ওয়াচটাওয়ার অনলাইন লাইব্রেরি
ওয়াচটাওয়ার
অনলাইন লাইব্রেরি
বাংলা
  • বাইবেল
  • প্রকাশনাদি
  • সভা
  • w০৫ ৮/১৫ পৃষ্ঠা ২৪-২৯
  • হৃদয়ে প্রেমের এক ব্যবস্থা

এই বাছাইয়ের সঙ্গে কোনো ভিডিও প্রাপ্তিসাধ্য নেই।

দুঃখিত, ভিডিওটা চালানো সম্বভব হচ্ছে না।

  • হৃদয়ে প্রেমের এক ব্যবস্থা
  • ২০০৫ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • উপশিরোনাম
  • অনুরূপ বিষয়বস্ত‌ু
  • হৃদয়ে লিখিত এক ব্যবস্থা
  • প্রেমের ওপর ভিত্তি করে আইনগুলো
  • ভালবাসার অর্থ হচ্ছে বাধ্য হওয়া
  • প্রেম কার্যরত
  • সেই ঈশ্বরকে ভালবাসুন, যিনি আপনাকে ভালবাসেন
    ২০০৬ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • আমাদের প্রতিবেশীকে ভালবাসা বলতে যা বোঝায়
    ২০০৬ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • আজকে যিহোবা আমাদের কাছ থেকে কী চান?
    ১৯৯৯ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • “ঈশ্বরের প্রতি প্রেম এই”
    “ঈশ্বরের প্রেমে আপনাদিগকে রক্ষা কর”
আরও দেখুন
২০০৫ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
w০৫ ৮/১৫ পৃষ্ঠা ২৪-২৯

হৃদয়ে প্রেমের এক ব্যবস্থা

“আমি তাহাদের অন্তরে আমার ব্যবস্থা দিব, ও তাহাদের হৃদয়ে তাহা লিখিব।”—যিরমিয় ৩১:৩৩.

১, ২. (ক) এখন আমরা কোন বিষয়টা বিবেচনা করব? (খ) সীনয় পর্বতে যিহোবা নিজেকে কীভাবে প্রকাশ করেছিলেন?

আগের দুটো প্রবন্ধে আমরা শিখেছি যে, মোশি যখন সীনয় পর্বত থেকে নেমে এসেছিলেন, তখন তার মুখ উজ্জ্বল হয়ে গিয়েছিল, যা যিহোবার গৌরবকে প্রতিফলিত করেছিল। এ ছাড়া, মোশি যে-আবরণ দিতেন, সেই বিষয়েও আমরা আলোচনা করেছি। এখন আসুন আমরা এর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত একটা বিষয় বিবেচনা করি, যেটা আজকে খ্রিস্টানদের জন্য এক অর্থ রাখে।

২ মোশি যখন পর্বতের ওপরে ছিলেন, তখন তিনি যিহোবার কাছ থেকে নির্দেশনা লাভ করেছিলেন। সীনয় পর্বতের সামনে সমবেত ইস্রায়েলীয়রা স্বয়ং ঈশ্বরের এক অপূর্ব প্রকাশ দেখেছিল। “মেঘগর্জ্জন ও বিদ্যুৎ এবং পর্ব্বতের উপরে নিবিড় মেঘ হইল, আর অতিশয় উচ্চরবে তূরীধ্বনি হইতে লাগিল; তাহাতে শিবিরস্থ সমস্ত লোক কাঁপিতে লাগিল। . . . তখন সমস্ত সীনয় পর্ব্বত ধূমময় ছিল; কেননা সদাপ্রভু অগ্নিসহ তাহার উপরে নামিয়া আসিলেন, আর ভাটীর ধূমের ন্যায় তাহা হইতে ধূম উঠিতে লাগিল, এবং সমস্ত পর্ব্বত অতিশয় কাঁপিতে লাগিল।”—যাত্রাপুস্তক ১৯:১৬-১৮.

৩. কোন কোন উপায়ে যিহোবা ইস্রায়েলকে দশ আজ্ঞা দিয়েছিলেন আর সেই জাতি কী বুঝতে পেরেছিল?

