ওয়াচটাওয়ার অনলাইন লাইব্রেরি
ওয়াচটাওয়ার
অনলাইন লাইব্রেরি
বাংলা
  • বাইবেল
  • প্রকাশনাদি
  • সভা
  • km ২/০০ পৃষ্ঠা ৩-৬
  • পুরোপুরি নিশ্চিত হয়ে সুসমাচার প্রচার করুন

এই বাছাইয়ের সঙ্গে কোনো ভিডিও প্রাপ্তিসাধ্য নেই।

দুঃখিত, ভিডিওটা চালানো সম্বভব হচ্ছে না।

  • পুরোপুরি নিশ্চিত হয়ে সুসমাচার প্রচার করুন
  • ২০০০ আমাদের রাজ্যের পরিচর্যা
  • অনুরূপ বিষয়বস্ত‌ু
  • পূর্ণতা লাভ করে দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকুন
    ২০০০ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • বাবা-মায়েরা আপনাদের সন্তানদের “পরিত্রাণের নিমিত্ত জ্ঞানবান্‌” হতে সাহায্য করুন
    প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে (অধ্যয়ন)—২০১৭
  • আপনার কাছে যে সত্য রয়েছে, এই বিষয়ে দৃঢ়প্রত্যয়ী হোন
    প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য সম্বন্ধে ঘোষণা করে (অধ্যয়ন)—২০২০
  • সীল—উৎসাহের এক উৎস
    ১৯৯৯ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
আরও দেখুন
২০০০ আমাদের রাজ্যের পরিচর্যা
km ২/০০ পৃষ্ঠা ৩-৬

পুরোপুরি নিশ্চিত হয়ে সুসমাচার প্রচার করুন

১ প্রথম শতাব্দীতে যীশু খ্রীষ্ট তাঁর শিষ্যদের সুসমাচার প্রচার করার ও ‘সমুদয় জাতিকে শিষ্য করার’ আজ্ঞা দিয়েছিলেন। (মথি ২৪:১৪; ২৮:১৯, ২০) এই আজ্ঞাকে আমরা, যিহোবার সাক্ষিরা খুবই জরুরি বলে মনে করি। আর সেইজন্যে এই বিংশ শতাব্দীর শেষে এসে পৃথিবীর ২৩৪টা দেশে আমাদের খ্রীষ্টান ভাইদের সংখ্যা বেড়ে ৫৯,০০,০০০ এরও বেশি হয়ে গেছে। তাই এটা আমাদের স্বর্গীয় পিতার জন্য কতই না প্রশংসা ও গৌরব নিয়ে আসে!

২ এখন আমরা একবিংশ শতাব্দীতে এসে পৌঁছেছি আর তাই আমাদের শত্রু শয়তান আমাদের প্রচার ও শিষ্য তৈরি করার কাজে বাধা দেওয়ার জন্য খুবই ব্যস্ত। সে চায় না যে আমরা প্রচার কাজে লেগে থাকি বরং সে চায় যে আমরা আমাদের সময় ও শক্তি অনেককিছু অদরকারি কাজে কাটিয়ে দিই। আর তা করার জন্য সে এই জগৎকে ব্যবহার করে যেন জগৎ আমাদের ওপর চাপ নিয়ে আসে। সুতরাং আমাদের জীবনে কোন্‌ বিষয়টাকে প্রথমে রাখা দরকার তা এই জগৎকে ঠিক করতে না দিয়ে ঈশ্বরের বাক্য যা বলে আমাদের তাই করা উচিত। আর এটা বলে যে যিহোবার ইচ্ছাকে আমাদের জীবনে প্রথম স্থান দেওয়া দরকার। (রোমীয় ১২:২) তাই এর মানে হল যে আমরা ‘সময়ে অসময়ে বাক্য প্রচার করি এবং আমাদের পরিচর্যা সম্পন্ন করি।’—২ তীম. ৪:২, ৫.

