ওয়াচটাওয়ার অনলাইন লাইব্রেরি
ওয়াচটাওয়ার
অনলাইন লাইব্রেরি
বাংলা
  • বাইবেল
  • প্রকাশনাদি
  • সভা
  • w৯৯ ৬/১ পৃষ্ঠা ২০-২৩
  • ঈশ্বরের সেবা করার জন্য আমার প্রতিজ্ঞাকে রাখা

এই বাছাইয়ের সঙ্গে কোনো ভিডিও প্রাপ্তিসাধ্য নেই।

দুঃখিত, ভিডিওটা চালানো সম্বভব হচ্ছে না।

  • ঈশ্বরের সেবা করার জন্য আমার প্রতিজ্ঞাকে রাখা
  • ১৯৯৯ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • উপশিরোনাম
  • অনুরূপ বিষয়বস্ত‌ু
  • লিথুয়েনিয়ায় ছেলেবেলা
  • আমার প্রতিজ্ঞা রাখা
  • বিশ্বাসের প্রথম পরীক্ষাগুলো
  • নিষেধাজ্ঞা ও আবার গ্রেপ্তার
  • কারাগারে বিশ্বাস বজায় রাখা
  • পূর্ণ-সময়ের পরিচর্যায় ফিরে আসা
  • পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া
  • আমার বাল্যকাল থেকে ধৈর্য সহকারে যিহোবার অপেক্ষা করা
    ১৯৯৭ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • আধ্যাত্মিকভাবে দৃঢ় থাকার জন্য আমাদের যুদ্ধ
    ২০০৬ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • ঈশ্বর আমার আশ্রয় এবং শক্তি
    ১৯৯৭ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • যিহোবার প্রেমময় হস্তের অধীনে সেবা করা
    ১৯৯৬ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
আরও দেখুন
১৯৯৯ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
w৯৯ ৬/১ পৃষ্ঠা ২০-২৩

ঈশ্বরের সেবা করার জন্য আমার প্রতিজ্ঞাকে রাখা

ফ্রাঞ্জ গুডলাইকিস দ্বারা কথিত

একশজনেরও বেশি সৈন্যের মধ্যে শুধু আমরা চারজন বেঁচে ছিলাম। মৃত্যুর মুখোমুখি হয়ে আমি হাঁটু গেঁড়ে ঈশ্বরের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, ‘যুদ্ধে যদি আমি বেঁচে যাই, আমি জীবনভর তোমার সেবা করব।’

এই প্রতিজ্ঞা আমি আজ থেকে ৫৪ বছর আগে ১৯৪৫ সালের এপ্রিল মাসে করেছিলাম যখন আমি জার্মান সেনাবাহিনীর একজন সৈনিক ছিলাম। সময়টা ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার কিছু আগে, যখন সোভিয়েত সেনাবাহিনী তাদের সর্বশক্তি দিয়ে বার্লিনের ওপর আক্রমণ চালাচ্ছিল। আমাদের লোকেরা বার্লিন থেকে ৬৫ কিলোমিটারেরও কম দূরত্বে, ওডার নদীর ওপর সিলো শহরের কাছে দাঁড়িয়ে ছিল। সেখানে দিন রাত আমাদের ওপর প্রচণ্ড গোলাবর্ষণ করা হয় আর তার ফলে আমাদের দলের সৈন্যদের সংখ্যা কমতে থাকে।

জীবনে সেই প্রথমবার আমি ভেঙে পড়ি এবং ঈশ্বরের কাছে কেঁদে কেঁদে প্রার্থনা করি। তখন বাইবেলের একটা পদ আমার মনে পড়েছিল যেটা আমার ঈশ্বর ভয়শীলা মা প্রায়ই বলতেন: “সঙ্কটের দিনে আমাকে ডাকিও; আমি তোমাকে উদ্ধার করিব, ও তুমি আমার গৌরব করিবে।” (গীতসংহিতা ৫০:১৫) জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আর মৃত্যুভয়ে আমি ঈশ্বরের কাছে ওপরে বলা ওই প্রতিজ্ঞা করেছিলাম। আমি কীভাবে তা রাখতে পেরেছিলাম? আর কীভাবেই বা আমি জার্মান সেনাবাহিনীর একজন সদস্য হয়েছিলাম?

