বাইবেলকে—ঈশ্বর কিভাবে অনুপ্রাণিত করেছিলেন?
ইতিহাসের অন্য যে কোন সময়ের চাইতে আজকের দিনে ভাববিনিময় করা আরও বেশি আকর্ষণীয়। টেলিফোন, ফ্যাক্স মেশিন, কমপিউটার—বহু বছর আগে এমন একটা সময় সম্পর্কে কে কল্পনা করতে পেরেছিল যখন বার্তাগুলি বিশ্বের প্রায় যে কোন স্থানে কার্যতঃ মুহূর্তের মধ্যে পাঠান সম্ভবপর হবে?
কিন্তু সবচেয়ে আকর্ষণীয় ধরনের ভাববিনিময় যা মনুষ্য সাধ্যের বাইরে তা হল—ঐশিক অনুপ্রেরণা। যিহোবা প্রায় ৪০ জন মনুষ্য লেখকদের তাঁর লিখিত বাক্য, পবিত্র বাইবেল রচনা করার জন্য অনুপ্রাণিত করেছিলেন। ঠিক যেমন মানুষের কাছে ভাববিনিময়ের একাধিক মাধ্যম রয়েছে, তদ্রূপ যিহোবাও শাস্ত্রগুলি অনুপ্রাণিত করার জন্য ভাববিনিময়ের বিভিন্ন পদ্ধতিগুলি ব্যবহার করেছিলেন।
শ্রুতিলিপি। ঈশ্বর নির্দিষ্ট বার্তাগুলিকে প্রকাশ করেছিলেন যা পরে বাইবেলে নথিভুক্ত করা হয়েছিল।a উদাহরণস্বরূপ, নিয়ম চুক্তি গঠন করার সেই বিধানগুলির বিষয়ে বিবেচনা করুন। যিহোবা মোশিকে বলেছিলেন, “তুমি এই সকল বাক্য লিপিবদ্ধ কর, কেননা আমি এই সকল বাক্যানুসারে তোমার ও ইস্রায়েলের সহিত নিয়ম স্থির করিলাম।” (যাত্রাপুস্তক ৩৪:২৭) সেই “বাক্য” যেগুলি “দূতগণের দ্বারা আদিষ্ট” হয়েছিল, মোশি তার প্রতিলিপি করেছিলেন এবং যেগুলি এখন যাত্রাপুস্তক, লেবীয় পুস্তক, গণনাপুস্তক এবং দ্বিতীয় বিবরণ নামক বাইবেল পুস্তকগুলিতে পাওয়া যেতে পারে।—প্রেরিত ৭:৫৩.
অন্যান্য অনেক ভাববাদীরা যার অন্তর্ভুক্ত যিশাইয়, যিরমিয়, যিহিষ্কেল, আমোষ, নহূম এবং মীখা, দূতেদের মাধ্যমে ঈশ্বরের কাছ থেকে নির্দিষ্ট বার্তাগুলি পেয়েছিলেন। কখনও কখনও এই ব্যক্তিরা তাদের ঘোষণাবলী এই বাক্যাংশটি দিয়ে শুরু করেছিলেন: “সদাপ্রভু এই কথা কহেন।” (যিশাইয় ৩৭:৬; যিরমিয় ২:২; যিহিষ্কেল ১১:৫; আমোষ ১:৩; মীখা ২:৩; নহূম ১:১২) তারপর তারা ঈশ্বর যা বলেছিলেন তাকে এক লিখিত রূপ দিয়েছিলেন।
দর্শন, স্বপ্ন এবং তন্দ্রাভিভূত অবস্থাগুলি। দর্শন হল এক প্রতিচ্ছবি, দৃশ্য, অথবা বার্তা যা সাধারণত এক জাগ্রত ব্যক্তির মনের উপর অসাধারণ উপায়ে আরোপিত করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, পিতর, যাকোব এবং যোহন “জাগিয়া উঠিয়া” রূপান্তরিত যীশুর দর্শনটি দেখেছিলেন। (লূক ৯:২৮-৩৬; ২ পিতর ১:১৬-২১) কিছু ক্ষেত্রে, স্বপ্ন অথবা রাত্রিকালীন দর্শনের মাধ্যমে বার্তা জ্ঞাপন করা হয়েছিল যা একজন নিদ্রারত প্রাপকের অবচেতন মনে গভীরভাবে ছাপ ফেলত। তাই দানিয়েল লেখেন, “শয্যার উপরে আমার মনের দর্শন”—অথবা, অনুবাদক রোনাল্ড এ. নক্স এটিকে এইভাবে বর্ণনা করেন, “যেন আমি শুয়ে স্বপ্নের মধ্যে দেখছি।”—দানিয়েল ৪:১০.
