ওয়াচটাওয়ার অনলাইন লাইব্রেরি
ওয়াচটাওয়ার
অনলাইন লাইব্রেরি
বাংলা
  • বাইবেল
  • প্রকাশনাদি
  • সভা
  • w০৫ ৯/১ পৃষ্ঠা ৮-১২
  • খ্রিস্টের একজন যোদ্ধার মতো ধৈর্য ধরা

এই বাছাইয়ের সঙ্গে কোনো ভিডিও প্রাপ্তিসাধ্য নেই।

দুঃখিত, ভিডিওটা চালানো সম্বভব হচ্ছে না।

  • খ্রিস্টের একজন যোদ্ধার মতো ধৈর্য ধরা
  • ২০০৫ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • উপশিরোনাম
  • অনুরূপ বিষয়বস্ত‌ু
  • দূরবর্তী কারাগারগুলোতে নিয়ে যাওয়া হয়
  • আমাদের বিচ্ছিন্ন উপনিবেশে আধ্যাত্মিক খাদ্য পোঁছায়
  • ক্ষান্ত না হয়ে প্রচার করা
  • এক অপ্রত্যাশিত উৎস থেকে উৎসাহ
  • আবারও কারাগারে, আবারও প্রচারে
  • খ্রিস্টের একজন যোদ্ধা
  • ৫০ বছরেরও অধিক সময় ধরে ‘পার হওয়া’
    ১৯৯৬ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • আমার বাল্যকাল থেকে ধৈর্য সহকারে যিহোবার অপেক্ষা করা
    ১৯৯৭ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • খ্রিস্টের একজন সৈনিক হওয়ার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ
    প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে (অধ্যয়ন)—২০১৭
  • আমি যিহোবাতে নির্ভর করতে শিখেছিলাম
    ১৯৯৮ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
আরও দেখুন
২০০৫ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
w০৫ ৯/১ পৃষ্ঠা ৮-১২

জীবন কাহিনী

খ্রিস্টের একজন যোদ্ধার মতো ধৈর্য ধরা

বলেছেন ইউরি ক্যাপতলা

“এখন আমি দৃঢ়নিশ্চিত যে, সত্যিই তোমার বিশ্বাস রয়েছে!” এই কথাগুলো এক অপ্রত্যাশিত উৎস—সোভিয়েত সৈন্যবাহিনীর একজন অফিসারের কাছ—থেকে এসেছিল আর সেই কথাগুলো একেবারে যথার্থ সময়ে আমাকে উৎসাহ জুগিয়েছিল। আমি দীর্ঘসময়ের জন্য কারাদণ্ড ভোগ করতে যাচ্ছিলাম আর সাহায্যের জন্য যিহোবার কাছে ঐকান্তিকভাবে প্রার্থনা করছিলাম। আমি এক দীর্ঘ সংগ্রামের মুখোমুখি হতে যাচ্ছিলাম, যেটার জন্য ধৈর্য ও দৃঢ়সংকল্পের দরকার হবে।

উনিশশো বাষট্টি সালের ১৯শে অক্টোবর আমি জন্মগ্রহণ করি এবং ইউক্রেনের পশ্চিমাঞ্চলে বড় হয়ে উঠি। সেই বছরই আমার বাবা, যারও নাম ছিল ইউরি, তিনি যিহোবার সাক্ষিদের সংস্পর্শে আসেন। শীঘ্রই তিনি আমাদের গ্রামে যিহোবার প্রথম উপাসক হয়ে ওঠেন। তার কাজ সেই কর্মকর্তাদের অলক্ষিত থাকেনি, যারা যিহোবার সাক্ষিদের বিরোধিতা করত।