৩ যিহোবা লোকেদের সঙ্গে একজন স্বর্গদূতের মাধ্যমে কথা বলেছিলেন, তাদেরকে সেই আইনগুলো দিয়েছিলেন, যা দশ আজ্ঞা নামে পরিচিত হয়েছে। (যাত্রাপুস্তক ২০:১-১৭) তাই, কোনো সন্দেহই থাকতে পারে না যে, এই আইনগুলো সর্বশক্তিমানের কাছ থেকে ছিল। যিহোবা সেই আজ্ঞাগুলোকে প্রস্তরফলকে লিখেছিলেন, যে-ফলকগুলো মোশি ইস্রায়েলীয়দের এক সোনার বাছুর উপাসনা করতে দেখে ভেঙে ফেলেছিলেন। যিহোবা আবার প্রস্তরের ওপর সেই আজ্ঞাগুলো লিখেছিলেন। এবারে মোশি যখন ফলকগুলো হাতে নিয়ে নেমে এসেছিলেন, তখন তার মুখ উজ্জ্বল হয়েছিল। সেই সময়ের মধ্যে, সকলে বুঝতে পেরেছিল যে, সেই আইনগুলোর অনেক তাৎপর্য রয়েছে।—যাত্রাপুস্তক ৩২:১৫-১৯; ৩৪:১, ৪, ২৯, ৩০.

৪. কেন দশ আজ্ঞা অতি গুরুত্বপূর্ণ ছিল?

৪ যে-দুটো প্রস্তরফলকের ওপর দশ আজ্ঞা লেখা হয়েছিল, সেগুলো আবাসে ও পরে মন্দিরের অতি পবিত্র কক্ষে নিয়ম-সিন্দুকের মধ্যে রাখা হয়েছিল। ফলকগুলোতে লেখা আইনগুলো ছিল মোশির ব্যবস্থা চুক্তির মূলনীতি এবং ইস্রায়েল জাতিকে ঈশ্বর যেভাবে শাসন করবেন সেটার ভিত্তি। এগুলো প্রমাণ জুগিয়েছিল যে, যিহোবা এক নির্দিষ্ট, মনোনীত লোকেদের সঙ্গে আদানপ্রদান করছিলেন।

৫. কীসের মাধ্যমে ইস্রায়েলকে দেওয়া ঈশ্বরের আইনগুলো তাঁর প্রেমকে প্রতিফলিত করেছিল?

৫ এই আইনগুলো যিহোবার, বিশেষ করে তাঁর লোকেদের জন্য তাঁর প্রেম সম্বন্ধে অনেক কিছু প্রকাশ করেছিল। যারা এগুলোর বাধ্য হয়েছিল, তাদের জন্য সেগুলো কী মূল্যবান এক উপহার বলেই না প্রমাণিত হয়েছিল! একজন পণ্ডিত ব্যক্তি লিখেছিলেন: “এর পূর্বে বা এযাবৎ মানুষের তৈরি কোনো নৈতিক বিধিই, . . . ঈশ্বরের এই দশ আজ্ঞার সমরূপ বা এর চেয়ে শ্রেষ্ঠ হতে পারে না।” সমগ্র মোশির ব্যবস্থা সম্বন্ধে যিহোবা বলেছিলেন: “যদি তোমরা আমার রবে অবধান কর ও আমার নিয়ম” বা চুক্তি “পালন কর, তবে তোমরা সকল জাতি অপেক্ষা আমার নিজস্ব অধিকার হইবে, কেননা সমস্ত পৃথিবী আমার; আর আমার নিমিত্তে তোমরাই যাজকদের এক রাজ্য ও পবিত্র এক জাতি হইবে।”—যাত্রাপুস্তক ১৯:৫, ৬.

হৃদয়ে লিখিত এক ব্যবস্থা

৬. কোন আইন প্রস্তরে লিখিত আইনগুলোর চেয়ে আরও বেশি মূল্যবান বলে প্রমাণিত হয়েছে?

