ওয়াচটাওয়ার অনলাইন লাইব্রেরি
ওয়াচটাওয়ার
অনলাইন লাইব্রেরি
বাংলা
  • বাইবেল
  • প্রকাশনাদি
  • সভা
  • w০৪ ৮/১৫ পৃষ্ঠা ২২-২৬
  • ক্লান্ত কিন্তু ক্লান্তিতে অবসন্ন নয়

এই বাছাইয়ের সঙ্গে কোনো ভিডিও প্রাপ্তিসাধ্য নেই।

দুঃখিত, ভিডিওটা চালানো সম্বভব হচ্ছে না।

  • ক্লান্ত কিন্তু ক্লান্তিতে অবসন্ন নয়
  • ২০০৪ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • উপশিরোনাম
  • অনুরূপ বিষয়বস্ত‌ু
  • খ্রিস্টধর্ম পীড়নকর নয়
  • ‘সমস্ত বোঝা ফেলিয়া দেও’
  • যুক্তিবাদিতা এবং বিনয় আবশ্যক
  • যিহোবা ঈশ্বর আমাদের কর্মশক্তিসম্পন্ন করেন
  • হাল ছেড়ে দেবেন না
  • প্রলোভনের সঙ্গে লড়াই এবং নিরুৎসাহিতার সঙ্গে সফলভাবে মোকাবিলা করার জন্য শক্তি লাভ করা
    ২০১১ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • নিরুৎসাহিত হলে কী করা যেতে পারে?
    ১৯৯৯ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • যেভাবে আপনি নিরুৎসাহিতার সঙ্গে লড়াই করতে পারেন
    প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য সম্বন্ধে ঘোষণা করে (অধ্যয়ন)—২০২০
  • যিহোবা ক্লান্ত ব্যক্তিকে শক্তি দেন
    ২০০০ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
আরও দেখুন
২০০৪ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
w০৪ ৮/১৫ পৃষ্ঠা ২২-২৬

ক্লান্ত কিন্তু ক্লান্তিতে অবসন্ন নয়

“সদাপ্রভু, পৃথিবীর প্রান্ত সকলের সৃষ্টিকর্ত্তা . . . ক্লান্ত ব্যক্তিকে শক্তি দেন, ও শক্তিহীন লোকের বল বৃদ্ধি করেন।”—যিশাইয় ৪০:২৮, ২৯.

১, ২. (ক) যারা বিশুদ্ধ উপাসনা করে যেতে চায়, তাদের কোন হৃদয়গ্রাহী আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে? (খ) কী আমাদের আধ্যাত্মিকতাকে গুরুতর বিপদের মুখে ফেলতে পারে?

যিশুর শিষ্য হিসেবে আমরা তাঁর এই হৃদয়গ্রাহী আমন্ত্রণ সম্বন্ধে খুব ভালভাবেই জানি: “হে পরিশ্রান্ত ও ভারাক্রান্ত লোক সকল, আমার নিকটে আইস, আমি তোমাদিগকে বিশ্রাম [“সতেজতা,” NW] দিব। . . . কারণ আমার যোঁয়ালি সহজ ও আমার ভার লঘু।” (মথি ১১:২৮-৩০) এ ছাড়াও, খ্রিস্টানদের ‘প্রভু [“যিহোবা,” NW] হইতে তাপশান্তির সময়’ বা সতেজতা প্রদান করা হয়। (প্রেরিত ৩:২০) নিশ্চিতভাবেই, আপনি বাইবেলের সত্যগুলো শেখার সতেজতাদায়ক প্রভাবগুলো সম্বন্ধে সরাসরি অভিজ্ঞতা লাভ করেছেন, ভবিষ্যতের জন্য আপনার এক উজ্জ্বল আশা রয়েছে এবং যিহোবার নীতিগুলো আপনার জীবনে কাজে লাগাচ্ছেন।

২ কিন্তু, যিহোবার কিছু উপাসক একের পর এক আবেগগত ক্লান্তি ভোগ করে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে, নিরুৎসাহিতার এই পালা সংক্ষিপ্ত হয়। আবার অন্যান্য সময় ক্লান্তিকর অনুভূতি দীর্ঘসময় ধরে থাকে। সময় বয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কেউ কেউ মনে করতে পারে যে, তাদের খ্রিস্টীয় দায়িত্বগুলো যিশুর প্রতিজ্ঞা অনুযায়ী সতেজতাদায়ক ভার হওয়ার পরিবর্তে কষ্টকর বোঝাস্বরূপ হয়েছে। এই ধরনের নেতিবাচক অনুভূতি যিহোবার সঙ্গে একজন খ্রিস্টানের সম্পর্ককে গুরুতর বিপদের মুখে ফেলতে পারে।

৩. কেন যিশু যোহন ১৪:১ পদে পাওয়া পরামর্শ দিয়েছিলেন?

