অধ্যয়ন প্রবন্ধ ২৪
যিহোবা ক্ষমা করার ক্ষেত্রে মহান
“হে প্রভু, তুমি মঙ্গলময় ও ক্ষমাবান্, এবং যাহারা তোমাকে ডাকে, তুমি সেই সকলের পক্ষে দয়াতে মহান্।”—গীত. ৮৬:৫.
গান ৬ ঈশ্বরের দাসের প্রার্থনা
সারাংশa
১. উপদেশক ৭:২০ পদে শলোমন যা বলেছিলেন, তা থেকে আমরা কী বুঝতে পারি?
হাজার হাজার বছর আগে রাজা শলোমন লিখেছিলেন: “এমন ধার্ম্মিক লোক পৃথিবীতে নাই, যে সৎকর্ম্ম করে, পাপ করে না।” (উপ. ৭:২০) সত্যিই, আমরা সবাই কোনো-না-কোনো সময়ে পাপ করে ফেলি। (১ যোহন ১:৮) তবে, পরে আমাদের হয়তো এই ভেবে খারাপ লাগে যে, আমরা ঈশ্বর এবং অন্যদের দুঃখ দিয়েছি আর আমরা চাই যেন তারা আমাদের ক্ষমা করে দেয়।
২. আপনার বন্ধু যখন আপনাকে ক্ষমা করে দেয়, তখন আপনার কেমন লাগে?
২ আপনিও হয়তো কখনো আপনার বন্ধুকে দুঃখ দিয়েছিলেন। কিন্তু পরে, আপনি আপনার ভুল বুঝতে পেরেছিলেন আর মন থেকে তার কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন কারণ আপনি চাননি, তার সঙ্গে আপনার বন্ধুত্ব নষ্ট হয়ে যাক। তারপর, আপনার বন্ধু আপনাকে ক্ষমা করে দিয়েছিল। সেইসময় আপনার কেমন লেগেছিল? আপনি হয়তো অনেক খুশি হয়েছিলেন আর স্বস্তি লাভ করেছিলেন!
৩. এই প্রবন্ধে আমরা কী জানতে পারব?
৩ আমরা সবাই চাই যেন যিহোবা আমাদের সবচেয়ে ভালো বন্ধু হন। তবে, কোনো-না-কোনো সময়ে আমরা সবাই এমন কিছু করে ফেলি, যেটার কারণে তিনি খুব দুঃখ পান। কিন্তু, কেন আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি, যিহোবা আমাদের ক্ষমা করার জন্য প্রস্তুত থাকেন? যিহোবা যেভাবে কাউকে ক্ষমা করেন আর মানুষ হিসেবে আমরা যেভাবে একে অন্যকে ক্ষমা করি, সেটার মধ্যে কোন পার্থক্য রয়েছে? আর আমরা যদি চাই, যিহোবা যেন আমাদের ক্ষমা করেন, তা হলে আমাদের কী করতে হবে? এই প্রবন্ধে আমরা এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানতে পারব।
যিহোবা ক্ষমা করার জন্য প্রস্তুত থাকেন
৪. কেন আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি, যিহোবা আমাদের ক্ষমা করার জন্য প্রস্তুত থাকেন?
৪ যিহোবা নিজে বাইবেলে লিখিয়েছেন, তিনি আমাদের ক্ষমা করার জন্য প্রস্তুত থাকেন। সীনয় পর্বতের উপরে যিহোবা একজন স্বর্গদূতের মাধ্যমে নিজের বিষয়ে বলেছিলেন: “সদাপ্রভু, সদাপ্রভু, স্নেহশীল ও কৃপাময় ঈশ্বর, ক্রোধে ধীর এবং দয়াতে ও সত্যে মহান্; সহস্র সহস্র [পুরুষ] পর্য্যন্ত দয়ারক্ষক, অপরাধের, অধর্ম্মের ও পাপের ক্ষমাকারী।” (যাত্রা. ৩৪:৬, ৭) এখান থেকে আমরা বুঝতে পারি, যিহোবা আমাদের অনেক ভালোবাসেন এবং আমাদের প্রতি দয়া বা করুণা দেখান। আর কেউ যদি অনুতপ্ত হয়, তা হলে তিনি তাকে ক্ষমা করার জন্য প্রস্তুত থাকেন।—নহি. ৯:১৭; গীত. ৮৬:১৫.
