ওয়াচটাওয়ার অনলাইন লাইব্রেরি
ওয়াচটাওয়ার
অনলাইন লাইব্রেরি
বাংলা
  • বাইবেল
  • প্রকাশনাদি
  • সভা
  • w08 ৪/১ পৃষ্ঠা ১৮-২১
  • একজন মা হিসেবে পরিতৃপ্তি লাভ করা

এই বাছাইয়ের সঙ্গে কোনো ভিডিও প্রাপ্তিসাধ্য নেই।

দুঃখিত, ভিডিওটা চালানো সম্বভব হচ্ছে না।

  • একজন মা হিসেবে পরিতৃপ্তি লাভ করা
  • ২০০৮ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • উপশিরোনাম
  • অনুরূপ বিষয়বস্ত‌ু
  • যেকারণে মায়েরা চাকরি করে
  • প্রচলিত ধারণা বনাম বাস্তবতা
  • স্বামীরা যেভাবে সাহায্য করতে পারে
  • একজন খ্রিস্টান মায়ের অতীব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
  • যে-মায়েরা ভিন্ন ছিল
  • সবচেয়ে পরিতৃপ্তিদায়ক বাছাই
  • মায়েরা যে-প্রতিবন্ধকতাগুলোর মুখোমুখি হয়
    ২০০৫ সচেতন থাক!
  • একজন মায়ের সম্মানীয় ভূমিকা
    ২০০৫ সচেতন থাক!
  • মায়েরা—উনীকীর কাছ থেকে শিখুন
    প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য সম্বন্ধে ঘোষণা করে (অধ্যয়ন)—২০২২
  • নারী এবং তাদের কাজের প্রতি উপলব্ধি প্রকাশ করা
    ১৯৯৮ সচেতন থাক!
আরও দেখুন
২০০৮ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
w08 ৪/১ পৃষ্ঠা ১৮-২১

একজন মা হিসেবে পরিতৃপ্তি লাভ করা

পৃথিবীব্যাপী আজকে অধিকাংশ নারী চাকরি করে। শিল্পোন্নত দেশগুলোতে প্রায় সমান অনুপাতেই নারী-পুরুষ চাকরি করে থাকে। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে নারীরা প্রায়ই, তাদের পরিবারের ভরণপোষণ জোগাতে সাহায্য করার জন্য অনেক সময় ধরে খেত-খামারে কাজ করতে কঠোর পরিশ্রম করে থাকে।

অনেক নারীর মনেই জীবনোপায় অর্জনের প্রয়োজনীয়তা এবং তাদের পরিবার ও ঘরের যত্ন নেওয়ার আকাঙ্ক্ষার টানাপোড়েন চলতে থাকে। এই নারীরা অন্ন, বস্ত্র এবং বাসস্থানের খরচের জন্য কেবল অর্থই জোগায় না কিন্তু খাবার রান্না করে, কাপড়চোপড় ধোয় এবং ঘরদোর পরিষ্কার করে।

এ ছাড়া, খ্রিস্টান মায়েরা তাদের সন্তানদের মধ্যে আধ্যাত্মিক মূল্যবোধগুলো গেঁথে দেওয়ার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করে। “সত্যি বলতে কী, চাকরি এবং পারিবারিক দায়িত্বের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা খুবই কঠিন, বিশেষ করে আপনার যদি ছোটো বাচ্চা থাকে,” ক্রিস্টিনা নামে একজন মা স্বীকার করেন, যার দুটো অল্পবয়সি মেয়ে রয়েছে। “বাচ্চাদের প্রতি প্রয়োজনীয় পূর্ণ মনোযোগ দেওয়া সহজ নয়।”

কী মায়েদেরকে চাকরি করতে বাধ্য করে? তারা কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলোর মুখোমুখি হয়? আর পরিতৃপ্তি লাভ করার জন্য একজন মাকে কি চাকরি করতেই হবে?