৩ গ্রেপ্তার হওয়ার এবং মৃত্যুদণ্ড পাওয়ার কিছুদিন আগে, যিশু তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন: “তোমাদের হৃদয় উদ্বিগ্ন না হউক; ঈশ্বরে বিশ্বাস কর, আমাতেও বিশ্বাস কর।” (যোহন ১৪:১) যিশু এই কথাগুলো বলেছিলেন কারণ খুব শীঘ্রই প্রেরিতরা দুঃখজনক ঘটনাগুলো ভোগ করতে যাচ্ছিল। এর পরেই তাড়না শুরু হবে। যিশু জানতেন যে, তাঁর প্রেরিতরা চরম নিরুৎসাহিতার কারণে বিঘ্ন পেতে পারে। (যোহন ১৬:১) নিয়ন্ত্রণ না করলে, দুঃখবোধ আধ্যাত্মিকতাকে দুর্বল করে দিতে পারে আর এর ফলে তারা যিহোবার ওপর তাদের নির্ভরতা হারিয়ে ফেলতে পারে। এটা আজকের খ্রিস্টানদের বেলায়ও সত্য। দীর্ঘসময় ধরে চলতে থাকা নিরুৎসাহিতা অনেক যন্ত্রণা নিয়ে আসতে পারে এবং আমাদের হৃদয় ভারগ্রস্ত হয়ে পড়তে পারে। (যিরমিয় ৮:১৮) আমাদের ভিতরের ব্যক্তিত্ব দুর্বল হয়ে পড়তে পারে। এই চাপের মুখে আমরা হয়তো আবেগগত এবং আধ্যাত্মিকভাবে নিস্তেজ হয়ে পড়তে পারি, এমনকি যিহোবাকে সেবা করার বিষয়ে আমাদের আকাঙ্ক্ষা হারিয়ে ফেলতে পারি।

৪. আমাদের রূপক হৃদয়কে অবসন্ন হয়ে পড়া থেকে রক্ষা করতে কী আমাদের সাহায্য করতে পারে?

৪ বাইবেলের এই উপদেশ সত্যিই উপযুক্ত: “সমস্ত রক্ষণীয় অপেক্ষা তোমার হৃদয় রক্ষা কর কেননা তাহা হইতে জীবনের উদ্গম হয়।” (হিতোপদেশ ৪:২৩) বাইবেল ব্যবহারিক উপদেশ প্রদান করে, যা আমাদের রূপক হৃদয়কে নিরুৎসাহিতা এবং আধ্যাত্মিক ক্লান্তি থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। কিন্তু, প্রথমে আমাদের ক্লান্তিকর অবস্থার কারণ শনাক্ত করা প্রয়োজন।

খ্রিস্টধর্ম পীড়নকর নয়

৫. খ্রিস্টান শিষ্যত্বের বিষয়ে আপাতদৃষ্টিতে কোন পরস্পরবিরোধী বিষয় বিদ্যমান রয়েছে?

৫ এটা ঠিক যে, একজন খ্রিস্টান হওয়ার জন্য প্রবল প্রচেষ্টার প্রয়োজন। (লূক ১৩:২৪) যিশু এমনকি বলেছিলেন: “যে কেহ নিজের ক্রুশ বহন না করে ও আমার পশ্চাৎ পশ্চাৎ না আইসে, সে আমার শিষ্য হইতে পারে না।” (লূক ১৪:২৭) আপাতদৃষ্টিতে, তাঁর ভার লঘু এবং সতেজতাদায়ক হওয়ার বিষয়ে যিশুর উক্তিকে হয়তো পরস্পরবিরোধী বলে মনে হতে পারে কিন্তু আসলে পরস্পরবিরোধী নয়।

৬, ৭. কেন বলা যেতে পারে যে, আমাদের উপাসনা পদ্ধতি ক্লান্তিকর নয়?