যিহোবা আমাদের সম্বন্ধে সমস্ত কিছু জানেন। তিনি জানেন, আজ আমরা যেভাবে আচরণ করি, কেন তা করি (৫ অনুচ্ছেদ দেখুন)
৫. যিহোবা আমাদের খুব ভালোভাবে জানেন বলে তিনি কী করেন? (গীতসংহিতা ১০৩:১৩, ১৪)
৫ যিহোবা আমাদের সৃষ্টি করেছেন। তাই, তিনি আমাদের সম্বন্ধে খুব ভালোভাবে জানেন। তিনি পৃথিবীতে থাকা প্রত্যেক মানুষের বিষয়ে সমস্ত কিছু জানেন। (গীত. ১৩৯:১৫-১৭) তিনি জানেন, আমরা অসিদ্ধ আর আমাদের মধ্যে কিছু দুর্বলতা রয়েছে। তিনি এও জানেন, আমাদের জীবনে কী কী ঘটেছে আর আজ আমরা যেভাবে আচরণ করি, কেন তা করি। যিহোবা আমাদের খুব ভালোভাবে জানেন আর এই কারণে তিনি আমাদের প্রতি করুণা দেখান।—গীত. ৭৮:৩৯; পড়ুন, গীতসংহিতা ১০৩:১৩, ১৪.
৬. কীভাবে যিহোবা প্রমাণ করেছেন, তিনি আমাদের ক্ষমা করার জন্য প্রস্তুত থাকেন?
৬ যিহোবা প্রমাণ করেছেন, তিনি আমাদের ক্ষমা করার জন্য প্রস্তুত থাকেন। কেন আমরা তা বলতে পারি? যিহোবা জানেন, আদমের ভুলের কারণে আমরা সবাই পাপ ও মৃত্যুর দাসত্বে বন্দি হয়ে গিয়েছি। (রোমীয় ৫:১২) আমরা নিজেরা এই দাসত্ব থেকে মুক্ত হতে পারব না আর সেইসঙ্গে অন্যদেরও এটা থেকে মুক্ত করতে পারব না। (গীত. ৪৯:৭-৯) তবে, যিহোবা আমাদের খুব ভালোবাসেন, তাই তিনি এক অপূর্ব ব্যবস্থা করেছেন। যোহন ৩:১৬ পদে যেমনটা বলা আছে, যিহোবা তাঁর একজাত পুত্রকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলেন, যাতে তিনি আমাদের জন্য তাঁর জীবন দান করতে পারেন। (মথি ২০:২৮; রোমীয় ৫:১৯) যিশু আমাদের জন্য মারা গিয়েছিলেন, তাই যে-কেউ তাঁর উপর বিশ্বাস করবে, সে পাপ ও মৃত্যুর দাসত্ব থেকে মুক্ত হতে পারবে। (ইব্রীয় ২:৯) একটু চিন্তা করুন, সেইসময় যিহোবা কতটা দুঃখ পেয়েছিলেন, যখন তিনি দেখেছিলেন, তাঁর একজাত পুত্রকে একজন অপরাধীর মতো একটা যাতনাদণ্ডে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হচ্ছে! যদি যিহোবা আমাদের ক্ষমা করতে না চান, তা হলে কেন তিনি তাঁর পুত্রকে এভাবে মারা যেতে দিলেন?
