ওয়াচটাওয়ার অনলাইন লাইব্রেরি
ওয়াচটাওয়ার
অনলাইন লাইব্রেরি
বাংলা
  • বাইবেল
  • প্রকাশনাদি
  • সভা
  • w৯৯ ১/১৫ পৃষ্ঠা ২৮-৩১
  • “সিরিয়ার কালো কেশী সম্রাজ্ঞী”

এই বাছাইয়ের সঙ্গে কোনো ভিডিও প্রাপ্তিসাধ্য নেই।

দুঃখিত, ভিডিওটা চালানো সম্বভব হচ্ছে না।

  • “সিরিয়ার কালো কেশী সম্রাজ্ঞী”
  • ১৯৯৯ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • উপশিরোনাম
  • অনুরূপ বিষয়বস্ত‌ু
  • মরুভূমির প্রান্তে একটা শহর
  • জেনোবিয়া একটা সাম্রাজ্য গড়ে তুলতে চান
  • একজন সম্রাট জেনোবিয়ার বিরুদ্ধে ‘আপন চিত্ত উত্তেজিত করেন’
  • মরুভূমির শহরটি ধ্বংস হয়ে যায়
  • কারা শেষকালে “উত্তর দেশের রাজা” হয়ে ওঠে?
    প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য সম্বন্ধে ঘোষণা করে (অধ্যয়ন)—২০২০
১৯৯৯ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
w৯৯ ১/১৫ পৃষ্ঠা ২৮-৩১

“সিরিয়ার কালো কেশী সম্রাজ্ঞী”

তার গায়ের রং ফর্সা আর তিনি ছিলেন কাজল কাল নজর কাড়া দুটি চোখের অধিকারিনী এবং তার দাঁতগুলো ছিল মুক্তোর মতো সাদা। তিনি শিক্ষিতা ছিলেন এবং অনেক ভাষা জানতেন। বলা হয়ে থাকে যে এই সাহসী রানি, ক্লিওপেট্রার চেয়েও বুদ্ধিমতি আর রূপেগুণেও হয়তো তার মতোই ছিলেন। তার সময়ের বিশ্বশক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর ফলে তিনি শাস্ত্রের একটা ভাববাণীমূলক ভূমিকা পূর্ণ করেছিলেন। তার মৃত্যুর অনেক বছর পর, লেখকেরা তার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন এবং শিল্পীদের তুলির স্পর্শে তিনি যত না সুন্দরী ছিলেন তার চেয়েও অপরূপা হয়ে উঠেছিলেন। উনবিংশ শতাব্দীর একজন কবি তাকে “সিরিয়ার কালো কেশী সম্রাজ্ঞী” বলে ভূষিত করেছিলেন। এই উচ্চ প্রশংসার পাত্রীটি ছিলেন সিরিয়ার পালমাইরা শহরের রানি—জেনোবিয়া।

কিভাবে জেনোবিয়া এত বিখ্যাত হয়েছিলেন? কোন্‌ রাজনৈতিক পরিস্থিতি তাকে ক্ষমতায় আসতে সাহায্য করেছিল? তার চরিত্র সম্পর্কে কী বলা যায়? আর এই রানি কোন্‌ ভবিষ্যদ্বাণীমূলক ভূমিকা পূর্ণ করেছিলেন? প্রথমে, ভৌগলিক পরিবেশটি বিবেচনা করুন যা এই ঘটনাকে স্পষ্ট করে তুলবে।

