ওয়াচটাওয়ার অনলাইন লাইব্রেরি
ওয়াচটাওয়ার
অনলাইন লাইব্রেরি
বাংলা
  • বাইবেল
  • প্রকাশনাদি
  • সভা
  • w11 ৫/১৫ পৃষ্ঠা ২৮-৩২
  • যিহোবার ওপর পূর্ণ নির্ভরতা আস্থা জাগিয়ে তোলে

এই বাছাইয়ের সঙ্গে কোনো ভিডিও প্রাপ্তিসাধ্য নেই।

দুঃখিত, ভিডিওটা চালানো সম্বভব হচ্ছে না।

  • যিহোবার ওপর পূর্ণ নির্ভরতা আস্থা জাগিয়ে তোলে
  • ২০১১ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • উপশিরোনাম
  • অনুরূপ বিষয়বস্ত‌ু
  • যখন ‘অনেকে আমাদের বিরুদ্ধে উঠে’
  • ‘সদাপ্রভু উত্তর দেন!’
  • “পরিত্রাণ সদাপ্রভুরই কাছে”
  • দায়ূদ পুনরায় ঈশ্বরের ওপর নির্ভরতা প্রকাশ করেন
  • ঈশ্বরের ওপর পূর্ণ নির্ভরতা রেখে আস্থা সহকারে এগিয়ে চলুন
  • যিহোবা—বাইবেলের সময়ে “নিস্তারকর্ত্তা”
    ২০০৮ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • “তোমার ইষ্ট সাধন করিতে আমাকে শিক্ষা দেও”
    ২০১২ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • জীবনের পরিবর্তনগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করার সময় ঈশ্বরের আত্মার ওপর নির্ভর করুন
    ২০০৪ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • দ্বিতীয় শমূয়েল বইয়ের প্রধান বিষয়গুলো
    ২০০৫ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
আরও দেখুন
২০১১ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
w11 ৫/১৫ পৃষ্ঠা ২৮-৩২

যিহোবার ওপর পূর্ণ নির্ভরতা আস্থা জাগিয়ে তোলে

“আমি সদাপ্রভুকে ডাকিলে তিনি শুনিবেন।”—গীত. ৪:৩.

১, ২. (ক) দায়ূদ কোন বিপদজনক পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলেন? (খ) আমরা কোন গীতগুলো নিয়ে আলোচনা করব?

রাজা দায়ূদ বেশ কিছু সময় ধরে ইস্রায়েলে শাসন করেছেন, তবে এখন তিনি এক বিপদজনক পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন। তার ষড়যন্ত্রকারী ছেলে অবশালোম নিজেকে রাজা বলে ঘোষণা করেছেন এবং দায়ূদ যিরূশালেম ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। এ ছাড়া, তার একজন আস্থাভাজন ব্যক্তিও তার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন আর এখন তিনি মাত্র কয়েক জন অনুগত ব্যক্তিকে নিয়ে জৈতুন পর্বতের মধ্যে দিয়ে খালি পায়ে কাঁদতে কাঁদতে যাচ্ছেন। আর পরবর্তী সময়ে, শিমিয়ি নামে শৌলের গোষ্ঠীর একজন ব্যক্তি দায়ূদকে শাপ দিতে দিতে তার দিকে পাথর ও ধুলা ছুড়ে মারতে থাকেন।—২ শমূ. ১৫:৩০, ৩১; ১৬:৫-১৪.

২ এই কঠিন পরীক্ষার কারণে কি দায়ূদ প্রচণ্ড শোক করতে করতে ও অপমানিত হয়ে পাতালে নেমে যাবেন? না, কারণ তিনি যিহোবার ওপর নির্ভর করেন। এটা গীতসংহিতার তৃতীয় গীতে স্পষ্ট হয়, যে-গীতটি দায়ূদ তার পলায়ন সম্বন্ধে রচনা করেছেন। এ ছাড়া, তিনি চতুর্থ গীতও রচনা করেছিলেন। এই দুটো গীতই এই দৃঢ়প্রত্যয় প্রকাশ করে যে, ঈশ্বর প্রার্থনা শোনেন এবং তার উত্তর দেন। (গীত. ৩:৪; ৪:৩) এই গীতগুলো আমাদেরকে এই আশ্বাস প্রদান করে যে, যিহোবা দিবারাত্র তার বিশ্বস্ত দাসদের সঙ্গে আছেন এবং তাদেরকে ধারণ বা সমর্থন করেন ও সেইসঙ্গে শান্তি এবং নিরাপত্তা প্রদান করেন। (গীত. ৩:৫; ৪:৮) তাই, আসুন আমরা এই গীতগুলো বিবেচনা করি এবং দেখি যে, কীভাবে সেগুলো ঈশ্বরের প্রতি আস্থা জাগিয়ে তোলে ও নির্ভরতা বৃদ্ধি করে।