একজন ব্যক্তি যাকে যিহোবা তন্দ্রাভিভূত অবস্থায় রেখেছিলেন, স্পষ্টতই এক গভীর মনোযোগের মধ্যে আচ্ছন্ন ছিল, যদিও সে অন্তত আংশিকভাবে জাগ্রত ছিল। (প্রেরিত ১০:৯-১৬ পদের সাথে তুলনা করুন।) বাইবেলে যে গ্রীক শব্দটি “তন্দ্রাভিভূত অবস্থা” হিসাবে অনুবাদিত হয়েছে সেটি হল (ইকস্টেসিস) যার অর্থ ‘পরিত্যাগ করা অথবা স্থানচ্যুতি।’ এটি এই ধারণার ইঙ্গিত দেয় যে মনকে স্বাভাবিক অবস্থা থেকে সরিয়ে নেওয়া। তাই তন্দ্রাভিভূত অবস্থায় আছে এমন এক ব্যক্তি দর্শনের প্রতি সম্পূর্ণ সচেতন থাকলেও পারিপার্শ্বিক অবস্থার প্রতি উদাসীন থাকে। প্রেরিত পৌল সম্ভবত এইধরনের তন্দ্রাভিভূত অবস্থায় ছিলেন যখন তিনি ‘পরমদেশে নীত হইয়া অকথনীয় কথা শুনিয়াছিলেন, তাহা বলা মনুষ্যের বিধেয় নয়।’—২ করিন্থীয় ১২:২-৪.
ঈশ্বরের কাছ থেকে প্রেরিত বার্তাগুলিকে শুনে যারা নকল করেছিলেন তাদের বৈসাদৃশ্যে বাইবেল লেখকেরা যারা দর্শন অথবা স্বপ্নগুলি পেয়েছিলেন কিংবা যারা তন্দ্রাভিভূত অবস্থা অভিজ্ঞতা করেছিলেন, প্রায়ই তারা যা দেখেছিলেন তা নিজের ভাষায় বর্ণনা করার কিছুটা স্বাধীনতা তাদের ছিল। হবক্কূককে বলা হয়েছিল: “এই দর্শনের কথা লিখ, সুস্পষ্ট করিয়া ফলকে খুদ, যে পাঠ করে, সে যেন দৌড়িতে পারে।”—হবক্কূক ২:২.
এর অর্থ কি এই যে, যে অংশগুলির শ্রুতিলিখন করা হয়েছিল সেই পরিচ্ছদগুলির চেয়ে বাইবেলের এই অংশগুলি কম অনুপ্রাণিত ছিল? একেবারেই না। তাঁর আত্মার মাধ্যমে, যিহোবা প্রতিটি লেখকের মনে তাঁর বার্তা দৃঢ়ভাবে স্থাপন করান যাতে করে মনুষ্যের নয়, কিন্তু ঈশ্বরের চিন্তাধারা ব্যক্ত হতে পারে। যদিও যিহোবা লেখককে উপযুক্ত বাক্যগুলি নির্বাচন করতে অনুমোদন করেছিলেন, কিন্তু একই সাথে তিনি লেখকের মন ও হৃদয়কে পরিচালিত করেছিলেন যাতে করে কোন অত্যাবশ্যকীয় তথ্য বাদ না পড়ে এবং পরিণতিস্বরূপ যথার্থভাবেই বাক্যগুলিকে ঈশ্বরের বলে দেখা হয়ে থাকে।—১ থিষলনীকীয় ২:১৩.
