আপনি কি শিখে চলেছেন?
১ আজকে হাজার হাজার লোকেরা জানতে চায় যে তাদের সমস্যাগুলোর সমাধান কী আর জীবনে কী করে সুখী হওয়া যায়। উত্তর পাওয়ার জন্য তারা জগতের নানা ধরণের বইপত্র ঘাটাঘাটি করে, সমাজসেবী দল বা সংস্থাগুলোর কাছে পরামর্শ চায়। কিছু সমাধান হয়তো তারা পায় কিন্তু তবুও আজকে লোকেদের দেখে কি মনে হয় যে তারা সুখী, তাদের জীবনে শান্তি আছে বা তাদের জীবনে কিছুর অভাব নেই? মানুষের বুদ্ধি, মানুষের দেওয়া পরামর্শ কি মানুষকে সুখ শান্তি পেতে শিখিয়েছে? এক কথায় বলা যায় না!—১ করি. ৩:১৮-২০.
২ অন্যদিকে ঈশ্বর যিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন আমাদের পথ দেখান, আমাদের পরামর্শ দেন। যারা তাঁর কথায় কান দেবে তা তাদের খুবই কাজে আসে। যিহোবা চান যে আমরা সবাই তাঁর কাছ থেকে শিখি। তাঁর বাক্য বাইবেলে তিনি অনেক অনেক জ্ঞান ও বুদ্ধির কথা বলেছেন যা মানুষকে ঠিক পথে চালাতে পারে। যে পথে চলে মানুষ সুখী হতে পারে। এছাড়া সেখানে মানুষের জন্য সুখবরও আছে যা সারা পৃথিবীতে সব মানুষের জানা দরকার। (গীত. ১৯:৭, ৮; মথি ২৪:১৪; ২ তীম. ৩:১৬) তাই জীবনে সুখী হওয়ার সঙ্গে যিহোবার কথা মেনে চলা সরাসরি জড়িত।—যিশা. ৪৮:১৭, ১৮.
৩ জগতের বইপত্র বা সংস্থাগুলোর সঙ্গে যিহোবার দেখানো পথের কোন তুলনাই হয় না। বাইবেলে যা লেখা আছে আর যিহোবার সংগঠন আমাদের যা শেখায় তা যদি আমরা মেনে চলি, তাহলে জীবনে কাজে আসে এমন অনেক কিছু আমরা শিখতে পারি আর সমস্যা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য পাই।—১ পিতর ৩:১০-১২.
৪ মণ্ডলীর মিটিংগুলো থেকে শিখুন: আজকে যিহোবা আমাদেরকে তাঁর পথের বিষয়ে শেখাতে খুবই ইচ্ছুক আর যখন আমরা তাঁর কথা মেনে চলি তখন আমরা যিহোবার কাছ থেকে শিখি। যিহোবা যে আমাদের ভালবেসে শেখান তার প্রমাণ আমরা পাই আমাদের সপ্তার পাঁচটা মিটিং থেকে। মিটিংয়ে এসে ঈশ্বরের সম্বন্ধে আমরা আরও বেশি করে জানি। আমরা শিখি যে কী করে যিহোবার আরও কাছে আসা যায় আর কী করে খারাপ কাজগুলোকে এড়ানো যায়।
৫ মিটিং আরও বেশি কিছু করে। মণ্ডলীর মিটিং আমাদের ‘অন্তর খুলে দিতে’ শেখায়। (২ করি. ৬:১৩, প্রে.বা.) এর মানে হল মণ্ডলীর অন্য ভাইবোনদের সঙ্গে মেলামেশা করা। আর তা করে আমরা একে অন্যের কাছ থেকে উৎসাহ পাই, সাহস পাই যেমন প্রেরিত পৌল রোমীয়দের কাছে লেখা চিঠিতে লিখেছিলেন। (রোমীয় ১:১১, ১২) যখন তিনি ইব্রীয়দের কাছে লিখছিলেন, যারা মিটিংয়ে না আসাকে তাদের অভ্যাসে দাঁড় করাচ্ছিল তাদের তিনি বেশ কড়া পরামর্শ দিয়েছিলেন।—ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫.