৭. এমন কিছু ব্যক্তির বিষয়ে উল্লেখ করুন, যাদের যিহোবা পুরোপুরিভাবে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন।
৭ বাইবেলে এমন অনেক ব্যক্তির বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে, যাদের যিহোবা পুরোপুরিভাবে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। (ইফি. ৪:৩২) রাজা মনঃশির কথা চিন্তা করুন। তিনি অনেক বড়ো বড়ো পাপ করেছিলেন। যেমন, তিনি মিথ্যা দেবতাদের উপাসনা করতে শুরু করেছিলেন আর সেইসঙ্গে অন্যদেরও তা করার জন্য উৎসাহিত করেছিলেন। তিনি মিথ্যা দেবতাদের সামনে নিজের সন্তানদের আগুনে পুড়িয়ে উৎসর্গ করেছিলেন। শুধু তা-ই নয়, তিনি যিহোবার মন্দিরে মূর্তি স্থাপন করেছিলেন। মনঃশি সম্বন্ধে বাইবেলে লেখা আছে: “তিনি সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে বহুল কদাচরণ করিয়া তাঁহাকে অসন্তুষ্ট করিলেন।” (২ বংশা. ৩৩:২-৭) কিন্তু, তিনি যখন প্রকৃত অনুতপ্ত হয়েছিলেন, তখন যিহোবা মনঃশিকে পুরোপুরিভাবে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন এবং তাকে আবারও ইজরায়েলের রাজা করেছিলেন। (২ বংশা. ৩৩:১২, ১৩) এবার, রাজা দায়ূদের কথা চিন্তা করুন। তিনিও অনেক বড়ো বড়ো পাপ করেছিলেন। যেমন, তিনি ব্যভিচার করেছিলেন এবং একজন নির্দোষ ব্যক্তিকে হত্যা করিয়েছিলেন। কিন্তু, যখন তিনি নিজের ভুল স্বীকার করেছিলেন এবং প্রকৃত অনুতপ্ত হয়েছিলেন, তখন যিহোবা তাকেও ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। (২ শমূ. ১২:৯, ১০, ১৩, ১৪) এই দু-জন ব্যক্তির উদাহরণ থেকে আমরা বুঝতে পারি, যিহোবা আমাদের ক্ষমা করার জন্য প্রস্তুত থাকেন। এখন আসুন আমরা দেখি যে, যিহোবা যেভাবে আমাদের ক্ষমা করেন আর মানুষ হিসেবে আমরা যেভাবে একে অন্যকে ক্ষমা করি, সেটার মধ্যে কোন পার্থক্য রয়েছে।
যিহোবার মতো আর কেউই হতে পারে না
৮. কেন একমাত্র যিহোবাই এই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, একজন ব্যক্তিকে ক্ষমা করা উচিত কি না?
৮ যিহোবা হলেন “সমস্ত পৃথিবীর বিচারকর্ত্তা।” (আদি. ১৮:২৫) আর এই ব্যাপারে কেউই তাঁর মতো হতে পারে না। কেন আমরা তা বলতে পারি? একজন বিচারক যদি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে চান, তা হলে তার আইন সম্বন্ধে ভালো জ্ঞান থাকা দরকার। আর যিহোবাই আমাদের আইন দিয়েছেন। (যিশা. ৩৩:২২) তাই, আইন সম্বন্ধে তাঁর চেয়ে ভালো আর কেউ জানে না। একমাত্র যিহোবাই খুব ভালোভাবে জানেন, কোনটা সঠিক এবং কোনটা ভুল। এ ছাড়া, কোনো রায় দেওয়ার আগে একজন বিচারকের সেই বিষয়ে সম্পূর্ণ তথ্য থাকা উচিত। আর যিহোবা তো সমস্ত কিছু জানেন, তাই তাঁর চেয়ে উত্তম বিচারক আর কেউ হতে পারে না।
৯. যখন যিহোবা সিদ্ধান্ত নেন যে, তিনি কাউকে ক্ষমা করবেন কি না, তখন তিনি কোন বিষয়গুলো দেখেন?
