যুবক-যুবতীরা—তোমাদের জ্ঞানেন্দ্রিয় সকল প্রশিক্ষিত কর!
“কঠিন খাদ্য সেই সিদ্ধবয়স্কদেরই জন্য, যাহাদের জ্ঞানেন্দ্রিয় সকল অভ্যাস প্রযুক্ত সদসৎ বিষয়ের বিচারণে পটু হইয়াছে।”—ইব্রীয় ৫:১৪.
১, ২. (ক) আজকে আমাদের দিনের অবস্থা কীভাবে প্রাচীন ইফিষের খ্রীষ্টানদের মতো? (খ) কোন্ ক্ষমতাগুলো তোমাকে বিপদ থেকে রক্ষা করতে পারে আর কীভাবে তুমি তা গড়ে তুলতে পার?
“তোমরা ভাল করিয়া দেখ, কিরূপে চলিতেছ; অজ্ঞানের ন্যায় না চলিয়া জ্ঞানবানের ন্যায় চল। সুযোগ কিনিয়া লও, কেননা এই কাল মন্দ।” (ইফিষীয় ৫:১৫, ১৬) প্রেরিত পৌল প্রায় দুই হাজার বছর আগে এই কথাগুলো লিখেছিলেন আর তখন থেকে ‘দুষ্ট লোকেরা ও বঞ্চকেরা, . . . উত্তর উত্তর কুপথে অগ্রসর হয়েছে।’ আমরা ‘বিষম সময়ে’ বাস করছি অথবা অন্য একটা অনুবাদ যেমন বলে যে এই সময়ে “অনেক বিপদ” রয়েছে।—২ তীমথিয় ৩:১-৫, ১৩; ফিলিপস্।
২ কিন্তু, তোমার চলার পথে যে বিপদগুলো ওত পেতে আছে সেগুলো থেকে তুমি রক্ষা পেতে পার, যদি তুমি “চতুরতা . . . জ্ঞান ও পরিণামদর্শিতা” গড়ে তোলো। (হিতোপদেশ ১:৪) হিতোপদেশ ২:১০-১২ পদ বলে: “কেননা প্রজ্ঞা তোমার হৃদয়ে প্রবেশ করিবে, জ্ঞান তোমার প্রাণের তুষ্টি জন্মাইবে, পরিণামদর্শিতা তোমার প্রহরী হইবে, বুদ্ধি তোমাকে রক্ষা করিবে; যেন তোমাকে উদ্ধার করে দুষ্টের পথ হইতে, সেই সকল লোক হইতে, যাহারা কুটিল বাক্য বলে।” কিন্তু কীভাবে তুমি ওই গুণগুলো গড়ে তুলতে পার? ইব্রীয় ৫:১৪ পদ বলে “কঠিন খাদ্য সেই সিদ্ধবয়স্কদেরই জন্য, যাহাদের জ্ঞানেন্দ্রিয় সকল অভ্যাস প্রযুক্ত সদসৎ বিষয়ের বিচারণে পটু হইয়াছে।” অন্য যে কোন বিষয়ে দক্ষ হওয়ার মতো একজনের জ্ঞানেন্দ্রিয়কে শিক্ষিত করার জন্যও প্রশিক্ষণের দরকার। পৌল যে গ্রিক শব্দটা ব্যবহার করেছিলেন তার প্রকৃত মানে হল ‘একজন মল্লবিদের মতো প্রশিক্ষণ লাভ করা।’ তুমি কীভাবে এই প্রশিক্ষণ শুরু করবে?
তোমার জ্ঞানেন্দ্রিয়কে প্রশিক্ষিত করা
৩. কোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় কীভাবে তুমি তোমার জ্ঞানেন্দ্রিয়কে কাজে লাগাতে পার?
