ওয়াচটাওয়ার অনলাইন লাইব্রেরি
ওয়াচটাওয়ার
অনলাইন লাইব্রেরি
বাংলা
  • বাইবেল
  • প্রকাশনাদি
  • সভা
  • w০৭ ১০/১৫ পৃষ্ঠা ২০-২৪
  • ভিতর থেকে আসা রব শুনুন

এই বাছাইয়ের সঙ্গে কোনো ভিডিও প্রাপ্তিসাধ্য নেই।

দুঃখিত, ভিডিওটা চালানো সম্বভব হচ্ছে না।

  • ভিতর থেকে আসা রব শুনুন
  • ২০০৭ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • উপশিরোনাম
  • অনুরূপ বিষয়বস্ত‌ু
  • “বিবেকের রব”
  • আপনার বিবেক—এটা কীভাবে কাজ করে?
  • ভিতর থেকে আসা রবকে উন্নত করা
  • আপনার বিবেক কি সুশিক্ষিত?
    ২০০৫ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • কীভাবে আপনি এক উত্তম বিবেক বজায় রাখতে পারেন?
    “ঈশ্বরের প্রেমে আপনাদিগকে রক্ষা কর”
  • আপনার বিবেক কি এক নির্ভরযোগ্য নির্দেশক?
    ২০১৫ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • বিবেক—একটি বোঝা অথবা এক সম্পদ?
    ১৯৯৭ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
আরও দেখুন
২০০৭ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
w০৭ ১০/১৫ পৃষ্ঠা ২০-২৪

ভিতর থেকে আসা রব শুনুন

“যে পরজাতিরা [ঈশ্বরের] কোন ব্যবস্থা পায় নাই, তাহারা . . . স্বভাবতঃ ব্যবস্থানুযায়ী আচরণ করে।”—রোমীয় ২:১৪.

১, ২. (ক) কীভাবে অনেকে অন্যদের প্রতি আগ্রহের কারণে পদক্ষেপ নিয়েছে? (খ) কোন শাস্ত্রীয় উদাহরণগুলো অন্যদের প্রতি আগ্রহের বিষয়টা তুলে ধরে?

পাতাল রেলের প্ল্যাটফর্মের মধ্যে ২০ বছর বয়সি একজন ব্যক্তি মৃগীরোগের কারণে মূর্চ্ছা গিয়ে রেললাইনের ওপরে পড়ে যায়। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একটা লোক তা দেখে তার মেয়েদের ধরে রাখা হাত ছেড়ে দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে নীচে লাফ দিয়ে নামেন। সেই মূর্চ্ছা যাওয়া ব্যক্তিকে তিনি টেনে রেললাইনগুলোর মাঝখানের প্রণালীতে নিয়ে আসেন এবং তীব্র শব্দে তাদের পাশে থেমে যাওয়া ট্রেনের হাত থেকে তাকে বাঁচান। কেউ কেউ হয়তো সেই উদ্ধারকারীকে বীরপুরুষ বলবেন কিন্তু তিনি বলেছিলেন: “আপনার উচিত সঠিক কাজটা করা। আমি এটা দয়ার বশবর্তী হয়ে করেছি। কোনো স্বীকৃতি বা গৌরব পাওয়ার জন্য নয়।”

২ আপনি হয়তো এমন কাউকে চেনেন, যিনি অন্যদের সাহায্য করার জন্য ঝুঁকি নিয়ে থাকেন। অনেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় অপরিচিত ব্যক্তিদের লুকিয়ে রাখার মাধ্যমে তা করেছিল। এ ছাড়া, প্রেরিত পৌল ও ২৭৫ জন ব্যক্তির অভিজ্ঞতার কথাও স্মরণ করে দেখুন, যখন সিসিলি দ্বীপের কাছে মিলিতাতে জাহাজডুবি হয়েছিল। স্থানীয় লোকেরা সেই অপরিচিত ব্যক্তিদের সাহায্য করেছিল, “অসাধারণ সৌজন্য” বা দয়া দেখিয়েছিল। (প্রেরিত ২৭:২৭–২৮:২) অথবা সেই ইস্রায়েলীয় মেয়ে সম্বন্ধে কী বলা যায়, যে তার একজন অরামীয় বন্দিকর্তার মঙ্গলের প্রতি সদয় চিন্তা দেখিয়েছিল, যদিও এর জন্য তার জীবনকে হয়তো ঝুঁকির মুখে ফেলতে হয়নি? (২ রাজাবলি ৫:১-৪) আর যিশুর বলা প্রতিবেশীসুলভ শমরীয়ের সুপরিচিত নীতিগল্পটিও মনে করে দেখুন। একজন যাজক ও একজন লেবীয় অর্ধমৃত সহযিহুদিকে উপেক্ষা করেছিল অথচ একজন শমরীয় তাকে সাহায্য করার জন্য বিশেষ প্রচেষ্টা করেছিলেন। এই নীতিগল্প শত শত বছর ধরে অনেক সংস্কৃতির লোকের হৃদয় স্পর্শ করেছে।—লূক ১০:২৯-৩৭.

