পরিচালকগোষ্ঠীর দু-জন নতুন সদস্য
২০২৪ সালের ৫ই অক্টোবরের বার্ষিক সভায় এই বিশেষ ঘোষণা করা হয়: ভাই জোডি জেডলি এবং ভাই জেকব রাম্ফ, যিহোবার সাক্ষিদের পরিচালকগোষ্ঠীর সদস্য হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন। এই দুই ভাই বহু বছর ধরে বিশ্বস্তভাবে যিহোবার সেবা করছেন।
জোডি জেডলি এবং তার স্ত্রী ড্যামারিস
ভাই জেডলি আমেরিকার মিসৌরি শহরে একটা সাক্ষি পরিবারে জন্ম নেন এবং বড়ো হয়ে ওঠেন। তার পরিবার এমন একটা জায়গায় থাকত, যেখানে খুব কমই প্রচার করা হত। এর ফলে, তিনি এমন অনেক ভাই-বোনের মেলামেশা করার সুযোগ পান, যারা সুসমাচার প্রচার কাজে সাহায্য করার জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসত। তাদের ভালোবাসা এবং একতা ভাইয়ের উপর এক গভীর ছাপ ফেলেছিল। ভাই জেডলি তার কিশোর বয়সে, ১৯৮৩ সালের ১৫ই অক্টোবর বাপ্তিস্ম নেন। তিনি প্রচার করতে খুব ভালোবাসতেন এবং ১৯৮৯ সালে হাইস্কুল শেষ করার পর ভাই নিয়মিত অগ্রগামী হিসেবে সেবা করতে শুরু করেন।
ভাই জেডলি যখন যুবক ছিলেন, তখন তার বাবা-মা তাকে এবং তার বোনকে নিয়ে বেথেল পরিদর্শনে যেতেন। এর ফলে, ভাই জেডলি এবং তার বোন বেথেলে সেবা করার এক লক্ষ্য স্থাপন করতে অনুপ্রাণিত হন আর তারা দু-জনেই এই লক্ষ্য অর্জন করতে সফল হন। ১৯৯০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ভাই জেডলি ওয়ালকিল বেথেলে সেবা করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। প্রথমে তিনি ক্লিনিং ডিপার্টমেন্টে এবং পরে বেথেলের চিকিৎসা বিভাগে সেবা করেন।
সেইসময়, সেখানে অবস্থিত স্প্যানিশ ভাষার মণ্ডলীগুলো বৃদ্ধি পেতে শুরু করে আর এই কারণে আরও ভাইদের প্রয়োজন পড়ে। ভাই, জেডলি এমনি একটা মণ্ডলীতে যোগ দেন এবং স্প্যানিশ ভাষা শিখতে শুরু করেন। এর কিছুদিন পরে, সেই একই সীমায়, ড্যামারিস নামে একজন অগ্রগামী বোনের সঙ্গে তার দেখা হয়। ভাই জেডলি পরে সেই বোনকে বিয়ে করেন এবং তারা দু-জনে একসঙ্গে বেথেল সেবা শুরু করেন।
তবে, ২০০৫ সালে বাবা-মায়েদের দেখাশোনা করার জন্য তাদের বেথেল সেবা ছাড়তে হয়। সেইসময়ে তারা নিয়মিত অগ্রগামী হিসেবে সেবা করে চলেন। এ ছাড়া, ভাই জেডলি অগ্রগামী পরিচর্যা স্কুলের প্রশিক্ষক হিসেবে, স্থানীয় হসপিটাল লিয়েইজন কমিটিতে এবং রিজিওনাল বিল্ডিং কমিটিতে সেবা করেন।
২০১৩ সালে ভাই ও বোন জেডলিকে ওয়ারউইকের নির্মাণ প্রকল্পে সেবা করার জন্য আবারও বেথেলে আমন্ত্রণ জানানো হয়। সেইসময় থেকে তারা প্যাটারসনে এবং ওয়ালকিলেও সেবা করেন। ভাই জেডলি স্থানীয় নকশা/নির্মাণ কমিটি এবং হসপিটাল ইনফরমেশন সার্ভিসেস-এ সেবা করেন। ২০২৩ সালের মার্চ মাসে তাকে সার্ভিস কমিটির একজন সাহায্যকারী হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। তার কার্যভারগুলোর কথা চিন্তা করে তিনি বলেন: “আপনাকে যখন নতুন কার্যভার দেওয়া হয়, তখন আপনার হয়তো খুব ভয় লাগতে পারে। কিন্তু, মনে রাখবেন, ঠিক তখনই আপনাকে যিহোবার উপর নির্ভর করতে হবে কারণ যিহোবা যা চান, তিনি আমাদের দিয়ে তা-ই করাতে পারেন।”