৬ হ্যাঁ, সেই ঐশিক আইনগুলো খুবই মূল্যবান ছিল। কিন্তু আপনি কি জানেন যে, অভিষিক্ত খ্রিস্টানরা প্রস্তরে লিখিত আইনগুলোর চেয়েও মূল্যবান কিছুর অধিকারী? যিহোবা ইস্রায়েল জাতির সঙ্গে করা ব্যবস্থা চুক্তির বৈসাদৃশ্যে নতুন চুক্তি করার বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। “আমি তাহাদের অন্তরে আমার ব্যবস্থা দিব, ও তাহাদের হৃদয়ে তাহা লিখিব।” (যিরমিয় ৩১:৩১-৩৪) নতুন নিয়ম বা চুক্তির মধ্যস্থ যিশু তাঁর অনুসারীদের ব্যক্তিগতভাবে কোনো লিখিত আইনবিধি দান করেননি। তিনি তাঁর কথা ও কাজের মাধ্যমে তাঁর শিষ্যদের মনে ও হৃদয়ে যিহোবার আইন গেঁথে দিয়েছিলেন।

৭. প্রথমে কাদের “খ্রীষ্টের ব্যবস্থা” দেওয়া হয়েছিল আর পরে এটাকে কারা গ্রহণ করেছিল?

৭ এই আইনকে বলা হয় “খ্রীষ্টের ব্যবস্থা।” এটা প্রথমে যাকোবের বংশধর জন্মগত ইস্রায়েল জাতিকে নয় কিন্তু এক আত্মিক জাতিকে দেওয়া হয়েছিল, যারা ছিল ‘ঈশ্বরের ইস্রায়েল।’ (গালাতীয় ৬:২, ১৬; রোমীয় ২:২৮, ২৯) ঈশ্বরের ইস্রায়েল আত্মায় অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের নিয়ে গঠিত। পরে তাদের সঙ্গে সমস্ত জাতি থেকে আসা “বিস্তর লোক,” যারা যিহোবাকে উপাসনা করার অন্বেষণ করে, তারাও যোগ দিয়েছিল। (প্রকাশিত বাক্য ৭:৯, ১০; সখরিয় ৮:২৩) ‘এক পালকের’ অধীনে “এক পাল” হয়ে উভয় দলই ‘খ্রীষ্টের ব্যবস্থাকে’ গ্রহণ করে, তারা যা কিছু করে সবকিছুতেই এটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে দেয়।—যোহন ১০:১৬.

৮. মোশির ব্যবস্থা ও খ্রিস্টের ব্যবস্থার মধ্যে একটা পার্থক্য কী ছিল?

৮ জন্মগত ইস্রায়েলীয়রা যারা জন্ম থেকে মোশির ব্যবস্থা পালন করতে বাধ্য ছিল, তাদের বৈসাদৃশ্যে খ্রিস্টানরা স্বেচ্ছায় খ্রিস্টের ব্যবস্থার অধীনে থাকে, জাতি বা জন্মস্থানের মতো বিষয়গুলো তাদের কাছে অপ্রাসঙ্গিক। তারা যিহোবা ও তাঁর পথ সম্বন্ধে শেখে এবং তাঁর ইচ্ছা পালন করতে আকুল আকাঙ্ক্ষী। ঈশ্বরের আইন ‘তাহাদের অন্তরে,’ রূপকভাবে “তাহাদের হৃদয়ে” লিখিত থাকায়, অভিষিক্ত খ্রিস্টানরা শুধু এই ভেবে ঈশ্বরের বাধ্য হয় না যে, যারা তাঁর অবাধ্য হয়, তাদের তিনি শাস্তি দিতে পারেন; কিংবা তারা নিছক কর্তব্যবোধের খাতিরে তাঁর বাধ্য হয় না। তাদের বাধ্যতা এমন কিছুর ওপর প্রতিষ্ঠিত, যা আরও বেশি অপরিহার্য ও অনেক বেশি শক্তিশালী এবং আরও মেষেরা অনুরূপভাবে বাধ্যতা দেখায় কারণ ঈশ্বরের আইন তাদের হৃদয়ে লিখিত রয়েছে।

প্রেমের ওপর ভিত্তি করে আইনগুলো

৯. কীভাবে যিশু ইঙ্গিত করেছিলেন যে, প্রেম ছিল যিহোবার আইনগুলোর সারবস্তু?