যখন ‘অনেকে আমাদের বিরুদ্ধে উঠে’

৩. গীতসংহিতা ৩:১, ২ পদ অনুযায়ী দায়ূদের পরিস্থিতি কেমন ছিল?

৩ “ইস্রায়েল লোকদের অন্তঃকরণ অবশালোমের অনুগামী হইয়াছে,” একজন বার্তাবাহক বলেন। (২ শমূ. ১৫:১৩) কীভাবে অবশালোম লোকেদের কাছ থেকে এতটা সমর্থন লাভ করতে পেরেছেন, সেই বিষয়ে অবাক হয়ে দায়ূদ বলেন: “হে সদাপ্রভু, আমার বিপক্ষ কত বাড়িয়াছে। অনেকে আমার বিরুদ্ধে উঠিতেছে। অনেকে আমার প্রাণের উদ্দেশে বলিতেছে, ঈশ্বরের কাছে উহার জন্য ত্রাণ নাই।” (গীত. ৩:১, ২) অনেক ইস্রায়েলীয় মনে করে যে, অবশালোম ও তার সহযোগীদের কাছ থেকে আসা বিপর্যয় থেকে যিহোবা দায়ূদকে উদ্ধার করবেন না।

৪, ৫. (ক) দায়ূদ কোন বিষয়ে নিশ্চিত ছিলেন? (খ) “আমার মস্তক উত্তোলনকারী,” এই কথাগুলোর তাৎপর্য কী?

৪ কিন্তু, দায়ূদ এই ব্যাপারে নিশ্চিত আছেন কারণ ঈশ্বরের ওপর তার পূর্ণ নির্ভরতা রয়েছে। তিনি এই গীত গান: “হে সদাপ্রভু, তুমিই আমার বেষ্টনকারী ঢাল, আমার গৌরব, ও আমার মস্তক উত্তোলনকারী।” (গীত. ৩:৩) দায়ূদ নিশ্চিত যে, যিহোবা তাকে সুরক্ষা করবেন, ঠিক যেমন একটা ঢাল একজন সৈন্যকে সুরক্ষা করে। হ্যাঁ, বৃদ্ধ রাজা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন আর তার মুখ আচ্ছাদিত এবং অপমানে নত। কিন্তু, পরাৎপর দায়ূদের অবস্থা পরিবর্তন করে গৌরবান্বিত করবেন। যিহোবা পুনরায় তাকে সোজা হয়ে দাঁড়াতে, তার মস্তক উত্তোলন করতে এবং সেই অবস্থায় থাকতে সাহায্য করবেন। দায়ূদ আস্থা সহকারে বলেন যে, ঈশ্বর তাকে উত্তর দেবেন। আপনি কি যিহোবার ওপর এইরকম নির্ভরতা দেখান?

৫ “আমার মস্তক উত্তোলনকারী,” এই কথাগুলো বলার দ্বারা দায়ূদ স্বীকার করেছিলেন যে, যিহোবা তাকে সাহায্য করবেন। টুডেজ ইংলিশ ভারসন বলে: “কিন্তু হে প্রভু, তুমি সবসময় বিপদে আমার ঢাল স্বরূপ; তুমিই আমাকে জয়ী করো এবং আমার সাহস পুনরুদ্ধার করো।” “আমার মস্তক উত্তোলনকারী,” এই অভিব্যক্তি সম্বন্ধে একটি তথ্যগ্রন্থ বলে: “ঈশ্বর যখন একজন ব্যক্তির ‘মস্তক’ উত্তোলন করেন, তখন তিনি তাকে আশা ও আস্থা প্রদান করেন।” ইস্রায়েলের সিংহাসন ছেড়ে দিতে বাধ্য হওয়ায় দায়ূদের একেবারে হতাশ হয়ে পড়ার কারণ রয়েছে। কিন্তু, ‘তাহার মস্তক উত্তোলন’ করার কারণে তিনি পুনরায় সাহস ও আস্থা লাভ করতে এবং সেইসঙ্গে ঈশ্বরের ওপর পুরোপুরি নির্ভর করতে পারবেন।

‘সদাপ্রভু উত্তর দেন!’

