আপন আপন পরিত্রাণ সম্পন্ন করে চলুন!
“প্রিয়তমেরা, . . . সভয়ে ও সকম্পে আপন আপন পরিত্রাণ সম্পন্ন কর।”—ফিলিপীয় ২:১২.
১, ২. কোন্ জনপ্রিয় ধারণাগুলি অনেককে এটি মনে করায় যে তাদের জীবন যেভাবে পরিচালিত হয়, তার উপর তাদের নিজেদের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই?
“আপনি কি এভাবেই জন্মেছিলেন?” সম্প্রতি একটি জনপ্রিয় পত্রিকার প্রচ্ছদে এই প্রশ্নটি করা হয়েছিল। শিরোনামের নিচে এই বাক্যগুলি দেখা গিয়েছিল: “আপনার ব্যক্তিত্ব, আপনার মেজাজ, এমনকি জীবনের পথে আপনি কী বেছে নেবেন, নতুন পর্যবেক্ষণ দেখায় যে তার অধিকাংশই আপনার জিনের মধ্যে রয়েছে।” এইধরনের যুক্তির জন্য কেউ কেউ মনে করতে পারেন যে তাদের নিজেদের জীবনের উপর তাদের সামান্যই নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।
২ অন্যেরা আশঙ্কা করেন যে পিতামাতাদের ত্রুটিপূর্ণ শাসন অথবা শিক্ষকদের নিম্নমানের শিক্ষার কারণে, কোন না কোনভাবে তাদের জীবন অসুখী হয়েছে। তারা হয়ত পিতামাতাদের ভুলগুলির পুনরাবৃত্তি করা, তাদের মন্দ প্রবণতা অনুযায়ী চলা, যিহোবার কাছে অবিশ্বস্ত প্রমাণিত হওয়া—এক কথায় এই সব মন্দ বিষয়গুলি বেছে নেওয়ার জন্য নিজেদেরকে পূর্বনির্ধারিত বলে মনে করেন। বাইবেল কি এইরকমই শিক্ষা দেয়? কিছু ধর্মমনা ব্যক্তিরা এই বিষয়ে নাছোড়বান্দা যে বাইবেল এটির মতো কিছু শিক্ষা দেয়, যেটিকে বলা হয় নিয়তির মতবাদ। এই মতবাদ অনুযায়ী, ঈশ্বর বহু পূর্বেই আপনার জীবনের প্রতিটি ঘটনাকে স্থির করে রেখেছেন।
৩. আমাদের ভবিষ্যতের দায়িত্ব নিতে আমাদের ক্ষমতা সম্বন্ধে বাইবেলে কোন্ উৎসাহজনক বার্তা রয়েছে?
৩ এমন বিভিন্ন ধারণার পিছনে বক্তব্য একটিই: আপনার মনোনয়নের অধিকার সামান্য, আপনার জীবন কোন্ দিকে মোড় নেয় তার উপর আপনার খুব অল্পই নিয়ন্ত্রণ আছে। এটি এক হতাশাজনক বার্তা, তাই নয় কি আর এই হতাশা সমস্যার সৃষ্টি করে। হিতোপদেশ ২৪:১০ পদ বলে: “সঙ্কটের দিনে যদি অবসন্ন হও, তবে তোমার শক্তি সঙ্কুচিত।” তাই আমাদের এই বিষয় জানতে উৎসাহিত করা হচ্ছে যে বাইবেল অনুযায়ী আমরা ‘আপন আপন পরিত্রাণ সম্পন্ন করিতে’ পারি। (ফিলিপীয় ২:১২) এই ইতিবাচক শাস্ত্রীয় শিক্ষার উপর কিভাবে আমরা আমাদের দৃঢ়প্রত্যয়কে পুনরুজ্জীবিত করতে পারি?
আমরা নিজেদের মধ্যে যে ‘গাঁথিয়া তোলার’ কাজ করি
৪. যদিও ১ করিন্থীয় ৩:১০-১৫ পদ অগ্নি প্রতিরোধক বস্তু দিয়ে নির্মাণ করার বিষয়ে বলে, তবুও তা কী বোঝায় না?
