ম্যাকাবিরা কারা ছিলেন?
অনেকের কাছে, ম্যাকাবিদের যুগটি লুকিয়ে থাকা তথ্য বাক্সের মতো। যে যুগটির সময়কাল হল ইব্রীয় শাস্ত্রের শেষ বইগুলি লেখা সম্পূর্ণ হওয়া থেকে থেকে যীশু খ্রীষ্টের আগমন পর্যন্ত। ঠিক যেমন বিমান দুর্ঘটনার পর বিমানে রক্ষিত বিশেষ তথ্য বাক্সটি পরীক্ষা করলে দুর্ঘটনার কারণ সম্বন্ধে কিছু বিষয় স্পষ্ট হয়ে যায়, ঠিক তেমনই ম্যাকাবি যুগের প্রতি এক নিবিড় দৃষ্টি দিয়ে আমরা অনেক কিছু জানতে পারি। এই ম্যাকাবি যুগে যিহূদী রাষ্ট্রে অনেক বড় পরিবর্তন এসেছিল।
এই ম্যাকাবি কারা ছিলেন? ভাববাণীকৃত মশীহ আসার আগে তারা কিভাবে যিহূদী ধর্মকে প্রভাবিত করেছিলেন?—দানিয়েল ৯:২৫, ২৬.
গ্রিক সংস্কৃতির অত্যধিক প্রভাব
মহান আলেকজান্ডার গ্রিস থেকে শুরু করে ভারতবর্ষ পর্যন্ত (সা.কা.পূ. ৩৩৬-৩২৩ সাল) সমস্ত অঞ্চল জয় করেছিলেন। তার বিশাল রাজ্যই ছিল গ্রিক সংস্কৃতি, অর্থাৎ গ্রীসের ভাষা ও কৃষ্টি প্রসারের একটি অন্যতম কারণ। আলেকজান্ডারের আধিকারিক এবং সৈন্যরা যেখানে যেখানে গিয়েছিলেন সেখানকার মেয়েদের বিয়ে করে গ্রিক ও বিদেশী সংস্কৃতির মধ্যে মিশ্রণ ঘটিয়েছিলেন। আলেকজান্ডারের মৃত্যুর পর তার সেনাপতিদের মধ্যে রাজ্য বিভক্ত হয়ে পড়েছিল। সা.কা.পূ. দ্বিতীয় শতাব্দীর শুরুতে, সিরিয়ার গ্রিস দেশীয় সেলিউসিড রাজবংশের আন্টিওকাস তৃতীয়, ইস্রায়েলকে মিশরের গ্রিক টলেমিদের অধীন থেকে মুক্ত করেন। ইস্রায়েলের যিহূদীরা কিভাবে এই গ্রিক সাংস্কৃতিক শাসনের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন?
একজন ইতিহাসবেত্তা লেখেন: “যিহূদীরা যেহেতু গ্রিক সংস্কৃতি অবলম্বনকারী প্রতিবেশীদের সান্নিধ্যকে এড়াতে পারতেন না এবং তাদের নিজেদের গোষ্ঠীর অনেক লোকেরাই গ্রিক হয়েছিলেন, তাই গ্রিক কৃষ্টি এবং রীতিনীতি পরিহার করা যেত না। . . . আর গ্রিক সংস্কৃতির যুগে বাস করার অর্থ ছিল গ্রিক কৃষ্টিকে গ্রহণ করা।” যিহূদীরা গ্রিক নাম গ্রহণ করেছিল। এভাবে ধীরে ধীরে তারা গ্রিক প্রথা এবং পোশাকও ব্যবহার করতে শুরু করেছিল। গ্রিক সংস্কৃতিকে গ্রহণ করে নেওয়ার সূক্ষ্ম ইচ্ছা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেয়েছিল।
যাজকদের দুর্নীতি
যিহূদীদের মধ্যে যাজকেরাই গ্রিক সাংস্কৃতিক প্রভাব দ্বারা সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয়েছিলেন। তাদের অনেকের কাছে, গ্রিক সংস্কৃতিকে গ্রহণ করার অর্থ ছিল পরিস্থিতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে যিহূদী ধর্মকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। মহাযাজক তৃতীয় অনিয়াসের ভাই জেসন (ইব্রীয়তে যশোয়া বলা হয়) এইধরনের একজন যিহূদী ছিলেন। অনিয়াস যখন আন্তিয়খিয়াতে ছিলেন, তখন জেসন গ্রিক কর্তৃপক্ষকে ঘুঁষ দিতে চেয়েছিলেন। কেন? ফলে তারা যেন অনিয়াসের স্থলে জেসনকে মহাযাজক হিসাবে নিযুক্ত করতে সম্মত হন। গ্রিক সেলিউসিড শাসক আন্টিওকাস এপিফেনস (সা.