৬. কেন দায়ূদ যিহোবার পবিত্র পর্বত থেকে তার প্রার্থনার উত্তর পাচ্ছেন বলে উল্লেখ করেন?

৬ যিহোবার ওপর নির্ভর করে এবং সম্পূর্ণ আস্থা সহকারে দায়ূদ আরও বলেন: “আমি স্বরবে সদাপ্রভুকে ডাকি, আর তিনি আপন পবিত্র পর্ব্বত হইতে আমাকে উত্তর দেন।” (গীত. ৩:৪) দায়ূদের আজ্ঞানুযায়ী নিয়ম-সিন্দুক, যা ঈশ্বরের উপস্থিতিকে চিত্রিত করে, তা সিয়োন পর্বতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। (পড়ুন, ২ শমূয়েল ১৫:২৩-২৫.) তাই, উপযুক্তভাবেই দায়ূদ যিহোবার পবিত্র পর্বত থেকে তার প্রার্থনার উত্তর পাচ্ছেন বলে উল্লেখ করেন।

৭. কেন দায়ূদ ভয় পাননি?

৭ ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করা নিষ্ফল হবে না, এই বিষয়ে নিশ্চিত থাকায় দায়ূদ ভয় পাননি। এর পরিবর্তে, তিনি এই গীত গান: “আমি শয়ন করিলাম ও নিদ্রা গেলাম, আমি জাগ্রৎ হইলাম; কারণ সদাপ্রভু আমাকে ধারণ করেন।” (গীত. ৩:৫) এমনকী রাতের বেলাতেও, যখন অতর্কিতে আক্রমণ করার আশংকা সবচেয়ে বেশি থাকে, তখনও দায়ূদ নিদ্রা যেতে ভয় পান না। তিনি নিশ্চিত যে, তিনি জাগ্রত হবেন কারণ তার অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে তার পুরোপুরি আস্থা রয়েছে যে, তিনি ঈশ্বরের নিশ্চিত সমর্থনের ওপর নির্ভর করতে পারেন। আমরাও পারি, যদি আমরা ক্রমাগত “সদাপ্রভুর পথে” চলি এবং কখনো তাঁর কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন না হই।—পড়ুন, ২ শমূয়েল ২২:২১, ২২.

৮. কীভাবে গীতসংহিতা ২৭:১-৪ পদ দেখায় যে, দায়ূদ ঈশ্বরের ওপর নির্ভর করেছিলেন?

৮ ঈশ্বরের ওপর দায়ূদের আস্থা ও পূর্ণ নির্ভরতা তার আরেকটা গীতেও স্পষ্ট দেখা যায়, যে-গীতে এই অনুপ্রাণিত কথাগুলো রয়েছে: “সদাপ্রভু আমার জ্যোতি, আমার পরিত্রাণ, আমি কাহা হইতে ভীত হইব? সদাপ্রভু আমার জীবন-দুর্গ আমি কাহা হইতে ত্রাসযুক্ত হইব? . . . যদ্যপি সৈন্যদল আমার বিরুদ্ধে শিবির স্থাপন করে, তথাপি আমার অন্তঃকরণ ভীত হইবে না; . . . সদাপ্রভুর কাছে আমি একটী বিষয় যাচ্ঞা করিয়াছি, তাহারই অন্বেষণ করিব, যেন জীবনের সমুদয় দিন সদাপ্রভুর গৃহে বাস করি, সদাপ্রভুর সৌন্দর্য্য দেখিবার ও তাঁহার মন্দিরে অনুসন্ধান করিবার জন্য।” (গীত. ২৭:১-৪) আপনিও যদি এইরকম অনুভব করে থাকেন এবং আপনার পরিস্থিতি যদি অনুমোদন করে, তাহলে আপনি যিহোবার সহউপাসকদের সঙ্গে নিয়মিতভাবে মিলিত হবেন।—ইব্রীয় ১০:২৩-২৫.

৯, ১০. গীতসংহিতা ৩:৬, ৭ পদে বলা কথাগুলো সত্ত্বেও, কেন আপনি বলবেন যে, দায়ূদের প্রতিহিংসাপরায়ণ মনোভাব ছিল না?