৩ লক্ষ্য কর যে তোমার জ্ঞানেন্দ্রিয় অর্থাৎ ভাল-মন্দ বিচারের ক্ষমতা “অভ্যাস প্রযুক্ত” দক্ষ হয়। কোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় যদি তুমি দ্বিধায় পড়, আবেগকে প্রশ্রয় দাও অথবা অন্যেরা এইরকম করছে তাই তুমিও করবে বলে ঠিক কর, তাহলে তার ফল সাধারণত ভাল হবে না। সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হলে তোমাকে অবশ্যই তোমার জ্ঞানেন্দ্রিয়কে কাজে লাগাতে হবে। কীভাবে? সবচেয়ে প্রথমে, পরিস্থিতিকে ভাল মতো যাচাই করে এবং সঠিক তথ্য জোগাড় করে। প্রয়োজনে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা কর। এছাড়াও অন্য আর কী করা যায় তা চিন্তা কর। হিতোপদেশ ১৩:১৬ পদ বলে: “যে কেহ সতর্ক, সে জ্ঞানপূর্ব্বক কর্ম্ম করে।” এরপর, ভেবে দেখ যে এই বিষয়টার সঙ্গে বাইবেলের কোন্ নিয়ম অথবা নীতিগুলো খাপ খায়। (হিতোপদেশ ৩:৫) আর তা করতে হলে তোমার অবশ্যই বাইবেলের জ্ঞান থাকতে হবে। এইজন্যই পৌল আমাদেরকে “কঠিন খাদ্য” খেতে উৎসাহিত করেন অর্থাৎ সত্যের “প্রশস্ততা, দীর্ঘতা, উচ্চতা ও গভীরতা” শিখতে উৎসাহ দেন।—ইফিষীয় ৩:১৮.
৪. ঈশ্বরের নীতির সম্বন্ধে জ্ঞান থাকা কেন জরুরি?
৪ এটা শেখা খুবই জরুরি কারণ আমরা অসিদ্ধ এবং খুব সহজেই পাপ করি। (আদিপুস্তক ৮:২১; রোমীয় ৫:১২) যিরমিয় ১৭:৯ পদ বলে, “অন্তঃকরণ সর্ব্বাপেক্ষা বঞ্চক।” আমাদের পথ দেখানোর জন্য যদি ঈশ্বরের নীতি না থাকে, তাহলে আমরা খারাপ কিছুকে ভাল মনে করে নিজেদের মনকে ভুলাতে পারি শুধু এইজন্য যে আমাদের শরীর তা কামনা করে। (যিশাইয় ৫:২০ পদের সঙ্গে তুলনা কর।) গীতরচক লিখেছিলেন: “যুবক কেমন করিয়া নিজ পথ বিশুদ্ধ করিবে? তোমার বাক্যানুসারে সাবধান হইয়াই করিবে। তোমার নির্দেশমালা দ্বারা আমার বুদ্ধিলাভ হয়, তাই আমি সমুদয় মিথ্যাপথ ঘৃণা করি।”—গীতসংহিতা ১১৯:৯, ১০৪.
৫. (ক) কিছু যুবক-যুবতীরা কেন ভুল পথে পা দেয়? (খ) একজন যুবতী কীভাবে সত্যকে নিজের করে নিয়েছিল?
৫ তাহলে কেন কিছু যুবক-যুবতী খ্রীষ্টান পরিবারে মানুষ হয়েও ভুল পথে পা দিয়েছে? এর কারণ কি এটা হতে পারে যে ‘তাহারা পরীক্ষা করিয়া জানে নাই, ঈশ্বরের ইচ্ছা কি, যাহা উত্তম ও প্রীতিজনক ও সিদ্ধ’? (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) (রোমীয় ১২:২) কেউ কেউ হয়তো তাদের বাবামার সঙ্গে সভাতে আসে এবং বাইবেলের কিছু মূল শিক্ষা মুখস্থ বলতে পারে। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে বলতে হয় যে তাদের এই বিশ্বাসের ভিত্তি কী সে বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে অথবা তাদেরকে বাইবেলের কোন গভীর বিষয় ব্যাখ্যা করতে বলা হলে প্রমাণ হয়ে যায় যে তাদের জ্ঞান খুবই ভাসা ভাসা। এই যুবক-যুবতীরা খুব সহজেই ভুল পথে চলে যেতে পারে। (ইফিষীয় ৪:১৪) তোমার বেলায় যদি তা সত্যি হয়, তাহলে নিজেকে পরিবর্তন করার জন্য চেষ্টা কর না কেন? একজন খ্রীষ্টান যুবতী বলেন: “আমি গবেষণা করেছিলাম। নিজেকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, ‘কিভাবে আমি জানব যে এটাই সঠিক ধর্ম? কিভাবে আমি জানব যে একজন ঈশ্বর আছেন যাঁর নাম যিহোবা?’”a মন দিয়ে শাস্ত্র অধ্যয়ন করার পরই সে নিশ্চিত হয়েছিল যে সে তার বাবামার কাছে যা শিখেছে সেটাই সত্য!—প্রেরিত ১৭:১১ পদের সঙ্গে তুলনা কর।
৬. ‘প্রভু যিহোবার প্রীতিজনক কি’ তা তুমি কীভাবে জানতে পারবে?
