ওয়াচটাওয়ার অনলাইন লাইব্রেরি
ওয়াচটাওয়ার
অনলাইন লাইব্রেরি
বাংলা
  • বাইবেল
  • প্রকাশনাদি
  • সভা
  • w৯৮ ৯/১৫ পৃষ্ঠা ২৪-২৭
  • আফ্রিকার সংস্কৃতিতে কনে-পণ

এই বাছাইয়ের সঙ্গে কোনো ভিডিও প্রাপ্তিসাধ্য নেই।

দুঃখিত, ভিডিওটা চালানো সম্বভব হচ্ছে না।

  • আফ্রিকার সংস্কৃতিতে কনে-পণ
  • ১৯৯৮ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • উপশিরোনাম
  • অনুরূপ বিষয়বস্ত‌ু
  • যুক্তিসংগত বাইবেল নীতিগুলি
  • Subheading is not there in vernacular
  • অখ্রীষ্টীয় আচরণগুলি পরিহার করা
  • যুক্তিবাদী হওয়ার বিভিন্ন উদাহরণ
  • যুক্তিবাদী হওয়ার উপকারগুলি
  • আপনি কি জানতেন?
    প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য সম্বন্ধে ঘোষণা করে (অধ্যয়ন)—২০২২
  • এক সফল বিয়ের জন্য প্রস্তুত হওয়া
    পারিবারিক সুখের রহস্য
  • ঈশ্বরের প্রাচীন দাসেদের মধ্যে নারীদের মর্যাদাপূর্ণ ভূমিকা
    ১৯৯৫ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে এক উত্তম সম্পর্ক বজায় রাখা
    ২০১৫ সচেতন থাক!
আরও দেখুন
১৯৯৮ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
w৯৮ ৯/১৫ পৃষ্ঠা ২৪-২৭

আফ্রিকার সংস্কৃতিতে কনে-পণ

বাইবেলের সময়ের মত আজকেও কিছু সংস্কৃতি দাবি করে যে একজন পুরুষ বিয়ের আগেই নারীর কনে-পণ পরিশোধ করবেন। “আপনার কনিষ্ঠা কন্যা রাহেলের জন্য আমি সাত বৎসর আপনার দাস্যকর্ম্ম করিব,” যাকোব তার ভাবী শ্বশুর লাবনকে বলেছিলেন। (আদিপুস্তক ২৯:১৮) রাহেলের প্রতি যাকোবের ভালবাসার কারণে তিনি এক উচ্চমূল্য—সাত বছরের বেতনের সমতুল্য শ্রম প্রদান করেছিলেন! লাবন এতে রাজি হয়েছিলেন কিন্তু কৌশলে যাকোবের সঙ্গে প্রথমে তার জ্যেষ্ঠা কন্যা লেয়ার বিয়ে দিয়েছিলেন। যাকোবের সঙ্গে লাবনের পরবর্তী কথাগুলিও প্রতারণাপূর্ণ ছিল। (আদিপুস্তক ৩১:৪১) লাবন বস্তুগত লাভের উপর জোর দেওয়ায় তার প্রতি তার মেয়েদের সম্মান হারিয়েছিলেন। “আমরা কি তাঁহার কাছে বিদেশিনীরূপে গণ্য নহি? তিনি ত আমাদিগকে বিক্রয় করিয়াছেন এবং আমাদের রৌপ্য আপনি ভোগ করিয়াছেন,” তারা বলেছিলেন।—আদিপুস্তক ৩১:১৫.

দুঃখের বিষয় যে আজকের বস্তুবাদী জগতে অনেক বাবামা লাবনের মত। আর কেউ কেউ তার চেয়েও খারাপ। আফ্রিকার একটি সংবাদপত্র অনুসারে, কিছু বিয়ে “কেবল লোভী মুনাফাখোর বাবাদের লাভবান করার জন্যই” স্থির করা হয়। অর্থনৈতিক চাপ হল আরেকটি কারণ, যেটি কিছু বাবামাকে তাদের মেয়েদেরকে অর্থনৈতিক সংকট লাঘবের এক উপায় হিসাবে মনে করার জন্য প্রলোভিত করে।a

