ওয়াচটাওয়ার অনলাইন লাইব্রেরি
ওয়াচটাওয়ার
অনলাইন লাইব্রেরি
বাংলা
  • বাইবেল
  • প্রকাশনাদি
  • সভা
  • w৯২ ১০/১ পৃষ্ঠা ৮-১৩
  • “সমস্ত পৃথিবীর বিচারকর্ত্তা” যিহোবা যিনি নিরপেক্ষ

এই বাছাইয়ের সঙ্গে কোনো ভিডিও প্রাপ্তিসাধ্য নেই।

দুঃখিত, ভিডিওটা চালানো সম্বভব হচ্ছে না।

  • “সমস্ত পৃথিবীর বিচারকর্ত্তা” যিহোবা যিনি নিরপেক্ষ
  • ১৯৯২ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • উপশিরোনাম
  • অনুরূপ বিষয়বস্ত‌ু
  • যিহোবা যেভাবে বিচার করেন
  • কুলপতিদের সময় মনুষ্য বিচারকেরা
  • ইস্রায়েলের বিচার পদ্ধতি
  • ইস্রায়েলের বিচারকর্তাগণ
  • ন্যায়বিচার প্রদান করা
  • প্রাচীনেরা, ধার্মিকতায় বিচার করুন
    ১৯৯২ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • যিহোবার পথ সকল জানা
    ২০০৫ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • বিচারাসনের সামনে আপনি কিভাবে দাঁড়াবেন?
    ১৯৯৫ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
১৯৯২ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
w৯২ ১০/১ পৃষ্ঠা ৮-১৩

“সমস্ত পৃথিবীর বিচারকর্ত্তা” যিহোবা যিনি নিরপেক্ষ

“আর পিতা . . . বিনা মুখাপেক্ষায় প্রত্যেক ব্যক্তির ক্রিয়ানুযায়ী বিচার করেন।”—১ পিতর ১:১৭.

১, ২. (ক) যিহোবা যে মহান্‌ বিচারকর্তা এই বিষয় জানা কেন উভয়ই ভীতি সঞ্চারক ও সান্তনাদায়ক? (খ) জাতিগণের বিরুদ্ধে যিহোবার যে বিচার্য্য বিষয় আছে, তাতে তাঁর পার্থিব দাসেরা কী অংশ গ্রহণ করে?

যিহোবা হলেন “সমস্ত পৃথিবীর বিচারকর্ত্তা।” (আদিপুস্তক ১৮:২৫) বিশ্বের সর্বোচ্চ ঈশ্বর হিসাবে, তাঁর সম্পূর্ণ অধিকার রয়েছে তাঁর সৃষ্ট প্রাণীদের বিচার করার। ইহা একই সঙ্গে ভয় ও সান্ত্বনার ভাব উৎপন্ন করে। মোশি এই আপাতবিরোধী সত্যটিকে ব্যক্ত করেছিলেন, এই বলে: “কেননা তোমাদের ঈশ্বর যিহোবাই ঈশ্বরগণের ঈশ্বর ও প্রভুদের প্রভু, তিনিই মহান্‌, বীর্য্যবান্‌ ও ভয়ঙ্কর ঈশ্বর, তিনি কাহারও মুখাপেক্ষা করেন না, ও উৎকোচ গ্রহণ করেন না। তিনি পিতৃহীনদের ও বিধবার বিচার নিষ্পন্ন করেন, এবং বিদেশীকে প্রেম করিয়া অন্ন বস্ত্র দেন।”—দ্বিতীয় বিবরণ ১০:১৭, ১৮, NW.

২ কী অপূর্ব সমতার পরিচয়! একজন মহান, শক্তিশালী, ভয়-সঞ্চারণকারী ঈশ্বর, তবুও তিনি পক্ষপাতশূন্য এবং প্রেমের সাথে পিতৃমাতৃহীন, বিধবা, এবং প্রবাসী বাসিন্দাগণের অধিকার রক্ষা করেন। কেউ কি যিহোবার চেয়েও অধিক প্রেমময় কোন বিচারকর্তার আশা করতে পারে? শয়তানের জগতের জাতিগুলির বিরুদ্ধে তাঁর এক বিচার্য্য বিষয় রয়েছে তা সুস্পষ্ট ভাষায় বর্ণনা করে, যিহোবা পৃথিবীতে তাঁর সেবকদের আহ্বান করেন তাঁর সাক্ষী হতে। (যিশাইয় ৩৪:৮; ৪৩:৯-১২) তিনি তাদের সাক্ষ্যের উপর নির্ভর করেন না তাঁর ঈশ্বরত্ব ও ন্যায়সম্মত সার্বভৌমত্ব প্রমাণ করার জন্য। কিন্তু তিনি তাদের সেই অসাধারণ সুযোগ দেন মানবজাতির সম্মুখে সাক্ষ্য দেওয়ার যে তারা তাঁর সর্বোচ্চ স্থানকে স্বীকার করে। তাঁর সাক্ষীরা নিজেদের তাঁর ধার্মিক সার্বভৌম ক্ষমতার অধীনে আনে, আর জনসাধারণ্যে পরিচর্য্যা দ্বারা, তারা অন্যদের পরিচালিত করে নিজেদের সেই সর্বোচ্চ বিচারকর্তার অধীনে নিয়ে আসতে।