ঐশিক প্রকাশ। বাইবেলে রয়েছে ভবিষ্যদ্বাণী—ইতিহাস যা পূর্বেই প্রকাশিত এবং লিখিত হয়েছে—যা নিছক মনুষ্য দক্ষতার আয়ত্বের একেবারে বাইরে। একটি উদাহরণ হল, “গ্রীসের রাজা” মহান আলেকজান্ডারের উত্থান ও পতন সম্বন্ধে, যা প্রায় ২০০ বছর পূর্বে ভাববাণী করা হয়েছিল! (দানিয়েল ৮:১-৮, ২০-২২) বাইবেল এমন ঘটনাগুলিকেও প্রকাশ করে যা মনুষ্য চক্ষু কখনও প্রত্যক্ষ করেনি। স্বর্গ ও পৃথিবীর সৃষ্টি হল এইরূপ একটি উদাহরণ। (আদিপুস্তক ১:১-২৭; ২:৭, ৮) এছাড়াও সেই সমস্ত কথোপকথনগুলি আছে যা স্বর্গে ঘটেছিল, যেমন ইয়োবের পুস্তকে সেগুলি বর্ণনা করা হয়েছে।—ইয়োব ১:৬-১২; ২:১-৬.
যদি ঈশ্বরের দ্বারা সরাসরিভাবে লেখকের কাছে প্রকাশ নাও হয়ে থাকে, তবুও এইধরনের ঘটনাগুলি ঈশ্বরেরই দ্বারা কারও কাছে জানানো হয়েছিল যাতে করে এইগুলি মৌখিক অথবা লিখিত ইতিহাসের অংশে পরিণত হয়, এক বংশ থেকে পরবর্তী বংশে প্রবাহিত হয় যতক্ষণ পর্যন্ত না তা বাইবেলের নথিভুক্ত অংশ হয়েছিল। (পৃষ্ঠা ৭-এ বাক্স দেখুন।) যে কোন ক্ষেত্রেই হোক না কেন, আমরা নিশ্চিত হতে পারি যে, যিহোবা ছিলেন এইধরনের সমস্ত তথ্যের উৎস আর তিনি লেখকদের পরিচালিত করেছিলেন যাতে করে তাদের বিবরণগুলি অযথার্থতা, অতিরঞ্জন অথবা পৌরাণিক কাহিনীর দ্বারা বিকৃত হয়ে না যায়। ভবিষ্যদ্বাণী সম্বন্ধে পিতর লিখেছিলেন: “মনুষ্যেরা পবিত্র আত্মা দ্বারা চালিত হইয়া ঈশ্বর হইতে যাহা পাইয়াছেন, তাহাই বলিয়াছেন।”b—২ পিতর ১:২১.
যত্নশীল প্রচেষ্টার প্রয়োজন ছিল
যদিও বাইবেল লেখকেরা ‘পবিত্র আত্মা দ্বারা চালিত হইয়াছিল,’ তবুও তাদের পক্ষে মনোযোগপূর্বক চিন্তার প্রয়োজন ছিল। উদাহরণস্বরূপ, শলোমন “মনোনিবেশ ও বিবেচনা করিতেন, অনেক প্রবাদ বিন্যাস করিতেন। [তিনি] মনোহর বাক্য, এবং যাহা সরলভাবে লিখিত হইয়াছে, অর্থাৎ সত্যের বাক্য, প্রাপ্ত হইবার জন্য অনুসন্ধান করিতেন।”—উপদেশক ১২:৯, ১০.