কিছু বাবামা তাদের মেয়ের বিয়ে দিতে দেরি করেন, কারণ তারা উচ্চমূল্যের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। এটি গুরুতর সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। পূর্ব আফ্রিকার একটি সংবাদপত্রের একজন সংবাদদাতা লিখেছিলেন: “যুবক-যুবতীরা তাদের নাছোড়বান্দা শ্বশুরবাড়ির লোকেদের দাবিকৃত অত্যধিক যৌতুক থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য, প্রণয়ীর সঙ্গে পালিয়ে যাওয়া বেছে নেয়।” এক উচ্চ কনে-পণ দাবি করার ফলে সৃষ্ট সমস্যাগুলির মধ্যে একটি হল, যৌন অনৈতিকতা। এছাড়াও, কিছু যুবক একজন স্ত্রী ক্রয় করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করেন ঠিকই কিন্তু তারা এক বিরাট ঋণে জড়িয়ে পড়েন। “বাবামাদের যুক্তিবাদী হওয়া উচিত,” দক্ষিণ আফ্রিকার একজন সমাজকর্মী পরামর্শ দিয়েছিলেন। “তাদের অত্যন্ত উচ্চমূল্য দাবি করা উচিত নয়। নববিবাহিত দম্পতিদের ভবিষ্যৎ রয়েছে, . . . তাহলে কেন যুবকটিকে দেউলিয়া করবেন?”

খ্রীষ্টীয় বাবামারা কিভাবে কনে-পণ দেওয়া ও নেওয়ার সময় যুক্তিবাদী হওয়ার উদাহরণ স্থাপন করতে পারেন? এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কারণ বাইবেল আদেশ দেয়: “তোমাদের শান্ত [“যুক্তিবাদী,” “NW”] ভাব মনুষ্যমাত্রের বিদিত হউক।”—ফিলিপীয় ৪:৫.

যুক্তিসংগত বাইবেল নীতিগুলি

খ্রীষ্টীয় বাবামারা কনে-পণ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেবেন কি না, তা ব্যক্তিগত বিষয়। যদি তারা তা করা বেছে নেন তবে এইধরনের সমঝোতা বাইবেলের নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া উচিত। “তোমাদের আচার ব্যবহার ধনাসক্তিবিহীন হউক,” ঈশ্বরের বাক্য বলে। (ইব্রীয় ১৩:৫) বিবাহ স্থির করার সময় যদি এই নীতিটি মানা না হয়, তবে একজন খ্রীষ্টীয় বাবা দেখান যে তিনি এই ক্ষেত্রে ভাল উদাহরণ নন। খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীতে দায়িত্বপ্রাপ্ত পুরুষদের “যুক্তিবাদী” হওয়া প্রয়োজন কিন্তু ‘অর্থলোভী’ অথবা “কুৎসিত লাভের আকাঙ্ক্ষী” হওয়া উচিত নয়। (১ তীমথিয় ৩:৩, ৮) যদি কোন খ্রীষ্টান লোভের বশবর্তী হয়ে অথবা কোন অনুতাপ ছাড়াই এক উচ্চ কনে-পণ আদায় করেন তিনি হয়ত মণ্ডলী থেকে এমনকি সমাজচ্যুত হতে পারেন।—১ করিন্থীয় ৫:১১, ১৩; ৬:৯, ১০.

লোভের ফলে সৃষ্ট সমস্যার কারণে কিছু সরকার নাগরিকদের শোষিত হওয়া থেকে বাঁচানোর জন্য আইন চালু করেছে। উদাহরণস্বরূপ, ভারতে পণ দেওয়া ও নেওয়ার জন্য কোনরকমের সমঝোতা করা বেআইনী ও আইনের চোখে শাস্তিযোগ্য। ভারতে বসবাসকারী খ্রীষ্টানেরা এই আইনটি মেনে চলেন। পশ্চিম আফ্রিকার টোগো শহরের একটি আইন উল্লেখ করে যে কনে-পণ “বস্তুসামগ্রী অথবা নগদ অর্থ দুই উপায়েই দেওয়া যেতে পারে।” আইনটিতে আরও বলা হয়েছে: “কোনভাবেই, কনে-পণের মূল্য ১০,০০০ এফ সিএফএ (২০ মার্কিন ডলার) এর বেশি হওয়া উচিত নয়।” বাইবেল বার বার খ্রীষ্টানদের আইনমান্যকারী নাগরিক হওয়ার আজ্ঞা দেয়। (তীত ৩:১) এমনকি যদি সরকার এইধরনের একটি আইন মেনে চলার জন্য চাপ নাও দেয়, তবুও একজন সত্য খ্রীষ্টান আজ্ঞার বাধ্য হতে চাইবেন। এভাবে তিনি ঈশ্বরের সম্মুখে এক সৎ সংবেদ বজায় রাখবেন এবং অন্যের বিঘ্নের কারণ হবেন না।—রোমীয় ১৩:১, ৫; ১ করিন্থীয় ১০:৩২, ৩৩.

