৩ | বাইবেলের উদাহরণ থেকে পাওয়া উপকারিতা

বাইবেল বর্ণনা করে . . . এমন অনেক নারী ও পুরুষ ছিলেন, যারা “আমাদের মতোই সাধারণ মানুষ ছিলেন।”—যাকোব ৫:১৭.

এর অর্থ

বাইবেলের পাতায় পাতায় এমন অনেক নারী ও পুরুষের জীবনকাহিনি রয়েছে, যারা বিভিন্ন ধরনের অনুভূতির সঙ্গে লড়াই করেছে। আমরা যখন তাদের অভিজ্ঞতা পড়ি, তখন আমরা এমন একটা চরিত্র খুঁজে পেতে পারি, যার হয়তো আমাদের মতো একই অনুভূতি ছিল।

যেভাবে বাইবেলের নীতি সাহায্য করতে পারে

আমরা প্রত্যেকে চাই, অন্যেরা আমার অনুভূতি বুঝুক আর বিশেষ করে সেই সময়ে, যখন আমরা মানসিক সমস্যার সঙ্গে লড়াই করি। আমরা যখন বাইবেল থেকে বিভিন্ন ব্যক্তির জীবনকাহিনি পড়ি, তখন আমরা জানতে পারি, তাদেরও আমাদের মতো একই ধরনের চিন্তাভাবনা ও অনুভূতি ছিল। এর ফলে, আমরা যখন উদ্‌বিগ্নতা ও কষ্টকর আবেগের মুখোমুখি হই, তখন বুঝতে পারি, আমরা এই সমস্যার সঙ্গে একা লড়াই করছি না, অনেকেই করেছে।

বাইবেলে এমন অনেক ব্যক্তির অভিব্যক্তি লেখা রয়েছে, যারা হতাশার সঙ্গে লড়াই করেছিল। আপনি কি কখনো এ-রকমটা অনুভব করেছেন, ‘আমি আর পারছি না?’ মোশির মনে এইরকম অনুভূতি এসেছিল আর সেইসঙ্গে এলিয় ও দায়ূদও এমনটা অনুভব করেছিলেন।—গণনাপুস্তক ১১:১৪; ১ রাজাবলি ১৯:৪; গীতসংহিতা ৫৫:৪.
বাইবেল আমাদের হান্না সম্বন্ধে বলে, যিনি “খুবই হতাশ হয়ে পড়েছিলেন” কারণ তার কোনো সন্তান ছিল না আর তার সতিন তাকে নিষ্ঠুরভাবে টিটকারি দিত।—১ শমূয়েল ১:৬, ১০.
বাইবেল আমাদের ইয়োব সম্বন্ধে জানায়, যার কথা আমরা বিবেচনা করতে পারি। যদিও তিনি যিহোবার উপর অগাধ বিশ্বাস দেখিয়েছিলেন, তা সত্ত্বেও তিনি গভীর আবেগগত যন্ত্রণায় ভুগছিলেন। একবার তিনি বলেছিলেন, “আমার ঘৃণা হইয়াছে, আমি নিত্য বাঁচিয়া থাকিতে চাহি না।”—ইয়োব ৭:১৬.

বাইবেলের সময়কার এই ব্যক্তিরা যেভাবে নেতিবাচক চিন্তাভাবনার সঙ্গে সফলভাবে মোকাবিলা করেছিলেন, তা জানার মাধ্যমে আমরাও নেতিবাচক চিন্তাভাবনার সঙ্গে লড়াই করার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি খুঁজে পেতে পারি।

যেভাবে বাইবেল সাহায্য করছে—কেভিন

যেভাবে বাইপোলার ডিসঅর্ডার আমাকে প্রভাবিত করে

“আমার যখন প্রায় পঞ্চাশ বছর বয়স, তখন আমার বাইপোলার ডিসঅর্ডার ধরা পড়ে। একেক সময় আমার মনে হত, জীবনে যে-সমস্যাই আসুক না কেন, আমি সব কিছুর সঙ্গে লড়াই করতে পারব। কিন্তু আবার অন্য সময় মনে হত, জীবনে বেঁচে থেকে আমার কোনো লাভ নেই।”

