আমরা কি লিখিত বাক্যে মনোযোগ দেব?
“এই সকল . . . আমাদেরই চেতনার জন্য লিখিত হইল; আমাদের, যাহাদের উপরে যুগকলাপের অন্ত আসিয়া পড়িয়াছে।”—১ করি. ১০:১১.
১, ২. কেন আমরা যিহূদার চার জন রাজার উদাহরণ বিবেচনা করব?
আপনি যদি কোনো ব্যক্তিকে একটা রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় পা পিছলে পড়ে যেতে দেখেন, তা হলে আপনি হয়তো সেই একই রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় সতর্ক থাকবেন। একইভাবে, অন্যেরা তাদের জীবনে যে-ভুলগুলো করেছে, সেগুলো পরীক্ষা করার মাধ্যমে আমরা সেই একই ভুল করা এড়িয়ে চলতে পারি। উদাহরণ স্বরূপ, আমরা বাইবেলে উল্লেখিত ব্যক্তিদের ভুলগুলো থেকে শিক্ষা লাভ করতে পারি।
২ আগের প্রবন্ধে আমরা যিহূদার যে-চার জন রাজার বিষয়ে পড়েছি, তারা একাগ্র হৃদয়ে যিহোবার সেবা করেছিলেন। কিন্তু, তারপরও তারা গুরুতর ভুল করেছিলেন। তাদের অভিজ্ঞতাগুলো বাইবেলে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে, যেন আমরা সেগুলো নিয়ে ধ্যান করতে এবং সেগুলো থেকে মূল্যবান শিক্ষা লাভ করতে পারি। তাদের প্রতি যা ঘটেছিল, তা থেকে আমরা কী শিখতে পারি? আর কীভাবে আমরা তাদের মতো একই ভুল করা এড়িয়ে চলতে পারি?—পড়ুন, রোমীয় ১৫:৪.
মানবপ্রজ্ঞার উপর নির্ভর করা ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়
৩-৫. (ক) যদিও আসার হৃদয় যিহোবার প্রতি একাগ্র ছিল, কিন্তু তিনি কোন ভুল করেছিলেন? (খ) বাশার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার সময়, কেন আসা মানুষের উপর নির্ভর করেছিলেন বলে মনে হয়?
৩ আসুন, আমরা প্রথমে আসার উদাহরণ বিবেচনা করি। ১০,০০,০০০ কূশীয় যখন যিহূদা আক্রমণ করতে এসেছিল, তখন আসা যিহোবার উপর নির্ভর করেছিলেন। কিন্তু, তিনি যখন ইস্রায়েলের রাজা বাশার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন, তখন তিনি যিহোবার উপর নির্ভর করেননি। আসা চেয়েছিলেন, যেন বাশা রামা নগরকে শক্তিশালী করতে না পারেন, যেটা ছিল যিহূদা রাজ্যের সীমান্তের কাছাকাছি ইস্রায়েলের একটা গুরুত্বপূর্ণ নগর। (২ বংশা. ১৬:১-৩) আসা অরামের রাজাকে ঘুস দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, যেন অরামের রাজা তাকে সাহায্য করেন। অরামীয়রা যখন ইস্রায়েলের নগরগুলো আক্রমণ করেছিল, তখন বাশা “রামা নির্ম্মাণ হইতে নিবৃত্ত হইলেন, আপন কার্য্য হইতে ক্ষান্ত হইলেন।” (২ বংশা. ১৬:৫) প্রথমে আসার হয়তো মনে হয়েছিল, তিনি সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