লিথুয়েনিয়ায় ছেলেবেলা

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ে, ১৯১৮ সালে লিথুয়েনিয়া স্বাধীন হয় ও সেখানে গণতান্ত্রিক সরকার গড়ে তোলা হয়। ১৯২৫ সালে বাল্টিক সাগরের কাছে মেমেল (ক্লাইপেডা) জেলায় আমার জন্ম হয়। আমার জন্মের আগের বছরই এই জেলাকে লিথুয়েনিয়ার সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছিল।

পাঁচজন বোনের সঙ্গে আমার ছেলেবেলা বেশ আনন্দেই কেটেছিল। বাবা একেবারে বন্ধুর মতো ছিলেন, তার সব কাজ তিনি আমাদেরকে সঙ্গে নিয়ে করতেন। আমাদের বাবামা ইভেঞ্জেলিক গির্জার সদস্য ছিলেন কিন্তু তারা গির্জার কোন উপাসনায় যোগ দিতেন না কারণ আমার মা গির্জার পাদ্রির ভণ্ডামীতে অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন। তবুও, তিনি ঈশ্বর ও তাঁর বাক্য বাইবেলকে ভালবাসতেন যা তিনি আন্তরিকতার সঙ্গে পড়তেন।

১৯৩৯ সালে জার্মানি লিথুয়েনিয়ার কিছু অংশ দখল করে নেয় আর আমরা যেখানে থাকতাম সেটা তার মধ্যে পড়ে। এরপর, ১৯৪৩ সালের গোঁড়ার দিকে, আমাকে জার্মান সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার জন্য ডাকা হয়। এইসময় একটা যুদ্ধে আমি আহত হই কিন্তু সেরে ওঠার পর আমাকে ইস্টার্ন ফ্রন্টে পাঠানো হয়। ইতিমধ্যে যুদ্ধ অন্যদিকে মোড় নেয় আর জার্মান, সোভিয়েত সৈন্যবাহিনীর সামনে থেকে পিছু হটতে শুরু করে। এটাই ছিল সেই সময় যখন আমি একটুর জন্য মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পাই, যেমন শুরুতেই বলা হয়েছে।

আমার প্রতিজ্ঞা রাখা

যুদ্ধের সময়ে, আমার বাবামা লিপজিগের দক্ষিণ-পূর্বে, জার্মানির ওসাতসে চলে যান। যুদ্ধের ফলে, তাদেরকে খুঁজে বের করা কঠিন হয়ে পড়ে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আবার একজায়গায় হতে পেরে আমরা কতই না আনন্দিত হয়েছিলাম! এর পরপরই, ১৯৪৭ সালের এপ্রিল মাসে, আমি মায়ের সঙ্গে ম্যাক্স সুবার্ট নামে একজন যিহোবার সাক্ষির দেওয়া একটা জনসাধারণের বক্তৃতা শুনতে যাই। মা বিশ্বাস করতে শুরু করেছিলেন যে তিনি সত্য ধর্ম খুঁজে পেয়েছেন আর কয়েকটা সভায় যোগ দেওয়ার পর, আমিও বিশ্বাস করতে শুরু করি।

এর অল্প কিছুদিন পর, আমার মা একটা মই থেকে পড়ে যান আর ওই আঘাতের কারণেই কয়েক মাস পরে তিনি মারা যান। মৃত্যুর আগে মা যখন হাসপাতালে ছিলেন, মা আমাকে সস্নেহে বলেছিলেন: “আমি সবসময় প্রার্থনা করেছি যে আমার সন্তানদের মধ্যে অন্তত একজনও যেন ঈশ্বরের পথ খুঁজে পায়। আমি আমার প্রার্থনার উত্তর পেয়েছি আর তাই এখন আমি শান্তিতে মরতে পারি।” আমি সেই সময়ের জন্য কতই না অধীর হয়ে অপেক্ষা করে আছি যখন আমার মা মৃত্যু থেকে জেগে উঠে দেখবেন যে তার প্রার্থনা পূর্ণ হয়েছে!—যোহন ৫:২৮.

