ওয়াচটাওয়ার অনলাইন লাইব্রেরি
ওয়াচটাওয়ার
অনলাইন লাইব্রেরি
বাংলা
  • বাইবেল
  • প্রকাশনাদি
  • সভা
  • w৯৯ ৮/১৫ পৃষ্ঠা ১৪-১৯
  • ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞায় বিশ্বাস রেখে চলা

এই বাছাইয়ের সঙ্গে কোনো ভিডিও প্রাপ্তিসাধ্য নেই।

দুঃখিত, ভিডিওটা চালানো সম্বভব হচ্ছে না।

  • ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞায় বিশ্বাস রেখে চলা
  • ১৯৯৯ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • উপশিরোনাম
  • অনুরূপ বিষয়বস্ত‌ু
  • যিহোবা মানুষের সমস্ত ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করেন না
  • ঈশ্বর তাঁর উদ্দেশ্য পূরণ করার জন্য কাজ করেন
  • ঈশ্বর ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে জানেন
  • এক বিরাট নির্মাণ কাজ
  • যিহোবা কাজ সম্পূর্ণ করতে সাহায্য করেন
  • কখনও হাল ছেড়ে দেবেন না!
  • তিনি “ঈশ্বরের সহিত গমনাগমন করিতেন”
    তাদের বিশ্বাস অনুকরণ করুন
  • তিনি ‘আর সাত জনের সহিত রক্ষা’ পেয়েছিলেন
    ২০১৩ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • নোহের বিশ্বাস জগৎকে দোষী করে
    ২০০১ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • অপনি কি আপনার বিশ্বাস দ্বারা জগতকে দোষী সাব্যস্ত করেন?
    ১৯৯১ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
আরও দেখুন
১৯৯৯ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
w৯৯ ৮/১৫ পৃষ্ঠা ১৪-১৯

ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞায় বিশ্বাস রেখে চলা

“আমিই ঈশ্বর, আর কেহ নয়; আমি ঈশ্বর, আমার তুল্য কেহ নাই। আমি শেষের বিষয় আদি অবধি জ্ঞাত করি, যাহা সাধিত হয় নাই, তাহা পূর্ব্বে জানাই।”—যিশাইয় ৪৬:৯, ১০.

১, ২. ঈশ্বর পৃথিবীর কাজে জড়িত কি না সেই বিষয়ে কোন্‌ ভিন্ন ভিন্ন মত রয়েছে?

পৃথিবীতে যেসব কাজকর্ম ঘটে চলেছে সেগুলোর সঙ্গে ঈশ্বর কতখানি জড়িত? এই সম্বন্ধে লোকেদের আলাদা আলাদা মত রয়েছে। কেউ কেউ বলেন তিনি আদৌ জড়িত নন। অর্থাৎ, তিনি আমাদেরকে সৃষ্টি করে জীবনচক্রের সূচনা করে দিয়েছেন কিন্তু এখন তিনি আমাদের ব্যাপারে হয় আগ্রহী নন নতুবা আমাদের জন্য কিছু করার ক্ষমতা তাঁর নেই। যদি তাই হয়, তাহলে ঈশ্বর হলেন এমন একজন বাবার মতো যিনি তার ছেলেকে একটা নতুন সাইকেলে চড়িয়ে তাকে সামনের দিকে একটুখানি ঠেলে দেন। এরপর বাবা চলে যান আর ছেলে নিজে নিজে চলতে থাকে; সে হয়তো পড়ে যেতে পারে আবার নাও পড়তে পারে। যে কোন অবস্থাতেই ব্যাপারটা যেন এখন আর বাবার হাতে নেই।

২ আবার অন্যেরা ভাবেন, আমাদের জীবনে যা কিছুই ঘটুক না কেন, তা ঈশ্বরের ইচ্ছা অনুযায়ীই ঘটে আর এটাও বলা হয় যে তাঁর ইচ্ছা ছাড়া গাছের একটা পাতাও নড়ে না। যদি তাই হয়ে থাকে, তবে কেউ কেউ এটাও বলবেন যে ঈশ্বর শুধু আমাদের মঙ্গলই করেন না কিন্তু মানুষের অপরাধ ও তাদের ওপর আসা দুঃখজনক ঘটনাগুলোর জন্য তিনিই দায়ী, যা মানুষকে কষ্ট দেয়। ঈশ্বর লোকেদের সঙ্গে কেমন ব্যবহার করে এসেছেন তা জানা আমাদেরকে বুঝতে সাহায্য করবে যে আমরা তাঁর কাছ থেকে কী আশা করতে পারি। এছাড়াও এটা আমাদের সেই বিশ্বাসকে আরও শক্তিশালী করবে যে তাঁর প্রতিজ্ঞাগুলো পরিপূর্ণ হবেই।—ইব্রীয় ১১:১.