৩ পুরোপুরি নিশ্চিত হোন: খ্রীষ্টানদের ‘সবকিছুতে ঈশ্বরের ইচ্ছা নিশ্চয় করে জেনে শক্ত হয়ে দাঁড়ানো’ দরকার। (কল. ৪:১২, প্রেমের বাণী) “নিশ্চয়” কথাটার মানে হল “কোন বিষয়ে দৃঢ় বিশ্বাস বা প্রত্যয় নিয়ে আসা; তাতে পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া।” আমাদের খ্রীষ্টানদের কোন্‌ বিষয়ে দৃঢ় বিশ্বাস থাকা বা পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া দরকার? এই বিষয়ে যে ঈশ্বরের ভবিষ্যদ্বাণীর বাক্য পুরোপুরি সত্যি আর আমরা এখন শেষকালের একেবারে শেষ সীমায় এসে পৌঁছেছি। তাই যখন আমরা সুসমাচার প্রচার করি তখন আমাদের প্রেরিত পৌলের মতো দৃঢ় বিশ্বাস থাকা দরকার যিনি বলেছিলেন যে সুসমাচার “প্রত্যেক বিশ্বাসীর পক্ষে পরিত্রাণার্থে ঈশ্বরের শক্তি।”—রোমীয় ১:১৬.

৪ শয়তান আমাদের ভুল পথে নিয়ে যাওয়ার জন্য খারাপ ও ধোকাবাজ লোকেদের কাজে লাগায়। (২ তীম. ৩:১৩) কিন্তু যেহেতু আমরা জানি যে শয়তান এটা করে তাই এই বিষয়ে আমাদের পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া দরকার যে আমরা যা জানি সেটাই সত্য। রোজকার জীবনের বিষয়গুলো নিয়ে না ভেবে আমাদের রাজ্যকে প্রথম স্থান দেওয়া উচিত যেন কোনকিছুই আমাদের উৎসাহকে কমিয়ে দিতে না পারে। (মথি ৬:৩৩, ৩৪) তাই আমাদের মনে করা উচিত নয় যে শেষ আসতে এখনও অনেক দেরি আছে। মনে রাখুন যে আমরা শেষকালে বাস করছি আর দিনের পর দিন শেষ কাছে এগিয়ে আসছে। (১ পিতর ৪:৭) কখনও কখনও আমাদের মনে হতে পারে যে কিছু কিছু দেশে আমরা বার বার প্রচার করেও খুব ভাল কিছু ফল পাওয়া যায় না। কিন্তু আমাদের এমন ভেবে প্রচার করা থামিয়ে দেওয়া উচিত নয় কারণ সবাইকে আমাদের শেষের বিষয়ে সাবধান করা খুব জরুরি।—যিহি. ৩৩:৭-৯.

৫ তাই আজকে এই শেষের সময়ে যে জরুরি প্রশ্নগুলো আমাদের নিজেদেরকে করা দরকার তা হল: ‘যীশু আমাদের শিষ্য তৈরি করার জন্য যে আজ্ঞা দিয়েছিলেন তা কি আমি ঠিক করে পালন করছি? আমি যখন প্রচার করি তখন কি আমি এমনভাবে লোকেদের তা বলি যা দেখায় যে খ্রীষ্টের রাজ্যকে এক সত্যিকারের সরকার বলে আমি নিজে বিশ্বাস করি? অন্যের জীবন বাঁচানোর এই কাজ কি আমি যতটা বেশি করতে পারি ততটাই করার চেষ্টা করি?’ যেহেতু এখন আমরা শেষের একেবারে শেষ সীমায় এসে পৌঁছেছি তাই আমাদের নিজেদেরকে পরীক্ষা করে দেখা উচিত যে প্রচার ও শিক্ষা দেওয়ার কাজ আমরা কীভাবে করছি, কারণ এই প্রচার কাজই আমাদের ও যারা আমাদের কথা শোনেন তাদের সবার জীবন বাঁচাবে। (১ তীম. ৪:১৬) তাহলে এখন কীভাবে আমরা সবাই পুরোপুরি নিশ্চিত হয়ে প্রচার করতে পারি?