Subheading is not there in vernacular

কিছু সংস্কৃতিতে, যে উপায়ে কনে-পণ ধার্য করা হয় তা হয়ত আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ নীতির সঙ্গে সংঘর্ষের সৃষ্টি করতে পারে। বাইবেল অনুসারে, একজন বাবা তার পরিবারের সমস্ত বিষয়ের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত। (১ করিন্থীয় ১১:৩; কলসীয় ৩:১৮, ২০) তাই, মণ্ডলীতে যারা দায়িত্বপূর্ণ অবস্থানে আছেন সেই পুরুষদের এমন হওয়া প্রয়োজন যারা ‘সন্তান সন্ততি ও আপন আপন ঘর উত্তমরূপে শাসন করেন।’—১ তীমথিয় ৩:১২.

কিন্তু, কিছু সমাজে হয়ত বিয়ে ঠিক করার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি পরিবারের মস্তকের আত্মীয়দের উপর ছেড়ে দেওয়া হয়। আর এই আত্মীয়রা কনে-পণ থেকে একটি অংশ দাবি করেন। এটি খ্রীষ্টীয় পরিবারের সম্মুখে একটি পরীক্ষা নিয়ে আসে। প্রথার নামে, কিছু পরিবারের মস্তকেরা অবিশ্বাসী আত্মীয়দের দিয়ে এক উচ্চ কনে-পণ আদায় করাকে অনুমোদন করেন। এটি কখনও কখনও একজন খ্রীষ্টান মেয়েকে একজন অবিশ্বাসীকে বিয়ে করার দিকে পরিচালিত করেছে। আর এটি খ্রীষ্টানদের “কেবল প্রভুতেই” বিবাহ করা উচিত এই উপদেশের বিপরীত। (১ করিন্থীয় ৭:৩৯) পরিবারের মস্তক যদি তার অবিশ্বাসী আত্মীয়দের এমন সিদ্ধান্ত নিতে প্রশ্রয় দেন, যা তার সন্তানদের আধ্যাত্মিক মঙ্গলের ক্ষেত্রে ক্ষতিকর প্রমাণিত হয়, তবে তিনি “আপন ঘরের শাসন উত্তমরূপে” করছেন বলে গণ্য করা যায় না।—১ তীমথিয় ৩:৪.

ঈশ্বর-ভয়শীল কূলপতি অব্রাহামের মত একজন খ্রীষ্টান পিতা যদি তার সন্তানের বিবাহ ঠিক করার সময় সরাসরি অংশ না নেন, তাহলে কী হবে? (আদিপুস্তক ২৪:২-৪) এই কাজটি সম্পন্ন করার জন্য যদি অন্য কেউ নিযুক্ত হন, তাহলে খ্রীষ্টান পিতার নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন যে যিনি বিবাহের জন্য আলাপ আলোচনা করবেন তিনি যেন বাইবেলের যুক্তিসংগত নীতিগুলির মেনে তা করেন। এছাড়াও, কনে-পণ স্থির করার যে কোন পদক্ষেপ নেওয়ার সময় খ্রীষ্টান বাবামাদের সতর্কতার সঙ্গে বিষয়টি চিন্তা করা উচিত এবং তারা নিজেরা যাতে অযৌক্তিক প্রথা ও দাবিগুলি অনুমোদন না করেন, সেই বিষয়েও সতর্ক হওয়া উচিত।—হিতোপদেশ ২২:৩.