কিন্তু, আমাদের প্রতিবেশীদের মধ্যে অনেকেই, আমার বাবামার খ্রিস্টীয় গুণাবলি এবং অন্যদের জন্য চিন্তা দেখানোর জন্য তাদেরকে সম্মান করত। আমার বাবামা আমার তিন বোন ও আমার মধ্যে একেবারে ছোটোবেলা থেকেই ঈশ্বরের ভালবাসা গেঁথে দেওয়ার জন্য প্রতিটা সুযোগকে কাজে লাগিয়েছিল আর এটা আমাকে স্কুলে যেসমস্ত সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিলাম, সেগুলোর মোকাবিলা করতে সাহায্য করেছিল। এরকম একটা সমস্যা এসেছিল যখন প্রত্যেকটা ছাত্রকে একটা ব্যাজ পরতে বলা হয়েছিল, যেটা তাকে লেনিন্‌স অক্টোবর চিলড্রেন এর একজন বলে শনাক্ত করত। আমার খ্রিস্টীয় নিরপেক্ষতার কারণে আমি সেই ব্যাজ পরিনি আর তাই আলাদা হিসেবে প্রতীয়মান হই।—যোহন ৬:১৫; ১৭:১৬.

পরে আমি যখন তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ি, তখন সমস্ত ছাত্রকে ইয়াং পাইয়োনিয়ারস্‌ নামে এক সাম্যবাদী যুব সংগঠনে যোগ দিতে বলা হয়। একদিন এই সংগঠনে তালিকাভুক্তির অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য আমাদের ক্লাসের সকলকে বাইরে স্কুলের মাঠে নিয়ে যাওয়া হয়। আমাকে উপহাস ও তিরস্কার করা হবে এই ভেবে আমি খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। আমি ছাড়া বাকি প্রত্যেকেই বাড়ি থেকে নতুন লাল রংয়ের পাইয়োনিয়ার স্কার্ফ নিয়ে আসে আর ছাত্ররা স্কুলের অধ্যক্ষ, শিক্ষক ও উঁচুক্লাসের ছাত্রদের সামনে এক লম্বা সারিতে দাঁড়িয়ে থাকে। যখন উঁচুক্লাসের ছাত্রদেরকে আমাদের গলায় স্কার্ফ বেঁধে দিতে বলা হয়েছিল, তখন আমি আমার মাথা নিচু করে নীচের দিকে তাকিয়ে ছিলাম, এটা ভেবে যে, কেউই আমার দিকে খেয়াল করবে না।

দূরবর্তী কারাগারগুলোতে নিয়ে যাওয়া হয়

আমার বয়স যখন ১৮ বছর, তখন খ্রিস্টীয় নিরপেক্ষতা বজায় রাখার কারণে আমার তিন বছরের কারাদণ্ড হয়। (যিশাইয় ২:৪) প্রথম বছর আমি ইউক্রেনের ভিনিটস্কেয়ে জেলার ট্রুডোভোই শহরের কারাগারে থাকি। সেখানে থাকাকালীন, অন্যান্য প্রায় ৩০ জন যিহোবার সাক্ষির সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয়। মূল দল থেকে বিচ্ছিন্ন করে আমাদের দুজন দুজন করে ভিন্ন ভিন্ন কাজ দেওয়া হয়, কারণ কর্তৃপক্ষ চেয়েছিল আমরা যেন একে অপরের সঙ্গে মেলামেশা করতে না পারি।

১৯৮২ সালের আগস্ট মাসে, আরেকজন সাক্ষি ইডুয়ার্ট এবং আমাকে অন্যান্য বন্দির একটা দলের সঙ্গে ট্রেনে বন্দিদের জন্য তৈরি কামরাগুলোতে ঢুকিয়ে উত্তরে ইউরাল মাউনটেইনস্‌-এ পাঠানো হয়। পার্মস্কেয়ে জেলার সলিইকেম্‌স্ক শহরে পৌঁছানোর আগে পর্যন্ত আট দিন ধরে আমাদেরকে প্রচণ্ড গরম সহ্য করতে হয় ও গাদাগাদি করে থাকতে হয়। ইডুয়ার্ট ও আমাকে আলাদা আলাদা কক্ষে রাখা হয়। দুসপ্তাহ পর, আমাকে আরও উত্তরে ক্রেসনোভিশার্স্কি অঞ্চলের ভিয়ল্‌সে নিয়ে যাওয়া হয়।