৯ যদিও অবশালোম দায়ূদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন এবং আরও অনেকে দায়ূদের প্রতি আনুগত্যের অভাব দেখিয়েছিল, তবুও তিনি এই গীত গান: “আমি অযুত অযুত লোক হইতেও ভীত হইব না, যাহারা আমার বিরুদ্ধে চারিদিকে সসজ্জ হইয়াছে। হে সদাপ্রভু, উঠ; হে আমার ঈশ্বর, আমার পরিত্রাণ কর; কেননা তুমি আমার সমস্ত শত্রুর চোয়ালে আঘাত করিয়াছ, তুমি দুষ্টদের দন্ত সকল ভাঙ্গিয়া দিয়াছ।”—গীত. ৩:৬, ৭.

১০ দায়ূদের প্রতিহিংসাপরায়ণ মনোভাব নেই। যদি তার শত্রুদের ‘চোয়ালে আঘাত করিতে’ হয়, তাহলে ঈশ্বরই সেটা করবেন। রাজা দায়ূদ নিজে ব্যবস্থার একটি ব্যক্তিগত অনুলিপি তৈরি করেন আর তিনি জানেন যে, এটিতে যিহোবা এই ঘোষণা দিয়েছেন: “প্রতিশোধ ও প্রতিফলদান আমারই কর্ম্ম।” (দ্বিতীয়. ১৭:১৪, ১৫, ১৮; ৩২:৩৫) এ ছাড়া, “দুষ্টদের দন্ত সকল ভাঙ্গিয়া” ফেলতে হলে ঈশ্বরই তা করবেন। তাদের দন্ত ভাঙার অর্থ হল, তারা যাতে কোনো ক্ষতি করতে না পারে, সেই ব্যাপারে তাদেরকে অক্ষম করে ফেলা। যিহোবা জানেন যে, কারা দুষ্ট কারণ তিনি “অন্তঃকরণের প্রতি দৃষ্টি করেন।” (১ শমূ. ১৬:৭) আমরা কতই না কৃতজ্ঞ যে, ঈশ্বর আমাদেরকে প্রধান দুষ্ট ব্যক্তি, শয়তানের বিরুদ্ধে অটল থাকার জন্য বিশ্বাস ও শক্তি প্রদান করেন, যাকে শীঘ্র এক গর্জনকারী কিন্তু দন্তহীন সিংহের মতো অগাধলোকে নিক্ষেপ করা হবে, যে কেবল ধ্বংসের উপযুক্ত!—১ পিতর ৫:৮, ৯; প্রকা. ২০:১, ২, ৭-১০.

“পরিত্রাণ সদাপ্রভুরই কাছে”

১১. কেন আমাদের সহবিশ্বাসীদের জন্য প্রার্থনা করা উচিত?

১১ দায়ূদ বুঝতে পারেন যে, একা যিহোবাই সেই উদ্ধার নিয়ে আসতে পারেন, যা তার জন্য অতীব প্রয়োজন। কিন্তু, গীতরচক কেবল নিজের কথাই চিন্তা করেননি। সামগ্রিকভাবে যিহোবার অনুগ্রহপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের বিষয়ে কী বলা যায়? উপযুক্তভাবেই, দায়ূদ এই কথাগুলোর দ্বারা তার অনুপ্রাণিত গীত শেষ করেন: “পরিত্রাণ সদাপ্রভুরই কাছে; তোমার প্রজাদের উপরে তোমার আশীর্ব্বাদ বর্ত্তুক।” (গীত. ৩:৮) এটা ঠিক যে, দায়ূদের অনেক বড়ো বড়ো সমস্যা রয়েছে কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি যিহোবার সমস্ত লোকের কথা মনে রাখেন এবং এই আস্থা রাখেন যে, ঈশ্বর তাদের আশীর্বাদ করবেন। আমাদেরও কি সহবিশ্বাসীদের কথা মনে রাখা উচিত নয়? আসুন আমরা তাদেরকে আমাদের প্রার্থনায় স্মরণ করি, তাদের ওপর পবিত্র আত্মা দেওয়ার জন্য যিহোবার কাছে যাচ্ঞা করি, যাতে তারা সাহস অর্জন করতে পারে এবং সুসমাচার ঘোষণা করার সময় আস্থা সহকারে কাজ করতে পারে।—ইফি. ৬:১৭-২০.