১৯৪৭ সালের ৮ই আগস্ট, ভাই সুবার্টের বক্তৃতা শোনার মাত্র চার মাস পর, যিহোবা ঈশ্বরের কাছে আমার উৎসর্গীকরণের প্রতীক হিসেবে আমি লিপজিগের এক অধিবেশনে বাপ্তিস্ম নিই। আর এইভাবে শেষ পর্যন্ত আমি ঈশ্বরের কাছে করা আমার সেই প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করার জন্য পদক্ষেপ নিই। অল্প সময়ের মধ্যেই আমি একজন অগ্রগামী হয়েছিলাম, যিহোবার সাক্ষিদের পূর্ণ-সময়ের প্রচারকদের যে নামে ডাকা হতো। সেইসময়ে সেখানে প্রায় ৪০০ জন অগ্রগামী ছিলেন, এর পরেই যাকে জার্মান গণপ্রজাতন্ত্র বা পূর্ব জার্মানি নাম দেওয়া হয়।

বিশ্বাসের প্রথম পরীক্ষাগুলো

ওসাতসে একজন প্রতিবেশী আমাকে লোভ দেখিয়েছিলেন যে যদি আমি জার্মানির সমাজতান্ত্রিক সাম্যবাদী (এসইডি) দলে যোগ দিই, তাহলে তিনি আমাকে এক সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ করে দেবেন। আর এইভাবে তিনি আমাকে মার্কসবাদের দিকে ঝোঁকানোর চেষ্টা করেছিলেন। আমি এই প্রস্তাবকে অগ্রাহ্য করেছিলাম, যেভাবে যীশু শয়তানের প্রস্তাবকে অগ্রাহ্য করেছিলেন।—মথি ৪:৮-১০.

১৯৪৯ সালের এপ্রিল মাসে, একদিন দুজন পুলিশ আমার কর্মস্থলে আসেন আর তাদের সঙ্গে যাওয়ার জন্য হুকুম দেন। আমাকে সোভিয়েত গোয়েন্দা বিভাগের স্থানীয় অফিসে নিয়ে যাওয়া হয় আর পশ্চিমের পুঁজিবাদীদের হয়ে কাজ করার দোষে আমাকে দোষী করা হয়। তারা আমাকে বলেন যে আমি নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে পারি যদি আমি ঘরে ঘরে কাজ করার সময় সোভিয়েত রাশিয়া অথবা এসইডি এর বিরুদ্ধে যারা কথাবার্তা বলবেন বা যে কেউ যিহোবার সাক্ষিদের সভায় যান তাদের বিষয়ে জানিয়ে দিই। আমি এটা করতে রাজি না হওয়ায় আমাকে জেলে দেওয়া হয়। পরে, আমাকে সামরিক আদালতে হাজির করা হয়। আমার শাস্তি ছিল: সাইবেরিয়ায় ১৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড!