৬ থিষলনীকীয়ের ভাইদের উদাহরণ নকল করুন: থিষলনীকীয়ের ভাইদেরকে প্রেরিত পৌল বলেছিলেন: “আমাদের সুসমাচার তোমাদের কাছে কেবল বাক্যে নয়, কিন্তু শক্তিতে ও পবিত্র আত্মায় ও অতিশয় নিশ্চয়তায় উপস্থিত হইয়াছিল; তোমরা ত জান, আমরা তোমাদের কাছে তোমাদের নিমিত্ত কি প্রকার লোক হইয়াছিলাম। আর তোমরা বহু ক্লেশের মধ্যে পবিত্র আত্মার আনন্দে বাক্যটী গ্রহণ করিয়া আমাদের এবং প্রভুরও অনুকারী হইয়াছ।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) (১ থিষল. ১:৫, ৬) পৌল থিষলনীকীয় মণ্ডলীর প্রশংসা করেছিলেন কারণ তারা বহু ক্লেশের মধ্যেও উৎসাহ নিয়ে, গভীর বিশ্বাস নিয়ে ও পুরোপুরি নিশ্চিত হয়ে প্রচার কাজ চালিয়ে গিয়েছিলেন। কী করে তারা তা করতে পেরেছিলেন? প্রেরিত পৌল ও তার সঙ্গীদের মধ্যে তারা যে উৎসাহ ও গভীর বিশ্বাস দেখেছিলেন তা তাদের ওপর অনেকখানি ছাপ ফেলেছিল। কিন্তু কীভাবে?

৭ তারা দেখেছিলেন যে পৌল ও তার সঙ্গীরা সুসমাচারের জন্য এমনকি কষ্ট সহ্য করতেও রাজি ছিলেন তাই এটা স্পষ্টভাবে দেখিয়েছিল যে ঈশ্বরের আত্মা তাদের সঙ্গে ছিল আর তারা যা প্রচার করছিলেন সে বিষয়ে তারা পুরোপুরি নিশ্চিত ছিলেন। থিষলনীকীয়তে আসার আগে পৌল ও সীল যখন ফিলিপীতে ছিলেন তখন তাদের ওপর প্রচণ্ড তাড়না করা হয়েছিল। আদালতে তাদের বিরুদ্ধে কোন মামলা দায়ের না করেই তাদেরকে মারা হয়েছিল, জেলে দেওয়া হয়েছিল ও হাঁড়িকাঠে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এই খারাপ অভিজ্ঞতা সুসমাচার প্রচারে তাদের উৎসাহকে কমিয়ে দেয়নি। অলৌকিকভাবে যিহোবা তাদের জেল থেকে মুক্ত করেছিলেন, কারারক্ষক ও তার পরিবার বিশ্বাসী হয়েছিলেন আর এই ভাইয়েরা প্রচার করে চলতে পেরেছিলেন।—প্রেরিত ১৬:১৯-৩৪.

৮ পবিত্র আত্মার শক্তিতে পৌল থিষলনীকীয়তে এসেছিলেন। সেখানে নিজের ভরণপোষণের জন্য তিনি কাজ করেন ও থিষলনীকীয়ের লোকেদের সত্য শেখানোর জন্য নিজেকে পুরোপুরি সঁপে দেন। তিনি প্রচার করার কোন একটা সুযোগকেও হাতছাড়া করেননি। (১ থিষল. ২:৯) পুরোপুরি নিশ্চিত হয়ে প্রচার করে পৌল সেখানকার লোকেদের ওপর এমন গভীর ছাপ ফেলেছিলেন যে তারা প্রতিমাপূজা ছেড়ে সত্য ঈশ্বর যিহোবার উপাসনা করতে শুরু করেছিলেন।—১ থিষল. ১:৮-১০.