১২, ১৩. অবশালোমের প্রতি কী ঘটেছিল আর দায়ূদ কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন?

১২ অবশালোমের জীবন লজ্জাজনকভাবে শেষ হয়, যেটা এমন সকলের জন্য এক সাবধানবাণী, যারা অন্যদের, বিশেষভাবে দায়ূদের মতো ঈশ্বরের অভিষিক্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে অন্যায় আচরণ করে। (পড়ুন, হিতোপদেশ ৩:৩১-৩৫.) একটা যুদ্ধ সংগঠিত হয় আর অবশালোমের বাহিনী পরাজিত হয়। অবশালোম একটা খচ্চরে চড়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় তার ঘন চুল একটা বড়ো গাছের নীচু শাখার মধ্যে আটকে যায়। সেখানে তিনি সেই সময় পর্যন্ত ঝুলে থাকেন—জীবিত তবে অসহায় অবস্থায়—যতক্ষণ পর্যন্ত না যোয়াব তিনটে খোঁচা বা তির দিয়ে তার বক্ষ বিদ্ধ করে তাকে হত্যা করেন।—২ শমূ. ১৮:৬-১৭.

১৩ তার ছেলের পরিণতি শুনে কি দায়ূদ আনন্দিত হয়েছিলেন? না। এর পরিবর্তে, তিনি পায়চারি করতে করতে কেঁদে কেঁদে এই কথা বলেন: “হায়! আমার পুত্ত্র অবশালোম! আমার পুত্ত্র, আমার পুত্ত্র অবশালোম! কেন তোমার পরিবর্ত্তে আমি মরি নাই? হায় অবশালোম! আমার পুত্ত্র! আমার পুত্ত্র!” (২ শমূ. ১৮:২৪-৩৩) কেবলমাত্র যোয়াবের বাক্যই দায়ূদকে গভীর শোক কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে। অবশালোমের কত দুঃখজনক পরিণতিই না ঘটে, যার স্বার্থপর উচ্চাকাঙ্ক্ষা তাকে নিজের বাবার—যিহোবার অভিষিক্ত ব্যক্তির—বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে প্ররোচিত করে ও সেইসঙ্গে নিজের জন্য বিপর্যয় নিয়ে আসে!—২ শমূ. ১৯:১-৮; হিতো. ১২:২১; ২৪:২১, ২২.

দায়ূদ পুনরায় ঈশ্বরের ওপর নির্ভরতা প্রকাশ করেন

১৪. চতুর্থ গীতের রচনা সম্বন্ধে কী বলা যেতে পারে?

১৪ তৃতীয় গীতের মতো, চতুর্থ গীতও দায়ূদের এক আন্তরিক প্রার্থনা, যেটি যিহোবার ওপর তার পূর্ণ নির্ভরতার প্রমাণ দেয়। (গীত. ৩:৪; ৪:৩) সম্ভবত অবশালোমের বিদ্রোহ ব্যর্থ হওয়ার পর, দায়ূদ ঈশ্বরের উদ্দেশে স্বস্তি ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এই গীত রচনা করেছিলেন। অথবা এটি হয়তো লেবীয় গায়কদের কথা মাথায় রেখে রচনা করা হয়েছে। যা-ই হোক না কেন, এই গীত নিয়ে ধ্যান করা যিহোবার ওপর আমাদের নির্ভরতাকে শক্তিশালী করতে পারে।

১৫. কেন আমরা আস্থা সহকারে যিহোবার কাছে তাঁর পুত্রের মাধ্যমে প্রার্থনা করতে পারি?

১৫ দায়ূদ পুনরায় ঈশ্বরের ওপর পূর্ণ নির্ভরতা প্রকাশ করেন এবং প্রার্থনার কার্যকারিতার প্রতি আস্থা প্রদর্শন করেন। তিনি এই গীত গান: “হে আমার ধার্ম্মিকতার ঈশ্বর, আমি ডাকিলে আমাকে উত্তর দেও। সঙ্কটে তুমি আমাকে মনের প্রশস্ততা দিয়াছ; আমাকে দয়া কর, আমার প্রার্থনা শুন।” (গীত. ৪:১) আমরাও একই আস্থা রাখতে পারি, যদি আমরা ধার্মিকতার অনুশীলন করি। “ধার্ম্মিকতার ঈশ্বর” যিহোবা যে তাঁর ন্যায়নিষ্ঠ ব্যক্তিদের আশীর্বাদ করেন, এই বিষয়টা জানায় আমরা যিশুর মুক্তির মূল্যরূপ বলিদানে বিশ্বাস রেখে যিহোবার কাছে তাঁর পুত্রের মাধ্যমে আস্থা সহকারে প্রার্থনা করতে পারি। (যোহন ৩:১৬, ৩৬) তা আমাদের কতই না শান্তি প্রদান করে!