মরুভূমির প্রান্তে একটা শহর

জেনোবিয়া পালমাইরা শহরে বাস করতেন। পালমাইরা শহর সিরিয়া মরুভূমির উত্তরপূর্ব প্রান্তে দম্মেশকের প্রায় ২১০ কিলোমিটার উত্তরপূর্বাঞ্চলে অবস্থিত, যেখানে লেবাননের অপর দিকের পাহাড়গুলো ঢালু হয়ে সমভূমিতে মিশে গেছে। এই মরূদ্যান শহরের পশ্চিমে ভূমধ্যসাগর এবং পূর্বে ইউফ্রেটিস নদী ছিল। রাজা শলোমনের কাছে এই শহরটি হয়তো তদ্‌মোর নামে পরিচিত ছিল আর তার রাজ্যের মঙ্গলের জন্য এই শহরটি দুই দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল: দেশের উত্তর সীমান্তে আক্রমণ প্রতিরোধ করার জন্য এই শহর একটা ঘাঁটি হিসাবে কাজ করেছিল এবং মরুভূমির শহরগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ ব্যবস্থায় সাহায্য করেছিল। এজন্যই শলোমন “প্রান্তরে তদ্‌মোর নগর নির্ম্মাণ করিলেন।”—২ বংশাবলি ৮:৪.

রাজা শলোমনের রাজত্বের পর থেকে তদ্‌মোরের এক হাজার বছরের ইতিহাস সম্বন্ধে কিছুই জানা যায় না। পালমাইরার কথা যদি সঠিকভাবে বলা হয় তবে বলতে হবে, সিরিয়া সা.কা.পূ. ৬৪ সালে রোমীয় সাম্রাজ্যের প্রধান ঘাঁটি হওয়ার পরই পালমাইরার সুখ্যাতি চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। রিচার্ড স্টোনম্যান তার বই পালমাইরা ও এর সাম্রাজ্য—রোমের বিরুদ্ধে জেনোবিয়ার বিদ্রোহ (ইংরাজি) বইয়ে বলেন: “অর্থনৈতিক ও সামরিক—এই দুই দিক দিয়ে রোমের জন্য পালমাইরা গুরুত্বপূর্ণ ছিল।” পামগাছে ভরা এই শহর যেহেতু রোমের সঙ্গে মেসোপটেমিয়া ও পূর্বাঞ্চলে যোগাযোগের প্রধান বাণিজ্যিক পথ ছিল তাই প্রাচীন বিশ্বের মূল্যবান বাণিজ্যিক পণ্য এই পথে আনা নেওয়া করা হতো। যেমন, পশ্চিমভারতীয় দ্বীপপুঞ্জ থেকে মশলা, চীন থেকে রেশম আর পারস্য, মেসোপটেমিয়া ও ভূমধ্যসাগীয় অঞ্চলের নিচু অঞ্চল থেকে অন্যান্য সামগ্রী। রোমের অর্থনীতি এসব সামগ্রী আমদানির উপরই টিকে ছিল।

সিরিয়া এমন একটা স্থান ছিল যা রোম আর এর প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তি পারস্যের মাঝখানে ছিল আর তাই সেখান দিয়ে পারস্য রোমকে আক্রমণ করতে পারত না। সাধারণ কালের ২৫০ সালে ইউফ্রেটিস নদী রোম শহরকে এর পশ্চিমাঞ্চলের প্রতিবেশী শহর থেকে আলাদা করেছিল। পালমাইরা শহরটি ইউফ্রেটিস নদীর তীরবর্তী শহর ডুরা-ইউরোপসের পশ্চিমে ঠিক মরুভূমির অপর পারে অবস্থিত ছিল। এর গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান বিবেচনা করে হ্যাড্রিয়ান ও ভ্যালেরিয়ানের মতো রোমীয় সম্রাটেরা পালমাইরা শহর দেখতে গিয়েছিলেন। হ্যাড্রিয়ান এই শহরে চমৎকার চমৎকার স্থাপত্যশিল্প নির্মাণ করিয়েছিলেন এবং উদারভাবে দানও দিয়েছিলেন। ভ্যালেরিয়ান, সা.কা. ২৫৮ সালে অডিয়েনথাস নামে পালমাইরার একজন বিখ্যাত লোককে রোমের কনসল পদে অধিষ্ঠিত করে পুরস্কৃত করেন, কারণ তিনি পারস্যের বিরুদ্ধে এক সফল সামরিক অভিযান চালিয়েছিলেন এবং রোমীয় সাম্রাজ্যের সীমানাকে মেসোপটেমিয়া পর্যন্ত বাড়িয়েছিলেন। এই অডিয়েনথাসই ছিলেন জেনোবিয়ার স্বামী। তার স্বামীর ক্ষমতা পাওয়ার পিছনে জেনোবিয়ার এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। ইতিহাসবেত্তা এডওয়ার্ড গিবোন লিখেছিলেন: “অডিয়েনথাসের সাফল্যের পিছনে তার [জেনোবিয়ার] অসাধারণ বিচক্ষণতা ও সাহসী মনোবল এক বিরাট অবদান রেখেছিল।”