৬ জীবনে সুখী হওয়া অন্যদের ভাল করার সঙ্গেও জড়িত। আমাদের উৎসাহ দেওয়া হয় যে আমরা যেন অন্যের ভাল করার জন্য সুযোগ খুঁজে নিই, অন্যদের খুশি করি। তাই খ্রীষ্টীয় মিটিং আমাদের নিজেদের ও সেখানে যাদের সঙ্গে আমরা মেলামেশা করি তাদের সবার জন্য অনেক কিছু শেখার এক জায়গা। আর আমাদের কাছ থেকে আশা করা হয় যে আমরা যেন মিটিংয়ে পুরোপুরি অংশ নিই।
৭ প্রেরিত পৌল তীমথিয়কেও ঠিক এই একই পরামর্শ দিয়েছিলেন। তিনি লিখেছিলেন: “ঈশ্বর-ভক্তির অভ্যাস কর।” (১ তীম. ৪:৭, প্রে.বা.) তাই আমরা কি নিজেদের জিজ্ঞেস করব না যে: ‘আমি কি ঈশ্বর-ভক্তি অভ্যাস করছি? মণ্ডলীর মিটিংয়ে আমি যা শুনি তার থেকে কী আমি কিছু শিখছি?’ উত্তরে আমরা তখনই হ্যাঁ বলতে পারব যদি আমরা মিটিংয়ে মন দিয়ে শুনি ও মিটিং থেকে যা শিখি তা জীবনে কাজে লাগাই। যে ভাইরা মণ্ডলীতে শেখান আমরা শুধু তাদেরই দেখব না। বরং বিশ্বাসের চোখ দিয়ে আমরা আমাদের মহান শিক্ষক যিহোবা ঈশ্বরের দিকে দেখব।—যিশা. ৩০:২০.
৮ ঐশিক পরিচর্যা বিদ্যালয় ও পরিচর্যা সভা: এই দুটো মিটিং আমাদেরকে প্রচার করতে শেখায়। ঐশিক পরিচর্যা বিদ্যালয় এমন এক স্কুল যেখানে ছাত্ররা নিয়মিতভাবে শেখে ও পরামর্শ পায়। ফলে ছাত্রেরা সবার সামনে বক্তৃতা দেওয়ায় পটু হয়ে ওঠে আর তারা ভাল করে লোকেদের বাইবেল শেখাতে পারে। কিন্তু এই স্কুল থেকে যদি আপনি সত্যিই কিছু শিখতে চান, তাহলে আপনাকে স্কুলে আপনার নাম দাখিল করতে হবে, রোজ স্কুলে হাজির থাকতে হবে আর মন দিয়ে আপনার পাঠ করতে হবে। স্কুলে আপনাকে যে পরামর্শ দেওয়া হয় সেগুলো যদি আপনি শোনেন ও কাজে লাগান, তাহলে আপনি অবশ্যই উন্নতি করবেন।
৯ পরিচর্যা সভা আমাদের বলে যে প্রচার কাজ কতই না জরুরি আর আমরা কীভাবে এই জরুরি কাজ করতে পারি। এই দুটো মিটিংয়ে যা শেখানো হয় আপনি ও আপনার পরিবারের লোকেরা কি তার থেকে শিখছেন? এক স্বামী-স্ত্রী বলেন: “একদিন পরিচর্যা সভায় বলা হয়েছিল যে পরিবারের সবাইকে একসঙ্গে বসে দৈনিক পাঠ করা উচিত। এখন আমরা করি কিন্তু এটা শোনার আগে পর্যন্ত আমরা করতাম না।” তারা এর থেকে কী শিখেছিলেন? তারা বলেন: “আমরা দেখেছিলাম যে খাওয়ার সময় আমরা ভালভাবে কথাবার্তা বলতে পারি আর রাতের বেলায় খাবারের সময় তর্কাতর্কিও আর হয় না।” ছোট বাচ্চারাও কি এই মিটিংগুলো থেকে শেখে? হ্যাঁ। তাদের মা বলেন: “আমরা স্পষ্ট দেখতে পাই যে ছেলেমেয়েরা অনেক কিছু শিখছে। একদিন আমরা আমাদের ছয় বছরের ছেলেকে মিথ্যে কথা বলতে শুনি। কিন্তু সেই সপ্তায় ঐশিক বিদ্যালয়ের প্রথম বক্তৃতাটা ছিল মিথ্যে বলার বিষয়ে। বক্তৃতা শুনে সে অপরাধী মুখ করে বাবার দিকে তাকায় আর নিজের চেয়ারে বসে থাকে। সে বুঝেছিল আর তারপর থেকে সে আর কখনও মিথ্যে বলেনি।”