কা.পূ. ১৭৫-১৬৪ সালে) নির্দ্বিধায় প্রস্তাবটি মেনে নিয়েছিলেন। এর আগে গ্রিক শাসকগণ যিহূদী মহাযাজকের পদের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করেননি কিন্তু সামরিক অভিযানের জন্য আন্টিওকাসের অর্থের প্রয়োজন ছিল। এছাড়াও তিনি এমন একজন যিহূদী নেতাকে পেয়ে আনন্দিত হয়েছিলেন, যিনি আরও দ্রুত গ্রিক সংস্কৃতির প্রসার ঘটাবেন। জেসনের অনুরোধে, আন্টিওকাস যিরূশালেমকে একটি গ্রিক শহরের (পলিস) অনুরূপ মর্যাদা দিয়েছিলেন। আর জেসন একটি মল্লক্রীড়ার স্থান নির্মাণ করেছিলেন, যেখানে অল্পবয়স্ক যিহূদী ও এমনকি যাজকগণও বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতেন।
বিশ্বাসঘাতকতার ফল বিশ্বাসঘাতকতা। তিন বছর পর, মেনেলস যিনি সম্ভবত যাজক বংশীয় ছিলেন না, তিনি আগের চেয়ে বেশি ঘুঁষ দিতে চেয়েছিলেন, ফলে জেসন পালিয়ে যান। আন্টিওকাসকে অর্থ দেওয়ার জন্য মেনেলস মন্দিরের তহবিল থেকে মোটা অংকের অর্থ নিয়েছিলেন। (আন্তিয়খিয়ায় নির্বাসিত অবস্থাতেই) অনিয়াস তৃতীয় এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে মেনেলস তাকে হত্যা করার ব্যবস্থা করেছিলেন।
আন্টিওকাস মারা গিয়েছেন বলে গুজব ছড়িয়ে পড়ায় জেসন, মেনেলসের কাছ থেকে মহাযাজকের পদ ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য এক হাজার লোক নিয়ে আবার যিরূশালেমে ফিরে এসেছিলেন। কিন্তু আন্টিওকাস আসলে মারা যাননি। যখন আন্টিওকাস জেসনের পদক্ষেপের কথা শোনেন আর যখন তিনি জানতে পারেন যে যিহূদীরা গ্রিক সংস্কৃতির প্রসারে বাধা দিচ্ছে, তিনি তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেন।
আন্টিওকাস পদক্ষেপ নেন
মোশি পার্লম্যান তার ম্যাকাবি (ইংরাজি) নামক বইতে লেখেন: “নথিগুলি যদিও সুস্পষ্ট নয়, তবুও এই বিষয়টি পরিষ্কার যে আন্টিওকাস এই সিদ্ধান্তে এসেছিলেন, যিহূদী ধর্মের স্বাধীনতাকে মেনে নেওয়া এক রাজনৈতিক ভুল ছিল। তার মতে, যিরূশালেমে সেইসময়ে বিদ্রোহের সূত্রপাত কেবল ধর্মীয় প্রেরণার কারণেই হয়নি কিন্তু এর এক রাজনৈতিক কারণও ছিল আর সেটি হল যিহূদীয়ার লোকেরা মিশরীয় সরকার চাইত। আর এই রাজনৈতিক অনুভূতি স্পষ্টতই এক বিপদজনক প্রভাব ফেলেছিল কারণ তার প্রজাদের মধ্যে একমাত্র যিহূদীরাই ধর্মীয় স্বাতন্ত্র্যকে চাইত এবং তাদের তা দেওয়াও হয়েছিল। . . . তাই যে কোন ভাবেই হোক তিনি তা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।”
