গ্রিক দর্শন—এটা কি খ্রীষ্টতত্ত্বকে সমৃদ্ধ করেছিল?
“খ্রীষ্টতত্ত্ব যদিও ন-খ্রীষ্টীয় গ্রিক ও রোমীয় সংস্কৃতিকে ঘৃণা করত কিন্তু আসলে তা গ্রিক ও রোমীয় দর্শন থেকে অনেক কিছু নিয়েছে।”—দি এনসাইক্লোপিডিয়া অ্যামেরিকানা।
যেসমস্ত ব্যক্তিরা “খ্রীষ্টীয়” চিন্তাধারার ওপর সবচেয়ে বেশি ছাপ ফেলেছিলেন তাদের মধ্যে “সাধু” আগস্টিন ছিলেন অন্যতম। দ্যা নিউ এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা বলে যে আগস্টিনের “মনই ছিল সেই জায়গা যেখানে নতুন নিয়মের ধর্ম ও প্লেটো শিক্ষিত গ্রিক দর্শন সবচেয়ে বেশি মিশ্রিত হয়েছিল; আর এই মিশ্রিত শিক্ষা তার মাধ্যমেই খ্রীষ্টীয়জগতের মধ্যযুগীয় রোমান ক্যাথলিক ও নবজাগরিত প্রোটেস্টান্ট ধর্মে ছড়িয়ে পড়েছিল।”
আগস্টিনের এই প্রভাব শেষ হয়ে যায়নি। গ্রিক দর্শন খ্রীষ্টীয়জগৎকে কতখানি প্রভাবিত করেছে সেই বিষয়ে বলতে গিয়ে, ডগলাস টি. হোলডেন বলেছিলেন: “খ্রীষ্টীয় তত্ত্ব গ্রিক দর্শনের সঙ্গে এতটাই মিশে গিয়েছিল যে এর ফলে তা এমন লোকেদের গড়ে তুলেছিল যাদের মনের ৯০ ভাগই ছিল গ্রিক আর মাত্র ১০ ভাগে ছিল খ্রীষ্টীয় চিন্তাধারা।”
কিছু পণ্ডিত ব্যক্তি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন যে এইরকম দার্শনিক প্রভাব খ্রীষ্টতত্ত্বের শুরু থেকেই এটাকে উন্নত করেছিল, এর শিক্ষাকে সমৃদ্ধ এবং আরও বিশ্বাসযোগ্য করে তুলেছিল। সত্যিই কি তাই? কীভাবে এবং কখন গ্রিক দর্শন খ্রীষ্টতত্ত্বের ওপর প্রভাব ফেলতে শুরু করেছিল? আসলেই কি এটা খ্রীষ্টতত্ত্বকে সমৃদ্ধ করেছিল নাকি এটাকে দূষিত করেছিল?
চারটে অদ্ভুত পরিভাষা পরীক্ষা করে সা.কা.পূ. তৃতীয় শতাব্দী থেকে সা.কা. পঞ্চম শতাব্দী পর্যন্ত যে মিশ্রণগুলো হয়েছিল সেই সম্বন্ধে জানা যায়: (১) “গ্রিক সংস্কৃতি অধ্যুষিত যিহূদী ধর্ম,” (২) “খ্রীষ্টধর্ম অধ্যুষিত গ্রিক সংস্কৃতি,” (৩)“গ্রিক সংস্কৃতি অধ্যুষিত খ্রীষ্টতত্ত্ব” ও (৪) “খ্রীষ্টীয় দর্শন।”
“গ্রিক সংস্কৃতি অধ্যুষিত যিহূদী ধর্ম”
প্রথমত, “গ্রিক সংস্কৃতি অধ্যুষিত যিহূদী ধর্ম” একেবারেই পরস্পরবিরোধী। ইব্রীয়দের আদি ধর্ম যা সত্য ঈশ্বর, যিহোবা শুরু করেছিলেন, সেটাকে মিথ্যা ধর্মীয় রীতিনীতি দিয়ে দূষিত করা নিষেধ ছিল। (দ্বিতীয় বিবরণ ১২:৩২; হিতোপদেশ ৩০:৫, ৬) কিন্তু শুরু থেকেই সত্য উপাসনার বিশুদ্ধতা এর চারিদিকের মিথ্যা ধর্মীয় অভ্যাস ও চিন্তাধারার দ্বারা দূষিত হওয়ার হুমকির সম্মুখীন হয়েছিল, যেমন মিশরীয়, কনানীয় ও বাবিলনীয় ধর্মের প্রভাব। দুঃখের সঙ্গে বলতে হয় যে ইস্রায়েলীয়রা সত্য উপাসনাকে পুরোপুরি দূষিত হতে দিয়েছিল।—বিচারকর্ত্তৃগণ ২:১১-১৩.