৬ যিহোবার নীতিগুলো খুব ভালভাবে জানলে আরও সহজেই তুমি বুঝতে পারবে যে “প্রভুর প্রীতিজনক কি।” (ইফিষীয় ৫:১০) কিন্তু কোন এক সময় তুমি যদি বুঝতে না পার যে কোন্ পথে চলা তোমার জন্য বুদ্ধিমানের কাজ হবে, তখন তুমি কী করবে? নির্দেশনার জন্য যিহোবার কাছে প্রার্থনা কর। (গীতসংহিতা ১১৯:১৪৪) বিষয়টা নিয়ে তোমার বাবামা অথবা পরিপক্ব খ্রীষ্টানদের সঙ্গে কথা বল। (হিতোপদেশ ১৫:২২; ২৭:১৭) বাইবেল এবং ওয়াচ টাওয়ার প্রকাশনা নিয়ে গবেষণা করলেও সাহায্য পাওয়া যাবে। (হিতোপদেশ ২:৩-৫) তোমার জ্ঞানেন্দ্রিয়কে তুমি যতই কাজে লাগাবে সেগুলো ততই দক্ষ হবে।
মনোরঞ্জনের ব্যাপারে বিচক্ষণতা দেখানো
৭, ৮. (ক) কোন পার্টিতে তুমি যাবে কি যাবে না তা ঠিক করার সময় তুমি কীভাবে তোমার জ্ঞানেন্দ্রিয়কে কাজে লাগাতে পার? (খ) মনোরঞ্জনের বিষয়ে বাইবেল কী বলে?
৭ এখন দেখা যাক যে কিছু বিশেষ পরিস্থিতিতে তুমি কীভাবে তোমার জ্ঞানেন্দ্রিয়কে কাজে লাগাতে পার। হতে পারে যে কোন পার্টিতে তোমাকে নিমন্ত্রণ করা হয়েছে। তুমি হয়তো একটা ছাপানো নিমন্ত্রণপত্রও পেয়েছো। তোমাকে বলা হয়েছে যে সেখানে আরও অনেক সাক্ষি যুবক-যুবতীরাও আসবে। কিন্তু পার্টির খরচখরচার জন্য তোমাকে কিছু চাঁদা দিতে হবে। তোমার কি সেখানে যাওয়া ঠিক হবে?
৮ হ্যাঁ, এখানে তোমার জ্ঞানেন্দ্রিয়কে কাজে লাগাও। প্রথমে এই পার্টির বিষয়ে খোঁজ-খবর নাও। পার্টিটা কত বড় হবে? সেখানে কারা কারা আসবে? কখন তা শুরু হবে? কখন শেষ হবে? সেখানে কী কী করা হবে? কে এই পার্টির দেখাশোনা করবে? তারপর, “সামাজিক মেলামেশা” এবং “আমোদপ্রমোদ” এর ওপর ওয়াচ টাওয়ার পাবলিকেশনস্ ইনডেক্সb থেকে গবেষণা কর। গবেষণা করে তুমি কী দেখবে? একটা বিষয় তুমি দেখবে যে যিহোবা কখনোই আমোদপ্রমোদকে খারাপ চোখে দেখেন না। উপদেশক ৮:১৫ পদ বলে যে কাজ করার সঙ্গে সঙ্গে “ভোজন পান ও আমোদ করণ ব্যতীত সূর্য্যের নীচে মানুষের আর ভাল কিছু নাই।” যীশু খ্রীষ্টও নিমন্ত্রণ রক্ষা করতেন আর আমরা জানি অন্তত একটা বিয়ে বাড়িতে তিনি গিয়েছিলেন। (লূক ৫:২৭-২৯; যোহন ২:১-১০) সুতরাং সামাজিক মেলামেশা যখন সঠিকভাবে করা হয় তখন তা উপকারজনক হতে পারে।
৯, ১০. (ক) কিছু কিছু পার্টিতে কোন্ বিপদগুলো লুকিয়ে থাকতে পারে? (খ) কোন পার্টিতে তুমি যাবে কি না তা ঠিক করার আগে তুমি নিজেকে কোন্ প্রশ্নগুলো জিজ্ঞাসা করতে পার?