৪ কিন্তু, যিহোবা কেমন অনুভব করেছিলেন? আসা যিহোবার উপর নির্ভর করেননি বলে যিহোবা খুশি হননি আর তাই তাকে সংশোধন করার জন্য তিনি ভাববাদী হনানিকে পাঠিয়েছিলেন। (পড়ুন, ২ বংশাবলি ১৬:৭-৯.) হনানি আসাকে বলেছিলেন: “ইহার পরে পুনঃপুনঃ আপনার বিপক্ষে যুদ্ধ উপস্থিত হইবে।” যদিও আসা রামা নগর দখল করেছিলেন কিন্তু বাকি জীবন তাকে এবং তার লোকেদের অনেক যুদ্ধ করতে হয়েছিল।
৫ আগের প্রবন্ধ থেকে আমরা জানতে পেরেছি, যিহোবা আসার প্রতি খুশি ছিলেন। যদিও আসা অসিদ্ধ ছিলেন, কিন্তু ঈশ্বর দেখেছিলেন যে, আসার হৃদয় তাঁর প্রতি একান্তভাবে নিয়োজিত। (১ রাজা. ১৫:১৪) তবে, আসা যখন একটা মন্দ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তখন তিনি সেটার পরিণতিগুলো এড়াতে পারেননি। কেন তিনি যিহোবার উপর নির্ভর না করে বরং নিজের উপর এবং অন্য মানুষের উপর নির্ভর করেছিলেন? সম্ভবত আসা মনে করেছিলেন, সুচতুর সামরিক পদ্ধতি ব্যবহার করে তিনি যুদ্ধে জয়ী হতে পারবেন। কিংবা তিনি হয়তো অন্যদের মন্দ উপদেশে কান দিয়েছিলেন।
৬. আসার ভুল থেকে আমরা কী শিখতে পারি? একটা উদাহরণ দিন।
৬ আসার ভুল থেকে আমরা কী শিখতে পারি? সমস্ত পরিস্থিতিতে আমাদের অবশ্যই যিহোবার উপর নির্ভর করতে হবে, নিজেদের উপর নয়। আমাদের তাঁর কাছে সাহায্য চাইতে হবে, তা আমাদের সমস্যাগুলো বড়ো বা ছোটো, যা-ই হোক না কেন। আমরা এভাবে চিন্তা করতে পারি: নিজেদের দৃষ্টিতে সর্বোত্তম বলে মনে হয়, এমন উপায়ে কোনো একটা সমস্যার সমাধান করতে চাওয়ার মাধ্যমে আমরা কি কখনো কখনো নিজেদের উপর নির্ভর করি? না কি আমরা সবসময় প্রথমে বাইবেল কী বলে, তা বিবেচনা করি এবং এরপর আমাদের সমস্যাগুলো সমাধান করার জন্য সেই তথ্য কাজে লাগাই? উদাহরণ স্বরূপ, ধরুন আপনার পরিবারের বিরোধিতার কারণে সভাতে অথবা সম্মেলনে যোগ দেওয়া আপনার জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। সেই পরিস্থিতিতে আপনার কী করা উচিত, তা জানার জন্য আপনি কি যিহোবার কাছে সাহায্য চাইবেন? অথবা হতে পারে, অনেক সময় ধরে বেকার থাকার পর অবশেষে আপনি এমন কাউকে খুঁজে পেয়েছেন, যিনি আপনাকে চাকরি দিতে চান। প্রতি সপ্তাহে আপনাকে যে সভাতে যোগ দিতেই হবে, সেই বিষয়ে আপনি কি তাকে বলবেন এবং চাকরি হারানোর ঝুঁকি নেবেন? সমস্যা যা-ই হোক না কেন, আমাদের অবশ্যই গীতরচকের এই উপদেশ মনে রাখতে হবে: “তোমার গতি সদাপ্রভুতে অর্পণ কর, তাঁহাতে নির্ভর কর, তিনিই কার্য্য সাধন করিবেন।”—গীত. ৩৭:৫.
খারাপ বন্ধুবান্ধব বাছাইয়ের ফল কী হতে পারে?