কয়েকশ বছর পর, সা.কা.পূ. চতুর্থ শতাব্দীতে যখন প্রাচীন প্যালেস্টাইন মহান আলেকজান্ডারের অধীনে গ্রিক সাম্রাজ্যের অংশ হয়, তখন এই দূষণ সবচেয়ে বেশি হয়েছিল আর তা এক স্থায়ী ও ক্ষয়িষ্ণু প্রভাব রেখে গিয়েছিল। আলেকজান্ডার যিহূদীদেরকে তার সেনাবাহিনীতে ঢোকান। যিহূদী এবং তাদের নতুন বিজয়ী সম্রাটের মধ্যে এই সম্পর্ক যিহূদী ধর্মীয় চিন্তাধারার ওপর গভীর ছাপ ফেলেছিল। আর এর ফলে গ্রিকদের চিন্তাধারা যিহূদীদের শিক্ষায় ঢুকে গিয়েছিল। হোমারের শিক্ষাকে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য বলা হয় যে সা.কা.পূ. ১৭৫ সালে মহাযাজক জেসন যিরূশালেমে একটা গ্রিক বিদ্যালয় স্থাপন করেছিলেন।
আগ্রহের বিষয় এই যে সা.কা.পূ দ্বিতীয় শতাব্দীর শেষের দিকে একজন শমরীয় বাইবেলের ইতিহাসকে এমনভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছিলেন যাতে মনে হয়েছিল যে গ্রিক সংস্কৃতি সেখান থেকে এসেছে। অপ্রামাণিক যিহুদী বইগুলো, যেমন জুডিথ ও টবিট আসলে পরোক্ষভাবে গ্রিকদের কামোত্তেজক প্রেম কাহিনীগুলোকে তুলে ধরে। তখন বেশ কিছু যিহূদী দার্শনিকদের আবির্ভাব হয়, যারা যিহূদী ধর্ম ও বাইবেলের সঙ্গে গ্রিক চিন্তাধারাকে মেশাতে চেষ্টা করেছিলেন।
এই ব্যাপারে ফাইলোর কৃতিত্বই সবচেয়ে বেশি, যিনি সা.কা. প্রথম শতাব্দীর একজন যিহূদী ছিলেন। তিনি প্লেটো (সা.কা.পূ. চতুর্থ শতাব্দী), পিথাগোরীয় ও স্টয়িকদের মতবাদ অবৈধভাবে নিয়েছিলেন। ফাইলোর মতবাদগুলোর দ্বারা যিহূদীরা গভীরভাবে প্রভাবিত হয়েছিল। যিহূদী সংস্কৃতিতে যেভাবে গ্রিক চিন্তাধারা ঢুকে গিয়েছিল সে সম্বন্ধে বলতে গিয়ে, যিহূদী লেখক ম্যাক্স ডিমন্ট বলেন: “প্লেটোর চিন্তাধারা, অ্যারিস্টটলের যুক্তি ও ইউক্লেডিয়ার বিজ্ঞান সম্বন্ধে প্রচুর জ্ঞান নিয়ে যিহূদী পণ্ডিতরা তোরাহ্কে নতুনভাবে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেন। . . . তারা যিহূদী লেখায় গ্রিক যুক্তি ঢোকাতে শুরু করেছিলেন।”