৯ যিহোবার সমস্ত আইন ও বিধির সারবস্তুকে এক কথায় এভাবে সারাংশ করা যায়: প্রেম। এটা সবসময়ই বিশুদ্ধ উপাসনার এক অপরিহার্য অংশ হয়ে এসেছে এবং সবসময় তা-ই থাকবে। যখন জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে ব্যবস্থার সর্বশ্রেষ্ঠ আজ্ঞা কোনটা, তখন যিশু উত্তর দিয়েছিলেন: “তোমার সমস্ত অন্তঃকরণ, তোমার সমস্ত প্রাণ ও তোমার সমস্ত মন দিয়া তোমার ঈশ্বর প্রভুকে [“যিহোবাকে,” NW] প্রেম করিবে।” দ্বিতীয়টা ছিল: “তোমার প্রতিবাসীকে আপনার মত প্রেম করিবে।” এরপর তিনি বলেছিলেন: “এই দুইটি আজ্ঞাতেই সমস্ত ব্যবস্থা এবং ভাববাদিগ্রন্থও ঝুলিতেছে।” (মথি ২২:৩৫-৪০) যিশু এভাবে ইঙ্গিত করেছিলেন যে, শুধুমাত্র দশ আজ্ঞাসহ ব্যবস্থাই নয় কিন্তু পুরো ইব্রীয় শাস্ত্রের ভিত্তি ছিল প্রেম।

১০. কীভাবে আমরা জানি যে, প্রেম হচ্ছে খ্রিস্টের ব্যবস্থার ভিত্তি?

১০ এ ছাড়া, খ্রিস্টানদের হৃদয়ে যে-ব্যবস্থা রয়েছে সেটার ভিত্তিও কি ঈশ্বর ও প্রতিবেশীর প্রতি প্রেম? অবশ্যই! খ্রিস্টের ব্যবস্থার সঙ্গে ঈশ্বরের প্রতি আন্তরিক প্রেম ও এক নতুন আজ্ঞা জড়িত আর সেই আজ্ঞাটা হচ্ছে খ্রিস্টানদের পরস্পরের প্রতি আত্মত্যাগমূলক প্রেম দেখাতে হবে। তাদেরকে যিশুর মতো প্রেম দেখাতে হবে আর তিনি তাঁর বন্ধুদের জন্য স্বেচ্ছায় তাঁর জীবন দান করেছিলেন। তিনি তাঁর শিষ্যদের ঈশ্বরকে প্রেম করতে এবং পরস্পরকে প্রেম করতে শিখিয়েছিলেন, ঠিক যেমন তিনি তাদেরকে প্রেম করেছিলেন। তারা পরস্পরের প্রতি যে-উল্লেখযোগ্য প্রেম দেখায় সেটা হচ্ছে সত্য খ্রিস্টানদের শনাক্ত করার প্রধান গুণ। (যোহন ১৩:৩৪, ৩৫; ১৫:১২, ১৩) যিশু এমনকি তাদের শত্রুদেরকে প্রেম করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন।—মথি ৫:৪৪.

১১. যিশু কীভাবে ঈশ্বর ও মানবজাতি উভয়ের প্রতি প্রেম দেখিয়েছিলেন?

১১ প্রেম দেখানোর ক্ষেত্রে যিশু নিখুঁত উদাহরণ স্থাপন করেছেন। স্বর্গে একজন শক্তিমান আত্মিক প্রাণী হিসেবে তিনি পৃথিবীতে তাঁর পিতার কাজগুলোকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সুযোগকে সানন্দে গ্রহণ করেছিলেন। অন্যেরা যাতে চিরকাল বেঁচে থাকতে পারে, সেইজন্য তাঁর মানব জীবন দান করা ছাড়াও তিনি লোকেদের দেখিয়েছিলেন যে, তাদের কীভাবে জীবনযাপন করা উচিত। তিনি ছিলেন নম্র, দয়ালু ও সুবিবেচক, যারা ভারগ্রস্ত ও নিপীড়িত হচ্ছিল, তাদের তিনি সাহায্য করেছিলেন। এ ছাড়া, তিনি “অনন্ত জীবনের কথা” জানিয়েছিলেন, যিহোবাকে জানার জন্য অন্যদের সাহায্য করতে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছিলেন।—যোহন ৬:৬৮.

১২. কেন বলা যেতে পারে যে, ঈশ্বর ও প্রতিবেশীর প্রতি প্রেম ওতপ্রোতভাবে জড়িত?

