শান্তিস্থাপনের সংস্থাগুলো কি পৃথিবীতে কখনো শান্তি নিয়ে আসতে পারবে?
বর্তমানে সারা পৃথিবীতে যুদ্ধ ও সংঘাত বেড়েই চলেছে। তাই, জাতিসংঘ বা রাষ্ট্রসংঘ (ইউনাইটেড নেশন্স) ও অন্যান্য সংস্থা শান্তিস্থাপন করার বিভিন্ন কার্যক্রম চালু করেছে। এগুলোর মধ্যে একটা হল, সমস্যায় ভরা এলাকাগুলোতে প্রতিনিধি হিসেবে কিছু লোক পাঠানো। কেন? কারণ তারা আশা করে, এই প্রতিনিধিরা বা শান্তিস্থাপনকারীরা সেই এলাকাগুলোতে শান্তি ফিরিয়ে আনতে পারবে। ইউএন-এর মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন: “জাতিসংঘের শান্তিস্থাপনকারীরা হল এই পৃথিবীকে আরও শান্তিপূর্ণ করে তোলার জন্য আমাদের প্রচেষ্টার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ।”
এটা ঠিক যে, বিগত কিছু বছরে মানুষের এই শান্তিস্থাপনের প্রচেষ্টা কিছুটা হলেও সফল হয়েছে। যেমন, সাধারণ মানুষ সুরক্ষা পেয়েছে, শরণার্থীরা নিজেদের দেশে ফিরে যেতে পেরেছে, ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে এবং দেশের ক্ষতিগ্রস্থ পরিকাঠামো, যেমন জল বা বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে। তবে, বেশ কিছু বড়ো বড়ো বাধা বা প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকার কারণে তাদের এই প্রচেষ্টাগুলো পুরোপুরিভাবে সফল হচ্ছে না। তাহলে, এই পৃথিবীতে প্রকৃত শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য কোনো স্থায়ী সমাধান কি কখনো পাওয়া যাবে? বাইবেল এই সম্বন্ধে কী বলে?
শান্তিস্থাপনের ক্ষেত্রে মানুষের প্রচেষ্টায় আসা বিভিন্ন প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং এই বিষয়ে বাইবেলের সমাধান
প্রতিদ্বন্দ্বিতা: সহযোগিতার অভাব। বিভিন্ন সামরিক ও বেসামরিক সংস্থা যখন একসঙ্গে মিলিত হয়, তখন সেখানে সহযোগিতার পরিবেশ গড়ে তোলা খুবই কঠিন হয়ে পড়ে, বিশেষ করে সেগুলো যখন ভিন্ন ভিন্ন দেশ থেকে আসে। একদিকে তাদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি দেখা দেয় আর অন্যদিকে একেক জনের গুরুত্বের বিষয় একেক রকম হয়ে থাকে। এই কারণে সংস্থাগুলো মাঝেমধ্যেই একে অপরের সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে কাজ করতে পারে না।
বাইবেলের সমাধান: “স্বর্গের ঈশ্বর এক রাজ্য স্থাপন করিবেন, … তাহা ঐ সকল রাজ্য [মানবসরকার] চূর্ণ ও বিনষ্ট করিয়া আপনি চিরস্থায়ী হইবে।”—দানিয়েল ২:৪৪.