এরপর যা ঘটেছিল সে সম্বন্ধে ইস্রায়েলীয় কুটনীতিক এবং পণ্ডিত আব্বা ইবান সংক্ষেপে বলেন: “[সা.কা.পূ.] ১৬৮ থেকে ১৬৭ সালে একে একে যিহূদীদের গণহত্যা, মন্দিরের অর্থ লুট এবং যিহূদী ধর্মকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। ত্বকচ্ছেদ এবং সেইসঙ্গে বিশ্রামবার পালন মৃত্যুযোগ্য অপরাধে পরিণত হয়েছিল। সা.কা.পূ. ১৬৭ সালের ডিসেম্বর মাসে চরমভাবে মর্যাদাহানি করা হয়, যখন আন্টিওকাসের আদেশে মন্দিরের ভিতরে যিউসের উদ্দেশে একটি বেদী নির্মাণ করে যিহূদীদেরকে—গ্রিক দেবতাদের উদ্দেশে—শূকরের মাংস উৎসর্গ করতে বলা হয়, যা যিহূদী ব্যবস্থায় অশুচি ছিল।” ওই সময়ে মেনেলস এবং অন্যান্য গ্রিক সংস্কৃতি অবলম্বনকারী যিহূদীরা তাদের পদে তখনও অধিষ্ঠিত ছিলেন এবং এই কলুষিত মন্দিরে তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন।
অনেক যিহূদী গ্রিক সংস্কৃতিকে গ্রহণ করলেও, একটি নতুন দল যারা নিজেদের হ্যাসিদিম—ধার্মিক ব্যক্তি বলে গণ্য করতেন—তারা মোশির ব্যবস্থা আরও কঠোরভাবে পালন করার জন্য উৎসাহিত করেছিলেন। তখন গ্রিক সংস্কৃতি অবলম্বনকারী যাজকদের আচরণে অতি বিরক্ত হয়ে, সাধারণ লোকেরা ধীরে ধীরে হ্যাসিদিমদের পক্ষ নিতে শুরু করেছিল। সারা দেশে যিহূদীদেরকে হয় পৌত্তলিক প্রথা এবং হোমবলিকে মেনে নিতে নয়তো বা মৃত্যুকে বেছে নেওয়ার জন্য জোর করা হয়, ফলে ওই সময় অত্যাচার ও হত্যাযজ্ঞ শুরু হয়। ম্যাকাবিদের সম্বন্ধে অপ্রামাণিক বইগুলি অসংখ্য নারী, পুরুষ ও সন্তানদের বিবরণ তুলে ধরে, যারা আপোশ না করে বরং মৃত্যুকে বেছে নিয়েছিলেন।
ম্যাকাবিদের প্রতিক্রিয়া
আন্টিওকাসের চরম পদক্ষেপ অনেক যিহূদীকে তাদের ধর্মের পক্ষে লড়াই করার জন্য প্রণোদিত করেছিল। যিরূশালেমের উত্তরপশ্চিমাঞ্চলে মডিনের আধুনিক শহর লডের কাছে মেত্তেথিয়াস নামে একজন যাজক, ওই শহরের প্রধান ছিলেন। স্থানীয় লোকেরা যেহেতু মেত্তেথিয়াসকে সম্মান করতেন, তাই রাজার প্রতিনিধিগণ তাকে এক পৌত্তলিক হোমবলি উৎসর্গে অংশ নেওয়ার জন্য যুক্তি দেখিয়েছিলেন—যেন তিনি তার নিজের জীবন রক্ষা করেন এবং সেইসঙ্গে বাকি জনসাধারণের কাছে একটি উদাহরণ স্থাপন করেন। মেত্তেথিয়াস যখন অস্বীকার করেন তখন অন্য একজন যিহূদী এগিয়ে আসেন এবং আপোশ করতে উদ্যত হন। মেত্তেথিয়াস অত্যন্ত রেগে গিয়ে একটি অস্ত্র তুলে নেন এবং তাকে হত্যা করেন। এই বয়স্ক ব্যক্তির হিংস্র আক্রমণে হতবিহ্বল হয়ে পড়ায় গ্রিক সৈন্যরা পাল্টা আক্রমণ করতে দেরি করেন। কয়েক মুহূর্তের মধ্যে মেত্তেথিয়াস গ্রিক সেনাপতিকেও হত্যা করেন। গ্রিক সৈন্যবাহিনী নিজেদের রক্ষা করার আগেই, মেত্তেথিয়াসের পাঁচ পুত্র এবং ওই শহরের অধিবাসীরা তাদের পরাজিত করেন।
