‘যিহোবার দিনে’ কারা রক্ষা পাবে?
“পবিত্র আচার ব্যবহার ও ভক্তিতে কিরূপ লোক হওয়া তোমাদের উচিত! ঈশ্বরের [“যিহোবার,” NW] সেই দিনের আগমনের অপেক্ষা ও আকাঙ্ক্ষা করিতে করিতে সেইরূপ হওয়া চাই।”—২ পিতর ৩:১১, ১২.
১. কারা এলিয়ের আত্মা এবং পরাক্রমে কাজ করেছেন?
যিহোবা ঈশ্বর মানবজাতির মধ্য থেকে সেই ব্যক্তিবিশেষদের নির্বাচিত করেছেন যারা স্বর্গীয় রাজ্যে তাঁর পুত্র, যীশু খ্রীষ্টের সহদায়াদ হবেন। (রোমীয় ৮:১৬, ১৭) তারা পৃথিবীতে থাকাকালীন, অভিষিক্ত খ্রীষ্টানেরা এলিয়ের আত্মা এবং পরাক্রমে কাজ করেছেন। (লূক ১:১৭) পূর্ববর্তী প্রবন্ধে, আমরা তাদের এবং ভাববাদী এলিয়ের কার্যাবলির মধ্যে নির্দিষ্ট কিছু সাদৃশ্য লক্ষ্য করেছিলাম। কিন্তু এলিয়ের উত্তরাধিকারী, ভাববাদী ইলীশায়ের কাজ সম্বন্ধে কী?—১ রাজাবলি ১৯:১৫, ১৬.
২. (ক) এলিয়ের শেষ এবং ইলীশায়ের প্রথম অলৌকিক কাজটি কী ছিল? (খ) কী প্রমাণ আছে যে এলিয় স্বর্গে যাননি?
২ তার আধিকারিক বস্ত্র দিয়ে আঘাত করে যর্দনের নদীর জলকে বিভক্ত করা ছিল এলিয়ের দ্বারা সম্পাদিত শেষ অলৌকিক কাজ। এর দ্বারা এলিয় এবং ইলীশায় শুষ্ক ভূমির উপর দিয়ে পার হতে পেরেছিলেন। তারা যখন নদীর পূর্ব দিকে হেঁটে যাচ্ছিলেন, এক ঘূর্ণবায়ু এলিয়কে পৃথিবীর অন্য এক স্থানে নিয়ে গিয়েছিল। (১৫ পৃষ্ঠায় “এলিয় কোন্ স্বর্গে উঠেছিলেন?” নামক বাক্সটি দেখুন।) এলিয়ের আধিকারিক বস্ত্রটি পড়েছিল। ইলীশায় যখন এটিকে যর্দনে আঘাত করতে ব্যবহার করেছিলেন, এর জল পুনরায় বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল আর তিনি শুষ্ক ভূমির উপর দিয়ে ফিরে আসতে সক্ষম হয়েছিলেন। এই অলৌকিক কাজটি এটি স্পষ্ট করেছিল যে ইস্রায়েলে সত্য উপাসনা উন্নীত করার ক্ষেত্রে ইলীশায় এলিয়ের উত্তরাধিকারী হয়েছিলেন।—২ রাজাবলি ২:৬-১৫.
ঈশ্বরীয় গুণাবলি অত্যাবশ্যকীয়
৩. পৌল এবং পিতর যীশুর উপস্থিতি এবং ‘যিহোবার দিন’ সম্বন্ধে কী বলেছিলেন?
৩ এলিয় এবং ইলীশায়ের দিনের বহু শতাব্দী পর, প্রেরিত পৌল এবং পিতর আসন্ন ‘যিহোবার দিনকে’ যীশু খ্রীষ্টের উপস্থিতি এবং ভবিষ্যৎ “নূতন আকাশমণ্ডলের ও নূতন পৃথিবীর” সাথে যুক্ত করেছিলেন। (২ থিষলনীকীয় ২:১, ২; ২ পিতর ৩:১০-১৩) যিহোবার মহৎ দিন—যখন ঈশ্বর তাঁর শত্রুদের ধ্বংস এবং তাঁর লোকেদের রক্ষা করবেন তা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য—আমাদের অবশ্যই যিহোবার অন্বেষণ এবং নম্রতা ও ধার্মিকতা প্রদর্শন করতে হবে। (সফনিয় ২:১-৩) কিন্তু আরও অতিরিক্ত কিছু গুণাবলি প্রতীয়মান হয় যখন আমরা ভাববাদী ইলীশায়ের সাথে জড়িত ঘটনাগুলি বিবেচনা করি।
৪. যিহোবার পরিচর্যায় উদ্যোগ কোন্ ভূমিকা পালন করে?