৬ প্রবল প্রচেষ্টা এবং কঠোর পরিশ্রম যদিও শারীরিকভাবে ক্লান্তিকর কিন্তু তা যখন উত্তম কারণে করা হয়, তখন এটা পরিতৃপ্তিদায়ক এবং সতেজতাদায়ক হতে পারে। (উপদেশক ৩:১৩, ২২) আর আমাদের প্রতিবেশীদের কাছে বাইবেলের অপূর্ব সত্যগুলো সম্বন্ধে জানানোর চেয়ে উত্তম কারণ আর কীই বা হতে পারে? এ ছাড়া, ঈশ্বরের উচ্চ নৈতিক মানগুলোর সঙ্গে মিল রেখে জীবনযাপন করার প্রচেষ্টা তাৎপর্যহীন হয়ে পড়ে, যখন আমরা এর ফলে যে-উপকারগুলো আসে, সেটার সঙ্গে এর তুলনা করি। (হিতোপদেশ ২:১০-২০) এমনকি তাড়িত হলেও, ঈশ্বরের রাজ্যের জন্য কষ্টভোগ করাকে আমরা এক সম্মান বলে মনে করি।—১ পিতর ৪:১৪.

৭ যিশুর ভার সত্যিই সতেজতাদায়ক, বিশেষভাবে যখন সেটাকে সেই সমস্ত ব্যক্তির আধ্যাত্মিক অন্ধকারের সঙ্গে তুলনা করা হয়, যারা মিথ্যা ধর্মের জোয়ালের নিচে রয়েছে। আমাদের প্রতি ঈশ্বরের কোমল প্রেম রয়েছে এবং তিনি আমাদের ওপর অযৌক্তিক দাবি করেন না। যিহোবার “আজ্ঞা সকল দুর্ব্বহ নয়।” (১ যোহন ৫:৩) শাস্ত্রে যেমন উল্লেখ করা হয়েছে, সত্য খ্রিস্টধর্ম পীড়নকর নয়। স্পষ্টতই, আমাদের উপাসনা পদ্ধতি ক্লান্তিকর এবং নিরুৎসাহজনক নয়।

‘সমস্ত বোঝা ফেলিয়া দেও’

৮. আধ্যাত্মিক ক্লান্তির কারণ প্রায়ই কী হয়?

৮ যে-আধ্যাত্মিক ক্লান্তিই আমরা বোধ করি না কেন, তা প্রায়ই এই কলুষিত বিধিব্যবস্থা আমাদের ওপর অতিরিক্ত যে-বোঝা চাপিয়ে দেয়, সেটার ফলে আসে। যেহেতু “সমস্ত জগৎ সেই পাপাত্মার মধ্যে শুইয়া রহিয়াছে,” তাই আমরা বিরোধীবাহিনীর দ্বারা পরিবেষ্টিত, যা আমাদের দুর্বল এবং আমাদের খ্রিস্টীয় ভারসাম্যতাকে হ্রাস করে দিতে পারে। (১ যোহন ৫:১৯) অপ্রয়োজনীয় বিষয়গুলো আমাদের খ্রিস্টীয় তালিকাকে জটিল এবং বিঘ্নিত করতে পারে। এই অতিরিক্ত বোঝা আমাদের ভারগ্রস্ত করে দিতে আর এমনকি আমাদের মন ভেঙে দিতে পারে। উপযুক্তভাবে বাইবেল আমাদের ‘সমস্ত বোঝা ফেলিয়া দিতে’ উপদেশ দেয়।—ইব্রীয় ১২:১-৩.

৯. কীভাবে বস্তুগত বিষয়ের পিছনে ছোটা আমাদের ভারগ্রস্ত করতে পারে?

৯ উদাহরণস্বরূপ, বিশিষ্টতা, টাকাপয়সা, আমোদপ্রমোদ, আনন্দের জন্য ভ্রমণ এবং অন্যান্য বস্তুগত লক্ষ্যগুলো নিয়ে এই জগৎ ডুবে আছে আর তা আমাদের চিন্তাভাবনার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। (১ যোহন ২:১৫-১৭) প্রথম শতাব্দীর কিছু খ্রিস্টান ধনসম্পদের পিছনে ছুটে তাদের জীবনকে খুবই জটিল করে তুলেছিল। প্রেরিত পৌল ব্যাখ্যা করেছিলেন: “যাহারা ধনী হইতে বাসনা করে, তাহারা পরীক্ষাতে ও ফাঁদে এবং নানাবিধ মূঢ় ও হানিকর অভিলাষে পতিত হয়, সে সকল মনুষ্যদিগকে সংহারে ও বিনাশে মগ্ন করে। কেননা ধনাসক্তি সকল মন্দের একটা মূল; তাহাতে রত হওয়াতে কতক লোক বিশ্বাস হইতে বিপথগামী হইয়াছে, এবং অনেক যাতনারূপ কন্টকে আপনারা আপনাদিগকে বিদ্ধ করিয়াছে।”—১ তীমথিয় ৬:৯, ১০.