৪ প্রথম করিন্থীয় ৩:১০-১৫ পদে প্রাপ্ত প্রেরিত পৌলের দৃষ্টান্তটি বিবেচনা করুন। সেখানে তিনি খ্রীষ্টানদের গেঁথে তোলার কাজের বিষয়ে বলেন এবং তার দৃষ্টান্তের নীতিটি পরিচর্যার অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক দুটি দিকের প্রতিই প্রয়োগ করা যেতে পারে। তিনি কি এটি ইঙ্গিত করেছিলেন যে একজন শিষ্য শেষ পর্যন্ত যিহোবাকে সেবা করে চলার বিষয়টি বেছে নেবেন কি না এবং সেই অনুযায়ী চলতে থাকবেন কি না, সেটি যিনি তাকে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন, সম্পূর্ণরূপে তার দায়িত্ব? না। পৌল, গেঁথে তোলার জন্য শিক্ষকের যথাসম্ভব সর্বোত্তম কাজ করার গুরুত্বের উপর জোর দিচ্ছিলেন। কিন্তু আগের প্রবন্ধে আমরা যেমন শিখেছি, তিনি বলেননি যে এই বিষয়ে ছাত্র অথবা শিষ্যের নিজস্ব কোন মনোনয়ন নেই। এটি সত্য যে পৌলের দৃষ্টান্তটি আমরা অন্যদের প্রতি যে কাজ করি তার উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করে, আমাদের নিজেদের গেঁথে তোলার উপর নয়। আর এই বিষয়টি স্পষ্ট, কারণ পৌল এক অমনোযোগী গঠন কাজের বিষয় বলেন, যেটি ধ্বংস হয়ে গেলেও এর গাঁথক রক্ষা পান। কিন্তু আমরা নিজেদের মধ্যে যে কাজ করি তা বোঝাতেও বাইবেল কখনও কখনও একই তুলনামূলক শব্দ ব্যবহার করে।
৫. কোন্ শাস্ত্রপদগুলি দেখায় যে খ্রীষ্টানদের অবশ্যই নিজেদের মধ্যে ‘গাঁথিয়া তোলার’ কাজ করতে হবে?
৫ উদাহরণস্বরূপ, যিহূদা ২০, ২১ পদের কথা বিবেচনা করুন: “প্রিয়তমেরা তোমরা আপনাদের পরম পবিত্র বিশ্বাসের উপরে আপনাদিগকে গাঁথিয়া তুলিতে তুলিতে, পবিত্র আত্মাতে প্রার্থনা করিতে করিতে, ঈশ্বরের প্রেমে আপনাদিগকে রক্ষা কর।” ‘গাঁথিয়া তোলা’ শব্দটির জন্য এখানে যিহূদা ১ করিন্থীয় ৩ অধ্যায়ে পৌলের শব্দটিই ব্যবহার করেছেন, কিন্তু তার কথাগুলি আমাদের বিশ্বাসের ভিত্তিমূলের উপর নিজেদের গেঁথে তোলার ধারণা দেয়। একজন ব্যক্তি যিনি পাষাণের উপর তার গৃহ নির্মাণ করেছিলেন, সেই বিষয়ে যীশুর দৃষ্টান্তটি লিপিবদ্ধ করার সময় লূক ‘ভিত্তিমূলের’ জন্য একই গ্রিক শব্দ ব্যবহার করেছিলেন, যা পৌল খ্রীষ্টানদের গেঁথে তোলার কাজ সম্বন্ধীয় তার দৃষ্টান্তেও ব্যবহার করেন। (লূক ৬:৪৮, ৪৯) এছাড়াও, পৌল সহখ্রীষ্টানদের আধ্যাত্মিক উন্নতি করার জন্য পরামর্শ দেওয়ার সময় ‘ভিত্তিমূলের’ উপর স্থাপিত হওয়ার কাল্পনিক অর্থ ব্যবহার করেন। হ্যাঁ, ঈশ্বরের বাক্য শিক্ষা দেয় যে আমরা নিজেদের মধ্যে ‘গাঁথিয়া তোলার’ কাজ করি।—ইফিষীয় ৩:১৫-১৯; কলসীয় ১:২৩; ২:৭.
৬. (ক) প্রত্যেক খ্রীষ্টান শিষ্য কিভাবে এক যৌথ নির্মাণ প্রকল্পের ফল তা উদাহরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা করুন। (খ) প্রত্যেক শিষ্যের কোন্ দায়িত্ব রয়েছে?