আমাদের গাড়ি মাঝরাতে পৌঁছায় আর তখন ঘুটঘুটে অন্ধকার ছিল। অন্ধকার সত্ত্বেও, একজন অফিসার আমাদের দলকে নৌকায় করে একটা নদী পার হওয়ার আদেশ দেন। আমরা নদী কিংবা নৌকা কিছুই দেখতে পাচ্ছিলাম না! তবুও, আমরা চারদিকে অন্ধের মতো হাতড়ে বেড়াই যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা একটা নৌকার ওপরে এসে হোঁচট খাই আর ভয় পাওয়া সত্ত্বেও কোনোমতে নদী পার হই। অপর পাড়ে পৌঁছেই, আমরা একটা আলোর দিকে এগোতে থাকি যেটা কাছাকাছি একটা পাহাড়ের ওপরে দেখা যাচ্ছিল আর সেখানে আমরা কয়েকটা তাঁবু দেখতে পাই। এটাই আমাদের নতুন ঘর হতে চলেছিল। অন্যান্য প্রায় ৩০ জন বন্দির সঙ্গে আমি তুলনামূলকভাবে একটা বড় তাঁবুতে থাকতাম। শীতকালে, আমাদেরকে কখনো কখনো এমন তাপমাত্রা সহ্য করতে হতো, যা ছিল হিমাংকের নীচে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস আর তাঁবু সামান্যই গরম থাকত। বন্দিদের প্রধান কাজ ছিল গাছ কাটা কিন্তু আমি বন্দিদের জন্য কুঁড়েঘর তৈরির কাজ করতাম।

আমাদের বিচ্ছিন্ন উপনিবেশে আধ্যাত্মিক খাদ্য পোঁছায়

সেই উপনিবেশে আমিই একমাত্র সাক্ষি ছিলাম; কিন্তু যিহোবা আমাকে পরিত্যাগ করেননি। একদিন আমার মায়ের কাছ থেকে একটা পার্সেল আসে, যিনি তখনও পশ্চিম ইউক্রেনে থাকতেন। একজন রক্ষী যখন পার্সেলটা খোলেন, তখন প্রথমেই যে-জিনিসটা তিনি দেখতে পান সেটা ছিল একটি ছোট বাইবেল। তিনি সেটি তুলে নেন এবং দ্রুত পাতাগুলো উলটাতে থাকেন। আমি এমন কিছু বলার জন্য ভাবতে চেষ্টা করি, যা এই আধ্যাত্মিক সম্পদকে বাজেয়াপ্ত করা থেকে বিরত করবে। “এটা কী?” রক্ষীটি বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করেন। কী উত্তর দেব তা চিন্তা করার আগেই, কাছেই দাঁড়িয়ে থাকা একজন ইনস্পেকটর উত্তর দেন: “এটা একটা ডিকশনারি।” আমি কিছুই বলিনি। (উপদেশক ৩:৭) ইনস্পেকটর পার্সেলের বাকি জিনিসগুলো তল্লাশি করেন এবং তারপর মূল্যবান বাইবেলসহ পার্সেলটা আমার হাতে তুলে দেন। আমি এত খুশি হয়েছিলাম যে, আমি আমার পার্সেল থেকে তাকে কিছু বাদাম দিয়েছিলাম। এই পার্সেলটা পেয়ে আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে, যিহোবা আমাকে ভুলে যাননি। তিনি উদারভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন এবং আমার আধ্যাত্মিক প্রয়োজনগুলোর যত্ন নিয়েছিলেন।—ইব্রীয় ১৩:৫.