১৬. কোন কারণে হয়তো দায়ূদ নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েছিলেন?

১৬ কখনো কখনো আমরা হয়তো এমন নিরুৎসাহজনক পরিস্থিতির মুখোমুখি হই, যা আমাদের আস্থাকে নষ্ট করে দেয়। কিছু সময়ের জন্য হলেও এই বিষয়টা হয়তো দায়ূদের ক্ষেত্রে সত্য হয়েছে কারণ তিনি এই গীত গান: “হে মানব-সন্তানগণ, কত কাল আমার সম্মান অপমানে পরিণত করিবে, অলীকতা ভালবাসিবে, ও মিথ্যাকথার অন্বেষণ করিবে?” (গীত. ৪:২) “মানব-সন্তানগণ” অভিব্যক্তিটি স্পষ্টতই মানবজাতিকে নেতিবাচক অর্থে নির্দেশ করে। দায়ূদের শত্রুরা ‘অলীকতা ভালবাসিয়াছিল।’ নিউ ইন্টারন্যাশনাল ভারসন এভাবে অনুবাদ করে: “কত দিন তোমরা প্রতারণা ভালোবাসবে এবং মিথ্যা দেবতাদের অন্বেষণ করবে?” অন্যেরা যা করে, তা দেখে আমরা যদি এমনকী নিরুৎসাহিতও হই, তবুও আসুন আমরা ক্রমাগত আন্তরিকভাবে প্রার্থনা করি এবং একমাত্র সত্য ঈশ্বরের ওপর পূর্ণ নির্ভরতা প্রকাশ করি।

১৭. কীভাবে আমরা গীতসংহিতা ৪:৩ পদের সঙ্গে মিল রেখে আচরণ করতে পারি, তা ব্যাখ্যা করুন।

১৭ ঈশ্বরের ওপর দায়ূদের নির্ভরতা এই কথাগুলো থেকে স্পষ্ট হয়: “তোমরা জানিও, সদাপ্রভু সাধুকে [“অনুগত ব্যক্তিকে,” NW] আপনার নিমিত্ত পৃথক করিয়া রাখিয়াছেন; আমি সদাপ্রভুকে ডাকিলে তিনি শুনিবেন।” (গীত. ৪:৩) আমরা যদি যিহোবার প্রতি অনুগত থাকতে চাই, তাহলে সাহস বজায় রাখা ও সেইসঙ্গে তাঁর ওপর পূর্ণ নির্ভরতা রাখা প্রয়োজন। উদাহরণস্বরূপ, সেই সময়ই একটা খ্রিস্টীয় পরিবারের এই গুণগুলো দেখানো প্রয়োজন, যখন কোনো অননুতপ্ত আত্মীয়কে সমাজচ্যুত করা হয়। ঈশ্বর সেই ব্যক্তিদের সম্মান করেন, যারা তাঁর প্রতি অনুগত থাকে এবং ক্রমাগত তাঁর পথে চলে। ফল স্বরূপ, আনুগত্য ও যিহোবার ওপর পূর্ণ নির্ভরতা তাঁর লোকেদের মধ্যে আনন্দ বৃদ্ধি করে।—গীত. ৮৪:১১, ১২.

১৮. আমরা যদি নির্দয় কথাবার্তা অথবা কাজের শিকার হই, তাহলে গীতসংহিতা ৪:৪ পদের সঙ্গে মিল রেখে আমাদের কী করা উচিত?