৭, ৮. যিহোশাফট কোন ভুলগুলো করেছিলেন এবং সেগুলোর পরিণতি কী হয়েছিল? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)
৭ আসুন আমরা এখন আসার ছেলে যিহোশাফটের উদাহরণ বিবেচনা করি। তার এমন অনেক ভালো গুণ ছিল, যেগুলো দেখে যিহোবা খুশি হয়েছিলেন। আর তিনি যখন যিহোবার উপর নির্ভর করেছিলেন, তখন তিনি বহু ভালো কাজ করেছিলেন। কিন্তু, তিনি কিছু মন্দ সিদ্ধান্তও নিয়েছিলেন। উদাহরণ স্বরূপ, তিনি দুষ্ট রাজা আহাবের মেয়ের সঙ্গে তার ছেলের বিয়ের ব্যবস্থা করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে, অরামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার সময় যিহোশাফট আহাবের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন, এমনকী যদিও ভাববাদী মীখায় তাকে তা না করার বিষয়ে সাবধান করেছিলেন। যুদ্ধক্ষেত্রে অরামীয়রা যিহোশাফটকে আক্রমণ করেছিল এবং তাকে হত্যা করার চেষ্টা করেছিল। (২ বংশা. ১৮:১-৩২) তিনি যখন যিরূশালেমে ফিরে এসেছিলেন, তখন ভাববাদী যেহূ তাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন: “দুর্জনের সাহায্য করা এবং সদাপ্রভুর বিদ্বেষীদিগকে প্রেম করা কি আপনার উপযুক্ত?”—পড়ুন, ২ বংশাবলি ১৯:১-৩.
৮ যিহোশাফট কি নিজের ঘটনা থেকে এবং ভাববাদীর সাবধানবাণী থেকে শিক্ষা লাভ করেছিলেন? দুঃখের বিষয় হল, না। যদিও তিনি তখনও যিহোবাকে ভালোবাসতেন এবং তাঁকে খুশি করতে চাইতেন, কিন্তু তিনি আবারও এমন একজন ব্যক্তির সঙ্গে বন্ধুত্ব করেছিলেন, যিনি যিহোবাকে উপাসনা করতে চাননি। সেই ব্যক্তি ছিলেন আহাবের ছেলে রাজা অহসিয়। যিহোশাফট ও অহসিয় একসঙ্গে জাহাজ নির্মাণ করেছিলেন। কিন্তু, তারা সেই জাহাজগুলো এমনকী ব্যবহার করার আগেই সেগুলো ভেঙে গিয়েছিল।—২ বংশা. ২০:৩৫-৩৭.
৯. আমরা যদি খারাপ বন্ধুবান্ধব বাছাই করি, তা হলে সেটার ফল কী হতে পারে?
৯ যিহোশাফটের প্রতি যা ঘটেছিল, তা থেকে আমরা কী শিখতে পারি? যিহোশাফট যা ন্যায্য, তা-ই করেছিলেন এবং ‘সমস্ত অন্তঃকরণের সহিত সদাপ্রভুর অন্বেষণ করিয়াছিলেন।’ (২ বংশা. ২২:৯) তবে, তিনি এমন লোকেদের সঙ্গে সময় কাটানো বেছে নিয়েছিলেন, যারা যিহোবাকে ভালোবাসত না আর এর ফলে তার জীবনে গুরুতর সমস্যা দেখা দিয়েছিল। তিনি এমনকী নিজের জীবন হারাতে বসেছিলেন। বাইবেলের এই নীতিবাক্য মনে রাখুন: “জ্ঞানীদের সহচর হও, জ্ঞানী হইবে; কিন্তু যে হীনবুদ্ধিদের বন্ধু, সে ভগ্ন হইবে।” (হিতো. ১৩:২০) এটা ঠিক যে, আমরা অন্যদের যিহোবা সম্বন্ধে জানাতে চাই। কিন্তু, আমরা যদি এমন লোকেদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব গড়ে তুলি, যারা যিহোবার উপাসনা করে না, তা হলে সেটা আমাদের জন্য বিপদ ডেকে আনবে।
১০. (ক) আমরা যদি বিয়ে করতে চাই, তা হলে আমরা যিহোশাফটের কাছ থেকে কী শিখতে পারি? (খ) আমাদের কী মনে রাখা উচিত?