৯ তাড়না এই নতুন বিশ্বাসীদের সুসমাচার প্রচার করাকে থামিয়ে দিতে পারেনি। তাদের নতুন বিশ্বাস ও নতুন উৎসাহ আর তারা যে অনন্তকালীন আশীর্বাদগুলো পাবেন সেই বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে থিষলনীকীয়ের ভাইরা সত্য প্রচার করেছিলেন যে সত্যকে তারা নিজেরা খুব উৎসাহের সঙ্গে নিজের করে নিয়েছিলেন। থিষলনীকীয় মণ্ডলী প্রচার কাজে এতই উদ্যোগী ছিল যে তাদের বিশ্বাস ও উৎসাহের কথা মাকিদনিয়া ও আখায়ার ভাইদের কাছেও পৌঁছে গিয়েছিল। তাই প্রেরিত পৌল যখন তাদের কাছে তার প্রথম চিঠি লিখেছিলেন তাদের ভাল কাজ ইতিমধ্যেই সবার জানা ছিল। (১ থিষল. ১:৭) আমাদের জন্য কতই না উৎসাহজনক উদাহরণ!

১০ ঈশ্বর ও প্রতিবেশিদের জন্য প্রেম থাকায়: আজকে যখন আমরা প্রচার করি তখন কীভাবে আমরা নিজেরা থিষলনীকীয়ের ভাইদের মতো পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারি? তাদের বিষয়ে পৌল লিখেছিলেন: “আমরা তোমাদের বিশ্বাসের কার্য্য, প্রেমের পরিশ্রম . . . অবিরত স্মরণ করিয়া থাকি।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) (১ থিষল. ১:৩) পৌলের এই কথাগুলো থেকে বোঝা যায় যে থিষলনীকীয়ের ভাইরা যিহোবাকে ও তাদের প্রতিবেশিদের যাদের কাছে তারা প্রচার করতেন তাদের অন্তর থেকে ভালবাসতেন। এই ভালবাসা পৌল ও তার সঙ্গীদের মতোই ছিল যে ভালবাসার কারণে তারা থিষলীকীয়ের ভাইদের জন্য কেবল ‘ঈশ্বরের সুসমাচার নয়, আপন আপন প্রাণও . . . দিতে সন্তুষ্ট ছিলেন।’—১ থিষল. ২:৮.

১১ সেইরকমই যিহোবা ও আমাদের প্রতিবেশিদেরকে আমরা অন্তর থেকে ভালবাসি আর তাই যতখানি বেশি পারা যায় ততখানি বেশি প্রচার করার জন্য আমরা তৈরি থাকি কারণ যিহোবা আমাদের এই কাজ করতে দিয়েছেন। এইরকম প্রেম থাকায় আমরা বুঝতে পারি যে সুসমাচার প্রচার করা আমাদের সবার দায়িত্ব আর যিহোবা আমাদের এই দায়িত্ব দিয়েছেন। ‘প্রকৃত জীবন’ দিতে যিহোবা আমাদের জন্য যা কিছু করেছেন আমরা যদি সে কথা চিন্তা করি ও তার জন্য কৃতজ্ঞ হই, তাহলে আমাদের ভেতর থেকে ইচ্ছা হবে যে আমরা এই সত্য অন্যদেরকে জানাই যা আমরা নিজেরা মন প্রাণ দিয়ে বিশ্বাস করি।—১ তীম. ৬:১৯.

