ওয়াচটাওয়ার অনলাইন লাইব্রেরি
ওয়াচটাওয়ার
অনলাইন লাইব্রেরি
বাংলা
  • বাইবেল
  • প্রকাশনাদি
  • সভা
  • w০২ ৯/১৫ পৃষ্ঠা ২১-২৫
  • “পরিত্রাণ যিহোবারই কাছে”

এই বাছাইয়ের সঙ্গে কোনো ভিডিও প্রাপ্তিসাধ্য নেই।

দুঃখিত, ভিডিওটা চালানো সম্বভব হচ্ছে না।

  • “পরিত্রাণ যিহোবারই কাছে”
  • ২০০২ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • উপশিরোনাম
  • অনুরূপ বিষয়বস্ত‌ু
  • “তুমি তাহাদের কাছে প্রণিপাত করিও না”
  • জাতীয় সংগীত কী?
  • সম্মান বজায় রেখে বিরত থাকুন
  • “সৎসংবেদ রক্ষা কর”
  • “সকলের প্রতি কোমল”
  • নৈতিক মূল্যবোধ যা সম্মানের যোগ্য
    যিহোবার সাক্ষীরা এবং শিক্ষা
  • পতাকা অভিবাদন, ভোট দেওয়া এবং বেসামরিক কাজ
    “ঈশ্বরের প্রেমে আপনাদিগকে রক্ষা কর”
  • কেন যিহোবার সাক্ষিরা সম্মানের সঙ্গে জাতীয়তাবাদী অনুষ্ঠানগুলোতে অংশ নেওয়া প্রত্যাখ্যান করে?
    যিহোবার সাক্ষিদের সম্বন্ধে প্রায়ই জিজ্ঞাস্য প্রশ্ন
২০০২ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
w০২ ৯/১৫ পৃষ্ঠা ২১-২৫

“পরিত্রাণ যিহোবারই কাছে”

কখনও কখনও, জাতিগত সংকট এবং আন্তর্জাতিক চাপের কারণে লোকেরা তাদের সরকারের কাছে সুরক্ষা এবং নিরাপত্তা অন্বেষণ করে। সরকারগুলো জনগণের সমর্থনে ঐক্য রক্ষায় বিভিন্ন কার্যক্রমের পরিকল্পনা করে থাকে। এইধরনের কার্যক্রমগুলোর দ্বারা দেশপ্রেমের অনুভূতি যতই বাড়ে, দেশাত্মবোধক অনুষ্ঠানগুলোর উদ্‌যাপন ততই উৎসাহপূর্ণ এবং বেশি হয়।

জাতীয় জরুরি মুহূর্তগুলোতে দেশাত্মবোধক আবেগ প্রায়ই লোকেদের মধ্যে একতা ও শক্তিমত্তার বোধ এনে দেয় এবং তাদের মধ্যে সহযোগিতার মনোভাব ও অন্যের প্রয়োজনের প্রতি চিন্তাশীল হওয়াকে উন্নীত করে। কিন্তু, দ্যা নিউ ইয়র্ক টাইমস ম্যাগাজিন এর একটা প্রবন্ধ বলে, ‘দেশভক্তি যেকোন আবেগের মতোই নিয়ত পরিবর্তনশীল আর একবার প্রকাশ পেলে এটা জঘন্য রূপ ধারণ করতে পারে।’ এর প্রকাশ দেশের জনগণের নাগরিক ও ধর্মীয় স্বাধীনতায় বেআইনি হস্তক্ষেপের কারণ হতে পারে। সত্য খ্রীষ্টানরা বিশেষ করে তাদের বিশ্বাসের প্রতি আপোশ করার জন্য চাপের মুখোমুখি হয়ে থাকে। তাদের চারপাশে এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হলে তারা কেমন মনোভাব দেখায়? কোন্‌ শাস্ত্রীয় নীতিগুলো তাদের অন্তর্দৃষ্টির সঙ্গে কাজ করতে এবং ঈশ্বরের প্রতি নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখতে তাদের সাহায্য করে?