যিহোবা যেভাবে বিচার করেন

৩. যিহোবা যেভাবে বিচার করেন তার সারাংশ কী, এবং আদম ও হবার ক্ষেত্রে তা কিভাবে প্রদর্শিত হয়?

৩ মানুষের প্রারম্ভিক ইতিহাসে, যিহোবা ব্যক্তিগতভাবে কিছু আইন ভঙ্গকারীদের বিচার করেন। তিনি যেভাবে বিচার্য্য বিষয়গুলি সমাধান করেন তা তাঁর সেবকদের কাছে উদাহরণস্বরূপ হয় যারা পরবর্তী সময়ে দায়িত্বভার পাবে তাঁর লোকদের মধ্যে বিচার্য্য বিষয় নিষ্পত্তি করার। (গীতসংহিতা ৭৭:১১, ১২) তাঁর বিচার করার পদ্ধতির এইভাবে সারাংশ করা যায়: দৃঢ়তা যেখানে প্রয়োজন, করুণা যেখানে সম্ভব। আদম ও হবার ক্ষেত্রে, যারা সিদ্ধ মনুষ্য ছিল, এবং স্বেচ্ছায় বিরুদ্ধাচরণ করে, তারা কোন করুণার যোগ্য ছিল না। সেইকারণে, যিহোবা তাদের মৃত্যু দণ্ড দেন। কিন্তু তাঁর করুণা তাদের সন্তানদের ক্ষেত্রে কার্য্য সাধন করে। যিহোবা তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্য্যকারী করতে সময় নেন, যা আদম ও হবাকে সন্তানসন্ততি উৎপন্ন করার সময় দেয়। তিনি প্রেমের সাথে তাদের বংশধরদের পাপ ও মৃত্যুর দাসত্ব থেকে মুক্তি পাওয়ার আশা প্রদান করেছিলেন।—আদিপুস্তক ৩:১৫; রোমীয় ৮:২০, ২১.

৪. কয়িনের সাথে যিহোবা কিরূপ ব্যবহার করেন, এবং এই ঘটনাটি আমাদের জন্য বিশেষ আগ্রহের বিষয় কেন?

৪ যিহোবা যেভাবে কয়িনের সাথে ব্যবহার করেন তা বিশেষ আগ্রহের কারণ এটাই হচ্ছে প্রথম লিখিত বিবরণ একটি ঘটনার, যেখানে জড়িত ছিল আদম ও হবার একজন অসিদ্ধ বংশধর যে “পাপের অধীনে বিক্রীত”। (রোমীয় ৭:১৪) যিহোবা কী এই বিষয়টিকে বিচারের মধ্যে নেন এবং কয়িনের সাথে তার পিতামাতার থেকে আলাদা রকম ব্যবহার করেন? আর এই বিষয়টি কী আজ যারা খ্রীষ্টীয় প্রাচীন তাদের জন্য এক শিক্ষাস্বরূপ হতে পারে? আসুন দেখি। তার উৎস্বর্গ গ্রাহ্য হয়নি দেখে কয়িন যে ভুল প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল তা বুঝে, যিহোবা তাকে প্রেমের সাথে তার বিপদে পড়া সম্পর্কে সাবধান করেন। একটি পুরাতন নীতিবাক্য বলে: ‘সাবধানের মার নেই।’ যিহোবা এতদূর অবধি যান যে তাকে সাবধান করেন পাপের প্রবণতাকে সে যেন তার উপর কর্তৃত্ব করতে না দেয়। তিনি চেষ্টা করেন তাকে সাহায্য করতে “সদাচরণ কর” বলে। (আদিপুস্তক ৪:৫-৭) এই প্রথম ঈশ্বর এক পাপী মনুষ্যকে অনুতপ্ত হওয়ার প্রয়োজন সম্পর্কে বলেন। কয়িন তার অননুতপ্ত মনোভাব প্রদর্শন এবং নরহত্যা করার পর, যিহোবা তাকে নির্বাসন দণ্ড দেন, কিছুটা লঘু করেন অন্য মনুষ্যদের তাকে হত্যা করা নিষিদ্ধ, এই নির্দেশ জারি করে।—আদিপুস্তক ৪:৮-১৫.