১০ উদাহরণ স্বরূপ, আমরা যদি বিয়ে করতে চাই, তা হলে আমরা যিহোশাফটের কাছ থেকে কী শিখতে পারি? আমরা হয়তো এমন কারো প্রতি রোমান্টিক অনুভূতি গড়ে তুলতে শুরু করেছি, যিনি যিহোবাকে ভালোবাসেন না। আমরা হয়তো এইরকম মনে করতে পারি, বিয়ের জন্য আমরা ঈশ্বরের লোকেদের মধ্যে কাউকে খুঁজে পাব না। অথবা আত্মীয়স্বজনের মধ্যে কেউ কেউ হয়তো আমাদের সবসময় এইরকম কথা বলে থাকে, বয়স বেশি হয়ে যাওয়ার আগেই বিয়ে করা উচিত। এটা ঠিক, যিহোবা আমাদের মধ্যে অন্যদের ভালোবাসার এবং অন্যদের কাছ থেকে ভালোবাসা পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু, আমরা যদি বিয়ের জন্য সঠিক ব্যক্তিকে খুঁজে না পাই, তা হলে আমাদের কী করা উচিত? এক্ষেত্রে একটা যে-বিষয় আমাদের সাহায্য করতে পারে, সেটা হল যিহোশাফটের ঘটনা নিয়ে ধ্যান করা। সাধারণত, তিনি যিহোবার কাছে নির্দেশনা চাইতেন। (২ বংশা. ১৮:৪-৬) কিন্তু, তিনি যখন আহাবের সঙ্গে বন্ধুত্ব করেছিলেন, যিনি যিহোবাকে ভালোবাসতেন না, তখন যিহোশাফট যিহোবার সাবধানবাণী উপেক্ষা করেছিলেন। যিহোশাফটের মনে রাখা উচিত ছিল, “সদাপ্রভুর প্রতি যাহাদের অন্তঃকরণ একাগ্র, তাহাদের পক্ষে আপনাকে বলবান দেখাইবার জন্য তাঁহার চক্ষু পৃথিবীর সর্ব্বত্র ভ্রমণ করে।” (২ বংশা. ১৬:৯) আমাদেরও এটা মনে রাখা উচিত যে, যিহোবা আমাদের সাহায্য করতে চান। তিনি আমাদের পরিস্থিতি বোঝেন এবং তিনি আমাদের ভালোবাসেন। আপনি কি বিশ্বাস করেন যে, ভালোবাসা ও সাহচর্য লাভ করার ব্যাপারে আপনার যে-আকাঙ্ক্ষা রয়েছে, তা যিহোবা মেটাবেন? আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন, একটা সময়ে তিনি তা মেটাবেন!
এমন কারো সঙ্গে রোমান্টিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়বেন না, যিনি যিহোবাকে উপাসনা করেন না (১০ অনুচ্ছেদ দেখুন)
আপনার হৃদয়কে গর্বিত হতে দেবেন না
১১, ১২. (ক) হিষ্কিয় এমন কী করেছিলেন, যা প্রকাশ করেছিল যে, তার হৃদয়ে আসলে কী রয়েছে? (খ) কেন যিহোবা হিষ্কিয়কে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন?