বাইবেলের কয়েকজন লেখককে তাদের বিষয়বস্তু নথিভুক্ত করতে ব্যাপক গবেষণায় রত হতে হয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ, লূক তার সুসমাচার বিবরণ সম্বন্ধে লিখেছিলেন: “আমিও প্রথম হইতে সকল বিষয় সবিশেষ অনুসন্ধান করিয়াছি বলিয়া, . . . আনুপূর্ব্বিক বিবরণ লেখা বিহিত বুঝিলাম।” অবশ্যই, ঈশ্বরের আত্মা লূকের প্রচেষ্টাকে আশীর্বাদযুক্ত করেছিল, কোন সন্দেহ নেই যে তাকে আস্থাযোগ্য ঐতিহাসিক দলিলগুলি উল্লেখ করতে এবং নির্ভরযোগ্য প্রত্যক্ষদর্শীদের যেমন রক্ষাপ্রাপ্ত শিষ্যেরা ও সম্ভবত যীশুর মা, মরিয়মের সাক্ষাৎকার নিতে পরিচালিত করেছিল। তারপর ঈশ্বরের আত্মা যথার্থভাবে তথ্যটি লিপিবদ্ধ করতে লূককে পরিচালিত করেছিল।—লূক ১:১-৪.
লূকের সুসমাচারের বৈসাদৃশ্যে, যীশুর মৃত্যুর প্রায় ৬৫ বছর পর লেখা যোহনের সুসমাচারটি ছিল এক প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ। কোন সন্দেহ নেই যে যিহোবার আত্মা যোহনের স্মরণশক্তিকে তীক্ষ্ণ রেখেছিল যাতে করে সময়ের ধারার সাথে এটি দুর্বল হয়ে না পড়ে। এটি যীশু তাঁর অনুগামীদের কাছে যা প্রতিজ্ঞা করেছিলেন তার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ ছিল: “সেই সহায়, পবিত্র আত্মা, যাঁহাকে পিতা আমার নামে পাঠাইয়া দিবেন, তিনি সকল বিষয়ে তোমাদিগকে শিক্ষা দিবেন, এবং আমি তোমাদিগকে যাহা যাহা বলিয়াছি, সে সকল স্মরণ করাইয়া দিবেন।”—যোহন ১৪:২৬.
কোন কোন ক্ষেত্রে বাইবেল লেখকেরা প্রাথমিক ঐতিহাসিক লেখকদের প্রত্যক্ষদর্শী দলিলগুলি থেকে সঙ্কলনগুলি অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন, যাদের মধ্যে সকলে অনুপ্রাণিত ছিলেন না। যিরমিয় প্রথম এবং দ্বিতীয় রাজাবলির অধিকাংশই এইভাবে সঙ্কলন করেছিলেন। (২ রাজাবলি ১:১৮) ইস্রা প্রথম ও দ্বিতীয় বংশাবলির জন্য বিষয়বস্তু একত্রিত করতে অন্ততপক্ষে ১৪টি অনুপ্রাণিত নয় এমন উৎসকে উল্লেখ করেছিলেন, যার অন্তর্ভুক্ত ছিল ‘দায়ূদ রাজার ইতিহাস-পুস্তক’ এবং ‘যিহূদার ও ইস্রায়েলের রাজাদের ইতিহাস-পুস্তক।’ (১ বংশাবলি ২৭:২৪; ২ বংশাবলি ১৬:১১) এমনকি মোশি ‘সদাপ্রভুর যুদ্ধপুস্তক’ থেকে উদ্ধৃতি করেছিলেন—আপাতদৃষ্টিতে ঈশ্বরের লোকেদের যুদ্ধের এক নির্ভরযোগ্য বিবরণ।—গণনাপুস্তক ২১:১৪, ১৫.
এইসব ক্ষেত্রগুলিতে পবিত্র আত্মা সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিল, বাইবেলের লেখকদের কেবলমাত্র নির্ভরযোগ্য বিষয়বস্তু নির্বাচন করার জন্য পরিচালিত করতে, যেটি পরে অনুপ্রাণিত বাইবেল বিবরণের অংশ হয়েছিল।
বাস্তবধর্মী উপদেশ—কার কাছ থেকে?