৪ আমরা যদি ‘যিহোবার দিনে’ রক্ষা পেতে চাই তাহলে ঈশ্বরের সেবার জন্য উদ্যোগ অত্যাবশকীয়। এলিয় এবং ইলীশায় যিহোবার সেবায় উদ্যোগী ছিলেন। অনুরূপ উদ্যোগে, অভিষিক্ত খ্রীষ্টানদের অবশিষ্টাংশেরা আজকে যিহোবার উদ্দেশ্যে পবিত্র পরিচর্যা এবং সুসমাচার প্রচারে নেতৃত্ব গ্রহণ করেন।a ১৯৩০ এর দশকের মধ্যবর্তী সময় থেকে, তারা তাদের সকলকে যিহোবার কাছে নিজেদের উৎসর্গীকৃত করতে এবং বাপ্তিস্ম গ্রহণ করতে উৎসাহিত করেছেন যারা রাজ্যের বার্তা এবং পৃথিবীতে অনন্তকাল বেঁচে থাকার আশা গ্রহণ করেছিল। (মার্ক ৮:৩৪; ১ পিতর ৩:২১) লক্ষ লক্ষ লোকেরা এই উৎসাহের প্রতি অনুকূল সাড়া প্রদান করেছিল। পূর্বে তারা আধ্যাত্মিক অন্ধকার এবং পাপে মৃত ছিল কিন্তু এখন তারা ঈশ্বরের সত্য জেনেছে, এক পার্থিব পরমদেশে অনন্ত জীবনের আশা গ্রহণ করেছে এবং যিহোবার সেবায় তারা উদ্যোগী। (গীতসংহিতা ৩৭:২৯; প্রকাশিত বাক্য ২১:৩-৫) তাদের উদ্যোগ, সহযোগিতা, আতিথেয়তা এবং অন্য উত্তম কাজগুলির দ্বারা তারা পৃথিবীতে এখনও অবস্থিত খ্রীষ্টের আধ্যাত্মিক ভাইদের জন্য পরম সতেজতা নিয়ে আসে।—মথি ২৫:৩১-৪৬.
৫. যীশুর “ভাইদের” প্রতি উত্তম কাজগুলি করা কেন এত গুরুত্বপূর্ণ এবং ইলীশায়ের দিনের কোন্ উদাহরণ আমাদের আছে?
৫ অভিষিক্ত ব্যক্তিরা তাঁর অনুগামী হওয়ার কারণে যারা যীশুর “ভাইদের” প্রতি উত্তম কাজগুলি করে তাদের ‘যিহোবার দিনে’ রক্ষা পাওয়ার আশা রয়েছে। শূনেম নামক গ্রামের এক বিবাহিত দম্পতি ইলীশায় এবং তার পরিচারকের প্রতি দয়া ও আতিথেয়তা দেখানোর জন্য প্রচুরভাবে আশীর্বাদপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। এই দম্পতির কোন পুত্র ছিল না এবং স্বামী বৃদ্ধ হয়েছিলেন। কিন্তু ইলীশায় শূনেমীয় স্ত্রীলোকটির কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে সে একটি পুত্রের জন্ম দেবে এবং সেইরূপ ঘটেছিল। কয়েক বছর পরে যখন এই একমাত্র পুত্রটি মারা গিয়েছিল, ইলীশায় শূনেমে গিয়েছিলেন এবং তাকে পুনরুত্থিত করেছিলেন। (২ রাজাবলি ৪:৮-১৭, ৩২-৩৭) ইলীশায়ের প্রতি আতিথেয়তা দেখানোর জন্য কতই না এক মহান পুরস্কার!
৬, ৭. নামান কোন্ উদাহরণ স্থাপন করেছিলেন এবং ‘যিহোবার দিনে’ রক্ষা পাওয়ার সাথে এটির কী সম্পর্ক রয়েছে?