আমি শান্ত ছিলাম আর তা কর্মকর্তাদের মনকে প্রভাবিত করেছিল। তারা আমাকে বলেন যে আমার শাস্তি বলবৎ থাকবে কিন্তু যতদিন পর্যন্ত না আমি তাদের কথায় রাজি হই ততদিন পর্যন্ত সপ্তাহে শুধু একবার তাদেরকে আমার রিপোর্ট দিলেই চলত। আরও পরিপক্ব সাক্ষিদের পরামর্শ নেওয়ার জন্য, আমি ম্যাগ্দবার্গে যাই যেখানে তখন ওয়াচ টাওয়ার সোসাইটির শাখা অফিস ছিল। সেখানে যাওয়া সহজ ছিল না কারণ আমার ওপর কড়া নজর ছিল। অ্যার্নস্ট ভাওয়ার, যিনি ম্যাগ্দবার্গে আইন সংক্রান্ত বিভাগে কাজ করতেন, তিনি আমাকে বলেন: “লড়াই করুন, জিত আপনার হবেই। আর আপোশ করার মানে হেরে যাওয়া। এটাই আমরা কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে শিখেছিলাম।”a এই পরামর্শ ঈশ্বরকে সেবা করার জন্য আমার প্রতিজ্ঞা রাখতে আমাকে সাহায্য করেছিল।

নিষেধাজ্ঞা ও আবার গ্রেপ্তার

১৯৫০ সালের জুলাই মাসে, আমাকে একজন ভ্রমণ অধ্যক্ষ হিসেবে কাজ করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু, ৩০শে আগস্ট, ম্যাগ্দবার্গে আমরা যেখানে আমাদের কাজ করতাম সেই বিল্ডিংয়ে পুলিশ হানা দেয় তার ফলে আমাদের প্রচার কাজকে নিষিদ্ধ করা হয়। তাই আমার কাজ বদলে যায়। পল হিরসবার্জার ও আমাকে একসঙ্গে প্রায় ৫০টা মণ্ডলীতে কাজ করতে হয়েছিল, প্রত্যেকটা মণ্ডলীতে দুই বা তিন দিন করে কাটিয়ে আমরা ভাইদেরকে নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও, তাদের পরিচর্যার কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য সুসংগঠিত করতে সাহায্য করেছিলাম। এর পরের কয়েক মাসে আমি ছয়বার পুলিশের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছি!

একটা মণ্ডলীতে একজন এমন লোক ঢুকে পড়েছিল, যে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিভাগ, স্ট্যাসি-কে আমাদের কথা জানিয়ে দিয়ে মণ্ডলীর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল। এইজন্য ১৯৫১ সালের জুলাই মাসে, পল এবং আমাকে রাস্তা থেকে পাঁচজন বন্দুকধারী লোক গ্রেপ্তার করে। পিছনে ফিরে তাকিয়ে মনে হয় যেন আমরা যিহোবার সংগঠনের ওপর ততখানি নির্ভর করিনি যতটা করা আমাদের উচিত ছিল। আমাদের প্রাচীন ভাইরা আমাদের পরামর্শ দিয়েছিলেন যে আমরা যেন কখনও একসঙ্গে ঘোরাঘুরি না করি। অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের ফলে আমরা আমাদের স্বাধীনতা হারিয়েছিলাম! এছাড়াও, আমরা কখনও নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে ঠিকও করিনি যে গ্রেপ্তার হলে আমরা কী বলব।

কয়েদখানায় আমি একা যিহোবার কাছে কেঁদে কেঁদে সাহায্য চেয়ে প্রার্থনা করেছিলাম যাতে আমি আমার ভাইদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা না করি বা আপোশ না করি। তারপর কখন যেন আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। হঠাৎই আমার বন্ধু পলের গলার আওয়াজে আমি জেগে উঠি। আমার কক্ষের ঠিক ওপরের ঘরেই স্ট্যাসি এর লোকেরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছিল। রাতে প্রচণ্ড গরম থাকায় বারান্দার দরজাটা খোলা ছিল ফলে আমি খুব স্পষ্টভাবে না হলেও সবকিছু শুনতে পেরেছিলাম। পরে, যখন আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল, আমি ওই একই উত্তর দিয়েছিলাম যা কর্তৃপক্ষদের অবাক করেছিল। মায়ের সেই প্রিয় বাইবেলের পদটা, “সঙ্কটের দিনে আমাকে ডাকিও; আমি তোমাকে উদ্ধার করিব,” বার বার আমার মনে এসেছিল আর আমি প্রচুর শক্তি পেয়েছিলাম।—গীতসংহিতা ৫০:১৫.