১২ আমরা যত বেশি করে প্রচার করি যিহোবা আর প্রতিবেশিদের জন্য আমাদের ভালবাসা তত বেশি বেড়ে যায়। আর যদি তাই-ই হয়, তাহলে আমরা আরও বেশি করে প্রচার করব তা সে ঘরে ঘরে গিয়েই হোক বা অন্য যে কোন উপায়েই হোক, আমরা লোকেদের সঙ্গে কথা বলব। আমরা আমাদের আত্মীয়, পাড়া প্রতিবেশি ও চেনাজানা সবার সঙ্গে প্রচার করার জন্য সুযোগ করে নেব। যদিও বেশিরভাগ লোকেরা প্রচার শুনতে চান না আর কিছু লোকেরা তাতে বাধাও দেওয়ার চেষ্টা করেন, তবুও প্রচার করে আমরা আনন্দ পাই। কেন? কারণ আমরা জানি যে আমরা তাদের কাছে প্রচার করার জন্য ও তারা যাতে তাদের জীবন বাঁচাতে পারেন তার জন্য আমাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। আর যিহোবা আমাদের ভাল ব্যক্তিদের খুঁজে পেতে সাহায্য করবেন। এমনকি যখন রোজকার জীবনের চিন্তা আমাদের ওপর চাপ নিয়ে আসে, শয়তান আমাদের আনন্দ কেড়ে নিতে চায় তখনও আমরা পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারি ও আমাদের উৎসাহ বজায় রাখতে পারি। যদি আমরা আমাদের যতটুকু করণীয় তা করি, তাহলে থিষলনীকীয় মণ্ডলীর মতো আমাদের মণ্ডলীও মজবুত হয়ে উঠবে ও পুরো মণ্ডলী উৎসাহের সঙ্গে যিহোবার সেবা করবে।

১৩ পরীক্ষার সময় কখনও হার মেনে নেবেন না: পুরোপুরি নিশ্চিত তখনও হওয়া দরকার যখন আমরা পরীক্ষার মধ্যে পড়ি। (১ পিতর ১:৬, ৭) যীশু তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন যে তাঁর নামের জন্য “সমুদয় জাতি . . . দ্বেষ করিবে।” (মথি ২৪:৯) পৌল ও সীল ফিলিপীতে থাকাকালীন তা সত্যি হতে দেখেছিলেন। প্রেরিত ১৬ অধ্যায়ে বলা রয়েছে যে পৌল ও সীলকে ভেতরের কারাগারে ও হাড়িকাঠে দেওয়া হয়েছিল। সাধারণত মূল কারাগার ছিল এমন একটা খোলা জায়গা যেখানকার ঘরগুলোতে কিছুটা আলো বাতাস ঢুকত কিন্তু ভেতরের কারাগারে আলো একেবারেই যেত না আর হাওয়া বাতাসও খুব অল্প যেত। পৌল আর সীলকে অন্ধকারে, গরমে ও দুর্গন্ধের মধ্যে বন্দি থাকতে হয়েছিল। হাড়িকাঠে দেওয়ার আগে তাদের চাবুক মারা হয়েছিল যাতে তাদের পিঠে কেটে কেটে গিয়েছিল আর রক্ত বের হচ্ছিল, তাই আপনি কি ভাবতে পারেন যে এই অবস্থায় ঘন্টার পর ঘন্টা হাড়িকাঠে থাকতে তাদের কত যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়েছিল?

১৪ এই পরীক্ষাগুলো পৌল ও সীলকে হার মানাতে পারেনি, তারা যিহোবার ওপর তাদের বিশ্বাস বজায় রেখেছিলেন। তারা দেখিয়েছিলেন যে পরীক্ষা আসলেও যিহোবাকে সেবা করার জন্য তারা পুরোপুরি নিশ্চিত। ১৬ অধ্যায়ের ২৫ পদ যখন আমরা পড়ি আমরা দেখতে পাই যে তাদের বিশ্বাস কত দৃঢ় ছিল। কারণ সেখানে বলা হয়েছে পৌল ও সীল “প্রার্থনা করিতে করিতে ঈশ্বরের উদ্দেশে স্তোত্র গান করিতেছিলেন।” তারা পুরোপুরি নিশ্চিত ছিলেন যে ঈশ্বর তাদের সঙ্গে সঙ্গে আছেন আর তাই তারা এত জোরে জোরে গান গেয়েছিলেন যে অন্য কারাবাসীরাও তা শুনতে পেয়েছিল! আজকে আমাদের বিশ্বাসের ওপর যখন কোন পরীক্ষা আসে তখন আমাদেরও তাদের মতো পুরোপুরি নিশ্চিত থাকা দরকার।

১৫ শয়তান আমাদের ওপর নানারকম পরীক্ষা নিয়ে আসে। কিছুজনকে হয়তো তাদের পরিবারের লোকেরা বাধা দেন। সরকার আমাদের বিরোধিতা করে। অন্য ধর্মের লোকেরা আমাদের ওপর বিরোধিতা নিয়ে আসে। টাকাপয়সার অভাব বা খাওয়া-পরার দুশ্চিন্তাও আমাদের ওপর আসে। অল্পবয়সীরা স্কুলে তাদের বন্ধুবান্ধবদের কাছ থেকে আসা চাপ সহ্য করে। আমরা কীভাবে এই পরীক্ষাগুলোর মোকাবিলা করতে পারি? পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়ার জন্য কিসের দরকার?