৬ যিহোবার দিনে রক্ষা পাওয়ার আশা সহ খ্রীষ্টের “ভাইদের” কাছ থেকে বাইবেল-ভিত্তিক নির্দেশনা গ্রহণ করার জন্য নম্রতার প্রয়োজন। অরামীয় সেনাপতি কুষ্ঠী নামানকে বন্দী ইস্রায়েলীয় বালিকার পরামর্শ অনুসরণ করার এবং সুস্থ হওয়ার জন্য ইলীশায়কে খুঁজতে ইস্রায়েলে যাওয়ার ক্ষেত্রে নম্রতা দেখাতে হয়েছিল। নামানের সাথে দেখা করতে তার গৃহ থেকে বাইরে আসার পরিবর্তে, ইলীশায় তাকে এই বার্তা পাঠিয়েছিলেন: “আপনি গিয়া সাত বার যর্দ্দনে স্নান করুন, আপনার নূতন মাংস হইবে, ও আপনি শুচি হইবেন।” (২ রাজাবলি ৫:১০) নামানের আত্ম-সম্মানে আঘাত লেগেছিল আর তাই তিনি ক্রুদ্ধ হয়েছিলেন কিন্তু পরে তিনি নম্রভাবে গিয়েছিলেন এবং যর্দনে সাতবার ডুব দিয়েছিলেন আর তার ফলে “ক্ষুদ্র বালকের ন্যায় তাঁহার নূতন মাংস হইল, ও তিনি শুচি হইলেন।” (২ রাজাবলি ৫:১৪) গৃহে ফিরে যাওয়ার পূর্বে নামান যিহোবার ভাববাদীকে ধন্যবাদ দেওয়ার জন্য শমরীয়ায় ফিরে এসেছিলেন। ঈশ্বর-দত্ত ক্ষমতা থেকে বস্তুগত মুনাফা লাভ না করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ইলীশায় নামানের সাথে দেখা করার জন্য বাইরে এসেছিলেন কিন্তু কোন উপহার গ্রহণ করেননি। নামান নম্রভাবে ইলীশায়কে বলেছিলেন: “আপনার এই দাস সদাপ্রভু ব্যতিরেকে অন্য দেবতার উদ্দেশে হোম কিম্বা বলিদান আর করিবে না।”—২ রাজাবলি ৫:১৭.
৭ অভিষিক্তদের শাস্ত্রীয় পরামর্শ নম্রভাবে অনুসরণ করার দ্বারা লক্ষ লক্ষ ব্যক্তিরা আজকে প্রচুরভাবে আশীর্বাদপ্রাপ্ত হয়েছে। অধিকন্তু, যীশুর মুক্তির মূল্যরূপ মৃত্যুতে বিশ্বাস অনুশীলন করার দ্বারা এই সৎহৃদয়বান ব্যক্তিরা আধ্যাত্মিকভাবে পরিষ্কৃত হয়েছে। তারা এখন যিহোবা ঈশ্বর ও যীশু খ্রীষ্টের বন্ধু হওয়ার সুযোগ উপভোগ করছে। (গীতসংহিতা ১৫:১, ২; লূক ১৬:৯) আর ঈশ্বর ও তাঁকে সেবা করার প্রতি তাদের ভক্তি পুরস্কৃত হবে অনন্ত ধ্বংস থেকে তাদের নিষ্কৃতি পাওয়ার মাধ্যমে যা প্রায় দ্রুত নিকটবর্তী ‘যিহোবার দিনে’ গর্বিত, অনুতাপহীন পাপীদের প্রতি ঘটবে।—লূক ১৩:২৪; ১ যোহন ১:৭.
“কে আমার পক্ষে? কে?”
৮. (ক) যারা ‘যিহোবার দিনে’ রক্ষা পাবে তাদের ঐশিক ইচ্ছা পালনের ক্ষেত্রে কেমন মনোভাব থাকবে? (খ) যেহূকে কোন্ কার্যভার দেওয়া হয়েছিল? (গ) ঈষেবলের প্রতি কী ঘটার ছিল?