১১ হিষ্কিয়ের উদাহরণ থেকে আমরা কী শিখতে পারি? হিষ্কিয়ের হৃদয়ে আসলে কী রয়েছে, তা বোঝার জন্য যিহোবা তাকে সাহায্য করেছিলেন। (পড়ুন, ২ বংশাবলি ৩২:৩১.) হিষ্কিয় যখন খুবই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন, তখন যিহোবা তাকে বলেছিলেন যে, তিনি সুস্থ হয়ে যাবেন এবং এই বিষয়ে তাকে আশ্বস্ত করার জন্য যিহোবা তাকে একটা চিহ্নও দিয়েছিলেন। যিহোবা সিঁড়িতে একটা ছায়া দশ ধাপ পিছনে ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে, বাবিলের অধ্যক্ষরা সম্ভবত এই চিহ্ন সম্বন্ধে আরও জানতে চেয়েছিলেন আর তাই তারা হিষ্কিয়কে সেই বিষয়ে জিজ্ঞেস করার জন্য তার কাছে লোক পাঠিয়েছিলেন। (২ রাজা. ২০:৮-১৩; ২ বংশা. ৩২:২৪) ওই ব্যক্তিদের সঙ্গে হিষ্কিয়ের কেমন আচরণ করা উচিত, সেই বিষয়ে যিহোবা হিষ্কিয়কে বলে দেননি। বাইবেল জানায়, হিষ্কিয় কী করেন, তা দেখার জন্য যিহোবা “তাঁহাকে ত্যাগ করিয়াছিলেন।” হিষ্কিয় বাবিলের সেই ব্যক্তিদের তার সমস্ত ধনসম্পদ দেখিয়েছিলেন। এটা প্রকাশ করেছিল যে, হিষ্কিয়ের হৃদয়ে আসলে কী রয়েছে। কীভাবে?
১২ দুঃখের বিষয় হল, হিষ্কিয় গর্বিত হয়ে পড়েছিলেন। এর ফলে, তিনি “প্রাপ্ত উপকারানুসারে প্রতিদান করিলেন না।” তার মনোভাব কেন পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছিল, সেই সম্বন্ধে বাইবেল কিছু জানায় না। হতে পারে, তিনি অশূরীয়দের পরাজিত করেছিলেন বলে অথবা যিহোবা তাকে সুস্থ করেছিলেন বলে তিনি গর্বিত হয়ে পড়েছিলেন। অথবা এর কারণ হতে পারে, তিনি অনেক ধনী এবং বিখ্যাত হয়ে গিয়েছিলেন। যদিও হিষ্কিয় একাগ্র হৃদয়ে যিহোবার সেবা করেছিলেন, কিন্তু কিছু সময়ের জন্য তিনি গর্বিত হয়ে পড়েছিলেন। আর যিহোবা এতে খুশি হননি। কিন্তু, পরে “হিষ্কিয় . . . আপনাকে অবনত” বা নম্র করেছিলেন আর তাই যিহোবা তাকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন।—২ বংশা. ৩২:২৫-২৭; গীত. ১৩৮:৬.
১৩, ১৪. (ক) কোন ধরনের পরিস্থিতি প্রকাশ করতে পারে যে, আমাদের হৃদয়ে আসলে কী রয়েছে? (খ) অন্যেরা যখন আমাদের প্রশংসা করে, তখন আমাদের কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত?
১৩ হিষ্কিয়ের কাছ থেকে এবং তিনি যে-ভুল করেছিলেন, সেটা থেকে আমরা কী শিখতে পারি? মনে করে দেখুন, যিহোবা তাকে অশূরীয়দের পরাজিত করতে সাহায্য করার এবং তাকে অসুস্থতা থেকে সুস্থ করার পর পরই তিনি গর্বিত হয়ে কাজ করেছিলেন। তাই, আমাদের প্রতি যখন ভালো বিষয়গুলো ঘটে অথবা অন্যেরা যখন আমাদের প্রশংসা করে, তখন আমরা কী করি? আমরা যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাই, সেটা প্রকাশ করতে পারে যে, আমাদের হৃদয়ে আসলে কী রয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ, একজন ভাই হয়তো একটা বক্তৃতা তৈরি করার এবং সেটা এক বিরাট সংখ্যক শ্রোতার সামনে তুলে ধরার জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছেন। বক্তৃতা শুনে অনেকে তার প্রশংসা করে। সেই প্রশংসা শুনে তিনি কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাবেন?