“তুমি তাহাদের কাছে প্রণিপাত করিও না”

কখনও কখনও, জাতীয় পতাকা অভিবাদন করাকে দেশাত্মবোধের এক জনপ্রিয় প্রকাশ হিসেবে দেখা হয়। কিন্তু, পতাকাগুলোতে প্রায়ই আকাশের বিভিন্ন বস্তু যেমন তারা এবং পৃথিবীর বিভিন্ন বস্তুর ছবি থাকে। এইধরনের জিনিসগুলোর সামনে প্রণিপাত করার বিষয়ে ঈশ্বর তাঁর মনোভাব ব্যক্ত করেছিলেন, যখন তিনি তাঁর লোকেদের এই আদেশ দিয়েছিলেন: “তুমি আপনার নিমিত্তে খোদিত প্রতিমা নির্ম্মাণ করিও না; উপরিস্থ স্বর্গে, নীচস্থ পৃথিবীতে ও পৃথিবীর নীচস্থ জলমধ্যে যাহা যাহা আছে, তাহাদের কোন মূর্ত্তি নির্ম্মাণ করিও না; তুমি তাহাদের কাছে প্রণিপাত করিও না, এবং তাহাদের সেবা করিও না; কেননা তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু আমি স্বগৌরব রক্ষণে উদ্‌যোগী [“একাগ্র ভক্তি পাওয়ার,” NW] ঈশ্বর।”—যাত্রাপুস্তক ২০:৪, ৫.

দেশের প্রতীকরূপে ব্যবহৃত পতাকাকে অভিবাদন করা ও এর সামনে হাঁটু গাড়া কি আসলেই যিহোবা ঈশ্বরকে একাগ্র ভক্তি দেওয়ার আদেশকে অমান্য করে? প্রাচীন ইস্রায়েলীয়রা প্রান্তরে থাকাকালীন যখন তিনটে শ্রেণীতে ভাগ হয়ে মিলিত হতো, তখন তাদের চারপাশে ‘চিহ্নের সহিত পতাকা’ বা বৈশিষ্ট্যসূচক পতাকা ছিল। (গণনাপুস্তক ২:১, ২) ইব্রীয় শব্দে এইধরনের বৈশিষ্ট্যসূচক পতাকা যে-অর্থ প্রকাশ করে, সেটার ওপর মন্তব্য করতে গিয়ে ম্যাক ক্লিনটক এবং স্ট্রংয়ের সাইক্লোপিডিয়া বলে: “কিন্তু ওই শব্দগুলোর একটাও, ‘বৈশিষ্ট্যসূচক পতাকা’ বলতে আমরা যে-পতাকা বুঝি সেই ধারণা প্রকাশ করে না।”। এ ছাড়াও, ইস্রায়েলীয়দের বৈশিষ্ট্যসূচক পতাকাকে পবিত্র কিছু বলে মনে করা হতো না এবং এগুলোর ব্যবহারের সঙ্গে কোন অনুষ্ঠানও জড়িত ছিল না। সেগুলো কেবল একটা কার্যকর প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হতো, যা লোকেদের দেখাত যে কোথায় মিলিত হতে হবে।

সমাগম তাম্বু ও শলোমনের মন্দিরে করূবদের প্রতিকৃতি মূলত স্বর্গের করূবদের চিত্রিত করত। (যাত্রাপুস্তক ২৫:১৮; ২৬:১, ৩১, ৩৩; ১ রাজাবলি ৬:২৩, ২৮, ২৯; ইব্রীয় ৯:২৩, ২৪) এই শৈল্পিক প্রতিকৃতিগুলো যে শ্রদ্ধা দেখানোর জন্য ছিল না তা এই বিষয়টা থেকে স্পষ্ট যে, সাধারণ লোকেরা কখনও সেগুলো দেখেনি আর ওই স্বর্গদূতদেরও উপাসনা করা হয় না।—কলসীয় ২:১৮; প্রকাশিত বাক্য ১৯:১০; ২২:৮, ৯.