৯ মানুষ যখন বিচার করে, তখন কখনো কখনো তাদের কাছে মামলার সম্পূর্ণ তথ্য থাকে না। কিন্তু, যিহোবার ক্ষেত্রে কখনো এমনটা হয় না। (আদি. ১৮:২০, ২১; গীত. ৯০:৮) মানুষ যা দেখে কিংবা শোনে, সেটার উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু, যিহোবা একজন মানুষের হৃদয়ে কী রয়েছে, সেটাও বুঝতে পারেন। যিহোবা জানেন, একজন ব্যক্তি কোন পরিবেশে বড়ো হয়েছেন, তার মধ্যে কোন কোন দুর্বলতা রয়েছে এবং তার স্বভাব কেমন। তিনি এও জানেন, একজন ব্যক্তি কেন এই কাজটা করেছেন। যিহোবার দৃষ্টিতে কোনো কিছুই লুকোনো থাকে না। (ইব্রীয় ৪:১৩) যিহোবার কাছে একটা মামলার সম্পূর্ণ তথ্য থাকে আর এটার উপর ভিত্তি করে তিনি এই সিদ্ধান্ত নেন, একজন ব্যক্তিকে ক্ষমা করা উচিত কি না।
যিহোবা সবসময় ন্যায়বিচার করেন, কখনো ভেদাভেদ করেন না। কেউই তাঁকে ঘুস দিয়ে কিনতে পারে না (১০ অনুচ্ছেদ দেখুন)
১০. কেন আমরা এটা বলতে পারি, যিহোবার নেওয়া প্রতিটা সিদ্ধান্ত একেবারে সঠিক হয়? (দ্বিতীয় বিবরণ ৩২:৪)
১০ যিহোবার নেওয়া প্রতিটা সিদ্ধান্ত একেবারে সঠিক হয়। তিনি কখনো ভেদাভেদ করেন না। যিহোবা এটা দেখেন না যে, একজন ব্যক্তি ধনী না কি গরিব, তার চেহারা কেমন, তিনি গণ্যমান্য ব্যক্তি কি না কিংবা তার মধ্যে কোন দক্ষতা আছে। (১ শমূ. ১৬:৭; যাকোব ২:১-৪) কেউই যিহোবাকে ঘুস দিয়ে কিনতে পারে না আর কেউই তাঁকে কিছু করার জন্য চাপ দিতে পারে না। (২ বংশা. ১৯:৭) যিহোবা কখনোই রেগে গিয়ে কিংবা আবেগের বশে কোনো সিদ্ধান্ত নেন না। (যাত্রা. ৩৪:৭) তিনি আমাদের সম্বন্ধে সমস্ত কিছু জানেন আর এও জানেন, আমরা যা করেছি, তা কেন করেছি। তাই, তিনিই যে সবচেয়ে উত্তম বিচারক, এতে কোনো সন্দেহ নেই।—পড়ুন, দ্বিতীয় বিবরণ ৩২:৪.
১১. কেন আমরা এটা বলতে পারি, যিহোবা যেভাবে ক্ষমা করেন, সেভাবে আর কেউই ক্ষমা করতে পারে না?
১১ যিহোবা যেভাবে অন্যদের ক্ষমা করেন, সেভাবে আর কেউই ক্ষমা করতে পারে না। এই বিষয়টা ইব্রীয় শাস্ত্র-এর লেখকেরা ভালোভাবে জানত। তাই, যিহোবার ক্ষমা করার বিষয়টা লেখার সময় তারা একটা বিশেষ শব্দ ব্যবহার করেছিল। এই বিষয়ে একটা বইয়ে লেখা আছে: “এই শব্দটা কেবল সেইসময় ব্যবহার করা হয়, যখন ঈশ্বর কোনো ব্যক্তিকে ক্ষমা করেন। এটা সেইসময় ব্যবহার করা হয় না, যখন একজন ব্যক্তি অন্য একজন ব্যক্তিকে ক্ষমা করেন কারণ ক্ষমা করার ক্ষেত্রে মানুষের একটা সীমা আছে। সেটার বাইরে মানুষ আর ক্ষমা করতে পারে না।” কেবল যিহোবাই একজন ব্যক্তিকে পুরোপুরিভাবে ক্ষমা করতে পারেন। যিহোবা যখন কাউকে ক্ষমা করে দেন, তখন তার কেমন লাগে?