১৮ কারো কথায় বা কাজে যদি আমরা অসন্তুষ্ট হই, তাহলে? আমরা আনন্দিত থাকতে পারি, যদি আমরা দায়ূদের এই কথাগুলো পালন করি: “তোমরা ভয় কর [“তোমরা উত্তেজিত হয়ে,” বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন], পাপ করিও না, তোমাদের শয্যার উপরে মনে মনে কথা কহ, ও নীরব হও।” (গীত. ৪:৪) আমরা যদি নির্দয় কথাবার্তা অথবা কাজের শিকার হই, তাহলে আমরা যেন প্রতিশোধ নিয়ে পাপ না করে ফেলি। (রোমীয় ১২:১৭-১৯) আমরা বিছানায় শুয়েও ব্যক্তিগত প্রার্থনায় সেই বিষয়ে আমাদের অনুভূতি প্রকাশ করতে পারি। আমরা যদি বিষয়টা নিয়ে প্রার্থনা করি, তাহলে আমরা হয়তো সেটাকে এক ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে পারব এবং প্রেমের বশবর্তী হয়ে ক্ষমা করতে অনুপ্রাণিত হব। (১ পিতর ৪:৮) এই বিষয়ে প্রেরিত পৌলের এই পরামর্শ লক্ষণীয়, যা স্পষ্টতই গীতসংহিতা ৪:৪ পদের ওপর ভিত্তি করে দেওয়া হয়েছে: “ক্রুদ্ধ হইলে পাপ করিও না; সূর্য্য অস্ত না যাইতে যাইতে তোমাদের কোপাবেশ শান্ত হউক; আর দিয়াবলকে স্থান দিও না।”—ইফি. ৪:২৬, ২৭.

১৯. কীভাবে গীতসংহিতা ৪:৫ পদ, আমাদেরকে আমাদের আধ্যাত্মিক বলিগুলোর ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে?

১৯ ঈশ্বরের ওপর নির্ভর করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে দায়ূদ এই গীত গান: “তোমরা ধার্ম্মিকতার বলি উৎসর্গ কর, আর সদাপ্রভুতে বিশ্বাস রাখ।” (গীত. ৪:৫) ইস্রায়েলীয়দের দ্বারা উৎসর্গীকৃত বলিগুলোর একমাত্র তখনই মূল্য থাকত, যদি লোকেদের মনোভাব সঠিক থাকত। (যিশা. ১:১১-১৭) আমাদের আধ্যাত্মিক বলিগুলো যদি ঈশ্বরের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হয়, তাহলে আমাদেরও সঠিক মনোভাব রাখতে এবং তাঁর ওপর পূর্ণ বিশ্বাস বা নির্ভরতা দেখাতে হবে।—পড়ুন, হিতোপদেশ ৩:৫, ৬; ইব্রীয় ১৩:১৫, ১৬.

২০. ‘সদাপ্রভুর মুখের দীপ্তি’ কোন বিষয়টাকে নির্দেশ করে?

২০ দায়ূদ গেয়ে চলেন: “অনেকে বলে, কে আমাদিগকে মঙ্গল দেখাইবে? হে সদাপ্রভু, আমাদের প্রতি নিজ মুখের দীপ্তি উদিত কর।” (গীত. ৪:৬) ‘সদাপ্রভুর মুখের দীপ্তি’ ঐশিক অনুগ্রহকে নির্দেশ করে। (গীত. ৮৯:১৫) তাই, দায়ূদ যখন এই প্রার্থনা করেন: “আমাদের প্রতি নিজ মুখের দীপ্তি উদিত কর,” তখন তিনি এইরকমটা বুঝিয়েছেন যে, ‘আমাদের প্রতি অনুগ্রহ করো।’ যেহেতু আমরা যিহোবার ওপর নির্ভর করি, তাই আস্থা সহকারে তাঁর ইচ্ছা পালন করার সময় আমাদের প্রতি তাঁর অনুগ্রহ থাকবে ও আমরা প্রচুর আনন্দ লাভ করব।

২১. আমরা যদি বর্তমানের আধ্যাত্মিক শস্যচ্ছেদনের কাজে পূর্ণরূপে অংশ নিই, তাহলে আমরা কোন বিষয়ে নিশ্চিত থাকতে পারি?

২১ ঈশ্বরদত্ত আনন্দ, যা কিনা শস্যচ্ছেদনের সময়ের আনন্দের চেয়ে আরও বেশি কিছু, তার প্রত্যাশায় দায়ূদ যিহোবার উদ্দেশে এই গীত গান: “তুমি আমার অন্তঃকরণে এমন আহ্লাদ দিয়াছ, যাহা উহাদের গোধূম ও দ্রাক্ষারসের বাহুল্যকালেও হয় না।” (গীত. ৪:৭) আমরাও গভীর আনন্দ লাভ করার বিষয়ে নিশ্চিত থাকতে পারি, যদি আমরা বর্তমানের আধ্যাত্মিক শস্যচ্ছেদনের কাজে পূর্ণরূপে অংশ নিয়ে থাকি। (লূক ১০:২) ‘বৃদ্ধিরত জাতির’ অভিষিক্ত ব্যক্তিরা নেতৃত্ব দিচ্ছে বলে আমরা এখন আনন্দিত কারণ এতে করে ‘শস্যক্ষেত্রের কার্য্যকারী লোক’ বৃদ্ধি পাচ্ছে। (যিশা. ৯:৩) আপনি কি এই আনন্দপূর্ণ শস্যচ্ছেদনের কাজে সত্যিই পূর্ণরূপে অংশ নিচ্ছেন?