৩. (ক) আমরা কীভাবে জানি যে যিহোবা হলেন একজন উদ্দেশ্যময় ঈশ্বর? (খ) কেন বলা হয় যে যিহোবা তাঁর উদ্দেশ্য ‘স্থির করেন’ ও আকার দেন?

৩ মানুষের ব্যাপারে ঈশ্বর জড়িত কিনা সেই প্রশ্নের উত্তর এই সত্য থেকে পাওয়া যায় যে যিহোবা হলেন একজন উদ্দেশ্যময় ঈশ্বর। তাঁর নাম থেকেই এটা বোঝা যায়। “যিহোবা” শব্দের অর্থ “তিনি অস্তিত্বে আনেন।” তাঁর সমস্ত প্রতিজ্ঞা পরিপূর্ণ করার জন্য যিহোবা একের পর এক কাজ করে চলেন। তাই, যিহোবার বিষয়ে বলা হয় যে তিনি ভবিষ্যতের ঘটনা অথবা কাজগুলো সম্বন্ধে তাঁর উদ্দেশ্য ‘স্থির করেন’ অথবা আকার দেন। (২ রাজাবলি ১৯:২৫; যিশাইয় ৪৬:১১) এই আখ্যাগুলো ইব্রীয় শব্দ ইয়াস্টার থেকে এসেছে যার অর্থ ‘কুম্ভকার।’ (যিরমিয় ১৮:৪) একজন দক্ষ কুম্ভকার যেমন মাটি দিয়ে একটা সুন্দর পাত্র বানাতে পারেন, তেমনই যিহোবা তাঁর উদ্দেশ্য পূরণ করার জন্য ঘটনাগুলোকে আকার দিতে পারেন অথবা পরিবর্তিত করতে পারেন।—ইফিষীয় ১:১১.

৪. কীভাবে ঈশ্বর পৃথিবীকে মানুষদের থাকার মতো করে সাজিয়েছিলেন?

৪ উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ঈশ্বরের উদ্দেশ্য ছিল যে পৃথিবী হবে খুব সুন্দর এক জায়গা, যেখানে সিদ্ধ ও বাধ্য মানুষেরা থাকবে। (যিশাইয় ৪৫:১৮) প্রথম পুরুষ ও নারীকে সৃষ্টি করার অনেক আগেই তাদের জন্য যিহোবা পৃথিবীকে সুন্দর করে সাজিয়েছিলেন। আদিপুস্তকের প্রথম দিকের অধ্যায়গুলো বর্ণনা করে যে কীভাবে যিহোবা দিন ও রাত এবং জল ও স্থল সৃষ্টি করেছিলেন। এরপর তিনি গাছপালা ও প্রাণিকূলকে সৃষ্টি করেছিলেন। পৃথিবীকে মানুষের থাকার উপযোগী করে তুলতে হাজার হাজার বছর লেগেছিল। পরে সেই কাজ শেষ হলে মানুষের জন্য তা এক সুন্দর ঘর হয়ে উঠেছিল। প্রথম পুরুষ ও নারীর জীবন এদনে অর্থাৎ এক অপূর্ব পরমদেশে শুরু হয়েছিল, যেখানে তাদের জীবনকে উপভোগ করার মতো সবকিছুই ছিল। (আদিপুস্তক ১:৩১) অতএব, সেই সময় যিহোবা পৃথিবীর বিষয়ের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন, তাঁর মহৎ উদ্দেশ্যকে পরিপূর্ণ করার জন্য তিনি সেই মতোই কাজ করে চলেছিলেন। কিন্তু মানব পরিবার বড় হওয়ার পর কি তাতে কোন পরিবর্তন হয়েছিল?

যিহোবা মানুষের সমস্ত ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করেন না

৫, ৬. কেন ঈশ্বর মানুষের সমস্ত ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করেন না?