ক্ষান্ত না হয়ে প্রচার করা

কয়েক মাস পর, আমি একজন খ্রিস্টান ভাইয়ের কাছ থেকে একটা চিঠি পেয়ে অবাক হয়ে গিয়েছিলাম, যিনি প্রায় ৪০০ কিলোমিটার দূরে কারাগারে বন্দি ছিলেন। তিনি আমাকে একজন আগ্রহী ব্যক্তিকে খুঁজে বের করতে বলেছিলেন আর সেই ব্যক্তি হয়তো আমার শিবিরেই আছেন। এইরকম খোলাখুলি একটা চিঠি লেখা বিজ্ঞতার কাজ ছিল না, কারণ আমাদের চিঠিগুলোকে পরীক্ষা করা হতো। এতে অবাক হওয়ার কিছুই নেই যে, একজন অফিসার আমাকে তার অফিসে ডেকে পাঠান এবং প্রচার না করার জন্য জোরালোভাবে সাবধান করে দেন। এরপর তিনি আমাকে একটা কাগজে সই করার আদেশ দেন যাতে লেখা ছিল যে, আমি আমার বিশ্বাস সম্বন্ধে অন্যদের জানাব না। আমি উত্তর দিয়েছিলাম যে, আমি বুঝতে পারছি না যে কেন আমাকে এই ধরনের একটা মন্তব্যে সই করতে হবে, কারণ ইতিমধ্যে প্রত্যেকেই জেনে গিয়েছে যে, আমি একজন যিহোবার সাক্ষি। আমি উল্লেখ করেছিলাম যে, অন্য বন্দিরা জানতে চেয়েছিল যে, কেন আমাকে কারাগারে বন্দি করা হয়েছে। তাদেরকে আমার কী বলা উচিত? (প্রেরিত ৪:২০) সেই অফিসার বুঝতে পেরেছিলেন যে, তিনি আমাকে ভয় দেখাতে পারবেন না, তাই তিনি আমার কাছ থেকে রেহাই পাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। আমাকে আরেকটা শিবিরে পাঠানো হয়েছিল।

আমাকে ২০০ কিলোমিটার দূরে ভেয়ে গ্রামে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল। সেখানে তত্ত্বাবধায়করা আমার খ্রিস্টীয় মানকে সম্মান করত আর তারা আমাকে অসামরিক কাজে নিযুক্ত করেছিল—প্রথমে একজন ছুতোর মিস্ত্রি হিসেবে, এরপর একজন ইলেকট্রিশিয়ান হিসেবে। কিন্তু এই কাজগুলো বিভিন্ন প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে এসেছিল। একবার, আমাকে আমার যন্ত্রপাতিগুলো নিয়ে গ্রামের ক্লাবে যেতে বলা হয়েছিল। আমি যখন পৌঁছাই, তখন ক্লাবের সৈন্যরা আমাকে দেখে খুশি হয়েছিল। তারা সামরিক প্রতীকচিহ্নগুলোকে আলোকিত করার বাতিগুলো ঠিক মতো জ্বালাতে পারছিল না। তারা চেয়েছিল আমি যেন সেগুলোকে ঠিক করতে তাদেরকে সাহায্য করি কারণ তারা বার্ষিক রেড আর্মি ডে উদ্‌যাপনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল। কী করব সেই বিষয়ে প্রার্থনাপূর্বক চিন্তা করার পর, আমি তাদেরকে বলেছিলাম যে, আমি এই ধরনের কাজ করতে পারব না। আমি আমার যন্ত্রপাতিগুলো তাদেরকে দিয়ে চলে আসি। আমাকে উপপরিচালকের কাছে হাজিরা দিতে বলা হয় এবং আমি খুব অবাক হয়েছিলাম, যখন তিনি আমার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো শুনেছিলেন এবং এভাবে উত্তর দিয়েছিলেন: “এই কারণে আমি তাকে সম্মান করি। তিনি একজন নীতিবান ব্যক্তি।”