১৪ আমাদের সবসময় যিশুর এই কথাগুলো মনে রাখা উচিত: “সমস্ত আজ্ঞা পালন করিলে পর তোমরাও বলিও আমরা অনুপযোগী দাস, যাহা করিতে বাধ্য ছিলাম, তাহাই করিলাম।” (লূক ১৭:১০) মনে করে দেখুন, হিষ্কিয় যখন গর্বিত হয়ে পড়েছিলেন, তখন যিহোবা তাকে যেভাবে সাহায্য করেছেন, সেটার প্রতি তিনি উপলব্ধি দেখাননি। তাই, কোনো বক্তৃতা দেওয়ার পর অন্যেরা যদি আমাদের প্রশংসা করে, তা হলে কী আমাদের নম্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করবে? যিহোবা আমাদের জন্য যা-কিছু করেছেন, সেগুলো নিয়ে আমরা ধ্যান করতে পারি। আর আমরা অন্যদের কাছে তাঁর সম্বন্ধে এবং তিনি যেভাবে আমাদের সাহায্য করেছেন, সেই সম্বন্ধে বলতে পারি। আসলে, তিনিই আমাদের বাইবেল এবং তাঁর পবিত্র আত্মা জুগিয়েছেন, যেন আমরা সেই বক্তৃতা দিতে পারি।
সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় যিহোবার নির্দেশনা অনুসরণ করুন
১৫, ১৬. যোশিয় এমন কী করেছিলেন, যার ফলে নিজের জীবন হারিয়েছিলেন?
১৫ শেষে, যোশিয়ের উদাহরণ থেকে আমরা কী শিখতে পারি? যদিও যোশিয় একজন ভালো রাজা ছিলেন কিন্তু তিনি এমন একটা ভুল করেছিলেন, যার ফলে নিজের জীবন হারিয়েছিলেন। (পড়ুন, ২ বংশাবলি ৩৫:২০-২২.) কী ঘটেছিল? যোশিয় মিশরের রাজা নখোর সঙ্গে যুদ্ধ করেছিলেন, যদিও তা করার কোনো কারণই ছিল না। এমনকী নখো নিজেই যোশিয়কে বলেছিলেন, তিনি যোশিয়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে চান না। বাইবেল জানায়, নখোর কথাগুলো আসলে ‘ঈশ্বরের মুখনির্গত বাক্য’ ছিল। কিন্তু, এরপরও যোশিয় যুদ্ধ করতে গিয়েছিলেন এবং মারা পড়েছিলেন। তা হলে, কেন তিনি নখোর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন? বাইবেল আমাদের তা জানায় না।
১৬ যোশিয়ের এটা পরীক্ষা করে দেখা উচিত ছিল যে, নখোর কথাগুলো আসলেই যিহোবার কাছ থেকে কি না। কীভাবে তিনি তা করতে পারতেন? তিনি যিরমিয়কে জিজ্ঞেস করতে পারতেন, যিনি যিহোবার একজন ভাববাদী ছিলেন। (২ বংশা. ৩৫:২৩, ২৫) এ ছাড়া, এর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত সমস্ত বিষয়ও যোশিয়ের বিবেচনা করে দেখা উচিত ছিল। নখো যিরূশালেমের বিরুদ্ধে নয় বরং অন্য একটা জাতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য কর্কমীশে যাচ্ছিলেন। আর তিনি যিহোবা অথবা তাঁর লোকেদের টিটকারিও দেননি। যোশিয় সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে এই বিষয়গুলো নিয়ে ভালোভাবে বিবেচনা করেননি। এখান থেকে আমরা কী শিখতে পারি? আমরা যখন কোনো সমস্যার মুখোমুখি হই এবং আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হয়, তখন প্রথমে আমাদের বিবেচনা করতে হবে যে, সেই বিষয়ে যিহোবার ইচ্ছা কী।
১৭. আমরা যখন সমস্যার মুখোমুখি হই, তখন কীভাবে আমরা যোশিয়ের মতো ভুল করা এড়িয়ে চলতে পারি?