১০ একজন অগ্রগামী বোন বলেন যে পরিচর্যা সভায় প্রচারে উন্নতি করার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়। আর আমার তা খুবই ভাল লাগে। কেন? তিনি বলেন: “আমি রোজ আমার নিজের মতো প্রচার করতে এতটাই অভ্যস্ত যে আমার মনে হতো আমাদের রাজ্যের পরিচর্যা-য় দেওয়া ভূমিকাগুলো বোধহয় আমার কোন কাজে আসবে না। কিন্তু পরিচর্যা সভায় যখন আমি শুনি যে প্রচারে আমাদের এই ভূমিকাগুলো ব্যবহার করা দরকার তখন আমার মনে হয় যে আমিও এই ভূমিকাগুলো ব্যবহার করব। আর এতে আমার প্রচার আরও ভাল হয়!” প্রথম সপ্তাতেই স্টাডি শুরু করার পরামর্শ মতো চেষ্টা করে এই বোন বেশ কয়েক সপ্তা পরে একটা মেয়ের সঙ্গে স্টাডি শুরু করতে পেরেছিলেন যে সাহায্যের জন্য প্রার্থনা করছিল।
১১ আপনাকে যখন নিজেকে কোন সিদ্ধান্ত নিতে হয় বা আপনি কোন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এমন সময় যদি এমন কোন বক্তৃতা শোনেন যাতে সেই বিষয়ে বলা হচ্ছে, আপনার কি মনে হয় না যে যিহোবা সরাসরি আপনাকে পরামর্শ দিচ্ছেন? একজন ভাইয়ের এরকম মনে হয়েছিল। তিনি বলেন: “খুব বেশি দিন হবে না এক ভাই মিটিংয়ে যিহোবার সাক্ষিদের কোন্ ধরণের আমোদপ্রমোদে যোগ দেওয়া উচিত আর কোন্ ধরণের আমোদপ্রমোদ করা উচিত নয় তা বলে একটা বক্তৃতা দিয়েছিলেন। আমি টিভিতে বক্সিং দেখতে ভালবাসতাম। কিন্তু এই বক্তৃতা শোনার পর আমার মনে হয় যে বক্সিং আমাদের দেখা উচিত নয়। তারপর থেকে আমি বক্সিং দেখা ছেড়ে দিয়েছি।” যদিও এই ভাইয়ের বক্সিং দেখতে ভাল লাগত কিন্তু তিনি যিহোবার কাছ থেকে শিখেছিলেন যে যিহোবার সাক্ষিদের হিংস্র খেলাধুলো দেখা উচিত নয়।—গীত. ১১:৫.
১২ জনসভা, প্রহরীদুর্গ পাঠ আর বুকস্টাডি: প্রত্যেক সপ্তায় আলাদা আলাদা বিষয়ে জনসভার বক্তৃতা দেওয়া হয়। এই বক্তৃতা থেকে আপনি কি শেখেন? যিহোবা সাক্ষি পরিবারের একজন স্বামী জনসভা থেকে কী শিখেছেন তা তিনি বলেন: “একবার এক জনসভায় আত্মার সব ফলগুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়েছিল। বক্তা তার নিজের বিষয়ে বলেছিলেন যে নিজের মধ্যে এই গুণগুলো গড়ে তোলার জন্য তিনি কী করেন। তিনি বলেছিলেন, তিনি এক একটা গুণকে এক এক সপ্তা ধরে অভ্যাস করতেন। আর সপ্তার শেষে ভেবে দেখতেন যে পুরো সপ্তা তিনি কীভাবে এই গুণ দেখিয়েছেন। তারপর পরের সপ্তায় তিনি আরেকটা গুণ অভ্যাস করতেন। ব্যাপারটা আমার খুব ভাল লাগে আর আমিও তাই করতে শুরু করি।” আমরা যা শিখছি তা জীবনে কাজে লাগানোর কত ভাল উদাহরণ!