খুব শীঘ্রই ঈশ্বর পৃথিবী থেকে সমস্ত যুদ্ধ শেষ করে দেবেন এবং শান্তি নিয়ে আসবেন। (গীতসংহিতা ৪৬:৮, ৯) তিনি পৃথিবীর সব সরকার সরিয়ে দিয়ে শুধুমাত্র একটা সরকার স্থাপন করবেন; সেটা হল ঈশ্বরের রাজ্য আর এই স্বর্গীয় সরকার একেবারে নিখুঁত। যেহেতু সমস্ত যুদ্ধ শেষ করা হবে আর শুধুমাত্র একটা সরকার পৃথিবীর উপর শাসন করবে, তাই শান্তিস্থাপন করার জন্য বিভিন্ন সংস্থার আর প্রয়োজন হবে না।
প্রতিদ্বন্দ্বিতা: সীমিত সুযোগসুবিধা ও ক্ষমতা। শান্তিস্থাপন করার অভিযান চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনেক সুযোগসুবিধার প্রয়োজন হয়, যেমন লোকবল, টাকাপয়সা ইত্যাদি আর সেগুলো সবসময় যথেষ্ট পরিমাণে না থাকার কারণে এই সংস্থাগুলো যতটা করতে চায়, ততটা করে উঠতে পারে না। তা ছাড়া, শান্তিস্থাপন অভিযানের কর্মীদের খুবই জটিল ও বিপদজনক পরিবেশের মধ্যে কাজ করতে হয় আর এই পরিবেশ দিন দিন আরও খারাপ হচ্ছে।
বাইবেলের সমাধান: “আমাদের প্রভু যিশু খ্রিস্টের ঈশ্বর … স্বর্গীয় স্থানে [যিশুকে] তাঁর ডান পাশে বসিয়েছেন। তিনি সমস্ত সরকার, কর্তৃত্ব, শাসক ও রাজা এবং নামের উপরে তাঁকে মহিমান্বিত করেছেন।”—ইফিষীয় ১:১৭, ২০, ২১.
সর্বশক্তিমান ঈশ্বর যিহোবাa তাঁর রাজ্যের রাজা হিসেবে যিশুকে মনোনীত করেছেন এবং সফলভাবে রাজত্ব করার জন্য তাঁর যা যা প্রয়োজন, সেই সমস্ত কিছু তাঁকে দিয়েছেন। (দানিয়েল ৭:১৩, ১৪b) ঈশ্বর যিশুকে অসীম শক্তি, জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও বোঝার ক্ষমতা দিয়েছেন, যা যেকোনো মানবসরকার বা সংস্থা থেকে অনেক অনেক গুণ বেশি। (যিশাইয় ১১:২) এ ছাড়া, যিশুর কাছে শক্তিশালী স্বর্গদূতদের এক বাহিনী রয়েছে আর তিনি এই বাহিনীকে যেকোনো সময়ে ব্যবহার করতে পারেন। (প্রকাশিত বাক্য ১৯:১৪) তাই, কোনো পরিস্থিতিই তাঁর কাছে কঠিন বা জটিল নয়।
ঈশ্বর যিশুকে অনেক ক্ষমতা এবং এক বিশাল স্বর্গীয়বাহিনী দিয়েছেন। আর এগুলো ব্যবহার করে যিশু এই পৃথিবী থেকে শুধু যে যুদ্ধই শেষ করবেন, এমন নয়। একইসঙ্গে ঈশ্বরের রাজ্যের অধীনে যারা থাকবে, তাদের সকলের জন্য তিনি স্থায়ী শান্তি ও নিরাপত্তা নিয়ে আসবেন।—যিশাইয় ৩২:১৭, ১৮.
প্রতিদ্বন্দ্বিতা: আইনি বিধি-নিষেধ। শান্তিস্থাপন অভিযানের কর্মীরা যা করতে চায়, মাঝেমধ্যে তারা সেটা করতে পারে না। এর একটা কারণ হল, তাদের সামনে বিভিন্ন আইনি বিধি-নিষেধ থাকে। আরও একটা কারণ হল, তাদের স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয় না যে, তাদের কী কী করার অনুমতি রয়েছে বা তাদের কাছ থেকে কী আশা করা হচ্ছে। এর ফলে, তারা অন্যদের ভালোভাবে সুরক্ষা দিতে পারে না কিংবা নিজেদের উদ্দেশ্য পূরণ করার ক্ষেত্রে পুরোপুরিভাবে সফল হয় না।
বাইবেলের সমাধান: “স্বর্গে ও পৃথিবীতে সমস্ত কর্তৃত্ব [যিশুকে] দেওয়া হয়েছে।”—মথি ২৮:১৮.
