সত্য খ্রীষ্টধর্ম প্রবল হয়!
“সপরাক্রমে প্রভুর [“যিহোবার,” NW] বাক্য বৃদ্ধি পাইতে ও প্রবল হইতে লাগিল।”—প্রেরিত ১৯:২০.
১. প্রথম শতাব্দীতে খ্রীষ্টধর্মের বৃদ্ধির কথা বর্ণনা করুন।
পবিত্র আত্মার শক্তিতে উদ্দীপিত হয়ে প্রথম শতাব্দীর খ্রীষ্টানরা এতটা জোরকদমে ঈশ্বরের বাক্য ঘোষণা করেছিলেন যে কোন কিছুই তাদেরকে থামিয়ে রাখতে পারেনি। একজন ইতিহাসবেত্তা লিখেছিলেন: “খ্রীষ্টধর্ম রোমীয় সাম্রাজ্যে অত্যন্ত দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়েছিল। ১০০ বছরের মধ্যে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে, সম্ভবত প্রত্যেক প্রদেশে খ্রীষ্টীয় সমাজ গড়ে উঠেছিল।”
২. শয়তান কীভাবে সুসমাচার প্রচারে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল আর তা কীভাবে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল?
২ শয়তান দিয়াবল প্রথম শতাব্দীর খ্রীষ্টানদের মুখ কোনভাবেই বন্ধ করে রাখতে পারেনি। তাই, সে আরেকটা উপায়ে সুসমাচার প্রচারে বাধা দিয়েছিল আর তা হল ধর্মভ্রষ্টতা। গোম ও শ্যামাঘাসের দৃষ্টান্তে যীশু এই বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। (মথি ১৩:২৪-৩০, ৩৬-৪৩) প্রেরিত পিতরও সাবধান করে দিয়েছিলেন যে, মণ্ডলীর মধ্যে মিথ্যা শিক্ষকদের উদ্ভব হবে ও তারা বিনাশজনক দলভেদ তৈরি করবে। (২ পিতর ২:১-৩) একইভাবে, প্রেরিত পৌল নির্দিষ্টভাবে সাবধান করে দিয়েছিলেন যে যিহোবার দিন আসার আগে ধর্মভ্রষ্টতা উপস্থিত হবে।—২ থিষলনীকীয় ২:১-৩.
৩. প্রেরিতরা মারা যাওয়ার পর কী হয়েছিল?
৩ প্রেরিতরা মারা যাওয়ার পর পৌত্তলিক শিক্ষা ও দর্শনবিদ্যা সুসমাচারকে ছাপিয়ে গিয়েছিল। ঠিক যেমন ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল, তেমনই সত্যের বিশুদ্ধ বার্তাকে মিথ্যা শিক্ষকরা বিকৃত ও কলুষিত করেছিল। ধীরে ধীরে, খ্রীষ্টীয়জগৎ নামে এক মিথ্যা ধর্মের উৎপত্তি হয়েছিল আর তা সত্য খ্রীষ্টধর্মকে চেপে রেখেছিল। এক পাদরি শ্রেণীর উৎপত্তি হয়েছিল, যারা সাধারণ লোকেরা যাতে বাইবেল পড়তে না পারে তার চেষ্টা করেছিলেন। নিজেদের খ্রীষ্টান বলে দাবি করে এমন ব্যক্তিদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছিল ঠিকই কিন্তু তাদের উপাসনা বিশুদ্ধ ছিল না। খ্রীষ্টীয়জগতের শিক্ষা বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছিল এবং পাশ্চাত্য সংস্কৃতিতে তা এক শক্তিশালী ভিত্তি ও প্রধান শক্তি হয়ে উঠেছিল কিন্তু এতে ঈশ্বরের আশীর্বাদ কিংবা তাঁর আত্মা কোনটাই ছিল না।
৪. ঈশ্বরের উদ্দেশ্যকে ব্যর্থ করে দিতে শয়তানের সমস্ত ষড়যন্ত্র কীভাবে ভেস্তে গিয়েছিল?
