘন্টারও বেশি সময় ব্যয় করতেন। একবার কেনিয়ায় এক জেলা সম্মেলনে যোগদানের জন্য দুটি বাস ভর্তি ইথিওপিয় ভাই ও বোনেরা বিপজ্জনক গিরিখাত পার হয়ে এক সপ্তাহ ধরে যাত্রা করেন। তাদের দেশে রাজ্য সাহিত্যাদি প্রাপ্তিসাধ্য করার জন্য ব্যবস্থা করার ক্ষেত্রে তাদের দক্ষতা উল্লেখযোগ্য ছিল। আমরা যারা কেনিয়ায় ছিলাম তাদের সরবরাহ করে চলে সাহায্য করতে খুশি ছিলাম।
১৯৭৩ সালে কেনিয়ায় আমাদের কাজের উপর এক সরকারি নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং মিশনারীদের সেই স্থান ত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছিল। সেই সময়ে কেনিয়ায় আমাদের ১,২০০ জন সাক্ষী ছিল আর এদের অধিকাংশই আমাদের অবিস্মরণীয় বিদায় সম্বর্ধনা জানাতে বিমান বন্দরে এসেছিল। তাদের উপস্থিতি এক সহযাত্রীকে এটি জিজ্ঞাসা করতে পরিচালিত করেছিল যে আমরা কোন প্রসিদ্ধ ব্যক্তি কি না। ভিরা এবং আমি ইংল্যান্ডে ফিরে এসেছিলাম আর সেখানে আমাদের এক কার্যভার অর্পণ করা হয়েছিল, কিন্তু আমরা আফ্রিকায় ফিরে যেতে আকাঙ্ক্ষী ছিলাম।
আফ্রিকায় ফিরে আসা
তাই কিছু মাস পরে, আমরা পশ্চিম আফ্রিকার এক দেশ ঘানার রাজধানী আক্রার বেথেলে আমাদের নতুন কার্যভার পাই। এখানে আমার একটি কার্যভার আমাকে কষ্টকর সময়ের সম্মুখীন করেছিল যার সম্মুখীন আমাদের সেখানকার ভাইয়েরা হতেন। যেহেতু আমি বেথেল পরিবারের জন্য খাদ্য ও অন্যান্য সামগ্রী ক্রয়ের বিষয়টি দেখাশোনা করতাম, আমি খাদ্যবস্তুর অত্যধিক দাম দেখে আশ্চর্য হয়ে গিয়েছিলাম। প্রায়ই একজন সাধারণভাবে তার প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে পারত না। পেট্রোলের অভাব ও সাজ সরঞ্জামের দুষ্প্রাপ্যতা অতিরিক্ত সমস্যা নিয়ে এসেছিল।
আমি ধৈর্যের গুরুত্ব সম্বন্ধে শিখতে পেরেছিলাম, এমন কিছু বিষয় যা আমাদের ঘানার ভাইয়েরা নিজেদের মধ্যে গড়ে তুলেছিল। যখন তারা উৎকোচের মাধ্যমে জীবনের অত্যাবশ্যকীয় বস্তু লাভ করার প্রলোভনকে প্রত্যাখ্যান করত তখনও যে আনন্দপূর্ণ মনোভাব তারা রক্ষা করত তা দেখা কতই না উৎসাহজনক ছিল। ফলস্বরূপ, ঘানায় যিহোবার লোকেরা তাদের সততার জন্য সুপরিচিত হয়ে উঠেছিল এবং অনেক আধিকারিকদের সম্মুখে তারা সুনাম অর্জন করেছিল।
কিন্তু, বস্তুগত জিনিসের স্বল্পতা সত্ত্বেও, সেখানে বৃদ্ধিরত আধ্যাত্মিক সমৃদ্ধি ছিল। সারা দেশে আমাদের বাইবেল সম্বন্ধীয় প্রকাশনাদি বাস্তবিকভাবেই প্রত্যেকটি ঘরে পাওয়া যেত। আর আমরা ঘানায় অসংখ্য রাজ্য ঘোষণাকারীদের দেখেছিলাম যারা যখন আমরা সেখানে পৌঁছেছিলাম সেই ১৯৭৩ সালে ১৭,১৫৬ থেকে ১৯৮১ সালে ২৩,০০০ এরও বেশি সংখ্যকে বৃদ্ধি পেয়েছিল। সেই বছরে আমার ত্বকে ক্যানসার বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছিল আর কোন সন্দেহ নেই যে ভারত ও আফ্রিকায় অনেক বছর ধরে সূর্যের রোদে উন্মুক্ত অবস্থায় থাকার জন্যই এর প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছিল, যা আমাদের ঘানা পরিত্যাগ করতে ও নিয়মিত চিকিৎসার জন্য ইংল্যান্ডে ফিরে আসতে বাধ্য করেছিল।
ইংল্যান্ডে নতুন পরিস্থিতি
আমার জন্য আমাদের প্রত্যাবর্তনের অর্থ ছিল পরিচর্যায় এক উল্লেখযোগ্য সমন্বয়সাধন করা। আমি সেই লোকেদের সাথে স্বচ্ছন্দে কথা বলতে খুবই অভ্যস্ত ছিলাম যারা ঈশ্বর এবং বাইবেলকে সম্মান করত। কিন্তু লণ্ডনে এইধরনের মনোভাব খুঁজে পাওয়া খুবই বিরল ছিল। ব্রিটেনের ভাইয়েদের ধৈর্য দেখে আমি আশ্চর্য হই। এটি আমাকে আরও সহানুভূতি বিকশিত করার প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে দেখিয়েছিল সেই লোকেদের জন্য যারা আধ্যাত্মিকভাবে “ব্যাকুল ও ছিন্নভিন্ন” ছিল।—মথি ৯:৩৬.
আফ্রিকা থেকে আমাদের প্রত্যাবর্তনের পর ১৯৯১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ৭৩ বছর বয়সে তার মৃত্যুর আগে পর্যন্ত ভিরা আর আমি একসাথে লণ্ডন বেথেলে সেবা করেছিলাম। এমন এক বিশ্বস্ত সঙ্গীকে হারানো সহজ ছিল না যে আমার পাশে পাশে এতগুলি বছর পরিচর্যায় পরিশ্রম করেছিল। আমি ভীষণভাবে তার অভাব অনুভব করি। কিন্তু আমাদের বেথেল পরিবারের প্রায় ২৫০ জন সদস্যের কাছ থেকে যে উত্তম সমর্থন আমি পাই তার জন্য আমি খুশি।
আমি সত্যই যিহেবার সংগঠনের অগ্রবর্তী প্রসারণ অভিজ্ঞতা করা আর অনেকে পূর্ণ-সময়ের পরিচর্যাকে তাদের জীবনের পথ হিসাবে গ্রহণ করছে এটি দেখাকে এক সুযোগ হিসাবে গণ্য করি। আমি আপনাকে আশ্বস্ত করতে পারি যে জীবনে এর চেয়ে উত্তম আর কোন পথ নেই, কারণ “সদাপ্রভু . . . আপন সাধুগণকে [“নিষ্ঠাবানদের,” NW] পরিত্যাগ করেন না।”—গীতসংহিতা ৩৭:২৮.
[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]
১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত আমরা ইংল্যান্ডে অগ্রগামীর কাজ করেছিলাম
[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]
ভারতে এক সম্মেলন চলাকালে পরিচর্যায় প্রথম বার
[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]
উত্তর রোডেশিয়ায় যখন আমরা মিশনারী ছিলাম
[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]
১৯৮৫ সালে সেই বন্ধুদের সাথে যাদের ১২ বছর আমরা দেখিনি