৬ কোন খ্রীষ্টানকে গেঁথে তোলা কি কেবল একজন ব্যক্তির কাজ? বেশ, মনে করুন যে আপনি একটি গৃহ নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। নকশার জন্য আপনি একজন স্থপতির কাছে গেলেন। যদিও অধিকাংশ কাজই আপনি নিজে নিজে করতে চান, তবুও আপনার সঙ্গে কাজ করার এবং সবচেয়ে ভাল পদ্ধতি সম্বন্ধে পরামর্শ দেওয়ার জন্য আপনি মজুরি দিয়ে একজন ঠিকাদারকে নিযুক্ত করেন। তিনি যদি একটি উত্তম ভিত্তিমূল স্থাপন করেন, আপনাকে নকশাটি বুঝতে সাহায্য করেন, সর্বোৎকৃষ্ট বস্তু ক্রয় করার পরামর্শ দেন এবং এমনকি আপনাকে নির্মাণ কাজের বিষয়ে অনেক কিছু শেখান, তখন আপনি সম্ভবত একমত হবেন যে তিনি এক উত্তম কাজ সম্পন্ন করেছেন। কিন্তু আপনি যদি তার উপদেশকে অবজ্ঞা করেন, সস্তা বা নিম্নমানের বস্তু কেনেন এবং এমনকি স্থপতির নকশাই অনুসরণ না করেন, তাহলে কী বলা যায়? সেই গৃহটি যদি পড়ে যায় তবে নিশ্চয়ই আপনি ঠিকাদার অথবা স্থপতিকে দোষারোপ করতে পারবেন না! একইভাবে, প্রত্যেক খ্রীষ্টান শিষ্য এক যৌথ নির্মাণ প্রকল্পের ফল। প্রধান স্থপতি হলেন যিহোবা। তিনি সেই বিশ্বস্ত খ্রীষ্টানকে সাহায্য করেন, যিনি “ঈশ্বরেরই সহকার্য্যকারী” হিসাবে একজন ছাত্রকে শিক্ষা দেন ও গড়ে তোলেন। (১ করিন্থীয় ৩:৯) কিন্তু সেই ছাত্রও জড়িত। চূড়ান্ত বিচারে, তার নিজস্ব জীবনধারার জন্য তিনি নিজেই দায়ী। (রোমীয় ১৪:১২) তিনি যদি উত্তম খ্রীষ্টীয় গুণাবলি লাভ করতে চান, তবে সেগুলি অর্জন করার জন্য, নিজের মধ্যে গড়ে তোলার জন্য তাকে অবশ্যই কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।—২ পিতর ১:৫-৮.
৭. কিছু খ্রীষ্টান কোন্ প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলির সম্মুখীন হন এবং কী হয়ত তাদের সান্ত্বনা দিতে পারে?
৭ অতএব, তার মানে কি এই যে জিনতত্ত্ব, পরিবেশ এবং আমাদের শিক্ষকদের গুণগত মান অর্থহীন? অবশ্যই না। ঈশ্বরের বাক্য এগুলির প্রত্যেকটিকে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রভাবসম্পন্ন হিসাবে বলে। অনেক পাপপূর্ণ, নেতিবাচক প্রবণতা জন্মগত এবং এগুলির বিরুদ্ধে লড়াই করা অত্যন্ত কঠিন। (গীতসংহিতা ৫১:৫; রোমীয় ৫:১২; ৭:২১-২৩) পিতামাতার প্রশিক্ষণ এবং গৃহের পরিবেশ অল্পবয়সীদের উপর জোরালো প্রভাব বিস্তার করতে পারে—ভাল অথবা মন্দ। (হিতোপদেশ ২২:৬; কলসীয় ৩:২১) যীশু যিহূদী ধর্মীয় নেতাদের অন্যদের উপর তাদের শিক্ষার মন্দ প্রভাব ফেলার জন্য নিন্দা করেছিলেন। (মথি ২৩:১৩, ১৫) আজকে, এইধরনের বিষয়গুলি আমাদের সকলকে প্রভাবিত করছে। উদাহরণস্বরূপ, ঈশ্বরের লোকেদের কেউ কেউ কঠিন শৈশবাবস্থার ফলে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হন। ওই ব্যক্তিদের আমাদের দয়া ও সহানুভূতি পাওয়া প্রয়োজন। আর তারা বাইবেলের এই বার্তা দ্বারা সান্ত্বনা পেতে পারেন যে তারা তাদের পিতামাতার ভুলগুলি পুনরাবৃত্তি করার জন্য অথবা অবিশ্বস্ত প্রমাণিত হওয়ার জন্য পূর্বনির্ধারিত নন। প্রাচীন যিহূদার কয়েকজন রাজা কিভাবে এই বিষয়টি প্রদর্শন করেন তা বিবেচনা করুন।
যিহূদার রাজারা—নিজেরা মনোনয়ন করেছিলেন
৮. যোথমের কাছে তার পিতার কোন্ ত্রুটিপূর্ণ উদাহরণ ছিল, তথাপি তিনি কোন্ মনোনয়ন করেছিলেন?