৪ যাই হোক, যিহোবার উদ্দেশ্যকে ব্যর্থ করার জন্য শয়তানের সমস্ত ষড়যন্ত্র ভেস্তে গিয়েছিল। এমনকি ধর্মভ্রষ্টতার যুগের অন্ধকারময় দিনগুলোতেও কিছুজনের মধ্যে সত্য খ্রীষ্টধর্ম জীবন্ত ছিল। বাইবেলের প্রতিলিপিকারীরা নিখুঁতভাবে তা করার জন্য মনপ্রাণ দিয়ে চেষ্টা করেছিলেন। এভাবে বাইবেল ঠিক মূল পাণ্ডুলিপির মতোই রয়েছে, যদিও বাইবেল শিক্ষা দেওয়ার অধিকার আছে বলে দাবি করেন এমন অনেকে বাইবেলের কথা ভুলভাবে ব্যাখ্যা করেছিলেন। এছাড়াও, শত শত বছর ধরে জেরম এবং টিনডেলের মতো পণ্ডিত ব্যক্তিরা সাহসের সঙ্গে ঈশ্বরের বাক্যকে অনুবাদ ও বিতরণ করেছিলেন। লক্ষ লক্ষ ব্যক্তিরা বাইবেল ও একধরনের খ্রীষ্টধর্ম সম্বন্ধে জেনেছিলেন যদিও তা নকল ছিল।
৫. ‘প্রকৃত জ্ঞানের’ বিষয়ে ভাববাদী দানিয়েল কী ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন?
৫ দানিয়েলের বইয়ে করা ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী ‘[“প্রকৃত,” NW] জ্ঞান বৃদ্ধি পেয়েছিল।’ এটা ‘শেষকালে’ অর্থাৎ আমরা যে সময়ে বাস করছি এখন হয়েছে। (দানিয়েল ১২:৪) সারা পৃথিবীতে সত্যকে যারা ভালবাসেন, পবিত্র আত্মা সেই ব্যক্তিদেরকে সত্য ঈশ্বর সম্বন্ধে সঠিক জ্ঞান ও তাঁর উদ্দেশ্যগুলো জানতে সাহায্য করেছে। ধর্মভ্রষ্ট ব্যক্তিদের শিক্ষার শত শত বছর পরেও ঈশ্বরের বাক্য প্রবল হয়েছে! আজকে, সব জায়গায় সুসমাচার ঘোষণা করা হচ্ছে, লোকেদেরকে অপূর্ব নতুন জগতের আশা জানানো হচ্ছে। (গীতসংহিতা ৩৭:১১) আসুন আমরা আজকের দিনে ঈশ্বরের বাক্যের বৃদ্ধির বিষয়ে পরীক্ষা করে দেখি।
আজকে বাক্যের বৃদ্ধি
৬. ১৯১৪ সালের মধ্যে বাইবেল ছাত্ররা কোন্ সত্যগুলো বুঝেছিলেন?
৬ উনবিংশ শতকের শেষ দিকে বাইবেলের সত্য বাইবেল ছাত্রদের ছোট্ট একটা দলকে উদ্দীপিত করে তুলেছিল, যারা আজ যিহোবার সাক্ষি নামে পরিচিত। ১৯১৪ সালের মধ্যে বাইবেলের বিষয়বস্তু তাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ঈশ্বরের উদ্দেশ্য সম্বন্ধীয় চমৎকার সত্যগুলো তারা বুঝতে পেরেছিলেন। যিহোবা প্রেম দেখিয়ে তাঁর পুত্রকে পৃথিবীতে পাঠিয়ে অনন্ত জীবনের পথ খুলে দিয়েছেন, এই বিষয়টা তাদের হৃদয়কে গভীরভাবে নাড়া দিয়েছিল। সেইসঙ্গে তারা ঈশ্বরের নাম ও উদ্দেশ্য সম্বন্ধে জানতে ও উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। এছাড়াও, তারা বুঝতে পেরেছিলেন যে “পরজাতিদের সময়” ইতিমধ্যে শেষ হয়ে গেছে, যা ইঙ্গিত করেছিল যে সারা পৃথিবীর মানুষদের জন্য আশীর্বাদ নিয়ে আসতে ঈশ্বরের রাজ্য সরকারের সময় এগিয়ে এসেছে। (লূক ২১:২৪, কিং জেমস ভারসন) কত অপূর্ব এক সুসমাচার! এই শক্তিশালী সত্য সব জায়গায়, সমস্ত লোকেদের কাছে ছড়িয়ে দেওয়ার দরকার ছিল। কারণ তাদের জীবন ঝুঁকির মধ্যে ছিল!
