আজকে অসমতার মহামারী
“আমাদের কাছে এই সত্য খুবই স্পষ্ট যে সব মানুষ সমান অধিকার নিয়ে জন্মেছে আর স্রষ্টা তাদের এই অধিকার দিয়েছেন, যেগুলোর কয়েকটা হল বেঁচে থাকার অধিকার, স্বাধীনতার অধিকার এবং সুখী জীবনের অধিকার।”—১৭৭৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বারা প্রণীত স্বাধীনতার ঘোষণা-পত্র।
“সব মানুষ স্বাধীনভাবে জন্মেছে আর সবার অধিকার সমান।”—১৭৮৯ সালে ফ্রান্সের জাতীয় অধিবেশনে গৃহীত নাগরিক ও মানবাধিকার ঘোষণা-পত্র।
“সব মানুষই স্বাধীনভাবে জন্মেছে এবং সবার মর্যাদা ও অধিকার সমান।”—১৯৪৮ সালে রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ অধিবেশনে গৃহীত মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণা।
এ ই ব্যাপারে কোন সন্দেহই নেই। সারা পৃথিবীর সব মানুষই সমান অধিকার চায়। কিন্তু, দুঃখজনক হলেও এটাই সত্যি যে সমানাধিকার নিয়ে বার বার এত বেশি তর্কবিতর্ক হয়েছে যে তা প্রমাণ করে এখনও পর্যন্ত মানুষ সমানাধিকার পায়নি।
কোন ব্যক্তিই কি জোরের সঙ্গে আর সত্যি করে বলতে পারবে যে একবিংশ শতাব্দীর দোরগোড়ায় এসে আমরা ভাল কিছুর মুখ দেখেছি? আমেরিকা ও ফ্রান্স অথবা রাষ্ট্রসংঘের ১৮৫টা সদস্য দেশগুলোর কোন একটা দেশের সব নাগরিকই কি সত্যি সত্যি সমান অধিকার পাচ্ছে, যা নিয়ে তারা জন্মেছে?
মানুষের মধ্যে সমানাধিকারের ধারণা হয়তো “স্পষ্ট” কিন্তু “বেঁচে থাকার অধিকার, স্বাধীনতার অধিকার ও সুখী জীবনের” অধিকার সব মানুষের কাছে সমানভাবে নেই। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আফ্রিকার একটা শিশু ভাল চিকিৎসা পায় না কারণ সেখানে ২,৫৬৯ জন লোকের জন্য মাত্র একজন ডাক্তার আছেন যেখানে ইউরোপে ২৮৯ জনের জন্য একজন ডাক্তার আছেন, তাহলে এটাকে আমরা বেঁচে থাকার কেমন সমান অধিকার বলব? কিংবা স্বাধীনতার অধিকার ও সুখী জীবনের অধিকারই বা কোথায় যখন আমরা দেখি যে ভারতের এক-তৃতীয়াংশ ছেলে এবং দুই-তৃতীয়াংশ মেয়েকে নিরক্ষর থাকতে হয় যেখানে কি না জাপান, জার্মানি ও গ্রেট ব্রিটেনের মতো দেশগুলোতে শতকরা ১০০ জন শিশুরই শিক্ষার নিশ্চয়তা আছে?
মধ্য আমেরিকার দেশগুলোতে লোকেদের মাথাপিছু আয় ১,৩৮০ মার্কিন ডলার আর ফ্রান্সের লোকেদের মাথাপিছু আয় ২৪,৯৯০ মার্কিন ডলার। তাহলে এই দুই দেশের লোকেরা কি একইরকম “মর্যাদা ও অধিকার” পাচ্ছেন? আফ্রিকার একটা নবজাত মেয়ের সম্ভাব্য আয়ু ৫৬ বছর আর উত্তর আমেরিকার নবজাত মেয়ের সম্ভাব্য আয়ু ৭৯ বছর, তাহলে এই দুই দেশের মেয়েরা কি বেঁচে থাকার সমান অধিকার পাচ্ছে?
অসমতার বিভিন্ন দিক রয়েছে আর এর সবগুলোই ভয়ানক। জীবনযাপনের মান, চিকিৎসা ও শিক্ষার সুযোগে অসমতা হল এগুলোর মধ্যে মাত্র কয়েকটা। কখনও কখনও রাজনৈতিক, জাতিগত অথবা ধর্মীয় পার্থক্য লোকেদের কাছ থেকে তাদের মর্যাদা ও স্বাধীনতা ছিনিয়ে নেয়। যদিও সমানাধিকার নিয়ে কথা বলা হয়, কিন্তু সমান অধিকার আজ জগতে একেবারেই নেই। এক মহামারীর মতো অসমতা সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়েছে যা “অত্যন্ত যন্ত্রণা ও দুর্দশা নিয়ে আসে।” আর এই কারণে লোকেদেরকে দরিদ্রতা, রোগব্যাধি, অজ্ঞানতা, বেকারত্ব ও ভেদাভেদের মতো দুঃখজনক পরিস্থিতিকে সহ্য করতে হয়।
“সব মানুষ সমান অধিকার নিয়ে জন্মেছে।” কত সুন্দর কথা! কিন্তু, কত দুঃখজনক যে বাস্তব এর একেবারেই উল্টো!
[৩ পৃষ্ঠার চিত্র সৌজন্যে]
UN PHOTO 152113/SHELLEY ROTNER