এরই মধ্যে পারস্য রাজ শেপোর রোমীয় সাম্রাজ্যের সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার সিদ্ধান্ত নেন এবং পারস্যের প্রাক্তন প্রদেশগুলোতে তার সার্বভৌমত্ব ঘোষণা করেন। এক অদমনীয় সেনাবাহিনী নিয়ে তিনি পশ্চিমাঞ্চলে পাড়ি জমান, রোমের সামরিক ঘাঁটি হিসাবে ব্যবহৃত নিসেবিস ও কারে (হারণ) শহরগুলো দখল করেন, তারপর সিরিয়ার উত্তরাঞ্চল ও কিলিকিয়াকে ধ্বংস করার জন্য এগিয়ে যান। সম্রাট ভ্যালেরিয়ান তার সেনাবাহিনীকে নিয়ে আক্রমণকারীদেরকে প্রতিরোধ করার জন্য এগিয়ে আসলেও তিনি পরাজিত হন এবং পারসিকদের হাতে বন্দি হন।

সেই সময় অডিয়েনথাস পারস্য রাজকে দামি উপহার ও শান্তির বার্তা পাঠানোকে উপযুক্ত বলে মনে করেন। এতে রাজা শেপোর তেলেবেগুনে জ্বলে উঠেন ও সেই উপহারগুলো ইউফ্রেটিস নদীতে ফেলে দেওয়ার আদেশ দেন এবং অডিয়েনথাসকে বন্দি করে তার সামনে হাজির করতে বলেন। এর জবাবে পালমাইরার লোকেরা মরুভূমির যাযাবর এবং রোমীয় বাহিনীর অবশিষ্ট সেনাদের একত্র করেন আর পলায়নরত পারসিকদের আক্রমণ করতে থাকেন। মরুভূমির যোদ্ধাদের দ্রুত ও আকস্মিক আক্রমণের মুখে, শেপোরের সেনাবাহিনী দুর্বল হয়ে পড়ে এবং লুটপাটের স্বীকার হয় আর এই আক্রমণ ঠেকানোর মতো যথেষ্ট শক্তি না থাকায় তারা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।

শেপোরের উপর অডিয়েনথাসের বিজয়ের স্বীকৃতি হিসাবে, ভ্যালেরিয়ানের পুত্র ও উত্তরাধিকারী, গ্যালিনাস তাকে করেকটার টটিয়াস অরিয়েনটিস (সমগ্র প্রাচ্যের শাসক) উপাধিতে ভূষিত করেন। কিছুদিনের মধ্যে অডিয়েনথাস নিজেকে “রাজাদের রাজা” বলে ঘোষণা করেন।