জেকব রাম্ফ এবং তার স্ত্রী ইংগা
ভাই রাম্ফ আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। ভাই যখন ছোটো ছিলেন, তখন তার মা যদিও নিষ্ক্রিয় ছিলেন, তবুও তিনি ভাইকে বাইবেলের সত্য শেখানোর জন্য প্রচেষ্টা করতেন। এ ছাড়া, ভাই রাম্ফ প্রতি বছর তার ঠাকুমার সঙ্গে দেখা করতে যেতেন, যিনি একজন বিশ্বস্ত যিহোবার সাক্ষি ছিলেন। তিনি ভাইয়ের মনে সত্যের প্রতি আগ্রহ জাগিয়ে তোলেন এবং ১৩ বছর বয়সে ভাই বাইবেল অধ্যয়ন করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। ভাই ১৯৯২ সালের ২৭শে সেপ্টেম্বর কিশোর বয়সে বাপ্তিস্ম নেন। আনন্দের বিষয় হল, তার মা আবার প্রচার করতে এবং সভায় যেতে শুরু করেন আর তার পুরো পরিবার উন্নতি করে এবং বাপ্তিস্ম নেয়।
অল্পবয়স থেকেই ভাই রাম্ফ দেখেছেন, অগ্রগামীরা কতই-না আনন্দে থাকে। তাই, হাইস্কুল শেষ করার পর তিনি ১৯৯৫ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে তিনি অগ্রগামী সেবা শুরু করেন। ২০০০ সালে ভাই ইকুয়েডরে যান, যেখানে বেশি প্রকাশকের প্রয়োজন ছিল। সেখানে তার ইংগা নামে একজন অগ্রগামী বোনের সঙ্গে দেখা হয়, যিনি কানাডা থেকে এসেছিলেন আর পরে তারা বিয়ে করেন। বিয়ের পর তারা ইকুয়েডরের একটা শহর, যেখানে প্রকাশকদের একটা ছোটো দল ছিল, সেখানে যোগ দেন। বর্তমানে, সেই ছোটো দল একটা বড়ো মণ্ডলীতে পরিণত হয়েছে।
পরবর্তী সময়ে, ভাই ও বোন রাম্ফকে বিশেষ অগ্রগামী হিসেবে এবং পরে সীমার কাজে নিযুক্ত করা হয়। ২০১১ সালে তাদের ১৩২তম গিলিয়েড ক্লাসে আমন্ত্রণ জানানো হয়। গ্র্যাজুয়েট হওয়ার পর তারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নানা ধরনের সেবা করার সুযোগ পান, যেমন বেথেল সেবা, মিশনারি সেবা এবং সীমা অধ্যক্ষ হিসেবে সেবা করা। এ ছাড়া, ভাই রাম্ফ রাজ্যের সুসমাচার প্রচারকদের জন্য স্কুল-এ প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করেন।
কোভিড-১৯ অতিমারির কারণে ভাই ও বোন রাম্ফকে আমেরিকায় ফিরে যেতে হয়। তাদের ওয়ালকিল বেথেলে আমন্ত্রণ জানানো হয়, যেখানে ভাই রাম্ফ সার্ভিস ডিপার্টমেন্টে প্রশিক্ষণ লাভ করেন। অবশেষে, তাদের আবার ইকুয়েডর শাখা অফিসে নিযুক্ত করা হয়, যেখানে ভাই রাম্ফ শাখা কমিটির একজন সদস্য হিসেবে সেবা করেন। ২০২৩ সালে তাদের ওয়ারউইকে পাঠানো হয়। ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে ভাই রাম্ফকে সার্ভিস কমিটির একজন সাহায্যকারী হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। তিনি যে-সমস্ত জায়গায় সেবা করেছেন, সেই বিষয়ে তিনি বলেন, “আমরা যেখানেই আমাদের কার্যভার দেওয়া হোক না কেন, সেটা বড়ো বিষয় নয়, কিন্তু কাদের সঙ্গে আমরা সেবা করছি, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।”
আমরা এই ভাইদের কঠোর পরিশ্রমকে উপলব্ধি করি এবং তাদের ‘সমাদর করি।’—ফিলি. ২:২৯.