১২ বস্তুতপক্ষে, ঈশ্বর ও প্রতিবেশীর প্রতি প্রেম ওতপ্রোতভাবে জড়িত। প্রেরিত যোহন বলেছিলেন: “প্রেম ঈশ্বরের; . . . যদি কেহ বলে, আমি ঈশ্বরকে প্রেম করি, আর আপন ভ্রাতাকে ঘৃণা করে, সে মিথ্যাবাদী; কেননা যাহাকে দেখিয়াছে, আপনার সেই ভ্রাতাকে যে প্রেম না করে, সে যাঁহাকে দেখে নাই, সেই ঈশ্বরকে প্রেম করিতে পারে না।” (১ যোহন ৪:৭, ২০) যিহোবা প্রেমের উৎস ও মূর্ত প্রতীক দুটোই। তিনি যা কিছু করেন, সমস্তকিছুই প্রেমের দ্বারা করেন। আমরা ভালবাসি কারণ আমরা তাঁর প্রতিমূর্তিতে নির্মিত হয়েছি। (আদিপুস্তক ১:২৭) আমাদের প্রতিবেশীর প্রতি প্রেম দেখানোর দ্বারা আমরা ঈশ্বরের প্রতি আমাদের প্রেম প্রদর্শন করি।

ভালবাসার অর্থ হচ্ছে বাধ্য হওয়া

১৩. আমরা যদি ঈশ্বরকে ভালবাসতে চাই, তা হলে আমাদের অবশ্যই প্রথমে কী করতে হবে?

১৩ যাঁকে আমরা দেখি না, সেই ঈশ্বরকে আমরা কীভাবে ভালবাসতে পারি? অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রথম পদক্ষেপটা হল, তাঁকে জানা। একজন অপরিচিতকে আমরা প্রকৃতই ভালবাসতে পারি না বা তাঁর ওপর নির্ভর করতে পারি না। তাই, ঈশ্বরের বাক্য আমাদের বাইবেল পড়ার, প্রার্থনা করার এবং যারা ইতিমধ্যেই ঈশ্বরকে জানে ও ভালবাসে তাদের সঙ্গে মেলামেশা করার দ্বারা তাঁকে জানতে উৎসাহ দেয়। (গীতসংহিতা ১:১, ২; ফিলিপীয় ৪:৬; ইব্রীয় ১০:২৫) চারটে সুসমাচারের বিবরণ বিশেষভাবে মূল্যবান, কারণ সেগুলো যিহোবার ব্যক্তিত্বকে প্রকাশ করে, যা যিশু খ্রিস্টের জীবনে ও পরিচর্যায় প্রতিফলিত হয়েছে। ঈশ্বরের বাধ্য হওয়া ও তাঁর ব্যক্তিত্বকে অনুকরণ করার জন্য আমাদের আকাঙ্ক্ষা দিন দিন আরও প্রবল হয়ে ওঠে, যখন আমরা তাঁকে জানি ও আমাদের প্রতি তিনি যে-প্রেম দেখিয়েছেন তা উপলব্ধি করি। হ্যাঁ, ঈশ্বরকে ভালবাসার সঙ্গে বাধ্যতা জড়িত।

১৪. কেন বলা যেতে পারে যে, ঈশ্বরের আইনগুলো দুর্বহ নয়?

১৪ আমরা যখন ব্যক্তিবিশেষদের ভালবাসি, তখন আমরা তাদের পছন্দ-অপছন্দ সম্বন্ধে অবগত হই এবং আমরা সেই অনুযায়ী তাদের সঙ্গে ব্যবহার করি। আমরা যাদের ভালবাসি তাদেরকে অসন্তুষ্ট করতে চাই না। “ঈশ্বরের প্রতি প্রেম এই,” প্রেরিত যোহন লিখেছিলেন, “যেন আমরা তাঁহার আজ্ঞা সকল পালন করি; আর তাঁহার আজ্ঞা সকল দুর্ব্বহ নয়।” (১ যোহন ৫:৩) সেগুলো দুর্বহ নয় কিংবা অসংখ্যও নয়। প্রেম আমাদের তা করতে পরিচালিত করে। আমাদের প্রত্যেকটা কাজে পরিচালিত হওয়ার জন্য আমাদের এক বিশাল আইনবিধি মনে রাখার দরকার নেই; ঈশ্বরের প্রতি আমাদের ভালবাসা আমাদের পরিচালিত করে। আমরা যদি ঈশ্বরকে ভালবাসি, তা হলে তাঁর ইচ্ছা পালন করা হল এক আনন্দের বিষয়। এভাবে আমরা ঈশ্বরের অনুমোদন লাভ করি এবং নিজেরা উপকৃত হই, তাঁর নির্দেশনা সবসময় আমাদের মঙ্গলের জন্য হয়।—যিশাইয় ৪৮:১৭.

১৫. কী আমাদের যিহোবাকে অনুকরণ করতে প্রেরণা দেবে? ব্যাখ্যা করুন।

১৫ ঈশ্বরের প্রতি প্রেম আমাদেরকে তাঁর গুণাবলি অনুকরণ করতে প্রেরণা দেয়। আমরা যখন একজনকে ভালবাসি, তখন আমরা তার গুণগুলো দেখে মুগ্ধ হই ও তার মতো হওয়ার চেষ্টা করি। যিহোবা ও যিশুর মধ্যে থাকা সম্পর্ককে বিবেচনা করুন। তারা স্বর্গে একসঙ্গে সম্ভবত কোটি কোটি বছর ধরে ছিল। তাঁদের দুজনের মধ্যে গভীর, বিশুদ্ধ প্রেম বিদ্যমান ছিল। যিশু তাঁর স্বর্গীয় পিতাকে এতটা নিখুঁতভাবে প্রতিফলিত করেছিলেন যে, তিনি তাঁর শিষ্যদের বলতে পেরেছিলেন: “যে আমাকে দেখিয়াছে, সে পিতাকে দেখিয়াছে।” (যোহন ১৪:৯) যিহোবা ও তাঁর পুত্র সম্বন্ধে আমাদের জ্ঞান ও উপলব্ধি যতই বৃদ্ধি পায়, ততই আমরা তাঁর মতো হওয়ার প্রেরণা পাই। যিহোবার প্রতি আমাদের প্রেম ও সেইসঙ্গে তাঁর পবিত্র আত্মার সাহায্য আমাদেরকে ‘পুরাতন মনুষ্যকে তাহার ক্রিয়াশুদ্ধ বস্ত্রবৎ ত্যাগ করিতে, এবং সেই নূতন মনুষ্যকে পরিধান করিতে’ সমর্থ করবে।—কলসীয় ৩:৯, ১০; গালাতীয় ৫:২২, ২৩.

প্রেম কার্যরত

১৬. কীভাবে ঈশ্বর ও প্রতিবেশীর প্রতি প্রেম আমাদের প্রচার ও শিক্ষাদানের কাজের দ্বারা স্পষ্ট হয়?

১৬ খ্রিস্টান হিসেবে, আমরা ঈশ্বর ও প্রতিবেশীর প্রতি আমাদের প্রেমকে রাজ্য প্রচার ও শিষ্য তৈরির কাজে আমাদেরকে পরিচালিত করার সুযোগ দিই। তা করে, আমরা যিহোবা ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করি, “তাঁহার ইচ্ছা এই, যেন সমুদয় মনুষ্য পরিত্রাণ পায়, ও সত্যের তত্ত্বজ্ঞান পর্য্যন্ত পঁহুছিতে পারে।” (১ তীমথিয় ২:৩, ৪) এভাবে আমরা অন্যদেরকে তাদের হৃদয়ে খ্রিস্টের ব্যবস্থা লিখতে সাহায্য করে আনন্দ খুঁজে পেতে পারি। আর আমরা এটা দেখে উৎফুল্ল হই, যখন তাদের ব্যক্তিত্ব যিহোবার ঐশিক গুণাবলিকে প্রতিফলিত করার জন্য রূপান্তরীকৃত হয়। (২ করিন্থীয় ৩:১৮) সত্যিই, ঈশ্বরকে জানার জন্য অন্যদের সাহায্য করাই হচ্ছে তাদেরকে আমাদের কাছ থেকে দেওয়ার মতো সবচেয়ে মূল্যবান উপহার। যারা যিহোবার বন্ধুত্বকে স্বীকার করে, তারা চিরকাল ধরে তা উপভোগ করতে পারে।

১৭. বস্তুগত বিষয়গুলোর চেয়ে ঈশ্বর ও প্রতিবেশীর প্রতি প্রেম গড়ে তোলা কেন বিজ্ঞতার কাজ?