যেকারণে মায়েরা চাকরি করে

অনেক মায়ের জন্য পূর্ণসময়ের চাকরি করা আবশ্যক। কারো কারো বিবাহ সাথি নেই, যিনি আর্থিক বোঝা বহনে সাহায্য করতে পারেন। অন্য দম্পতিরা দেখেছে যে, পরিবারের মৌলিক চাহিদাগুলো মেটানোর জন্য শুধু একজনের বেতনই যথেষ্ট নয়।

এটা ঠিক যে, সব মা-ই যে আর্থিক প্রয়োজনের জন্য পূর্ণসময়ের চাকরি করে এমন নয়। এক উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী তাদের আত্মমর্যাদার অনুভূতিকে বৃদ্ধি করার জন্য চাকরি করে থাকে। কেউ কেউ হয়তো কিছুটা হলেও আর্থিক স্বাধীনতা লাভ করার জন্য বা বিলাসবহুল দ্রব্য কেনার জন্য চাকরি করে থাকে। অনেকে তাদের কর্মক্ষেত্রে খুবই যোগ্য এবং তা উপভোগ করে থাকে।

সঙ্গীসাথির চাপের কারণেও হয়তো কিছু মা চাকরি করার বাধ্যবাধকতা অনুভব করে। যদিও বেশির ভাগ লোক স্বীকার করে যে, চাকরিজীবি মায়েরা ক্রমাগতভাবে কঠিন চাপ এবং চরম ক্লান্তির সঙ্গে লড়াই করে কিন্তু যারা চাকরি না করাকেই বেছে নেয়, প্রায়ই তাদেরকে ভুল বোঝা হয়—এমনকি উপহাসও করা হয়। “অন্যদের কাছে এটা বলা সহজ নয় যে, আপনি ‘শুধুই গৃহিণী,’” একজন মহিলা স্বীকার করেন। “কিছু লোক তাদের কথাবার্তা ও হাবভাবের মাধ্যমে বোঝাতে চায় যে, আপনি আপনার জীবনকে নষ্ট করছেন,” তিনি বলেন। রেবেকা, যার দুবছর বয়সি একটা মেয়ে রয়েছে, তিনি বলেন: “যদিও আমরা এমন এক সমাজে বাস করি, যেখানে মহিলাদের তাদের সন্তানদের যত্ন নেওয়া উচিত বলে ধরা নেওয়া হয় কিন্তু আমার মনে হয় যে, যে-মায়েরা চাকরি করে না, তাদেরকে কোনো না কোনোভাবে নিচু করে দেখা হয়।”

প্রচলিত ধারণা বনাম বাস্তবতা

পৃথিবীর কিছু কিছু জায়গায় প্রচারমাধ্যমগুলো “আদর্শ নারী” হিসেবে তাকেই তুলে ধরে, যিনি তার কেরিয়ারে সফল, অর্থাৎ মোটা অঙ্কের বেতন পান, অনবদ্যভাবে পোশাক পরিহিত এবং পুরোপুরি আত্মবিশ্বাসী একজন ব্যক্তি। যখন তিনি ঘরে ফিরেন, তখন তার সন্তানদের সমস্যাগুলো সমাধান করার, স্বামীর ভুলগুলো সংশোধন করার এবং যেকোনো ঘরোয়া সংকট মীমাংসা করার মতো শক্তি তার থাকে। এটা বোধগম্য যে, বাস্তবে খুব অল্পসংখ্যক নারীই প্রচারমাধ্যমে চিত্রিত ‘আদর্শ নারীর’ পর্যায়ে পড়ে।