৭. আজকে বাইবেলের সত্য কীভাবে প্রবল হয়ে উঠেছে?
৭ আত্মায় অভিষিক্ত ওই অল্প সংখ্যক খ্রীষ্টানদের যিহোবা আশীর্বাদ করেছিলেন। আজকে সত্য খ্রীষ্টধর্মকে মেনে নিয়েছেন এমন ব্যক্তিদের সংখ্যা ষাট লক্ষ ছাড়িয়ে গেছে। বিভিন্ন জায়গায়ও ঈশ্বরের বাক্য ছড়িয়ে পড়েছে কারণ আজকে ২৩৫টা জায়গায় যিহোবার সাক্ষিদের পাওয়া যায়। এছাড়াও, বাইবেলের সত্য শক্তি প্রয়োগ করেছে, ধর্মীয় এবং অন্যান্য বাধাগুলো কাটিয়ে প্রবল হয়ে উঠছে। সারা পৃথিবীতে এই প্রচার কাজই হল সবচেয়ে অখণ্ডনীয় প্রমাণ যে যীশু রাজ্য ক্ষমতায় উপস্থিত আছেন।—মথি ২৪:৩, ১৪.
৮. যিহোবার সাক্ষিদের বৃদ্ধির বিষয়ে কেউ কেউ কী বলেছেন?
৮ প্রথম শতাব্দীতে খ্রীষ্টধর্মের চমৎকার বৃদ্ধি দেখে ইতিহাসবেত্তারা যেমন মন্তব্য করেছিলেন, ঠিক তেমনই আজকের দিনে যিহোবার লোকেদের বৃদ্ধি দেখেও অনেক পণ্ডিত ব্যক্তিরা মন্তব্য করেছেন। আমেরিকার দুজন পণ্ডিত ব্যক্তি একসঙ্গে লিখেছিলেন: “গত ৭৫ বছরে যিহোবার সাক্ষিদের সংখ্যা অসাধারণভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে . . . আর তা সারা পৃথিবীতেই বৃদ্ধি পেয়েছে।” পূর্ব আফ্রিকার একটা পত্রিকা সাক্ষিদের সম্বন্ধে বলে যে তারা “সারা পৃথিবীর সবচেয়ে দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পাওয়া ধর্মগুলোর মধ্যে একটা এবং বাইবেলের শিক্ষাগুলোকে পুরোপুরি কাজে লাগানোর জন্য বিশেষভাবে পরিচিত বলে তাদের ধর্মকে সম্মানের চোখে দেখা হয়।” আর ইউরোপে প্রকাশিত একটা রক্ষণশীল ক্যাথলিক পত্রিকা “যিহোবার সাক্ষিদের উপচে পড়া বৃদ্ধির” কথা বলে। এই বৃদ্ধিতে কোন্ বিষয়টা অবদান রেখেছে?
আজকেও পবিত্র আত্মা সক্রিয়
৯. (ক) আজকে ঈশ্বরের বাক্য প্রবল হয়ে ওঠার পিছনে প্রধান কারণটা কী? (খ) যিহোবা লোকেদেরকে কীভাবে তাঁর কাছে নিয়ে আসেন?
৯ আজকে ঈশ্বরের বাক্য প্রবল হয়ে ওঠার পিছনে একটা প্রধান কারণ হল, প্রথম শতাব্দীর মতো আজকেও যিহোবার আত্মা খুব সক্রিয়ভাবে কাজ করে চলেছে। যীশু বলেছিলেন: “পিতা, যিনি আমাকে পাঠাইয়াছেন, তিনি আকর্ষণ না করিলে কেহ আমার কাছে আসিতে পারে না।” (যোহন ৬:৪৪) এই কথাগুলো দেখায় যে যারা নিরূপিত ও অন্তর থেকে তা চায় সেই লোকেদের ঈশ্বর করুণার সঙ্গে তাঁর কাছে টানেন। যিহোবা তাঁর সাক্ষিদের প্রচার কাজের মাধ্যমে “সর্ব্বজাতির মনোরঞ্জন বস্তু সকল” অর্থাৎ পৃথিবীর নম্র, মেষতুল্য ব্যক্তিদেরকে তাঁর উপাসনায় নিয়ে আসছেন।—হগয় ২:৬, ৭.