বাইবেলের মধ্যে রয়েছে উপলব্ধি সাধ্য ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ ভিত্তিক বাস্তবধর্মী উপদেশের এক সম্ভার। উদাহরণস্বরূপ শলোমন লিখেছিলেন: “ভোজন পান করা এবং নিজ পরিশ্রমের মধ্যে প্রাণকে সুখভোগ করান ব্যতীত আর মঙ্গল মানুষের হয় না; ইহাও আমি দেখিলাম যে, তাহা ঈশ্বরের হস্ত হইতে হয়।” (উপদেশক ২:২৪) পৌল জানিয়েছিলেন যে বিবাহ সম্বন্ধে তার উপদেশ “[তাহার] মতানুসারে” ছিল যদিও তিনি আরও বলেছিলেন: “আমার বোধ হয়, আমিও ঈশ্বরের আত্মাকে পাইয়াছি।” (১ করিন্থীয় ৭:২৫, ৩৯, ৪০) বাস্তবিকই পৌল ঈশ্বরের আত্মা পেয়েছিলেন, কারণ যেমন প্রেরিত পিতর উল্লেখ করেছিলেন যে, পৌল যা লিখেছিলেন তা “তাহাকে দত্ত জ্ঞান অনুসারে” ছিল। (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) (২ পিতর ৩:১৫, ১৬) অতএব, ঈশ্বরের আত্মা দ্বারা পরিচালিত হয়ে, তিনি তার অভিমত প্রদান করেছিলেন।
যখন বাইবেলের লেখকেরা এইধরনের ব্যক্তিগত প্রত্যয়ী অভিমতগুলিকে প্রকাশ করেছিলেন, তখন তারা এটি তাদের অধ্যয়নের এবং যে শাস্ত্রগুলি তাদের কাছে ছিল সেগুলি প্রয়োগ করার পরিপ্রেক্ষিতে করেছিলেন। আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে তাদের লেখাগুলি ঈশ্বরের চিন্তাধারার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ ছিল। তারা যা লিপিবদ্ধ করেছিলেন তা ঈশ্বরের বাক্যের অংশ হয়েছিল।
অবশ্যই, বাইবেলে এমন কিছু ব্যক্তির মন্তব্যগুলি আছে যাদের চিন্তাধারা ভ্রান্ত ছিল। (তুলনা করুন ইয়োব ১৫:১৫ পদের সাথে ৪২:৭ পদ।) এটি এমন কিছু অভিব্যক্তিগুলিকেও অন্তর্ভুক্ত করে যা ঈশ্বরের দাসেদের নিদারুণ যন্ত্রণাপূর্ণ অনুভূতিগুলিকে প্রকাশ করে, যদিও এইধরনের মন্তব্যগুলি সম্পূর্ণ চিত্রকে প্রকাশ করে না।c এইধরনের ব্যক্তিগত মন্তব্যগুলি করার সময়েও, লেখক ঈশ্বরের আত্মার দ্বারা পরিচালিত হয়েছিলেন একটি যথার্থ বিবরণ প্রস্তুত করতে যেটি ভ্রান্ত যুক্তিকে শনাক্ত ও উন্মোচন করতে কাজ করেছিল। এছাড়াও, প্রতিটি ক্ষেত্রে সেই প্রসঙ্গই যে কোন যুক্তিশীল পাঠকের কাছে স্পষ্টভাবে তুলে ধরে যে লেখকের চিন্তাধারা বৈধ কি না।
সংক্ষেপে বলতে গেলে, আমরা নিশ্চিত হতে পারি যে, সমগ্র বাইবেল হল ঈশ্বরের বার্তা। বাস্তবিকই, যিহোবা নিশ্চিত হয়েছিলেন যে এর অন্তর্ভুক্ত প্রতিটি বিষয় তাঁর উদ্দেশ্যের সাথে মানানসই এবং যারা তাঁকে সেবা করতে ইচ্ছুক তাদের জন্য অত্যাবশ্যকীয় নির্দেশ প্রদান করেছিল।—রোমীয় ১৫:৪.
মনুষ্য লেখকেরা—কেন?