এ ছাড়া, প্রান্তরে ইস্রায়েলীয়দের সাময়িক আবাস থাকাকালীন ভাববাদী মোশি তামার সাপের যে-মূর্তি তৈরি করেছিলেন, সেটাও বিবেচনা করুন। ওই মূর্তি বা প্রতীক রূপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছিল এবং সেটার এক ভাববাণীমূলক অর্থ ছিল। (গণনাপুস্তক ২১:৪-৯; যোহন ৩:১৪, ১৫) এটাকে ভক্তি দেখানো হয়নি বা উপাসনার জন্য ব্যবহার করা হয়নি। কিন্তু, মোশির দিনের কয়েকশ বছর পর ইস্রায়েলীয়রা অন্যায়ভাবে সেই প্রতীককে উপাসনা করতে এমনকি এর উদ্দেশে ধূপ জ্বালাতে আরম্ভ করেছিল। তাই, যিহূদার রাজা হিষ্কিয় এটা ভেঙে ফেলেছিলেন।—২ রাজাবলি ১৮:১-৪.

জাতীয় পতাকাগুলো কি শুধুমাত্র কিছু উপকারজনক কাজই করে থাকে? এগুলো আসলে কীসের প্রতীক? লেখক জে. পল উইলিয়ামস বলেছিলেন, “পতাকা হল জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসের প্রধান প্রতীক এবং উপাসনার মুখ্য বস্তু।” দি এনসাইক্লোপিডিয়া আ্যমেরিকানা বলে: “ক্রুশের মতো পতাকাও পবিত্র।” পতাকা হল দেশের প্রতীক। তাই, এটার সামনে প্রণিপাত করা বা এটাকে অভিবাদন জানানো হল, একটা ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা যা দেশের প্রতি শ্রদ্ধানিবেদনকে বোঝায়। এইধরনের কাজ পরিত্রাণের জন্য দেশকে কৃতিত্ব আরোপ করে, যা ঈশ্বরের বাক্যে প্রতিমাপূজা সম্বন্ধে বলা বিষয়ের বিপরীত কাজ।

শাস্ত্র স্পষ্টভাবে বলে: “পরিত্রাণ সদাপ্রভুরই [“যিহোবারই,” NW] কাছে।” (গীতসংহিতা ৩:৮) পরিত্রাণের জন্য মানব প্রতিষ্ঠানগুলো বা এদের প্রতীকগুলোকে কৃতিত্ব দেওয়া যায় না। প্রেরিত পৌল সহ খ্রীষ্টানদের পরামর্শ দিয়েছিলেন: “হে আমার প্রিয়েরা, প্রতিমাপূজা হইতে পলায়ন কর।” (১ করিন্থীয় ১০:১৪) প্রাথমিক খ্রীষ্টানরা রাষ্ট্রের বিভিন্ন ধরনের উপাসনায় অংশ নেয়নি। ড্যানিয়েল পি. ম্যানিক্স যারা মৃত্যু পথযাত্রী (ইংরেজি) বইতে বলেন: “খ্রীষ্টানরা . . . [রোমীয়] সম্রাটের প্রতিমূর্তির উদ্দেশে বলি উৎসর্গ করতে প্রত্যাখান করেছিল—যা আজকে পতাকাকে অভিবাদন করতে প্রত্যাখান করার প্রায় সমরূপ।” তাই, আজকেও সত্য খ্রীষ্টানরা এটা মেনে চলে। যিহোবাকে একাগ্র ভক্তি দেওয়ার জন্য তারা যেকোন জাতির পতাকাকে অভিবাদন করা থেকে বিরত থাকে। তা করে তারা ঈশ্বরকে প্রথম স্থানে রাখে ও একইসময়ে সমস্ত সরকার এবং তাদের শাসকদের সম্মান দেখিয়ে থাকে। সত্যিই, সরকারি “প্রাধান্যপ্রাপ্ত কর্ত্তৃপক্ষদের” প্রতি বশীভূত থাকার বিষয়ে তারা তাদের দায়িত্বকে স্বীকার করে। (রোমীয় ১৩:১-৭) কিন্তু দেশাত্মাবোধক গান যেমন, জাতীয় সংগীত গাওয়া সম্বন্ধে শাস্ত্র কী বলে?