বাস্তবে দেখা যায় যে, নারীরা যেসমস্ত চাকরি করে থাকে, তার বেশির ভাগই একঘেয়েমিপূর্ণ এবং তুলনামূলকভাবে অল্প-বেতনের চাকরি। তাদের জন্য আরও হতাশাজনক হল, চাকরিজীবি মায়েরা দেখতে পায় যে, তাদের চাকরি তাদের সহজাত ক্ষমতাকে পুরোপুরিভাবে ব্যবহার করতে সমর্থ করে না। সামাজিক মনোবিদ্যা (ইংরেজি) বইটি বলে: “সমানাধিকার লাভ করার ক্ষেত্রে অগ্রগতি হওয়া সত্ত্বেও, পুরুষরা ক্রমাগত ভাল বেতনের এবং প্রতিষ্ঠিত চাকরিগুলো করে চলেছে। যে-নারীরা তাদের চাকরির কারণে পরিচিতি লাভ করেছে, তাদের তাই এক আলাদা ধরনের ভোগান্তি রয়েছে।” স্প্যানিশ সংবাদপত্র এল পাইস বলে: “হিসেব করে দেখা গিয়েছে যে, চাপের কারণে পুরুষদের চেয়ে নারীদের তিন গুণ বেশি উদ্বিগ্নতা ভোগ করার সম্ভাবনা রয়েছে, কারণ অধিকাংশ নারীকে দুই শিফটে চাকরি করতে হয়—একটা কর্মক্ষেত্রে আরেকটা ঘরে।”

স্বামীরা যেভাবে সাহায্য করতে পারে

অবশ্য, একজন খ্রিস্টান মায়ের চাকরি করা উচিত হবে কি না, সেটা হচ্ছে এক ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। কিন্তু, বিবাহিত হলে তিনি ও তার স্বামীর বিষয়টা নিয়ে আলোচনা এবং সেইসঙ্গে জড়িত সমস্তকিছু সতর্কতার সঙ্গে মূল্যায়ন করার পরই এই ধরনের একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।—হিতোপদেশ ১৪:১৫.

যদি এক দম্পতি চরম আর্থিক প্রয়োজনীয়তার কারণে সিদ্ধান্ত নেয় যে, তাদের দুজনকেই পূর্ণসময় চাকরি করতে হবে, তাহলে কী? এইক্ষেত্রে একজন বিজ্ঞ স্বামী বাইবেলের এই পরামর্শে বিশেষ মনোযোগ দেবেন: “তোমরা যারা স্বামী, তোমরা বুদ্ধি-বিবেচনা করে স্ত্রীর সংগে বাস কর। তারা তোমাদের দুর্বল সাথী, আর তারাও তোমাদের সংগে ঈশ্বরের দয়ার দান হিসাবে জীবন পাবে। সেইজন্য তাদের সম্মান কোরো যেন তোমাদের প্রার্থনা বাধা না পায়।” (১ পিতর ৩:৭, বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন) একজন স্বামী তার স্ত্রীর শারীরিক ও আবেগগত সীমাবদ্ধতাগুলোর প্রতি অনুভূতিশীল হয়ে তার প্রতি সম্মান দেখান। যখনই সম্ভব, তিনি তার স্ত্রীকে গৃহস্থালী কাজকর্মে সাহায্য করবেন। যিশুর মতো, একজন স্বামী নম্রভাবে ছোটোখাটো কাজগুলো করতে ইচ্ছুক হবেন, এইরকম মনে করে কাজগুলো করতে অস্বীকার করবেন না যে, এগুলো করলে তার মর্যাদাহানি হবে। (যোহন ১৩:১২-১৫) এর পরিবর্তে, তিনি এইসব কাজকর্মকে তার কঠোর পরিশ্রমী স্ত্রীর প্রতি তার ভালবাসা দেখানোর সুযোগ হিসেবে দেখবেন। স্ত্রী এই ধরনের সাহায্যকে গভীরভাবে উপলব্ধি করবেন।—ইফিষীয় ৫:২৫, ২৮, ২৯.

যদি উভয় বিবাহ সাথিকে চাকরি করতেই হয়, তাহলে নিঃসন্দেহে ঘরে সহযোগিতা করা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। স্পেনের খবরের কাগজ এবিসি, একটা রিপোর্টে এই বিষয়টা তুলে ধরে। ইনস্টিটিউট অভ্‌ ফ্যামিলি ম্যাটারস্‌ দ্বারা পরিচালিত একটা সমীক্ষার ওপর মন্তব্য করতে গিয়ে এই প্রবন্ধ স্পেনে উচ্চহারে বিবাহবিচ্ছেদের জন্য শুধুমাত্র “ধর্মীয় ও নৈতিক মানগুলো হারিয়ে ফেলাকে” দোষারোপ করেনি বরং এরসঙ্গে আরও দুটো বিষয়কেও যুক্ত করে—“নারীদের চাকরি করা এবং ঘরের কাজকর্মে সাহায্য করতে পুরুষদের ব্যর্থতা।”