১২-১৩. (ক) যিহোবা যখন একজন ব্যক্তিকে ক্ষমা করেন, তখন সেই ব্যক্তির কেমন লাগে? (খ) কীভাবে যিহোবা আমাদের ক্ষমা করেন?
১২ আমরা যখন মেনে নিই যে, যিহোবা আমাদের ক্ষমা করে দিয়েছেন, তখন আমরা “প্রশান্তির সময়” উপভোগ করি। (প্রেরিত ৩:১৯) আমরা মনের শান্তি পাই আর আমরা এক শুদ্ধ বিবেক বজায় রাখতে পারি। একজন ব্যক্তি যখন অন্য একজন ব্যক্তিকে ক্ষমা করেন, তখন আমাদের এমনটা মনে হয় না। আমরা শুধু সেইসময় এমনটা মনে করি, যখন যিহোবা আমাদের ক্ষমা করেন। তিনি যখন আমাদের ক্ষমা করেন, তখন তাঁর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আবারও আগের মতো হয়ে যায়। এটা এমন যেন আমরা এই পাপ কখনো করিনি।
১৩ যিহোবা যখন আমাদের ক্ষমা করেন, তখন তিনি আমাদের পাপ পুরোপুরিভাবে ভুলে যান। তিনি পরে সেই পাপের জন্য কখনো আমাদের শাস্তি দেন না। (যিশা. ৪৩:২৫; যির. ৩১:৩৪) বাইবেলে লেখা আছে, যিহোবা আমাদের পাপগুলো আমাদের কাছ থেকে এতটা দূরে সরিয়ে দেন, যতটা “পশ্চিম দিক্ হইতে পূর্ব্ব দিক্।”b (গীত. ১০৩:১২) এই বিষয়ে চিন্তা করে আমাদের হৃদয় যিহোবার প্রতি কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধায় ভরে ওঠে। (গীত. ১৩০:৪) তবে আসুন দেখি, যিহোবা কখন একজন ব্যক্তিকে ক্ষমা করেন।
যিহোবা কখন আমাদের ক্ষমা করেন?
১৪. এখন পর্যন্ত আমরা কী কী শিখেছি?
১৪ এখন পর্যন্ত আমরা কী কী শিখেছি? একজন ব্যক্তি কত বড়ো পাপ করেছেন, সেটার উপর ভিত্তি করে যিহোবা এই সিদ্ধান্ত নেন না যে, তিনি তাকে ক্ষমা করবেন কি না। আমরা এও দেখেছি, যিহোবা আমাদের সৃষ্টি করেছেন, তিনি আমাদের আইন দিয়েছেন আর তিনি হলেন সবচেয়ে উত্তম বিচারক। তাই, প্রতিটা বিষয়ে তিনি খুব ভালোভাবে বোঝেন। তবে, তিনি কাউকে ক্ষমা করবেন কি না, এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য তিনি আরও কিছু বিষয়ে খেয়াল রাখেন।
১৫. লূক ১২:৪৭, ৪৮ পদ অনুযায়ী কাউকে ক্ষমা করার আগে যিহোবা কোন বিষয়ে খেয়াল রাখেন?
১৫ একটা যে-বিষয়ে যিহোবা খেয়াল রাখেন, সেটা হল: সেই ব্যক্তি কি জানতেন যে, তিনি যা করেছেন, সেটা ভুল? এই ব্যাপারে যিশুও লূক ১২:৪৭, ৪৮ পদে উল্লেখ করেছিলেন। (পড়ুন।) একজন ব্যক্তি যদি ইচ্ছা করে এমন কোনো কাজ করেন, যেটাকে যিহোবা ঘৃণা করেন, তা হলে তিনি এক গুরুতর পাপ করেছেন। এইরকম ক্ষেত্রে যিহোবা তাকে হয়তো ক্ষমা করবেন না। (মার্ক ৩:২৯; যোহন ৯:৪১) কিন্তু, আমরা সবাই কোনো-না-কোনো সময়ে জেনে-শুনে ভুল করি। তা হলে, আমরা কি কোনো দিনও ক্ষমা পাব না? আসুন দেখি, আমরা এমন কী করতে পারি, যাতে যিহোবা আমাদের ক্ষমা করে দেন।
আমরা যদি প্রকৃত অনুতপ্ত হই, তা হলে যিহোবা আমাদের নিশ্চয়ই ক্ষমা করবেন (১৬-১৭ অনুচ্ছেদ দেখুন)
১৬. (ক) অনুতপ্ত হওয়ার অর্থ কী? (খ) আমরা যদি চাই, যিহোবা আমাদের ক্ষমা করে দিক, তা হলে অনুতপ্ত হওয়া কেন জরুরি?