পরে, রোমীয়রা গ্রিক সাম্রাজ্য দখল করে নেয় ফলে যিরূশালেমও তাদের দখলে চলে আসে। এটা আরও তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তনের দ্বার খুলে দেয়। যে চিন্তাবিদেরা প্লেটোর ধারণাগুলো ছড়িয়ে দেওয়ার ও সংমিশ্রণ করার চেষ্টা করেছিলেন তাদের দার্শনিক ও ধর্মীয় মতবাদগুলো তৃতীয় শতাব্দীতে চূড়ান্ত রূপ ধারণ করে, যেটাকে আজকে যৌথভাবে নবপ্লেটোবাদ বলা হয়। এই মতবাদে বিশ্বাসী লোকেরাই ভ্রান্ত খ্রীষ্টতত্ত্বের ওপর গভীর ছাপ ফেলেছিলেন।
“খ্রীষ্টধর্ম অধ্যুষিত গ্রিক সংস্কৃতি”
সাধারণ কালের প্রথম পাঁচ শতাব্দীতে কিছু পণ্ডিত ব্যক্তি দেখানোর চেষ্টা করেছিলেন যে বাইবেলের সত্যের সঙ্গে গ্রিক দর্শনের এক সম্পর্ক আছে। খ্রীষ্টতত্ত্বের ইতিহাস (ইংরেজি) নামের বই বলে: “খ্রীষ্ট আসার কয়েক দশক আগে গ্রিকদের সম্বন্ধে খ্রীষ্টান দার্শনিকরা এইরকম মনে করতেন যে তারা প্রাণপণে কিন্তু অন্ধভাবে ঈশ্বরের বিষয়ে জ্ঞান পাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, যেন তারা এমনি এক যীশু বানাতে আর নিজেদের বুদ্ধি দিয়ে খ্রীষ্টতত্ত্ব রচনা করতে চেয়েছিলেন।”
এইরকম চিন্তাবিদদের মধ্যে প্লটিনাসই (সা.কা. ২০৫-২৭০) ছিলেন প্রথম যিনি মূলত প্লেটোর দর্শনের ওপর ভিত্তি করে কিছু মতবাদ গড়ে তুলেছিলেন। আত্মা দেহ থেকে আলাদা এই ধারণা তিনিই শুরু করেছিলেন। প্লটিনাসের সম্বন্ধে অধ্যাপক ই. ডব্লিউ. হপকিন্স বলেছিলেন: “তাঁর শিক্ষা খ্রীষ্টান নেতাদের ওপর খুব বেশি প্রভাব ফেলেছিল।”
“গ্রিক সংস্কৃতি অধ্যুষিত খ্রীষ্টতত্ত্ব” ও “খ্রীষ্টীয় দর্শন”
দ্বিতীয় শতাব্দী থেকে “খ্রীষ্টান” চিন্তাবিদরা যে কোন মূল্যের বিনিময়ে ন-খ্রীষ্টীয় শিক্ষিত লোকেদেরকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করতে থাকেন। “অযথারূপে বিদ্যা নামে আখ্যাত” এবং “ধর্ম্মবিরূপক নিঃসার শব্দাড়ম্বর ও বিরোধবাণী” সম্বন্ধে পৌলের স্পষ্ট সতর্কবাণী সত্ত্বেও, এই শিক্ষকরা চারিদিকের গ্রিক সংস্কৃতি থেকে দার্শনিক মতবাদগুলো তাদের শিক্ষার সঙ্গে মিশিয়েছিলেন। (১ তীমথিয় ৬:২০) ফাইলোর উদাহরণ যেন তাদের শিখিয়েছিল যে বাইবেলের সঙ্গে প্লেটোর ধারণা মেশানো সম্ভব।—২ পিতর ১:১৬ পদের সঙ্গে তুলনা করুন।