একজন খ্রিস্টান মায়ের অতীব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা

যদিও যিহোবা বাবাদেরকে তাদের সন্তানদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার প্রধান দায়িত্ব দিয়েছেন কিন্তু খ্রিস্টান মায়েরা জানে যে, তাদেরও এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা দেওয়া হয়েছে—বিশেষ করে সন্তানের শিশুবস্থায়। (হিতোপদেশ ১:৮; ইফিষীয় ৬:৪) যিহোবা যখন ইস্রায়েলীয়দের তাঁর ব্যবস্থা তাদের সন্তানদের মধ্যে গেঁথে দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছিলেন, তখন তিনি মা ও বাবা উভয়ের উদ্দেশেই তা বলেছিলেন। তিনি জানতেন যে এই কাজে সময় ও ধৈর্যের প্রয়োজন হবে, বিশেষ করে সন্তানের বড় হয়ে ওঠার বছরগুলোতে। এই কারণে, ঈশ্বর বাবামাকে বলেছিলেন যে, তাদের সন্তানদেরকে ঘরে, রাস্তায়, শোয়ার ও ঘুম থেকে ওঠার সময় প্রশিক্ষণ দেওয়া উচিত।—দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৪-৭.

ঈশ্বরের বাক্য মায়েদের গুরুত্বপূর্ণ এবং মর্যাদাপূর্ণ ভূমিকার ওপর জোর দেয়, যখন এটি সন্তানদের এই নির্দেশ দেয়: “আপন মাতার ব্যবস্থা ত্যাগ করিও না।” (হিতোপদেশ ৬:২০) অবশ্য, একজন বিবাহিত নারী সন্তানদের জন্য যেকোনো ব্যবস্থা বা আইন দেওয়ার পূর্বে তার স্বামীর সঙ্গে আলোচনা করে নেবেন। কিন্তু সেই পদটি যেমন ইঙ্গিত দেয় যে, মায়েদের বিভিন্ন আইন তৈরি করার অধিকার রয়েছে। আর যে-সন্তানরা ঈশ্বরভয়শীল একজন মায়ের শেখানো আধ্যাত্মিক ও নৈতিক আইনগুলোকে গুরুত্বের সঙ্গে নেয়, তারা প্রচুররূপে উপকৃত হবে। (হিতোপদেশ ৬:২১, ২২) দুটো অল্পবয়সি ছেলের মা তেরেসা ব্যাখ্যা করেছিলেন যে, কেন তিনি চাকরি করেন না। তিনি বলেছিলেন: “আমার সন্তানদেরকে ঈশ্বরকে সেবা করার মতো করে মানুষ করে তোলাই হচ্ছে আমার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। আমি এই কাজকে সর্বোত্তম উপায়ে করতে চাই।”

যে-মায়েরা ভিন্ন ছিল

ইস্রায়েলীয় রাজা লমূয়েল নিশ্চয়ই তার মায়ের কঠোর প্রচেষ্টা থেকে উপকৃত হয়েছিলেন। তার মা তাকে ‘শিক্ষা দিবার জন্য’ যে “ভারবাণী” দিয়েছিলেন, সেগুলোকে এমনকি ঈশ্বরের অনুপ্রাণিত বাক্যের এক অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। (হিতোপদেশ ৩১:১; ২ তীমথিয় ৩:১৬) একজন গুণবতী স্ত্রীর বিষয়ে এই মায়ের বর্ণনা এখনও ছেলেদেরকে বিজ্ঞতার সঙ্গে একজন বিবাহ সাথি বাছাই করতে সাহায্য করে। আর অনৈতিকতা এবং মাত্রাতিরিক্ত মদ্যপানের বিষয়ে এই মায়ের সাবধানবাণীগুলো প্রথম যখন এগুলো লিপিবদ্ধ করা হয়েছিল, তখনকার মতো আজও প্রাসঙ্গিক।—হিতোপদেশ ৩১:৩-৫, ১০-৩১.