জেরা করার পর, পল ও আমাকে বিচারের জন্য প্রথমে হ্যালি ও পরে ম্যাগ্দবার্গে স্ট্যাসি কারাগারে পাঁচ মাস বন্দি করে রাখা হয়েছিল। ম্যাগ্দবার্গে থাকাকালে, আমি মাঝে মাঝে আমাদের বন্ধ হয়ে যাওয়া শাখা দপ্তরকে দেখতে পেতাম। আমার মনে হতো, কারাগারে থাকার বদলে আমি যদি সেখানে কাজ করতে পারতাম! ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে, আমাদের শাস্তি ঘোষণা করা হয়: “দশ বছরের জেল আর কুড়ি বছরের জন্য আমাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়।”

কারাগারে বিশ্বাস বজায় রাখা

যে যিহোবার সাক্ষিদেরকে দশ বছরের জেল দেওয়া হয়েছিল, তাদের চেনার জন্য বিশেষ চিহ্ন দেওয়া হয়েছিল। আমাদের পায়জামার একপায়ে এবং জ্যাকেটের একহাতে একটা লাল রঙের ফিতা সেলাই করে লাগানো হয়েছিল। এছাড়াও, আমরা যে খুবই ভয়ংকর অপরাধী সেই বিষয়ে প্রহরীদের সতর্ক করে দেওয়ার জন্য আমাদের কয়েদখানার দরজায় গোল করে কাটা লাল রঙের একটা ছোট বোর্ড লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

কর্তৃপক্ষেরা সত্যিই আমাদেরকে অপরাধীদের চেয়েও বিপদজনক বলে মনে করতেন। আমাদের সঙ্গে বাইবেল রাখতে দেওয়া হতো না কারণ একজন প্রহরী বলেছিলেন: “বাইবেল হাতে একজন যিহোবার সাক্ষিকে দেখতে একজন বন্দুকধারী অপরাধীর মতো মনে হয়।” বাইবেলের কিছু অংশ কাছে রাখার জন্য আমরা রুশ লেখক লিও টলস্টয়ের লেখা বই পড়তাম, যিনি তার বইয়ে প্রায়ই বাইবেলের পদ উদ্ধৃত করেছিলেন। আমরা বাইবেলের ওই পদগুলোকে মুখস্থ করে ফেলেছিলাম।

১৯৫১ সালে আমাকে গ্রেপ্তার করার আগে, এলসা রেইমারের সঙ্গে আমার বিয়ের কথা ঠিক হয়। সে প্রায়ই জেলে আমার সঙ্গে দেখা করতে আসত আর মাসে একবার করে খাবারের একটা মোড়ক আমার জন্য পাঠাত। সে ওই মোড়কগুলোর মধ্যে করে লুকিয়ে লুকিয়ে আধ্যাত্মিক খাদ্যও পাঠাত। একবার, সে কিছু সসেজের মধ্যে প্রহরীদুর্গ এর কয়েকটা প্রবন্ধ ভরে দিয়েছিল। সাধারণত প্রহরীরা সসেজগুলোকে টুকরো টুকরো করে দেখত যে সেগুলোর মধ্যে কিছু লুকিয়ে রাখা হয়েছে কি না কিন্তু ওইবার মোড়কটা দিনের শেষে আসায় পরীক্ষা না করেই আমাকে দিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