১৩ প্রহরীদুর্গ পাঠ আমাদের জীবনের নানা অবস্থায় বাইবেলের নীতিকে কাজে লাগাতে সাহায্য করে। জীবনের নানা অশান্তি সত্ত্বেও এটা আমাদের মানসিক শান্তি দেয়। প্রহরীদুর্গ পাঠ আমাদের নতুন নতুন সত্য শিখিয়ে সত্যে এগিয়ে নিয়ে চলে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে ১৯৯৯ সালের ১লা মে-র “এ সকল অবশ্যই ঘটিবে,” “যে জন পাঠ করে, সে বুঝুক,” “সতর্ক হোন এবং অধ্যবসায়ী হোন!” এই প্রবন্ধগুলো থেকে আমরা কী নতুন সত্য শিখিনি? এই প্রবন্ধগুলো পড়ে আপনার কী মনে হয়েছে? আপনার কাজকর্ম কি দেখায় যে আপনি যীশুর সাবধানবাণী মন থেকে গ্রহণ করেছেন? আপনি কি নিজেকে সেই সময়ের জন্য তৈরি করছেন যখন আমরা ‘ধ্বংসের সেই ঘৃণার্হ বস্তুকে . . . পবিত্র স্থানে দাঁড়াইয়া থাকতে’ দেখব? (মথি ২৪:১৫-২২) আপনার চলার ধরণ, আপনার কাজকর্ম কি দেখায় যে আপনি ধনসম্পত্তি জোগাড় করার চেয়ে যিহোবাকে খুশি করার চেষ্টা বেশি করে করেন? প্রহরীদুর্গ পাঠে আমরা কি এখনই এই বিষয়গুলো শিখছি না?
১৪ একটু ভেবে দেখুন যে প্রত্যেক সপ্তায় বুকস্টাডি থেকে আমরা কত কী শিখি। এখন আমরা দানিয়েলের ভবিষ্যদ্বাণীর বই আলোচনা করছি। এই চার মাস ধরে যখন আমরা বাইবেলের এই বইটা আলোচনা করছি আমরা কী দেখিনি যে প্রত্যেক সপ্তায় আমাদের বিশ্বাস কীভাবে বেড়েছে? যিহোবার প্রিয় ভাববাদী দানিয়েলের মতো আসুন আমরাও আমাদের বিশ্বাস বাড়াই যাতে আমরা শেষ পর্যন্ত স্থির থাকতে পারি।
১৫ যিহোবা আমাদের সুখী হতে শেখান: যিহোবার কথা শুনে ও যিহোবার কাছ থেকে শিখে আমরা অনেক মনোদুঃখ এড়াতে পারি। এছাড়া আমরা জীবনে সুখী হতে পারি। যিহোবার কথা শুনে আমরা যিহোবার সঙ্গে কাজ করি শুধু দর্শক হয়ে থাকি না। আর যারা ঈশ্বরের কাজ করেন তারা সুখী লোক।—১ করি. ৩:৯; যাকোব ১:২৫.
১৬ মিটিংগুলোতে আপনি যা শুনছেন আর শিখছেন তা কীভাবে জীবনে কাজে লাগাবেন সে ব্যাপারে চিন্তা করুন। (যোহন ১৩:১৭) সম্পূর্ণ মন প্রাণ শক্তি দিয়ে যিহোবাকে সেবা করুন। আর তাতে আপনি সুখী হবেন, জীবনে তৃপ্তি পাবেন। আপনার জীবনে যিহোবার আশীর্বাদ থাকবে। আর আপনি যিহোবার কাছ থেকে শিখবেন।