৮ যারা ‘যিহোবার দিনে’ রক্ষা পাওয়ার আশা করে তাদের অবশ্যই ঐশিক ইচ্ছা পালনের ক্ষেত্রে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হতে হবে। এলিয় সাহসের সাথে রাজা আহাবের খুনী, বালের উপাসনাকারী পরিবারের ধ্বংস সম্বন্ধে ভাববাণী করেছিলেন। (১ রাজাবলি ২১:১ ৭-২৬) কিন্তু, এই বিচারাজ্ঞা সম্পাদিত হওয়ার পূর্বে, এলিয়ের উত্তরাধিকারী ইলীশায়ের কিছু অসম্পূর্ণ কাজ সম্পূর্ণ করার ছিল। (১ রাজাবলি ১৯:১৫-১৭) যখন যিহোবার নিরূপিত সময় এসেছিল, ইলীশায় একজন পরিচারককে যেতে এবং সেনাপতি যেহূকে ইস্রায়েলের নতুন রাজা হিসাবে অভিষিক্ত করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। যেহূর মাথায় তেল ঢালার পর, বার্তাবাহকটি তাকে বলেছিলেন: “ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভু এই কথা কহেন, আমি সদাপ্রভুর প্রজাবৃন্দের উপরে, ইস্রায়েলের উপরে, তোমাকে রাজপদে অভিষেক করিলাম। তুমি আপন প্রভু আহাবের কুলকে আঘাত করিবে; এবং আমি আপন দাস ভাববাদিগণের রক্তের প্রতিশোধ ও সদাপ্রভুর সকল দাসের রক্তের প্রতিশোধ ঈষেবলের হস্ত হইতে লইব। বস্তুতঃ আহাবের সমুদয় কুল বিনষ্ট হইবে।” দুষ্ট রাণী ঈষেবলকে কুকুরদের কাছে ফেলে দেওয়া হবে এবং তার উপযুক্ত কবর হবে না।—২ রাজাবলি ৯:১-১০.
৯, ১০. ঈষেবলের ক্ষেত্রে এলিয়ের বাক্য কিভাবে পরিপূর্ণ হয়েছিল?
৯ যেহূর লোকেরা তার অভিষিক্তকরণের বৈধতা শনাক্ত করেছিল এবং তাকে ইস্রায়েলের নতুন রাজা হিসাবে ঘোষণা করেছিল। দৃঢ়সংকল্পবদ্ধভাবে কাজ করে, যেহূ বাল উপাসনার ধর্মভ্রষ্ট নেতাদের বিচার সম্পাদনের কাজ শুরু করতে যিষ্রিয়েলের পথে যাত্রা করেছিলেন। যেহূর বিচারের বাণ প্রথমে আহাবের পুত্র রাজা যোরামকে আঘাত করেছিল। তিনি রথে চড়ে নগরের বাইরে জিজ্ঞাসা করতে এসেছিলেন যে যেহূ শান্তির উদ্দেশ্যে এসেছেন কি না। যেহূ উত্তর দিয়েছিলেন, “যে পর্য্যন্ত তোমার মাতা ঈষেবলের এত ব্যভিচার ও মায়াবিত্ব থাকে, সে পর্য্যন্ত মঙ্গল কোথায়?” সঙ্গে সঙ্গে যেহূর বাণ যোরামের বুকে বিদ্ধ হয়েছিল।—২ রাজাবলি ৯:২২-২৪.
১০ ঈশ্বরীয় নারীরা ঈষেবলের মত হওয়াকে অথবা তার যে কোন স্বভাবকে এড়িয়ে চলেন। (প্রকাশিত বাক্য ২:১৮-২৩) যখন যেহূ যিষ্রিয়েলে পৌঁছান, সে নিজেকে আকর্ষণীয়া করার চেষ্টা করেছিল। জানালা থেকে নিচের দিকে তাকিয়ে সে তাকে পরোক্ষভাবে হুমকি দিয়ে সম্ভাষণ জানিয়েছিল। তিনি তার পরিচারকদের জিজ্ঞাসা করেছিলেন: “কে আমার পক্ষে? কে?” তৎক্ষণাৎ, দুই অথবা তিনজন নপুংসক নিচের দিকে তাকিয়েছিল। তারা কি যেহূর পক্ষে ছিল? তিনি আজ্ঞা দিয়েছিলেন, “উহাকে নীচে ফেলিয়া দেও।” সেই সময়ে, তারা দুষ্ট ঈষেবলকে জানালার বাইরে নিক্ষেপ করে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধভাবে কাজ করেছিল। সম্ভবত অশ্বদের খুরের নিচে সে পদদলিত হয়েছিল। যখন লোকেরা তাকে কবর দিতে আসে, “তাহার মাথার খুলি, পা ও করতল ব্যতিরেকে আর কিছুই পাইল না।” এলিয়ের বাক্যের কী এক নাটকীয় পরিপূর্ণতা: “কুকুরেরা ঈষেবলের মাংস খাইবে”!—২ রাজাবলি ৯:৩০-৩৭.
সত্য উপাসনার প্রতি আন্তরিক সমর্থন
১১. যিহোনাদব কে ছিলেন এবং সত্য উপাসনার প্রতি তিনি তার সমর্থন কিরূপে প্রদর্শন করেছিলেন?
