অভিযোগ করা কি সর্বদাই মন্দ?
যেগুলি সম্বন্ধে আমরা অভিযোগ করতে পারি না
সেগুলির চাইতে আর কোন্ বিরক্তিগুলি বেশি বেদনাদায়ক?—মারকুয়েস ডি কাসটিন ১৭৯০-১৮৫৭.
দুবছর ধরে তিনি একজন সহকর্মীর দ্বারা যৌন হেনস্থা সহ্য করেছিলেন। তার আপত্তি জানানোর ফল হয়েছিল কটুবাক্য শোনা এবং উদ্দেশ্যপূর্ণভাবে উপেক্ষিত হওয়া। এই অবদমিত চাপ তার স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করেছিল কিন্তু তিনি কী করতে পারতেন? অনুরূপভাবে, একজন ছাত্র যে তার শ্রেণীতে শীর্ষস্থানে ছিল, বিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিল কারণ তার বিবেক তাকে বিদ্যালয় দ্বারা আবশ্যকীয় সামরিক কলা সম্বন্ধীয় শরীরচর্চায় অংশ নিতে অনুমতি দেয়নি। তারা উভয়েই মনে করেছিল যে তাদের সাথে অন্যায় ব্যবহার করা হয়েছে কিন্তু তাদের কি অভিযোগ করা উচিত ছিল? যদি তারা তা করত, তাহলে তারা কি স্বস্তি আশা করতে পারত অথবা এটি কেবলমাত্র বিষয়গুলিকে আরও খারাপ করত?
এইধরনের এবং অন্যান্য অভিযোগগুলি আজকের দিনে সাধারণ বিষয়, কারণ আমরা এক অনাদর্শ জগতে অসিদ্ধ মনুষ্যের মাঝে বাস করি। পরোক্ষ অসন্তোষ প্রকাশ, শোক, যন্ত্রণা, কোন পরিস্থিতির কারণে ক্ষোভ থেকে শুরু করে কারও বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে দোষ দেওয়া পর্যন্ত অভিযোগের পরিধি পরিব্যাপ্ত। অধিকাংশ লোকেরা অভিযোগ করা এবং পরস্পরের মুখোমুখি হওয়াকে এড়িয়ে চলে; কিন্তু, একজন কি সর্বদাই চুপ থাকবে? বাইবেলের দৃষ্টিভঙ্গি কী?
নিজের এবং অন্যদের উপর মন্দ ফলগুলি
নিঃসন্দেহে দীর্ঘস্থায়ী অভিযোগ করার মনোভাব ক্ষতিকর এবং বাইবেল এটিকে নিন্দা করে। একজন অভিযোগকারী তার নিজের জন্য শারীরিক এবং আধ্যাত্মিক ক্ষতি নিয়ে আসে এবং যারা তার অভিযোগের লক্ষ্য হয় তাদের বিক্ষুব্ধ করে। একজন অভিযোগকারী স্ত্রীর বিষয় উল্লেখ করে বাইবেলের প্রবাদবাক্য জানায়: “ভারী বৃষ্টির দিনে অবিরত বিন্দুপাত, আর বিবাদিনী স্ত্রী, এ উভয়ই সমান।” (হিতোপদেশ ২৭:১৫) সরাসরি যিহোবা অথবা তাঁর কোন একটি ব্যবস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা বিশেষভাবে দোষণীয়। ৪০ বছর ধরে প্রান্তরে ভ্রমণ করার সময়ে অলৌকিকভাবে প্রদত্ত মান্নাকে “লঘু ভক্ষ্য” বলে অভিহিত করে ইস্রায়েল জাতি যখন অভিযোগ জানিয়েছিল, তখন যিহোবা সেই অশ্রদ্ধাকর অভিযোগকারীদের শাস্তি দিতে বিষাক্ত সর্প পাঠিয়েছিলেন আর অনেকেই মারা গিয়েছিল।—গণনাপুস্তক ২১:৫, ৬.
অধিকন্তু, যীশু আমাদের সহমানবদের মধ্যে পরিলক্ষিত দোষগুলি অর্থাৎ “কুটা” সম্বন্ধে অভিযোগ না করতে কিন্তু আমাদের নিজেদের ভুলত্রুটিগুলি অর্থাৎ বৃহৎ “কড়িকাট” সম্বন্ধে ভালভাবে অবগত হতে তাঁর অনুগামীদের উপদেশ দিয়েছিলেন। (মথি ৭:১-৫) অনুরূপভাবে, পৌল অন্যের বিচার (অভিযোগ করার একটি রূপ) করাকে “অমার্জনীয়” (NW) বলে নিন্দা করেছিলেন “কেননা তুমি যে বিচার করিতেছ, তুমি সেই মত আচরণ করিয়া থাক।” অভিযোগ করার বিরুদ্ধে এই সতর্কীকরণের আমাদের অপ্রয়োজনীয়ভাবে সমালোচক হওয়া এবং অভিযোগ করার এক মনোভাব গড়ে তোলাকে এড়াতে পরিচালিত করা উচিত।—রোমীয় ২:১.
অভিযোগ করা কি সর্বদাই নিন্দনীয়?
তাহলে, আমাদের কি এই উপসংহার করা উচিত যে সকল প্রকার অভিযোগই নিন্দনীয়? না, আমাদের তা করা উচিত নয়। বাইবেল ইঙ্গিত করে যে এই ত্রুটিযুক্ত জগতে, যেখানে আমরা বাস করি, অনেক অন্যায় রয়েছে যা যথার্থই সংশোধনের উপযুক্ত। একটি দৃষ্টান্তে, যীশু একজন অধার্মিক বিচারকের বিষয় উল্লেখ করেছিলেন যিনি অনিচ্ছুকভাবেও একজন নিপীড়িত বিধবার প্রতি ন্যায়বিচার করেছিলেন যাতে করে সে “সর্ব্বদা আসিয়া [তাহাকে] জ্বালাতন করিয়া” না তোলে। (লূক ১৮:১-৮) কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমরাও হয়ত যতক্ষণ পর্যন্ত না অন্যায়ের প্রতিকার করা হয়, আমাদের অভিযোগগুলি সম্পর্কে নাছোড়বান্দা হতে পারি।
ঈশ্বরের রাজ্য আসার জন্য প্রার্থনা করতে আমাদের উৎসাহিত করে যীশু কি আমাদের এই বর্তমান জগতের ত্রুটিগুলিকে শনাক্ত এবং প্রতিকারের জন্য ঈশ্বরের কাছে ‘ক্রন্দন’ করতে উপদেশ দেননি? (মথি ৬:১০) যখন প্রাচীন সদোম ও ঘমোরার দুষ্টতা সম্বন্ধীয় “ক্রন্দন” তাঁর কানে পৌঁছেছিল, তখন যিহোবা ‘ক্রন্দনানুসারে তাহারা সর্ব্বতোভাবে [কাজ করিয়াছে] কি না তাহা দেখিবার’ ও তার প্রতিকার করার জন্য তাঁর বার্তাবাহকদের পাঠিয়েছিলেন। (আদিপুস্তক ১৮:২০, ২১) যারা তাঁর কাছে অভিযোগ জানিয়েছিল তাদের মুক্তি দিতে যিহোবা পরবর্তী সময়ে সেই দুটি শহর এবং তাদের অনৈতিক অধিবাসীদের ধ্বংস করে সেই পরিস্থিতির প্রতিকার করেছিলেন।
খ্রীষ্টীয় মণ্ডলী
খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীতে ভাইদের মাঝে এটি কি ভিন্ন হওয়া উচিত? যদিও তারা অসিদ্ধ পুরুষ ও নারী, খ্রীষ্টানেরা আন্তরিকভাবে শান্তি এবং একতায় ঈশ্বরের সেবা করার জন্য প্রচেষ্টা করে। তবু, তাদের মধ্যেও সেই পরিস্থিতিগুলি উত্থাপিত হয় যা কিছু মাত্রায় অভিযোগের কারণ প্রদান করে ও তার মীমাংসা প্রয়োজনীয় হয়ে ওঠে। প্রথম শতাব্দীতে, পঞ্চাশত্তমীর অল্প কিছু পরেই অভিষিক্ত ব্যক্তিদের মণ্ডলীতে একটি পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছিল। অনেক নতুন ধর্মান্তরিত খ্রীষ্টানেরা আরও নির্দেশনা এবং উৎসাহ লাভের জন্য যিরূশালেমে থেকে গিয়েছিল। যে খাদ্য সরবরাহ করা হত তাকে বন্টন করে নিতে হত। যাইহোক, “গ্রীক ভাষাবাদী যিহূদীরা ইব্রীয়দের বিপক্ষে বচসা করিতে লাগিল, কেননা দৈনিক পরিচর্য্যায় তাহাদের বিধবারা উপেক্ষিত হইতেছিল।” সমস্যা সৃষ্টিকারী হিসাবে এই অভিযোগকারীদের নিন্দা না করে প্রেরিতেরা পরিস্থিতিটির প্রতিকার করতে পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। হ্যাঁ, উপযুক্ত উদ্দেশ্য ও সঠিক মনোভাব নিয়ে করা ন্যায্য অভিযোগগুলি, যারা মণ্ডলীতে তত্ত্বাবধান করেন তারা নম্রভাবে শুনে থাকেন এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে পদক্ষেপ নেন।—প্রেরিত ৬:১-৬; ১ পিতর ৫:৩.