১০. কোন্ ধরনের লোকেরা ঈশ্বরের বাক্যের প্রতি সাড়া দিয়েছেন?
১০ পবিত্র আত্মা ঈশ্বরের লোকেদেরকে শুধু পৃথিবীর প্রান্ত পর্যন্ত ঈশ্বরের বাক্য পৌঁছে দেওয়ার জন্যই শক্তিশালী করেনি কিন্তু সেইসঙ্গে সমস্ত জাতির লোকেদের মধ্যে সুসমাচার শোনার আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে। সত্যিই, যারা ঈশ্বরের বাক্যকে মেনে নিয়েছেন তারা “সমুদয় বংশ ও ভাষা ও জাতি ও লোকবৃন্দ হইতে” এসেছেন। (প্রকাশিত বাক্য ৫:৯; ৭:৯, ১০) এখানে ধনী-গরিব, উচ্চশিক্ষিত-নিরক্ষর সব ধরনের লোকেরাই আছে। কেউ কেউ যুদ্ধ ও তীব্র তাড়নার মধ্যে আবার কেউ কেউ শান্তি ও সমৃদ্ধির সময়ে ঈশ্বরের বাক্যকে মেনে নিয়েছেন। সবধরনের সরকারের শাসনাধীনে, সব সংস্কৃতির এবং কনসেনট্রেশন ক্যাম্প থেকে শুরু করে রাজপ্রাসাদের নারী-পুরুষরা সকলে সুসমাচারে সাড়া দিয়েছেন।
১১. ঈশ্বরের লোকেদের জীবনে পবিত্র আত্মা কীভাবে কাজ করে আর কোন্ প্রভেদ স্পষ্টভাবে দেখা যায়?
১১ বিভিন্ন জায়গা ও সংস্কৃতি থেকে আসা সত্ত্বেও, ঈশ্বরের লোকেরা একে অন্যের সঙ্গে ঐক্যে বাস করেন। (গীতসংহিতা ১৩৩:১-৩) যারা ঈশ্বরকে সেবা করছেন তাদের জীবনে যে পবিত্র আত্মা কাজ করে তা এই বিষয়টার মাধ্যমে আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তাঁর আত্মা সবসময়ই এক জোরালো শক্তি, যা যিহোবার দাসদেরকে প্রেম, আনন্দ, শান্তি, মাধুর্য ও অন্যান্য ভাল ভাল গুণগুলো দেখাতে সাহায্য করে। (গালাতীয় ৫:২২, ২৩) অনেক অনেক বছর আগে ভাববাদী মীখার বলা এই কথাগুলো আজকে আমরা স্পষ্টভাবে বুঝতে পারি: “তোমরা . . . ধার্ম্মিক ও দুষ্টের মধ্যে, যে ঈশ্বরের সেবা করে, ও যে তাঁহার সেবা না করে, উভয়ের মধ্যে প্রভেদ দেখিবে।”—মালাখি ৩:১৮.
উদ্যোগী কর্মীদের মধ্যে ঈশ্বরের বাক্য প্রবল হয়
১২. সুসমাচার প্রচার করাকে যিহোবার সাক্ষিরা কীভাবে নেন আর প্রচার কাজে তারা কেমন প্রতিক্রিয়া আশা করেন?