৮ উষিয় ১৬ বছর বয়সে যিহূদার রাজা হয়েছিলেন এবং ৫২ বছর রাজত্ব করেছিলেন। বেশিরভাগ সময়ই তিনি “আপন পিতা অমৎসিয়ের সমস্ত কার্য্যানুসারে সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে যাহা ন্যায্য, তাহাই করিতেন।” (২ রাজাবলি ১৫:৩) যিহোবা তাকে বেশ কয়েকটি অসাধারণ সামরিক বিজয় এনে দিয়ে আশীর্বাদ করেছিলেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় যে সমস্ত সাফল্যকে উষিয় নিজের কৃতিত্ব হিসাবে দেখেছিলেন। তিনি উদ্ধত হয়ে উঠেছিলেন এবং যাজকদের জন্য সংরক্ষিত কাজ, অর্থাৎ মন্দিরের বেদিতে ধূপ উৎসর্গ করার দ্বারা যিহোবার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলেন। উষিয়কে তিরস্কার করা হয়েছিল কিন্তু তিনি ক্রোধ প্রকাশ করেছিলেন। তারপর তিনি অবনত হয়েছিলেন—কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন ও জীবনের বাকি দিনগুলি একাকী বাস করেছিলেন। (২ বংশাবলি ২৬:১৬-২৩) তার পুত্র যোথম এই সমস্ত বিষয়ের প্রতি কিভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন? এই যুবক ব্যক্তি সহজেই তার পিতার দ্বারা প্রভাবিত হতে পারতেন এবং যিহোবার সংশোধনে অসন্তুষ্ট হতে পারতেন। সাধারণ লোকেরাও হয়ত নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছিলেন কারণ তারা তখনও ভুল ধর্মীয় অভ্যাসগুলি পালন করতেন। (২ রাজাবলি ১৫:৪) কিন্তু যোথম তার নিজস্ব মনোনয়নে স্থির ছিলেন। তিনি “সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে যাহা ন্যায্য তাহা করিতেন।”—২ বংশাবলি ২৭:২.
৯. আহসের উপর কোন্ উত্তম প্রভাবগুলি ছিল কিন্তু তার জীবনের পরিণতি কী হয়েছিল?
৯ যোথম ১৬ বছর শাসন করেছিলেন এবং সমগ্র জীবনব্যাপী যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত ছিলেন। অতএব, তার পুত্র আহসের কাছে তার বিশ্বস্ত পিতার চমৎকার উদাহরণ ছিল। এছাড়াও আহসের অন্যান্য উত্তম প্রভাবও ছিল। তিনি এমন এক সময় বাস করার আশীর্বাদ লাভ করেছিলেন যখন যিশাইয়, হোশেয় এবং মীখার মতো বিশ্বস্ত ভাববাদীগণ সেই দেশে সক্রিয়ভাবে ভাববাণী করেছিলেন। তথাপি, তিনি মন্দ বিষয়টি বেছে নিয়েছিলেন। “তিনি আপন পিতৃপুরুষ দায়ূদের ন্যায় সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে যাহা ন্যায্য তাহা করিতেন না।” তিনি বালের প্রতিমা নির্মাণ করে সেগুলির উপাসনা করেছিলেন এবং পৌত্তলিক দেবতাদের উদ্দেশে তার নিজের সন্তানদের অগ্নিতে দগ্ধ করেছিলেন। সর্বোত্তম প্রভাবগুলি সত্ত্বেও, তিনি যিহোবার একজন রাজা ও বিশ্বস্ত দাস হতে ভীষণভাবে ব্যর্থ হয়েছিলেন।—২ বংশাবলি ২৮:১-৪.
১০. আহস কীধরনের পিতা ছিলেন কিন্তু তার পুত্র হিষ্কিয় কী মনোনয়ন করেছিলেন?