মেত্তেথিয়াস চিৎকার করে বলে ওঠেন: ‘ব্যবস্থার পক্ষে উদ্যোগী সকল ব্যক্তি আমাকে অনুসরণ কর।’ প্রতিশোধ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য তিনি এবং তার পুত্রেরা পাহাড়ি অঞ্চলে পালিয়ে গিয়েছিলেন। আর তাদের এই কাজের কথা ছড়িয়ে পড়লে যিহূদীরা (যার অন্তর্ভুক্ত ছিল অনেক হ্যাসিদিম) তাদের সঙ্গে যোগ দেন।
মেত্তেথিয়াস সামরিক অভিযানগুলির জন্য তার পুত্র যুডাহ্কে নিযুক্ত করেছিলেন। সম্ভবত যুডাহ্র সামরিক দক্ষতার কারণে তাকে ম্যাকাবি বলে অভিহিত করা হয়েছিল, যার অর্থ “হাতুড়ি।” মেত্তেথিয়াস ও তার পুত্রদের হেসমোনীয় বলা হতো, যে নামটি হয় হিষ্মোন শহর অথবা এই নামের কোন পূর্বপুরুষের কাছ থেকে এসেছে। (যিহোশূয় ১৫:২৭) বিদ্রোহের সময় যুডাহ্ ম্যাকাবি একজন বিখ্যাত ব্যক্তিতে পরিণত হলেও, পুরো পরিবারকে ম্যাকাবিস বলা হতো।
মন্দির পুনরুদ্ধার করা হয়
বিদ্রোহের প্রথম বছরে, মেত্তেথিয়াস এবং তার পুত্ররা এক ক্ষুদ্র সেনাবাহিনী গড়ে তুলতে পেরেছিলেন। গ্রিক সৈন্যরা বিশ্রামবারে একাধিকবার হ্যাসিদিম যোদ্ধাদের উপর আক্রমণ করেছিল। তারা যদিও আত্মরক্ষা করতে পারতেন কিন্তু তারা বিশ্রামবার লঙ্ঘন করতে চাননি। এর ফলে একাধারে গণহত্যা হয়েছিল। তখন ধর্মীয় প্রধান হিসাবে বিবেচিত—মেত্তেথিয়াস—এক নিয়ম স্থাপন করেছিলেন যা যিহূদীদের বিশ্রামবারে নিজেদেরকে রক্ষা করার সুযোগ করে দিয়েছিল। এই নিয়ম বিদ্রোহে কেবল এক নব চেতনাই দান করেনি, সেইসঙ্গে যিহূদী ধর্মেও এক নমুনা স্থাপন করেছিল যে প্রয়োজনে ধর্মীয় নেতাগণ যিহূদী ব্যবস্থাকে পরিস্থিতি অনুযায়ী পরিবর্তন করতে পারবেন। পরবর্তী বিবৃতিতে তালমুড এই প্রবণতাকে প্রতিফলিত করে: “তারা একটি বিশ্রামবার লঙ্ঘন করুক যেন অনেক বিশ্রামবারকে পবিত্র করতে পারে।”—ইয়োমা ৮৫খ.
বৃদ্ধ পিতার মৃত্যুর পর, স্বাভাবিকভাবেই যুডাহ্ ম্যাকাবি বিদ্রোহের নেতা হয়েছিলেন। সামনাসামনি যুদ্ধে শত্রুকে পরাজিত করার মতো ক্ষমতা তার নেই, তা উপলব্ধি করে তিনি আধুনিক দিনের গেরিলা যুদ্ধের মতো নতুন পন্থা উদ্ভাবন করেছিলেন। তিনি আন্টিওকাসের বাহিনীকে এমন এক অঞ্চলে আক্রমণ করতেন যেখানে তারা আত্মরক্ষার জন্য তাদের প্রচলিত পন্থা অবলম্বন করতে পারবে না। এভাবে যুডাহ্ একের পর এক যুদ্ধে, তার নিজের বাহিনীর চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী দলকে পরাজিত করার সাফল্য অর্জন করেছিলেন।
অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও রোমের ক্ষমতার উত্থানের কারণে সেলিউসিড সাম্রাজ্যের শাসকেরা যিহূদী বিরুদ্ধ অনুশাসনগুলি খুব একটা জোরদার করতে পারেননি। এটি যুডাহ্কে ঠিক যিরূশালেমের দ্বারগুলিকে আক্রমণ করার পথ খুলে দিয়েছিল। সা.কা.পূ. ১৬৫ সালের ডিসেম্বর মাসে (অথবা সম্ভবত সা.কা.পূ. ১৬৪ সালে) মন্দিরকে অপবিত্র করার ঠিক তিন বছর পর, তিনি এবং তার সেনাবাহিনী মন্দির দখল করেছিলেন, এর সমস্ত সরঞ্জাম পরিষ্কার করেছিলেন এবং পুনরায় উৎসর্গ করেছিলেন। যিহূদীরা প্রতি বছর উৎসর্গের উৎসব, হানুকাহ্র সময় এই ঘটনাটিকে উদ্যাপন করেন।