অখ্রীষ্টীয় আচরণগুলি পরিহার করা

বাইবেল অহংকার এবং “জীবিকার দর্প”-কে নিন্দা করে। (১ যোহন ২:১৬; হিতোপদেশ ২১:৪) তথাপি, খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীর সঙ্গে মেলামেশা করেন এমন ব্যক্তিবিশেষেরা তাদের বিবাহ স্থির করার সময় এই আচরণগুলি প্রদর্শন করেছেন। কেউ কেউ মোটা অঙ্কের কনে-পণ বা প্রাপ্ত বস্তু গর্বের সঙ্গে প্রদর্শন করে জগৎকে অনুকরণ করেন। অপরদিকে, ওয়াচ টাওয়ার সোসাইটির আফ্রিকার শাখা অফিস বিবৃতি দেয়: “পরিবার যখন তাদের দাবিদাওয়ার ক্ষেত্রে যুক্তিসংগত হয়েছিল, কিছু স্বামী তাদের স্ত্রীদের প্রতি সম্মান দেখাননি, বরং তারা তাদের স্ত্রীদের একটি ‘ছাগলের’ দামে কেনা এক পণ্যসামগ্রীর মত দেখেছিলেন।”

উচ্চমূল্যের কনে-পণের প্রতি লোভ, কিছু খ্রীষ্টানদের গ্রাস করেছে এবং দুঃখজনক পরিণতির দিকে নিয়ে গিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ওয়াচ টাওয়ার সোসাইটির আরেকটি শাখা অফিস থেকে প্রাপ্ত এই বিবৃতিটি বিবেচনা করুন: “অবিবাহিত ভাইদের পক্ষে বিয়ে করা এবং বোনদের সাথী খুঁজে পাওয়া প্রায়ই কষ্টকর ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। এর পরিণতিস্বরূপ, যৌন অনৈতিকতার কারণে প্রচুর সংখ্যক ব্যক্তিরা সমাজচ্যুত হন। কিছু ভাই সোনা অথবা হীরে অনুসন্ধান করার জন্য খনিতে যান যেন সেগুলি বিক্রি করে বিয়ে করার জন্য যথেষ্ট অর্থ অর্জন করতে পারেন। এটির জন্য হয়ত এক, দুই অথবা তারও বেশি বছরের প্রয়োজন হয়। আর এর ফলস্বরূপ, তারা সাধারণত আধ্যাত্মিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন কারণ তারা ভাইদের এবং মণ্ডলীর সাহচর্য থেকে অনেক দূরে থাকেন।”

এইধরনের দুঃখজনক পরিণতিগুলি পরিহার করার জন্য খ্রীষ্টান বাবামাদের মণ্ডলীর পরিপক্ব ব্যক্তিদের উদাহরণ অনুসরণ করা উচিত। প্রেরিত পৌল যদিও একজন পিতা ছিলেন না, তবুও সহবিশ্বাসীদের সঙ্গে আচরণের ক্ষেত্রে তিনি যুক্তিসংগত ছিলেন। তিনি যে কারও উপর অত্যন্ত ভারী এক বোঝা চাপিয়ে দেওয়াকে এড়িয়ে চলার ক্ষেত্রে সতর্ক ছিলেন। (প্রেরিত ২০:৩৩) কনে-পণ ধার্য করার সময়, খ্রীষ্টীয় বাবামাদের অবশ্যই তার নিঃস্বার্থ উদাহরণ বিবেচনা করা উচিত। বাস্তবিকপক্ষে পৌল এটি লেখার জন্য ঐশিকভাবে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন: “ভ্রাতৃগণ, তোমরা সকলে মিলিয়া আমার অনুকারী হও, এবং আমরা যেমন তোমাদের আদর্শ, তেমনি আমাদের ন্যায় যাহারা চলে, তাহাদের প্রতি দৃষ্টি রাখ।”—ফিলিপীয় ৩:১৭.

যুক্তিবাদী হওয়ার বিভিন্ন উদাহরণ

বিবাহ স্থির করার বিষয়টি যখন আসে, অনেক বাবামা যুক্তিবাদী হওয়ার ক্ষেত্রে ভাল উদাহরণ স্থাপন করেছেন। যোসেফ ও তার স্ত্রী মে, যারা পূর্ণ-সময়ের সুসমাচার প্রচারক হিসাবে পরিচর্যা করছেন তাদের বিষয়টি বিবেচনা করুন।b তারা শলোমন দ্বীপপুঞ্জের এমন একটি স্থানে বাস করেন, যেখানে কনে-পণ ধার্য করা কখনও কখনও সমস্যার সৃষ্টি করে। এইধরনের সমস্যাগুলি পরিহার করার জন্য, যোসেফ এবং মে তাদের মেয়ে হেলেনের জন্য পার্শ্ববর্তী একটি দ্বীপে বিয়ের ব্যবস্থা করেছিলেন। তারা তাদের অন্য মেয়ে এস্তেরের ক্ষেত্রেও একইরকম করেছিলেন। এছাড়াও যোসেফ স্বীকার করেছিলেন যে তার জামাতা, পিটার যুক্তিসংগতভাবে ন্যায্য পরিমাণের চেয়েও কম কনে-পণ দিয়েছিলেন। এরূপ করার কারণ জিজ্ঞাসা করায় যোসেফ বর্ণনা করেছিলেন: “আমি আমার অগ্রগামী জামাতার উপর একটি বোঝা চাপিয়ে দিতে চাইনি।”