জাতীয় সংগীত কী?

দি এনসাইক্লোপিডিয়া আ্যমেরিকানা বলে, “জাতীয় সংগীত হল দেশভক্তির অনুভূতির প্রকাশ আর প্রায়ই তাতে লোকেদের এবং তাদের শাসকদের জন্য ঈশ্বরের নির্দেশনা ও সুরক্ষা কামনা করা হয়।” মূলত জাতীয় সংগীত হল, কোন জাতির পক্ষে স্তবগান করা বা প্রার্থনা করা। একটা জাতি যেন সমৃদ্ধি লাভ করে এবং দীর্ঘজীবি হয়, সেটাই সাধারণত এতে চাওয়া হয়। সত্য খ্রীষ্টানদের কি এইধরনের প্রার্থনাপূর্ণ অনুভূতি প্রকাশে অংশ নেওয়া উচিত?

যিরমিয় ভাববাদী এমন সব লোকেদের মধ্যে বাস করতেন, যারা দাবি করত যে তারা ঈশ্বরের সেবা করে। কিন্তু, যিহোবা তাকে আদেশ দিয়েছিলেন: “তুমি এই জাতির নিমিত্ত প্রার্থনা করিও না, তাহাদের জন্য আমার কাছে কাতরোক্তি ও প্রার্থনা উৎসর্গ করিও না, অনুরোধও করিও না; কেননা আমি তোমার কথা শুনিব না।” (যিরমিয় ৭:১৬; ১১:১৪; ১৪:১১) কেন যিরমিয়কে এই আদেশ দেওয়া হয়েছিল? কারণ তাদের সমাজ চুরি, নরহত্যা, ব্যভিচার, মিথ্যা শপথ এবং প্রতিমাপূজায় পরিপূর্ণ ছিল।—যিরমিয় ৭:৯.

যীশু খ্রীষ্ট একটা নজির স্থাপন করেছিলেন যখন তিনি বলেন: “আমি . . . জগতের নিমিত্ত নিবেদন করিতেছি না, কিন্তু যে সকল আমাকে দিয়াছ, তাহাদের নিমিত্ত।” (যোহন ১৭:৯) শাস্ত্র বলে যে, “সমস্ত জগৎ সেই পাপাত্মার মধ্যে শুইয়া রহিয়াছে” এবং “বহিয়া যাইতেছে।” (১ যোহন ২:১৭; ৫:১৯) তা হলে, কীভাবে সত্য খ্রীষ্টানরা জেনেশুনে এই রকম এক পরিস্থিতির সমৃদ্ধি এবং স্থায়িত্বের জন্য প্রার্থনা করতে পারে?

অবশ্য সমস্ত জাতীয় সংগীতেই ঈশ্বরের উদ্দেশে প্রার্থনা করা হয় না। এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা বলে, ‘জাতীয় সংগীতের অনুভূতি বিভিন্ন হয়, রাজাদের জন্য প্রার্থনা থেকে শুরু করে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধগুলোর পরোক্ষ উল্লেখ বা বিদ্রোহ . . . থেকে দেশাত্মবোধক অনুভূতির অভিব্যক্তি থাকে।’ কিন্তু যারা ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করতে চায়, তারা কি কোন জাতির যুদ্ধে এবং বিপ্লবে উল্লাস করতে পারে? সত্য উপাসকদের বিষয়ে যিশাইয় ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন: “তাহারা আপন আপন খড়্গ ভাঙ্গিয়া লাঙ্গলের ফাল গড়িবে, ও আপন আপন বড়শা ভাঙ্গিয়া কাস্তা গড়িবে।” (যিশাইয় ২:৪) প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন, “আমরা মাংসে চলিতেছি বটে, কিন্তু মাংসের বশে যুদ্ধযাত্রা করিতেছি না; কারণ আমাদের যুদ্ধের অস্ত্রশস্ত্র মাংসিক নহে।”—২ করিন্থীয় ১০:৩, ৪.