৫, ৬. (ক) প্লাবনের আগের বংশের সাথে আচরণে যিহোবা কিভাবে অগ্রসর হন? (খ) সদোম ও ঘমোরার অধিবাসীদের বিরুদ্ধে বিচারাজ্ঞা প্রয়োগ করার পূর্বে যিহোবা কী করেন?

৫ প্লাবনের পূর্বে, যখন ‘যিহোবা লক্ষ্য করেন যে পৃথিবীতে মনুষ্যের দুষ্টতা বড়, তিনি অন্তঃকরণে ব্যথা পান।’ (আদিপুস্তক ৬:৫, ৬) তিনি “অনুশোচনা” করেন যে প্লাবনের আগে বেশীরভাগ বংশ তারা তাদের স্বাধীন ইচ্ছার অপব্যবহার করে এবং তাঁকে তাদের উপরে বিচারাজ্ঞা নিয়ে আসতে হবে। তবুও, তিনি তাদের প্রয়োজনীয় সতর্কতা দেন, নোহকে বহুদিন যাবৎ “ধার্ম্মিকতার প্রচারক” হিসাবে ব্যবহার করে। তারপর, যিহোবার আর কোন কারণ ছিল না যে কেন তিনি সেই ‘ঈশ্বরবিহীন জগতের লোকদের ধ্বংস করা থেকে বিরত থাকবেন।’—২ পিতর ২:৫.

৬ একইভাবে যিহোবার নৈতিক দায়িত্ব ছিল সদোম ও ঘমোরার দুর্নীতিগ্রস্ত বাসিন্দাদের বিচার করার। কিন্তু লক্ষ্য করুন যে তিনি এই ব্যাপারে কিভাবে অগ্রসর হন। এই লোকেদের জঘন্য ব্যবহারের জন্য তিনি “অভিযোগের ক্রন্দন” শোনেন, তা যদিও ছিল কেবল ধার্মিক লোটের প্রার্থনার মাধ্যমে। (আদিপুস্তক ১৮:২০; ২ পিতর ২:৭, ৮) কিন্তু কিছু করার আগে, প্রকৃত ঘটনা যাচাই করতে তাঁর দূতদের মাধ্যমে তিনি ‘নিচে গিয়া’ দেখেন। (আদিপুস্তক ১৮:২১, ২২; ১৯:১) তিনি সময়ও নেন অব্রাহামকে এই বিষয় আশ্বস্ত করার জন্য যে তিনি অবিচার করবেন না।—আদিপুস্তক ১৮:২৩-৩২.

৭. যে প্রাচীনেরা বিচার কমিটিগুলিতে কাজ করেন যিহোবার বিচার করার পদ্ধতি থেকে তারা কী শিখতে পারেন?

৭ প্রাচীনরা আজ এই উদাহরণগুলি থেকে কী শিখতে পারেন? আদম ও হবার ক্ষেত্রে, যিহোবা তাদের জন্য প্রেম ও চিন্তা দেখান, যারা যদিও ওই পাপীদের সাথে সম্বন্ধযুক্ত ছিল, কিন্তু এই ক্ষেত্রে দোষী ছিল না। তিনি আদম ও হবার বংশধরদের প্রতি করুণা দেখান। কয়িনের ক্ষেত্রে, যিহোবা পূর্বেই লক্ষ্য করেন যে কয়িন বিপদাপন্ন ছিল এবং তার সাথে অনুগ্রহপূর্বক যুক্তিতর্ক করেন, চেষ্টা করেন তাকে পাপ করা থেকে বিরত করতে। বিতাড়িত করার পরও, যিহোবা কয়িনের প্রতি সহানুভূতি দেখান। আরও, যিহোবা প্লাবনের পূর্ববর্তী বংশকে দণ্ড দেন তাদের প্রতি বহু ধৈর্য্যশীলতা দেখাবার পর। অনমনীয় দুষ্টতার সম্মুখীন হয়ে, যিহোবা “মনঃপীড়া পাইলেন।” তিনি দুঃখ পান যে লোকেরা তাঁর ধার্মিক শাসনের বিপক্ষতা করে ও তিনি বাধ্য হন তাদের প্রতিকূল বিচার করতে। (আদিপুস্তক ৬:৬; তুলনা করুন যিহিষ্কেল ১৮:৩১; ২ পিতর ৩:৯.) সদোম ও ঘমোরার ক্ষেত্রে, যিহোবা কাজ করেন সব তথ্য পরীক্ষা করার পর। আজ যাদের বিচার্য্য বিষয় পরিচালনা করতে হয় তাদের জন্য কী অপূর্ব উদাহরণ!