১৬ যিহোবা এও দেখেন, যে-ব্যক্তি পাপ করেছেন, তিনি সত্যিই অনুতপ্ত হয়েছেন কি না। অনুতপ্ত হওয়ার অর্থ হল, “নিজের মন্দ চিন্তাভাবনা কিংবা আচার-আচরণ পরিবর্তন করা।” যে-ব্যক্তি অনুতপ্ত হন, তার এই বিষয়ে অনেক আপশোস হয় যে, তিনি ভুল কাজ করেছেন কিংবা তার যা করা উচিত ছিল, তা তিনি করেননি। শুধু তা-ই নয়, তার এই ব্যাপারেও দুঃখ হয়, যিহোবার সঙ্গে তার সম্পর্ক এতটাই দুর্বল হয়ে গিয়েছিল যে, তিনি পাপ করে ফেলেছেন। রাজা মনঃশি ও রাজা দায়ূদও গুরুতর পাপ করেছিলেন। কিন্তু, যিহোবা যখন দেখেছিলেন যে, তারা মন থেকে অনুতপ্ত হয়েছিলেন, তখন তিনি তাদের ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। (১ রাজা. ১৪:৮) আমরা যদি চাই, যিহোবা আমাদের ক্ষমা করে দিক, তা হলে আমাদের অনুতপ্ত হতে হবে।c কেন? কারণ যিহোবা যখন দেখবেন, আমরা আমাদের কাজের জন্য আপশোস করছি এবং সত্যিই নিজেদের পরিবর্তন করতে চাই, তখনই তিনি আমাদের ক্ষমা করবেন। কিন্তু, আমাদের আরও কিছু করতে হবে। আসুন, তা দেখি।
১৭. নিজেদের পরিবর্তন করার অর্থ কী আর কেন তা করা জরুরি? (যিশাইয় ৫৫:৭)
১৭ যিহোবা এও দেখেন, একজন ব্যক্তি নিজেকে পরিবর্তন করেছেন কি না। নিজেকে পরিবর্তন করার জন্য তাকে মন্দ পথ ছাড়তে হবে আর এমন কাজ করতে হবে, যেটা যিহোবার চোখে সঠিক। (পড়ুন, যিশাইয় ৫৫:৭.) তাকে নিজের চিন্তা করার ধরন পালটাতে হবে এবং যিহোবার মতো করে চিন্তা করতে হবে। (রোমীয় ১২:২; ইফি. ৪:২৩) তাকে এই সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তিনি কোনো ধরনের খারাপ কথা বলবেন না এবং খারাপ কাজ করবেন না আর এতে স্থির থাকতে হবে। (কল. ৩:৭-১০) এটা ঠিক যে, যিহোবা যিশু খ্রিস্টের মুক্তির মূল্যের উপর ভিত্তি করে ‘সমস্ত পাপ থেকে আমাদের শুচি করার’ জন্য প্রস্তুত থাকেন। কিন্তু, তিনি এমনটা তখনই করবেন, যখন আমরা নিজেদের পরিবর্তন করার প্রচেষ্টা করব এবং মন্দ কাজগুলো করা ছেড়ে দেব।—১ যোহন ১:৭.
যিহোবা আপনাকে নিশ্চয়ই ক্ষমা করবেন
১৮. কেন আমরা বলতে পারি, ক্ষমা করার ব্যাপারে কেউই যিহোবার মতো হতে পারে না?