প্রথম শতাব্দীতে, প্রেরিত পৌল উনীকী নামে একজন মাকে তার সন্তান তীমথিয়কে শিক্ষা দেওয়ার উত্তম কাজ সম্পন্ন করার কারণে প্রশংসা করেছিলেন। যেহেতু তার অবিশ্বাসী স্বামী সম্ভবত গ্রিক দেবতাদের উপাসনা করতেন, তাই উনীকীর ‘পবিত্র শাস্ত্রকলাপে’ বিশ্বাস করানোর জন্য তীমথিয়কে প্রত্যয়ী করানোর প্রয়োজন হয়েছিল। উনীকী কখন তীমথিয়কে শাস্ত্র সম্বন্ধে শিক্ষা দিতে শুরু করেছিলেন? অনুপ্রাণিত বিবরণ বলে যে, “শিশুকাল অবধি”—অন্যকথায়, সেই সময় থেকে যখন তীমথিয় একেবারে শিশু ছিলেন। (২ তীমথিয় ১:৫; ৩:১৪, ১৫) উনীকীর নিজের বিশ্বাস ও উদাহরণ এবং সেইসঙ্গে তার শিক্ষা স্পষ্টতই তীমথিয়কে তার ভবিষ্যৎ মিশনারি সেবার জন্য প্রস্তুত করেছিল।—ফিলিপীয় ২:১৯-২২.

এ ছাড়া, বাইবেল সেই মায়েদের বিষয়েও উল্লেখ করে, যাদের ঈশ্বরের অনুগত দাসদের প্রতি প্রদর্শিত আতিথেয়তা তাদের সন্তানদেরকে চমৎকার আদর্শ ব্যক্তিদের সান্নিধ্যে নিয়ে এসেছিল। উদাহরণস্বরূপ, একজন শূনেমীয়া মহিলা নিয়মিতভাবে তার বাড়িতে ভাববাদী ইলীশায়কে আপ্যায়ন করতেন। পরে এক সময় তার ছেলেকে ইলীশায় মৃত্যু থেকে জীবিত করেছিলেন। (২ রাজাবলি ৪:৮-১০, ৩২-৩৭) এ ছাড়া, মরিয়মের উদাহরণও বিবেচনা করুন, যিনি বাইবেল লেখক মার্কের মা ছিলেন। স্পষ্টতই, তিনি প্রাথমিক শিষ্যদের জন্য যিরূশালেমে তার বাড়িকে সভার স্থান হিসেবে প্রদান করেছিলেন। (প্রেরিত ১২:১২) মার্ক নিশ্চিতভাবেই সেইসব প্রেরিত এবং অন্যান্য খ্রিস্টানের সঙ্গে মেলামেশা করে উপকৃত হয়েছিলেন, যারা নিয়মিতভাবে তার বাড়িতে আসত।

স্পষ্টতই, যিহোবা সেই বিশ্বস্ত মহিলাদের পরিশ্রমকে খুবই মূল্যবান বলে মনে করেন, যারা তাঁর নীতিগুলো তাদের সন্তানদের হৃদয়ে গেঁথে দেয়। তিনি এই মহিলাদের ‘দয়ার [‘আনুগত্যের,’ NW]’ জন্য এবং তাদের বাড়িতে এক আধ্যাত্মিক পরিবেশ সৃষ্টি করার প্রচেষ্টার জন্য তাদের ভালবাসেন।—২ শমূয়েল ২২:২৬; হিতোপদেশ ১৪:১.