জাতীয় সংগীত অনেক সময় জাতিগত গর্ব বা শ্রেষ্ঠত্বের অনুভূতি প্রকাশ করে। এইধরনের দৃষ্টিভঙ্গির শাস্ত্রীয় কোন ভিত্তি নেই। আরেয়পাগে প্রেরিত পৌল তার বক্তৃতায় বলেছিলেন: “[যিহোবা ঈশ্বর] এক ব্যক্তি হইতে মনুষ্যদের সকল জাতিকে উৎপন্ন করিয়াছেন, যেন তাহারা সমস্ত ভূতলে বাস করে।” (প্রেরিত ১৭:২৬) আর প্রেরিত পিতর বলেছিলেন, “ঈশ্বর মুখাপেক্ষা [“পক্ষপাতিত্ব”, NW] করেন না; কিন্তু প্রত্যেক জাতির মধ্যে যে কেহ তাঁহাকে ভয় করে ও ধর্ম্মাচরণ করে, সে তাঁহার গ্রাহ্য হয়।”—প্রেরিত ১০:৩৪, ৩৫.

বাইবেল বুঝতে পারে বলে অনেকে পতাকার অভিবাদন এবং দেশাত্মাবোধক গান গাওয়ায় অংশ নেওয়া থেকে বিরত থাকতে ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু যখন কোন পরিস্থিতি তাদের এইধরনের বিষয়গুলোর মুখোমুখি করে, তখন তারা কীধরনের মনোভাব দেখায়?

সম্মান বজায় রেখে বিরত থাকুন

প্রাচীন বাবিলনের রাজা নবূখদ্‌নিৎসর তার সাম্রাজ্যের একতাকে সুদৃঢ় করার জন্য দূরা সমস্থলীতে স্বর্ণের এক বিশাল প্রতিমা স্থাপন করেছিলেন। তিনি সেই প্রতিমা প্রতিষ্ঠার অনুষ্ঠানে তার ক্ষিতিপাল, প্রতিনিধি, দেশাধ্যক্ষদের, মহাবিচারকর্তা এবং অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। বাদ্যযন্ত্রের শব্দ শোনার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে সমবেত লোকেদের ওই প্রতিমাকে প্রণিপাত এবং উপাসনা করতে হতো। এই লোকেদের মধ্যে শদ্রক, মৈশক এবং অবেদ্‌-নগো নামে তিনজন ইব্রীয় যুবককে উপস্থিত থাকতে হয়েছিল। এই ধর্মীয় অনুষ্ঠানে তারা যে অংশ নিচ্ছে না, সেটা তারা কীভাবে দেখিয়েছিল? যন্ত্রসংগীত আরম্ভ হয়েছিল এবং সমবেত লোকেরা সেই প্রতিমার সামনে উপুড় হয়ে পড়েছিল কিন্তু সেই তিনজন ইব্রীয় সেখানে অবিচল দাঁড়িয়ে ছিল।—দানিয়েল ৩:১-১২.

আজকে সাধারণত সামনের দিকে হাত প্রসারিত করে অথবা হাতকে কপালের কাছে তুলে ধরে বা বুকের কাছে রেখে পতাকাকে অভিবাদন করা হয়। কখনও কখনও দেহকে বিশেষ ভঙ্গিমায় রাখতে হতে পারে। কোন কোন দেশে, স্কুলে বাচ্চাদের পতাকার সামনে হাঁটু গাড়তে হয় এবং এটিকে চুমু খেতে হয়। অন্যেরা যখন পতাককে অভিবাদন করে, তখন কেবল শান্তভাবে দাঁড়িয়ে থেকে সত্য খ্রীষ্টানরা দেখায় যে, তারা সম্মানপূর্ণ দর্শক।