১০ বিশুদ্ধ উপাসনার দৃষ্টিকোণ থেকে, আহসের চেয়ে আরও বেশি খারাপ পিতার কথা কল্পনা করা কঠিন। কিন্তু, তার পুত্র হিষ্কিয় তার নিজের পিতার মতো মনোনয়ন করেননি! বালের উদ্দেশে আহস যে অল্পবয়সী সন্তানদের বলি দিয়েছিলেন তারা সম্ভবত হিষ্কিয়ের নিজের ভাই ছিল। এই ভয়ানক পটভূমি কি হিষ্কিয়কে যিহোবার প্রতি অবিশ্বস্ত করেছিল? পরিবর্তে, হিষ্কিয় যিহূদার অল্প কয়েকজন প্রকৃতই মহান রাজাদের মধ্যে একজন হয়েছিলেন—একজন বিশ্বস্ত, জ্ঞানী এবং প্রিয়পাত্র। “সদাপ্রভু তাঁহার সহবর্ত্তী ছিলেন।” (২ রাজাবলি ১৮:৩-৭) প্রকৃতপক্ষে, যুবক রাজপুত্র হিষ্কিয় যে ১১৯তম গীতসংহিতার অনুপ্রাণিত লেখক ছিলেন তা বিশ্বাস করার কারণ রয়েছে। যদি তাই হয় তবে এটি বোঝা কঠিন নয় যে কেন তিনি এই বাক্যগুলি লিখেছিলেন: “আমার প্রাণ দুঃখে গলিয়া পড়িতেছে।” (গীতসংহিতা ১১৯:২৮) দুঃখজনক সমস্যা সত্ত্বেও, হিষ্কিয় তার জীবনকে যিহোবার বাক্য দ্বারা পরিচালিত হতে দিয়েছিলেন। গীতসংহিতা ১১৯:১০৫ পদ বলে: “তোমার বাক্য আমার চরণের প্রদীপ, আমার পথের আলোক।” হ্যাঁ, হিষ্কিয় তার নিজস্ব মনোনয়ন করেছিলেন—সঠিক মনোনয়ন।
১১. (ক) মনঃশির পিতার উত্তম প্রভাব সত্ত্বেও, যিহোবার বিরুদ্ধে তার বিদ্রোহ কতটা চরমে পৌঁছেছিল? (খ) তার জীবনের শেষের দিকে মনঃশি কী মনোনয়ন করেছিলেন এবং এর থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
১১ স্ববিরোধী অথচ সত্য যে যিহূদার সর্বোত্তম রাজার কাছ থেকে সবচেয়ে মন্দ ব্যক্তি এসেছিল। হিষ্কিয়ের পুত্র মনঃশি পূর্বের যে কোন সময়ের চেয়ে আরও বেশি করে প্রতিমাপূজা, প্রেতচর্চা এবং অবাধ দৌরাত্ম্যকে বাড়তে দিয়েছিলেন। বিবরণটি জানায় যে সম্ভবত ভাববাদীগণের মাধ্যমে “সদাপ্রভু মনঃশি ও তাঁহার লোকদের কাছে কথা কহিতেন।” (২ বংশাবলি ৩৩:১০) যিহূদী পরম্পরাগত আইন অনুযায়ী মনঃশি যিশাইয়কে করাত দিয়ে বিদীর্ণ করেছিলেন। (ইব্রীয় ১১:৩৭ পদের সঙ্গে তুলনা করুন।) তা সত্য হোক বা নাই হোক, মনঃশি সমস্ত ঐশিক সতর্কবাণীকে অগ্রাহ্য করেছিলেন। বাস্তবিক পক্ষে, তিনি তার নিজের কয়েকজন পুত্রকে হোমবলি হিসাবে জীবন্ত দগ্ধ করেছিলেন, তার পিতামহ আহসের চেয়েও বেশি। তথাপি, এই দুষ্ট ব্যক্তিটি জীবনের পরবর্তী সময়ে কঠোর পরীক্ষার মুখে অনুতপ্ত হয়েছিলেন এবং তার পথ পরিবর্তন করেছিলেন। (২ বংশাবলি ৩৩:১-৬, ১১-২০) তার উদাহরণ আমাদের শিক্ষা দেয় যে একজন ব্যক্তি যিনি শোচনীয় পথ বেছে নেন, তা বোঝায় না যে তিনি আর একেবারেই প্রায়শ্চিত্ত করতে পারবেন না। তিনি পরিবর্তিত হতে পারেন।
১২. যিহোবার প্রতি পরিচর্যার ক্ষেত্রে আমোন ও তার পুত্র যোশিয় কোন্ বৈসাদৃশ্যমূলক মনোনয়নগুলি করেছিলেন?