ঈশ্বরের ওপর পূর্ণ নির্ভরতা রেখে আস্থা সহকারে এগিয়ে চলুন

২২. গীতসংহিতা ৪:৮ পদ অনুযায়ী, ইস্রায়েলীয়রা যখন ঈশ্বরের ব্যবস্থা পালন করেছিল, তখন এর ফল কী হয়েছিল?

২২ দায়ূদ এই কথাগুলো দিয়ে তার গীত শেষ করেন: “আমি শান্তিতে শয়ন করিব, নিদ্রাও যাইব; কেননা, হে সদাপ্রভু তুমিই একাকী আমাকে নির্ভয়ে বাস করিতে দিতেছ।” (গীত. ৪:৮) ইস্রায়েলীয়রা যখন যিহোবার ব্যবস্থা পালন করত, তখন তারা তাঁর সঙ্গে শান্তিতে থাকত এবং নিরাপত্তা অনুভব করত। উদাহরণস্বরূপ, শলোমনের রাজত্বের সময়ে ‘যিহূদা ও ইস্রায়েল নির্ভয়ে বাস করিত।’ (১ রাজা. ৪:২৫) যারা ঈশ্বরের ওপর নির্ভর করে, তারা এমনকী সেই সময়ও শান্তি উপভোগ করে, যখন আশেপাশের জাতিগুলোর মধ্যে শত্রুতা থাকে। দায়ূদের মতো আমরাও শান্তিতে নিদ্রা যাই কারণ ঈশ্বর আমাদের নিরাপদ বোধ করতে সাহায্য করেন।

২৩. আমাদের যদি ঈশ্বরের ওপর পূর্ণ নির্ভরতা থাকে, তাহলে আমরা কী উপভোগ করব?

২৩ আসুন আমরা আস্থা সহকারে যিহোবার সেবায় এগিয়ে চলি। এ ছাড়া, আমরা যেন বিশ্বাস সহকারে প্রার্থনা করি আর এভাবে “সমস্ত চিন্তার অতীত যে ঈশ্বরের শান্তি,” তা উপভোগ করি। (ফিলি. ৪:৬, ৭) তা আমাদের জন্য কত আনন্দই না নিয়ে আসে! আর আমরা যদি যিহোবার ওপর পূর্ণ নির্ভরতা বজায় রাখি, তাহলে আমরা নিশ্চিতভাবেই আস্থা সহকারে ভবিষ্যতের মুখোমুখি হতে পারব।

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

• অবশালোমের কারণে দায়ূদ কোন সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হয়েছিলেন?

• কীভাবে তৃতীয় গীত আস্থা জাগিয়ে তোলে?

• কোন কোন উপায়ে চতুর্থ গীত যিহোবার ওপর আমাদের নির্ভরতাকে শক্তিশালী করে?

• ঈশ্বরের ওপর পূর্ণ নির্ভরতা বজায় রাখার মাধ্যমে আমরা কীভাবে উপকৃত হতে পারি?

[২৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

এমনকী অবশালোমের কারণে পালিয়ে যাওয়ার সময়ও দায়ূদের যিহোবার ওপর আস্থা ছিল

[৩২ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

আপনি কি যিহোবার ওপর পূর্ণ নির্ভরতা বজায় রাখেন?

    বাংলা প্রকাশনা (১৯৮৯-২০২৬)
    লগ আউট
    লগ ইন
    • বাংলা
    • শেয়ার
    • পছন্দসমূহ
    • Copyright © 2025 Watch Tower Bible and Tract Society of Pennsylvania
    • ব্যবহারের শর্ত
    • গোপনীয়তার নীতি
    • গোপনীয়তার সেটিং
    • JW.ORG
    • লগ ইন
    শেয়ার