১০. যিশুর বীজবাপকের দৃষ্টান্ত থেকে আমরা ধনসম্পদ সম্বন্ধে কী শিখতে পারি?

১০ ঈশ্বরের সেবায় আমরা যখন ক্লান্ত বোধ করি এবং নিরুৎসাহিত হয়ে পড়ি, তখন এটা কি হতে পারে যে, বস্তুগত বিষয়গুলোর পিছনে ছোটার কারণে আমাদের আধ্যাত্মিকতা চাপা পড়ে গিয়েছে? এই সম্ভাবনা প্রকৃতই বিদ্যমান, যেমন বীজবাপকের দৃষ্টান্তে যিশু ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। যিশু ‘সংসারের চিন্তা, ধনের মায়া ও অন্যান্য বিষয়ের অভিলাষকে’ কাঁটার সঙ্গে তুলনা করেছিলেন, যা “ভিতরে গিয়া” আমাদের হৃদয়ে ঈশ্বরের বাক্যের বীজকে “চাপিয়া রাখে।” (মার্ক ৪:১৮, ১৯) তাই, বাইবেল আমাদের পরামর্শ দেয়: “তোমাদের আচার ব্যবহার ধনাসক্তিবিহীন হউক; তোমাদের যাহা আছে, তাহাতে সন্তুষ্ট থাক; কারণ তিনিই বলিয়াছেন, ‘আমি কোন ক্রমে তোমাকে ছাড়িব না, ও কোন ক্রমে তোমাকে ত্যাগ করিব না।’”—ইব্রীয় ১৩:৫.

১১. কীভাবে আমরা সেই বিষয়গুলো বাদ দিতে পারি, যেগুলো আমাদের ভারগ্রস্ত করে তুলতে পারে?

১১ মাঝে মাঝে, যে-বিষয়টা আমাদের জীবনকে জটিল করে তোলে, তা আরও বেশি কিছু পাওয়ার চেষ্টা করা নয় বরং ইতিমধ্যেই আমাদের যা রয়েছে, তা নিয়ে ব্যস্ত থাকা। কেউ কেউ গুরুতর স্বাস্থ্যগত সমস্যা, প্রিয়জনদের হারানো অথবা অন্যান্য দুর্দশামূলক সমস্যার ফলে মানসিক অবসাদ ভোগ করেছে। তারা সময়ে সময়ে রদবদল করার প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পেরেছে। এক বিবাহিত দম্পতি তাদের কিছু শখ এবং অপ্রয়োজনীয় ব্যক্তিগত প্রকল্পগুলো বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তারা আসলে তাদের বিষয়গুলো পরীক্ষা করেছিল এবং এই ধরনের প্রকল্পগুলোর সঙ্গে যুক্ত সমস্ত বিষয়বস্তু আক্ষরিকভাবে বাক্সবন্দি করে সেগুলোকে দূরে সরিয়ে রেখেছিল। সময়ে সময়ে, আমরা সকলে আমাদের শখ এবং বিষয়বস্তু নিয়ে চিন্তা করতে এবং সমস্ত অপ্রয়োজনীয় বোঝা দূর করে উপকার পেতে পারি, যাতে আমরা ক্লান্ত না হয়ে পড়ি এবং আমাদের প্রাণ অবসন্ন না হয়।

যুক্তিবাদিতা এবং বিনয় আবশ্যক

১২. আমাদের নিজেদের ভুলগুলো সম্বন্ধে আমাদের কী স্বীকার করা উচিত?