১২ মনঃশির পুত্র আমোন তার পিতার অনুতাপ থেকে অনেক কিছু শিখতে পারতেন। কিন্তু তিনি ভুল বিষয় বেছে নিয়েছিলেন। আমোন চূড়ান্তভাবে অবনত না হওয়া পর্যন্ত প্রকৃতপক্ষে, “উত্তর উত্তর অধিক দোষ করিলেন।” তার পুত্র যোশিয় সম্পূর্ণ বিপরীত ছিলেন। যোশিয় স্পষ্টতই তার পিতামহের প্রতি যা ঘটেছিল তা থেকে শিক্ষা নেওয়ার বিষয়টি বেছে নিয়েছিলেন। তিনি মাত্র আট বছর বয়সে রাজত্ব শুরু করেছিলেন। আর মাত্র ১৬ বছর বয়স থেকে তিনি যিহোবার অন্বেষণ করেছিলেন এবং একজন উদাহরণযোগ্য, বিশ্বস্ত রাজা প্রমাণিত হয়েছিলেন। (২ বংশাবলি ৩৩:২০–৩৪:৫) তিনি মনোনয়ন করেছিলেন—সঠিক মনোনয়ন।
১৩. (ক) যিহূদার যে রাজাদের বিষয় আমরা আলোচনা করেছি তাদের কাছ থেকে আমরা কোন্ শিক্ষা পাই? (খ) পিতামাতার প্রশিক্ষণ কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
১৩ যিহূদার এই সাত জন রাজার সংক্ষিপ্ত পরীক্ষা এক জোরালো বিষয় শিক্ষা দেয়। কখন কখনও আমরা দেখেছি, খুবই মন্দ রাজাদের খুবই ভাল পুত্র ছিল এবং বিপরীতে ভাল রাজাদের সর্বাধিক মন্দ পুত্র ছিল। (উপদেশক ২:১৮-২১ পদের সঙ্গে তুলনা করুন।) এটি পিতামাতার প্রশিক্ষণের গুরুত্বকে হ্রাস করে না। যে পিতামাতারা তাদের সন্তানদের যিহোবার পথ অনুযায়ী শিক্ষা দেন, তারা নিশ্চয়ই তাদের সন্তানদের যিহোবার বিশ্বস্ত দাস হওয়ার জন্য যথাসম্ভব সর্বোত্তম সুযোগ করে দেন। (দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৬, ৭) তথাপি, বিশ্বস্ত পিতামাতার সর্বাধিক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও কিছু সন্তান এক ভুল পথ বেছে নেয়। আবার অন্য সন্তানেরা পিতামাতাদের সর্বাধিক মন্দ প্রভাব সত্ত্বেও যিহোবাকে ভালবাসাকে ও তাঁর সেবা করাকে বেছে নেয়। যিহোবার সাহায্যে তারা তাদের জীবনে সফল হয়। আপনি কি মাঝে মাঝে চিন্তা করেন যে আপনার ক্ষেত্রে কী হবে? অতএব, আপনি যে সঠিক মনোনয়ন করতে পারেন সেই বিষয়ে যিহোবার দেওয়া কয়েকটি ব্যক্তিগত নিশ্চয়তা বিবেচেনা করুন!
আপনার উপর যিহোবার বিশ্বাস আছে!
১৪. কিভাবে আমরা জানি যে যিহোবা আমাদের সীমাবদ্ধতা জানেন?
১৪ যিহোবা সমস্তকিছু দেখেন। হিতোপদেশ ১৫:৩ পদ বলে: “সদাপ্রভুর চক্ষু সর্ব্বস্থানেই আছে, তাহা অধম ও উত্তমদের প্রতি দৃষ্টি রাখে।” যিহোবা সম্বন্ধে রাজা দায়ূদ বলেছিলেন: “তোমার চক্ষু আমাকে পিণ্ডাকার দেখিয়াছে, তোমার পুস্তকে সমস্তই লিখিত ছিল, যাহা দিন দিন গঠিত হইতেছিল, যখন সে সকলের একটীও ছিল না।” (গীতসংহিতা ১৩৯:১৬) অতএব, আপনি উত্তরাধিকার সূত্রেই পান অথবা আপনার নিয়ন্ত্রণাতীত অন্যান্য প্রভাবের কারণে হোক, যিহোবা জানেন যে কোন্ নেতিবাচক প্রবণতাগুলির বিরুদ্ধে আপনি লড়াই করেন। তিনি যথার্থরূপে বুঝতে পারেন যে এগুলি আপনাকে কিভাবে প্রভাবিত করেছে। তিনি এমনকি আপনার চেয়েও ভালভাবে আপনার সীমাবদ্ধতাগুলি বুঝতে পারেন। এছাড়াও তিনি হলেন করুণাময়! সাধারণত, আমরা যতটুকু করতে পারি তার চেয়ে অধিক তিনি কখনও আমাদের কাছ থেকে আশা করেন না।—গীতসংহিতা ১০৩:১৩, ১৪.
১৫. (ক) যারা অন্যদের কাছ থেকে ইচ্ছাকৃতভাবে আঘাত পেয়ে এসেছেন তাদের জন্য সান্ত্বনার উৎস কী হতে পারে? (খ) যিহোবা কোন্ দায়িত্ব দেওয়ার দ্বারা আমাদের প্রত্যেককে মর্যাদা দান করেন?