৯ কিন্তু ঠিক মতো দেখাশোনা করা না হলে পার্টিতে সমস্যা দেখা দিতে পারে। ১ করিন্থীয় ১০:৮ পদে আমরা পড়ি যে কীভাবে অবিবেচনাপূর্ণ মেলামেশা ব্যভিচারের দিকে মোড় নিয়েছিল এবং “এক দিনে তেইশ হাজার লোক [অবিশ্বস্ত ইস্রায়েলীয়]” মারা গিয়েছিল। রোমীয় ১৩:১৩ পদে আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ সতর্কবাণী পাওয়া যায়: “আইস, রঙ্গরসে ও মত্ততায় নয়, লম্পটতায় ও স্বেচ্ছাচারিতায় নয়, বিবাদে ও ঈর্ষায় নয়, কিন্তু দিবসের উপযুক্ত শিষ্ট ভাবে চলি।” (১ পিতর ৪:৩ পদের সঙ্গে তুলনা কর।) এটা সত্যি যে একটা পার্টিতে ঠিক কত জন আসতে পারে একথা বলা যায় না কিন্তু অভিজ্ঞতা আমাদের বলে যে পার্টি যত বড় হয় তা দেখাশোনা করতে তত বেশি সমস্যা দেখা দেয়। পার্টি যদি ছোট হয় ও সুন্দর করে এর দেখাশোনা করা হয়, তাহলে সেগুলো “উদ্দাম পার্টির” দিকে মোড় নেবে না।—গালাতীয় ৫:২১, বাইংটন।
১০ কোন সন্দেহ নেই যে গবেষণা করলে তোমার মনে এই প্রশ্নগুলো আসবে: ওই পার্টিতে কি বড়রা এবং পরিপক্ব খ্রীষ্টানেরা থাকবেন? আসলে পার্টি কে দিচ্ছে? এই পার্টির উদ্দেশ্য কি শুধু মেলামেশা করা নাকি কোন ব্যক্তির লাভের জন্য তা রাখা হয়েছে? এতে কি যে কেউ আসতে পারবে না কোন বাধা-নিষেধ আছে? পার্টি যদি শনি বা রবিবারে রাখা হয়, তাহলে সেটা কি এমন সময়ে শেষ হবে, যাতে পরের দিন সকালে সবাই প্রচারে যেতে পারে? সেখানে যদি নাচ-গানের আয়োজন করা হয়, তাহলে সেগুলো কেমন হবে, খ্রীষ্টানেরা কি সেগুলোতে যোগ দিতে পারে? (২ করিন্থীয় ৬:৩) এইরকম প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হয়তো খুব সোজা নয়। কিন্তু হিতোপদেশ ২২:৩ পদ আমাদের সাবধান করে দেয়: “সতর্ক লোক বিপদ দেখিয়া আপনাকে লুকায়, কিন্তু অবোধ লোকেরা অগ্রে গিয়া দণ্ড পায়।” হ্যাঁ, তোমার জ্ঞানেন্দ্রিয়কে কাজে লাগিয়ে তুমি ঝুঁকি এড়াতে পারবে।
লেখাপড়ার বিষয়ে পরিকল্পনা করার ব্যাপারে বিচক্ষণতা দেখানো
১১. যুবক-যুবতীরা তাদের ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে পরিকল্পনা করতে গিয়ে কীভাবে জ্ঞানেন্দ্রিয়কে কাজে লাগাতে পারে?