১৭ আমরা এমন এক জগতে বাস করছি, যেখানে বস্তুগত বিষয়গুলোকে প্রচুর মূল্য দেওয়া হয় ও এমনকি ভালবাসা হয়। তবে, বস্তুগত বিষয়গুলো চিরকালীন নয়। সেগুলো চুরি বা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। (মথি ৬:১৯) বাইবেল আমাদের সাবধান করে: “জগৎ ও তাহার অভিলাষ বহিয়া যাইতেছে; কিন্তু যে ব্যক্তি ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করে, সে অনন্তকালস্থায়ী।” (১ যোহন ২:১৬, ১৭) হ্যাঁ, যিহোবা চিরকাল থাকবেন আর যারা তাঁকে ভালবাসে ও তাঁর সেবা করে তারাও থাকবে। তাই, জগতের বিষয়গুলো, যেগুলো বড় জোর ক্ষণকাল স্থায়ী সেগুলোর অনুধাবন করার চেয়ে ঈশ্বর ও লোকেদের প্রতি প্রেম গড়ে তোলাই কি আরও বেশি অর্থপূর্ণ নয়?

১৮. কীভাবে একজন মিশনারি আত্মত্যাগমূলক প্রেম দেখিয়েছিলেন?

১৮ যারা প্রেম অনুধাবন করে, তারা যিহোবার প্রশংসা আনে। সেনেগালের একজন মিশনারি সোনিয়ার কথা বিবেচনা করুন। তিনি হাইডি নামে একজন মহিলাকে বাইবেল অধ্যয়ন করাতেন, যিনি তার অবিশ্বাসী স্বামীর কাছ থেকে এইচআইভি জীবাণুর দ্বারা সংক্রামিত হয়েছিলেন। তার স্বামীর মৃত্যুর পর, হাইডি বাপ্তিস্ম নিয়েছিলেন কিন্তু শীঘ্রই তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে এবং তাকে এইডস আক্রান্ত অবস্থায় হাসপাতালে ভরতি করা হয়। সোনিয়া বলেন: “হাসপাতালের কর্মীবৃন্দ তাদের যথাসাধ্য করেছিল কিন্তু সেখানে মাত্র অল্প কয়েক জন কর্মী ছিল। হাসপাতালে তার প্রয়োজনগুলোর যত্ন নেওয়ার জন্য মণ্ডলী থেকে স্বেচ্ছাসেবকদের চাওয়া হয়েছিল। দ্বিতীয় দিন রাতে আমি তার বিছানার পাশে একটা মাদুর বিছিয়ে সেখানে ছিলাম ও তার মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তার যত্ন নিয়েছিলাম। সেখানকার দায়িত্বপ্রাপ্ত ডাক্তার বলেছিলেন: ‘আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে যে, কেউ যখন এইডসে আক্রান্ত হয়, তখন এমনকি আত্মীয়স্বজনরা পর্যন্ত জানতে পেরে প্রায়ই তাদের পরিবারের সদস্যদের পরিত্যাগ করে। তা হলে কেন আপনি, যিনি রোগীর কোনো আত্মীয় নন, তার দেশের নন, এমনকি এক জাতির নন, এই ঝুঁকি নিলেন?’ আমি ব্যাখ্যা করেছিলাম যে, আমার কাছে হাইডি এতটাই ঘনিষ্ঠ যেন আমার আপন বোন। আমার এই নতুন বোনটি সম্বন্ধে জানতে পেরে আমি তার যত্ন নিয়ে খুবই আনন্দ পেয়েছি।” প্রসঙ্গক্রমে বলতে হয় যে, হাইডিকে যত্ন নেওয়ার জন্য সোনিয়ার প্রেমময় প্রচেষ্টার কারণে তার কোনো ক্ষতি হয়নি।

১৯. আমাদের হৃদয়ে ঈশ্বরের ব্যবস্থা থাকায় আমাদের কোন সুযোগের সদ্ব্যবহার করা উচিত?