পতাকা সংক্রান্ত কোন অনুষ্ঠান যদি এমনভাবে হয় যে, কেবলমাত্র সেখানে দাঁড়িয়ে থাকাই দেখাবে যে তাতে অংশ নেওয়া হচ্ছে, তা হলে কী হবে? উদাহরণ হিসেবে, মনে করুন একটা স্কুলের একজন ছাত্রকে পুরো স্কুলের প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত করা হল এবং সে যখন বাইরে নির্ধারিত জায়গায় পতাকার সামনে এটাকে অভিবাদন করে, সেই সময়ে অন্য ছাত্রছাত্রীরা ক্লাসরুমের ভিতরে সোজাভাবে দাঁড়িয়ে থাকবে বলে আশা করা হয়। এইরকম অবস্থায় কেবল এইভাবে দাঁড়িয়ে থাকা দেখায় যে, বাইরের ছাত্রের সঙ্গে অন্যেরা একমত কারণ পতাকা অভিবাদন করার ক্ষেত্রে সে ব্যক্তিগত প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছে। যেকোন ভঙ্গিমায় দাঁড়ানোই প্রমাণ করবে যে, একজন এই অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছে। যদি এইরকম পরিস্থিতি হয়, তা হলে যারা শুধুমাত্র সম্মানপূর্ণ দর্শক হিসেবে সেখানে থাকতে চায় তারা চুপচাপ সেখানে বসে থাকবে। কিন্তু সেই অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার সময় ক্লাস যদি ইতিমধ্যে দাঁড়ানো অবস্থায় থাকে, তা হলে কী? এইক্ষেত্রে আমাদের দাঁড়িয়ে থাকা ইঙ্গিত করবে না যে, আমরা এতে অংশ নিচ্ছি।

আবার ধরুন একজনকে পতাকা অভিবাদন করতে নয় কিন্তু প্যারেডে অথবা ক্লাসরুমে বা অন্য কোথাও সেটাকে কেবল ধরে রাখতে বলা হল, যাতে অন্যেরা এটিকে অভিবাদন করতে পারে। শাস্ত্রে বলা ‘প্রতিমাপূজা হইতে পলায়ন করিবার’ বদলে এর অর্থ হবে এই অনুষ্ঠানের একেবারে কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা। দেশাত্মবোধক প্যারেডের ক্ষেত্রেও একই বিষয় সত্যি। যেহেতু এটা করার অর্থ হবে প্যারেডের মাধ্যমে যা কিছু সম্মানিত করা হয় সেটাকে সমর্থন করা, তাই সত্য খ্রীষ্টানরা সতর্কতার সঙ্গে এটা করা প্রত্যাখান করে।

জাতীয় সংগীত চলাকালীন সাধারণত একজনকে অন্য সকলের সঙ্গে গানের অনুভূতিতে অংশ নিতে দাঁড়িয়ে সেটা প্রকাশ করতে হয়। এইরকম পরিস্থিতিতে খ্রীষ্টানরা তাদের আসনে বসে থাকে। কিন্তু জাতীয় সংগীত শুরু হওয়ার সময়ে তারা যদি আগে থেকেই দাঁড়ানো অবস্থায় থাকে, তা হলে সেইক্ষেত্রে হঠাৎ বসে পড়াটা তাদের জন্য জরুরি নয়। কারণ এটা এমন নয় যে, তারা জাতীয় সংগীতে অংশ নিতে নির্দিষ্টভাবে দাঁড়িয়ে থাকাকে নিজেরাই বেছে নিয়েছিল। অন্যদিকে, যদি আশা করা হয় যে, কোন দল দাঁড়াবে বা গান গাইবে, তা হলে সম্মান দেখানোর জন্য গান না গেয়ে শুধু দাঁড়ানো প্রকাশ করবে না যে, গানের অনুভূতিতে অংশ নেওয়া হচ্ছে।

“সৎসংবেদ রক্ষা কর”

মানুষের তৈরি উপাসনা বস্তুর অকার্যকারিতা সম্বন্ধে বর্ণনা করার পর গীতরচক বলেছিলেন: “যেমন তাহারা, তেমনি হইবে তাহাদের নির্ম্মাতারা, আর যে কেহ সেগুলিতে নির্ভর করে।” (গীতসংহিতা ১১৫:৪-৮) তাই, যেসব চাকরি সরাসরি উপাস্য বস্তু তৈরির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত যার মধ্যে জাতীয় পতাকাও রয়েছে, সেইসব চাকরি যিহোবার উপাসকদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। (১ যোহন ৫:২১) অন্যান্য চাকরির পরিবেশও সেইরকম হলে খ্রীষ্টানরা সম্মানের সঙ্গে দেখায় যে, তারা পতাকা বা এর কোন প্রতীককে উপাসনা করে না বরং একমাত্র যিহোবাকেই করে।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, একজন মালিক হয়তো একজন কর্মচারীকে বিল্ডিংয়ে প্রদর্শিত পতাকাকে উত্তোলন বা নামানোর জন্য বলতে পারেন। একজন ব্যক্তি এটা করবেন কি না, সেটা পরিস্থিতির প্রতি তার ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গির ওপর নির্ভর করে। যদি পতাকা ওঠানামা করা বিশেষ কোন অনুষ্ঠানের অংশ হয়, যেখানে লোকেরা সোজাভাবে দাঁড়িয়ে আছে বা পতাকাকে অভিবাদন করছে, তা হলে এইধরনের কাজ করার অর্থ হবে সেই অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া।

অন্যদিকে, পতাকা উত্তোলন বা নামানোর সঙ্গে যদি কোন অনুষ্ঠান জড়িত না থাকে, তা হলে এই কাজগুলো বিল্ডিংকে ব্যবহারোপযোগী করার মতো কাজগুলো করা, যেমন দরজা খোলা বা আটকে দেওয়া এবং জানালা খোলা বা বন্ধ করার মতোই কাজ হবে। এইধরনের পরিস্থিতিতে পতাকা শুধুমাত্র দেশের একটা প্রতীক আর এটা ওঠানো ও নামানো অন্যান্য রোজকার কার্যতালিকার সঙ্গে যুক্ত, যেটা একজন ব্যক্তি তার বাইবেল শিক্ষিত বিবেকের পরিচালনায় ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নেবেন যে, তিনি তা করবেন কি না। (গালাতীয় ৬:৫) একজন ব্যক্তি হয়তো বিবেকের দ্বারা চালিত হয়ে তার তত্ত্বাবধায়ককে অনুরোধ করতে পারেন, যাতে অন্য কোন কর্মচারী পতাকা ওঠানো ও নামানোর কাজটা করেন। আবার অন্য একজন খ্রীষ্টান হয়তো মনে করতে পারেন যে, যতক্ষণ পর্যন্ত এর সঙ্গে কোন অনুষ্ঠান জড়িত নেই, ততক্ষণ পর্যন্ত তার বিবেক তাকে পতাকার সঙ্গে যুক্ত কাজগুলো করতে বাধা দেয় না। যেকোন সিদ্ধান্তই সত্য খ্রীষ্টানরা নিক না কেন, ঈশ্বরের সামনে ‘সৎসংবেদ রক্ষা করতে’ হবে।—১ পিতর ৩:১৫.

জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়ে থাকে এমন গণভবনগুলোতে যেমন মিউনিসিপ্যাল অফিস এবং স্কুলগুলোতে কাজ করা বা থাকার বিষয়ে শাস্ত্রীয় কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। বিভিন্ন ডাকটিকেটে, গাড়ির লাইসেন্সে বা অন্যান্য সরকারি জিনিসগুলোতে পতাকার ছবি থাকতে পারে। এইধরনের জিনিসগুলো ব্যবহার করা দেখায় না যে, ব্যক্তিরা কোন ভক্তিমূলক কাজে অংশ নিচ্ছে। এখানে উল্লেখযোগ্য বিষয়টা হল পতাকা বা এর প্রতিকৃতির উপস্থিতি নয়, কিন্তু একজন এটার প্রতি যে-কাজগুলো করে সেটা।

পতাকা প্রায়ই বিভিন্ন জানালা, দরজা, মোটর গাড়ি, ডেস্ক বা অন্যান্য কিছু জায়গায় প্রদর্শন করা হয়। কাপড়ের ওপর নকশা করা ছাপানো পতাকা কিনতে পাওয়া যায়। কিছু দেশে এইধরনের নকশা করা কাপড় পরা বেআইনি। এইরকম কাপড় পরায় আইনের লঙ্ঘন যদি না-ও হয়, তবুও জগতের ক্ষেত্রে একজন ব্যক্তির আপেক্ষিক অবস্থান সম্বন্ধে এটা কী ইঙ্গিত করবে? যীশু খ্রীষ্ট তাঁর শিষ্যদের সম্বন্ধে বলেছিলেন: “তাহারা জগতের নয়, যেমন আমিও জগতের নই।” (যোহন ১৭:১৬) এইধরনের পদক্ষেপ সহ বিশ্বাসীদের ওপর কী প্রভাব ফেলবে সেটাও উপেক্ষা করা যায় না। এটা কি কারও বিবেক দংশনের কারণ হতে পারে? বিশ্বাসে অটল থাকার বিষয়ে তাদের সংকল্পকে কি দুর্বল করে দিতে পারে? পৌল খ্রীষ্টানদের পরামর্শ দিয়েছিলেন: “যাহা যাহা ভিন্ন প্রকার [“বেশি গুরুত্বপূর্ণ,” NW], তাহা পরীক্ষা করিয়া চিনিতে পার, খ্রীষ্টের দিন পর্য্যন্ত যেন তোমরা সরল ও বিঘ্নরহিত থাক।”—ফিলিপীয় ১:১০.

“সকলের প্রতি কোমল”

এই ‘বিষম সময়ে’ জগৎ পরিস্থিতি মন্দ থেকে মন্দতর হচ্ছে, দেশাত্মাবোধের অনুভূতি আরও তীব্র হচ্ছে। (২ তীমথিয় ৩:১) ঈশ্বরকে যারা ভালবাসে তারা যেন এটা ভুলে না যায় যে, পরিত্রাণ একমাত্র যিহোবারই কাছে। তিনিই একাগ্র ভক্তি পাওয়ার যোগ্য। যিহোবার ইচ্ছার বিপরীতে যখন কিছু চাওয়া হয়েছিল, তখন যীশুর প্রেরিতরা বলেছিল: “মনুষ্যদের অপেক্ষা বরং ঈশ্বরের আজ্ঞা পালন করিতে হইবে।”—প্রেরিত ৫:২৯.

প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: ‘যুদ্ধ করা প্রভুর দাসের উপযুক্ত নহে; কিন্তু সকলের প্রতি কোমল হওয়া উচিত।’ (২ তীমথিয় ২:২৪, ২৫) এইভাবে খ্রীষ্টানরা পতাকা অভিবাদন ও জাতীয় সংগীত গাওয়ার ব্যাপারে বাইবেল শিক্ষিত বিবেকের ওপর নির্ভর করে ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তগুলো নেওয়ার সময় যতটা সম্ভব শান্তিপ্রিয়, সম্মানপূর্ণ এবং কোমল হওয়ার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করে।

[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

দৃঢ় অথচ সম্মানের সঙ্গে তিনজন ইব্রীয় ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করা বেছে নিয়েছিল

[২৪ পৃষ্ঠার চিত্র]

দেশাত্মবোধক অনুষ্ঠানের সময়ে একজন খ্রীষ্টানের কেমন আচরণ করা উচিত?

    বাংলা প্রকাশনা (১৯৮৯-২০২৬)
    লগ আউট
    লগ ইন
    • বাংলা
    • শেয়ার
    • পছন্দসমূহ
    • Copyright © 2025 Watch Tower Bible and Tract Society of Pennsylvania
    • ব্যবহারের শর্ত
    • গোপনীয়তার নীতি
    • গোপনীয়তার সেটিং
    • JW.ORG
    • লগ ইন
    শেয়ার