বাইবেল লেখার জন্য যিহোবার মনুষ্যদের ব্যবহার তাঁর প্রজ্ঞাকে প্রদর্শন করে। এটি বিবেচনা করুন: ঈশ্বর যদি দূতেদের কাছে বিষয়টি অর্পণ করতেন, তাহলে বাইবেল কি একই আবেদন রাখত? এটি স্বীকার্য যে, একটি দূতের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আমরা ঈশ্বরের গুণাবলি এবং তাঁর আচরণ সম্বন্ধে পড়ে রোমাঞ্চিত হব। কিন্তু যদি মানবিক দিকগুলির সম্পূর্ণ অভাব থাকত, তাহলে আমাদের পক্ষে হয়ত বাইবেলের বার্তা উপলব্ধি করা কঠিন হত।
উদাহরণস্বরূপ: বাইবেল সহজেই জানাতে পারত যে রাজা দায়ূদ পারদারিকায় লিপ্ত হয়েছিলেন এবং হত্যা করেছিলেন আর তারপর তিনি অনুতপ্ত হয়েছিলেন। তবুও দায়ূদের নিজের ভাষায় তা জানা আরও কতই না উত্তম, যখন তিনি তার কাজের জন্য ভগ্নচিত্তের যন্ত্রণাদায়ক কথাগুলি প্রকাশ করেন এবং যিহোবার ক্ষমার জন্য অনুনয় করেন! তিনি লিখেছিলেন, “আমার পাপ সতত আমার সম্মুখে আছে। হে ঈশ্বর তুমি ভগ্ন ও চূর্ণ অন্তঃকরণ তুচ্ছ করিবে না।” (গীতসংহিতা ৫১:৩, ১৭) সুতরাং, বাইবেলে আন্তরিকতা, বৈচিত্র্য এবং আবেদন রয়েছে যা মনুষ্য উপকরণ এটিতে প্রদান করে।
হ্যাঁ, যিহোবা তাঁর বাক্য আমাদের দেওয়ার জন্য একটি উত্তম উপায় বেছে নিয়েছেন। এমনকি যদিও দুর্বল এবং অক্ষম মনুষ্যদের ব্যবহার করা হয়েছিল, তারা পবিত্র আত্মা দ্বারা চালিত হয়েছিল যাতে করে তাদের লেখাগুলিতে কোন ভুল না থাকে। তাই বাইবেলের উৎকৃষ্টতম মূল্য রয়েছে। এর উপদেশ উপকারী এবং পৃথিবীতে ভবিষ্যৎ পরমদেশ সম্বন্ধে এর ভবিষ্যদ্বাণীগুলি নির্ভরযোগ্য।—গীতসংহিতা ১১৯:১০৫; ২ পিতর ৩:১৩.
প্রতিদিন ঈশ্বরের বাক্যের কিছুটা অংশ পড়াকে অভ্যাসে পরিণত করুন না কেন? পিতর লিখেছিলেন: “সেই পারমার্থিক অমিশ্রিত দুগ্ধের লালসা কর, যেন তাহার গুণে পরিত্রাণের জন্য বৃদ্ধি পাও।” (১ পিতর ২:২) যেহেতু এটি ঈশ্বরের দ্বারা অনুপ্রাণিত, তাই আপনি সমস্ত শাস্ত্রলিপিকে “শিক্ষার, অনুযোগের, সংশোধনের, ধার্ম্মিকতা সম্বন্ধীয় শাসনের নিমিত্ত উপকারী, যেন ঈশ্বরের লোক পরিপক্ব, সমস্ত সৎকর্ম্মের জন্য সুসজ্জীভূত” করার উপযোগী হিসাবে দেখতে পাবেন।—২ তীমথিয় ৩:১৬, ১৭.
[পাদটীকাগুলো]
a অন্তত একটি ক্ষেত্রে, যেটি হল দশ আজ্ঞা, তথ্যাদি সরাসরিভাবে “ঈশ্বরের অঙ্গুলি দ্বারা” লিখিত হয়েছিল। তারপর মোশি সেই বাক্যগুলিকে পাণ্ডুলিপি অথবা অন্য কোন বস্তুতে কেবলমাত্র প্রতিলিপি করেছিলেন।—যাত্রাপুস্তক ৩১:১৮; দ্বিতীয় বিবরণ ১০:১-৫.