সবচেয়ে পরিতৃপ্তিদায়ক বাছাই

আগে উল্লেখিত শাস্ত্রীয় উদাহরণগুলোতে যেমন দেখানো হয়েছে যে, পরিবারের দৈহিক, আধ্যাত্মিক এবং আবেগগত চাহিদাগুলোর উত্তমভাবে যত্ন নেওয়া অদ্বিতীয় পুরস্কারগুলো নিয়ে আসে। কিন্তু, তা করা সহজ কাজ নয়। বাড়িতে একজন মায়ের কাজ প্রায়ই যেকোনো উচ্চপদের চাকরির চেয়ে অনেক বেশি সময় ও শক্তি দাবি করে বলে মনে হয়।

এটা সত্য যে, একজন মা যদি তার স্বামীর নির্দেশনা চাওয়ার পর, তার চাকরি ছেড়ে দেওয়া বা খণ্ডকালীন কাজ করা বেছে নেন, তাহলে পরিবারকে হয়তো আরেকটু সাধাসিধেভাবে জীবনযাপন করতে হতে পারে আর এরজন্য তাকে হয়তো এমন ব্যক্তিদের কাছ থেকেও উপহাস সহ্য করতে হতে পারে, যারা তার এমন বাছাইয়ের কারণটা বুঝতে পারে না। কিন্তু, এই ত্যাগস্বীকারের তুলনায় পুরস্কার আরও বেশি হতে পারে। পাকির তিনটে সন্তান রয়েছে আর তাকে খণ্ডকালীন কাজ করতে হয়। তিনি বলেন: “যখন ছেলেমেয়েরা স্কুল থেকে বাড়ি ফেরে, সেই সময়টাতে আমি ঘরে থাকতে চাই, যাতে কথা বলার জন্য তারা কাউকে পায়।” কীভাবে তার সন্তানরা উপকৃত হয়? “আমি তাদের হোমওয়ার্ক করতে সাহায্য করি আর যদি কোনো সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে আমি সঙ্গে সঙ্গে সেগুলো মীমাংসা করতে পারি,” তিনি বলেন। “আমরা প্রতিদিন একত্রে যে-সময় ব্যয় করি, তা আমাদের ভাববিনিময়ের রাস্তা খোলা রাখতে সাহায্য করে। আমি আমার ছেলেমেয়েদের সঙ্গে ব্যয় করা এই সময়টাকে এতটাই মূল্যবান মনে করি যে, আমি পূর্ণসময় চাকরি করার প্রস্তাবকে প্রত্যাখ্যান করেছি।”

অনেক খ্রিস্টান মা দেখতে পেয়েছে যে, তারা যদি চাকরি ছেড়ে দেয় বা খণ্ডকালীন চাকরি করে, তাহলে পরিবারের সকলেই উপকৃত হয়। “আমি যখন চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলাম, তখন পরিবারের সমস্যা অনেকটা কমে গিয়েছিল,” আগে উল্লেখিত ক্রিস্টিনা বলেন। “আমার সন্তানদের সঙ্গে কথা বলার এবং বিভিন্ন ব্যবহারিক উপায়ে আমার স্বামীকে সাহায্য করার জন্য আমার হাতে সময় ছিল। আমি আমার মেয়েদেরকে শিক্ষা দেওয়ার, তাদেরকে শিখতে ও অগ্রগতি করতে দেখার আনন্দ উপভোগ করতে শুরু করেছিলাম।” একটা নির্দিষ্ট ঘটনা ক্রিস্টিনার মনে উজ্জ্বল হয়ে রয়েছে। “আমার বড় মেয়ে একটা শিশু তত্ত্বাবধান কেন্দ্রে প্রথম হাঁটতে শিখেছিল,” তিনি স্মরণ করে বলেন, “কিন্তু আমি আমার দ্বিতীয় মেয়েকে ঘরে হাঁটতে শিখিয়েছিলাম। সে তার প্রথম পা ফেলেছিল আর ঠিক আমার কোলে এসে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। সেই মুহূর্তটি আমার জন্য অনেক পরিতৃপ্তি নিয়ে এসেছিল!”