কুলপতিদের সময় মনুষ্য বিচারকেরা

৮. কুলপতিদের সময় যিহোবার কোন্‌ মূল আইনগুলি জ্ঞাত ছিল?

৮ যদিও তখন সম্ভবত কোন লিখিত নিয়মাবলী ছিল না, কুলপতিদের সেই সমাজ যিহোবার মৌলিক আইনগুলির সাথে পরিচিত ছিল, আর তাঁর সেবকেরা তা পালন করার জন্য বাধ্য ছিল। (তুলনা করুন আদিপুস্তক ২৬:৫.) যে নাটক এদোনে ঘটে তা দেখায় যে যিহোবার সার্বভৌমত্বের প্রতি বাধ্যতা ও অধীনতা স্বীকার খুব প্রয়োজন। কয়িনের ঘটনা স্পষ্ট করেছিল যে যিহোবা হত্যাকে সমর্থন করেন না। প্লাবনের ঠিক পরেই, ঈশ্বর মানবজাতিকে জীবনের পবিত্রতা, হত্যা, মৃত্যুদণ্ড এবং রক্ত ভক্ষন সম্পর্কীয় আইনগুলি দেন। (আদিপুস্তক ৯:৩-৬) যিহোবা ব্যভিচারকে খুব কঠোরভাবে নিন্দা করেন সেই ঘটনার সময়, যাতে জড়িত ছিল অব্রাহাম, সারা, এবং অবীমেলক, যিনি ছিলেন গরারের রাজা, যে স্থান ঘসার নিকটবর্তি।—আদিপুস্তক ২০:১-৭.

৯, ১০. কী উদাহরণ দেখায় যে কুলপতিদের সমাজেও আইন ব্যবস্থা অস্তিত্বে ছিল?

৯ সেই সময় যারা কুলপতি ছিলেন তারা বিচারকর্তা হিসাবে কাজ করতেন এবং আইন সম্পর্কীয় সমস্যার সমাধান করতেন। যিহোবা অব্রাহামের বিষয় বলেন: “কেননা আমি তাহাকে জানিয়াছি, যেন সে আপন ভাবী সন্তানগণকে ও পরিবারদিগকে আদেশ করে, যেন তাহারা ধর্ম্মসঙ্গত ও ন্যায্য আচরণ করিতে করিতে যিহোবার পথে চলে।” (আদিপুস্তক ১৮:১৯, NW) তার পশুপালকগণ ও লোটের পশুপালকদের মধ্যে বিবাদের সমাধানে অব্রাহাম নিঃস্বার্থপরতা এবং বিচক্ষণতা দেখান। (আদিপুস্তক ১৩:৭-১১) একজন কুলপতি ও বিচারকর্তা হিসাবে, যিহূদা তার পুত্রবধূ তামরকে দণ্ড দেন যেন তাকে পাথর মেরে পুড়িয়ে ফেলা হয়, কারণ তিনি মনে করেছিলেন সে ব্যভিচারিণী। (আদিপুস্তক ৩৮:১১, ২৪; তুলনা করুন যিহোশূয়ের পুস্তক ৭:২৫.) যখন তিনি সমস্ত ঘটনা জানলেন, তখন তাকে তার থেকেও অধিক ধার্মিক বলে রায় দেন। (আদিপুস্তক ৩৮:২৫, ২৬) তাই কোন বিচারসংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার পূর্বে সকল তথ্য জানা কত গুরুত্বপূর্ণ!

১০ ইয়োবের পুস্তক এক বিচার ব্যবস্থাকে পরোক্ষভাবে উল্লেখ করে এবং পক্ষপাতহীন বিচারের আকাঙ্ক্ষাকে তুলে ধরে। (ইয়োব ১৩:৮, ১০; ৩১:১১; ৩২:২১) ইয়োব স্মরণে আনেন সেই সময়ের কথা যখন তিনি একজন সম্মানিত বিচারকর্তা ছিলেন যিনি নগরের দ্বারে বসে ন্যায়বিচার করতেন এবং বিধবা ও পিতৃহীন বালকের অধিকার রক্ষা করতেন। (ইয়োব ২৯:৭-১৬) তাই, প্রমাণ রয়েছে যে এমনকি ইস্রায়েল জাতির মিশর থেকে প্রস্থান ও তাদের ঈশ্বর-দত্ত নিয়মাবলী পাওয়ার বহু পূর্বে কুলপতিদের সমাজে, “প্রাচীন ব্যক্তিরা” অব্রাহামের বংশধরদের মধ্যে বিচারকর্তা হিসাবে কাজ করতেন। (যাত্রাপুস্তক ৩:১৬, ১৮) বাস্তবে, নিয়ম চুক্তির চাহিদাগুলি মোশি ইস্রায়েলের “প্রাচীনবর্গ” বা প্রাচীনদের কাছে উপস্থাপনা করেন যারা লোকদের প্রতিনিধিত্ব করতেন।—যাত্রাপুস্তক ১৯:৩-৭.