সবক্ষেত্রে বাইবেলের সত্যই ছিল মূল শিকার। “খ্রীষ্টান” শিক্ষকরা দেখানোর চেষ্টা করেছিলেন যে গ্রিক ও রোমীয় দর্শনের সঙ্গে খ্রীষ্টতত্ত্বের মিল রয়েছে। আলেকজান্দ্রিয়ার ক্লেমেন্ট ও অরিগেন (সা.কা. দ্বিতীয় ও তৃতীয় শতাব্দী) নবপ্লেটোবাদের ওপর ভিত্তি করে কিছু মতবাদ গড়ে তুলেছিলেন যা পরে “খ্রীষ্টীয় দর্শনবিদ্যা” নামে পরিচিত হয়েছিল। মিলানের বিশপ অ্যামব্রোস (সা.কা. ৩৩৯-৩৯৭) “আধুনিক গ্রিক, খ্রীষ্টীয় ও ন-খ্রীষ্টীয় শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছিলেন—বিশেষ করে ন-খ্রীষ্টীয় নবপ্লেটোবিদ প্লটিনাসের . . . সাহিত্যগুলো থেকে।” তিনি শিক্ষিত রোমীয়দের কাছে এমন এক খ্রীষ্টতত্ত্বকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছিলেন যাতে রোমীয় ও গ্রিক চিন্তাধারা মিশে ছিল। আগস্টিনও একই কাজ করেছিলেন।
একশ বছর পরে আরীয়পাগীয় দিয়োনোসিয়াস (ছদ্মবেশী দিয়োনোসিয়াসও বলা হতো), যিনি সম্ভবত একজন সিরীয় সন্ন্যাসী ছিলেন তিনি নবপ্লেটোবাদী দর্শন ও “খ্রীষ্টীয়” শিক্ষাকে এক করার চেষ্টা করেছিলেন। একটা বিশ্বকোষ বলে যে তার “লেখাগুলো মধ্যযুগীয় খ্রীষ্টান শিক্ষা ও ধর্মে নবপ্লেটোবাদী দর্শনের প্রভাবকে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার পথ করে দিয়েছিল . . . আর ধর্ম ও ভক্তির ক্ষেত্রে সেই দর্শনের অনেক বৈশিষ্ট্য আজ পর্যন্ত ঠিক সেইরকমই থেকে গিয়েছে।” এভাবে তিনি পৌলের সেই সতর্কবাণী থেকে কতই না দূরে সরে গিয়েছিলেন, ‘দর্শনবিদ্যা ও অনর্থক প্রতারণা যাহা মনুষ্যদের পরম্পরাগত শিক্ষার অনুরূপ’!—কলসীয় ২:৮.
অসৎ দূষণকারীরা
বলা হয় যে “খ্রীষ্টান প্লেটোবাদীরা ঈশ্বরের দ্বারা প্রকাশিত সত্যকে প্রাধান্য দিতেন আর শাস্ত্রের শিক্ষা বোঝার ও গির্জার ঐতিহ্য রক্ষা করার জন্য প্লেটোর দর্শনবিদ্যাকে সবচেয়ে ভাল মাধ্যম বলে মনে করতেন।”
প্লেটো বিশ্বাস করতেন যে এক অমর আত্মা রয়েছে। তাই “খ্রীষ্টীয়” তত্ত্বে যে সব সুপরিচিত মিথ্যা শিক্ষাগুলো চুপিসারে ঢুকে গিয়েছিল তার মধ্যে একটা ছিল আত্মার অমরত্ব। খ্রীষ্টতত্ত্বের প্রতি সাধারণ লোকেদের আকৃষ্ট করার জন্য এই শিক্ষাকে মেনে নেওয়া একেবারেই ঠিক ছিল না। কারণ প্রেরিত পৌল যখন গ্রিক সংস্কৃতির কেন্দ্রস্থল আথীনীতে প্রচার করেছিলেন, তখন তিনি আত্মা সম্বন্ধে প্লেটোর মতবাদ নিয়ে কথা বলেননি। বরং তিনি খ্রীষ্টীয় মতবাদ, পুনরুত্থানের বিষয়ে প্রচার করেছিলনে, যদিও অনেক গ্রিক শ্রোতারা তার কথা মেনে নিতে পারেননি।—প্রেরিত ১৭:২২-৩২.