১২ আজকে যিহোবার সাক্ষিরা গির্জার লোকেদের মতো অসাড় নন। তারা সক্রিয়ভাবে সুসমাচার প্রচার করেন। ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করার জন্য প্রথম শতাব্দীর খ্রীষ্টানদের মতো তারা স্বেচ্ছায় নিজেদের বিলিয়ে দেন, যিহোবার রাজ্যের প্রতিজ্ঞাগুলোর বিষয়ে অন্যদের জানাতে সাহায্য করার চেষ্টা করেন। ঈশ্বরের সহকার্যকারী হিসেবে তারা তাঁর পবিত্র আত্মার সঙ্গে মিল রেখে অন্যদেরকে যিহোবার সেবা করার জন্য একত্র করেন। তা করে, তারা অবিশ্বাসী মানবজাতির প্রতি যিহোবার করুণা ও প্রেম দেখান। আর লোকেদের উদাসীনতা, উপহাস ও তাড়নার মধ্যেও তারা তা করে যাচ্ছেন। সুসমাচার শুনে লোকেরা যে বিভিন্ন ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখাবে তার জন্য যীশু তাঁর অনুগামীদের আগে থেকেই প্রস্তুত করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “‘দাস প্রভু হইতে বড় নয়;’ লোকে যখন আমাকে তাড়না করিয়াছে, তখন তোমাদিগকেও তাড়না করিবে; তাহারা যদি আমার বাক্য পালন করিত, তোমাদের বাক্যও পালন করিত।”—যোহন ১৫:২০.
১৩. খ্রীষ্টীয়জগতের মধ্যে কোন্ বৈশিষ্ট্যগুলোর অভাব রয়েছে যেগুলোর যিহোবার সাক্ষিদের মধ্যে কমতি নেই?
১৩ আজকের দিনের যিহোবার সাক্ষি এবং প্রথম শতাব্দীতে যারা সত্য খ্রীষ্টধর্মকে মেনে নিয়েছিলেন তাদের মধ্যে যে মিল রয়েছে, তা আমাদের মনে ছাপ ফেলে। একইভাবে যিহোবার সাক্ষি ও খ্রীষ্টীয়জগতের মধ্যে যে পার্থক্যগুলো রয়েছে তা-ও স্পষ্টভাবে দেখা যায়। সুসমাচার প্রচার করার জন্য প্রথম শতাব্দীর খ্রীষ্টানদের উদ্যোগ সম্বন্ধে লেখার পর একজন পণ্ডিত ব্যক্তি দুঃখ করে বলেছিলেন: “যতক্ষণ পর্যন্ত না গির্জার বর্তমান পন্থায় কোন পরিবর্তন হচ্ছে যাতে করে প্রত্যেক বাপ্তাইজিত খ্রীষ্টান সুসমাচার প্রচারকে অবশ্য করণীয় কাজ হিসেবে আবার দেখেন আর সেইসঙ্গে অবিশ্বাসীদের চেয়ে শুদ্ধভাবে জীবনযাপন করেন ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা কোন উন্নতি করতে পারব না।” খ্রীষ্টীয়জগতের মধ্যে যে বৈশিষ্ট্যগুলোর অভাব রয়েছে, যিহোবার সাক্ষিদের মধ্যে সেগুলোর কমতি নেই! তাদের বিশ্বাস জীবন্ত, প্রকৃত এবং বাইবেলের সত্যের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে আর তাই যারা শুনতে চান তাদেরকে তা জানানোর জন্য তারা নিজেদেরকে বাধ্য বলে মনে করেন।—১ তীমথিয় ২:৩, ৪.
১৪. যীশু তাঁর পরিচর্যাকে কীভাবে দেখেছিলেন আর আজকে তাঁর শিষ্যরা কেমন মনোভাব দেখান?
১৪ যীশু তাঁর পরিচর্যাকে খুবই গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছিলেন, এটাকে তাঁর জীবনের প্রধান ধ্যানজ্ঞান করেছিলেন। পীলাতকে তিনি বলেছিলেন: “আমি এই জন্যই জন্মগ্রহণ করিয়াছি ও এই জন্য জগতে আসিয়াছি, যেন সত্যের পক্ষে সাক্ষ্য দিই।” (যোহন ১৮:৩৭) ঈশ্বরের লোকেরাও যীশুর মতো একই মনোভাব দেখান। বাইবেলের সত্য তাদের হৃদয়ে আছে বলে যত লোকেদের কাছে সম্ভব তা জানানোর জন্য তারা উপায় খোঁজেন। এইরকম কিছু কিছু উপায় খুবই কার্যকারী বলে দেখা যায়।
১৫. সুসমাচার প্রচার করতে কেউ কেউ কীভাবে কৌশলতা দেখিয়েছেন?