আফ্রিকার অনেক যিহোবার সাক্ষীও যুক্তিবাদী হওয়ার ক্ষেত্রে উত্তম উদাহরণ স্থাপন করেছেন। কিছু অঞ্চলে, যৌথ পরিবারের সদস্যেরা সাধারণত আশা করেন যে প্রকৃত কনে-পণ ধার্য করার আগেই এক মোটা অঙ্কের অর্থ প্রদান করা হবে। আর কনেকে নিশ্চিত করার জন্য বর হয়ত এই প্রতিজ্ঞা করবেন বলে আশা করা হয় যে তিনি তার বাগ্‌দত্তার ছোট ভাইয়ের ভাবী কনে-পণও পূরণ করবেন।

এর বিপরীতে, কোসি এবং তার স্ত্রী মারার উদাহরণ বিবেচনা করুন। তাদের কন্যা বেবোকো সম্প্রতি যিহোবার সাক্ষীদের একজন ভ্রমণ অধ্যক্ষকে বিয়ে করেছেন। বিয়ের আগে, আত্মীয়রা এক উচ্চ কনে-পণ থেকে তাদের অংশ দেওয়ার জন্য বাবামাদের অত্যন্ত চাপ দিয়েছিলেন। কিন্তু, ওই দম্পতি দৃঢ় ছিলেন এবং এই দাবিগুলি মেনে নেননি। পরিবর্তে, তারা সরাসরি তাদের ভাবী জামাতার সঙ্গে কনে-পণের বিষয়টি স্থির করেছিলেন, তাদের কন্যার জন্য ন্যূনতম কনে-পণ দিতে অনুরোধ করেছিলেন এবং এর অর্ধেক নব দম্পতিকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন, যাতে তারা তাদের বিবাহ দিনের জন্য প্রস্তুতিতে তা ব্যবহার করতে পারেন।

এই একই দেশের আরেকটি উদাহরণ হল, ইটোঙ্গো নামে একজন যুবতী সাক্ষীর। প্রথমে তার পরিবার এক যুক্তিসংগত কনে-পণ ধার্য করেছিলেন। কিন্তু আত্মীয়রা সেটির পরিমাণ বাড়ানোর দাবি করেছিলেন। পরিস্থিতিটি কঠিন ছিল এবং মনে হয়েছিল বোধহয় আত্মীয়রাই জয়ী হবেন। কিন্তু ভীরু প্রকৃতির হলেও ইটোঙ্গো উঠে দাঁড়িয়েছিলেন এবং সম্মানের সঙ্গে বলেছিলেন যে বিবাহের জন্য যেমন কথাবার্তা ইতিমধ্যেই স্থির হয়েছে সেই অনুসারেই তিনি সান্‌জ নামে একজন উদ্যমী খ্রীষ্টানকে বিয়ে করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তারপর তিনি সাহসের সঙ্গে “বেকি” (অর্থ, “বিষয়টি স্থির হয়ে গেছে”) বলেছিলেন ও বসেছিলেন। তিনি তার খ্রীষ্টান মা, সেম্বেকোর সমর্থন পেয়েছিলেন। তারপর এই বিষয়ে আর কোন আলোচনা হয়নি এবং এই দম্পতি পূর্ব পরিকল্পনা মতই বিয়ে করেছিলেন।