১৯ আত্মত্যাগমূলক প্রেমের অনেক উদাহরণ যিহোবার দাসদের মধ্যে দেখা যেতে পারে। কোনো লিখিত আইনবিধি আজকে ঈশ্বরের লোকেদের শনাক্ত করে না। বরং, আমরা ইব্রীয় ৮:১০ পদে লিখিত বিষয়বস্তুর পরিপূর্ণতা দেখতে পাই: “সেই কালের পর আমি ইস্রায়েল-কুলের সহিত এই নিয়ম” বা চুক্তি “স্থির করিব, ইহা প্রভু [“যিহোবা,” NW] বলেন; আমি তাহাদের চিত্তে আমার ব্যবস্থা দিব, আর তাহাদের হৃদয়ে তাহা লিখিব, এবং আমি তাহাদের ঈশ্বর হইব, ও তাহারা আমার প্রজা হইবে।” আমরা যেন সবসময় প্রেমের ব্যবস্থাকে মূল্যবান বলে গণ্য করি, যা যিহোবা আমাদের হৃদয়ে লিখেছেন আর প্রেম দেখানোর প্রতিটা সুযোগের যেন সদ্ব্যবহার করি।

২০. কেন খ্রিস্টের ব্যবস্থা এক অমূল্য সম্পদ?

২০ এক বিশ্বব্যাপী ভ্রাতৃসমাজ যারা এই ধরনের প্রেম প্রদর্শন করে, তাদের সঙ্গে ঈশ্বরকে সেবা করা কতই না আনন্দের বিষয়! যাদের হৃদয়ে খ্রিস্টের ব্যবস্থা রয়েছে, তারা এই প্রেমশূন্য জগতে এক অমূল্য সম্পদ উপভোগ করে। তারা কেবলমাত্র যিহোবার প্রেমই উপভোগ করে না কিন্তু তারা ভ্রাতৃসমাজের এক প্রগাঢ় বন্ধনে থেকেও আনন্দিত হয়। “দেখ, ইহা কেমন উত্তম ও কেমন মনোহর যে, ভ্রাতারা একসঙ্গে ঐক্যে বাস করে!” যদিও যিহোবার সাক্ষিরা বিভিন্ন দেশে বাস করে, বিভিন্ন ভাষায় কথা বলে এবং বিভিন্ন সংস্কৃতি থেকে আসে, তবুও তারা অদ্বিতীয় ধর্মীয় একতা উপভোগ করে। এই একতা যিহোবার অনুগ্রহ নিয়ে আসে। গীতরচক লিখেছিলেন: “তথায় [প্রেমে ঐক্যবদ্ধ লোকেদের মাঝে] সদাপ্রভু আশীর্ব্বাদ আজ্ঞা করিলেন, অনন্তকালের জন্য জীবন আজ্ঞা করিলেন।”—গীতসংহিতা ১৩৩:১-৩.

আপনি কি উত্তর দিতে পারেন?

• দশ আজ্ঞা কতখানি গুরুত্বপূর্ণ ছিল?

• হৃদয়ে লিখিত ব্যবস্থা কী?

• ‘খ্রীষ্টের ব্যবস্থায়’ প্রেম কোন ভূমিকা পালন করে?

• কোন কোন উপায়ে আমরা ঈশ্বর ও প্রতিবেশীর প্রতি প্রেম দেখাতে পারি?

[২৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

প্রস্তরফলকগুলোতে ইস্রায়েলীয়দের আইনগুলো লেখা ছিল

[২৬ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

খ্রিস্টানদের হৃদয়ে ঈশ্বরের ব্যবস্থা লেখা আছে

[২৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

সোনিয়া ২০০৪ সালে, জেলা সম্মেলনে সেনেগালের একজন মেয়ের সঙ্গে

    বাংলা প্রকাশনা (১৯৮৯-২০২৬)
    লগ আউট
    লগ ইন
    • বাংলা
    • শেয়ার
    • পছন্দসমূহ
    • Copyright © 2025 Watch Tower Bible and Tract Society of Pennsylvania
    • ব্যবহারের শর্ত
    • গোপনীয়তার নীতি
    • গোপনীয়তার সেটিং
    • JW.ORG
    • লগ ইন
    শেয়ার