১১ যারা ‘যিহোবার দিনে’ রক্ষা পাওয়ার এবং পৃথিবীতে অনন্তকাল বেঁচে থাকার আশা করে, তাদের অবশ্যই সত্য উপাসনাকে আন্তরিকভাবে সমর্থন করতে হবে। তাদের অবশ্যই যিহোনাদব অথবা যোনাদবের মত হতে হবে যিনি যিহোবার একজন ন-ইস্রায়েলীয় উপাসক ছিলেন। যেহূ যখন উদ্যোগের সাথে তার কার্যভার পরিপূর্ণ করে চলেন, যিহোনাদব তার অনুমোদন এবং সমর্থন প্রদর্শন করতে চেয়েছিলেন। তাই তিনি ইস্রায়েলের নতুন রাজার সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য বাইরে গিয়েছিলেন যিনি আহাবের গৃহের অবশিষ্টাংশদের বিচার সম্পাদনের জন্য অগ্রসর হচ্ছিলেন। যিহোনাদবকে দেখে যেহূ জিজ্ঞাসা করেছিলেন: “তোমার প্রতি আমার মন যেমন, তেমনি কি তোমার মন সরল?” যিহোনাদবের ইতিবাচক উত্তর যেহূকে তার হাত প্রসারিত করতে এবং যিহোনাদবকে তার যুদ্ধ রথে আমন্ত্রণ জানাতে পরিচালিত করেছিল এই বলার দ্বারা: “আমার সঙ্গে চল, সদাপ্রভুর নিমিত্ত আমার যে উদ্যোগ, তাহা দেখ।” বিলম্ব না করে, যিহোনাদব যিহোবার অভিষিক্ত ঘাতকের প্রতি তার সমর্থন দেখানোর সুযোগ গ্রহণ করেছিলেন।—২ রাজাবলি ১০:১৫-১৭.
১২. কেন যিহোবা ন্যায়সম্মতভাবে একাগ্র ভক্তি দাবি করেন?
১২ সত্য উপাসনার প্রতি আন্তরিক সমর্থন অবশ্যই যথাযথ, কারণ যিহোবা হলেন সৃষ্টিকর্তা এবং সার্বিক সার্বভৌম যিনি ন্যায়সম্মতভাবে আমাদের একাগ্র ভক্তি দাবি করেন এবং তা পাওয়ার যোগ্য। তিনি ইস্রায়েলীয়দের আদেশ দিয়েছিলেন: “তুমি আপনার নিমিত্তে খোদিত প্রতিমা নির্ম্মাণ করিও না; উপরিস্থ স্বর্গে, নীচস্থ পৃথিবীতে ও পৃথিবীর নীচস্থ জলমধ্যে যাহা যাহা আছে, তাহাদের কোন মূর্ত্তি নির্ম্মাণ করিও না; তুমি তাহাদের কাছে প্রণিপাত করিও না, এবং তাহাদের সেবা করিও না; কেননা তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু আমি স্বগৌরব [“একাগ্র ভক্তি,” NW] রক্ষণে উদ্যোগী ঈশ্বর।” (যাত্রাপুস্তক ২০:৪, ৫) যারা ‘যিহোবার দিনে’ রক্ষা পাওয়ার আশা করে, তাদের অবশ্যই তাঁকে “আত্মায় ও সত্যে” একাগ্রভাবে উপাসনা করতে হবে। (যোহন ৪:২৩, ২৪) তাদের অবশ্যই এলিয়, ইলীশায় এবং যিহোনাদবের মত সত্য উপাসনার প্রতি দৃঢ় হতে হবে।
১৩. যিহোনাদবের হৃদয় যেমন যেহূর সাথে ছিল, তেমনি কারা মশীহ রাজাকে স্বীকার করে এবং কিভাবে তারা এটি প্রদর্শন করে?
১৩ আহাবের গৃহের বিচার সম্পাদনের পর, রাজা যেহূ বাল উপাসকদের শনাক্ত করার এবং ইস্রায়েলের মধ্য থেকে এই মিথ্যা ধর্ম দূর করার অপর পদক্ষেপগুলি গ্রহণ করেছিলেন। (২ রাজাবলি ১০:১৮-২৮) আজকে, স্বর্গীয় রাজা যীশু খ্রীষ্ট যিহোবার শত্রুদের বিচার করার এবং তাঁর সার্বভৌমত্বকে মহিমান্বিত করার জন্য নিযুক্ত হয়েছেন। যিহোনাদবের হৃদয় যেমন যেহূর সাথে ছিল তেমনি যীশুর “অপর মেষ” এর “বিস্তর লোক” আজকে খ্রীষ্টকে মশীহ রাজা হিসাবে আন্তরিকভাবে স্বীকার করে এবং পৃথিবীতে তাঁর আধ্যাত্মিক ভাইদের সহযোগিতা করে। (যোহন ১০:১৬, NW; প্রকাশিত বাক্য ৭:৯, ১০) সত্য ধর্ম অনুশীলন এবং খ্রীষ্টীয় পরিচর্যায় উদ্যোগী অংশগ্রহণ আর দ্রুত আগতপ্রায় ‘যিহোবার দিন’ সম্বন্ধে ঈশ্বরের শত্রুদের সতর্ক করার মাধ্যমে তারা এর প্রমাণ দেয়।—মথি ১০:৩২, ৩৩; রোমীয় ১০:৯, ১০.