জেনোবিয়া একটা সাম্রাজ্য গড়ে তুলতে চান

সা.কা. ২৬৭ সালে অডিয়েনথাসের শাসনের চূড়ান্ত পর্যায়ে তাকে ও তার বড় ছেলেকে সম্ভবত তারই এক প্রতিহিংসাপরায়ণ ভাইপো হত্যা করেন। জেনোবিয়া তার স্বামীর পদে অধিষ্ঠিত হন কারণ তখন তার ছেলে অনেক ছোট ছিল। সুন্দরী, উচ্চাকাঙ্ক্ষী, দক্ষ নেত্রী, যিনি প্রয়াত স্বামীর সঙ্গে সামরিক অভিযানে অংশ নিতে অভ্যস্ত ছিলেন এবং কয়েকটা ভাষায় পারদর্শী হওয়ায় তিনি তার প্রজাদের সম্মান ও সমর্থন আদায় করেছিলেন আর এতসব পাওয়া বেদুইনদের জন্য সত্যিই বিশেষ কিছু ছিল। শেখার প্রতি প্রবল আকাঙ্ক্ষা থাকায় জেনোবিয়া বিদ্বান ব্যক্তিদের সঙ্গে মেলামেশা করতে পছন্দ করতেন। তার উপদেষ্টাদের মধ্যে একজন ছিলেন দার্শনিক ও বক্তা কসিয়াস লঙ্গিনাস—যাকে “এক জীবন্ত পাঠাগার ও জ্ঞানভাণ্ডার” বলা হতো। লেখক স্টোনম্যান বলেন: “অডিয়েনথাসের মৃত্যুর পর পাঁচ বছরের মধ্যে . . . জেনোবিয়া প্রাচ্যের সম্রাজ্ঞী হিসাবে লোকেদের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছিলেন।”

জেনোবিয়ার রাজ্যের একদিকে ছিল পারস্য, যে অঞ্চলকে তিনি ও তার স্বামী দুর্বল করে দিয়েছিলেন আর অন্যদিকে ছিল পতিত রোম। রোমীয় সাম্রাজ্যের তখনকার অবস্থা সম্বন্ধে ইতিহাসবেত্তা জে. এম রবার্টস্‌ বলেন: “তৃতীয় শতাব্দী . . . গোটা রোমের জন্য এক দুঃসময় ছিল, কারণ সেখানে গৃহযুদ্ধ ও সম্রাটদের মধ্যে উত্তরাধিকার নিয়ে কলহ শুরু হয়েছিল। (সিংহাসনের মিথ্যা দাবিদারেরা বাদে) মোট বাইশ জন সম্রাট শাসন করেছিলেন।” অন্যদিকে সিরিয়ার সম্রাজ্ঞী তার রাজ্যে সুপ্রতিষ্ঠিত সর্বময় ক্ষমতার অধিকারিণী ছিলেন। স্টোনম্যান বলেন, “[পারস্য ও রোমীয়] সাম্রাজ্যের শক্তির মধ্যে ভারসাম্য আনার জন্য তিনি এমন আরেকটা সাম্রাজ্য গড়ে তুলতে পারতেন যা ওই দুটি সাম্রাজ্যের উপর রাজত্ব করবে।”

সাধারণ কালের ২৬৯ সালে জেনোবিয়ার রাজকীয় ক্ষমতা বাড়ানোর একটা সুযোগ আসে যখন মিশরে একজন ব্যক্তি রোমীয় শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন। জেনোবিয়ার সেনাবাহিনী তাড়াতাড়ি মিশরে যান, বিদ্রোহীকে হত্যা করেন এবং সেই দেশ দখল করে নেন। নিজেকে মিশরের রানি বলে ঘোষণা করে তিনি তার নামে মুদ্রা তৈরি করান। তার রাজ্যের সীমা তখন নীল নদ থেকে ইউফ্রেটিস নদী পর্যন্ত প্রসারিত হয়। তার জীবনের এই পর্যায়ে এসে তিনি বাইবেলের দানিয়েল পুস্তকে লেখা ‘দক্ষিণ দেশের রাজা’ হিসাবে প্রমাণিত হন, কেননা তার রাজ্য তখন দানিয়েলের জন্মভূমি থেকে দক্ষিণাঞ্চলে ছিল। (দানিয়েল ১১:২৫, ২৬) এছাড়াও তিনি এশিয়া মাইনরের বেশিরভাগ অঞ্চল জয় করেছিলেন।