৩, ৪. ঝুঁকি সত্ত্বেও অনেক লোক যে নিঃস্বার্থপরভাবে কাজ করে, তা ক্রমবিবর্তনবাদের মতবাদ সম্বন্ধে আমাদের কী জানায়?

৩ এটা ঠিক যে, আমরা ‘বিষম সময়ে’ বাস করছি; অনেক লোক “প্রচণ্ড” এবং “সদ্‌বিদ্বেষী।” (২ তীমথিয় ৩:১-৪) তা সত্ত্বেও, আমরা কি দয়ার কাজগুলো দেখছি না, যেগুলো থেকে হয়তো নিজেরাই উপকার লাভ করছি? অন্যদের সাহায্য করার প্রবণতা, এমনকি নিজের জীবনের ঝুঁকি থাকলেও, এতটাই সাধারণ যে, কেউ কেউ এটাকে “মানবতা” বলে অভিহিত করে।

৪ নিজের জীবনের ঝুঁকি থাকলেও এই ধরনের সাহায্য করার ইচ্ছা সমস্ত জাতি ও সংস্কৃতির মধ্যে দেখা যায় আর তা ক্রমবিবর্তনবাদের বিপরীত। আমেরিকার একজন বিজ্ঞানী ফ্রান্সিস এস. কোলিন্স বলেছিলেন: “নিঃস্বার্থপর মনোভাব ক্রমবিবর্তনবাদীদের জন্য এক বিরাট প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে এসেছে। . . . এটাকে নিজেদের টিকিয়ে রাখার জন্য নির্দিষ্ট স্বার্থপর জীনগুলোর তীব্র আকাঙ্ক্ষার দ্বারা ব্যাখ্যা করা যেতে পারে না।” তিনি আরও বলেছিলেন: “কোনো কোনো লোক, তাদের দলের [পরিবারের, বর্ণের, সমাজের, ধর্মের] অন্তর্ভুক্ত নয় এবং যাদের সঙ্গে তাদের কোনো মিলই নেই, এমন ব্যক্তিদের জন্য আত্মত্যাগমূলকভাবে নিজেদের বিলিয়ে দেয়। . . . এই নিঃস্বার্থপরতাকে ডারউনের মতবাদ দ্বারা ব্যাখ্যা করা যাবে বলে মনে হয় না।”

“বিবেকের রব”

৫. প্রায়ই লোকেদের মধ্যে কী দেখা যায়?

৫ ড. কোলিন্স আমাদের নিঃস্বার্থপর মনোভাবের একটা দিকের প্রতি নির্দেশ করেন: “বিবেকের রব আমাদেরকে অন্য ব্যক্তিদের সাহায্য করার জন্য আহ্বান করে, এমনকি এর প্রতিদানে আমরা যদি কোনোকিছু না-ও পাই।”a তার দ্বারা উল্লেখিত ‘বিবেক’ শব্দটি হয়তো আমাদেরকে সেই বিষয়টা মনে করিয়ে দেয়, যে-সম্বন্ধে প্রেরিত পৌল বলেছিলেন: “যে পরজাতিরা কোন ব্যবস্থা পায় নাই, তাহারা যখন স্বভাবতঃ ব্যবস্থানুযায়ী আচরণ করে, তখন কোন ব্যবস্থা না পাইলেও আপনাদের ব্যবস্থা আপনারাই হয়; যেহেতুক তাহারা ব্যবস্থার কার্য্য আপন আপন হৃদয়ে লিখিত বলিয়া দেখায়, তাহাদের সংবেদও সঙ্গে সঙ্গে সাক্ষ্য দেয়, এবং তাহাদের নানা বিতর্ক পরস্পর হয় তাহাদিগকে দোষী করে, না হয় তাহাদের পক্ষ সমর্থন করে।”—রোমীয় ২:১৪, ১৫.