১৬ সবচেয়ে প্রথমে যা দরকার তা হল যিহোবার সঙ্গে আমাদের এক কাছের ও নিজস্ব সম্পর্ক রাখা। পৌল ও সীল যখন ভেতরের কারাগারে ছিলেন তারা সেই সময়টাকে তাদের কেন এমন ঘটল সেই কথা ভেবে বা যা ঘটেছে তার জন্য দুঃখ করে কাটিয়ে দেননি। তারা সঙ্গে সঙ্গে প্রার্থনা করেছিলেন আর ঈশ্বরের প্রশংসা করার জন্য গান গেয়েছিলেন। কেন? কারণ তাদের স্বর্গীয় পিতার সঙ্গে তাদের এক নিজস্ব কাছের সম্পর্ক ছিল। তারা বুঝেছিলেন যে তারা ধার্মিক হওয়ায় কষ্ট পাচ্ছেন কিন্তু যিহোবা তাদেরকে কখনও ছেড়ে দেবেন না।—গীত. ৩:৮.

১৭ আজকে আমাদের ওপর যখন পরীক্ষা আসে তখন আমরাও যিহোবার দিকে তাকাতে পারি। খ্রীষ্টানদের অর্থাৎ আমাদের পৌল বলেছিলেন, “তোমাদের যাচ্ঞা সকল ঈশ্বরকে জ্ঞাত কর। তাহাতে সমস্ত চিন্তার অতীত যে ঈশ্বরের শান্তি তাহা তোমাদের হৃদয় ও মন খ্রীষ্ট যীশুতে রক্ষা করিবে।” (ফিলি. ৪:৬, ৭) এটা জেনে কতই না শান্তি পাওয়া যায় যে যিহোবা আমাদের একা একা পরীক্ষা ভোগ করতে দেবেন না! (যিশা. ৪১:১০) তিনি সবসময় আমাদের সঙ্গে আছেন যতদিন পর্যন্ত আমরা পুরোপুরি নিশ্চিত হয়ে তাঁর সেবা করি।—গীত. ৪৬:৭.

১৮ আরেকটা যে বিষয় আমাদের পুরোপুরি নিশ্চিত হতে সাহায্য করতে পারে তা হল যিহোবার সেবায় সবসময় ব্যস্ত থাকা। (১ করি. ১৫:৫৮) পৌল ও সীলকে কারাগারে দেওয়া হয়েছিল কারণ তারা সুসমাচার প্রচারে ব্যস্ত ছিলেন। পরীক্ষা আসায় তারা কি প্রচার করা বন্ধ করে দিয়েছিলেন? না, তারা এমনকি কারাগারে বন্দি থাকা অবস্থাতেও প্রচার করেছিলেন আর যখন তারা ছাড়া পেয়েছিলেন তারা থিষলনীকীয়ায় গিয়েছিলেন ও সেখানকার যিহুদিদের ধর্মধামে “শাস্ত্রের কথা লইয়া প্রসঙ্গ করিলেন।” (প্রেরিত ১৭:১-৩) যিহোবার ওপর আমাদের যখন এমন দৃঢ় বিশ্বাস থাকে আর আমরা পুরোপুরি নিশ্চিত থাকি যে সত্য আমাদের কাছেই আছে তখন কোন কিছুই “প্রভু খ্রীষ্ট যীশুতে অবস্থিত ঈশ্বরের প্রেম হইতে আমাদিগকে পৃথক্‌ করিতে পারিবে না।”—রোমীয় ৮:৩৫-৩৯.