১১ বাইবেল বলে যে ভবিষ্যতের জন্য পরিকল্পনা করা বুদ্ধিমানের কাজ। (হিতোপদেশ ২১:৫) তুমি কি কখনও তোমার বাবামায়ের সঙ্গে তোমার ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করেছ? তুমি হয়তো একজন অগ্রগামী হয়ে পূর্ণ-সময়ের পরিচর্যা করার পরিকল্পনা করছ। সত্যিই, অগ্রগামীর কাজের কোন বিকল্প হয় না। তুমি যদি এখন থেকে অধ্যয়ন করার ভাল অভ্যাস গড়ে তোলো ও প্রচারে তোমার দক্ষতা বাড়াও, তাহলে এই চমৎকার কাজের জন্য তুমি তৈরি হচ্ছো। তুমি কি কখনও ভেবে দেখেছ যে প্রচার কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য তুমি পয়সা কোথায় পাবে? ভবিষ্যতে যদি তুমি বিয়ে কর ও তোমাকে পরিবার চালাতে হয় তখন তুমি কি এই অতিরিক্ত দায়িত্ব বহন করতে পারবে? এই বিষয়ে ভারসাম্যপূর্ণ, বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য জ্ঞানেন্দ্রিয়কে কাজে লাগাতে হয়।
১২. (ক) অর্থনৈতিক অবস্থা পাল্টানোর সঙ্গে সঙ্গে কিছু পরিবার কীভাবে মানিয়ে নিয়েছে? (খ) কিছু হাতের কাজ শেখা কি অগ্রগামী হওয়ার লক্ষ্যে বাধার সৃষ্টি করে? ব্যাখ্যা কর।
১২ কিছু কিছু দেশে চাকরির জায়গাতেই অন্য কোন কাজ অথবা পেশার ওপর আরও বেশি প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুযোগ থাকে। অনেক যুবক-যুবতী নিজেদের পারিবারিক ব্যাবসা শেখে অথবা কোন ব্যাবসায়ী বন্ধুর কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নেয়। অন্যেরা স্কুলে এমন কোন বিষয় নিয়ে পড়াশুনা করে যা পরে চাকরি পেতে সাহায্য করবে। যেখানে এমন সুযোগ নেই, সেখানে বাবামায়েরা ভাল করে ভেবেচিন্তে ছেলেমেয়েদের জন্য তাদের উচ্চ মাধ্যমিক পড়া শেষ হওয়ার পর হয়তো কোন হাতের কাজ শেখানোর জন্য প্রশিক্ষণ নেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারেন। এভাবে আগে থেকে পরিকল্পনা করা ভাল যাতে বড় হয়ে তারা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে এবং বিশেষ করে অনেক দিন পর্যন্ত অগ্রগামীর কাজ চালিয়ে যেতে পারে আর এরকম করলে ঈশ্বরের রাজ্যকে প্রথম স্থানে রাখা অসাধ্য কিছুই হবে না। (মথি ৬:৩৩) এছাড়াও, হাতের কাজ শেখা অগ্রগামীর কাজে বাধা হয়ে দাঁড়ায় না। যেমন একজন খ্রীষ্টান যুবতী দীর্ঘ সময়ের জন্য অগ্রগামীর কাজ করতে চেয়েছিল। উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল থেকে পাশ করার পর তার নিয়মিত অগ্রগামী বাবামা তাকে কিছু হাতের কাজ শেখার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। সেই প্রশিক্ষণ নেওয়ার পাশাপাশি সে অগ্রগামীর কাজও চালিয়ে যেতে পেরেছিল। আর এখন সে তার শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে খুব ভালভাবে নিজের ভরণপোষণ করতে পারে এবং সে অগ্রগামীর কাজ করে চলেছে।
১৩. পরিবারগুলো ছেলেমেয়েদের হাতের কাজ শেখানো বা না শেখানোর ব্যাপারে কোন্ কোন্ বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করতে পারে?