৫ সমস্ত কিছু নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা যদিও যিহোবার আছে, তবুও তিনি মানুষের সব কাজে হস্তক্ষেপ করেন না বা সেগুলো ঘটানও না। এই না করার পিছনে কারণও আছে। একটা কারণ হল মানুষকে ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিতে সৃষ্টি করা হয়েছিল, তাকে স্বাধীন ইচ্ছা দেওয়া হয়েছিল, ভাল মন্দ বেছে নেওয়ার ক্ষমতা তাদের ছিল। তাঁর আদেশ মেনে চলার জন্য যিহোবা আমাদেরকে জোর করেন না বা আমরা তাঁর হাতের পুতুলও নই। (দ্বিতীয় বিবরণ ৩০:১৯, ২০; যিহোশূয়ের পুস্তক ২৪:১৫) যদিও ঈশ্বর আমাদের কাজের নিকাশ নেন, তবুও তিনি প্রেম দেখিয়ে আমাদেরকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য যথেষ্ট স্বাধীনতা দিয়েছেন যে কীভাবে আমরা আমাদের জীবনকে পরিচালিত করব।—রোমীয় ১৪:১২; ইব্রীয় ৪:১৩.

৬ ঈশ্বর কেন আমাদের সবকিছুতে হাত দেন না তার আরেকটা কারণ এদনে শয়তান যে বিচার্য বিষয় তুলেছিল তার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। শয়তান ঈশ্বরের সার্বভৌমত্বের অধিকার সম্বন্ধে প্রশ্ন তুলেছিল। সে হবাকে এমন এক প্রস্তাব দিয়েছিল যেটাকে স্বাধীনতা পাওয়ার একটা সুযোগ বলে মনে হয়েছিল—যে প্রস্তাবকে প্রথমে হবা ও পরে তার স্বামী মেনে নিয়েছিল। (আদিপুস্তক ৩:১-৬) তাই, শয়তান যে প্রশ্ন তুলেছিল সেটা ঠিক ছিল কি না তা প্রমাণ করার জন্য ঈশ্বর মানুষকে তাদের নিজেদেরকে শাসন করার জন্য সময় দিয়েছেন। সুতরাং, আজকে মানুষ যে ভুল কাজগুলো করে তার জন্য ঈশ্বরকে দোষ দেওয়া যায় না। মোশি বিদ্রোহী লোকেদের সম্বন্ধে লিখেছিলেন: “ইহারা তাঁহার সম্বন্ধে ভ্রষ্টাচারী, [ঈশ্বরের] সন্তান নয়, এই ইহাদের কলঙ্ক।”—দ্বিতীয় বিবরণ ৩২:৫.

৭. পৃথিবী ও মানবজাতির জন্য যিহোবার উদ্দেশ্য কী?

৭ মানুষকে তাদের নিজেদের শাসন করার জন্য স্বাধীন ইচ্ছা ও পরীক্ষা করে দেখার সুযোগ দিয়ে যিহোবা পৃথিবীর সবকিছু থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেননি, যদি নিতেন তাহলে আমাদের সামান্যই আশা থাকত যে তিনি তাঁর প্রতিজ্ঞাগুলোকে পূর্ণ করবেন। আদম ও হবা যদিও ঈশ্বরের বিরুদ্ধে ও তাঁর সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল, তবুও যিহোবা পৃথিবী ও মানবজাতির জন্য তাঁর প্রেমপূর্ণ উদ্দেশ্যকে বদলাননি। তিনি পৃথিবীকে এক পরমদেশে পরিণত করবেনই করবেন, যেখানে সিদ্ধ, বাধ্য এবং সুখী লোকেরা থাকবে। (লূক ২৩:৪২, ৪৩) আদিপুস্তক থেকে শুরু করে প্রকাশিত বাক্য পর্যন্ত সবগুলো বই বর্ণনা করে যে কীভাবে যিহোবা তাঁর সেই উদ্দেশ্য পূরণ করার জন্য একের পর এক কাজ করে চলেছেন।

ঈশ্বর তাঁর উদ্দেশ্য পূরণ করার জন্য কাজ করেন

৮. ইস্রায়েলীয়দের প্রতিজ্ঞাত দেশে নিয়ে আসার জন্য কী কী করার ছিল?

৮ ইস্রায়েল জাতির সঙ্গে ঈশ্বর যেমন ব্যবহার করেছিলেন তা থেকে তিনি দেখিয়েছিলেন যে তিনি তাঁর উদ্দেশ্য পূরণ করবেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যিহোবা মোশিকে আশ্বাস দিয়েছিলেন যে তিনি ইস্রায়েলীয়দের মিশর থেকে মুক্ত করে দুগ্ধমধুপ্রবাহী প্রতিজ্ঞাত দেশে নিয়ে আসবেন। (যাত্রাপুস্তক ৩:৮) এটা ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও আশ্বাসজনক প্রতিজ্ঞা। আর এর জন্য বিদেশী লোকদের নিয়ে প্রায় ত্রিশ লাখ ইস্রায়েলীয়দেরকে এক শক্তিশালী জাতির মধ্যে থেকে বের করে আনতে হয়েছিল, যারা তাদের চলে আসার সময় প্রচণ্ড বিরোধিতা করেছিল। (যাত্রাপুস্তক ৩:১৯) যে দেশে তাদেরকে নিয়ে আসা হয়েছিল সেখানেও বেশ শক্তিশালী কয়েকটা জাতি ছিল, যারাও তাদের আসায় প্রচণ্ড বাধা দিয়েছিল। (দ্বিতীয় বিবরণ ৭:১) এর মাঝে ছিল আবার প্রান্তর, যেখানে ইস্রায়েলীয়দের খাবার ও জলের দরকার হয়েছিল। এটাই ছিল উপযুক্ত সময় যখন যিহোবা তাঁর সর্বোচ্চ ক্ষমতা দেখানোর ও প্রমাণ করার সুযোগ পেয়েছিলেন যে তিনিই একমাত্র সত্য ঈশ্বর।—লেবীয় পুস্তক ২৫:৩৮.

৯, ১০. (ক) যিহোশূয় কেন সাক্ষ্য দিতে পেরেছিলেন যে ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাগুলোতে নির্ভর করা যায়? (খ) ঈশ্বর তাঁর বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের পুরস্কার দিতে পারেন এই বিষয়ে আমাদের আস্থা থাকা কতটা জরুরি?

৯ ঈশ্বর কয়েকটা বড় বড় কাজ করে ইস্রায়েলীয়দেরকে মিশর দেশ থেকে বের করে এনেছিলেন। প্রথমে, তিনি মিশরীয়দের ওপর দশটা ধ্বংসাত্মক আঘাত এনেছিলেন। পরে, তিনি লোহিত সাগরকে ভাগ করেছিলেন যাতে যে মিশরীয়রা ইস্রায়েলীয়দের পিছু নিয়েছিল তাদের হাত থেকে ইস্রায়েলীয়রা রক্ষা পায় ও মিশরীয়রা সমুদ্রে ডুবে মারা যায়। (গীতসংহিতা ৭৮:১২, ১৩, ৪৩-৫১) এরপর, তিনি ৪০ বছর ইস্রায়েলীয়দের যত্ন নিয়েছিলেন, তাদের মান্না ও জল দিয়েছিলেন এবং এমনকি লক্ষ্য রেখেছিলেন যে তাদের কাপড় যেন জীর্ণ না হয় ও তাদের পা যেন ফুলে না যায়। (দ্বিতীয় বিবরণ ৮:৩, ৪) ইস্রায়েলীয়রা প্রতিজ্ঞাত দেশে ঢোকার মুখে যিহোবা তাদের শত্রুদের বিরুদ্ধে তাদেরকে জয়ী করেছিলেন। যিহোবার প্রতিজ্ঞাগুলোতে যিনি অটল বিশ্বাস দেখিয়েছিলেন সেই যিহোশূয় এইসমস্ত বিষয় নিজের চোখে দেখেছিলেন। এইজন্যই তিনি বিশ্বাসের সঙ্গে তার সময়ের প্রাচীন লোকেদেরকে বলতে পেরেছিলেন: “তোমরা সমস্ত অন্তঃকরণে ও সমস্ত প্রাণে ইহা জ্ঞাত হও যে, তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাদের বিষয়ে যত মঙ্গলবাক্য বলিয়াছিলেন, তাহার মধ্যে একটীও বিফল হয় নাই; তোমাদের পক্ষে সকলই সফল হইয়াছে, তাহার একটীও বিফল হয় নাই।”—যিহোশূয়ের পুস্তক ২৩:১৪.

১০ প্রাচীনকালের যিহোশূয়ের মতো, আজকে খ্রীষ্টানেরাও পুরোপুরি বিশ্বাস করেন যে যারা ঈশ্বরকে সেবা করেন, তাদের জন্য তিনি কাজ করতে চান। আমাদের বিশ্বাসে এই দৃঢ়প্রত্যয় থাকা খুবই দরকার। প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “বিনা বিশ্বাসে প্রীতির পাত্র হওয়া কাহারও সাধ্য নয়; কারণ যে ব্যক্তি ঈশ্বরের নিকটে উপস্থিত হয়, তাহার ইহা বিশ্বাস করা আবশ্যক যে . . . যাহারা তাঁহার অন্বেষণ করে, তিনি তাহাদের পুরস্কারদাতা।”—ইব্রীয় ১১:৬.

ঈশ্বর ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে জানেন

১১. কোন্‌ কারণগুলোর জন্য ঈশ্বর তাঁর প্রতিজ্ঞাগুলো পূর্ণ করতে পারেন?

১১ অতএব, আমরা দেখেছি যে ঈশ্বর যদিও মানুষকে স্বাধীন ইচ্ছা ব্যবহার করার ও তাদের নিজেদেরকে শাসন করার সুযোগ দিয়েছেন, তবুও তাঁর উদ্দেশ্য পূর্ণ করার ইচ্ছা ও ক্ষমতা দুটোই তাঁর আছে। কিন্তু আরেকটা বিষয় আছে যা ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাগুলো পরিপূর্ণ করতে বিরাট ভূমিকা পালন করে। যিহোবা ভবিষ্যতের বিষয় জানতে পারেন। (যিশাইয় ৪২:৯) ঈশ্বর তাঁর ভাববাদীর মাধ্যমে বলেছিলেন: “সেকালের পুরাতন কার্য্য সকল স্মরণ কর; কারণ আমিই ঈশ্বর, আর কেহ নয়; আমি ঈশ্বর, আমার তুল্য কেহ নাই। আমি শেষের বিষয় আদি অবধি জ্ঞাত করি, যাহা সাধিত হয় নাই, তাহা পূর্ব্বে জানাই, আর বলি, আমার মন্ত্রণা স্থির থাকিবে, আমি আপনার সমস্ত মনোরথ সিদ্ধ করিব।” (যিশাইয় ৪৬:৯, ১০) একজন অভিজ্ঞ কৃষক যদিও জানে যে কখন ও কোথায় বীজ বুনতে হবে কিন্তু তারপরও কেমন ফল হবে সেই বিষয়ে তার কিছুটা অনিশ্চয়তা থেকে যায়। কিন্তু, “যুগপর্য্যায়ের রাজা”-র ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে জানার জন্য সঠিক জ্ঞান রয়েছে তাই তিনি আগেই ঠিক ঠিক বুঝতে পারেন যে তাঁর উদ্দেশ্য পূর্ণ করতে হলে কখন ও কোথায় তাঁকে কাজ করতে হবে।—১ তীমথিয় ১:১৭.

১২. নোহের দিনে কীভাবে যিহোবা দূরদর্শিতা দেখিয়েছিলেন?

১২ ভেবে দেখুন যে নোহের দিনে ঈশ্বর কীভাবে দূরদর্শিতা দেখিয়েছিলেন। সারা পৃথিবী দুষ্টতায় ভরে গিয়েছিল, তাই ঈশ্বর অবাধ্য মানুষদের ধ্বংস করবেন বলে ঠিক করেছিলেন। তিনি একটা দিন ঠিক করেছিলেন যা ১২০ বছর পরে আসার ছিল। (আদিপুস্তক ৬:৩) তা স্থির করার সময় যিহোবার মাথায় শুধু দুষ্টদের ধ্বংস করার বিষয়টাই ছিল না কারণ তিনি যে কোন সময়েই দুষ্টদের ধ্বংস করতে পারতেন। যিহোবা তাঁর সময় তালিকায় ধার্মিকদের রক্ষা করার ব্যবস্থাও করেছিলেন। (আদিপুস্তক ৫:২৯ পদের সঙ্গে তুলনা করুন।) ঈশ্বরের প্রজ্ঞা আছে তাই তিনি আগেই জানতেন যে কখন কাজ শুরু করলে তা সময় মতো শেষ হবে। তিনি নোহকে যথেষ্ট ও বিস্তারিত তথ্য দিয়েছিলেন। নোহকে তার “পরিবারের ত্রাণার্থে” একটা জাহাজ বানাতে হয়েছিল এবং সারা পৃথিবী জুড়ে এক জলপ্লাবনের দ্বারা দুষ্টদের ধ্বংস করা হয়েছিল।—ইব্রীয় ১১:৭; আদিপুস্তক ৬:১৩, ১৪, ১৮, ১৯.

এক বিরাট নির্মাণ কাজ

১৩, ১৪. জাহাজ বানানো কেন একটা কঠিন কাজ ছিল?

১৩ একবার ভেবে দেখুন যে এই কাজ পেয়ে নোহের কেমন লেগেছিল। নোহ ধার্মিক ছিলেন আর তাই তিনি এটাও জানতেন যে যিহোবা দুষ্টদের ধ্বংস করতে পারতেন। কিন্তু এর আগে কিছু কাজ করা বাকি ছিল আর সেই কাজ করার জন্য বিশ্বাসের দরকার ছিল। জাহাজ বানানো একটা বিরাট কাজ ছিল। ঈশ্বরই এর দৈর্ঘ, প্রস্থ, উচ্চতা বলে দিয়েছিলেন। ওই জাহাজ আজকের দিনের কিছু খেলার মাঠের চেয়েও বড় ছিল আর এর উচ্চতা ছিল পাঁচ তলা বিল্ডিংয়ের সমান। (আদিপুস্তক ৬:১৫) নোহ ও তার পরিবারের এই ব্যাপারে কোন অভিজ্ঞতা ছিল না আর তারা মাত্র কয়েকজনই ছিলেন। তখন আজকের দিনের মতো ভাল যন্ত্রপাতি ও সাজ-সরঞ্জামও পাওয়া যেত না। আর নোহের যেহেতু যিহোবার মতো ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে জানার ক্ষমতা ছিল না, তাই তার কোনভাবেই জানার উপায় ছিল না যে সামনে তাকে কোন্‌ কোন্‌ পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হতে পারে। তিনি এই কাজ পুরো করতে পারবেন নাকি তাতে বাধা আসবে। নোহের মনে হয়তো অনেক প্রশ্ন এসেছিল। সাজ-সরঞ্জামগুলো কোথায় পাওয়া যাবে? কীভাবে তিনি পশুপাখিদের জড়ো করবেন? কী কী খাবার লাগবে আর কতটুকুই বা লাগবে? ঠিক কখন জলপ্লাবান শুরু হবে?

১৪ তার ওপর আবার সামাজিক অবস্থাও ছিল। চারদিকে শুধুই দুষ্ট লোক। মনুষ্য কন্যা ও দূতেদের মিলনের ফলে বলবান বীরেরা জন্মেছিল আর তারা পুরো পৃথিবীকে দৌরাত্ম্যে ভরে দিয়েছিল। (আদিপুস্তক ৬:১-৪, ১৩) এছাড়াও, জাহাজটা গোপনে তৈরি করা হয়নি। নোহকে জাহাজ বানাতে দেখে লোকেরা হয়তো অবাক হয়েছিল আর নোহকে জিজ্ঞাসা করায় তিনি হয়তো তাদেরকে এই সম্বন্ধে বলেছিলেন। (২ পিতর ২:৫) কিন্তু তারা কি নোহের কথা বিশ্বাস করেছিল? একেবারেই না! কয়েক বছর আগে বিশ্বস্ত হনোক দুষ্টদের ধ্বংসের ব্যাপারে ঘোষণা করেছিলেন। তার বার্তা লোকেদের কাছে এতটাই খারাপ ছিল যে ঈশ্বর তাকে “গ্রহণ করিলেন” অথবা তিনি তার জীবনকে সংক্ষিপ্ত করেছিলেন যাতে তার শত্রুরা তাকে মারতে না পারে। (আদিপুস্তক ৫:২৪; ইব্রীয় ১১:৫; যিহূদা ১৪, ১৫) কিন্তু নোহকে শুধু ওই অপ্রিয় খবরই জানাতে হয়নি, সেইসঙ্গে জাহাজও বানাতে হয়েছিল। আর এই জাহাজ বানানোই পরিষ্কার মনে করিয়ে দেয় যে নোহ তার সময়ের দুষ্ট লোকেদের মধ্যে কতটা বিশ্বস্ত ছিলেন!

১৫. কেন নোহের বিশ্বাস ছিল যে তিনি তার কাজ শেষ করতে পারবেন?

১৫ নোহ জানতেন যে এই কাজে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের সাহায্য ও আশীর্বাদ আছে। যিহোবাই কি তাকে সেই কাজ করতে বলেননি? যিহোবা নোহকে আশ্বাস দিয়েছিলেন যে জাহাজ তৈরি হবে এবং নোহ ও তার পরিবার সেই জাহাজে ঢুকবে আর পৃথিবীব্যাপী জলপ্লাবন থেকে তারা রক্ষা পাবে। এটা যে অবশ্যই হবে তা নিশ্চিত করার জন্য ঈশ্বর এমনকি একটা গুরুগম্ভীর চুক্তিও করেছিলেন। (আদিপুস্তক ৬:১৮, ১৯) সম্ভবত, নোহ বুঝতে পেরেছিলেন যে কাজ দেওয়ার আগে যিহোবা জানতেন এর জন্য কী কী করতে হবে আর কত সময় লাগবে। এছাড়াও, নোহ জানতেন যে প্রয়োজনে সাহায্য করার ক্ষমতাও যিহোবার আছে। তাই নোহের বিশ্বাসই তাকে কাজ করতে প্রেরণা দিয়েছিল। তার বংশধর অব্রাহামের মতো নোহ “নিশ্চয় জানিলেন, ঈশ্বর যাহা প্রতিজ্ঞা করিয়াছেন, তাহা সফল করিতে সমর্থও আছেন।”—রোমীয় ৪:২১.

১৬. জাহাজ বানানোর কাজ যখন এগিয়ে যাচ্ছিল নোহের বিশ্বাস কীভাবে শক্তিশালী হয়েছিল?

১৬ সময় যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জাহাজ বানানো যখন শেষ হয়ে আসছিল নোহের বিশ্বাসও শক্তিশালী হতে থাকে। যিহোবার দেওয়া মাপ অনুযায়ী জাহাজ তৈরি করার সমস্যা দূর হয়ে গিয়েছিল। কঠিন পরিস্থিতিগুলোকে মোকাবিলা করা হয়েছিল। কোন বিরোধিতাই এই কাজকে থামিয়ে দিতে পারেনি। নোহের পরিবার দেখেছিল যে কীভাবে যিহোবা তাদের সাহায্য করেছিলেন ও কাজ করার শক্তি যুগিয়েছিলেন। নোহ যখন কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন, ‘তাহার পরীক্ষাসিদ্ধতা ধৈর্য্য সাধন করেছিল।’ (যাকোব ১:২-৪) শেষ পর্যন্ত জাহাজ বানানো হয়েছিল, জলপ্লাবন এসেছিল আর নোহ ও তার পরিবার রক্ষা পেয়েছিল। নোহ ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞার পরিপূর্ণতা দেখতে পেয়েছিলেন যেমন পরে যিহোশূয় দেখেছিলেন। নোহ তার বিশ্বাসের পুরস্কার পেয়েছিলেন।

যিহোবা কাজ সম্পূর্ণ করতে সাহায্য করেন

১৭. কীভাবে আমাদের দিন নোহের দিনের মতোই?

১৭ যীশু ভাববাণী করেছিলেন যে আমাদের দিনও নোহের দিনের মতোই হবে। ঈশ্বর আবারও দুষ্টদের ধ্বংস করবেন বলে ঠিক করেছেন আর তা করার জন্য সময়ও নির্ধারণ করে রেখেছেন। (মথি ২৪:৩৬-৩৯) এছাড়াও তিনি ধার্মিকদের রক্ষা করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছেন। নোহকে জাহাজ বানানোর কাজ দেওয়া হয়েছিল কিন্তু আজকে ঈশ্বরের দাসেদের যিহোবার উদ্দেশ্য ঘোষণা করার, তাঁর বাক্য শেখানোর এবং শিষ্য তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।—মথি ২৮:১৯.

১৮, ১৯. কীভাবে আমরা জানি যে সুসমাচার প্রচার কাজে ঈশ্বরের সাহায্য আছে?

১৮ যিহোবা যদি নোহকে সাহায্য না করতেন ও তাকে এই কাজ করার শক্তি না দিতেন তাহলে জাহাজ বানানো যেত না। (গীতসংহিতা ১২৭:১) একইভাবে, যিহোবার সাহায্য ছাড়া সত্য খ্রীষ্টতত্ত্বের বেড়ে চলা তো দূরের কথা টিকে থাকাও মুশকিল হতো। প্রথম শতাব্দীর একজন প্রসিদ্ধ ফরীশী ও ব্যবস্থার শিক্ষক গমলীয়েল তা স্বীকার করেছিলেন। যিহূদী মহাসভা যখন প্রেরিতদের কাজকর্মকে থামিয়ে দিতে চেয়েছিল তখন তিনি তাদেরকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন: “তোমরা এই লোকদের হইতে ক্ষান্ত হও, তাহাদিগকে থাকিতে দেও; কেননা এই মন্ত্রণা কিম্বা এই ব্যাপার যদি মনুষ্য হইতে হইয়া থাকে, তবে লোপ পাইবে; কিন্তু যদি ঈশ্বর হইতে হইয়া থাকে, তবে তাহাদিগকে লোপ করা তোমাদের সাধ্য নয়।”—প্রেরিত ৫:৩৮, ৩৯.

