স্থানীয় সংস্কৃতি এবং খ্রীষ্টীয় নীতি একে অন্যের পরিপূরক?
উত্তর ইউরোপের একজন ভাই স্টিফেন আফ্রিকার একটি দেশে মিশনারি হয়ে গিয়েছিলেন। একদিন সেখানকার এক ভাইয়ের সঙ্গে তিনি শহরের রাস্তা দিয়ে হাঁটছিলেন। হঠাৎই যখন সেই ভাই তার হাত ধরেন, স্টিফেন আশ্চর্য হয়ে গিয়েছিলেন।
ব্যস্ত রাস্তায় আরেকজন পুরুষের হাত ধরে হাঁটার কথা স্টিফেন ভাবতেই পারেন না কারণ তার দেশে যদি দুজন ব্যক্তি হাত ধরে হাঁটে তাহলে তাদের সমকামী বলে মনে করা হয়। (রোমীয় ১:২৭) কিন্তু, আফ্রিকার সেই ভাইয়ের কাছে হাত ধরে চলা খারাপ কিছু ছিল না কারণ তার দেশে এটি বন্ধুত্বের এক প্রকাশ। হাত ধরাকে প্রত্যাখ্যান করার মানে হচ্ছে বন্ধুত্বকে প্রত্যাখ্যান করা।
বিভিন্ন সংস্কৃতির মধ্যে আকাশ পাতাল পার্থক্য রয়েছে আর তা বোঝা আমাদের জন্য কেন জরুরি? প্রথম কারণটি হল, যিহোবার লোকেরা ঈশ্বরের কাছ থেকে পাওয়া তাদের দায়িত্বটি পালন করতে চান। আর সেই দায়িত্বটি হল ‘সমুদয় জাতিকে শিষ্য করা।’ (মথি ২৮:১৯) এই কাজটি করার জন্য কেউ কেউ সেই সব জায়গায় গিয়েছেন যেখানে খ্রীষ্টীয় পরিচারকদের অনেক বেশি প্রয়োজন রয়েছে। এই নতুন পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হলে তাদের অবশ্যই, সেখানকার ভিন্ন সংস্কৃতিকে বুঝতে ও সেগুলির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে হবে। তাহলেই তারা সেখানকার ভাইবোনদের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করতে পারবেন আর সেইসঙ্গে প্রচার কাজেও বেশি সাফল্য পাবেন।
এছাড়াও, এই অশান্ত জগতে অনেক লোক রাজনৈতিক অথবা অর্থনৈতিক কারণগুলির জন্য তাদের সমস্যাবহুল মাতৃভূমি ছেড়ে অন্যান্য দেশে স্থায়ীভাবে বাস করছেন। তাই এই নতুন প্রতিবেশীদের কাছে প্রচার করার সময় আমরা নিত্য নতুন প্রথাগুলি দেখতে পাই। (মথি ২২:৩৯) প্রথম প্রথম এই সমস্ত আচার ব্যবহার দেখে আমাদের মনে নতুন সংস্কৃতি সম্বন্ধে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হতে পারে।
কোথায় মেলে, কোথায় মেলে না
প্রত্যেক সমাজের নিজস্ব সংস্কৃতি রয়েছে আর এমন কোন সমাজ নেই যার কোন সংস্কৃতি নেই। তাই, প্রত্যেকটি ক্ষুদ্র প্রথাই বাইবেলের নীতির সঙ্গে মেলে কি না তা পরীক্ষা করা আর “অতি ধার্ম্মিক” হওয়া কী এক ব্যর্থ প্রয়াসই না হবে!—উপদেশক ৭:১৬.
অপরদিকে, যে স্থানীয় প্রথাগুলি স্পষ্টভাবে ঐশিক নীতিকে লঙ্ঘন করে সেগুলি চেনা দরকার। সাধারণত তা করা কঠিন নয় কারণ আমাদের কাছে ঈশ্বরের বাক্য আছে আর তা আমাদের “সংশোধন” করে। (২ তীমথিয় ৩:১৬) উদাহরণস্বরূপ, কিছু দেশে একজনের বেশি স্ত্রী রাখা হল একটি প্রথা কিন্তু সত্য খ্রীষ্টানদের জন্য শাস্ত্রীয় মানদণ্ডটি হল একজন পুরুষের জন্য কেবল একজন জীবিত স্ত্রী থাকবে।—আদিপুস্তক ২:২৪; ১ তীমথিয় ৩:২.