সম্মুখেই নাটকীয় ঘটনাগুলি রয়েছে!
১৪. মিথ্যা ধর্মের জন্য সম্মুখে কী রয়েছে?
১৪ ইস্রায়েল থেকে বাল উপাসনা শেষ করার জন্য যেহূ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। আমাদের দিনে, মহান যেহূ, খ্রীষ্ট যীশুর মাধ্যমে ঈশ্বর মিথ্যা ধর্মের বিশ্ব সাম্রাজ্য, মহতী বাবিলের ধ্বংস নিয়ে আসবেন। শীঘ্রই আমরা প্রেরিত যোহনের প্রতি দূতের বাক্যগুলির পরিপূর্ণতা দেখতে পাব: “তুমি যে ঐ দশ শৃঙ্গ এবং পশুটা দেখিলে তাহারা সেই বেশ্যাকে ঘৃণা করিবে, এবং তাহাকে অনাথা ও নগ্না করিবে, তাহার মাংস ভক্ষণ করিবে, এবং তাহাকে আগুনে পোড়াইয়া দিবে। কেননা ঈশ্বর তাহাদের হৃদয়ে এই প্রবৃত্তি দিয়াছিলেন, যেন তাহারা তাঁহারই মানস পূর্ণ করে, এবং একমনা হয়; আর যে পর্য্যন্ত ঈশ্বরের বাক্য সকল সিদ্ধ না হয়, সেই পর্য্যন্ত আপন আপন রাজ্য সেই পশুকে দেয়।” (প্রকাশিত বাক্য ১৭:১৬, ১৭; ১৮:২-৫) “দশ শৃঙ্গ” পৃথিবীতে শাসনরত সামরিক রাজনৈতিক শক্তিগুলিকে চিত্রিত করে। তাদের এখন মহতী বাবিলের সাথে ব্যভিচারমূলক সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও, তার সময় সংক্ষিপ্ত। এই জগতের রাজনৈতিক শক্তি মিথ্যা ধর্মকে ধ্বংস করবে এবং তাকে ধ্বংস করার ক্ষেত্রে “দশ শৃঙ্গ” এর সাথে ‘বন্য পশু’ অর্থাৎ রাষ্ট্রসংঘের এক মুখ্য ভূমিকা থাকবে।b যিহোবার প্রশংসা করার জন্য কী এক উপলক্ষ!—প্রকাশিত বাক্য ১৯:১-৬.
১৫. কী ঘটবে যখন ঈশ্বরের পার্থিব সংগঠনকে ধ্বংস করার চেষ্টা করা হবে?
১৫ বাল উপাসনার বিরুদ্ধে রাজা যেহূর প্রচণ্ড আক্রমণের পর, তার রাজকীয় সভাসদবর্গ ইস্রায়েলের রাজনৈতিক শত্রুদের প্রতি মনোযোগ দিয়েছিল। রাজা যীশু খ্রীষ্ট অনুরূপ পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। বালতুল্য মিথ্যা ধর্মের ধ্বংসের পর রাজনৈতিক শক্তিগুলি থেকে যাবে। শয়তান দিয়াবলের প্রভাবাধীনে, যিহোবার সার্বভৌমত্বের এই শত্রুরা ঈশ্বরের পার্থিব সংগঠনকে ধ্বংস করার চেষ্টাস্বরূপ তীব্র আক্রমণ করবে। (যিহিষ্কেল ৩৮:১৪-১৬) কিন্তু যিহোবা রাজা যীশু খ্রীষ্টকে যিহোবার সার্বভৌমত্বের মহিমা সম্পাদন করতে ‘সর্ব্বশক্তিমান্ ঈশ্বরের সেই মহাদিনের যুদ্ধ,’ হর্মাগিদোনে তাদের ধ্বংস করার মাধ্যমে আঘাত করার জন্য অনুমোদন করবেন।—প্রকাশিত বাক্য ১৬:১৪, ১৬; ১৯:১১-২১; যিহিষ্কেল ৩৮:১৮-২৩.