এই সময় কার্ল হিঞ্জ ক্লেবার, আমি ও আরও তিনজন ন-সাক্ষি কয়েদি আমরা একসঙ্গে একটা ছোট কক্ষে থাকতাম। তাদের কাউকে না দেখিয়ে কীভাবে আমরা প্রহরীদুর্গ পড়েছিলাম? আমরা অন্য একটা বই পড়ার ভান করে তার মধ্যে প্রহরীদুর্গ প্রবন্ধগুলো ঢুকিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে পড়েছিলাম। জেলে বন্দি আমাদের অন্য সাক্ষি ভাইদের কাছেও আমরা এই মহামূল্য আধ্যাত্মিক খাদ্য পাঠিয়ে দিয়েছিলাম।

জেলে থাকাকালে আমরা অন্যদের কাছে ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে বলার সুযোগ পেলেই তা ব্যবহার করতাম। আর তাই আমার একজন সঙ্গী কয়েদি যখন বিশ্বাসী হয়েছিল আমি কতই না আনন্দিত হয়েছিলাম।—মথি ২৪:১৪.

পূর্ণ-সময়ের পরিচর্যায় ফিরে আসা

১৯৫৭ সালের ১লা এপ্রিল, প্রায় ছয় বছর অন্ধকার কারাকক্ষে কাটানোর পর, আমি ছাড়া পাই। এর দুই সপ্তাহের মধ্যে আমি এলসাকে বিয়ে করি। স্ট্যাসি যখন আমার ছাড়া পাওয়ার কথা জানতে পায়, তারা আমাকে আবার জেলে পাঠাবার অজুহাত খুঁজতে থাকে। তারা যেন তা করার সুযোগ না পায় সেইজন্য আমি ও এলসা সীমান্ত পার হয়ে পশ্চিম বার্লিনে চলে যাই।

আমরা যখন পশ্চিম বার্লিনে পৌঁছাই, সোসাইটি জানতে চায় যে আমাদের পরিকল্পনা কী। আমরা জানিয়েছিলাম যে আমাদের একজন অগ্রগামীর কাজ করব বলে ঠিক করেছি আর অন্যজন কোন চাকরি।

আমাদের জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে “যদি আপনাদের দুজনকেই অগ্রগামীর কাজ করতে বলা হয় তাহলে আপনাদের কেমন লাগবে?”

আমরা উত্তর দিই, “যদি তা সম্ভব হয়, তাহলে আমরা এখনই তৈরি আছি।”

আমাদের ব্যক্তিগত খরচ চালানোর জন্য প্রতি মাসে আমাদেরকে অল্প কিছু টাকা দেওয়া হতো আর ১৯৫৮ সাল থেকে আমরা বিশেষ অগ্রগামী হিসেবে কাজ করতে শুরু করি। আমরা যাদের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করেছি তারা যিহোবার সেবা করার জন্য নিজেদের জীবন পরিবর্তন করেছে তা দেখে আমরা কত খুশিই যে হয়েছি! পরের দশ বছরে বিশেষ অগ্রগামীর কাজ আমাদের স্বামী এবং স্ত্রী হিসেবে একসঙ্গে মিলেমিশে কাজ করতে শিখিয়েছে। এলসা সবসময় আমার পাশে পাশে থেকেছে, এমনকি আমি যখন গাড়ি মেরামত করতাম তখনও। আমরা একসঙ্গে পড়তাম, অধ্যয়ন করতাম আর একসঙ্গে প্রার্থনা করতাম।

১৯৬৯ সালে, আমরা ভ্রমণের কাজ শুরু করি যখন প্রত্যেক সপ্তাহে আমাদের একটা মণ্ডলীতে এর সদস্যদের প্রয়োজনগুলো দেখাশোনার জন্য পরিদর্শন করতে হতো। একজন অভিজ্ঞ ভ্রমণ অধ্যক্ষ ভাই যোসেফ বার্ত আমাকে এই পরামর্শ দিয়েছিলেন: “আপনি যদি আপনার কাজে সফল হতে চান, তাহলে ভাইদের প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ হোন।” আমি এই পরামর্শ কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছি। ফলে, সাক্ষি ভাইদের সঙ্গে আমাদের খুব আন্তরিক ও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল, যা প্রয়োজনে তাদের পরামর্শ দেওয়াকে অনেক সহজ করে দিয়েছিল।