ইস্রায়েলের বিচার পদ্ধতি

১১, ১২. বাইবেলের দুইজন পণ্ডিতের মতে, কী ইস্রায়েলের বিচার ব্যবস্থাকে অন্য সব জাতিদের থেকে আলাদা করে?

১১ ইস্রায়েল জাতির মধ্যে যে বিচার পদ্ধতি প্রয়োগ করা হত তা চারিপাশের অন্য জাতিগুলির বিচার পদ্ধতি থেকে অনেক আলাদা ছিল। নাগরিক আইন ও অপরাধমূলক আইনের মধ্যে কোন পার্থক্য ছিল না। উভয় আইনেই নৈতিক ও ধর্মীয় আইনগুলিকে একত্রিত করা হয়েছিল। কারুর প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে অপরাধ, যিহোবার বিরুদ্ধে অপরাধ গণ্য করা হত। তার বইয়ে সেই লোক ও বাইবেলের বিশ্বাস (The People and the Faith of the Bible) লেখক আন্দ্রে শুরাকি লেখেন: “ইব্রীয়দের আইনগত প্রথা তাদের প্রতিবেশীদের থেকে আলাদা ছিল, কেবল যে আইন ভঙ্গের বিশ্লেষণ ও দণ্ড আলাদা ছিল তা নয় কিন্তু প্রকৃত অর্থেই তা আলাদা ছিল। . . . তোরা [আইন] তাদের দৈনন্দিন জীবন থেকে পৃথক ছিল না; তার প্রভাবে প্রতি দিনের জীবনের উপর আসত হয় আশীর্বাদ না হয় অভিশাপ। . . . ইস্রায়েলে . . . নগরের আইনের কার্য্যকলাপ তাকে আলাদা করে দেখা প্রায় অসম্ভব বললেই চলত। তারা এমন এক জীবনধারায় বদ্ধ ছিল যে জীবনের একতা সম্পূর্ণরূপে স্থাপিত ছিল জীবন্ত ঈশ্বরের ইচ্ছা পালনের উপর।”

১২ এই অদ্বিতীয় পরিবেশ ইস্রায়েলের ন্যায়বিচার ব্যবস্থাকে তাদের সমসাময়িক যে কোন জাতির থেকে অনেক উচ্চে স্থাপন করে। বাইবেল পণ্ডিত রোল্যান ডি ভ লেখেন: “ইস্রায়েলীয় আইন, গঠন ও প্রকৃতিতে সাদৃশ্য থাকা সত্ত্বেও তা, প্রাচ্যদেশীয় আইনের ‘বিধানগুলি’ এবং ‘চুক্তিগুলি’ থেকে একেবারে আলাদা ছিল। ইহা এক ধর্মীয় আইন। . . . প্রাচ্যের কোন আইনকে ইস্রায়েলীয়দের আইনের সাথে তুলনা করা যাবে না, যার সম্পূর্ণ স্রষ্টা ধরা হয় ঈশ্বরকে। আর যদিও এর মধ্যে আছে, নৈতিক ও আচার অনুষ্ঠানের মিশ্রণ, এর কারণ হল যে ইহা সমস্ত ঐশিক নিয়ম চুক্তিকে আচ্ছাদন করে, আর যেহেতু এই নিয়ম মানুষের একে অপরের সাথে সম্বন্ধকে এবং ঈশ্বরের সাথে তাদের সম্বন্ধকেও পরিচালনা করে।” আশ্চর্য্যের বিষয় নয় যে মোশি জিজ্ঞাসা করেন: “আর আমি অদ্য তোমাদের সাক্ষাতে যে সমস্ত ব্যবস্থা দিতেছি, তাহার মত যথার্থ বিধি ও শাসন কোন্‌ বড় জাতির আছে?”—দ্বিতীয় বিবরণ ৪:৮.

ইস্রায়েলের বিচারকর্তাগণ

১৩. কোন্‌ বিষয়গুলিতে মোশি আজকের প্রাচীনদের জন্য উত্তম উদাহরণ?