১৯ আজকেও অনেকে পুরোপুরি নিশ্চিত: আজকে আমাদের দিনেও আমাদের অনেক ভাইবোনদের উদাহরণ আমাদের কাছে আছে যারা পৌল ও সীলের মতো পুরোপুরি নিশ্চিত। আমাদের একজন বোন যিনি আউসউইজ কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে ছিলেন তিনি সেখানে বন্দি ভাই বোনদের অটল বিশ্বাস ও নিশ্চয়তার কথা বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “একবার জেরা করার সময় একজন অফিসার আমার দিকে এগিয়ে এসে রাগে দাঁত মুখ খিচিয়ে চিৎকার করে আমাকে বলেছিলেন, ‘আপনাদের আমরা কী শাস্তি দেব? আপনাদের যদি গ্রেপ্তার করা হয় আপনাদের তাতে কিছু যায়ে আসে না। আপনাদের যদি জেলে দেওয়া হয় তাতেও আপনাদের কিছু এসে যায় না। আপনাদের কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে পাঠানো হলেও আপনারা ভয়ে চিৎকার চেঁচামেচি করেন না আর আপনাদের মৃত্যুদণ্ড দিলেও আপনারা শান্তভাবে তার জন্য অপেক্ষা করেন। আপনাদের নিয়ে আমরা করি কী?’” এরকম কঠিন পরিস্থিতিতে আমাদের ভাইরা যে বিশ্বাস দেখিয়েছেন তা সত্যিই আশ্চর্য হওয়ার মতো! সহ্য করার জন্য তারা সবসময় যিহোবার কাছ থেকে শক্তি চেয়েছেন।

২০ গত কয়েক বছরে যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়েছে তার মুখে পড়েও আমাদের ভাইরা যেভাবে পুরোপুরি নিশ্চয়তা দেখিয়েছেন তা ভোলার নয়। নিজেদেরকে বিপদের মধ্যে ফেলেও দায়িত্বপ্রাপ্ত ভাইরা খেয়াল রেখেছিলেন যে তাদের ভাইবোনেরা আধ্যাত্মিক খাবার ঠিকমতো পেয়ে চলেছেন কিনা। তারা সবাই এই বিষয়ে পুরোপুরি নিশ্চিত হয়ে যিহোবার ওপর বিশ্বাস রেখেছিলেন যে ‘যে কোন অস্ত্র তাহাদের বিপরীতে গঠিত হয়, তাহা সার্থক হইবে না।’—যিশা. ৫৪:১৭.

২১ আমাদের অনেক ভাইবোনেরা তাদের অবিশ্বাসী সাথির সঙ্গে ঘর করার সময়ও দৃঢ় বিশ্বাস ও ধৈর্য্য দেখান। গুয়াডালোপের একজন ভাইয়ের সঙ্গে তার অবিশ্বাসী স্ত্রী খুব খারাপ ব্যবহার করতেন। তাকে বাধা দেওয়ার জন্য, তার মিটিংয়ে যাওয়া বন্ধ করার জন্য তিনি তাকে সময়মতো খেতে দিতেন না, তার জামাকাপড় কেচে ও ইস্ত্রি করে দিতেন না। দিনের পর দিন তিনি তার সঙ্গে কথা বলতেন না। কিন্তু পুরোপুরি নিশ্চিত হয়ে ও যিহোবার কাছে সাহায্য চেয়ে প্রার্থনা করে ভাই এই সমস্ত কিছু সহ্য করেছিলেন। কতদিন? ২০ বছর ধরে। এরপরে তার স্ত্রী আস্তে আস্তে বদলাতে শুরু করেন। আর শেষে এই ভাই সত্যিই আনন্দ করতে পেরেছিলেন কারণ তার স্ত্রী সত্যকে তার নিজের করে নিয়েছিলেন।