১৫ দক্ষিণ আমেরিকার একটা দেশে সাক্ষিরা লোকদেরকে সত্য জানানোর জন্য আমাজান নদীর এক উপনদীর ওপর দিয়ে যাত্রা করতেন। কিন্তু, ১৯৯৫ সালে যখন গৃহযুদ্ধ লাগে তখন ওই নদীতে সাধারণ লোকেদের যান চলাচল নিষেধ করা হয়। আগ্রহী ব্যক্তিদেরকে বাইবেলের প্রকাশনাদি পৌঁছে দেওয়ার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে সাক্ষিরা যেদিকে স্রোত প্রবাহিত হয় সেদিকে সেগুলো ভাসিয়ে দেবেন বলে ঠিক করেন। তারা চিঠি লিখে তার সঙ্গে প্রহরীদুর্গ ও সচেতন থাক! পত্রিকা প্লাস্টিকের খালি বোতলের মধ্যে ভরে বোতলগুলো নদীতে ভাসিয়ে দিতেন। যতদিন পর্যন্ত না সাধারণ লোকেদের জন্য ওই পথ খুলে যায় অর্থাৎ প্রায় সাড়ে চার বছর ধরে তারা এভাবে কাজ করতেন। এভাবে নদীপথে সাহিত্যাদি পাঠানোর জন্য লোকেরা সাক্ষিদেরকে ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন। বাইবেল অধ্যয়ন করতেন এমন একজন মহিলা যখন সাক্ষিদের দেখেছিলেন তখন তাদের জড়িয়ে ধরে বলেছিলেন: “আমি ভেবেছিলাম আপনাদের সঙ্গে আমার আর কখনও দেখা হবে না। কিন্তু, আমি যখন বোতলের মধ্যে সাহিত্য পেতে শুরু করি তখন বুঝতে পেরেছিলাম যে আপনারা আমাকে ভুলে যাননি!” অন্যেরা যারা নদীর আশেপাশে থাকতেন তারা বলেছিলেন যে তারা বার বার এই পত্রিকাগুলো পড়েছিলেন। অনেক বসতি এলাকার জন্য একটা “পোস্ট অফিস” ছিল অর্থাৎ প্রধান স্রোতের বিপরীতমূখী একটা স্রোত, যেখানে ভাসমান বস্তুগুলো অস্থায়ীভাবে এসে জমা হতো। আগ্রহী ব্যক্তিরা প্রায়ই এখানে এসে খোঁজ করতেন যে তাদের নামে কোন “চিঠিপত্র” এসেছে কি না।
১৬. আমরা যদি সবসময় সুসমাচার প্রচার করার জন্য তৈরি থাকি, তাহলে কীভাবে কখনও কখনও শিষ্য তৈরি করার সুযোগ পেয়ে যেতে পারি?