১৯৭২ সালে, এলসার ক্যানসার ধরা পড়ে, ফলে অস্ত্রোপচার করার দরকার হয়। পরে তার বাত হয়। প্রচণ্ড ব্যথা ভোগ করা সত্ত্বেও, প্রত্যেক সপ্তাহে সে আমার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন মণ্ডলীতে গিয়েছে আর যতটুকু পেরেছে বোনদের সঙ্গে প্রচারে বের হয়েছে।

পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া

১৯৮৪ সালে আমার শ্বশুর শাশুড়ীকে সবসময়ের জন্য দেখাশোনা করা দরকার হয়ে পড়ে, তাই তারা মারা যাওয়ার আগে পর্যন্ত আমরা ভ্রমণ কাজ বন্ধ করে তাদের দেখাশোনা করেছিলাম আর চার বছর পর তারা মারা যান। (১ তীমথিয় ৫:৮) তারপর, ১৯৮৯ সালে, এলসা খুবই অসুস্থ হয়ে পড়ে। আনন্দের কথা যে সে কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠেছে কিন্তু ঘরের সমস্ত কাজ দেখাশোনা করার ভার আমার ওপর এসে পড়েছে। সারাক্ষণ ব্যথা ভোগ করছে এমন একজন ব্যক্তির সঙ্গে মানিয়ে নিতে আমি এখনও শিখে চলেছি। কিন্তু, মানসিক যন্ত্রণা ও চাপ থাকা সত্ত্বেও, আমরা আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোর জন্য আমাদের প্রেম শেষ হয়ে যেতে দিইনি।

আজকে, এখনও পর্যন্ত অগ্রগামীর কাজ করে চলতে পারায় আমরা কৃতজ্ঞ। আর আমরা বুঝেছিলাম যে আমাদের পদ বা আমরা কতখানি করতে পারছি সেটাই আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় বিষয় ছিল না কিন্তু আমরা যে বিশ্বস্ততা বজায় রাখতে পেরেছি সেটাই বড় বিষয়। আমরা আমাদের ঈশ্বর, যিহোবাকে সেবা করতে চাই আর তা মাত্র কয়েক বছরের জন্য নয় বরং, চিরকালের জন্য। আমাদের অভিজ্ঞতা ভবিষ্যতের জন্য আমাদের সুন্দরভাবে শিখিয়েছিল। আর এমনকি সবচেয়ে কঠিন সময়ের মধ্যেও যিহোবা আমাদের তাঁর প্রশংসা করার জন্য শক্তি যুগিয়ে এসেছেন।—ফিলিপীয় ৪:১৩.

[পাদটীকাগুলো]

a অ্যার্নস্ট ভাওয়ার এর জীবন কাহিনী ১৯৯১ সালের ১লা আগস্ট প্রহরীদুর্গ (ইংরেজি) এর ২৫ থেকে ২৯ পৃষ্ঠায় পাওয়া যাবে।

[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

ম্যাগ্দবার্গে এখানে আমি বন্দি ছিলাম

[সজন্যে]

Gedenkstätte Moritzplatz Magdeburg für die Opfer politischer Gewalt; Foto: Fredi Fröschki, Magdeburg

[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

১৯৫৭ সালে আমরা যখন বিয়ে করি

[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

আজকে এলসার সঙ্গে

    বাংলা প্রকাশনা (১৯৮৯-২০২৬)
    লগ আউট
    লগ ইন
    • বাংলা
    • শেয়ার
    • পছন্দসমূহ
    • Copyright © 2025 Watch Tower Bible and Tract Society of Pennsylvania
    • ব্যবহারের শর্ত
    • গোপনীয়তার নীতি
    • গোপনীয়তার সেটিং
    • JW.ORG
    • লগ ইন
    শেয়ার