১৭ আমাদের যখন কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হয়, তখন আমাদের প্রথমে চিন্তা করতে হবে, বাইবেলের কোন নীতিগুলো আমাদের সাহায্য করতে পারে এবং কীভাবে আমরা সেগুলো কাজে লাগাতে পারি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আমরা হয়তো আমাদের প্রকাশনা থেকে আরও গবেষণা করতে অথবা কোনো প্রাচীনের কাছ থেকে উপদেশ চাইতে পারি। তিনি আমাদের বাইবেলের অন্যান্য নীতি বিবেচনা করার জন্য সাহায্য করতে পারেন। একজন বিবাহিত বোনের কথা কল্পনা করুন, যার স্বামী সাক্ষি নন। তিনি একটা নির্দিষ্ট দিনে পরিচর্যায় যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। (প্রেরিত ৪:২০) কিন্তু, সেই দিন তার স্বামী তাকে প্রচারে না গিয়ে ঘরে থাকতে বলেন। তিনি বোনকে বলেন, যেহেতু অনেক দিন তাদের একসঙ্গে সময় কাটানো হয়নি, তাই তিনি তাকে বাইরে বেড়াতে নিয়ে যেতে চান। সেই বোন বাইবেলের কিছু শাস্ত্রপদ বিবেচনা করেন, যেন তিনি একটা বিজ্ঞ সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। তিনি জানেন, তাকে অবশ্যই ঈশ্বরের বাধ্য হতে হবে এবং শিষ্য তৈরি করার ব্যাপারে যিশু আমাদের যে-আদেশ দিয়েছেন, সেটা পালন করতে হবে। (মথি ২৮:১৯, ২০; প্রেরিত ৫:২৯) কিন্তু, তিনি এও জানেন যে, একজন স্ত্রীকে তার স্বামীর বশীভূত থাকতে হবে ও সেইসঙ্গে ঈশ্বরের দাসদের “শান্ত [‘যুক্তিবাদী,’ NW]” মনোভাব বজায় রাখতে হবে। (ইফি. ৫:২২-২৪; ফিলি. ৪:৫) তার স্বামী কি তাকে প্রচারে যাওয়ার ব্যাপারে বাধা দিতে চাইছেন, না কি শুধু সেই দিন তিনি তার সঙ্গে সময় কাটাতে চাইছেন? যিহোবার দাস হিসেবে আমরা এমন সিদ্ধান্ত নিতে চাই, যা যুক্তিযুক্ত এবং যা তাঁকে খুশি করে।
একাগ্র হৃদয় বজায় রাখুন এবং আনন্দ করুন
১৮. যিহূদার চার জন রাজার উদাহরণ নিয়ে ধ্যান করার মাধ্যমে আপনি কী শিখতে পারেন?
১৮ কখনো কখনো, আমরাও হয়তো যিহূদার এই চার জন রাজার মতো একইরকম ভুল করতে পারি। আমরা হয়তো (১) নিজেদের চিন্তাভাবনার উপর নির্ভর করতে পারি, (২) খারাপ বন্ধুবান্ধব বাছাই করতে পারি, (৩) গর্বিত মনোভাব গড়ে তুলতে পারি অথবা (৪) ঈশ্বরের ইচ্ছা কী, তা প্রথমে বিবেচনা না করেই সিদ্ধান্ত নিতে পারি। তা সত্ত্বেও, আমাদের এইরকম চিন্তা করার কোনো কারণ নেই যে, আমরা কখনো যিহোবাকে খুশি করতে পারব না। তিনি আমাদের মধ্যে ভালো বিষয়টা দেখেন, যেমনটা তিনি সেই চার জন রাজার মধ্যে দেখেছিলেন। এ ছাড়া, আমরা তাঁকে কতটা ভালোবাসি এবং তাঁকে কতটা পূর্ণরূপে সেবা করতে চাই, সেটাও তিনি লক্ষ করেন। তাই, তিনি আমাদের জন্য এমন উদাহরণগুলো জুগিয়েছেন, যেগুলো আমাদের গুরুতর ভুল করা এড়িয়ে চলতে সাহায্য করতে পারে। আসুন, আমরা বাইবেলের এই বিবরণগুলো নিয়ে ধ্যান করি এবং যিহোবা আমাদের জন্য সেগুলো জুগিয়েছেন বলে তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি!