অসুস্থতার রহস্য
ছোট্ট ওমাজির ডায়ারিয়া হয়েছে। তার মা হাওয়া, ভয় পাচ্ছেন যে ডিহাইড্রেশন না হয়ে যায়; কারণ তিনি শুনেছেন যে মাত্র কিছুদিন আগেই তাদের গ্রামের বাড়িতে তার এক কাকাতো বোনের বাচ্চা এইভাবে মারা গিয়েছে। ওমাজির ঠাকুমা, হাওয়ার শাশুড়ী, ওমাজিকে গাঁয়ের ওঝার কাছে নিয়ে যেতে চান। তিনি বলেন, “দুষ্ট আত্মা আমার নাতনীকে অসুস্থ করেছে, বিপদ-আপদ দূর করার জন্য তুমি ওকে তাবিজ-কবচ পরাতে দাওনি আর এইজন্যই এখন এত সব দুর্ভোগ শুরু হয়েছে!”
পৃথিবীর অনেক জায়গায় এইধরনের ঘটনা অহরহ ঘটছে। কোটি কোটি লোক বিশ্বাস করে যে দুষ্ট আত্মারা আড়ালে থেকে এই অসুস্থতা ঘটাচ্ছে। এটা কি সত্যি?
রহস্যের শুরু
আপনি নিজে হয়তো বিশ্বাস করেন না যে অদৃশ্য আত্মারা অসুস্থ করে। আর সত্যি যে আপনি হয়তো ভাবেন লোকেরাই বা কেন এইরকম ভাববে, কারণ বিজ্ঞানীরা তো দেখিয়ে দিয়েছেনই যে বেশির ভাগ রোগ ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার কারণে শুরু হয়। কিন্তু, এই কথাটা মাথায় রাখুন যে শুরু থেকেই মানুষেরা এই রোগ সৃষ্টিকারী ছোট ছোট জীবাণুগুলোর কথা জানতে পারেনি। সপ্তদশ শতাব্দীতে এন্টনি ভ্যান লিউয়েনহুক অণুবীক্ষণ যন্ত্র আবিষ্কার করার পরই কেবল লোকেরা এই আনুবীক্ষণিক জীবাণুদের দেখতে পেয়েছেন। কিন্তু তারপরও শুধু উনবিংশ শতাব্দীতে লুই পাস্তুরের আবিষ্কারের জন্যই বিজ্ঞান জগৎ বুঝতে পেরেছে, রোগ আর এই জীবাণুগুলোর মধ্যে সম্পর্ক কী।
মানব ইতিহাসের শুরু থেকে অনেক দিন পর্যন্ত লোকেদের কাছে অসুস্থতার কারণগুলো অজানা ছিল, তাই অনেক কুসংস্কারমূলক ধ্যানধারণার জাল বোনা হয়েছে আর এর সঙ্গে এই ধারণাও এসে গিয়েছে যে সমস্ত অসুস্থতার কারণ হল মন্দ আত্মা। দ্যা নিউ এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা জানায় যে কীভাবে এই কুসংস্কার গড়ে উঠেছে। এটা বলে যে আগেকার দিনে বৈদ্যরা বিভিন্ন গাছগাছড়া, পাতা আর যা কিছুই তাদের নাগালের মধ্যে ছিল সেইসব দিয়ে রোগ সারানোর চেষ্টা করত। আর কখনও কখনও তাদের ওষুধ কাজে লেগেও যেত। এই ওঝারা সুস্থ করার সময় এমন সব কুসংস্কার ও উদ্ভট আচার-অনুষ্ঠান করত যাতে করে আসল ওষুধের কথা লোকেদের কাছে অজানাই থেকে যেত। এইভাবে সেই ওঝা এই ব্যাপারটা পাকাপাকি করে নিত যে লোকেরা যেন সুস্থ হওয়ার জন্য তার কাছেই আসে। এইভাবে, আসল ওষুধগুলো রহস্যের আড়ালে ঢাকা পড়ে যায় আর এর ফলে লোকেরা দৈব শক্তির সাহায্য পাওয়ার আশায় থাকে।
অনেক দেশে আজও এই প্রাচীন আরোগ্য পদ্ধতি বেশ চালু আছে। আর তাই অনেকে বলে যে মৃত পূর্বপুরুষদের আত্মারা এই অসুস্থতা ঘটায়। অন্যেরা আবার বলে যে ঈশ্বর আমাদের অসুস্থ করেন আর এইভাবে তিনি আমাদের পাপের শাস্তি দেন। এমনকি শিক্ষিত ব্যক্তিরা যারা অসুস্থতার বিজ্ঞানসম্মত কারণ জানেন, তারাও দৈব শক্তিকে ভয় পান।
জাদুকর ও ওঝা-তান্ত্রিকেরা এই ভয়কে কাজে লাগিয়ে লোকেদের শোষণ করে। তাহলে, আমাদের কি এতে বিশ্বাস করা উচিত? সুস্থ হওয়ার জন্য কি আত্মাদের কাছে ছুটে যাওয়া উচিত? এই সম্বন্ধে বাইবেল কী বলে?