১৬ সুসমাচার প্রচার কাজে যিহোবা ঈশ্বর ও তাঁর শক্তিমান দূতেদের নির্দেশনা ও সাহায্য রয়েছে। (প্রকাশিত বাক্য ১৪:৬) আমরা যদি সবসময় সুসমাচার প্রচার করার জন্য তৈরি থাকি, তাহলে কখনও কখনও শিষ্য তৈরি করার অপ্রত্যাশিত সুযোগ আমরা পেয়ে যেতে পারি। কেনিয়ার নাইরোবিতে, দুজন খ্রীষ্টান বোন তাদের জন্য নির্ধারিত ঘরগুলোতে প্রচার করা সবেমাত্র শেষ করেছিলেন। একজন মহিলা হঠাৎ করে তাদের কাছে আসেন এবং অত্যন্ত উৎসাহের সঙ্গে বলেন: “আপনাদের সঙ্গে দেখা করার জন্য আমি অনেক দিন ধরে প্রার্থনা করছি।” তিনি সাক্ষিদেরকে তখনই তার ঘরে এসে আলোচনা করতে অনুরোধ করেন ও সেদিনই তার সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন শুরু করা হয়েছিল। সেই মহিলা কেন এত তাড়াহুড়ো করে ওই দুজন খ্রীষ্টানের কাছে গিয়েছিলেন? প্রায় দুসপ্তা আগে, তার বাচ্চা মেয়ে মারা গিয়েছিল। তাই তিনি যখন একটা ছোট ছেলের হাতে “মৃত প্রিয়জনদের জন্য কী আশা?” ট্র্যাক্টটা দেখেন তখন ছেলেটার কাছে সেটা চান। কিন্তু সে তা না দিয়ে সাক্ষিদের কথা বলে যে তারা তাকে ওই ট্র্যাক্টটা দিয়েছেন। ওই মহিলা আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে খুব তাড়াতাড়ি উন্নতি করেন এবং মেয়েকে হারানোর ব্যথা শীঘ্রিই কাটিয়ে উঠতে পেরেছিলেন।
ঈশ্বরের প্রেম প্রবল হবেই
১৭-১৯. মুক্তির মূল্যের মাধ্যমে যিহোবা কেমন প্রেম দেখিয়েছেন?
১৭ সারা পৃথিবীতে ঈশ্বরের বাক্যের বৃদ্ধির সঙ্গে খ্রীষ্ট যীশুর মুক্তির মূল্য নিবিড়ভাবে জড়িত। মুক্তির মূল্যের মতো প্রচার কাজও সব জায়গার লোকেদের প্রতি যিহোবার ভালবাসা প্রকাশের একটা উপায়। ঈশ্বরের অনুপ্রেরণায় প্রেরিত যোহন লিখেছিলেন: “ঈশ্বর জগৎকে [মানবজাতিকে] এমন প্রেম করিলেন যে, আপনার একজাত পুত্ত্রকে দান করিলেন, যেন, যে কেহ তাঁহাতে বিশ্বাস করে, সে বিনষ্ট না হয়, কিন্তু অনন্ত জীবন পায়।”—যোহন ৩:১৬.
১৮ মুক্তির মূল্যের ব্যবস্থা করে যিহোবা যে প্রেম দেখিয়েছেন, তা একটু ভেবে দেখুন। অগণিত বছর ধরে “ঈশ্বরের সৃষ্টির আদি” তাঁর প্রিয় একজাত পুত্রের সঙ্গে ঈশ্বরের এক অত্যন্ত কাছের সম্পর্ক ছিল। (প্রকাশিত বাক্য ৩:১৪) যীশু তাঁর পিতাকে গভীরভাবে ভালবাসেন আর “জগৎ পত্তনের পূর্ব্বে” থেকেই যিহোবা তাঁর পুত্রকে ভালবাসতেন। (যোহন ১৪:৩১; ১৭:২৪) তাঁর এই প্রিয় পুত্রকেই যিহোবা মৃত্যুবরণ করতে দিয়েছিলেন যাতে মানুষ অনন্ত জীবন পেতে পারে। মানুষের জন্য প্রেমের কত বিস্ময়কর এক প্রকাশ!
১৯ যোহন ৩:১৭ পদ বলে: “ঈশ্বর জগতের বিচার করিতে পুত্ত্রকে জগতে প্রেরণ করেন নাই, কিন্তু জগৎ যেন তাঁহার দ্বারা পরিত্রাণ পায়।” তাই, যিহোবা তাঁর পুত্রকে কারও বিচার বা কাউকে শাস্তি দেবার জন্য নয় কিন্তু পরিত্রাণের এক প্রেমময় দায়িত্ব দিয়ে পাঠিয়েছিলেন। পিতরের কথার সঙ্গে এটা মিলে যায়: “কতকগুলি লোক যে বিনষ্ট হয়, এমন বাসনা [যিহোবার] নাই; বরং সকলে যেন মনপরিবর্ত্তন পর্য্যন্ত পঁহুছিতে পায়, এই তাঁহার বাসনা।”—২ পিতর ৩:৯.
২০. সুসমাচার প্রচারের সঙ্গে কীভাবে পরিত্রাণ জড়িত?
