আমাদের পাঠক-পাঠিকাদের জিজ্ঞাস্য
তিন জন পণ্ডিত কি সত্যিই শিশু যিশুকে দেখতে গিয়েছিল?
দক্ষিণ আমেরিকা থেকে পূর্ব ইউরোপ ও এশিয়ার বড়দিনের লোককাহিনিগুলো যিশুর জন্মের দৃশ্য সম্বন্ধে এমনভাবে বর্ণনা করে, যেখানে শিশু যিশুর জন্য মূল্যবান উপহার হাতে তিন জন রাজা বা পণ্ডিত ব্যক্তি রয়েছে। এই কাহিনিটা কি সত্য? এটা কি প্রকৃত ঘটনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ? আসুন আমরা তা দেখি।
দুটি সুসমাচারের বিবরণ, মথি ও লূক, যিশুর জন্ম সম্বন্ধে লিপিবদ্ধ করে। এই বিবরণগুলো দেখায় যে, কাছাকাছি মাঠ থেকে আসা সাধারণ মেষপালকরাই শুধু যিশুর জন্মের সময় তাঁর সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল। সেই তথাকথিত রাজা বা পণ্ডিত ব্যক্তিরা আসলে কোনো রাজকীয় ব্যক্তি নয় বরং জ্যোতিষী ছিল আর তাদের সংখ্যা অজানা। পূর্বদেশ থেকে দীর্ঘ যাত্রা করার পর তারা যখন যিরূশালেমে পৌঁছেছিল, তখন নিশ্চয়ই কিছুটা সময় অতিবাহিত হয়ে গিয়েছিল। যিশু, যিনি তখন আর নবজাত শিশু ছিলেন না, তিনি আস্তাবলে নয় বরং ঘরে ছিলেন। সেই জ্যোতিষীরা যাত্রা করে যাবপাত্রে শোয়ানো এক নবজাত শিশুর কাছে পৌঁছায়নি বরং সেই সময়ে পৌঁছেছিল, যখন যিশু একটু বড়ো হয়ে গিয়েছিলেন—আর নবজাতক ছিলেন না—ও ঘরে ছিলেন। তাদের উপস্থিতি এমনকী যিশুর জীবনকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছিল!
যিশুর জন্ম সম্বন্ধে বাইবেল লেখক লূকের বিবরণ ভালো করে লক্ষ করুন আর আপনি দেখবেন যে এটি বলে: “মেষপালকেরা মাঠে অবস্থিতি করিতেছিল, এবং রাত্রিকালে আপন আপন পাল চৌকি দিতেছিল। আর প্রভুর এক দূত তাহাদের নিকটে আসিয়া দাঁড়াইলেন, এবং . . . তাহাদিগকে কহিলেন, . . . তোমরা দেখিতে পাইবে, একটী শিশু কাপড়ে জড়ান ও যাবপাত্রে শয়ান রহিয়াছে। . . . পরে তাহারা শীঘ্র গমন করিয়া মরিয়ম ও যোষেফ এবং সেই যাবপাত্রে শয়ান শিশুটীকে দেখিতে পাইল।”—লূক ২:৮-১৬.
শুধুমাত্র যোষেফ, মরিয়ম ও মেষপালকরাই শিশু যিশুর সঙ্গে উপস্থিত ছিল। লূকের বিবরণে আর কারো সম্বন্ধে তালিকাভুক্ত করা হয়নি।
এখন মথি ২:১-১১ পদে লিপিবদ্ধ বিবরণ পরীক্ষা করে দেখুন: ‘হেরোদ রাজার সময়ে যিহূদিয়ার বৈৎলেহমে যীশুর জন্ম হইলে পর, দেখ, পূর্ব্বদেশ হইতে কয়েক জন পণ্ডিত যিরূশালেমে আসিলেন।’ এরপর হেরোদ তাদের বৈৎলেহমে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন এবং সেই বিবরণ আরও বলে, “পরে তাঁহারা গৃহমধ্যে গিয়া শিশুটীকে তাঁহার মাতা মরিয়মের সহিত দেখিতে পাইলেন।”
লক্ষ করুন, বিবরণে শুধু “কয়েক জন পণ্ডিত” বলা হয়েছে “তিন জন পণ্ডিত” নয় এবং তারা পূর্বদেশ থেকে যাত্রা করে প্রথমে যিশুর জন্মস্থান বৈৎলেহমে নয় বরং যিরূশালেমে গিয়েছিল। অবশেষে তারা যখন বৈৎলেহমে পৌঁছেছিল, তখন ‘শিশু’ যিশু আর আস্তাবলে নয় বরং ঘরে ছিলেন।
এ ছাড়া, এই পরিদর্শনকারীদের সম্বন্ধে বর্ণনা করার জন্য যদিও বাইবেল “কয়েক জন পণ্ডিত” শব্দটি ব্যবহার করে কিন্তু অন্যান্য অনুবাদ “ম্যাজাই” অথবা “জ্যোতিষী” শব্দগুলো ব্যবহার করে। মথির সুসমাচার সম্বন্ধে এক পুস্তক (ইংরেজি) নামক একটি বই অনুসারে, “কয়েক জন পণ্ডিত” অভিব্যক্তিটি “একটি গ্রিক বিশেষ্য পদ” থেকে অনুবাদ করা হয়েছে “যেটি মূলত পারস্যের যাজকদের নির্দেশ করে, যারা জ্যোতিষবিদ্যায় দক্ষ ছিল।” আর দি এক্সপ্যান্ডেড ভাইনস্ এক্সপোজিটরি ডিকশনারি অভ্ নিউ টেস্টামেন্ট ওয়ার্ডস্ শব্দটিকে “একজন জাদুকর, মায়াবী, জাদুশক্তির একজন দাবিদার, ডাকিনীবিদ্যার একজন অধ্যাপক” হিসেবে সংজ্ঞায়িত করে।
যদিও জ্যোতিষবিদ্যা ও ডাকিনীবিদ্যা বর্তমানেও জনপ্রিয় কিন্তু বাইবেল সেগুলো ব্যবহার করার বিষয়ে সাবধান করে। (যিশাইয় ৪৭:১৩-১৫) এগুলো হচ্ছে প্রেতচর্চার বিভিন্ন ধরন এবং এমন অভ্যাস, যেগুলোকে ঈশ্বর ঘৃণা করেন। (দ্বিতীয় বিবরণ ১৮:১০-১২) এই কারণে ঈশ্বরের কোনো স্বর্গদূত জ্যোতিষীদের কাছে যিশুর জন্ম সম্বন্ধে ঘোষণা করেননি। কিন্তু, ঐশিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে দেখানো একটা স্বপ্নে, তাদেরকে দুষ্ট রাজা হেরোদের কাছে ফিরে না যেতে সাবধান করা হয়েছিল, কারণ রাজা যিশুকে হত্যা করার সুযোগ খুঁজছিলেন। তাই, ‘তাঁহারা অন্য পথ দিয়া আপনাদের দেশে চলিয়া গেলেন।’—মথি ২:১১-১৬.
সত্য খ্রিস্টানরা কি যিশুর জন্ম সম্বন্ধে এমন একটা পৌরাণিক কাহিনিকে বাঁচিয়ে রাখতে চাইবে, যা যিশুর জন্মকে ঘিরে যে-সত্য ঘটনাগুলো রয়েছে, সেগুলোকে বিকৃত করে? নিশ্চিতভাবেই এর উত্তর হচ্ছে, না। (w০৯-E ১২/০১)