১৩ ছেলেমেয়েরা হাতের কাজের ওপর শিক্ষা নেবে কি নেবে না, এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার ও দায়িত্ব প্রতিটা পরিবারের আছে। এইরকম শিক্ষার বিষয়ে যদি ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তাহলে তা অনেক উপকার করতে পারে। কিন্তু এটা আবার ফাঁদেও ফেলতে পারে। তাই নিজেকে জিজ্ঞাসা কর যে তুমি কেন এই প্রশিক্ষণ নিতে চাইছ? এটা কি এইজন্য যে বড় হয়ে তুমি আরও সচ্ছলভাবে তোমার দায়িত্বগুলো পালন করতে পারবে? নাকি ‘তুমি আপনার জন্য মহৎ মহৎ বিষয়ের চেষ্টা করিতেছ’? (যিরমিয় ৪৫:৫; ২ থিষলনীকীয় ৩:১০; ১ তীমথিয় ৫:৮; ৬:৯) আর হাতের কাজ শেখার জন্য যদি তোমাকে ঘর থেকে দূরে কোন বোর্ডিংয়ে গিয়ে থাকতে হয়, তাহলে কী হবে? “কুসংসর্গ শিষ্টাচার নষ্ট করে,” পৌলের এই সতর্কবাণী মাথায় রাখলে এটা কি বুদ্ধিমানের কাজ হবে? (১ করিন্থীয় ১৫:৩৩; ২ তীমথিয় ২:২২) মনে রেখ যে “সময় সঙ্কুচিত।” (১ করিন্থীয় ৭:২৯) এই শিক্ষা নিতে গিয়ে তুমি এই সময় থেকে কতটা সময় ব্যয় করবে? এটা কি তোমার যৌবনের বেশির ভাগ সময়ই কেড়ে নেবে? যদি তাই হয়, তাহলে কীভাবে তুমি বাইবেলের এই উৎসাহজনক কথাটাকে কাজে লাগাবে, “তুমি যৌবনকালে আপন সৃষ্টিকর্ত্তাকে স্মরণ কর”? (উপদেশক ১২:১) এছাড়াও, তুমি যে প্রশিক্ষণ নেবে তা কি তোমাকে খ্রীষ্টীয় কাজকর্ম যেমন সভা, প্রচার ও ব্যক্তিগত অধ্যয়ন করার জন্য সময় দেবে? (মথি ২৪:১৪; ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫) তোমার জ্ঞানেন্দ্রিয় যদি কাজ করে, তাহলে তুমি ও তোমার বাবামা এই বিষয়ে পরিকল্পনা করার সময় কখনও আধ্যাত্মিক লক্ষ্যগুলোকে উপেক্ষা করবে না।
বিয়ের উদ্দেশ্যে মেলামেশাকে সম্মানজনক রাখা
১৪. (ক) বিয়ের উদ্দেশ্যে মেলামেশা করছে এমন সময় যুগলদের একে অন্যের প্রতি ভালবাসা দেখানোর সময় কোন্ নীতিগুলো মনে রাখা উচিত? (খ) কিছু যুগলেরা এই বিষয়টাকে কীভাবে গুরুত্বের সঙ্গে নেয়নি?
১৪ বিয়ের উদ্দেশ্যে মেলামেশা হল আরেকটা জায়গা যেখানে জ্ঞানেন্দ্রিয়কে কাজে লাগানো দরকার। এটাকে অস্বীকার করা যায় না যে তুমি যাকে পছন্দ কর তার জন্য ভালবাসা দেখাতে তোমার ইচ্ছা হবেই। শলোমনের পরমগীতে যে প্রেমিক-প্রেমিকার কথা বলা হয়েছে তারা বিয়ের আগেই কিছু উপায়ে ভালবাসা দেখিয়েছিলেন। (পরমগীত ১:২; ২:৬; ৮:৫) তাই আজকে বিয়ের উদ্দেশ্যে মেলামেশা করছে এমন কিছু ছেলেমেয়েরা হয়তো মনে করতে পারে যে বিয়ে যেহেতু কাছেই তাই হাত ধরা, চুমু খাওয়া ও একে অন্যকে জড়িয়ে ধরার মধ্যে দোষের কিছু নেই। কিন্তু মনে রাখবে: “যে নিজ হৃদয়কে বিশ্বাস করে, সে হীনবুদ্ধি।” (হিতোপদেশ ২৮:২৬) দুঃখজনক হলেও সত্যি যে কিছু যুগলেরা অন্যায় পরিস্থিতিতে পড়ে গিয়ে দেখিয়েছে যে তারা বিচক্ষণ নয়। তাদের ভালবাসা প্রকাশে অসংযম এসেছে, তারা নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি; ফলে নোংরা কাজে জড়িয়ে পড়েছে যা একসময় যৌন অনৈতিকতার দিকে মোড় নিয়েছে।
১৫, ১৬. বিয়ের উদ্দেশ্যে মেলামেশা করছে এমন যুগলেরা তাদের মেলামেশাকে সম্মানীয় রাখার জন্য কীভাবে সাবধান হতে পারে?