১৩ এত উচ্চ এক আইন ব্যবস্থা থাকার কারণে, কী ধরণের ব্যক্তির প্রয়োজন ছিল যারা বিচারকর্তা হিসাবে কাজ করতে পারেন? ইস্রায়েলে, যে প্রথম বিচারকর্তাকে মনোনীত করা হয় তার সম্বন্ধে বাইবেল বলে: “ভূমণ্ডলস্থ মনুষ্যদের মধ্যে সকল অপেক্ষা মোশি লোকটি অতিশয় মৃদুশীল ছিলেন।” (গণনাপুস্তক ১২:৩) তিনি অতিমাত্রায় নিজের উপর নির্ভর করতেন না। (যাত্রাপুস্তক ৪:১০) যদিও লোকেদের বিচার তাকে করতে হত, এক এক সময় তিনি তাদের হয়ে যিহোবার কাছে ওকালতি করেন, তাঁর কাছে বিনতি করেন যেন তিনি তাদের ক্ষমা করেন এবং এমনকি নিজেকে তাদের বদলে উৎসর্গ করতেও চান। (যাত্রাপুস্তক ৩২:১১, ৩০-৩২) তিনি কাব্যিক ছন্দে বলেন: “আমার কথা শিশিরের ন্যায় ক্ষরিবে, তৃণের উপরে পতিত বিন্দু বিন্দু বৃষ্টির ন্যায়, শাকের উপরে পতিত জলধারার ন্যায়।” (দ্বিতীয় বিবরণ ৩২:২) তার নিজের প্রজ্ঞার উপর নির্ভর দ্বারা লোকেদের বিচার করা থেকে দূরে থেকে, তিনি ঘোষণা করেন: “তাদের কোন বিবাদ হইলে তাহা আমার কাছে উপস্থিত হয়, আর আমি বাদী প্রতিবাদীর বিচার করি, এবং ঈশ্বরের বিধি ও ব্যবস্থা সকল তাহাদিগকে জ্ঞাত করি।” (যাত্রাপুস্তক ১৮:১৬) যখন তার সন্দেহ হত, সে বিষয়টি তিনি যিহোবার নিকটে সঁপে দিতেন। (গণনাপুস্তক ৯:৬-৮; ১৫:৩২-৩৬; ২৭:১-১১) আজ যে প্রাচীনেরা ‘ঈশ্বরের পালকে পরিচালনা দেন’ এবং আইনগত মীমাংসা করেন তাদের জন্য মোশি এক উত্তম উদাহরণ। (প্রেরিত ২০:২৮) তাদের সম্পর্ক তাদের ভাইদের সাথে যেন “তৃণের উপরে পতিত বিন্দু বিন্দু বৃষ্টির ন্যায়” হয়।

১৪. যে পুরুষদের মোশি ইস্রায়েলে বিচারকর্তা নিযুক্ত করেন তাদের আত্মিক গুণাবলী কী ছিল?

১৪ এমন সময় আসে যখন মোশি আর একা লোকেদের বিচারভার বহন করতে পারেন না। (যাত্রাপুস্তক ১৮:১৩, ১৮) তিনি তার শ্বশুরের সাহায্য নেওয়ার পরামর্শ গ্রহণ করেন। আবার, কী ধরণের লোকেদের মনোনীত করা হয়? আমরা পড়ি: “‘তুমি লোকদের মধ্য হইতে কার্য্যদক্ষ পুরুষদিগকে, ঈশ্বরভীত, সত্যবাদী ও অন্যায়-লাভ-ঘৃণাকারী ব্যক্তিদিগকে মনোনীত কর।’ . . . ফলতঃ মোশি সমস্ত ইস্রায়েল হইতে কার্য্যদক্ষ পুরুষদিগকে মনোনীত করিয়া লোকদের উপরে প্রধান, অর্থাৎ সহস্রপতি, শতপতি, পঞ্চাশৎপতি ও দশপতি করিয়া নিযুক্ত করিলেন। তাঁহারা সকল সময়ে, লোকদের বিচার করিতেন; কঠিন বিচার সকল মোশির কাছে আনিতেন, কিন্তু ক্ষুদ্র কথা সকলের বিচার আপনারাই করিতেন।”—যাত্রাপুস্তক ১৮:২১-২৬, NW.

১৫. যারা ইস্রায়েলের বিচারকর্তা হিসাবে কাজ করেন তাদের গুণাবলী কী ছিল?