১৫ অপরদিকে, যিহোবা আমাদের পরিস্থিতির অসহায় শিকার হিসাবে দেখেন না। আমাদের যদি মন্দ অতীত থেকে থাকে, তাহলে আমরা এই নিশ্চয়তা পেয়ে সান্ত্বনা পেতে পারি যে যিহোবা এইধরনের সমস্ত স্বেচ্ছাকৃত আঘাতজনক আচরণকে ঘৃণা করেন। (গীতসংহিতা ১১:৫; রোমীয় ১২:১৯) কিন্তু আমরা যদি তাঁর কাছ থেকে সরে আসি এবং জেনেশুনে ভুল মনোনয়ন করি তবে তিনি কি আমাদের নিষ্কৃতি দেবেন? অবশ্যই না। তাঁর বাক্য বলে: “প্রত্যেক জন নিজ নিজ ভার বহন করিবে।” (গালাতীয় ৬:৫) যিহোবা তাঁর প্রত্যেক বুদ্ধিমান প্রাণীকে সঠিক বিষয়টি বেছে নেওয়ার ও তাঁকে সেবা করার দায়িত্ব দিয়ে মর্যাদা দান করেন। এটি ঠিক ইস্রায়েল জাতিকে বলা মোশির কথার মতো: “আমি অদ্য তোমাদের বিরুদ্ধে আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীকে সাক্ষী করিয়া বলিতেছি যে, আমি তোমার সম্মুখে জীবন ও মৃত্যু, আশীর্ব্বাদ ও শাপ রাখিলাম। অতএব জীবন মনোনীত কর, যেন তুমি সবংশে বাঁচিতে পার।” (দ্বিতীয় বিবরণ ৩০:১৯) যিহোবা নিশ্চিত যে আমরাও সঠিক বিষয়টি মনোনয়ন করতে পারি। কিভাবে আমরা তা জানতে পারি?
১৬. ‘আপন আপন পরিত্রাণ সম্পন্ন করায়’ আমরা কিভাবে সফল হতে পারি?
১৬ প্রেরিত পৌল যা লিখেছিলেন তা লক্ষ্য করুন: “অতএব, হে আমার প্রিয়তমেরা, . . . সভয়ে ও সকম্পে আপন আপন পরিত্রাণ সম্পন্ন কর। কারণ ঈশ্বরই আপন হিতসঙ্কল্পের নিমিত্ত তোমাদের অন্তরে ইচ্ছা ও কার্য্য উভয়ের সাধনকারী।” (ফিলিপীয় ২:১২, ১৩) এখানে “সম্পন্ন কর” শব্দটির জন্য অনূদিত মূল গ্রিক শব্দটি কোনকিছু সম্পূর্ণ করাকে বোঝায়। অতএব, ব্যর্থ হওয়া অথবা হাল ছেড়ে দেওয়া আমাদের কারও জন্য পূর্বনির্ধারিত নয়। যিহোবা ঈশ্বর অবশ্যই নিশ্চিত যে তিনি আমাদের যে কাজ করতে দিয়েছেন তা আমরা সম্পূর্ণ করতে পারব—যে কাজ আমাদের পরিত্রাণের দিকে পরিচালিত করে—তা না হলে তিনি এইধরনের একটি অনুপ্রাণিত উক্তি করতেন না। কিন্তু কিভাবে আমরা সফল হই? আমাদের নিজের শক্তিতে নয়। আমরা নিজেরা যদি যথেষ্ট শক্তিশালী হতাম তাহলে ‘সভয় ও সকম্পের’ কোন প্রয়োজনই হতো না। কিন্তু, যিহোবা ‘আমাদের অন্তরে . . . কার্যসাধনকারী,’ তাঁর পবিত্র আত্মা আমাদের মন ও হৃদয়ে কাজ করছে এবং “ইচ্ছা ও কার্য” সাধন করতে সাহায্য করছে। এই প্রেমপূর্ণ সাহায্যের দ্বারা আমাদের জীবনে সঠিক মনোনয়ন না করার এবং সেই অনুযায়ী না চলার কোন কারণ আছে কি? না!—লূক ১১:১৩.
১৭. নিজেদের মধ্যে আমরা কোন্ পরিবর্তনগুলি করতে পারি এবং তা করতে যিহোবা আমাদের কিভাবে সাহায্য করেন?