কনে-পণ থেকে ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হওয়ার থেকেও বড় বিষয়গুলি রয়েছে যে সম্বন্ধে খ্রীষ্টীয় বাবামারা ভেবে থাকেন। ক্যামেরুনের একজন স্বামী বর্ণনা করেন: “আমি আমার শাশুড়ীকে তার মেয়ের কনে-পণ হিসাবে যা দিতে চেয়েছিলাম, তা বলার কোন সুযোগই তিনি আমাকে দেননি বরং বলেছিলেন যে আমি যেন সেগুলি তার মেয়ের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলির যত্ন নেওয়ার জন্য ব্যবহার করি।” প্রেমময় বাবামারা তাদের সন্তানদের আধ্যাত্মিক মঙ্গলের বিষয়েও উদ্বিগ্ন। উদাহরণস্বরূপ, ফারাই এবং রুডোর কথা বিবেচনা করুন যারা জিম্বাবোয়েতে বাস করেন এবং বেশির ভাগ সময়ই ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার প্রচারের কাজ করেন। যদিও তারা চাকরি করতেন না, তবুও তারা তাদের দুই মেয়েকে স্বাভাবিক পরিমাণের চেয়ে অনেক কম মূল্যে বিয়ে দিয়েছিলেন। এর কারণ কী? তারা চেয়েছিলেন যে তাদের মেয়েরা যেন এমন ব্যক্তিদের বিয়ে করার ফলে উপকৃত হয়, যারা যিহোবাকে প্রকৃতই ভালবাসেন। “আমরা আমাদের মেয়ে ও জামাতাদের আধ্যাত্মিক বিষয়গুলিকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেছিলাম,” তারা বর্ণনা করেছিলেন। কতই না সতেজতাদায়ক! শ্বশুরবাড়ির লোকেরা, যারা তাদের বিবাহিত সন্তানদের আধ্যাত্মিক এবং বস্তুগত মঙ্গলের বিষয়ে চিন্তা করেন তাদের উচ্চভাবে প্রশংসা করা উচিত।

যুক্তিবাদী হওয়ার উপকারগুলি

শলোমন দ্বীপপুঞ্জের যোসেফ এবং মে যে উদার ও সতর্ক উপায়ে তাদের কন্যাদের বিয়ের ব্যবস্থা করেছিলেন তার জন্য তারা আশীর্বাদ পেয়েছিলেন। ফলে তাদের জামাতারা ঋণে জড়িয়ে পড়েননি। পরিবর্তে, উভয় দম্পতিই রাজ্যের বার্তা প্রচারে পূর্ণ-সময় পরিচারক হিসাবে অনেক বছর কাজ করতে সক্ষম হয়েছেন। অতীতের কথা চিন্তা করে যোসেফ বলেন: “আমি ও আমার পরিবার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম তার ফলে প্রচুর আশীর্বাদ এসেছে। এটি সত্য যে যারা উপলব্ধি করেননি তাদের কাছ থেকে কখনও কখনও প্রচুর চাপ এসেছে কিন্তু আমার সন্তানদের যিহোবার পরিচর্যায় ব্যস্ত এবং সক্রিয় দেখার ফলে আমার সৎ সংবেদ রয়েছে ও আমি পরিতৃপ্ত। তারাও সুখী এবং আমি ও আমার স্ত্রীও অত্যন্ত আনন্দিত।”

আরেকটি উপকারিতা হল শ্বশুরবাড়ির লোকেদের মধ্যে সুসম্পর্ক। উদাহরণস্বরূপ, জোনদাই ও সিবোসিসো ও তাদের স্ত্রীরা ওয়াচ টাওয়ার সোসাইটির জিম্বাবোয়ে শাখা অফিসে স্বেচ্ছাসেবী কর্মী হিসাবে সেবা করেন। জোনদাই ও সিবোসিসোর স্ত্রীরা দুজনে আপন বোন। তাদের শ্বশুর, ডাকারাই একজন পূর্ণ-সময়ের সুসমাচার প্রচারক এবং কোন চাকরি করেন না। কনে-পণ ধার্য করার সময় তিনি বলেছিলেন যে তারা যতটুকু দিতে সমর্থ তাই তিনি নেবেন। “আমরা আমাদের শ্বশুরকে অত্যন্ত ভালবাসি,” জোনদাই ও সিবোসিসো বলেন, “আর তার প্রয়োজনের সময়, আমরা আমাদের যথাসম্ভব করব।”

হ্যাঁ, কনে-পণ ধার্য করার সময় যুক্তিবাদী হওয়া পরিবারের সুখের ক্ষেত্রে অবদান রাখে। উদাহরণস্বরূপ, এতে নববিবাহিত ব্যক্তিরা ঋণে জড়িয়ে পড়েন না এবং তাদের পক্ষে বিবাহিত জীবনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া সহজ হয়। এটি অনেক অল্পবয়সী দম্পতিকে আধ্যাত্মিক আশীর্বাদ ভোগ করতে যেমন, প্রচার ও শিষ্যকরণের জরুরি কাজে পূর্ণ-সময়ের সেবা করতে সক্ষম করেছে। ফলস্বরূপ, এটি বিবাহের প্রেমময় উদ্যোক্তা যিহোবা ঈশ্বরের গৌরব নিয়ে আসে।—মথি ২৪:১৪; ২৮:১৯, ২০.