ধর্মানুরাগের ঊর্ধ্বে রাজনীতি
বিদ্রোহ করার লক্ষ্যগুলি অর্জিত হয়েছিল। যিহূদী ধর্মের রীতিনীতির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেওয়া হয়েছিল। মন্দিরে পুনরায় উপাসনা এবং হোমবলি উৎসর্গ করা চালু হয়েছিল। হ্যাসিদিমরা তখন সন্তুষ্ট হয়ে যুডাহ্ ম্যাকাবির সৈন্যদলকে ছেড়ে তাদের নিজেদের গৃহে ফিরে গিয়েছিলেন। কিন্তু যুডাহ্র অন্যধরনের পরিকল্পনা ছিল। তার উত্তমরূপে প্রশিক্ষিত সেনাবাহিনী ছিল, সুতরাং একটি স্বাধীন যিহূদী রাষ্ট্র গঠন করার ক্ষেত্রে বাধা কোথায়? যে ধর্মীয় কারণগুলি বিদ্রোহ জাগিয়ে তুলেছিল সেগুলির স্থলে তখন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য কাজ করছিল। ফলে, লড়াই চলতে থাকে।
সেলিউসিড শাসনের বিরুদ্ধে তার লড়াইয়ের প্রতি সমর্থন পাওয়ার আশায় যুডাহ্ ম্যাকাবি রোমের সঙ্গে একটি চুক্তি করেছিলেন। যদিও তিনি সা.কা.পূ. ১৬০ সালে যুদ্ধে নিহত হয়েছিলেন কিন্তু তার ভাইরা যুদ্ধ চালিয়ে গিয়েছিলেন। যুডাহ্র ভাই যোনাথন বিষয়গুলিকে কৌশলে পরিচালনা করেছিলেন যেন সেলিউসিড শাসকগণ তাকে মহাযাজক ও যিহূদার শাসক হিসাবে মেনে নেন, যদিও তখনও সেখানে সেলিউসিড শাসকদের সার্বভৌমত্ব অব্যাহত ছিল। সিরীয়ার চক্রান্তের ফলে যখন যোনাথনের সঙ্গে প্রতারণা করে তাকে বন্দি এবং হত্যা করা হয়, তখন তার ভাই সিমিয়ন—ম্যাকাবিদের শেষ ভাই—ক্ষমতা গ্রহণ করেন। সিমিয়নের শাসনাধীনে, সেলিউসিড শাসনের শেষ চিহ্নকে (সা.কা.পূ. ১৪১ সালে) অপসারণ করা হয়েছিল। সিমিয়োন রোমের সঙ্গে পুনরায় মৈত্রীবন্ধন স্থাপন করেন এবং যিহূদী নেতৃবর্গ তাকে শাসক ও মহাযাজক হিসাবে স্বীকার করে নেন। এভাবে ম্যাকাবিদের অধীনে এক স্বাধীন হেসমোনীয় রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল।
ম্যাকাবিরা মশীহের আগমনের পূর্বে পুনরায় মন্দিরে উপাসনা চালু করেছিলেন। (যোহন ১:৪১, ৪২; ২:১৩-১৭ পদগুলির সঙ্গে তুলনা করুন।) কিন্তু গ্রিক সংস্কৃতি অবলম্বনকারী যাজকদের কারণে যেমন যাজকপদের উপর আস্থা দুর্বল হয়ে গিয়েছিল, তদ্রূপ হেসমোনীয়দের অধীনে তা আরও দুর্বল হয়ে পড়েছিল। বাস্তবিকই, বিশ্বস্ত দায়ূদের বংশের একজন রাজার পরিবর্তে রাজনীতিমনা যাজকদের শাসন, কখনই যিহূদী লোকেদের জন্য প্রকৃত আশীর্বাদ আনেনি।—২ শমূয়েল ৭:১৬; গীতসংহিতা ৮৯:৩, ৪, ৩৫, ৩৬.
[২১ পৃষ্ঠার চিত্র]
যুডাহ্ ম্যাকাবির পিতা মেত্তেথিয়াস চিৎকার করে বলেছিলেন: ‘ব্যবস্থার পক্ষে উদ্যোগী সকল ব্যক্তি আমাকে অনুসরণ কর’
[সজন্যে]
যিহূদী শরণার্থীদের কাছে মেত্তেথিয়াস আবেদন জানাচ্ছেন/The Doré Bible Illustrations/Dover Publications