১২ এমনকি ছোটোখাটো বিষয়েও আমাদের নিজেদের ভুলগুলো ধীরে ধীরে আমাদের জীবনকে জটিল করে তুলতে পারে। দায়ূদের এই কথাগুলো কত সত্য: “আমার অপরাধসমূহ আমার মস্তকের উপরে উঠিয়াছে, ভারী বোঝার ন্যায় সে সকল আমার শক্তি অপেক্ষা ভারী।” (গীতসংহিতা ৩৮:৪) প্রায়ই কিছু ব্যবহারিক রদবদল আমাদের ভারী বোঝাগুলো থেকে আমাদের মুক্তি দেবে।

১৩. কীভাবে যুক্তিবাদিতা আমাদের পরিচর্যা সম্বন্ধে এক ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি রাখতে আমাদের সাহায্য করতে পারে?

১৩ বাইবেল আমাদের “ব্যবহারিক প্রজ্ঞা ও চিন্তা করার ক্ষমতা” গড়ে তুলতে উৎসাহ দেয়। (হিতোপদেশ ৩:২১, NW, ২২) বাইবেল বলে, “যে জ্ঞান” বা প্রজ্ঞা “উপর হইতে আইসে, তাহা . . . ক্ষান্ত” বা যুক্তিযুক্ত। (যাকোব ৩:১৭) কেউ কেউ অন্যেরা খ্রিস্টীয় পরিচর্যায় যা করে, সেই একই গতি বজায় রাখার জন্য চাপ অনুভব করে। কিন্তু, বাইবেল আমাদের উপদেশ দেয়: “প্রত্যেক জন নিজ নিজ কর্ম্মের পরীক্ষা করুক, তাহা হইলে সে কেবল আপনার কাছে শ্লাঘা করিবার হেতু পাইবে, অপরের কাছে নয়; কারণ প্রত্যেক জন নিজ নিজ ভার বহন করিবে।” (গালাতীয় ৬:৪, ৫) এটা ঠিক যে, সহখ্রিস্টানদের উত্তম উদাহরণ যিহোবাকে পূর্ণহৃদয়ে সেবা করার জন্য আমাদের উৎসাহিত করতে পারে কিন্তু ব্যবহারিক প্রজ্ঞা এবং যুক্তিবাদিতা আমাদের নিজেদের পরিস্থিতি অনুযায়ী বাস্তবসম্মত লক্ষ্যগুলো স্থাপন করতে আমাদের সাহায্য করবে।

১৪, ১৫. আমাদের শারীরিক এবং আবেগগত চাহিদাগুলোর যত্ন নেওয়ার বিষয়ে কীভাবে আমরা ব্যবহারিক প্রজ্ঞা দেখাতে পারি?

১৪ এমনকি কম গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয় এমন ক্ষেত্রগুলোতেও আমাদের যুক্তিবাদিতা ক্লান্তিবোধ রোধ করতে সাহায্য করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, আমরা কি এমন ভারসাম্যপূর্ণ অভ্যাসগুলো গড়ে তুলি, যেগুলো দৈহিক স্বাস্থ্যের পক্ষে সহায়ক? এক বিবাহিত দম্পতির উদাহরণ বিবেচনা করুন, যারা যিহোবার সাক্ষিদের একটা শাখা অফিসে কাজ করে। তারা অবসাদ রোধ করার ক্ষেত্রে ব্যবহারিক প্রজ্ঞার মূল্য সম্বন্ধে বুঝতে পেরেছিল। স্ত্রী বলেন: “আমাদের যত কাজই থাকুক না কেন, আমরা প্রতিরাতে প্রায় একই সময় বিছানায় যাওয়ার চেষ্টা করি। এ ছাড়া, আমরা নিয়মিতভাবে শরীরচর্চাও করি। এটা সত্যিই আমাদের সাহায্য করেছে। আমরা আমাদের সীমাবদ্ধতা সম্বন্ধে জেনেছি এবং সেই অনুসারে কাজ করি। আমরা নিজেদের সেই সমস্ত ব্যক্তির সঙ্গে তুলনা করার চেষ্টা করি না, যাদের সীমাহীন কর্মশক্তি রয়েছে বলে মনে হয়।” আমরা কি নিয়মিতভাবে স্বাস্থ্যকর খাবার খাই এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিই? সাধারণত, আমাদের স্বাস্থ্যের প্রতি যুক্তিযুক্ত মনোযোগ দেওয়া আবেগগত ও আধ্যাত্মিক পরিশ্রান্তি হ্রাস করতে পারে।