[পাদটীকাগুলো]

a কিছু সংস্কৃতিতে, পরিস্থিতিটি এর উল্টো। শ্বশুরবাড়ির লোকেরা কনের বাবামার কাছ থেকে যৌতুক আশা করেন।

b এই প্রবন্ধে বিকল্প নাম ব্যবহার করা হয়েছে।

[২৭ পৃষ্ঠার বাক্স]

তারা কনে-পণ ফিরিয়ে দিয়েছিলেন

কিছু সমাজে কনে-পণ কম হলে কনে এবং তার বাবামাকে নিচু চোখে দেখা হয়। তাই, কখনও কখনও উচ্চ মূল্য ধার্য করার উদ্দেশ্য হল, গর্ব এবং পরিবারের প্রতিপত্তি জাহির করার ইচ্ছা। নাইজেরিয়ার লাগোসে একটি পরিবার এক উজ্জ্বল বৈষম্য প্রদান করে। তাদের জামাতা ডেলে বর্ণনা করেন:

“আমার স্ত্রীর পরিবার আমাকে কনে-পণ অনুষ্ঠানের প্রথাগত অনেক খরচ থেকে অব্যাহতি দিয়েছিলেন, যেমন অনেক দামি পোশাক ক্রয় করা। এমনকি যখন আমার পরিবার তাদের কনে-পণ দিয়েছিলেন তাদের মুখপাত্র জিজ্ঞাসা করেছিলেন: ‘আমাদের মেয়েকে আপনারা বধূ হিসাবে না মেয়ে হিসাবে নিতে চান?’ আমার পরিবার একসঙ্গে উত্তর দিয়েছিল: ‘আমরা তাকে মেয়ে হিসাবে নিতে চাই।’ তারপর, ওই একই খামে করে কনে-পণের অর্থ আমাদেরকে ফেরত দেওয়া হয়েছিল।

“আমাদের বিবাহে আমার শ্বশুরবাড়ির লোকেদের ব্যবহার আমি আজও উপলব্ধি করি। এটি আমাকে তাদের সম্বন্ধে উচ্চ ধারণা পোষণ করতে সাহায্য করেছে। তাদের চমৎকার আধ্যাত্মিক দৃষ্টিভঙ্গি আমাকে তাদের অত্যন্ত নিকট আত্মীয় হিসাবে দেখতে সাহায্য করে। এছাড়াও এটি আমার স্ত্রীকে আমি কিভাবে মূল্যায়ন করি তার মধ্যেও এক অসাধারণ প্রভাব ফেলে। আমি তার পরিবারের কাছ থেকে যে ব্যবহার পেয়েছি সেইজন্য তার প্রতি এক গভীর উপলব্ধি গড়ে তুলেছি। আমাদের মধ্যে যখন মতভেদ উত্থাপিত হয়, আমি এটিকে কোনও সমস্যায় পরিণত হতে দিই না। সে কোন্‌ পরিবার থেকে এসেছে তা যখন আমি ভাবি মতভেদ কমে যায়।

“আমার ও তার পরিবার বন্ধুত্বের বন্ধনে দৃঢ়ভাবে আবদ্ধ হয়েছে। এমনকি এখনও, আমাদের বিবাহের দুই বছর পরও আমার বাবা আমার স্ত্রীর বাবার বাড়িতে উপহার ও খাবার জিনিস পাঠান।”

    বাংলা প্রকাশনা (১৯৮৯-২০২৬)
    লগ আউট
    লগ ইন
    • বাংলা
    • শেয়ার
    • পছন্দসমূহ
    • Copyright © 2025 Watch Tower Bible and Tract Society of Pennsylvania
    • ব্যবহারের শর্ত
    • গোপনীয়তার নীতি
    • গোপনীয়তার সেটিং
    • JW.ORG
    • লগ ইন
    শেয়ার