একইভাবে, কেউ মারা গেলে মন্দ আত্মাদের তাড়ানোর জন্য পরিকল্পিত কিছু ক্রিয়াকর্ম বা আত্মার অমরত্বে বিশ্বাসের সঙ্গে জড়িত অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার নির্দিষ্ট প্রথাগুলিতে সত্য খ্রীষ্টানেরা কখনও অংশ নেন না। মন্দ আত্মাদের তাড়ানোর জন্য কিছু ব্যক্তি মৃতদের উদ্দেশে ধূপ জ্বালান অথবা তাদের জন্য প্রার্থনা করেন। অন্যান্যেরা বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠান করে মৃত দেহ পাহারা দেন এবং এমনকি দ্বিতীয়বার কবর দেওয়ার ব্যবস্থা করেন, যার উদ্দেশ্য হল সেই মৃত ব্যক্তিকে ‘পরবর্তী জগতে’ বেঁচে থাকার জন্য প্রস্তুত হতে সাহায্য করা। কিন্তু বাইবেল শিক্ষা দেয় যে একজন ব্যক্তি যখন মারা যায় সে “কিছুই জানে না” এবং কারও মঙ্গল বা ক্ষতি কিছুই করতে পারে না।—উপদেশক ৯:৫; গীতসংহিতা ১৪৬:৪.
অবশ্য এমন অনেক প্রথাও রয়েছে যেগুলি ঈশ্বরের বাক্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। যেমন আতিথেয়তা দেখানো, অপরিচিতদের সম্ভাষণ করা এবং প্রয়োজনে তাদের ঘরে আমন্ত্রণ জানানো। এইরকম সংস্কৃতি এখনও অনেক দেশে দেখতে পাওয়া যায় আর তা দেখে কতই না ভাল লাগে! আপনি যখন সরাসরি এইরকম ব্যবহার পান, তখন আপনারও কি তা করার জন্য মন থেকে ইচ্ছা হয় না? যদি হয়ে থাকে, তবে নিশ্চিতভাবে এটি আপনার খ্রীষ্টীয় ব্যক্তিত্বকে উন্নত করবে।—ইব্রীয় ১৩:১, ২.
আমাদের মধ্যে কারও কি অপেক্ষা করতে ভাল লাগে? কিছু দেশে তা খুব কমই হয়ে থাকে কারণ সময়ানুবর্তিতাকে খুবই গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়। বাইবেল আমাদের জানায় যে যিহোবা হলেন শৃঙ্খলার ঈশ্বর। (১ করিন্থীয় ১৪:৩৩) ফলে, দুষ্টতা ধ্বংস করার জন্য তিনি ‘দিন ও দণ্ড’ স্থির করেছেন এবং আমাদের তিনি আশ্বাস দেন যে এই বিষয়টি ঘটবে “যথাকালে বিলম্ব করিবে না।” (মথি ২৪:৩৬; হবক্কূক ২:৩) যে সংস্কৃতি নিয়মানুবর্তিতাকে গুরুত্ব দেয় তা আমাদের সুশৃঙ্খল হতে সাহায্য করে এবং আমরা অন্য ব্যক্তি ও তাদের সময়ের প্রতি যথার্থ সম্মান দেখাতে পারি আর নিশ্চিতরূপে তা বাইবেলের নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।—১ করিন্থীয় ১৪:৪০; ফিলিপীয় ২:৪.
অক্ষতিকর প্রথাগুলি সম্বন্ধে কী?