b এখানে “চালিত হইয়া” হিসাবে অনুবাদিত গ্রীক শব্দ ফিরো প্রেরিত ২৭:১৫, ১৭ পদে অন্য আরেক ভাবে ব্যবহৃত হয়েছে, এমন একটি জাহাজকে বর্ণনা করতে যেটি বাতাসের মধ্যে দিয়ে ভেসে চলে। সুতরাং পবিত্র আত্মা বাইবেলের লেখকদের ‘পথকে পরিচালিত করেছিল।’ এটি তাদের যে কোন মিথ্যা তথ্যকে প্রত্যাখ্যান করতে এবং কেবলমাত্র যা তথ্যভিত্তিক তা অন্তর্ভুক্ত করতে পরিচালিত করেছিল।
c উদাহরণস্বরূপ, ১ রাজাবলি ১৯:৪ পদের সাথে ১৪ এবং ১৮; ইয়োব ১০:১-৩; গীতসংহিতা ৭৩:১২, ১৩, ২১; যোনা ৪:১-৩, ৯; হবক্কূক ১:১-৪, ১৩ পদগুলি তুলনা করুন।
[Box/Pictures on page 7]
মোশি কোথা থেকে তার তথ্য পেয়েছিলেন?
মোশি বাইবেলের আদিপুস্তকটি লিখেছিলেন, কিন্তু তার লিপিবদ্ধকৃত প্রতিটি বিষয় তার জন্মের বহু পূর্বে ঘটেছিল। তাহলে, কোথা থেকে তিনি এইধরনের তথ্য পেয়েছিলেন? এটি হয়ত সরাসরিভাবে ঈশ্বরের দ্বারা তার কাছে প্রকাশিত হয়েছিল অথবা হয়ত এক বংশ থেকে পরবর্তী বংশের কাছে মৌখিকভাবে কয়েকটি ঘটনার বিষয় প্রবাহিত হয়েছিল। যেহেতু প্রাচীনকালে মনুষ্য আয়ুর দীর্ঘতা বেশি ছিল, তাই, আদিপুস্তকে মোশির লিপিবদ্ধকৃত অধিকাংশই হয়ত আদম থেকে মোশির কাছে কেবলমাত্র পাঁচজন মনুষ্যের মাধ্যমে প্রবাহিত হয়েছিল—মথূসেল, শেম্, ইস্হাক, লেবী এবং আম্রাম।
এছাড়াও, মোশি হয়ত লিখিত বিবরণগুলিও পড়েছিলেন। এই বিষয়ে, এটি উল্লেখযোগ্য যে মোশি প্রায়ই যে ব্যক্তির বিষয় আলোচনা হবে তার নাম উল্লেখ করার আগে “বংশ-বৃত্তান্ত এই” এই বাক্যাংশটি ব্যবহার করেন। (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) (আদিপুস্তক ৬:৯; ১০:১; ১১:১০, ২৭; ২৫:১২, ১৯; ৩৬:১, ৯; ৩৭:২) কিছু পণ্ডিত বলেন যে, যে ইব্রীয় শব্দ টোহেলেধোথ এখানে “ইতিহাস” হিসাবে অনুবাদিত হয়েছে তা ইতিমধ্যেই অস্তিত্বমান লিখিত ঐতিহাসিক দলিলগুলিকে নির্দেশ করে যা মোশি তার লেখার জন্য এক উৎস হিসাবে ব্যবহার করেছিলেন। অবশ্যই, এটিকে চূড়ান্ত উপসংহার হিসাবে ধরা যায় না।
এটি হতে পারে যে আদিপুস্তকে যে তথ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে তা উপরে উল্লেখিত তিনটি পদ্ধতির দ্বারাই অর্জিত হয়েছিল—কিছু সরাসরি প্রকাশপ্রাপ্তির দ্বারা, কিছু মৌখিকভাবে প্রেরণের দ্বারা এবং কিছু লিখিত বিবরণ থেকে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হল যে যিহোবার আত্মা মোশিকে অনুপ্রাণিত করেছিল। সুতরাং, তিনি যা লিখেছিলেন তা যথার্থভাবেই ঈশ্বরের বাক্য হিসাবে দেখা হয়ে থাকে।
[৪ পৃষ্ঠার চিত্র]
বিভিন্ন উপায়ে, ঈশ্বর মানুষদের বাইবেল লিখতে অনুপ্রাণিত করেছিলেন