এক অপ্রত্যাশিত উৎস থেকে উৎসাহ

কারাগারে বন্দি থাকার ঠিক তিন বছর পর, ১৯৮৪ সালের ৮ই জুন আমাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ইউক্রেনে ফিরে এসে, আমাকে বেসামরিক সৈন্যবাহিনীতে একজন প্রাক্তন বন্দি হিসেবে নিজের নাম রেজিস্টার করতে হয়। কর্মকর্তারা আমাকে বলেছিল যে ছয় মাসের মধ্যে, আমাকে আবার বিচারের জন্য আদালতে নিয়ে আসা হবে আর তাই সেই জেলা থেকে একেবারে চলে যাওয়াই আমার জন্য সবচেয়ে ভাল হবে। সুতরাং আমি ইউক্রেন ছেড়ে চলে যাই এবং শেষে লাটভিয়াতে কাজ খুঁজে পাই। কিছু সময়ের জন্য আমি প্রচার করতে এবং সাক্ষিদের একটা ছোট দলের সঙ্গে মেলামেশা করতে সক্ষম হই, যারা রাজধানী রিগায় ও তার আশেপাশে বাস করত। কিন্তু, মাত্র এক বছর পরই সৈন্যবাহিনীতে কাজ করার জন্য আমাকে আবারও ডেকে পাঠানো হয়। সৈন্যবাহিনীর তালিকাভুক্তকরণ অফিসে, আমি অফিসারকে বলেছিলাম যে, আমি আগে সৈন্যবাহিনীতে কাজ করা প্রত্যাখ্যান করেছিলাম। উত্তরে তিনি চিৎকার করে বলেছিলেন: “তুমি কি সত্যিই জানো তুমি কী করছো? দেখব তুমি লেফটেন্যান্ট কর্নেলকে কী বলো!”

তিনি আমাকে তিনতলায় একটা ঘরে নিয়ে আসেন, যেখানে লেফটেন্যান্ট কর্নেল লম্বা একটা টেবিলের পিছনে বসেছিলেন। আমি যখন আমার অবস্থান সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করছিলাম, তখন তিনি তা মন দিয়ে শুনেছিলেন এবং তারপর আমাকে বলেছিলেন যে, সৈন্যবাহিনীর তালিকাভুক্তকরণ কমিটির মুখোমুখি হওয়ার আগে এখনও আমার সিদ্ধান্তকে পুনর্বিবেচনা করার সময় আমার রয়েছে। আমরা লেফটেন্যান্ট কর্নেলের অফিস ছেড়ে যাওয়ার সময়, সেই অফিসার যিনি প্রথমে আমার সঙ্গে চিৎকার-চ্যাঁচামেচি করেছিলেন তিনি দোষ স্বীকার করে বলেছিলেন: “এখন আমি দৃঢ়নিশ্চিত যে, সত্যিই তোমার বিশ্বাস রয়েছে!” যখন আমাকে এক সামরিক কমিটির সামনে নিয়ে আসা হয়, তখন আমি পুনরায় আমার নিরপেক্ষ অবস্থানের কথা জানাই আর কিছু সময়ের জন্য তারা আমাকে যেতে দেয়।

সেই সময়ে, আমি একটা হোস্টেলে থাকতাম। একদিন সন্ধ্যায়, আমি দরজায় হালকাভাবে কড়া নাড়তে শুনি। আমি দরজা খুলি আর দেখি যে, একটা ব্রিফকেস নিয়ে সুট পরা একজন ভদ্রলোক। তিনি এই বলে পরিচয় দেন: “আমি রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিভাগ থেকে আসছি। আমি জানি যে, আপনি মুশকিলে পড়েছেন এবং আপনাকে আদালতে যেতে হবে।” “হ্যাঁ, তা ঠিক,” আমি উত্তর দিয়েছিলাম। ভদ্রলোক বলে চলেন: “আমরা আপনাকে সাহায্য করতে পারি যদি আপনি আমাদের সঙ্গে সহযোগিতা করতে রাজি হন।” “না, তা সম্ভব নয়,” আমি বলেছিলাম। “আমি আমার খ্রিস্টীয় বিশ্বাসের প্রতি অনুগত থাকব।” আমাকে জোরাজুরি করার কোনোরকম চেষ্টা না করে তিনি চলে যান।

আবারও কারাগারে, আবারও প্রচারে

১৯৮৬ সালের ২৬শে আগস্ট, ন্যাশনাল কোর্ট অফ রিগা আমাকে চার বছরের জোরপূর্বক কাজ করার শাস্তি দেয় আর তাই আমাকে রিগা কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। তারা আমাকে আরও ৪০ জন বন্দির সঙ্গে একটা বড় কক্ষে রাখে এবং আমি সেই কক্ষের প্রত্যেক বন্দির কাছে প্রচার করার চেষ্টা করি। কেউ কেউ ঈশ্বরে বিশ্বাস করে বলে দাবি করে; অন্যেরা কেবল হেসে উড়িয়ে দেয়। আমি লক্ষ করেছিলাম যে, লোকেরা বিভিন্ন দলে মিলিত হয়েছিল এবং দুসপ্তাহ পরে এই দলগুলোর নেতারা আমাকে বলেছিল যে, আমাকে প্রচার করতে দেওয়া হবে না, কারণ আমি তাদের অলিখিত নিয়মকানুন মেনে চলি না। আমি ব্যাখ্যা করেছিলাম আমি ঠিক আলাদা আইনকানুন দ্বারা জীবনযাপন করার কারণেই কারাগারে ছিলাম।

আমি সতর্কতার সঙ্গে প্রচার করে চলেছিলাম এবং যখন আমি আধ্যাত্মিকমনা কাউকে পেয়েছিলাম, তখন আমি তাদের মধ্যে চার জনের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করতে পেরেছিলাম। আমাদের আলোচনাগুলোর সময়ে, তারা একটা নোটবুকে বাইবেলের মৌলিক শিক্ষাগুলোকে লিখে রাখত। কয়েক মাস পরে, আমাকে ভেলমাইয়েরাতে কড়া নিরাপত্তার একটা শিবিরে পাঠানো হয়েছিল যেখানে আমি একজন ইলেকট্রিশিয়ান হিসেবে কাজ করি। সেখানে আমি আরেকজন ইলেকট্রিশিয়ানের সঙ্গে কাজ করি, যিনি চার বছর পরে একজন যিহোবার সাক্ষি হন।

১৯৮৮ সালের ২৪শে মার্চ, আমাকে কড়া নিরাপত্তার শিবির থেকে কাছাকাছি একটা উপনিবেশিক শিবিরে নিয়ে যাওয়া হয়। এটা সত্যিই এক আশীর্বাদ ছিল, কারণ এটা আমাকে আরও বেশি স্বাধীনতা দিয়েছিল। আমাকে বিভিন্ন নির্মাণস্থলে কাজ করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল আর তাই আমি সবসময় প্রচার করার সুযোগগুলো খুঁজতাম। প্রায়ই, আমি শিবির থেকে দূরে কোনো স্থানে যেতাম এবং সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রচার করতাম কিন্তু উপনিবেশে ফিরে আসার সময় আমার কখনো কোনো সমস্যা হয়নি।

যিহোবা আমার প্রচেষ্টায় আশীর্বাদ করেছেন। সেই এলাকায় অল্প কয়েক জন সাক্ষি বাস করত কিন্তু সেই শহরে ভিলমা ক্রুমিনিয়া নামে মাত্র একজন বয়স্কা সাক্ষি বোন ছিলেন। বোন ক্রুমিনিয়া এবং আমি অল্পবয়স্ক ছেলেমেয়েদের সঙ্গে বেশ কয়েকটা বাইবেল অধ্যয়ন করতাম। মাঝে মাঝে, ভাইবোনেরা পরিচর্যায় অংশ গ্রহণ করার জন্য রিগা থেকে আসত এবং কিছু নিয়মিত অগ্রগামী এমনকি লেনিনগ্র্যাড (এখন সেন্ট পিটার্সবার্গ) থেকে আসত। যিহোবার সাহায্যে, আমরা বেশ কিছু বাইবেল অধ্যয়ন শুরু করেছিলাম এবং শীঘ্রই আমি অগ্রগামী পরিচর্যা শুরু করি, প্রচার কাজে মাসে ৯০ ঘন্টা দিই।

১৯৯০ সালের ৭ই এপ্রিল, আমার মামলাটা পুনর্বিবেচনার জন্য ভেলমাইয়েরার পিপলস্‌ কোর্ট-এ তোলা হয়। যখন শুনানি শুরু হয়, তখন আমি উকিলকে চিনতে পারি। তিনি ছিলেন একজন যুবক ব্যক্তি যার সঙ্গে আমি আগে বাইবেল সম্বন্ধে আলোচনা করেছিলাম! তিনিও আমাকে চিনতে পারেন ও হাসেন কিন্তু কিছুই বলেননি। সেই দিনে আদালতে বিচারক আমাকে যা বলেছিলেন তা এখনও আমার মনে আছে: “ইউরি, চার বছর আগে তোমাকে কারাদণ্ড দেওয়ার রায়টা বেআইনি ছিল। তাদের তোমাকে অপরাধী বলে অভিযুক্ত করা উচিত হয়নি।” অপ্রত্যাশিতভাবে, আমি মুক্তি পেয়েছিলাম!

খ্রিস্টের একজন যোদ্ধা

১৯৯০ সালের জুন মাসে, রিগাতে থাকার অনুমতি পাওয়ার জন্য আমার আবারও সৈন্যবাহিনীর তালিকাভুক্তকরণ অফিসে রেজিস্টার করার দরকার হয়। আমি সেই একই অফিসে ঢুকি যেখানে লম্বা টেবিলটা ছিল আর চার বছর আগে আমি লেফটেন্যান্ট কর্নেলকে বলেছিলাম যে, আমি সৈন্যবাহিনীতে কাজ করব না। এই সময়, তিনি আমাকে অভিনন্দন জানান, হাত মিলিয়ে বলেন: “এটা খুবই লজ্জাজনক যে, তোমাকে এত কিছু ভোগ করতে হয়েছে। এইজন্য আমি দুঃখিত।”

আমি উত্তর দিয়েছিলাম: “আমি খ্রিস্টের একজন যোদ্ধা আর তাই আমাকে আমার দায়িত্ব পূর্ণ করতে হবে। বাইবেলের সাহায্যে আপনিও খ্রিস্ট তাঁর অনুসারীদের কাছে যা প্রতিজ্ঞা করেছেন, তা উপভোগ করতে পারেন—এক সুখী জীবন ও অনন্ত ভবিষ্যৎ।” (২ তীমথিয় ২:৩, ৪) কর্নেল উত্তর দিয়েছিলেন: “অল্প দিন হল আমি একটি বাইবেল কিনেছি আর আমি এখন এটি পড়ছি।” আমার কাছে আপনি পরমদেশ পৃথিবীতে অনন্তকাল বেঁচে থাকতে পারেন বইটি ছিল।a আমি শেষকালের চিহ্ন নিয়ে আলোচনা করতে সেই অধ্যায়টি খুলি এবং তাকে দেখাই যে, কীভাবে বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণী আমাদের কালের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। গভীর উপলব্ধির সঙ্গে কর্নেল পুনরায় আমার সঙ্গে হাত মেলান এবং আমার কাজের সাফল্য কামনা করেন।

এই সময়ের মধ্যে, লাটভিয়ায় শস্য কাটার জন্য ক্ষেত্র সত্যিই শ্বেতবর্ণ হয়েছিল। (যোহন ৪:৩৫) ১৯৯১ সালে, আমি মণ্ডলীর একজন প্রাচীন হিসেবে সেবা করি। পুরো দেশে মাত্র দুজন নিযুক্ত প্রাচীন ছিল! এক বছর পরে, লাটভিয়ার একমাত্র মণ্ডলীটা দুটো মণ্ডলীতে বিভক্ত হয়—একটা লাটভিয়াভাষী এবং অন্যটা রুশভাষী। আমি রুশভাষী মণ্ডলীর সঙ্গে সেবা করার সুযোগ পেয়েছিলাম। বৃদ্ধি এত দ্রুত হচ্ছিল যে, পরের বছর আমাদের মণ্ডলীটা তিনটে মণ্ডলীতে বিভক্ত হয়! পূর্বের দিনগুলোর দিকে যখন আমি ফিরে তাকাই, তখন এটা স্পষ্ট যে যিহোবা নিজেই তাঁর মেষদের তাঁর সংগঠনের দিকে পরিচালনা করছিলেন।