জেনোবিয়া তার রাজধানী পালমাইরাকে এতটা শক্তিশালী করেছিলেন ও অপূর্ব করে সাজিয়েছিলেন যে তা রোমীয় সাম্রাজ্যের বড় বড় শহরের মধ্যে একটিতে পরিণত হয়। এর জনসংখ্যা ১,৫০,০০০ জনেরও বেশি ছিল। ওই শহরের আনাচে কানাচেতে অনেক বড় বড় অট্টালিকা, মন্দির, বাগান, দুর্গ ও স্মৃতিসৌধ ছিল এবং কথিত আছে যে শহর বেষ্টনকারী প্রাচীরের পরিধি ২১ কিলোমিটার ছিল। প্রধান প্রবেশ পথের পাশ দিয়ে ১৫ মিটারের চেয়েও উঁচু প্রায় ১,৫০০টা করিন্থীয় স্তম্ভ সমান দূরত্বে সারি দিয়ে স্থাপিত ছিল। ওই শহরে বীর ও ধনী দাতাদের প্রচুর ভাস্কর্য এবং আবক্ষ মূর্তি ছিল। সা.কা. ২৭১ সালে জেনোবিয়া তার নিজের ও তার প্রয়াত স্বামীর মূর্তি নির্মাণ করেন। মরুভূমির প্রান্তে পালমাইরা একটা রত্নের মতো জ্বলজ্বল করত।

সূর্যের মন্দির ছিল পালমাইরার সবচেয়ে সুন্দর অট্টালিকাগুলোর মধ্যে একটা এবং এই বিষয়ে কোন সন্দেহই নেই যে তা এই শহরের ধর্মের উপর এক বিরাট প্রভাব ফেলেছিল। সম্ভবত, জেনোবিয়াও সূর্য দেবতার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কোন দেবতার উপাসনা করতেন। কিন্তু তৃতীয় শতাব্দীতে সিরিয়ায় অনেক ধর্ম প্রচলিত ছিল। জেনোবিয়ার সাম্রাজ্যে নামধারী খ্রীষ্টান, যিহূদী, জ্যোতির্বিদ এবং সূর্য ও চন্দ্রের উপাসকেরা ছিলেন। নিজের রাজ্যের বিভিন্ন ধর্মের প্রতি তার মনোভাব কেমন ছিল? লেখক স্টোনম্যান বলেন: “একজন বুদ্ধিমান শাসক কখনই সেই রীতিনীতিগুলোকে অবজ্ঞা করবেন না যা তার প্রজারা উপযুক্ত বলে মনে করেন। আশা করা হয়েছিল যে . . . পালমাইরাতে দেবতারা একতাবদ্ধ ছিলেন।” স্পষ্টত, জেনোবিয়া কারো ধর্মের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতেন না। কিন্তু দেবতারা কি আসলেই “পালমাইরাতে একতাবদ্ধ” ছিল? পালমাইরা এবং এর “বুদ্ধিমতী রানির” ভবিষ্যৎই বা কী ছিল?

একজন সম্রাট জেনোবিয়ার বিরুদ্ধে ‘আপন চিত্ত উত্তেজিত করেন’

সাধারণ কাল ২৭০ সালে অরেলিয়ান রোমের সম্রাট হন। তার সেনাবাহিনী সাফল্যের সঙ্গে উত্তর রাজ্যের বর্বর ব্যক্তিদের আক্রমণ করেন এবং নিয়ন্ত্রণে আনেন। সা.কা. ২৭১ সালে দানিয়েলের ভবিষ্যদ্বাণীর “উত্তর দেশের রাজা”-র ভূমিকায় অরেলিয়ান, ‘দক্ষিণ দেশের রাজা’ অর্থাৎ জেনোবিয়ার বিরুদ্ধে ‘আপন বল ও চিত্ত উত্তেজিত করেন।’ (দানিয়েল ১১:২৫ক) অরেলিয়ান তার কিছু সেনাবাহিনীকে সরাসরি মিশরে পাঠিয়েছিলেন এবং তার মূল সেনাবাহিনীকে এশিয়া মাইনরের ভিতর দিয়ে পূর্বাঞ্চলে পাঠিয়েছিলেন।