সঠিক কর্তৃপক্ষের প্রতি
উপরোক্ত উদাহরণগুলি থেকে আপনি কি লক্ষ্য করেছেন যে অভিযোগগুলি সঠিক মনোভাব নিয়ে এবং সঠিক কর্তৃপক্ষের কাছে করা উচিত? উদাহরণস্বরূপ, দুর্বহ করের বোঝা সম্বন্ধে একজন পুলিশ কর্মীর কাছে অথবা একজনের শারীরিক অসুস্থতা সম্বন্ধে একজন বিচারকের কাছে অভিযোগ করা মূর্খতার কাজ হবে। তাই, একইভাবে মণ্ডলীর ভিতরের কিংবা বাইরের কোন পরিস্থিতি সম্বন্ধে এমন কোন ব্যক্তির কাছে অভিযোগ করা অনুপযুক্ত হবে যার কোনরকম কর্তৃত্ব অথবা সাহায্য করার যোগ্যতা কোনটাই নেই।
বর্তমানে অধিকাংশ দেশগুলিতে, আদালতগুলি এবং অন্যান্য উপযুক্ত কর্তৃপক্ষেরা আছেন যেখানে কিছু পরিমাণ স্বস্তির আশায় আবেদন করা যেতে পারে। এই প্রবন্ধের প্রারম্ভে উল্লেখিত ছাত্রটি যখন আদালতে তার অভিযোগ জানিয়েছিল, বিচারকেরা তার অনুকূলে বিচার করেছিলেন আর বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে অপরাধ স্বীকার করে তাকে পুনর্বহাল করা হয়েছিল। অনুরূপভাবে, মহিলা কর্মীটি যিনি যৌন হেনস্থা ভোগ করেছিলেন, মহিলা শ্রমিক সংঘের মাধ্যমে স্বস্তিলাভ করেছিলেন। বিদ্যালয় পরিষদের পক্ষ থেকে তার কাছে অপরাধ স্বীকার করা হয়েছিল। তার নিয়োগকর্তা যৌন হেনস্থা বন্ধ করার জন্য পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।
কিন্তু, এটি প্রত্যাশা করা উচিত হবে না যে সমস্ত অভিযোগেরই একই পরিণাম হবে। জ্ঞানী রাজা শলোমন বাস্তবধর্মীভাবে লক্ষ্য করেছিলেন: “যাহা বক্র, তাহা সোজা করা যায় না।” (উপদেশক ১:১৫) এটি উপলব্ধি করা আমাদের জন্য উত্তম যে স্বাভাবিকভাবেই কিছু বিষয়ের ক্ষেত্রে ঈশ্বরের জন্য অপেক্ষা করতে হবে যিনি তাঁর নিরূপিত সময়ে সেগুলি প্রতিকার করবেন।
[৩১ পৃষ্ঠার চিত্র]
প্রাচীনেরা ন্যায্য অভিযোগগুলি শোনেন এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে পদক্ষেপ নেন