কিছু প্রথা আছে যা খ্রীষ্টানেরা পালন করতে পারেন কিন্তু কিছু প্রথা আছে যেগুলি পালন করা তাদের জন্য ঠিক নয়। কিন্তু সেই প্রথাগুলি সম্বন্ধে কী বলা যায়, যেগুলি সঠিক না ভুল বলে বাইবেল কিছু বলে না? অনেক প্রথা আছে যেগুলি পালন করা অন্যায় নয় কিন্তু আমরা সেগুলিকে কোন্ দৃষ্টিতে দেখি তা আমাদের আধ্যাত্মিক ভারসাম্যতাকে দেখাতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, সম্ভাষণ জানানোর অনেক রীতি রয়েছে—করমর্দন করা, নত হওয়া, চুমু দেওয়া, এমনকি আলিঙ্গন করা। একইভাবে খাবারের টেবিলের আদবকায়দার বিষয়েও অনেক প্রথা রয়েছে। কিছু দেশে লোকেরা একই থালা অথবা পাত্র থেকে খাবার খেয়ে থাকেন। নির্দিষ্ট কয়েকটি দেশে ঢেকুর তোলা খুবই ভাল বলে মনে করা হয়—এমনকি তা খুবই কাম্য—কারণ এটি উপলব্ধি প্রকাশের একটি অভিব্যক্তি, কিন্তু অন্য জায়গায় এটি একেবারেই অপচ্ছন্দের ব্যাপার আর খুবই বাজে একটি অভ্যাস বলে মনে করা হয়।
এই অক্ষতিকর প্রথাগুলির মধ্যে কোন্টি আমার পছন্দের আর কোন্টি পছন্দের নয় তা ভেবে সময় নষ্ট করার চেয়ে, সেগুলির প্রতি সঠিক মনোভাব গড়ে তোলার উপর মনোযোগ দেওয়া দরকার। বাইবেলের চিরন্তন পরামর্শ আমাদের বলে যে আমরা যেন ‘প্রতিযোগিতার কিম্বা অনর্থক দর্পের বশে কিছুই না করি, বরং নম্রভাবে প্রত্যেক জন আপনা হইতে অন্যকে শ্রেষ্ঠ জ্ঞান করি।’ (ফিলিপীয় ২:৩) একইভাবে, দয়া করে, এভাবে—আদবকায়দার একটি গ্রন্থ (ইংরাজি) নামক তার বইয়ে ইলিনার বোয়কিন বলেন: “সবচেয়ে প্রথমে আপনার যা প্রয়োজন, তা হল একটি সদয় হৃদয়।”
যদি আমাদের এই নম্র মনোভাব থাকে তাহলে আমরা অন্যদের প্রথাগুলিকে অসম্মান করব না। অন্যদের প্রথার মধ্যে খারাপ কিছু দেখা ও সেগুলিতে অংশ নেওয়া থেকে পিছিয়ে না থেকে আমাদের তাদের জীবনযাত্রা সম্বন্ধে শিখতে তাদের প্রথাগুলিতে অংশ নিতে আর তাদের খাবারের স্বাদ নেওয়ার জন্য চেষ্টা করা উচিত। ইতিবাচক মনোভাব রেখে এবং নতুন আচার-ব্যবহারগুলি চেষ্টা করতে ইচ্ছুক হয়ে আমরা আমাদের নিমন্ত্রণ কর্তা অথবা বিদেশী প্রতিবেশীদের প্রতি শ্রদ্ধা দেখাই। এছাড়াও আমরা নিজেদের হৃদয় ও উপলব্ধিবোধকে ‘প্রশস্ত করার’ দ্বারা উপকৃত হই।—২ করিন্থীয় ৬:১৩.
প্রথা যদি আধ্যাত্মিক অগ্রগতিকে পিছিয়ে দেয়
আমরা যদি এমন প্রথার সম্মুখীন হই যা অশাস্ত্রীয় নয় কিন্তু আমাদের আধ্যাত্মিক অগ্রগতিকে বাধা দেয় তাহলে কী বলা যায়? উদাহরণস্বরূপ, কিছু দেশে, লোকেদের মধ্যে হয়ত কাজ ফেলে রাখার প্রবণতা রয়েছে। জীবনকে এইরকম হালকাভাবে নেওয়া হয়ত চাপ কমাতে পারে কিন্তু এটি সম্ভবত আমাদের পরিচর্যা “সম্পন্ন” করাকে মুশকিল করে তুলবে।—২ তীমথিয় ৪:৫.
অন্যদের আমরা কিভাবে জরুরি বিষয়গুলি “আগামীকালের” জন্য ফেলে না রাখার জন্য বোঝাতে পারি? মনে রাখুন, “সবচেয়ে প্রথমে আপনার যা প্রয়োজন তা হল একটি সদয় হৃদয়।” তাদের জন্য ভাল উদাহরণ স্থাপন করা ছাড়াও আমরা প্রেমের সঙ্গে বোঝাতে পারি যে আজকের কাজটি আজকেই করে ফেলার উপকারগুলি কী। (উপদেশক ১১:৪) কিন্তু একইসঙ্গে আমরা কাজ করার ওপর এত বেশি জোর দেব না যাতে করে আমাদের পারস্পরিক আস্থা এবং নির্ভরতা নষ্ট হয়ে যায়। আমাদের পরামর্শ যদি অন্যেরা তৎক্ষণাৎ মেনে নাও নেন, আমাদের সেটিকে তাদের উপর চাপিয়ে দেওয়া উচিত নয় অথবা আমরা তাদের উপর বিরক্তও হব না। কার্যকারিতার চেয়ে সর্বদা প্রেম প্রাধান্য পাওয়া উচিত।—১ পিতর ৪:৮; ৫:৩.
