ওয়াচটাওয়ার অনলাইন লাইব্রেরি
ওয়াচটাওয়ার
অনলাইন লাইব্রেরি
বাংলা
  • বাইবেল
  • প্রকাশনাদি
  • সভা
  • w০৩ ৮/১৫ পৃষ্ঠা ৪-৮
  • কেউ কেউ যেভাবে স্মরণীয় হয়ে থাকে

এই বাছাইয়ের সঙ্গে কোনো ভিডিও প্রাপ্তিসাধ্য নেই।

দুঃখিত, ভিডিওটা চালানো সম্বভব হচ্ছে না।

  • কেউ কেউ যেভাবে স্মরণীয় হয়ে থাকে
  • ২০০৩ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • উপশিরোনাম
  • অনুরূপ বিষয়বস্ত‌ু
  • অবীগল—এক দূরদর্শী মহিলা
  • পিতর কোন নথি রেখে গেছেন?
  • যিশুর সম্বন্ধে লোকেরা কী স্মরণে রেখেছে?
  • মহিলাদের প্রতি যিশুর সমবেদনা
  • আধুনিক দিনের খ্রিস্টানরা কীভাবে স্মরণীয় হয়ে আছে?
  • তিনি বিচক্ষণতার সঙ্গে পদক্ষেপ নিয়েছিলেন
    ২০১০ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • অবীগল ও দায়ূদ
    আমার বাইবেলের গল্পের বই
  • তিনি বিচক্ষণতার সঙ্গে পদক্ষেপ নিয়েছিলেন
    তাদের বিশ্বাস অনুকরণ করুন
  • এক বিচক্ষণ নারী বিপর্যয়কে সরিয়ে নেন
    ১৯৯৭ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
আরও দেখুন
২০০৩ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
w০৩ ৮/১৫ পৃষ্ঠা ৪-৮

কেউ কেউ যেভাবে স্মরণীয় হয়ে থাকে

প্রায় তিন হাজার বছর আগে, দায়ূদ ইস্রায়েলের রাজা শৌলের কাছ থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন। একজন ধনী পশুপালক নাবলের কাছে দায়ূদ খাবার ও জল চেয়ে পাঠিয়েছিলেন। আসলে, দায়ূদ ও তার অনুসারীদের প্রতি নাবল অনুগ্রহ দেখানোর জন্য ঋণী ছিলেন কারণ তারা নাবলের পশুপালকে রক্ষা করেছিল। কিন্তু, নাবল কোনোরকম আতিথেয়তা দেখাতে অস্বীকার করেছিলেন। এমনকি তিনি দায়ূদের লোকেদের প্রতি চিৎকার করে ভর্ৎসনা করেছিলেন। নাবল আগুন নিয়ে খেলা করছিলেন, কারণ দায়ূদ তুচ্ছ হওয়ার পাত্র ছিলেন না।—১ শমূয়েল ২৫:৫, ৮, ১০, ১১, ১৪.

নাবলের মনোভাব অতিথি ও অপরিচিতদের প্রতি আতিথেয়তা দেখানোর বিষয়ে মধ্যপ্রাচ্যের প্রথার একেবারে বিপরীত ছিল। সুতরাং, নাবল নিজের জন্য কী ধরনের নাম অর্জন করেছিলেন? বাইবেলের বিবরণ বলে যে, তিনি “কঠিন ও দুর্বৃত্ত” এবং “পাষণ্ড” ছিলেন। তার নামের অর্থ হল “মূর্খ” আর নিঃসন্দেহে তিনি সেই গুণগুলোই দেখিয়েছিলেন। (১ শমূয়েল ২৫:৩, ১৭, ২৫) আপনি কি সেইভাবে স্মরণীয় হয়ে থাকতে চান? অন্যদের সঙ্গে আচরণের সময় আপনি কি রূঢ় এবং কঠিন হন, বিশেষ করে যদি দেখা যায় যে, তারা খারাপ অবস্থায় আছে? নাকি আপনি দয়ালু, অতিথিপরায়ণ এবং বিবেচক?

অবীগল—এক দূরদর্শী মহিলা

নাবল তার রূঢ় মনোভাবের জন্য সমস্যায় পড়েছিলেন। দায়ূদ ও তার ৪০০ জন সঙ্গী তাদের অস্ত্র নিয়ে সজ্জিত হয়েছিল এবং নাবলকে এক উপযুক্ত শিক্ষা দেবে বলে তৈরি হয়েছিল। কী ঘটতে চলেছে তা নাবলের স্ত্রী, অবীগল জানতে পেরেছিলেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, এক লড়াই ঘটতে চলেছে। তিনি কী করতে পারতেন? তিনি তাড়াতাড়ি করে নানারকমের প্রচুর খাবার প্রস্তুত করেন এবং দায়ূদ ও তার লোকেদের থামানোর জন্য বেরিয়ে পড়েন। তিনি যখন তাদের দেখা পান, তখন দায়ূদকে অকারণে রক্তপাত না ঘটাতে অনুরোধ করেন। দায়ূদের হৃদয় নরম হয়। দায়ূদ তার অনুরোধ শোনেন এবং কোমল হন। এই ঘটনাগুলোর অল্প কিছুদিন পরেই, নাবল মারা যান। এরপর, অবীগলের ভাল গুণগুলোকে উপলব্ধি করে দায়ূদ তাকে তার স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করেন।—১ শমূয়েল ২৫:১৪-৪২.

অবীগল তার নিজের জন্য কী ধরনের সুনাম অর্জন করেছিলেন? মূল ইব্রীয় ভাষায় যেমন প্রকাশ করা হয়েছে, তিনি “সুবুদ্ধি” ছিলেন। তিনি স্পষ্টতই বিচক্ষণ ও বাস্তবধর্মী বুদ্ধিসম্পন্না ছিলেন এবং জানতেন যে কীভাবে ও কখন নিজে থেকে এগিয়ে যেতে হবে। তিনি তার মূর্খ স্বামী ও তার পরিবারকে দুর্দশার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য আনুগত্যের সঙ্গে কাজ করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত তিনি মারা গিয়েছিলেন কিন্তু এক উল্লেখযোগ্য সুনাম নিয়ে দূরদর্শী একজন মহিলা হিসেবে।—১ শমূয়েল ২৫:৩.

পিতর কোন নথি রেখে গেছেন?

আসুন আমরা সা.কা. প্রথম শতাব্দীতে ফিরে যাই এবং যিশুর ১২ জন প্রেরিতের বিষয় বিবেচনা করি। নিঃসন্দেহে সবচেয়ে বেশি খোলামেলা এবং আবেগপ্রবণ ব্যক্তিটি ছিলেন পিতর অথবা কৈফা, গালীলের একজন প্রাক্তন জেলে। স্পষ্টতই তিনি একজন কর্মশক্তিপূর্ণ ব্যক্তি ছিলেন, যিনি তার অনুভূতিগুলো প্রকাশ করতে ভয় পেতেন না। উদাহরণস্বরূপ, একবার যিশু তাঁর শিষ্যদের পা ধুইয়ে দিয়েছিলেন। যখন তার পা ধোয়ানোর পালা এসেছিল, তখন পিতর কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন?

পিতর যিশুকে বলেছিলেন: “প্রভু, আপনি কি আমার পা ধুইয়া দিবেন?” উত্তরে যিশু বলেছিলেন: “আমি যাহা করিতেছি, তাহা তুমি এক্ষণে জান না, কিন্তু ইহার পরে বুঝিবে।” পিতর উত্তর দিয়েছিলেন: “আপনি কখনও আমার পা ধুইয়া দিবেন না।” পিতরের জোরালো অথচ আবেগপ্রবণ প্রতিক্রিয়া লক্ষ করুন। যিশু কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন?

“যদি তোমাকে ধৌত না করি,” যিশু উত্তর দিয়েছিলেন, “তবে আমার সহিত তোমার কোন অংশ নাই।” শিমোন পিতর তাঁকে বলেছিলেন: “প্রভু, কেবল পা নয়, আমার হাত ও মাথাও ধুইয়া দিউন।” এখন পিতর অন্যভাবে মাত্রা ছাড়িয়ে যান! কিন্তু পিতরের মনোভাব কেমন সেই সম্বন্ধে লোকেরা জানত। তার মধ্যে কোনো ছলনা ছিল না।—যোহন ১৩:৬-৯.

এ ছাড়া, পিতর তার মানব দুর্বলতাগুলোর জন্যও স্মরণীয় হয়ে আছেন। উদাহরণস্বরূপ, যে-লোকেরা তাকে নাসরতের অপরাধী বলে গণ্য যিশুর একজন অনুসারী বলে অভিযুক্ত করেছিল, তাদের সামনে তিনি তিনবার খ্রিস্টকে অস্বীকার করেছিলেন। পিতর যখন তার ভুল বুঝতে পেরেছিলেন, তখন তিনি খুব কেঁদেছিলেন। তিনি তার দুঃখ এবং অনুশোচনাকে প্রকাশ করতে ভয় পাননি। এ ছাড়া, এটাও তাৎপর্যপূর্ণ যে পিতরের এই অস্বীকার করার বিবরণ সুসমাচার লেখকেরা লিপিবদ্ধ করেছেন—খুব সম্ভবত পিতর নিজেই সেই তথ্য জুগিয়েছিলেন! তার ব্যর্থতাগুলোকে স্বীকার করার ব্যাপারে তিনি যথেষ্ট নম্র ছিলেন। আপনার মধ্যে কি সেই সদ্‌গুণ আছে?—মথি ২৬:৬৯-৭৫; মার্ক ১৪:৬৬-৭২; লূক ২২:৫৪-৬২; যোহন ১৮:১৫-১৮, ২৫-২৭.

খ্রিস্টকে অস্বীকার করার কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই, পিতর পবিত্র আত্মায় পূর্ণ হয়ে পঞ্চাশত্তমীর দিনে বহু সংখ্যক যিহুদির কাছে সাহসের সঙ্গে প্রচার করেছিলেন। এটা ছিল একটা নিশ্চিত ইঙ্গিত যে, তার ওপর পুনরুত্থিত যিশুর আস্থা রয়েছে।—প্রেরিত ২:১৪-২১.

আরেকবার, পিতর ভিন্ন একটা ফাঁদে পড়েছিলেন। প্রেরিত পৌল ব্যাখ্যা করেছিলেন যে, আন্তিয়খিয়ায় বিশেষ কয়েকজন যিহুদি ভাইয়ের আগমনের পূর্বে পিতর খোলাখুলিভাবে পরজাতীয় বিশ্বাসীদের সঙ্গে মেলামেশা করতেন। কিন্তু, যারা সবেমাত্র যিরূশালেম থেকে এসেছিল সেই “ছিন্নত্বক্‌দের ভয়ে” তিনি পরজাতীয় বিশ্বাসীদের থেকে নিজেকে পৃথক করেছিলেন। পৌল পিতরের দ্বৈত মানকে প্রকাশ করে দিয়েছিলেন।—গালাতীয় ২:১১-১৪.

তা সত্ত্বেও, শিষ্যদের মধ্যে কে এক সংকটপূর্ণ মুহূর্তে সাহসের সঙ্গে কথা বলেছিলেন, যখন স্পষ্টতই যিশুর অনুসারীদের মধ্যে অনেকেই তাঁকে পরিত্যাগ করতে প্রস্তুত ছিল? উপলক্ষটি ছিল সেই সময় যখন যিশু তাঁর মাংস খাওয়া এবং তাঁর রক্ত পান করার তাৎপর্য সম্বন্ধে নতুন কিছু প্রকাশ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “তোমরা যদি মনুষ্যপুত্ত্রের মাংস ভোজন ও তাঁহার রক্ত পান না কর, তোমাদিগেতে জীবন নাই।” যিশুর অধিকাংশ যিহুদি অনুসারী বিঘ্ন পেয়েছিল এবং বলেছিল: “এ কঠিন কথা, কে ইহা শুনিতে পারে?” এরপর কী হয়েছিল? “ইহাতে তাঁহার অনেক শিষ্য পিছাইয়া পড়িল, তাঁহার সঙ্গে আর যাতায়াত করিল না।”—যোহন ৬:৫০-৬৬.

এই সংকটময় মুহূর্তে, যিশু সেই ১২ জন প্রেরিতের দিকে তাকান এবং এই মর্মভেদী প্রশ্নটি জিজ্ঞেস করেন: “তোমরাও কি চলিয়া যাইতে ইচ্ছা করিতেছে?” পিতর উত্তর দিয়েছিলেন: “প্রভু কাহার কাছে যাইব? আপনার নিকটে অনন্ত জীবনের কথা আছে; আর আমরা বিশ্বাস করিয়াছি এবং জ্ঞাত হইয়াছি যে, আপনিই ঈশ্বরের সেই পবিত্র ব্যক্তি।”—যোহন ৬:৬৭-৬৯.

পিতর কী ধরনের সুনাম অর্জন করেছিলেন? যে-ব্যক্তি তার বিবরণগুলো পড়েন তিনি নিশ্চয়ই তার সততা ও তার অকপট ব্যক্তিত্ব, তার আনুগত্য এবং তার নিজস্ব দুর্বলতাগুলো স্বীকার করার ব্যাপারে তার ইচ্ছুক মনোভাবে মুগ্ধ না হয়ে পারেন না। নিজের জন্য কত উত্তম নামই না তিনি অর্জন করেছিলেন!

যিশুর সম্বন্ধে লোকেরা কী স্মরণে রেখেছে?

যিশুর পার্থিব জীবন মাত্র সাড়ে তিন বছর স্থায়ী ছিল। কিন্তু, তাঁর অনুসারীরা কীভাবে তাঁকে স্মরণে রেখেছে? তিনি সিদ্ধ, নিষ্পাপ ছিলেন বলে কি উদাসীন বা গম্ভীর প্রকৃতির ছিলেন? যেহেতু তিনি জানতেন যে তিনি ছিলেন ঈশ্বরের পুত্র, তাই তিনি কি তাঁর কর্তৃত্বকে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করেছিলেন? বাধ্য হওয়ার জন্য তিনি কি তাঁর অনুসারীদের ভয় দেখিয়েছিলেন এবং জোর করেছিলেন? তিনি কি নিজের ভাবমূর্তি সম্বন্ধে এতটাই চিন্তিত ছিলেন যে, তিনি কৌতুকরসবোধ হারিয়ে ফেলেছিলেন? তিনি কি এতই ব্যস্ত ছিলেন যে, দুর্বল এবং পীড়িত অথবা বাচ্চাদের জন্য তাঁর কোনো সময় ছিল না? তিনি কি অন্যান্য জাতির লোক এবং স্ত্রীলোকেদের ছোট করে দেখতেন, যেমনটা সেই সময়ের পুরুষরা প্রায়ই দেখে থাকত? বিবরণ আমাদের কী জানায়?

যিশু লোকেদের সম্বন্ধে আগ্রহী ছিলেন। তাঁর পরিচর্যা সম্বন্ধে অধ্যয়ন প্রকাশ করে যে, তিনি অনেকবার খঞ্জ ও অসুস্থদের সুস্থ করেছিলেন। অভাবগ্রস্তদের সাহায্য করার জন্য তিনি নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি ছোট বাচ্চাদের প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছিলেন, তাঁর শিষ্যদের এই বলে শিক্ষা দিয়েছিলেন: “শিশুদিগকে আমার নিকটে আসিতে দেও, বারণ করিও না।” তারপর যিশু “তাহাদিগকে কোলে করিলেন, ও তাহাদের উপরে হস্তার্পণ করিয়া আশীর্ব্বাদ করিলেন।” আপনি কি বাচ্চাদের জন্য সময় করে নেন, নাকি এতই ব্যস্ত যে এমনকি তাদের উপস্থিতি পর্যন্ত আপনার নজরে পড়ে না?—মার্ক ১০:১৩-১৬; মথি ১৯:১৩-১৫.

যিশু যখন পৃথিবীতে ছিলেন, তখন যিহুদি লোকেরা ধর্মীয় নিয়মকানুনের বেড়াজালে ভারাক্রান্ত ছিল, যা ব্যবস্থার চাহিদাগুলোকেও ছাড়িয়ে গিয়েছিল। তাদের ধর্মীয় নেতারা লোকেদের ওপর ভারী বোঝা চাপিয়ে দিয়েছিল অথচ তারা নিজেরা তাদের আঙুল দিয়েও তা সরাতো না। (মথি ২৩:৪; লূক ১১:৪৬) অন্যদিকে, যিশু কতই না আলাদা ছিলেন! তিনি বলেছিলেন: “হে পরিশ্রান্ত ও ভারাক্রান্ত লোক সকল, আমার নিকটে আইস, আমি তোমাদিগকে বিশ্রাম দিব [“সতেজ করব,” NW]।”—মথি ১১:২৮-৩০.

লোকেরা যিশুর সঙ্গে মেলামেশা করে সতেজ হতো। তিনি তাঁর শিষ্যদেরকে এমনভাবে ভয় দেখাননি যে, তারা নিজেদেরকে প্রকাশ করতে ভয় পেত। বস্তুত, তাদের মনের কথা প্রকাশ করার জন্য তিনি বিভিন্ন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতেন। (মার্ক ৮:২৭-২৯) খ্রিস্টীয় অধ্যক্ষদের নিজেদেরকে এই প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করা উচিত: ‘সহ বিশ্বাসীদের ওপর আমি কি সেই একইরকম প্রভাব ফেলি? অন্যান্য প্রাচীনরা কি সত্যিই তাদের মতামত আমাকে জানায়, নাকি তারা তা জানাতে ইতস্তত করে?’ অধ্যক্ষরা যখন সহজগম্য হয়, অন্যদের কথা শোনে এবং নমনীয় হয়, তখন তা কতই না সতেজতাদায়ক হয়! অযৌক্তিকতা খোলাখুলি ও স্বচ্ছন্দ আলোচনাকে কেবল নিরুৎসাহিত করে।

যিশু যদিও ঈশ্বরের পুত্র ছিলেন, তিনি কখনও তাঁর ক্ষমতা ও কর্তৃত্বকে অপব্যবহার করেননি। বরং, তিনি তাঁর শ্রোতাদের সঙ্গে যুক্তি করতেন। এরকমই একটা ঘটনা ঘটেছিল যখন ফরীশীরা এই ধূর্ত প্রশ্নটির দ্বারা তাঁকে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করেছিল: “কৈসরকে কর দেওয়া বিধেয় কি না?” যিশু তাদেরকে একটা মুদ্রা দেখাতে বলেছিলেন এবং জিজ্ঞেস করেছিলেন: “এই মূর্ত্তি ও এই নাম কাহার?” তারা উত্তর দিয়েছিল: “কৈসরের।” তারপর তিনি তাদের বলেছিলেন: “তবে কৈসরের যাহা যাহা, কৈসরকে দেও, আর ঈশ্বরের যাহা যাহা, ঈশ্বরকে দেও।” (মথি ২২:১৫-২১) সাধারণ যুক্তিই যথেষ্ট ছিল।

যিশুর কি কোনো কৌতুকরসবোধ ছিল? কোনো কোনো পাঠক এই অংশটি পড়ার সময় কিছুটা কৌতুকরসবোধের আভাস পায়, যেখানে যিশু বলেছিলেন যে ঈশ্বরের রাজ্যে একজন ধনী ব্যক্তির প্রবেশ করার চেয়ে বরং সূচের ছিদ্র দিয়ে একটা উটের যাওয়া সহজ। (মথি ১৯:২৩, ২৪) সেলাই করার একটা আক্ষরিক সূচের ছিদ্র দিয়ে উটের যাওয়ার চেষ্টা করার ধারণাটি অতিরঞ্জন। এরকম অতিরঞ্জনের আরেকটা উদাহরণ হল যে, নিজের চোখে যে-কড়িকাট আছে তা না দেখে একজন ভাইয়ের চোখে যে-কুটা আছে, তা দেখা। (লূক ৬:৪১, ৪২) না, যিশু একজন কঠোর নিয়মনিষ্ঠ ব্যক্তি ছিলেন না। তিনি আন্তরিক এবং বন্ধুত্বপূর্ণ ছিলেন। আজকে খ্রিস্টানদের জন্য কৌতুকরসবোধ চাপের সময় বিষণ্ণতা হ্রাস করতে পারে।

মহিলাদের প্রতি যিশুর সমবেদনা

যিশুর উপস্থিতিতে স্ত্রীলোকেরা কেমন অনুভব করত? কোনো সন্দেহ নেই যে, তাঁর অনেক অনুগত মহিলা অনুসারী ছিল, যাদের মধ্যে তাঁর নিজের মা মরিয়মও ছিলেন। (লূক ৮:১-৩; ২৩:৫৫, ৫৬; ২৪:৯, ১০) মহিলারা যিশুর কাছে আসতে এতটাই স্বচ্ছন্দবোধ করেছিল যে, একবার এক “পাপিষ্ঠা” মহিলা তার চোখের জল দিয়ে যিশুর পা ধুইয়ে দিয়েছিলেন এবং সুগন্ধি তেল মাখিয়ে দিয়েছিলেন। (লূক ৭:৩৭, ৩৮) আরেকজন মহিলা, যিনি অনেক বছর ধরে রক্তস্রাবে ভুগছিলেন, তিনি সুস্থ হওয়ার জন্য জনতার মধ্যে দিয়ে গিয়ে তাঁর বস্ত্র স্পর্শ করেছিলেন। যিশু তার বিশ্বাসের প্রশংসা করেছিলেন। (মথি ৯:২০-২২) হ্যাঁ, মহিলারা দেখেছিল যে, যিশুর কাছে আসা সহজ।

আরেকবার, যিশু একটা কুয়োর ধারে একজন শমরীয়া মহিলার সঙ্গে কথা বলেছিলেন। এতে মহিলাটি এতটাই অবাক হয়েছিলেন যে তিনি বলেছিলেন: “আপনি যিহূদী হইয়া কেমন করিয়া আমার কাছে পান করিবার জল চাহিতেছেন? আমি ত শমরীয় স্ত্রীলোক।” আপনি দেখতে পাচ্ছেন যে, যিহুদি ও শমরীয়দের মধ্যে কোনো সম্পর্ক ছিল না। কিন্তু যিশু তাকে ‘অনন্ত জীবন পর্য্যন্ত উথলিয়া উঠিবে এমন জল’ সম্বন্ধে এক অপূর্ব সত্য শিক্ষা দিয়েছিলেন। তিনি মহিলাদের সঙ্গে সহজ স্বাভাবিক বোধ করতেন। তিনি এমন মনে করেননি যে তাঁর পদমর্যাদা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে।—যোহন ৪:৭-১৫.

যিশু তাঁর আত্মত্যাগমূলক মনোভাব সহ তাঁর মানবীয় অনেক গুণের জন্য স্মরণীয় হয়ে আছেন। তিনি ছিলেন ঈশ্বরীয় প্রেমের মূর্ত প্রতীক। যারা তাঁর অনুসারী হতে চায় তাদের সকলের জন্য তিনি মান স্থাপন করেছেন। কতখানি নিখুঁতভাবে আপনি তাঁর উদাহরণ অনুসরণ করেন?—১ করিন্থীয় ১৩:৪-৮; ১ পিতর ২:২১.

আধুনিক দিনের খ্রিস্টানরা কীভাবে স্মরণীয় হয়ে আছে?

আধুনিক সময়ে, হাজার হাজার বিশ্বস্ত খ্রিস্টানরা মারা গেছে, অনেকেই বৃদ্ধ বয়সে, অন্যেরা তুলনামূলকভাবে কম বয়সে। কিন্তু তারা পশ্চাতে এক সুনাম রেখে গেছে। ক্রিস্টেল, যিনি বৃদ্ধ বয়সে মারা গেছেন, তার মতো কেউ কেউ তাদের ভালবাসা ও সঙ্গপ্রিয় স্বভাবের জন্য স্মরণীয় হয়ে আছে। অন্যেরা ডার্কের মতো যিনি ৪০ এর কোঠায় মারা গিয়েছেন কিন্তু হাসিখুশি এবং ইচ্ছুক মনোভাবের জন্য স্মরণীয় হয়ে আছেন।

এরপর স্পেন থেকে আসা হোসের কথা চিন্তা করুন। ১৯৬০ এর দশকে, সেই দেশে যখন যিহোবার সাক্ষিদের প্রচার কাজের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল, তখন হোসে বিবাহিত ছিলেন ও তার তিনটে অল্পবয়সী মেয়ে ছিল। বার্সিলোনাতে তার ভাল এক চাকরি ছিল। কিন্তু সেই সময়, দক্ষিণ স্পেনে পরিপক্ব খ্রিস্টান প্রাচীনদের দরকার ছিল। হোসে তার ভাল চাকরিটা ছেড়ে দেন এবং তার পরিবার নিয়ে ম্যালাগাতে চলে আসেন। প্রায়ই চাকরি না থাকায় তাদেরকে আর্থিক কষ্টের মধ্যে দিয়ে বেঁচে থাকতে হয়েছিল।

কিন্তু, হোসে পরিচর্যায় তার বিশ্বস্ত, নির্ভরযোগ্য উদাহরণ এবং তার মেয়েদেরকে উদাহরণযোগ্য হিসেবে মানুষ করে তোলার জন্য পরিচিত ছিলেন, যা তিনি তার সহযোগী স্ত্রী কারমেলার সাহায্যে করতে পেরেছিলেন। সেই অঞ্চলে খ্রিস্টীয় সম্মেলনগুলোকে সংগঠিত করার জন্য যখনই কারও দরকার পড়ত, হোসেকে সবসময় পাওয়া যেত। দুঃখের বিষয় যে, তার বয়স যখন ৫০ এর কোঠায়, তখন তিনি গুরুতরভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন যা তার মৃত্যুর কারণ হয়। কিন্তু, তিনি একজন নির্ভরযোগ্য, পরিশ্রমী প্রাচীন এবং প্রেমময় স্বামী ও বাবা হিসেবে সুনাম রেখে গেছেন।

তাই, আপনি কীভাবে স্মরণীয় হবেন? আপনি যদি গতকাল মারা যেতেন, তা হলে আজকে লোকেরা আপনার সম্বন্ধে কী বলতো? এটা এমনই একটা প্রশ্ন যা আমাদের সকলকে আমরা যেভাবে কাজ করি, তাতে উন্নতি করতে প্রেরণা দেবে।

সুনাম অর্জন করার জন্য আমরা কী করতে পারি? আমরা সবসময়ই অন্যদের প্রতি আত্মার ফল—প্রেম, দীর্ঘসহিষ্ণুতা, মাধুর্য্য, মৃদুতা, ইন্দ্রিয়দমন—দেখানোর ক্ষেত্রে উন্নতি করতে পারি। (গালাতীয় ৫:২২, ২৩) হ্যাঁ, নিশ্চিতভাবেই “উৎকৃষ্ট তৈল অপেক্ষা সুখ্যাতি ভাল, এবং জন্মদিন অপেক্ষা মরণদিন ভাল।”—উপদেশক ৭:১; মথি ৭:১২.

[৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

অবীগলের দূরদর্শিতার জন্য তাকে স্মরণ করা হয়

[৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

পিতরের আবেগপ্রবণ অথচ সৎ ব্যক্তিত্বের জন্য তাকে স্মরণ করা হয়

[৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

যিশু শিশুদের জন্য সময় করে নিয়েছিলেন

    বাংলা প্রকাশনা (১৯৮৯-২০২৬)
    লগ আউট
    লগ ইন
    • বাংলা
    • শেয়ার
    • পছন্দসমূহ
    • Copyright © 2025 Watch Tower Bible and Tract Society of Pennsylvania
    • ব্যবহারের শর্ত
    • গোপনীয়তার নীতি
    • গোপনীয়তার সেটিং
    • JW.ORG
    • লগ ইন
    শেয়ার