১৫ তুমি যদি তোমার ভাবী সঙ্গীর সঙ্গে কোথাও বেড়াতে যাও, তবে তোমার জ্ঞানেন্দ্রিয়কে কাজে লাগিয়ে একা থাকাকে এড়িয়ে চলো। তাই সবচেয়ে ভাল হয় যদি কয়েকজন মিলে বাইরে যাও অথবা চারিদিকে লোকজন আছে এমন জায়গায় গিয়ে সময় কাটাও। কেউ কেউ বাইরে যাওয়ার সময় তাদের সঙ্গে তৃতীয় আরেকজনকে নিয়ে যায়। এছাড়াও, হোশেয় ৪:১১ পদের কথাগুলো মনে রেখ: “মদ্য ও নূতন দ্রাক্ষারস, এই সকল বুদ্ধি হরণ করে।” মদ ভাল-মন্দ বিচারের ক্ষমতাকে লোপ করে দিতে পারে এবং যুগলেরা এমন কিছু করে ফেলতে পারে যার জন্য পরে তাদেরকে বিবেক দংশনে ভুগতে হয়।
১৬ হিতোপদেশ ১৩:১০ পদ বলে: “অহঙ্কারে কেবল বিবাদ উৎপন্ন হয়; কিন্তু যাহারা পরামর্শ মানে, প্রজ্ঞা তাহাদের সহবর্ত্তী।” হ্যাঁ, ‘একসঙ্গে পরামর্শ কর’ এবং তোমরা একে অন্যের সঙ্গে কেমন ব্যবহার করবে তা বলে নাও। ভালবাসা দেখানোর সময় সংযমী হও, একজন অন্যের অনুভূতি ও নীতি-বোধকে সম্মান দেখাও। (১ করিন্থীয় ১৩:৫; ১ থিষলনীকীয় ৪:৩-৭; ১ পিতর ৩:১৬) এইরকম স্পর্শকাতর বিষয়ে কথা বলতে প্রথম প্রথম হয়তো কিছুটা অস্বস্তি লাগতে পারে কিন্তু তা গুরুতর সমস্যা এড়াতে সাহায্য করবে।
“বাল্যকাল হইতে” শেখা
১৭. দায়ূদ কীভাবে যিহোবাকে ‘বাল্যকাল হইতে তার বিশ্বাস-ভূমি’ করেছিলেন আর তা থেকে আজকের যুবক-যুবতীরা কী শিখতে পারে?
১৭ শয়তানের ফাঁদগুলো এড়ানোর জন্য তোমাকে অনেক বেশি সতর্ক হতে হবে আর কখনও কখনও অনেক সাহসেরও দরকার হবে। মাঝে মাঝে শুধু তোমার সমবয়সীদের সঙ্গেই নয় কিন্তু এই পুরো জগৎ-সংসারের সঙ্গে তোমার বনিবনা হবে না। গীতরচক দায়ূদ গেয়েছিলেন: “হে প্রভু সদাপ্রভু, তুমি আমার আশা; তুমি বাল্যকাল হইতে আমার বিশ্বাস-ভূমি। হে ঈশ্বর, তুমি বাল্যকালাবধি আমাকে শিক্ষা দিয়া আসিতেছ; আর এ পর্য্যন্ত আমি তোমার আশ্চর্য্য ক্রিয়া সকল প্রচার করিতেছি।” (গীতসংহিতা ৭১:৫, ১৭)c দায়ূদ খুব সাহসী ছিলেন। কিন্তু কখন তিনি তা গড়ে তুলেছিলেন? বালক থাকতেই! গলিয়াতের সঙ্গে যুদ্ধ করতে যাওয়ার আগেই দায়ূদ তার বাবার মেষপালকে রক্ষা করার জন্য সাহস দেখিয়েছিলেন—একটা সিংহ ও একটা ভল্লুককে তিনি মেরেছিলেন। (১ শমূয়েল ১৭:৩৪-৩৭) কিন্তু তিনি যে সাহস দেখিয়েছিলেন তার সম্পূর্ণ কৃতিত্ব দায়ূদ যিহোবাকেই দিয়েছিলেন, তিনি ঈশ্বরের বিষয়ে বলেছিলেন, “তুমি বাল্যকাল হইতে আমার বিশ্বাস-ভূমি।” যিহোবার ওপর নির্ভর করাই দায়ূদকে সমস্ত পরীক্ষা সহ্য করার শক্তি দিয়েছিল। তুমিও যদি যিহোবাতে নির্ভর কর, তাহলে দেখবে যে তিনি ‘জগৎকে জয় করার’ জন্য তোমাকে শক্তি ও সাহস দেবেন।—১ যোহন ৫:৪.