২২ আমরা আমাদের ছোট ছোট ভাই বোনদের কথাও ভুলে যাই না যে তারাও প্রতিদিন তাদের স্কুলে বন্ধুবান্ধবদের কাছ থেকে আসা চাপ সহ্য করে দেখায় যে তারা পুরোপুরি নিশ্চিত। স্কুলে তাকে যে সমস্ত চাপের সামনা করতে হয়েছিল সে কথা বলতে গিয়ে একজন ছোট্ট বোন বলে: “স্কুলে সব বন্ধুবান্ধবেরা তোমাকে একটু বিদ্রোহী হওয়ার জন্য উসকাবে। আর তুমি যদি কিছুটা বিদ্রোহী হও, তাহলে সবাই তোমাকে বাহবা দেবে।” আমাদের অল্পবয়সী ভাইবোনেরা প্রত্যেকটা দিন কত চাপই না ভোগ করে! কিন্তু যে কোন প্রলোভনকে বাধা দেওয়ার জন্য তাদের মনে মনে একেবারে বদ্ধ পরিকর হওয়া দরকার।

২৩ পরীক্ষার মধ্যেও আমাদের অনেক অল্পবয়সী ভাইবোনেরা তাদের বিশ্বস্ততা বজায় রেখে চলে। ফ্রান্সের এক বোন আমাদের জন্য এক ভাল উদাহরণ। স্কুলে একদিন দুপুরের বিরতির সময় কিছু ছেলেরা তার কাছে এসে তাদের চুমু খাওয়ার জন্য তাকে জোর জবরদস্তি করে কিন্তু এই বোন যিহোবার কাছে প্রার্থনা করে খুব দৃঢ়ভাবে তাদেরকে বাধা দেয়, ছেলেরা তার কাছ থেকে চলে যায়। পরে সেই ছেলেদের একজন ফিরে এসে তাকে বলে যে সে তাকে সম্মান করে কারণ সে সাহসের সঙ্গে তাদের না বলেছিল। বোন তার কাছে প্রচার করেছিল আর ব্যাখ্যা করে বলেছিল যে যারা যিহোবার কাছ থেকে আশীর্বাদ পেতে চায় যিহোবা তাদের এই উচ্চ নৈতিক মান বজায় রাখতে বলেন। স্কুলে যতবছর সে পড়াশোনা করেছিল তার মধ্যে সে তার পুরো ক্লাসের কাছে প্রচার করেছিল।

২৪ যিহোবা যাদের দিয়ে তাঁর ইচ্ছা অন্যদেরকে জানাতে খুশি হন তাদের একজন হতে পারা আমাদের জন্য কত বড় সুযোগ আর আমাদের পুরোপুরি নিশ্চিত হয়ে তা অন্যদের জানানো দরকার! (কল. ৪:১২) সত্যিই সিংহের মতো গর্জনকারী শত্রু শয়তান দিয়াবলের আক্রমনের সামনে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস দেখানোর সুযোগ আমরা পেয়েছি। (১ পিতর ৫:৮, ৯) কখনও ভুলে যাবেন না যে যিহোবা রাজ্যের সুসমাচার দুই দলের লোকেদের পরিত্রাণ পাওয়ার জন্যই প্রচার করাচ্ছেন যারা এটা প্রচার করছে তাদের ও যারা তাদের কথা শোনেন তাদের। আমরা যে সিদ্ধান্ত নিই ও জীবনে যেভাবে চলি তা যেন দেখায় যে আমরা রাজ্যকে আমাদের জীবনে প্রথম জায়গা দিয়েছি। তাই আসুন আমরা পুরোপুরি নিশ্চিত হয়ে সুসমাচার প্রচার করে চলি।

    বাংলা প্রকাশনা (১৯৮৯-২০২৬)
    লগ আউট
    লগ ইন
    • বাংলা
    • শেয়ার
    • পছন্দসমূহ
    • Copyright © 2025 Watch Tower Bible and Tract Society of Pennsylvania
    • ব্যবহারের শর্ত
    • গোপনীয়তার নীতি
    • গোপনীয়তার সেটিং
    • JW.ORG
    • লগ ইন
    শেয়ার