১৫ আমাদের কারও কারও এমন সব চাহিদা রয়েছে, যা স্বতন্ত্র। উদহরণস্বরূপ, একজন খ্রিস্টান বোন কয়েকটা কঠিন কার্যভারের মধ্যেও পূর্ণসময়ের পরিচর্যা করেছেন। তার ক্যান্সারসহ গুরুতর স্বাস্থ্যগত সমস্যা ছিল। কী তাকে চাপপূর্ণ পরিস্থিতিগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করতে সাহায্য করেছে? তিনি বলেন: “সম্পূর্ণ একা এবং পুরোপুরি নীরব থাকতে পারব এমন সময় কাটানো আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। যতই আমি চাপ এবং অবসাদ বাড়ছে বলে অনুভব করি, ততই আমার শান্ত নির্জন মুহূর্তের প্রয়োজন হয়, যখন আমি পড়তে এবং বিশ্রাম নিতে পারি।” ব্যবহারিক প্রজ্ঞা এবং চিন্তা করার ক্ষমতা আমাদের প্রত্যেকের নিজ নিজ চাহিদাগুলো বুঝতে এবং তা পূরণ করতে সাহায্য করে আর এভাবে আধ্যাত্মিক ক্লান্তি এড়ানো যায়।

যিহোবা ঈশ্বর আমাদের কর্মশক্তিসম্পন্ন করেন

১৬, ১৭. (ক) আমাদের আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া কেন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ? (খ) আমাদের দৈনন্দিন রুটিনের মধ্যে কী অন্তর্ভুক্ত করা উচিত?

১৬ আমাদের আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া অবশ্যই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যিহোবা ঈশ্বরের সঙ্গে যখন আমাদের অন্তরঙ্গ সম্পর্ক থাকে, তখন আমরা হয়তো শারীরিক দিক দিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়তে পারি কিন্তু আমরা কখনও তাঁকে সেবা করার ব্যাপারে ক্লান্ত হয়ে পড়ব না। যিহোবা হলেন এমন একজন যিনি “ক্লান্ত ব্যক্তিকে শক্তি দেন, ও শক্তিহীন লোকের বল বৃদ্ধি করেন।” (যিশাইয় ৪০:২৮, ২৯) প্রেরিত পৌল, যিনি ব্যক্তিগতভাবে এই কথাগুলোর সত্যতা সম্বন্ধে অভিজ্ঞতা লাভ করেছিলেন, তিনি লিখেছিলেন: “আমরা নিরুৎসাহ হই না, কিন্তু আমাদের বাহ্য মনুষ্য যদ্যপি ক্ষীণ হইতেছে, তথাপি আন্তরিক মনুষ্য দিন দিন নূতনীকৃত হইতেছে।”—২ করিন্থীয় ৪:১৬.

১৭ “দিন দিন,” এই অভিব্যক্তিটা লক্ষ করুন। এর অর্থ হল, প্রতিদিন যিহোবার ব্যবস্থাগুলো থেকে উপকার লাভ করা। ৪৩ বছর ধরে বিশ্বস্তভাবে সেবা করছেন এমন একজন মিশনারিকে বেশ কিছু সময় ধরে শারীরিক ক্লান্তি এবং নিরুৎসাহিতার সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছিল। কিন্তু, তিনি অবসন্ন হয়ে পড়েননি। তিনি বলেন: “আমি তাড়াতাড়ি ওঠার অভ্যাস গড়ে তুলেছি, যাতে যেকোনো কাজ শুরু করার আগে আমি যিহোবার কাছে প্রার্থনা করার এবং তাঁর বাক্য পড়ার জন্য সময় ব্যয় করতে পারি। দৈনন্দিন এই রুটিন আমাকে এখন পর্যন্ত টিকে থাকতে সাহায্য করেছে।” আমরা আসলেই যিহোবার টিকিয়ে রাখার ক্ষমতার ওপর নির্ভর করতে পারি, যদি আমরা নিয়মিতভাবে, হ্যাঁ “দিন দিন” তাঁর কাছে প্রার্থনা করি এবং তাঁর উচ্চতর গুণাবলি ও তাঁর প্রতিজ্ঞাগুলো নিয়ে ধ্যান করি।

১৮. যে-বিশ্বস্ত ব্যক্তিরা বৃদ্ধ হয়ে পড়েছে বা অসুস্থ, তাদের জন্য বাইবেল কোন সান্ত্বনা জোগায়?