৬. কেন সমস্ত লোক সৃষ্টিকর্তার কাছে নিকাশ দিতে বাধ্য?

৬ রোমীয়দের কাছে পত্র লেখার সময় পৌল দেখিয়েছিলেন যে, মানুষ ঈশ্বরের কাছে নিকাশ দিতে বাধ্য কারণ বাহ্য বিষয়গুলো থেকে তাঁর অস্তিত্ব ও গুণাবলি স্পষ্ট দেখা যায়। “জগতের সৃষ্টিকাল অবধি” তা দেখা যাচ্ছে। (রোমীয় ১:১৮-২০; গীতসংহিতা ১৯:১-৪) এটা ঠিক যে, অনেকে তাদের সৃষ্টিকর্তাকে উপেক্ষা করে এবং নৈতিকভাবে অন্যায় জীবনযাপন করে। তবে, ঈশ্বরের ইচ্ছা হল, মানুষ যেন তাঁর ধার্মিকতাকে স্বীকার করে এবং মন্দ অভ্যাসগুলোর জন্য অনুতপ্ত হয়। (রোমীয় ১:২২–২:৬) যিহুদিদের তা করার অনেক জোরালো কারণ ছিল—তাদেরকে মোশির মাধ্যমে ঈশ্বরের ব্যবস্থা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, এমনকি যে-লোকেদের কাছে “ঈশ্বরের বচনকলাপ” নেই, তাদেরও স্বীকার করা উচিত যে, ঈশ্বর আছেন।—রোমীয় ২:৮-১৩; ৩:২.

৭, ৮. ন্যায়বিচার বোধ কতটা সাধারণ আর এটা কোন বিষয়কে নির্দেশ করে?

৭ যে-জোরালো কারণে সকলের উচিত ঈশ্বরকে স্বীকার করা ও সেই অনুসারে কাজ করা, সেটা হল সঠিক ও ভুল সম্বন্ধে তাদের আভ্যন্তরীণ বোধশক্তি। আমাদের ন্যায়বিচারবোধ ইঙ্গিত দেয় যে, আমাদের এক বিবেক রয়েছে। কল্পনা করুন: কিছু ছেলেমেয়ে একটা দোলনার জন্য লাইনে অপেক্ষা করছে। তখন একটা বাচ্চা সামনে এগিয়ে যায় এবং যারা অপেক্ষা করছে, তাদের উপেক্ষা করে। অনেকে বলে, ‘এটা ঠিক নয়!’ এখন নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, ‘কীভাবে এটা সম্ভব যে, এমনকি অনেক ছেলেমেয়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে দেখায় যে, তাদের ন্যায়বিচারবোধ রয়েছে?’ তাদের এমনটা করা দেখায় যে, তাদের আভ্যন্তরীণ নীতিবোধ রয়েছে। পৌল লিখেছিলেন: “যে পরজাতিরা কোন ব্যবস্থা পায় নাই, তাহারা যখন স্বভাবতঃ ব্যবস্থানুযায়ী আচরণ করে।” তিনি বলেননি, “যদি কখনো,” যেন এমন কিছু, যা মাঝেমধ্যে ঘটত। তিনি বলেছিলেন, “যখন,” যা ইঙ্গিত দেয় যে, তা প্রায়ই ঘটে থাকে। অর্থাৎ, লোকেরা “স্বভাবতঃ ব্যবস্থানুযায়ী আচরণ করে” মানে হল, তারা তাদের আভ্যন্তরীণ নীতিবোধ দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে সেই বিষয়ের সঙ্গে মিল রেখে কাজ করে, যা আমরা ঈশ্বরের লিখিত বাক্যে পড়ে থাকি।