আরেকটা বিবেচ্য বিষয় হল যে, একজন মা তার চাকরি ছেড়ে দিলে বা খণ্ডকালীন চাকরি নিলে যে-আর্থিক ক্ষতি হয়, তা যতটা ধারণা করা হয় সেটার তুলনায় কম হতে পারে। “শিশু তত্ত্বাবধান কেন্দ্রের খরচ এবং যাতায়াতের পিছনে প্রকৃতপক্ষে আমার বেতনের একটা বড় অংশ চলে যেত,” ক্রিস্টিনা বলেন। “যখন আমরা সতর্কতার সঙ্গে আমাদের পরিস্থিতিকে বিশ্লেষণ করেছিলাম, তখন আমরা বুঝতে পেরেছিলাম যে, আমার চাকরি আসলে বাড়িতে তেমন বাড়তি পয়সা আনছিল না।”

তাদের পরিস্থিতি মূল্যায়ন করার পর কিছু দম্পতি সিদ্ধান্ত নেয় যে, স্ত্রী-ই যদি পূর্ণসময় পরিবারের তত্ত্বাবধান করেন, তাহলে সেটার সুবিধাগুলো টাকাপয়সা সংক্রান্ত যেকোনো ত্যাগস্বীকারকে ছাপিয়ে যায়। “আমি খুবই আনন্দিত যে, আমার স্ত্রী আমাদের অল্পবয়সি দুটো মেয়ের যত্ন নেওয়ার জন্য বাড়িতে থাকতে সক্ষম হয়েছে,” ক্রিস্টিনার স্বামী পল বলেন। “আমার স্ত্রী যখন চাকরি করত, তখন আমাদের উভয়ের জন্যই পরিস্থিতি আরও বেশি চাপপূর্ণ ছিল।” এই সিদ্ধান্ত এই দম্পতির দুই মেয়ের ওপর কোন প্রভাব ফেলেছিল? “তারা কেবলমাত্র নিরাপদই বোধ করে না,” পল বলেন, “বরং, তারা তাদের শৈশবের বছরগুলোতে খারাপ প্রভাব থেকে অনেক ক্ষেত্রে নিজেদের রক্ষা করতে পারছে।” কেন এই দম্পতি তাদের মেয়েদের সঙ্গে যথাসম্ভব যথেষ্ট সময় ব্যয় করাকে এতটা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে? পল উত্তর দেন: “আমি নিশ্চিত যে, আমরা বাবামায়েরা যদি আমাদের বাচ্চাদের হৃদয়ে না লিখি, তাহলে অন্য কেউ সেই সুযোগটা নিয়ে নেবে।”

স্পষ্টতই, প্রত্যেক দম্পতিকে তাদের নিজেদের পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করতে হবে আর অন্যেরা যে-সিদ্ধান্তই নিক না কেন, সেই বিষয়ে কারো সমালোচনা করা উচিত নয়। (রোমীয় ১৪:৪; ১ থিষলনীকীয় ৪:১১) তবে, একজন মা যখন পূর্ণসময় চাকরি করেন না, তখন পরিবার যে-উপকারগুলো লাভ করে, তা বিবেচনা করা উত্তম। পূর্বে উল্লেখিত তেরেসা এই বিষয়ে তার অনুভূতি সংক্ষেপে বলেন: “আপনার নিজের সন্তানদের যত্ন নেওয়া এবং তাদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য তাদের সঙ্গে যথাসম্ভব বেশি সময় কাটানোর চাইতে আর কোনোকিছু থেকেই এতটা পরিতৃপ্তি পাওয়া যায় না।”—গীতসংহিতা ১২৭:৩. (w০৮ ২/১)

[২১ পৃষ্ঠার চিত্র]

খ্রিস্টান মায়েরা তাদের সন্তানদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার অতীব গুরুত্বপূর্ণ কাজে অংশ নেয়

    বাংলা প্রকাশনা (১৯৮৯-২০২৬)
    লগ আউট
    লগ ইন
    • বাংলা
    • শেয়ার
    • পছন্দসমূহ
    • Copyright © 2025 Watch Tower Bible and Tract Society of Pennsylvania
    • ব্যবহারের শর্ত
    • গোপনীয়তার নীতি
    • গোপনীয়তার সেটিং
    • JW.ORG
    • লগ ইন
    শেয়ার