১৮ এটা বিশেষভাবে তাদের জন্য সাহায্যকারী, যারা বৃদ্ধ হওয়ার এবং ভগ্ন স্বাস্থ্যের কারণে হতাশ বোধ করে। এই ধরনের ব্যক্তিরা অন্যদের সঙ্গে নিজেদের তুলনা করে নয় বরং আগে একসময় তারা যা করত, সেটার সঙ্গে নিজেদের তুলনা করে মনমরা হয়ে পড়তে পারে। এটা জানা কতই না সান্ত্বনাদায়ক যে, যিহোবা বয়স্ক ব্যক্তিদের সম্মান করেন! বাইবেল বলে: “পক্ব কেশ শোভার মুকুট; তাহা ধার্ম্মিকতার পথে পাওয়া যায়।” (হিতোপদেশ ১৬:৩১) যিহোবা আমাদের সীমাবদ্ধতা জানেন এবং আমাদের দুর্বলতা সত্ত্বেও, আমাদের পূর্ণহৃদয়ের সেবাকে উচ্চমূল্য দেন। আর ইতিমধ্যেই আমরা যে-উত্তম কাজগুলো করেছি, সেগুলো যিহোবার স্মৃতিতে চিরকালের জন্য লিপিবদ্ধ করা আছে। শাস্ত্র আমাদের আশ্বাস দেয়: “ঈশ্বর অন্যায়কারী নহেন; তোমাদের কার্য্য, এবং তোমরা পবিত্রগণের যে পরিচর্য্যা করিয়াছ ও করিতেছ, তদ্দ্বারা তাঁহার নামের প্রতি প্রদর্শিত তোমাদের প্রেম, এই সকল তিনি ভুলিয়া যাইবেন না।” (ইব্রীয় ৬:১০) আমাদের মধ্যে সেই সমস্ত ব্যক্তিকে পেয়ে আমরা সকলে কতই না আনন্দিত, যারা বহু দশক ধরে যিহোবার প্রতি অনুগত বলে প্রমাণিত হয়েছে!

হাল ছেড়ে দেবেন না

১৯. যা ভাল তা করায় ব্যস্ত থেকে কীভাবে আমরা উপকৃত হই?

১৯ অনেকে মনে করে যে, নিয়মিতভাবে কঠোর শারীরিক কাজকর্ম ক্লান্তি দূর করতে পারে। একইভাবে নিয়মিত আধ্যাত্মিক কাজকর্ম যেকোনো আবেগগত অথবা আধ্যাত্মিক অবসাদ থেকে স্বস্তি পেতে সাহায্য করতে পারে। বাইবেল বলে: “আইস, আমরা সৎকর্ম্ম করিতে করিতে নিরুৎসাহ না হই; কেননা ক্লান্ত না হইলে যথাসময়ে শস্য পাইব। এজন্য আইস, আমরা যেমন সুযোগ পাই, তেমনি সকলের প্রতি, বিশেষতঃ যাহারা বিশ্বাস-বাটীর পরিজন, তাহাদের প্রতি সৎকর্ম্ম করি।” (গালাতীয় ৬:৯, ১০) ‘সৎকর্ম্ম করা’ এই অভিব্যক্তিটা লক্ষ করুন। এটা আমাদের কাজ করার ইঙ্গিত দেয়। অন্যদের জন্য ভাল কাজগুলো করা সত্যিই যিহোবার প্রতি আমাদের সেবায় অবসন্ন হয়ে পড়া প্রতিরোধ করতে সাহায্য করতে পারে।

২০. নিরুৎসাহিতার সঙ্গে লড়াই করার জন্য আমাদের কোন সংসর্গ এড়িয়ে চলা উচিত?

২০ এর বিপরীতে, ঈশ্বরের আইনগুলোকে অসম্মান করে এমন ব্যক্তিদের সঙ্গে মেলামেশা এবং কাজ করা এক ক্লান্তিকর বোঝা হতে পারে। বাইবেল আমাদের সাবধান করে: “প্রস্তর ভারী ও বালি গুরু, কিন্তু অজ্ঞানের অসন্তোষ ঐ উভয় অপেক্ষা ভারী।” (হিতোপদেশ ২৭:৩) নিরুৎসাহিতা এবং ক্লান্তির অনুভূতির সঙ্গে লড়াই করার জন্য আমাদের সেই সমস্ত ব্যক্তির সংসর্গ এড়িয়ে চলা উচিত, যারা নেতিবাচক চিন্তাধারা পোষণ করে এবং অন্যের দোষ খুঁজে বেড়ায় ও সমালোচনা করে।

২১. খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে কীভাবে আমরা অন্যদের কাছে উৎসাহজনক হতে পারি?

২১ খ্রিস্টীয় সভাগুলো হল যিহোবার কাছ থেকে একটা ব্যবস্থা, যা আমাদের আধ্যাত্মিক কর্মশক্তিতে পরিপূর্ণ করতে পারে। সেখানে সতেজতাদায়ক নির্দেশনা এবং মেলামেশাসহ একে অন্যকে উৎসাহিত করার চমৎকার সুযোগ আমাদের রয়েছে। (ইব্রীয় ১০:২৫) সভাগুলোতে মন্তব্য করার অথবা মঞ্চ থেকে কোনো কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার সময় মণ্ডলীর সকলের গঠনমূলক হওয়ার প্রচেষ্টা করা উচিত। যারা শিক্ষক হিসেবে নেতৃত্ব নেয়, তাদের বিশেষভাবে অন্যদের কাছে উৎসাহজনক হওয়ার দায়িত্ব রয়েছে। (যিশাইয় ৩২:১, ২) এমনকি যখন পরামর্শ দেওয়ার অথবা তিরস্কার করার প্রয়োজন হয়, তখন পরামর্শ দেওয়ার ধরন সতেজতাদায়ক হওয়া উচিত। (গালাতীয় ৬:১, ২) অন্যদের প্রতি আমাদের ভালবাসা সত্যিই আমাদের অবসন্ন না হয়ে যিহোবার সেবা করতে সাহায্য করবে।—গীতসংহিতা ১৩৩:১; যোহন ১৩:৩৫.

২২. আমাদের অসিদ্ধতা সত্ত্বেও, কেন আমরা সাহসী হতে পারি?

২২ এই শেষ সময়ে যিহোবার উপাসনা করার সঙ্গে কাজ জড়িত। আর খ্রিস্টানরা মানসিক অবসাদ, আবেগগত কষ্ট এবং চাপপূর্ণ পরিস্থিতিগুলো থেকে মুক্ত নয়। আমাদের অসিদ্ধ মানসিক অবস্থা মাটির পাত্রের মতো দুর্বল। তবে, বাইবেল বলে, “এই ধন মৃন্ময় পাত্রে করিয়া আমরা ধারণ করিতেছি, যেন পরাক্রমের উৎকর্ষ ঈশ্বরের হয়, আমাদের হইতে নয়।” (২ করিন্থীয় ৪:৭) হ্যাঁ, আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়ব কিন্তু আমরা যেন কখনও অবসন্ন না হই অথবা হাল ছেড়ে না দিই। এর পরিবর্তে, আসুন আমরা যেন “সাহসপূর্ব্বক বলিতে পারি, ‘প্রভু [“যিহোবা,” NW] আমার সহায়।’”—ইব্রীয় ১৩:৬.

সংক্ষিপ্ত পুনরালোচনা

• কিছু কষ্টকর বোঝা কী, যেগুলো আমরা ফেলে দিতে পারি?

• কীভাবে আমরা আমাদের সহখ্রিস্টানদের প্রতি “সৎকর্ম্ম” করায় অংশ নিতে পারি?

• আমরা যখন ক্লান্ত অথবা নিরুৎসাহিত হয়ে পড়ি, তখন কীভাবে যিহোবা আমাদের টিকিয়ে রাখেন?

[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

যিশু জানতেন যে, দীর্ঘসময় ধরে থাকা নিরুৎসাহিতা প্রেরিতদের উদ্বিগ্ন করতে পারে

[২৪ পৃষ্ঠার চিত্র]

কেউ কেউ কিছু শখ এবং অপ্রয়োজনীয় ব্যক্তিগত প্রকল্প বাদ দিয়েছে

[২৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

আমাদের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও, যিহোবা আমাদের পূর্ণহৃদয়ের উপাসনাকে উচ্চমূল্য দেন

    বাংলা প্রকাশনা (১৯৮৯-২০২৬)
    লগ আউট
    লগ ইন
    • বাংলা
    • শেয়ার
    • পছন্দসমূহ
    • Copyright © 2025 Watch Tower Bible and Tract Society of Pennsylvania
    • ব্যবহারের শর্ত
    • গোপনীয়তার নীতি
    • গোপনীয়তার সেটিং
    • JW.ORG
    • লগ ইন
    শেয়ার