১৮ সত্যিই, ক্ষমা করার ব্যাপারে কেউই যিহোবার মতো হতে পারে না। কেন আমরা তা বলতে পারি? এই প্রবন্ধে আমরা এর বিভিন্ন কারণ লক্ষ করেছি: (১) তিনি সবসময় ক্ষমা করার জন্য প্রস্তুত থাকেন। (২) তিনি আমাদের সম্বন্ধে সমস্ত কিছু জানেন আর একমাত্র তিনিই খুব ভালোভাবে বুঝতে পারেন যে, আমরা সত্যিই অনুতপ্ত হয়েছি কি না। (৩) তিনি আমাদের পাপ পুরোপুরিভাবে ক্ষমা করে দেন আর এটা এমন যেন আমরা এই পাপ কখনো করিনি। এই কারণে আমাদের বিবেক শুদ্ধ থাকে আর যিহোবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আবারও আগের মতো হয়ে যায়।
১৯. আমরা অনেক ভুল করে ফেলি, তারপরও কেন আমরা আনন্দে থাকতে পারি?
১৯ আমরা সবাই অসিদ্ধ, তাই আমরা পাপ করে ফেলবই। কিন্তু, নিজেদের ভুলগুলো নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করে আমাদের দুঃখিত হওয়া উচিত নয়। (গীত. ১০৩:৮-১৪; ১৩০:৩) যিহোবা জানেন, আমাদের মধ্যে কোন কোন দুর্বলতা রয়েছে আর তিনি আমাদের প্রতি করুণা দেখান। আমরা যদি যিহোবার মান অনুযায়ী জীবনযাপন করার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করি, তা হলে আমরা আনন্দে থাকতে পারব। (ফিলি. ৪:৪-৬; ১ যোহন ৩:১৯-২২) এই বিষয়ে চিন্তা করে আমরা কতই-না উৎসাহিত হই!
২০. পরের প্রবন্ধে আমরা কী নিয়ে আলোচনা করব?
২০ আমরা যখন নিজেদের ভুলের জন্য মন থেকে আপশোস করি, তখন যিহোবা আমাদের ক্ষমা করার জন্য প্রস্তুত থাকেন। এটা জেনে আমরা কতই-না স্বস্তি লাভ করি! কিন্তু, কীভাবে আমরা যিহোবার মতো অন্যদের ক্ষমা করতে পারি? আমরা যেভাবে অন্যদের ক্ষমা করি আর যিহোবা যেভাবে আমাদের ক্ষমা করেন, সেটার মধ্যে কোন বিষয়ে মিল রয়েছে আর কোন বিষয়ে পার্থক্য রয়েছে? আর কেন এই পার্থক্য বোঝা জরুরি? পরের প্রবন্ধে আমরা এই প্রশ্নগুলো নিয়ে আলোচনা করব।
গান ২২ “সদাপ্রভু আমার পালক”
a যিহোবা তাঁর বাক্য বাইবেলে লিখিয়েছেন, কেউ যদি কোনো ভুল করে ফেলে আর পরে অনুতপ্ত হয়, তা হলে যিহোবা তাকে ক্ষমা করার জন্য প্রস্তুত থাকেন। তারপরও, কখনো কখনো আমরা চিন্তা করতে পারি, ‘আমাকে ঈশ্বর কখনো ক্ষমা করবেন না।’ এই প্রবন্ধে আমরা জানতে পারব, কেন আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, আমরা যদি সত্যিই আপশোস করি, তা হলে যিহোবা নিশ্চয়ই আমাদের ক্ষমা করবেন।
c এই অভিব্যক্তির অর্থ: “অনুতপ্ত” হওয়ার অর্থ হল, নিজের মনকে পরিবর্তন করা আর সেইসঙ্গে আগেকার জীবনধারার জন্য, ভুল কাজের জন্য কিংবা যা করা উচিত ছিল, সেটা না করার জন্য মন থেকে আপশোস করা। একজন ব্যক্তি প্রকৃত অনুতপ্ত কি না, সেটা কাজের মাধ্যমে প্রকাশ পায়; তিনি মন্দ পথ ছেড়ে সঠিক পথে চলতে শুরু করেন।