২০ চরম মূল্য দিয়ে যিহোবা পরিত্রাণের জন্য বৈধ ব্যবস্থা জুগিয়েছেন, তাই তিনি চান যেন অনেক লোকেরা এর থেকে উপকার লাভ করে। প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “‘যে কেহ প্রভুর [“যিহোবার,” NW] নামে ডাকে, সে পরিত্রাণ পাইবে।’ তবে তাহারা যাঁহাতে বিশ্বাস করে নাই, কেমন করিয়া তাঁহাকে ডাকিবে? আর যাঁহার কথা শুনে নাই, কেমন করিয়া তাঁহাতে বিশ্বাস করিবে? আর প্রচারক না থাকিলে কেমন করিয়া শুনিবে?”—রোমীয় ১০:১৩, ১৪.
২১. প্রচার কাজে অংশ নেওয়ার সুযোগকে আমাদের কীভাবে দেখা উচিত?
২১ সারা পৃথিবীতে প্রচার ও শিক্ষা দেওয়ার এই কাজে অংশ নেওয়া কত চমৎকার এক সুযোগ! এটা কোন সহজ কাজ নয় কিন্তু তারপরেও যিহোবা যখন দেখেন যে, তাঁর লোকেরা বিশ্বস্তভাবে সত্যে জীবনযাপন করছে ও অন্যদেরকে সুসমাচার জানাচ্ছে তখন তিনি কত খুশিই না হন! তাই পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, আপনার হৃদয়ে ঈশ্বরের আত্মা ও তাঁর জন্য আপনার ভালবাসা যেন আপনাকে এই কাজ করতে চালিত করে। আর মনে রাখবেন যে সারা পৃথিবীতে যা ঘটে চলেছে সেগুলো যখন আমরা দেখি, তা আমাদেরকে নিশ্চিত প্রমাণ দেয় যে, শীঘ্রিই যিহোবা ঈশ্বর ‘নূতন আকাশমণ্ডল ও নূতন পৃথিবী’ নিয়ে আসবেন যার মধ্যে “ধার্ম্মিকতা বসতি করে।”—২ পিতর ৩:১৩.
আপনার কি মনে আছে?
• ধর্মভ্রষ্টতা কেন সুসমাচার প্রচারকে থামিয়ে দিতে পারেনি?
• আমাদের সময়ে ঈশ্বরের বাক্য কীভাবে প্রবল হয়েছে?
• আজকে ঈশ্বরের আত্মা কীভাবে কাজ করে চলেছে?
• সুসমাচার প্রচার করার সঙ্গে কীভাবে মুক্তির মূল্য জড়িত?
[১৬ পৃষ্ঠার রেখাচিত্র/চিত্রগুলো]
(পুরোপুরি ফরম্যাট করা টেক্সটের জন্য এই প্রকাশনা দেখুন)
বিংশ শতাব্দীতে রাজ্য ঘোষণাকারীদের সংখ্যা বৃদ্ধি
গড় প্রকাশক (লক্ষে)
৬.০
৫.৫
৫.০
৪.৫
৪.০
৩.৫
৩.০
২.৫
২.০
১.৫
১.০
০.৫
১৯০০ ১৯১০ ১৯২০ ১৯৩০ ১৯৪০ ১৯৫০ ১৯৬০ ১৯৭০ ১৯৮০ ১৯৯০ ২০০০
[১৫ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]
জেরম
টিনডেল
গুটেনবার্গ
হুস্
[সৌজন্যে]
গুটেনবার্গ এবং হুস্: From the book The Story of Liberty, ১৮৭৮
[১৫ পৃষ্ঠার চিত্র]
১৯২০ এর দশকে বাইবেল ছাত্ররা সুসমাচার ঘোষণা করছেন
[১৬, ১৭ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]
সারা পৃথিবীর লোকেরা সুসমাচার শুনে তাতে সাড়া দিচ্ছেন
[১৮ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]
যীশু খ্রীষ্টের মুক্তির মূল্যের বলিদানের মতো প্রচার কাজের মাধ্যমেও ঈশ্বরের প্রেম প্রকাশ পায়