ইলীশায়ের উদ্যোগে সেবা করা
১৬, ১৭. (ক) কিভাবে আমরা জানতে পারি যে ইলীশায় তার জীবনের শেষ পর্যন্ত উদ্যোগী ছিলেন? (খ) সত্যের তীরগুলির দ্বারা আমাদের কী করা উচিত?
১৬ যতক্ষণ পর্যন্ত না ‘যিহোবার দিন’ শয়তানের সম্পূর্ণ দুষ্ট বিধিব্যবস্থার শেষ আনবে, ঈশ্বরের দাসেরা ইলীশায়ের মত সাহসী এবং উদ্যোগী হবে। এলিয়ের পরিচারক হিসাবে তার কাজ ছাড়াও ইলীশায় একাকী ৫০ বছরেরও বেশি সময় যিহোবার ভাববাদী হিসাবে সেবা করেছিলেন! আর ইলীশায় তার দীর্ঘ জীবনের শেষ পর্যন্ত উদ্যোগী ছিলেন। তার মৃত্যুর ঠিক পূর্বে যেহূর পৌত্র, রাজা যোয়াশ তার সাথে সাক্ষাৎ করেছিলেন। ইলীশায় তাকে একটি তীর জানালা দিয়ে নিক্ষেপ করতে বলেছিলেন। তীরটি এর সীমানা পর্যন্ত অগ্রসর হয়েছিল এবং ইলীশায় ব্যাখ্যা করেছিলেন: “এ সদাপ্রভুর বিজয়-বাণ, অরামের বিপক্ষে বিজয়-বাণ, কেননা আপনি অফেকে অরামীয়দিগকে আঘাত করিবেন, করিতে করিতে তাহাদিগকে নিঃশেষ করিবেন।” ইলীশায়ের অনুরোধে, যোয়াশ তারপর তার তীরগুলি দিয়ে ভূমিতে আঘাত করেছিলেন। কিন্তু তিনি তা উদ্যোগের সাথে করেননি, কেবলমাত্র তিনবার আঘাত করেছিলেন। তখন ইলীশায় বলেছিলেন যে ফলস্বরূপ, যোয়াশ অরামের উপর কেবলমাত্র তিনবার জয়ী হতে পারবেন এবং সেটিই ঘটেছিল। (২ রাজাবলি ১৩:১৪-১৯, ২৫) রাজা যোয়াশ অরামকে সম্পূর্ণভাবে, “নিঃশেষ” করা পর্যন্ত আঘাত করেননি।
১৭ কিন্তু, ইলীশায়ের মত উদ্যোগ সহকারে, অভিষিক্ত অবশিষ্টাংশেরা মিথ্যা উপাসনার প্রতি আক্রমণ করে চলেছেন। পার্থিব আশাসহ তাদের সঙ্গীরাও তাই করছে। অধিকন্তু, যারা ‘যিহোবার দিনে’ রক্ষা পাওয়ার আশা করে তারা সকলে পৃথিবীকে আঘাত করা সম্বন্ধীয় উদ্যোগী এলিয়ের বাক্যগুলি স্মরণে রাখলে ভাল করবে। আসুন আমরা সকলে সত্যের তীরগুলি গ্রহণ করি এবং বার বার উদ্যোগের সাথে সেগুলির দ্বারা আঘাত করি—হ্যাঁ, যতক্ষণ না যিহোবা বলেন যে সেগুলির দ্বারা আমাদের কাজ শেষ হয়েছে।
১৮. ২ পিতর ৩:১১, ১২ পদের বাক্যগুলির প্রতি আমাদের কিরূপ সাড়া দেওয়া উচিত?