দক্ষিণ দেশের রাজা—শাসনরত জেনোবিয়া—অরেলিয়ানের বিরুদ্ধে জাবদাস ও জাব্বাই নামে দুজন সেনাপতির অধীনে ‘অতি পরাক্রান্ত বিস্তর সৈন্য সঙ্গে লইয়া যুদ্ধ করিয়াছিলেন।’ (দানিয়েল ১১:২৫খ) কিন্তু অরেলিয়ান মিশর দখল করে নেওয়ার পর এশিয়া মাইনর ও সিরিয়ার দিকে এগিয়ে যান। ইমেজায় (এখন হোমস্‌) জেনোবিয়া পরাজিত হন এবং পালমাইরাতে আশ্রয় নেন।

অরেলিয়ান যখন পালমাইরাকে দখল করেন তখন জেনোবিয়া সাহায্যের আশায় তার ছেলেকে নিয়ে পারস্যের উদ্দেশে রওনা হন কিন্তু ইউফ্রেটিস নদীতে রোমীয়রা তাকে বন্দি করে। সা.কা. ২৭২ সালে পালমাইরার লোকেরা আত্মসমর্পণ করে। সেখানকার অধিবাসীদের সঙ্গে অরেলিয়ান খুব ভাল ব্যবহার করেন আর সেখানকার অনেক দ্রব্য লুট করে রোমে চলে যান, যার মধ্যে ছিল সূর্য দেবতার মন্দিরের মূর্তি। রোমীয় সম্রাট জেনোবিয়াকে মৃত্যুদণ্ড দেননি আর সা.কা. ২৭৪ সালে রোমে যে বিজয়ী শোভাযাত্রা করা হয়েছিল তার প্রধান আকর্ষণ ছিলেন জেনোবিয়া যাকে বন্দী আবস্থায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। জেনোবিয়া তার জীবনের বাকিটা রোমে এক সম্মানিত গৃহিণী হিসাবে কাটিয়েছিলেন।

মরুভূমির শহরটি ধ্বংস হয়ে যায়

অরেলিয়ান পালমাইরাকে দখল করে নেওয়ার কয়েক মাস পর, পালমাইরার লোকেরা রোমীয় ঘাঁটির সৈনিকদের দলে দলে হত্যা করে। এই বিদ্রোহের খবর যখন অরেলিয়ানের কাছে পৌঁছায়, তখনই তিনি তার সৈনিকদের সেখানে যাওয়ার আদেশ দেন এবং এবারে তারা জনগণের উপর এক প্রতিশোধপরায়ণ মনোভাব নিয়ে সেখানে উপস্থিত হন। যারা এই নির্দয় হত্যা থেকে বেঁচে যায় তাদেরকে ক্রীতদাসে পরিণত করা হয়। একসময়ের গর্বিত শহর পরাস্ত হয় এবং সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায়। এভাবে এই কর্মব্যস্ত নগরী এর আগের অবস্থায় ফিরে যায় অর্থাৎ ‘প্রান্তরের তদ্‌মোর’-এ পরিণত হয়।

জেনোবিয়া যখন রোমের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান তখন তিনি ও সম্রাট অরেলিয়ান নিজেদের অজান্তেই যথাক্রমে “দক্ষিণ দেশের রাজার” ও “উত্তর দেশের রাজার” ভূমিকা পালন করেন আর এভাবেই ভবিষ্যদ্বাণীর একটি অংশ পূর্ণ করেন। যে ভবিষ্যদ্বাণীটি সেই সময় থেকে ৮০০ বছর আগে যিহোবার একজন ভাববাদী বিস্তারিতভাবে লিপিবদ্ধ করেছিলেন। (দানিয়েল ১১ অধ্যায়) জেনোবিয়া তার প্রখর ব্যক্তিত্বের দ্বারা লাখো মানুষের শ্রদ্ধাভাজন হন। কিন্তু, সবচেয়ে লক্ষণীয় বিষয় ছিল যে তিনি এমন এক রাজনৈতিক ভূমিকা পালন করেন যে বিষয়ে দানিয়েল ভাববাণী করেছিলেন। তার শাসন পাঁচ বছরের বেশি স্থায়ী হয়নি। জেনোবিয়ার রাজ্যের রাজধানী পালমাইরা আজকে একটা সামান্য গ্রাম। এমনকি রোমীয় সাম্রাজ্যও অনেক আগেই লুপ্ত হয়ে গেছে এবং আধুনিক রাজ্যগুলোর কাছে বশ্যতা স্বীকার করেছে। ভবিষ্যতে এই শক্তিগুলোর কী হবে? নিশ্চিতরূপে সেগুলোও বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণীকে পূর্ণ করবে।—দানিয়েল ২:৪৪.