১৫ আমরা লক্ষ্য করতে পারি যে বিচারকর্তা বাছাই করার জন্য বয়সই একমাত্র মানদণ্ড ছিল না। মোশি বলেন: “তোমরা আপন আপন বংশের মধ্যে জ্ঞানবান, বুদ্ধিমান্‌ ও পরিচিত লোকদিগকে মনোনীত কর, আমি তাহাদিগকে তোমাদের অধ্যক্ষরূপে নিযুক্ত করিব।” (দ্বিতীয় বিবরণ ১:১৩) বহু বৎসর পূর্বে যুবক ইলীহূ যা বলেছিলেন মোশি তার সাথে ভাল ভাবে পরিচিত ছিলেন: “মহতেরাই যে জ্ঞানবান, তাহা নয়, প্রাচীনেরাই যে বিচার বোঝেন, তাহাও নয়।” (ইয়োব ৩২:৯) অবশ্যই, যাদের মনোনীত করা হবে তাদের “অভিজ্ঞ ব্যক্তি” হতে হবে। কিন্তু সবকিছুর উর্দ্ধে তাদের হতে হবে কর্মদক্ষ, ঈশ্বর-ভয়শীল, বিশ্বাসযোগ্য, যারা অন্যায় মুনাফাকে ঘৃণা করবে এবং যারা বিজ্ঞ ও বুদ্ধিমান। সেইকারণে, ইহা স্পষ্ট হয়, যিহোশূয়ের পুস্তকে ২৩:২ ও ২৪:১-এ যে “অধ্যক্ষগণ” ও “বিচারকর্ত্তৃগণের” কথা বলা আছে তারা এই পদগুলিতেই যে “প্রাচীনবর্গ” সম্বন্ধে বলা আছে তাদের থেকে আলাদা নয় কিন্তু তাদের মধ্য থেকেই মনোনীত করা হত।—দখুন ইনসাইট অন্‌ দ্যা স্ক্রিপচারস, ভলিউম ২, পৃষ্ঠা ৫৪৯.

ন্যায়বিচার প্রদান করা

১৬. মোশি নতুন মনোনীত বিচারকর্তাদের যে আদেশ দেন বর্তমানে আমরা সেই সম্বন্ধে কী লক্ষ্য করতে পারি?

১৬ যে আদেশ মনোনীত এই বিচারকর্তাদের দেওয়া হয়, সেই সম্বন্ধে মোশি বলেন: “আর তৎকালে তোমাদের বিচারকর্ত্তাদিগকে এই আজ্ঞা করিলাম, তোমরা তোমাদের ভ্রাতাদের কথা শুনিয়া বাদীর ও তাহার ভ্রাতার কি সহবাসী বিদেশীর মধ্যে ন্যায্য বিচার করিও। তোমরা বিচারে কাহারও মুখাপেক্ষা করিবে না; সমভাবে ক্ষুদ্র ও মহান্‌ উভয়ের কথা শুনিবে; মনুষ্যের মুখ দেখিয়া ভয় করিবে না, কেননা বিচার ঈশ্বরের; এবং যে কথা তোমাদের পক্ষে কঠিন, তাহা আমার [মোশির] কাছে আনিবে, আমি তাহা শুনিব।”—দ্বিতীয় বিবরণ ১:১৬, ১৭.

১৭. কাদের বিচারকর্তারূপে নিযুক্ত করা হয়, এবং রাজা যিহোশাফট তাদের কী সাবধানবাণী দেন?

১৭ অবশ্যই, মোশি যতদিন জীবিত ততদিনই এমন কোন কেস তার কাছে আনা যেতে পারে। সেইজন্য আরও ব্যবস্থা করা হয় যাতে কঠিন যে কেস আছে সেগুলি যাজক, লেবীয়, এবং বিশেষ ভাবে নিযুক্ত বিচারকর্তাদের নিকটে নিয়ে যাওয়া হয়। (দ্বিতীয় বিবরণ ১৭:৮-১২; ১ বংশাবলি ২৩:১-৪; ২ বংশাবলি ১৯:৫, ৮) যে বিচারকর্তাদের রাজা যিহোশাফট যিহূদার নগরগুলির উপর মনোনীত করেন, তাদের উদ্দেশ্যে বলেন: “তোমরা যাহা করিবে, সাবধান হইয়া করিও; কেননা তোমরা মনুষ্যদের জন্য নয় কিন্তু যিহোবার জন্য বিচার করিবে। . . . তোমরা যিহোবার ভয়ে বিশ্বস্ত ভাবে একাগ্রচিত্তে এইরূপ কার্য্য কর। . . . যে কোন বিচার আপন আপন নগরে বাসকারী তোমাদের ভ্রাতাদের দ্বারা তোমাদের নিকটে উপস্থিত হয়, তদ্বিষয়ে তাহাদিগকে উপদেশ দিবে, পাছে তাহারা যিহোবার বিরুদ্ধে দোষী হয়, আর তোমাদের উপরে ও তোমাদের ভ্রাতাদের উপরে ক্রোধ বর্ত্তে; ইহা করিও, তাহা হইলে তোমরা দোষী হইবে না।”—২ বংশাবলি ১৯:৬-১০, NW.