১৮ ‘যিহোবার দিন’ শীঘ্রই বর্তমান দুষ্ট বিধিব্যবস্থার শেষ আনবে। আসুন আমরা নিজেদের প্রেরিত পিতরের উৎসাহজনক বাক্যগুলির দ্বারা উদ্দীপিত করি। পিতর জোরের সাথে বলেছিলেন, “এইরূপে যখন এই সমস্তই বিলীন হইবে, তখন পবিত্র আচার ব্যবহার ও ভক্তিতে কিরূপ লোক হওয়া তোমাদের উচিত! ঈশ্বরের সেই দিনের আগমনের অপেক্ষা ও আকাঙ্ক্ষা করিতে করিতে সেইরূপ হওয়া চাই।” (২ পিতর ৩:১১, ১২) যখন এই বিধিব্যবস্থার প্রত্যেক অংশ যীশু খ্রীষ্টের মাধ্যমে প্রকাশিত ঈশ্বরের ক্রোধের আগুনে ধ্বংস হবে, তখন কেবলমাত্র যাদের সৎ আচরণ এবং ঈশ্বরীয় ভয়ের নথি আছে, তারাই রক্ষা পাবে। নৈতিক এবং আধ্যাত্মিক বিশুদ্ধতা অত্যাবশ্যকীয়। সহমানবদের প্রতি প্রেমও হল ততখানি অত্যাবশ্যকীয় যা তাদের প্রয়োজনগুলির প্রতি সাড়া দানের দ্বারা প্রদর্শিত হয়, বিশেষভাবে এক আধ্যাত্মিক উপায়ে আমাদের খ্রীষ্টীয় পরিচর্যার মাধ্যমে।
১৯. ‘যিহোবার দিনে’ রক্ষা পাওয়ার জন্য আমাদের অবশ্যই কী করতে হবে?
১৯ আপনার বাক্য এবং কাজগুলি কী ঈশ্বরের একজন বিশ্বস্ত এবং উদ্যোগী দাস হিসাবে আপনাকে শনাক্ত করে? যদি তাই হয়, তাহলে আপনি ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাত নতুন জগতে ‘যিহোবার দিনে’ রক্ষা পাওয়ার আশা পোষণ করতে পারেন। হ্যাঁ, আপনি হয়ত রক্ষা পেতে পারেন যদি ইলীশায়ের প্রতি শূনেমীয় দম্পতি যেমন করেছিলেন তদ্রূপ আপনি খ্রীষ্টের আধ্যাত্মিক ভাইদের প্রতি উত্তম আচরণ করেন, কারণ তারা তাঁর অনুগামী। এছাড়াও রক্ষা পাওয়ার জন্য আপনাকে অবশ্যই নামানের মত হতে হবে যিনি নম্রভাবে ঐশিক নির্দেশনা গ্রহণ করেছিলেন এবং যিহোবার একজন উপাসক হয়েছিলেন। আপনি যদি পার্থিব পরমদেশে অনন্তকাল বেঁচে থাকার জন্য আকুল আকাঙ্ক্ষী হন, তাহলে আপনাকে অবশ্যই সত্য উপাসনার প্রতি আন্তরিক সমর্থন প্রদর্শন করতে হবে যেমন যিহোনাদব করেছিলেন। তখন আপনি হয়ত যিহোবার সেইসব বিশ্বস্ত দাসেদের মধ্যে থাকতে পারবেন যারা শীঘ্রই যীশুর বাক্যগুলির পরিপূর্ণতা অভিজ্ঞতা করবে: “আইস, আমার পিতার আশীর্ব্বাদ-পাত্রেরা, জগতের পত্তনাবধি যে রাজ্য তোমাদের জন্য প্রস্তুত করা গিয়াছে, তাহার অধিকারী হও।”—মথি ২৫:৩৪.
[পাদটীকাগুলো]
a ওয়াচটাওয়ার বাইবেল অ্যান্ড ট্র্যাক্ট সোসাইটি দ্বারা প্রকাশিত “তোমার নাম পবিত্র বলিয়া মান্য হউক,” (ইংরাজি) নামক বইটির ১৮ এবং ১৯ অধ্যায় দেখুন।
b ওয়াচটাওয়ার বাইবেল অ্যান্ড ট্র্যাক্ট সোসাইটি দ্বারা প্রকাশিত প্রকাশিত বাক্য—এর মহান পরিপূর্ণতা সন্নিকট! (ইংরাজি) নামক বইটির ২৫৪-৬ পৃষ্ঠা দেখুন।
আপনি কিভাবে উত্তর দেবেন?
◻ ‘যিহোবার দিনে’ রক্ষা পাওয়ার জন্য কিছু প্রয়োজনীয় গুণাবলি কী?
◻ ইলীশায়ের দিনে শূনেমীয় দম্পতি কোন্ উদাহরণ স্থাপন করেছিলেন?
◻ নামানের কাছ থেকে কোন্ শিক্ষা লাভ করা যেতে পারে?
◻ কিভাবে আমরা যিহোনাদবের উদাহরণ অনুসরণ করতে পারি?
◻ ২ পিতর ৩:১১, ১২ পদের কিভাবে আমাদের প্রভাবিত করা উচিত?