[২৯ পৃষ্ঠার বাক্স]

জেনোবিয়ার কাছ থেকে কী পাওয়া গিয়েছে

পালমাইরার রানি জেনোবিয়াকে পরাজিত করে রোমে চলে আসার পর সম্রাট অরেলিয়ান সূর্য দেবতার উদ্দেশে একটি মন্দির নির্মাণ করেন। এই মন্দিরে তিনি জেনোবিয়ার শহর থেকে নিয়ে আসা সূর্য দেবতার মূর্তিগুলো রাখেন। এরপর কী হয়েছিল তা জানিয়ে, আজকে ইতিহাস (ইংরাজি) পত্রিকা বলে: “অরেলিয়ানের বড় বড় সব কাজের মধ্যে যে কাজটা সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী ছিল তা হল সা.কা. ২৭৪ সালে ২৫শে ডিসেম্বরকে প্রতিষ্ঠা করা আর এটা ছিল দক্ষিণায়নের সময় সূর্যের বার্ষিক উৎসব। এই সাম্রাজ্য যখন খ্রীষ্টান রাজ্যে পরিণত হয় তখন যে লোকেরা আগের দিনের উৎসবগুলোকে পালন করতেন তাদের কাছে নতুন ধর্মকে আরও জনপ্রিয় করে তোলার জন্য খ্রীষ্টের জন্মদিনকে এই দিনে ফেলা হয়। তাই আগ্রহের বিষয় হল সম্রাজ্ঞী জেনোবিয়ার জন্যই . . . আজ বড়দিন পালন করা হয়ে থাকে।”

[মানচিত্র/২৮, ২৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

(পুরোপুরি ফরম্যাট করা টেক্সটের জন্য এই প্রকাশনা দেখুন)

ভূমধ্যসাগর

আন্তিয়খিয়া

সিরিয়া

কারে (হারণ)

মেসোপটেমিয়া

ইউফ্রেটিস নদী

পালমাইরা

ইমেজা (হোমস্‌)

দম্মেশক

নিসেবিস

ডুরা-ইউরোপস

[সৌজন্যে]

Map: Mountain High Maps® Copyright © 1997 Digital Wisdom, Inc.

Colonnade: Michael Nicholson/Corbis

[২৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

রোমীয় মুদ্রায় সম্ভবত অরেলিয়ানের ছবি

[৩০ পৃষ্ঠার চিত্র]

পালমাইরায় সূর্য দেবতার মন্দির

[সজন্যে]

The Complete Encyclopedia of Illustration/J. G. Heck

[৩১ পৃষ্ঠার চিত্র]

রানি জেনোবিয়া তার সৈনিকদের নির্দেশ দিচ্ছেন

[সজন্যে]

Giovanni Battista Tiepolo, Queen Zenobia Addressing Her Soldiers, Samuel H. Kress Collection, Photograph © Board of Trustees, National Gallery of Art, Washington

[২৮ পৃষ্ঠার চিত্র সৌজন্যে]

Detail of: Giovanni Battista Tiepolo, Queen Zenobia Addressing Her Soldiers, Samuel H. Kress Collection, Photograph © Board of Trustees, National Gallery of Art, Washington

    বাংলা প্রকাশনা (১৯৮৯-২০২৬)
    লগ আউট
    লগ ইন
    • বাংলা
    • শেয়ার
    • পছন্দসমূহ
    • Copyright © 2025 Watch Tower Bible and Tract Society of Pennsylvania
    • ব্যবহারের শর্ত
    • গোপনীয়তার নীতি
    • গোপনীয়তার সেটিং
    • JW.ORG
    • লগ ইন
    শেয়ার