গ্রিক দর্শনের একেবারে বিপরীতে বাইবেল মৃত্যুর পর মানুষের কী ঘটে সে বিষয়ে স্পষ্ট করে দেখায়, “জীবিত লোকেরা জানে যে, তাহারা মরিবে; কিন্তু মৃতেরা কিছুই জানে না, এবং তাহাদের আর কোন ফলও হয় না, কারণ লোকে তাহাদের বিষয় ভুলিয়া গিয়াছে।” (উপদেশক ৯:৫) বাইবেল শেখায় না যে মানুষের মধ্যে অমর কিছু আছে যা দেহের মৃত্যুর পরও বেঁচে থাকে। বাইবেলের সহজ শিক্ষা হল মৃত্যুতে মানুষের সব কিছু শেষ হয়ে যায়।
আরেকটা মিথ্যা শিক্ষা ছিল যে মানুষ হওয়ার আগে যীশু তাঁর পিতার সমান ছিলেন। প্রথম তিন শতাব্দীর গির্জা (ইংরেজি) নামের বই বলে: “ত্রিত্ব মতবাদের . . . মূল উৎসের সঙ্গে যিহূদী ও খ্রীষ্টীয় শাস্ত্রের কোন সম্পর্কই ছিল না।” তাহলে কোথা থেকে এটা এসেছিল? এই মতবাদটা “প্লেটোর দর্শনে বিশ্বাসী পাদ্রিরা তৈরি করেছিলেন ও খ্রীষ্টতত্ত্বে ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন।”
যতই সময় যেতে থাকে গির্জার পাদ্রিদের ওপর নবপ্লেটোবাদের প্রভাব আরও বাড়তে থাকে আর ত্রিত্ববাদীরা তাদের শিক্ষাকে ছড়িয়ে দেওয়ার ভিত্তি খুঁজে পান। তৃতীয় শতাব্দীর নবপ্লেটোনিক দর্শনবিদ্যা একটা অসম্ভব ব্যাপারকে সম্ভব করে তোলে, যা হল তিন ঈশ্বরকে এক ঈশ্বরে পরিণত করা। দার্শনিক যুক্তির ওপর ভিত্তি করে তারা বলেন যে তিন ব্যক্তি মিলে এক ঈশ্বর কিন্তু আবার তারা প্রত্যেকেই আলাদা!
কিন্তু বাইবেল স্পষ্টভাবে দেখায় যে একমাত্র যিহোবাই হলেন সর্বশক্তিমান ঈশ্বর, যীশু খ্রীষ্ট তাঁর সৃষ্ট পুত্র ও তাঁর চেয়ে কম শক্তিশালী আর পবিত্র আত্মা হল তাঁর কার্যকারী শক্তি। (দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৪; যিশাইয় ৪৫:৫; প্রেরিত ২:৪; কলসীয় ১:১৫; প্রকাশিত বাক্য ৩:১৪) ত্রিত্বের মতবাদ একমাত্র সত্যময় ঈশ্বরের মর্যাদাকে খর্ব করে ও লোকেদের বিভ্রান্ত করে, যার ফলে তারা একজন রহস্যময় ঈশ্বরের কাছ থেকে সরে যায়।
বাইবেলে দেওয়া হাজার বছর রাজত্বের আশা সম্বন্ধে খ্রীষ্টীয় চিন্তাধারার ওপর নবপ্লেটেবাদের আরও একটা খারাপ প্রভাব পড়েছিল। (প্রকাশিত বাক্য ২০:৪-৬) হাজার বছর রাজত্বে বিশ্বাসীদের যারা নিন্দা করেছিলেন তাদের মধ্যে অরিগেন ছিলেন অন্যতম। কেন তিনি খ্রীষ্টের হাজার বছরের রাজত্ব সম্পর্কিত বাইবেলের এই সুপ্রতিষ্ঠিত মতবাদের ঘোর বিরোধী ছিলেন? দ্যা ক্যাথলিক এনসাইক্লোপিডিয়া উত্তর দেয়: “নবপ্লেটোবাদের ওপর ভিত্তি করে তার মতবাদগুলো গড়ে ওঠায় . . . , [অরিগেন] হাজার বছর রাজত্বে বিশ্বাসীদের পক্ষ নিতে পারেননি।”
সত্য
ওপরের শিক্ষাগুলোর কোনটারই সত্যের সঙ্গে সম্পর্ক নেই। এই সত্য হল বাইবেলে পাওয়া খ্রীষ্টীয় শিক্ষা। (২ করিন্থীয় ৪:২; তীত ১:১, ১৪; ২ যোহন ১-৪) বাইবেলই হল সত্যের এক এবং অদ্বিতীয় উৎস।—যোহন ১৭:১৭; ২ তীমথিয় ৩:১৬.