১৮. (ক) ইস্রায়েলের বিচারকর্তাদের কতগুলি কী নীতি ব্যবহার করতে হত? (খ) বিচারকর্তাদের কী স্মরণে রাখতে হত, এবং কোন শাস্ত্রগুলি দেখায় যে তাদের এই বিষয় ভুলে যাওয়ার ফল কী হয়?

১৮ যে নীতিগুলি ইস্রায়েলীয় বিচারকর্তাদের প্রয়োগ করতে হত তা হল: ধনী ও দরিদ্রের জন্য সমান বিচার (যাত্রাপুস্তক ২৩:৩, ৬; লেবীয় পুস্তক ১৯:১৫); কঠোর পক্ষপাতশূন্যতা (দ্বিতীয় বিবরণ ১:১৭); কোন উৎকোচ নেওয়া চলবে না। (দ্বিতীয় বিবরণ ১৬:১৮-২০) বিচারকর্তাদের সব সময় মনে রাখতে হত যে তারা যাদের বিচার করছে তারা যিহোবার মেষ। (গীতসংহিতা ১০০:৩) বাস্তবে, একটি কারণ যিহোবা কেন মাংসিক ইস্রায়েলকে পরিত্যাগ করেন তাহল তাদের যাজক ও পালকেরা ধার্মিকতায় লোকদের বিচার করতে ব্যর্থ হয় এবং লোকদের সাথে কঠোর ব্যবহার করে।—যিরমিয় ২২:৩, ৫, ২৫; ২৩:১, ২; যিহিষ্কেল ৩৪:১-৪; মালাখি ২:৮, ৯.

১৯. সাধারণ শতাব্দীর পূর্বে যিহোবার বিচার ব্যবস্থার এই মান পরীক্ষার কী মূল্য আমাদের কাছে আছে, এবং পরবর্তি প্রবন্ধে কী বিবেচিত হবে?

১৯ যিহোবার পরিবর্তন হয় না। (মালাখি ৩:৬) এই সংক্ষিপ্ত আলোচনা যে ইস্রায়েলে কিভাবে বিচার প্রয়োগ উচিৎ ছিল এবং যিহোবা কিভাবে কোন ন্যায়বিচার অগ্রাহ্য করাকে দেখতেন তা প্রাচীনদের যারা আজ বিচারসংক্রান্ত নিষ্পত্তি করার জন্য ভারপ্রাপ্ত রয়েছেন তাদের চিন্তা করার বিষয়। বিচারকর্তা হিসাবে যিহোবার উদাহরণ, এবং যে বিচারব্যবস্থা তিনি ইস্রায়েলে স্থাপন করেছিলেন, তা খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীর ভিতরে ন্যায়বিচার প্রয়োগের নমুনাস্বরূপ নীতিগুলি স্থাপন করে। এই বিষয় আমরা পরবর্তী প্রবন্ধে দেখব। (w92 7/1)

পুনরালোচনার প্রশ্ন

▫ যিহোবা যেভাবে বিচার করেন তার সারাংশ কী করা যেতে পারে?

▫ যিহোবার ব্যবস্থা কিভাবে উদাহরণস্বরূপ হয় কয়িন এবং প্লাবনের পূর্ববর্তী বংশের ক্ষেত্রে?

▫ কুলপতিদের সময় কারা বিচারকর্তা হিসাবে কাজ করতেন, ও কিভাবে?

▫ ইস্রায়েলের বিচার ব্যবস্থাকে কী অন্য জাতিদের থেকে আলাদা করে?

▫ কী ধরনের পুরুষদের ইস্রায়েলে বিচারকর্তা মনোনীত করা হত, এবং তাদের কী নীতিগুলি অনুসরণ করতে হত?

[Pictures on page 10]

কুলপতিদের সময় এবং ইস্রায়েলে, মনোনীত প্রাচীন ব্যক্তিরা নগরের দ্বারে ন্যায়বিচার প্রদান করতেন

    বাংলা প্রকাশনা (১৯৮৯-২০২৬)
    লগ আউট
    লগ ইন
    • বাংলা
    • শেয়ার
    • পছন্দসমূহ
    • Copyright © 2025 Watch Tower Bible and Tract Society of Pennsylvania
    • ব্যবহারের শর্ত
    • গোপনীয়তার নীতি
    • গোপনীয়তার সেটিং
    • JW.ORG
    • লগ ইন
    শেয়ার