পৃথিবীব্যাপী শান্তিস্থাপন করার জন্য ঈশ্বর যিশুকে স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন আর একই সঙ্গে তা করার সম্পূর্ণ অধিকারও দিয়েছেন। (যোহন ৫:২২) যিশু কখনোই অবিচার করবেন না এবং তাঁর কাজে কখনোই কোনো দুর্নীতি খুঁজে পাওয়া যাবে না। (যিশাইয় ১১:৩-৫) আর ঠিক এই কারণেই বাইবেল বলে, যিশু হলেন “শান্তির রাজা” আর তাঁর রাজ্য “ন্যায়বিচার এবং সঠিক কাজের” উপর ভিত্তি করে স্থাপিত।—যিশাইয় ৯:৬, ৭.
ঈশ্বরের রাজ্যই প্রকৃত শান্তি নিয়ে আসবে
মানুষের দ্বারা পরিচালিত শান্তিস্থাপন সংস্থাগুলো খুব বেশি হলে কোনো সমস্যাপূর্ণ এলাকায় কিছুটা স্থিরতা আনতে পারে বা সেখানকার সংঘর্ষগুলোকে থামাতে পারে। তবে, পৃথিবীব্যাপী দৌরাত্ম্যের মূল কারণ হল মানুষের হৃদয়ে জমে থাকা ঘৃণা। আর শান্তিস্থাপন সংস্থাগুলো এই ঘৃণাকে নির্মূল করতে পারবে না।
“সবচেয়ে বড়ো সমস্যাটা হল, শান্তিস্থাপন সংস্থাগুলো যে-শান্তি আনার এত চেষ্টা করছে, তারা তা কখনোই আনতে পারবে না।”—ডেনিস জেট, যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত।
এর বিপরীতে, প্রকৃত শান্তি একমাত্র ঈশ্বরের রাজ্যই নিয়ে আসবে, কারণ এই রাজ্যে প্রত্যেক ব্যক্তিকে সাহায্য করা হবে, যাতে তারা তাদের হৃদয়ে থাকা ঘৃণাকে সম্পূর্ণভাবে মুছে ফেলতে পারে। এই রাজ্যের রাজা যিশু যখন পৃথিবীতে ছিলেন, তখন তিনি তাঁর কথা ও কাজের মাধ্যমে শিষ্যদের শিক্ষা দিয়েছিলেন, কীভাবে শান্তিস্থাপন করতে হয় এবং অপরের প্রতি ভালোবাসা দেখাতে হয়। এর কয়েকটা উদাহরণ লক্ষ করুন:
যিশু এও বলেছিলেন, যারা ঈশ্বরের রাজ্যের অধীনে থাকবে, তারা একে অপরের প্রতি প্রেম দেখাবে আর এভাবেই তাদের চেনা যাবে। বাইবেল এটা স্পষ্টভাবে জানায় যে, যারা অন্যদের ঘৃণা করে, ঈশ্বরের রাজ্যে তাদের কোনো স্থান নেই:
যিহোবা ঈশ্বর হলেন মানবজাতির সৃষ্টিকর্তা। তাই তিনিই জানেন, পৃথিবীতে শান্তি আনার একমাত্র ও সর্বোত্তম উপায়টা কী। আর তাঁর রাজ্য সেই সমস্ত কিছু করতে সফল হবে, যেগুলো করতে মানুষ ব্যর্থ হয়েছে—শান্তিস্থাপন করা হল সেগুলোর মধ্যে একটা।
a যিহোবা হল ঈশ্বরের ব্যক্তিগত নাম। (গীতসংহিতা ৮৩:১৮) এই বিষয়ে “যিহোবা কে?” শিরোনামের প্রবন্ধটা দেখুন।
b দানিয়েল ৭:১৩, ১৪ পদে লেখা ‘মনুষ্য-পুত্ত্র’ হলেন যিশু খ্রিস্ট।—মথি ২৫:৩১; ২৬:৬৩, ৬৪.