৮ এই নৈতিক প্রবণতা অনেক দেশে দেখা গিয়েছে। ক্যামব্রিজের একজন অধ্যাপক লিখেছিলেন যে, বাবিলীয়, মিশরীয় এবং গ্রিক ও সেইসঙ্গে অস্ট্রেলিয়া ও আমেরিকার আদিবাসীদের মানগুলোর মধ্যে “নিপীড়ন, হত্যা, প্রতারণা ও মিথ্যাকে প্রকাশ্যে নিন্দা করা হয়েছে এবং বৃদ্ধ, অল্পবয়স্ক ও দুর্বলদের প্রতি দয়া দেখানোর একই ধরনের আদেশ রয়েছে।” আর ড. কোলিন্স লিখেছিলেন: “সঠিক ও ভুল সম্বন্ধীয় ধারণা মানব প্রজাতির সমস্ত সদস্যের মধ্যে সর্বজনীন বলে দেখা যায়।” এটা কি আপনাকে রোমীয় ২:১৪ পদের কথা মনে করিয়ে দেয় না?

আপনার বিবেক—এটা কীভাবে কাজ করে?

৯. বিবেক কী আর কীভাবে তা আপনার কাজ করার আগেই আপনাকে সাহায্য করতে পারে?

৯ বাইবেল দেখায় যে, বিবেক হল আপনার কাজগুলোকে দেখার ও মূল্যায়ন করার আভ্যন্তরীণ এক ক্ষমতা। এটা এমন যেন আপনার ভিতর থেকে আসা রব, একটা কাজ সঠিক না ভুল, সেই সম্বন্ধে মন্তব্য করে থাকে। পৌল তার ভিতর থেকে আসা এই রব সম্বন্ধে উল্লেখ করেছিলেন: “আমার সংবেদও পবিত্র আত্মাতে আমার পক্ষে সাক্ষ্য দিতেছে।” (রোমীয় ৯:১) উদাহরণস্বরূপ, এই রব হয়তো নৈতিকতার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কোনো সিদ্ধান্ত সম্বন্ধে বিবেচনা করার সময় আগেই কথা বলতে পারে। আপনার বিবেক হয়তো আপনাকে ভবিষ্যতের কোনো কাজ মূল্যায়ন করার জন্য সাহায্য করতে পারে ও সেই কাজটা করলে আপনি কেমন বোধ করবেন, তা বলতে পারে।

১০. কীভাবে বিবেক প্রায়ই কাজ করে থাকে?

১০ বেশির ভাগ সময়ই, আপনার বিবেক সাধারণত আপনি কোনোকিছু করে ফেলার পরে কাজ করে থাকে। দায়ূদ যখন রাজা শৌলের কাছ থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন, তখন ঈশ্বরের অভিষিক্ত রাজার প্রতি অসম্মানজনক কিছু করার সুযোগ তার এসেছিল এবং তিনি তা করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে, “দায়ূদের অন্তঃকরণ ধুক্‌ ধুক্‌ করিতে লাগিল।” (১ শমূয়েল ২৪:১-৫; গীতসংহিতা ৩২:৩, ৫) এই বিবরণে “বিবেক” শব্দটি ব্যবহার করা হয়নি; তবুও দায়ূদ এমনটাই বোধ করেছিলেন—তার বিবেকের প্রতিক্রিয়া। আমরা সকলে অনুরূপভাবে বিবেকের দংশন বোধ করে থাকি। আমরা কিছু করে ফেলি আর তারপর আমাদের কৃতকর্মের জন্য অস্বস্তি ও যন্ত্রণা বোধ করি। কিছু লোক, যারা তাদের কর প্রদান করেনি, তারা এতটাই বিবেকের দংশন বোধ করেছে যে, পরে তাদের ঋণ পরিশোধ করেছে। অন্যেরা পারদারিকতা করে যে-পাপ করেছে, তা তাদের সাথির কাছে স্বীকার করতে পরিচালিত হয়েছে। (ইব্রীয় ১৩:৪) তা সত্ত্বেও, একজন ব্যক্তি যখন বিবেক অনুযায়ী কাজ করেন, তখন এর ফলে পরিতৃপ্তি ও শান্তি লাভ করতে পারেন।

১১. কেন কেবল ‘আপনার বিবেককে আপনার নির্দেশক হতে দেওয়া’ বিপদজনক হতে পারে? উদাহরণের সাহায্য ব্যাখ্যা করুন।