১৮. আজকে ঈশ্বরভয়শীল যুবক-যুবতীদের কোন্ পরামর্শ দেওয়া হয়েছে?
১৮ তোমাদের মতো হাজার হাজার যুবক-যুবতী সাহসের সঙ্গে সত্যকে নিজের করে নিয়েছে এবং বাপ্তিস্ম নিয়ে এখন সুসমাচার প্রচার করছে। তোমরা যুবক-যুবতীরা, যে বিশ্বাস ও সাহস দেখাচ্ছ তার জন্য আমরা ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাই! জগতের কলুষতা থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হও। (২ পিতর ১:৪) তোমার বাইবেল শিক্ষিত জ্ঞানেন্দ্রিয়কে কাজে লাগাও। তা করলে তুমি এখন সবধরনের বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা পাবে এবং ভবিষ্যতে পরিত্রাণ পাবে। আসলে তুমি তোমার জীবনকে সফল করে তুলবে যেমন আমাদের শেষের প্রবন্ধে আলোচনা করা হয়েছে।
[পাদটীকাগুলো]
a সচেতন থাক!, অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর, ১৯৯৮ সংখ্যার “যুবক-যুবতীদের জিজ্ঞাস্য . . . কিভাবে আমি সত্যকে নিজের করে নিতে পারি?” প্রবন্ধটা দেখ।
b ১৯৯২ সালের ১লা নভেম্বর সংখ্যার প্রহরীদুর্গ-এ “সামাজিক আমোদপ্রমোদ—উপকারসকল ভোগ করুন, ফাঁদগুলি এড়িয়ে চলুন” প্রবন্ধে এই বিষয়ের ওপর অনেক মূল্যবান তথ্য রয়েছে।
c গীতসংহিতা ৭১ অধ্যায়টাও দায়ূদ লিখেছিলেন কারণ এটাকে ৭০ অধ্যায়েরই পরের অংশ বলে মনে হয়।
পুনরালোচনার প্রশ্নগুলো
◻ যুবক-যুবতীরা কীভাবে তাদের জ্ঞানেন্দ্রিয়কে প্রশিক্ষিত করতে পারে?
◻ খ্রীষ্টানদের কোন পার্টিতে যোগ দেওয়ার সময় একজন যুবক বা যুবতী কীভাবে তাদের জ্ঞানেন্দ্রিয়কে কাজে লাগাতে পারে?
◻ পড়াশুনার বিষয় পরিকল্পনা করতে গেলে কোন্ বিষয়গুলো নিয়ে ভাবা দরকার?
◻ বিয়ের উদ্দেশ্যে মেলামেশা করছে এমন যুগলেরা কীভাবে যৌন অনৈতিকতার ফাঁদকে এড়াতে পারে?
[১৫ পৃষ্ঠার চিত্র]
গবেষণা করা তোমার জ্ঞানেন্দ্রিয়কে প্রশিক্ষিত করতে সাহায্য করবে
[১৬ পৃষ্ঠার চিত্র]
ছোট পার্টিতে সবকিছু দেখাশোনা করা সহজ এবং সেখানে অনিয়ন্ত্রিত হৈচৈ হওয়ার সম্ভাবনাও কম থাকে
[১৬ পৃষ্ঠার চিত্র]
ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার বিষয়ে পরিকল্পনা করতে বাবামাদের সাহায্য করা উচিত
[১৭ পৃষ্ঠার চিত্র]
অনেকে একসঙ্গে মিলে বাইরে যাওয়া সুরক্ষা এনে দেয়