কিন্তু যিহোবার, সত্যের, মানবজাতি ও অনন্ত জীবনের শত্রু শয়তান দিয়াবল যাকে “নরঘাতক” এবং “মিথ্যাবাদী ও তাহার পিতা” বলা হয়, সে সত্যকে বিকৃত করার জন্য বিভিন্ন চতুর উপায় ব্যবহার করেছে। (যোহন ৮:৪৪. ২ করিন্থীয় ১১:৩ পদের সঙ্গে তুলনা করুন।) সে যে সমস্ত শক্তিশালী মাধ্যমগুলো ব্যবহার করেছে, তার মধ্যে ন-খ্রীষ্টীয় গ্রিক দার্শনিকদের শিক্ষা রয়েছে যেগুলো আসলে তারই চিন্তাধারার প্রতিফলন আর এর পিছনে তার উদ্দেশ্য ছিল খ্রীষ্টীয় শিক্ষার বিষয়বস্তু ও বৈশিষ্ট্যকে বদলে দেওয়া।
গ্রিক দর্শনের সঙ্গে খ্রীষ্টীয় শিক্ষার এই অস্বাভাবিক সংমিশ্রণ হল বাইবেলের সত্যকে হালকা করে দেওয়া আর নম্র, আন্তরিক, শিখতে চান ও সত্য খোঁজেন এমন ব্যক্তিদের কাছে এর ক্ষমতা ও অন্তর স্পর্শ করার শক্তিকে কমিয়ে দেওয়ার এক প্রচেষ্টা। (১ করিন্থীয় ৩:১, ২, ১৯, ২০) এছাড়াও এটা বাইবেলের স্বচ্ছ মতবাদগুলোর বিশুদ্ধতাকে কলুষিত করে, সত্য ও মিথ্যার মধ্যে যে পার্থক্য আছে সেটাকে অস্পষ্ট করে দেয়।
আজকে, মণ্ডলীর মস্তক যীশু খ্রীষ্টের নির্দেশনায় সত্য খ্রীষ্টীয় শিক্ষা পুনরায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়াও, যারা আন্তরিকভাবে সত্য খোঁজেন তারা খুব সহজেই সত্য খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীকে এর ফল দ্বারা চিনতে পারেন। (মথি ৭:১৬-২০) যিহোবার সাক্ষিরা এইরকম লোকেদেরকে সত্যের বিশুদ্ধ জল খুঁজে পাওয়ার এবং আমাদের পিতা যিহোবার দেওয়া অনন্ত জীবনের অধিকার দৃঢ়ভাবে ধরে রাখতে সাহায্য করার জন্য খুবই আগ্রহী।—যোহন ৪:১৪; ১ তীমথিয় ৬:১৯.
[১১ পৃষ্ঠার চিত্র]
আগস্টিন
[১০ পৃষ্ঠার চিত্র সৌজন্য]
গ্রিক পাঠ্যাংশ: প্রাচীন গ্রিক লেখকেরা নামক বই থেকে: Plato’s Phaedo, 1957, Ioannis N. Zacharopoulos, Athens; প্লেটো: Musei Capitolini, Roma