১৭ অতিক্রম করার জন্য বাধা আমাদের থাকবেই—সম্ভবত কোন এক সময়ের খারাপ অভ্যাস এবং ক্ষতিকর প্রভাব আমাদের আছে যা আমাদের চিন্তাধারাকে বিকৃত করতে পারে। তাসত্ত্বেও, যিহোবার আত্মার সাহায্যে আমরা এগুলি অতিক্রম করতে পারি! করিন্থের খ্রীষ্টানদের পৌল যেমন লিখেছিলেন ঈশ্বরের বাক্য এমনকি “দুর্গসমূহ” ভেঙে ফেলার মতো যথেষ্ট শক্তিশালী। (২ করিন্থীয় ১০:৪) বাস্তবিক পক্ষে, যিহোবা আমাদের মধ্যে ব্যাপক পরিবর্তন করতে সাহায্য করতে পারেন। তাঁর বাক্য আমাদের পরামর্শ দেয় “পুরাতন মনুষ্যকে ত্যাগ কর” এবং “নূতন মনুষ্যকে পরিধান কর, যাহা সত্যের ধার্ম্মিকতায় ও সাধুতায় ঈশ্বরের সাদৃশ্যে সৃষ্ট হইয়াছে।” (ইফিষীয় ৪:২২-২৪) যিহোবার আত্মা কি প্রকৃতপক্ষে এইধরনের পরিবর্তন করতে আমাদের সাহায্য করতে পারে? অবশ্যই! ঈশ্বরের আত্মা আমাদের মধ্যে ফল উৎপন্ন করে—উত্তম, মূল্যবান গুণাবলি যেগুলি আমরা সকলেই উৎপন্ন করতে চাই। এগুলির মধ্যে সবচেয়ে প্রথমটি হল প্রেম।—গালাতীয় ৫:২২, ২৩.
১৮. প্রত্যেক যুক্তিবাদী ব্যক্তি কোন্ মনোনয়ন করতে সমর্থ এবং এটি আমাদের কী করতে সংকল্পবদ্ধ হতে সাহায্য করবে?
১৮ এখানেই মহৎ, স্বাধীন সত্যটি নিহিত। যিহোবা ঈশ্বরের প্রেম করার অসীম ক্ষমতা রয়েছে আর আমরা তাঁর প্রতিমূর্তিতে নির্মিত হয়েছি। (আদিপুস্তক ১:২৬; ১ যোহন ৪:৮) অতএব, আমরা যিহোবাকে প্রেম করার বিষয়টি বেছে নিতে পারি। আর সেই প্রেমই—আমাদের পূর্বের জীবনধারা নয়, আমাদের স্বভাবগত দোষ নয়, অন্যায় করার জন্য উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত আমাদের প্রবণতা নয়—আমাদের ভবিষ্যতের চাবি। এদনে বিশ্বস্ত থাকার জন্য আদম ও হবার যা প্রয়োজন ছিল তা হল যিহোবা ঈশ্বরের প্রতি প্রেম। হর্মাগিদোনে রক্ষা পাওয়ার এবং খ্রীষ্টের সহস্র বছর রাজত্বের শেষে চূড়ান্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য আমাদের প্রত্যেকের এই প্রেমই থাকা প্রয়োজন। (প্রকাশিত বাক্য ৭:১৪; ২০:৫, ৭-১০) আমাদের পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, আমরা প্রত্যেকে এইধরনের প্রেম গড়ে তুলতে পারি। (মথি ২২:৩৭; ১ করিন্থীয় ১৩:১৩) আসুন আমরা যিহোবাকে প্রেম করতে এবং অনন্তকালের জন্য সেই প্রেমে গড়ে উঠতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হই।
আপনি কী মনে করেন?
◻ ব্যক্তিগত দায়িত্ব সম্বন্ধে কোন্ জনপ্রিয় ধারণাগুলি বাইবেলের ইতিবাচক শিক্ষার সঙ্গে পরস্পর বিরোধী?
◻ প্রত্যেক খ্রীষ্টানকে নিজেকে গেঁথে তোলার অবশ্যই কোন্ কাজ করতে হবে?
◻ যিহূদার রাজাদের উদাহরণগুলি কিভাবে দেখায় যে প্রত্যেক ব্যক্তি তাদের নিজস্ব মনোনয়ন করেন?
◻ যিহোবা কিভাবে আমাদের নিশ্চয়তা দেন যে আমাদের চতুর্দিকের নেতিবাচক প্রভাবকে অগ্রাহ্য করে আমরা জীবনে সঠিক মনোনয়ন করতে পারি?
[১৫ পৃষ্ঠার চিত্র]
আপনার ভবিষ্যৎ কি জিনের দ্বারা পূর্বনির্ধারিত?
[১৭ পৃষ্ঠার চিত্র]
পিতার মন্দ উদাহরণ সত্ত্বেও রাজা যোশিয় ঈশ্বরের সেবা করাকে মনোনয়ন করেছিলেন