১১ তা হলে, আমরা কি কেবল ‘আমাদের বিবেককে আমাদের নির্দেশক হতে দিতে’ পারি? আসলে, আমাদের বিবেকের কথা শোনা উপকারী কিন্তু এর রব হয়তো আমাদেরকে গুরুতরভাবে বিপথে চালিত করতে পারে। হ্যাঁ, আমাদের ‘আন্তরিক মনুষ্যের’ রব আমাদের বিপথে চালিত করতে পারে। (২ করিন্থীয় ৪:১৬) একটা উদাহরণ বিবেচনা করুন। বাইবেল খ্রিস্টের একজন ধর্মপ্রাণ অনুসারী স্তিফান সম্বন্ধে বলে, যিনি “অনুগ্রহে ও শক্তিতে পরিপূর্ণ” ছিলেন। কিছু যিহুদি স্তিফানকে যিরূশালেমের বাইরে নিয়ে যায় এবং তাকে পাথর মেরে হত্যা করে। শৌল (যিনি পরে প্রেরিত পৌল হয়েছিলেন) কাছেই দাঁড়িয়েছিলেন এবং স্তিফানের “হত্যার অনুমোদন করিতেছিলেন।” দেখে মনে হয় যে, সেই যিহুদিরা সঠিক কাজটাই করেছিল বলে এতটা প্রত্যয়ী ছিল যে, তাদের বিবেক তাদেরকে দংশন করেনি। শৌলের ক্ষেত্রেও নিশ্চয়ই তা-ই হয়েছিল কারণ এরপর তিনি “তখনও প্রভুর শিষ্যদের বিরুদ্ধে ভয়প্রদর্শন ও হত্যার নিশ্বাস টানিতেছিলেন।” স্পষ্টতই, তার বিবেক তখন সঠিক রবে কথা বলেনি।—প্রেরিত ৬:৮; ৭:৫৭–৮:১; ৯:১.

১২. একটা কোন উপায়ে আমাদের বিবেক প্রভাবিত হতে পারে?

১২ কী শৌলের বিবেককে প্রভাবিত করেছিল? একটা বিষয় হতে পারে, অন্যদের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ মেলামেশা। আমাদের মধ্যে অনেকেই হয়তো এমন একজন ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেছি, যার রব বা কণ্ঠস্বর প্রায় তার বাবার মতোই। সেই ছেলে হয়তো উত্তরাধিকারসূত্রে কিছুটা সেই স্বর পেয়েছে কিন্তু তার বাবার কথা বলার ধরনও হয়তো তার ওপর প্রভাব ফেলেছে। একইভাবে, শৌল হয়তো সেই যিহুদিদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন, যারা যিশুকে ঘৃণা করত এবং তাঁর শিক্ষার বিরোধিতা করত। (যোহন ১১:৪৭-৫০; ১৮:১৪; প্রেরিত ৫:২৭, ২৮, ৩৩) হ্যাঁ, শৌলের সঙ্গীসাথিরা হয়তো সেই রবের ওপর প্রভাব ফেলেছিল, যা তিনি ভিতর থেকে অর্থাৎ বিবেক থেকে শুনেছিলেন।

১৩. কীভাবে একজনের পরিবেশ বিবেককে প্রভাবিত করে?

১৩ এ ছাড়া, বিবেক একজন ব্যক্তি যে-সাধারণ সংস্কৃতি অথবা পরিবেশে বাস করে, তার দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে, ঠিক যেমন একজনের পরিবেশ কাউকে কোনো নির্দিষ্ট বাচনভঙ্গি অথবা আঞ্চলিক ভাষা অনুযায়ী কথা বলতে পরিচালিত করে। (মথি ২৬:৭৩) প্রাচীন অশূরীয়দের বেলায়ও নিশ্চয়ই তা-ই ঘটেছিল। তারা সামরিক শক্তির জন্য সুপরিচিত ছিল আর তাদের খোদাই করা চিত্রকর্ম তাদেরকে এমনভাবে তুলে ধরেছে, যারা বন্দিদের নির্যাতন করছে। (নহূম ২:১১, ১২; ৩:১) যোনার দিনের নীনবীর লোকেদের সম্বন্ধে বর্ণনা করা হয়েছে যে, তারা “দক্ষিণ হস্ত হইতে বাম হস্তের প্রভেদ” জানে না। অর্থাৎ, ঈশ্বরের দৃষ্টিকোণ থেকে কোনটা সঠিক ও কোনটা বেঠিক, সেই সম্বন্ধে বিচার করার কোনো সঠিক মান তাদের ছিল না। কল্পনা করুন যে, সেই পরিবেশ কারো বিবেককে কীভাবে প্রভাবিত করতে পারত, যারা নীনবীতে বড় হয়ে উঠছিল! (যোনা ৩:৪, ৫; ৪:১১) ঠিক একইভাবে আজকেও, একজন ব্যক্তির বিবেক তার চারপাশের লোকেদের মনোভাবের দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে।

ভিতর থেকে আসা রবকে উন্নত করা

১৪. কীভাবে আমাদের বিবেক আদিপুস্তক ১:২৭ পদে যা বলা আছে, সেটা প্রতিফলিত করে?

১৪ যিহোবা আদম ও হবাকে উপহার হিসেবে বিবেক দিয়েছিলেন আর আমরা তাদের কাছ থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে আমাদের বিবেক পেয়েছি। আদিপুস্তক ১:২৭ পদ আমাদের বলে যে, মানুষকে ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিতে সৃষ্টি করা হয়েছে। এটার অর্থ এই নয় যে, ঈশ্বরের মতো শারীরিক গঠন দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে কারণ তিনি আত্মিক আর আমরা মাংসিক। আমরা এই অর্থে ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিতে সৃষ্ট হয়েছি যে, আমাদের মধ্যে তাঁর গুণাবলি রয়েছে, যার মধ্যে কার্যরত বিবেকসহ এক নীতিবোধ রয়েছে। এই বাস্তবতা ইঙ্গিত দেয় যে, একটা উপায়ে আমরা আমাদের বিবেককে শক্তিশালী করতে পারি, এটিকে আরও নির্ভরযোগ্য করে তুলতে পারি। আর সেটা হল সৃষ্টিকর্তা সম্বন্ধে আরও বেশি শিখে এবং তাঁর আরও নিকটবর্তী হয়ে।

১৫. একটা উপায় কী, যার মাধ্যমে আমরা আমাদের পিতাকে জেনে উপকৃত হতে পারি?

১৫ বাইবেল দেখায় যে, এক অর্থে যিহোবা আমাদের সকলের পিতা। (যিশাইয় ৬৪:৮) বিশ্বস্ত খ্রিস্টানরা ঈশ্বরকে পিতা হিসেবে সম্বোধন করতে পারে, তা তাদের আশা স্বর্গে অথবা পার্থিব পরমদেশে বাস করা, যা-ই হোক না কেন। (মথি ৬:৯) আমাদের স্বর্গীয় পিতার আরও নিকটবর্তী হওয়ার আকাঙ্ক্ষা করা উচিত আর এভাবে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি ও মানগুলো শেখা উচিত। (যাকোব ৪:৮) অনেকেরই তা করার কোনো আগ্রহ নেই। তারা সেই যিহুদিদের মতো, যাদেরকে যিশু বলেছিলেন: “তাঁহার রব তোমরা কখনও শুন নাই, তাঁহার আকারও দেখ নাই। আর তাঁহার বাক্য তোমাদের অন্তরে অবস্থিতি করে না।” (যোহন ৫:৩৭, ৩৮) আমরা ঈশ্বরের প্রকৃত রব শুনিনি, তবে আমাদের মধ্যে তাঁর বাক্য থাকতে পারে আর এভাবে তাঁর মতো হতে ও তাঁর মতো অনুভব করতে পারি।

১৬. যোষেফের বিবরণ আমাদের বিবেকের প্রশিক্ষণ লাভ করার ও সেটার কথা শোনার বিষয়ে কী দেখায়?

১৬ পোটীফরের ঘরে যোষেফের ঘটনা তা দেখায়। পোটীফরের স্ত্রী যোষেফকে যৌনসম্পর্ক করার জন্য প্রলোভিত করার চেষ্টা করেছিলেন। যদিও তিনি এমন একটা সময়ে বাস করতেন, যে-সময়ে বাইবেল লেখা হয়নি এবং দশ আজ্ঞা দেওয়া হয়নি, তবুও যোষেফ এই কথা বলে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন: “আমি কিরূপে এই মহা দুষ্কর্ম্ম করিতে ও ঈশ্বরের বিরুদ্ধে পাপ করিতে পারি?” (আদিপুস্তক ৩৯:৯) তিনি কেবল তার পরিবারকে খুশি করার জন্য সেভাবে উত্তর দেননি; তারা অনেক দূরে বাস করত। তিনি মূলত ঈশ্বরকে খুশি করতে চেয়েছিলেন। যোষেফ বিয়ে সম্বন্ধে ঈশ্বরের মান জানতেন—একজন স্ত্রীর জন্য একজন পুরুষ আর দুজন “একাঙ্গ” হবে। আর তিনি সম্ভবত এটা শুনেছিলেন যে, অবীমেলক কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন যখন তিনি জানতে পেরেছিলেন, রিবিকা বিবাহিত—তাকে গ্রহণ করা অন্যায় হবে এবং তার লোকেদের ওপর অপরাধ নিয়ে আসবে। আর হ্যাঁ, সেই ঘটনার শেষ পরিণতির ওপর যিহোবার আশীর্বাদ ছিল এবং তিনি পারদারিকতা সম্বন্ধে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেছিলেন। এইসমস্ত কিছু যোষেফ জানতেন বলে সেগুলো সম্ভবত উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া তার বিবেককে প্রণোদিত করেছিল এবং তাকে যৌন অনৈতিকতা প্রত্যাখ্যান করতে পরিচালিত করেছিল।—আদিপুস্তক ২:২৪; ১২:১৭-১৯; ২০:১-১৮; ২৬:৭-১৪.

১৭. আমাদের পিতার মতো হওয়ার বিষয়ে কেন আমরা যোষেফের চেয়ে ভাল অবস্থানে আছি?

১৭ অবশ্য, আমরা এখন আরও ভাল অবস্থার মধ্যে আছি। আমাদের কাছে সম্পূর্ণ বাইবেল আছে, যেখান থেকে আমরা আমাদের পিতার চিন্তাভাবনা ও অনুভূতি সম্বন্ধে ও সেইসঙ্গে তিনি কোনটাকে অনুমোদন করেন ও কোনটাকে নিষেধ করেন, তা শিখতে পারি। আমরা যত বেশি শাস্ত্র জানব, তত বেশি ঈশ্বরের নিকটবর্তী ও তাঁর মতো হতে পারব। আমরা যখন তা করি, তখন আমাদের বিবেকের কথাগুলো সম্ভবত আরও বেশি আমাদের পিতার চিন্তাভাবনার মতো হবে। সেগুলো আরও বেশি করে তাঁর ইচ্ছার সঙ্গে মিল রাখবে।—ইফিষীয় ৫:১-৫.

১৮. সম্ভাব্য অতীত প্রভাবগুলো সত্ত্বেও, আমাদের বিবেকের নির্ভরযোগ্যতাকে উন্নত করার জন্য আমরা কী করতে পারি?

১৮ আমাদের বিবেকের ওপর পারিপার্শ্বিক প্রভাব সম্বন্ধে কী বলা যায়? আমরা হয়তো আমাদের আত্মীয়স্বজন ও সেইসঙ্গে আমরা সাধারণত যেখানে বড় হয়েছি, সেই পরিবেশের চিন্তাভাবনা ও কাজগুলোর দ্বারা প্রভাবিত হয়েছি। তাই, আমাদের বিবেক থেকে আসা বার্তা হয়তো দূষিত ও বিকৃত হতে পারে। এটা হয়তো আমাদের চারপাশের লোকেদের “বাচনভঙ্গির” মতো কথা বলতে পারে। এটা ঠিক যে, আমরা আমাদের অতীতকে পরিবর্তন করতে পারি না; কিন্তু, আমরা এমন সঙ্গীসাথি এবং পরিবেশ বাছাই করার জন্য সংকল্পবদ্ধ হতে পারি, যেগুলো আমাদের বিবেককে উত্তমভাবে প্রভাবিত করবে। এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হল, নিয়মিতভাবে সেই ধর্মপ্রাণ খ্রিস্টানদের সঙ্গে থাকা, যারা দীর্ঘসময় ধরে তাদের পিতার মতো হওয়ার চেষ্টা করেছে। মণ্ডলীর সভাগুলো আমাদেরকে সেই চমৎকার সুযোগ প্রদান করে, যার অন্তর্ভুক্ত সভার আগে ও পরে মেলামেশা করা। আমরা আমাদের সহখ্রিস্টানদের বাইবেলভিত্তিক চিন্তাভাবনা ও প্রতিক্রিয়া লক্ষ করতে পারি, যার অন্তর্ভুক্ত তাদের শোনার ইচ্ছুক মনোভাবে যখন তাদের বিবেক ঈশ্বরের দৃষ্টিভঙ্গি ও পথগুলোকে প্রতিফলিত করেছিল। এক সময়, এটা আমাদের বিবেককে বাইবেলের নীতিগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ রাখতে সাহায্য করতে পারে ও ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিকে আরও ভালভাবে প্রতিফলিত করতে সমর্থ করে। আমরা যখন আমাদের বিবেককে আমাদের পিতার নীতিগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ রাখি ও সহখ্রিস্টানদের উত্তম প্রভাবকে মেনে নিই, তখন আমাদের বিবেক আরও বেশি নির্ভরযোগ্য হবে এবং সেটি যা বলে, তা আমরা আরও বেশি করে শুনতে চাইব।—যিশাইয় ৩০:২১.

১৯. বিবেকের কোন দিকগুলো এখনও আমাদের মনোযোগ পাওয়ার যোগ্য?

১৯ তা সত্ত্বেও, কেউ কেউ তাদের বিবেকের প্রতি সাড়া দিতে গিয়ে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে। পরের প্রবন্ধে এমন কিছু পরিস্থিতি নিয়ে বিবেচনা করা হবে, যেগুলো খ্রিস্টানরা মোকাবিলা করেছে। এই ধরনের পরিস্থিতি পরীক্ষা করার মাধ্যমে আমরা হয়তো আরও স্পষ্টভাবে বিবেকের এই ভূমিকা দেখতে পারব যে, কেন বিভিন্ন জনের বিবেক বিভিন্নরকম এবং কীভাবে আমরা বিবেকের রবের প্রতি আরও বেশি সাড়া দিতে পারি।—ইব্রীয় ৬:১১, ১২.

[পাদটীকা]

a একইভাবে, যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালের একজন অধ্যাপক ওয়েন জিংগ্রিচ লিখেছিলেন: ‘নিঃস্বার্থপর মনোভাব সত্যিই একটা প্রশ্ন উত্থাপন করে . . . যে-প্রশ্নের বৈজ্ঞানিক উত্তর প্রাণীজগতের পর্যবেক্ষণ থেকে পাওয়া যায় না। হয়তো এটা হতে পারে যে, আরও বিশ্বাসযোগ্য উত্তর সম্পূর্ণরূপে ভিন্ন একটা চিন্তাভাবনার মধ্যে রয়েছে আর তা ঈশ্বরদত্ত গুণাবলি মানবতার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত, যার মধ্যে বিবেকও রয়েছে।’

আপনি কী শিখেছেন?

• কেন সঠিক এবং ভুল সম্বন্ধে বোধশক্তি অথবা বিবেক সমস্ত সংস্কৃতির মধ্যেই দেখতে পাওয়া যায়?

• কেন কেবল আমাদের বিবেককে নির্দেশক হতে দেওয়ার বিষয়ে আমাদের সাবধান থাকতে হবে?

• কয়েকটা উপায় কী, যেগুলোর মাধ্যমে আমরা আমাদের ভিতর থেকে আসা রবকে উন্নত করতে পারি?

[২৩ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

দায়ূদ বিবেকের দংশন বোধ করেছিলেন . . .

কিন্তু তার্ষের শৌল তা বোধ করেননি

[২৪ পৃষ্ঠার চিত্র]

আমরা আমাদের বিবেককে প্রশিক্ষিত করতে পারি

    বাংলা প্রকাশনা (১৯৮৯-২০২৬)
    লগ আউট
    লগ ইন
    • বাংলা
    • শেয়ার
    • পছন্দসমূহ
    • Copyright © 2025 Watch Tower Bible and Tract Society of Pennsylvania
    • ব্যবহারের শর্ত
    • গোপনীয়তার নীতি
    • গোপনীয়তার সেটিং
    • JW.ORG
    • লগ ইন
    শেয়ার