যেভাবে বাইবেল আমাকে সাহায্য করে

“বাইবেলের একজন ব্যক্তির কথা আমার মনে পড়ে যায় আর তিনি হলেন প্রেরিত পিতর। তিনি ভুল করেছিলেন আর তাই তিনি নিজেকে অযোগ্য বলে মনে করেছিলেন। কিন্তু, তিনি সেই অনুভূতি নিজের মনের মধ্যে পুষে রাখেননি। এর পরিবর্তে, তিনি এমন বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে সময় কাটানো বেছে নিয়েছিলেন, যারা তাকে উৎসাহ দিত। বাইপোলার ডিসঅর্ডার থাকার কারণে, যখন আমার একটা কোনো একটা দিন খারাপ যেত, তখন আমার অসিদ্ধতা আমাকে ঘিরে ধরত আর নিজেকে অযোগ্য বলে মনে হত। পিতরের মতো আমিও আমার বন্ধুদের কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করেছি, যারা আমাকে জীবনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছে।

“বাইবেলের আরও একটা চরিত্র আমাকে অনেক সান্ত্বনা দেয় আর তিনি হলেন রাজা দায়ূদ। তিনি প্রায়ই নিজের পরিস্থিতির কারণে বিষণ্ণ থাকতেন আর অতীতে করা ভুলগুলোর জন্য অনুশোচনা করতেন। আমি এইজন্য তার সম্পর্কে বলছি কারণ আমিও মাঝে মাঝে এমন কিছু করি অথবা বলি, যেটার জন্য পরে আমি অনুশোচনা করি। গীতসংহিতা ৫১-র গীতে দায়ূদের বলা কথাগুলো আমাকে অনেক সান্ত্বনা দেয়। ৩ পদে দায়ূদ বলেন, ‘আমি নিজে আমার অধর্ম্ম সকল জানি; আমার পাপ সতত আমার সম্মুখে আছে।’ এই শাস্ত্রপদ আমার বিষণ্ণতার মুহূর্তগুলোকে খুব ভালোভাবে বর্ণনা করে কারণ সেইসময় নিজের সম্পর্কে ইতিবাচক ভাবে চিন্তা করা আমার পক্ষে কঠিন হয়ে পড়ে। কিন্তু আমি ১০ পদে বলা দায়ূদের কথাগুলোও মনে করি, যেখানে বলে, ‘হে ঈশ্বর, আমাতে বিশুদ্ধ অন্তঃকরণ সৃষ্টি কর, আমার অন্তরে সুস্থির আত্মাকে নূতন করিয়া দেও।’ আমিও ঈশ্বরের কাছে একইরকম প্রার্থনা করি, যেন আমি নিজের সম্পর্কে ভালো অনুভব করতে পারি। অবশেষে ১৭ পদ আমাকে সান্ত্বনা দেয়। এটি বলে, ‘হে ঈশ্বর, তুমি ভগ্ন ও চূর্ণ অন্তঃকরণ তুচ্ছ করিবে না।’ এই পদ আমাকে আশ্বস্ত করে, যিহোবা আমাকে ভালোবাসেন।

“বাইবেলের উদাহরণ এবং ঈশ্বর আমাকে যা দিয়েছেন, সেগুলোর উপর মনোযোগ দেওয়ার মাধ্যমে আমি ভবিষ্যতের জন্য আমার আশাকে আরও শক্তিশালী করি। বাইবেলের প্রতিজ্ঞাগুলো আমার জন্য বাস্তব হয়ে ওঠে এবং জীবনে এগিয়ে যেতে আমাকে সাহায্য করে।”