স্থানীয় পছন্দ-অপছন্দকে মূল্য দিন
আমাদের নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন, যে পরামর্শই আমরা দিই না কেন তা যেন সুযুক্তিপূর্ণ হয় এবং তা যেন নিজেদের পছন্দকে অন্যের উপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা না হয়। যেমন পোশাকের কথাই ধরা যাক। এক এক জায়গায় এক এক রকমের পোশাক পরা হয়। অনেক জায়গায় রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করার সময় একজন ব্যক্তির টাই পরা উপযুক্ত। আবার কিছু দেশে তা হয়ত একেবারে উদ্ভট লাগতে পারে। তাই আমাদের এলাকায় কোন ধরনের পোশাককে উপযুক্ত মনে করা হয় আর কোন পোশাককে উদ্ভট তা আমাদের জানা খুবই প্রয়োজন। আর তা জানার জন্য আমাদের জন্য একজন পেশাদার ব্যক্তির পরামর্শ নেওয়া ভাল। পোশাকের মত স্পর্শকাতর বিষয়গুলি সম্বন্ধে ভাবার সময় ‘সুবুদ্ধিভাব’ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।—১ তীমথিয় ২:৯, ১০.
কোন প্রথা যদি আমাদের মনমত না হয় তাহলে কী বলা যায়? আমাদের কি তা অবিবেচকের মত অবজ্ঞা করা উচিত? একেবারেই নয়। পূর্বে উল্লেখিত হাত ধরার প্রথাটি আফ্রিকার সেই নির্দিষ্ট সমাজে সম্পূর্ণরূপে গ্রহণযোগ্য ছিল। মিশনারি ভাই যখন তার আশেপাশে অন্য পুরুষদের হাত ধরে হাঁটতে দেখেছিলেন, তখন তিনি বিষয়টিকে সহজভাবে নিয়েছিলেন।
প্রেরিত পৌল তার ব্যাপক মিশনারি যাত্রায় বিভিন্ন মণ্ডলী পরিদর্শন করেছিলেন, যেখানকার সদস্যেরা বিভিন্ন পটভূমি থেকে এসেছিলেন। নিঃসন্দেহে, প্রায়ই সংস্কৃতির দ্বন্দ্ব দেখা যেত। অতএব, পৌল বাইবেলের নীতি দৃঢ়ভাবে মেনে যে প্রথাগুলি পালন করা যায়, সেগুলি পালন করতেন। তিনি বলেছিলেন, “কতকগুলি লোককে পরিত্রাণ করিবার জন্য আমি সর্ব্বজনের কাছে সর্ব্ববিধ হইলাম।”—১ করিন্থীয় ৯:২২, ২৩; প্রেরিত ১৬:৩.
নতুন প্রথাগুলিকে আমরা কোন্ চোখে দেখব তা ঠিক করতে কয়েকটি প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন হয়ত আমাদের সাহায্য করতে পারে। নির্দিষ্ট কোন প্রথা পালন করার—অথবা তা না করার দ্বারা—আমাদের যারা দেখছেন তাদেরকে আমরা আমাদের সম্বন্ধে কোন্ ধারণা দিচ্ছি? তারা কি আমাদের রাজ্যের বার্তার প্রতি আকৃষ্ট হবেন, কারণ তারা দেখতে পাচ্ছেন যে আমরা তাদের সংস্কৃতির সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা করছি? অপরদিকে, আমরা যদি স্থানীয় প্রথাকে মেনে নিই, তবে কি ‘আমাদের পরিচর্য্যা-পদ কলঙ্কিত হয়?’—২ করিন্থীয় ৬:৩.
আমরা “সর্ব্বজনের কাছে সর্ব্ববিধ” হতে চাইলে আমাদের সঠিক ও ভুল সম্বন্ধে যে কিছু বদ্ধমূল ধারণা আছে তার পরিবর্তন করতে হতে পারে। আমাদের আচরণ “সঠিক” না “ভুল” তা সাধারণত আমরা যেখানে থাকি সেখানকার উপর নির্ভর করে। যেমন পুরুষে পুরুষে হাত ধরা একটি দেশে বন্ধুত্বের অভিব্যক্তি হলেও, অন্যান্য অনেক দেশে নিশ্চিতরূপে তা রাজ্যের বার্তা থেকে মনোযোগ সরিয়ে নেবে।
কিন্তু, আরও অনেক প্রথা রয়েছে যেগুলি বিভিন্ন স্থানে গ্রহণযোগ্য ও খ্রীষ্টানদের জন্য হয়ত সঠিক; তথাপি আমাদের অবশ্যই সাবধান হওয়া উচিত।
সীমা অতিক্রম করার ক্ষেত্রে সাবধান হোন!
যীশু খ্রীষ্ট বলেছিলেন যে, যদিও তাঁর শিষ্যদের জগৎ থেকে নিয়ে যাওয়া যাবে না তবুও তাদের এমনভাবে জীবনযাপন করতে হয়েছিল যেন তারা “জগতের নয়।” (যোহন ১৭:১৫, ১৬) কিন্তু কখনও কখনও কোন্টি শয়তানের জগতের অবিচ্ছেদ্য অংশ আর কোন্টি নিছক সংস্কৃতি এর মধ্যে পার্থক্য করা সহজ হয় না। উদাহরণস্বরূপ, নাচ ও গান প্রায় সকল সংস্কৃতিতেই রয়েছে কিন্তু কিছু কিছু দেশে সেগুলিকে অত্যধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়।
আমরা হয়ত সুযুক্তিপূর্ণ শাস্ত্রীয় কারণগুলির চেয়ে বরং আমাদের পটভূমির উপর ভিত্তি করেই সহজে একটি সিদ্ধান্ত নিতে পারি। অ্যালেক্স নামে একজন জার্মান ভাই স্পেনে কার্যভার পেয়েছিলেন। তার দেশে নাচ খুব বেশি জনপ্রিয় ছিল না কিন্তু স্পেনে এটি সংস্কৃতির একটি অঙ্গ। প্রথমবার তিনি যখন একজন ভাই ও বোনকে প্রাণবন্ত স্থানীয় নাচ করতে দেখেছিলেন, তিনি কিছুটা বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন। এইধরনের নাচ কী ভুল? এটি কি জাগতিক? তিনি যদি এই প্রথাকে মেনে নেন তাহলে সেটি কি তার খ্রীষ্টীয় মানকে নিচে নামিয়ে দেবে? অ্যালেক্স পরে বুঝতে পেরেছিলেন যে এই গান ও নাচ যদিও কিছুটা আলাদারকমের, তবুও এই স্প্যানিশ ভাই ও বোন খ্রীষ্টীয় মান থেকে নিচে নেমে গিয়েছিলেন এমন ভাবার কোন কারণই নেই। তার বিভ্রান্তি সংস্কৃতির ভিন্নতার কারণে হয়েছিল।
কিন্তু ভাই এমেলিও, যিনি ঐতিহ্যবাহী স্প্যানিশ নাচ উপভোগ করেন তিনি বুঝেছেন যে এই নাচ ঝুঁকিপূর্ণ। “আমি লক্ষ্য করেছি যে নাচের অনেক মুদ্রায় নারী ও পুরুষকে খুব কাছাকাছি আসতে হয়,” তিনি বলেন। “একজন অবিবাহিত ব্যক্তি হওয়ায় আমি বুঝিতে পারি যে কী ঘটতে পারে। হয়ত এটি অংশগ্রহণকারী দুজনের মধ্যে কারও অনুভূতিকে জাগিয়ে তুলতে পারে। অনেক সময় নাচার অজুহাত দিয়ে ছেলে মেয়েরা শুধু মজা করার জন্য একজন আরেকজনের অনুভূতি নিয়ে খেলতে পারে। কিন্তু এই বিপদ থেকে দূরে থাকা যায় যদি কি না সংগীতটি রুচিশীল হয় ও জেনেশুনে শরীর স্পর্শ করা না হয়। তবুও আমাকে স্বীকার করতেই হবে যে একদল অবিবাহিত যুবক-যুবতী ভাইবোন যখন একসঙ্গে নাচতে শুরু করেন তখন সেই পরিবেশে ঈশ্বরীয় মান বজায় রাখা খুবই কঠিন হয়ে পড়ে।”
আমরা নিশ্চয়ই জাগতিক অভ্যাসকে প্রশ্রয় দেওয়ার জন্য আমাদের সংস্কৃতিকে একটি অজুহাত হিসাবে খাড়া করতে চাইব না। নাচ ও গান ইস্রায়েলীয় সংস্কৃতির একটি অংশ ছিল আর যখন ইস্রায়েলীয়রা লোহিত সাগরে মিশরীয়দের কাছ থেকে উদ্ধার পেয়েছিল, তখন তারা তা উদ্যাপন করার জন্য নাচ ও গান দুটিই করেছিল। (যাত্রাপুস্তক ১৫:১, ২০) কিন্তু তাদের বিশেষ ধরনের গান ও নাচ, তাদের চারিদিকের পৌত্তলিক জগতের চেয়ে আলাদা ছিল।
দুঃখজনকভাবে, সীনয় পর্বত থেকে মোশির ফিরে আসার জন্য অপেক্ষা করার সময় ইস্রায়েলীয়রা অধৈর্য হয়ে পড়েছিল, একটি সোনার গোবৎস নির্মাণ করেছিল এবং তারা ভোজন ও পান করার পর “ক্রীড়া করিতে উঠিল।” (যাত্রাপুস্তক ৩২:১-৬) মোশি ও যিহোশূয় তাদের গানের শব্দ শোনামাত্রই বিক্ষিপ্ত হয়েছিলেন। (যাত্রাপুস্তক ৩২:১৭, ১৮) ইস্রায়েলীয়রা “সীমা” অতিক্রম করেছিল এবং তাদের নাচ ও গানের রীতি তখন চারিদিকের পৌত্তলিক জগতের মত হয়ে উঠেছিল।
একইভাবে, আজকেও গান ও নাচ সাধারণত আমাদের এলাকায় গ্রহণযোগ্য এবং হয়ত অন্যদের বিবেকের কাছে আপত্তিজনকও নয়। কিন্তু যদি আলো কমিয়ে দেওয়া হয়, ঝলমলে আলো জ্বালানো হয় অথবা এক ভিন্ন তালের সংগীত বাজানো হয়, তবে আগে যা গ্রহণীয় ছিল তা হয়ত এখন জগতের আত্মাকে প্রতিফলিত করতে পারে। “এটিই আমাদের সংস্কৃতি,” আমরা হয়ত যুক্তি দেখাতে পারি। পৌত্তলিক ধাঁচের আমোদপ্রমোদ ও উপাসনা অনুমোদন করার সময় হারোণ সেগুলিকে ভুলভাবে “সদাপ্রভুর উদ্দেশে” বলে বর্ণনা করে একইরকম অজুহাত দেখিয়েছিলেন। এই দুর্বল অজুহাত অযৌক্তিক ছিল। কারণ তাদের আচরণকে “শত্রুদের মধ্যে বিদ্রূপের” মত দেখা হয়েছিল।—যাত্রাপুস্তক ৩২:৫, ২৫.
সংস্কৃতির নিজস্ব স্থান রয়েছে
অদ্ভুত প্রথাগুলি হয়ত প্রথমে আমাদের আশ্চর্য করতে পারে কিন্তু বিষয়টা এমন নয় যে সেগুলির মধ্যে প্রত্যেকটিই একেবারে বর্জনীয়। আমাদের ‘জ্ঞানেন্দ্রিয় সকলের অভ্যাস প্রযুক্ত’ আমরা নির্ণয় করতে পারি যে কোন্ প্রথাগুলি খ্রীষ্টীয় নীতির সঙ্গে মিল রাখে এবং কোন্গুলি নয়। (ইব্রীয় ৫:১৪) আমরা যখন আমাদের সহমানবদের জন্য এক প্রেমপূর্ণ সদয় মনোভাব প্রকাশ করব, তখন আমরা অক্ষতিকর প্রথার মুখোমুখি হলে সেগুলির প্রতি সঠিক প্রতিক্রিয়া দেখাব।
যখন আমরা মেনে নিই যে সংস্কৃতি ভিন্ন ভিন্ন হয় তখন স্থানীয় বা দূরবর্তী এলাকায় লোকেদের কাছে রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করার সময় আমরা ‘সর্ব্বজনের কাছে সর্ব্ববিধ হতে’ পারব। আর আমরা দেখব যে আমাদের জীবন সত্যিই অর্থপূর্ণ, বৈচিত্র্যময় এবং সুন্দর হয়ে উঠেছে।
[২০ পৃষ্ঠার চিত্র]
যথার্থ খ্রীষ্টীয় সম্ভাষণ বিভিন্নভাবে জানানো যেতে পারে
[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]
ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতিকে মেনে নিলে জীবন অর্থপূর্ণ ও বৈচিত্র্যময় এবং সুন্দর হয়ে ওঠে