১৯ প্রথম শতাব্দী ও আজকে প্রচার কাজের সফলতা প্রমাণ করেছে যে এই কাজ মানুষের শক্তিতে নয় কিন্তু ঈশ্বরের শক্তিতেই হয়ে চলেছে। এই কাজে ব্যাপক সফলতার পিছনে যে উৎসাহজনক অবস্থা ও রোমাঞ্চকর প্রযুক্তিগুলো সাহায্য করছে, তা পরের প্রবন্ধে আলোচনা করা হয়েছে।

কখনও হাল ছেড়ে দেবেন না!

২০. সুসমাচার প্রচার করার সময় কারা আমাদের সাহায্য করেন?

২০ আমরা যদিও “বিষম সময়ে” বাস করছি, তবুও আমরা পুরোপুরি নিশ্চিত যে পূর্ণ ক্ষমতা যিহোবারই হাতে। তিনি তাঁর লোকেদের প্রচার করার জন্য শুধু সাহায্য কেন, তাদের শক্তিও দেন যাতে তারা এই দুষ্ট বিধিব্যবস্থা শেষ করার জন্য ঈশ্বরের নিরূপিত সময়ের আগেই সুসমাচার প্রচার কাজ শেষ করতে পারেন। (২ তীমথিয় ৩:১; মথি ২৪:১৪) যিহোবা আমাদেরকে তাঁর “সহকার্য্যকারী” হওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানান। (১ করিন্থীয় ৩:৯) এছাড়াও আমাদের এই আশ্বাস রয়েছে যে এই কাজে যীশু খ্রীষ্ট আমাদের সঙ্গে সঙ্গে আছেন এবং আমরা দূতেদের সাহায্য ও নির্দেশনার ওপরও নির্ভর করি।—মথি ২০:২৮; প্রকাশিত বাক্য ১৪:৬.

২১. কোন্‌ বিশ্বাস কখনও কমিয়ে ফেলা উচিত নয়?

২১ যিহোবার প্রতিজ্ঞায় নোহ ও তার পরিবার বিশ্বাস দেখিয়েছিল বলেই তারা জলপ্লাবন থেকে রক্ষা পেয়েছিল। আজকেও যারা একইরকম বিশ্বাস দেখাবেন তারা আসন্ন ‘মহাক্লেশ’ থেকে রক্ষা পাবেন। (প্রকাশিত বাক্য ৭:১৪) আমরা এমন এক সময়ে বাস করছি যখন সত্যিই রোমাঞ্চকর ঘটনাগুলো ঘটে চলেছে। সামনেই আরও বড় বড় ঘটনা ঘটার রয়েছে! শীঘ্রই ঈশ্বর এক চমৎকার নতুন স্বর্গ ও নতুন পৃথিবী আনার জন্য কাজ করবেন যেখানে ধার্মিকতা থাকবে। (২ পিতর ৩:১৩) ঈশ্বর যা বলেছেন সেই কথাগুলোর ওপর আপনার বিশ্বাস কমিয়ে ফেলবেন না কারণ তিনি যা বলেন তা করতেও পারেন।—রোমীয় ৪:২১.

মনে রাখার বিষয়গুলো

◻ মানুষের সব কাজেই ঈশ্বর হস্তক্ষেপ করেন না কেন?

◻ ইস্রায়েলীয়দের সঙ্গে যিহোবার ব্যবহারে কীভাবে দেখা যায় যে তিনি প্রতিজ্ঞা পূরণ করতে পারেন?

◻ ভবিষ্যৎ জানার ব্যাপারে যিহোবার ক্ষমতা কীভাবে নোহের দিনে দেখানো হয়েছিল?

◻ ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাগুলোর ওপর আমাদের কোন্‌ আস্থা থাকা দরকার?

    বাংলা প্রকাশনা (১৯৮৯-২০২৬)
    লগ আউট
    লগ ইন
    • বাংলা
    • শেয়ার
    • পছন্দসমূহ
    • Copyright © 2025 Watch Tower Bible and Tract Society of Pennsylvania
    • ব্যবহারের শর্ত
    • গোপনীয়তার নীতি
    • গোপনীয়তার সেটিং
    • JW.ORG
    • লগ ইন
    শেয়ার