১৯৯৮ সালে, আমাকে জালভাগাতে একজন বিশেষ অগ্রগামী হিসেবে সেবা করার জন্য নিযুক্ত করা হয়, যেটা রিগার ৪০ কিলোমিটার দক্ষিণে একটা শহর। সেই বছরই, লাটভিয়া থেকে আমিই ছিলাম প্রথম ব্যক্তি যাকে মিনিস্টিরিয়াল ট্রেনিং স্কুল-এ যোগদান করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়, যেটা রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গের কাছে সোলনেচনোয়িতে রুশ ভাষায় পরিচালিত হয়েছিল। পরিচর্যায় সফল হতে গেলে লোকেদের প্রতি প্রেমময় মনোভাব থাকা যে কত গুরুত্বপূর্ণ, তা আমি স্কুলে থাকার সময় উপলব্ধি করেছিলাম। যে-বিষয়টা আমার ওপর বিশেষভাবে ছাপ ফেলেছিল সেটা হল, বেথেল পরিবার ও স্কুলের নির্দেশকদের দেখানো ভালবাসা ও মনোযোগ, যেটা স্কুলে যা শেখানো হয়েছিল তার চাইতে বেশি ছিল।

২০০১ সালে আমার জীবনে আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছিল, যখন আমি কারিনা নামে এক চমৎকার খ্রিস্টান মহিলাকে বিয়ে করি। কারিনা আমার সঙ্গে বিশেষ পূর্ণসময়ের পরিচর্যায় যোগদান করে আর প্রতিদিন আমি যখন আমার স্ত্রীকে খুবই আনন্দিত মনে ক্ষেত্রের পরিচর্যা থেকে ফিরে আসতে দেখি, তখন আমি উৎসাহিত হই। সত্যই, যিহোবাকে সেবা করা অত্যন্ত আনন্দের বিষয়। সাম্যবাদী শাসনাধীনে কঠোর অভিজ্ঞতাগুলো আমাকে তাঁর ওপর পুরোপুরিভাবে নির্ভর করতে শিখিয়েছে। যে-ব্যক্তি যিহোবার সঙ্গে বন্ধুত্ব বজায় রাখতে এবং তাঁর সার্বভৌমত্বকে সমর্থন করতে চায় তার কাছে কোনো ত্যাগস্বীকারই এত বড় নয়। অন্যদেরকে যিহোবার সম্বন্ধে শিখতে সাহায্য করা আমার জীবনে উদ্দেশ্য এনে দিয়েছে। ‘খ্রীষ্টের উত্তম যোদ্ধার মত’ যিহোবার সেবা করা আমার কাছে এক অপূর্ব সম্মানজনক বিষয় হয়েছে।—২ তীমথিয় ২:৩.

[পাদটীকা]

a যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত কিন্তু এখন আর ছাপানো হয় না।

[১০ পৃষ্ঠার চিত্র]

আমাকে চার বছরের জন্য জোরপূর্বক কাজ করার শাস্তি দেওয়া হয়েছিল এবং রিগা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি করে রাখা হয়েছিল

[১২ পৃষ্ঠার চিত্র]

পরিচর্যায় কারিনার সঙ্গে

    বাংলা প্রকাশনা (১৯৮৯-২০২৬)
    লগ আউট
    লগ ইন
    • বাংলা
    • শেয়ার
    • পছন্দসমূহ
    • Copyright © 2025 Watch Tower Bible and Tract Society of Pennsylvania
    • ব্যবহারের শর্ত
    • গোপনীয়তার নীতি
    • গোপনীয়তার সেটিং
    • JW.ORG
    • লগ ইন
    শেয়ার