“তোমাদের চিত্ত-সঙ্গত আরাধনা”
“তোমরা আপন আপন দেহকে জীবিত, পবিত্র, ঈশ্বরের প্রীতিজনক বলিরূপে উৎসর্গ কর, ইহাই তোমাদের চিত্ত-সঙ্গত আরাধনা।”—রোমীয় ১২:১.
১, ২. বাইবেলের মানকে প্রয়োগ করাকে নতুন ভাষা শেখার সাথে কিভাবে তুলনা করা যায়?
আপনি কি কখনও নতুন ভাষা শেখার চেষ্টা করেছেন? যদি তা করে থাকেন তাহলে নিশ্চয়ই আপনি একমত হবেন যে এটা করা খুবই কঠিন কাজ। নতুন কিছু শব্দ শেখার চাইতেও আরও অনেক কিছু এর সাথে অন্তর্ভুক্ত। ভালভাবে ভাষাটিকে ব্যবহার করার জন্য এর ব্যাকরণকে সঠিকভাবে জানার প্রয়োজন আছে। আপনাকে বুঝতে হবে যে একটি শব্দের সঙ্গে আরেকটি শব্দের কী সম্পর্ক রয়েছে এবং সেগুলি একসাথে কিভাবে একটি চিন্তাধারাকে প্রকাশ করে।
২ ঈশ্বরের বাক্য সম্বন্ধে জ্ঞান নেওয়ার ক্ষেত্রেও ঠিক একই জিনিস প্রযোজ্য। বিশেষ কিছু শাস্ত্রীয় পদগুলি শেখার চাইতেও এর মধ্যে আরও অনেক কিছু অন্তর্ভুক্ত। আমাদেরও রূপক অর্থে বাইবেলের ব্যাকরণ শিখতে হবে। আমাদের উপলব্ধি করতে হবে যে একটি শাস্ত্রের সাথে আরেকটির কী সম্পর্ক এবং কিভাবে এগুলিকে মান হিসাবে আমরা দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োগ করতে পারি। এই ভাবে আমরা “সমস্ত সৎকর্ম্মের জন্য সুসজ্জীভূত” হতে পারব।—২ তীমথিয় ৩:১৭.
৩. ঈশ্বরের পরিচর্যার ক্ষেত্রে, ৩৩ সা.শ.-তে কি ধরনের পরিবর্তন হয়?
৩ মোশির নিয়মের অধীনে, অনেক ক্ষেত্রে সূক্ষ্মভাবে ব্যখ্যা করা নিয়মগুলিকে কঠোরভাবে পালন করার মাধ্যমে বিশ্বস্ততার পরিচয় দেওয়া হত। সা.শ. ৩৩ সালে, কিন্তু যিহোবা নিয়মকে মুছে দেন, বস্তুতপক্ষে “প্রেক দিয়া ক্রুশে লটকাইয়া দূর করিয়া দিয়াছেন” বিশেষকরে যার উপর তাঁর পুত্রকে হত্যা করা হয়েছিল। (কলসীয় ২:১৩, ১৪) এর পরে, ঈশ্বরের লোকেদের আর বিভিন্ন বলিদান এবং নিয়ম পালন করার জন্য কোন সুবৃহৎ তালিকা দেওয়া হয়নি। বরঞ্চ তাদের বলা হয়েছিল: “তোমরা আপন আপন দেহকে জীবিত, পবিত্র, ঈশ্বরের প্রীতিজনক বলিরূপে উৎসর্গ কর, ইহাই তোমাদের চিত্ত-সঙ্গত আরাধনা।” (রোমীয় ১২:১) হ্যাঁ, খ্রীষ্টানদের উচিত ঈশ্বরের কাজে নিজেদের সমস্ত হৃদয়, প্রাণ, মন ও শক্তি উৎসর্গ করা। (মার্ক ১২:৩০; তুলনা করুন গীতসংহিতা ১১০:৩) কিন্তু “তোমাদের চিত্ত-সঙ্গত আরাধনা” করার অর্থ কী?
৪, ৫. নিজেদের যুক্তি ক্ষমতাকে ব্যবহার করার দ্বারা যিহোবাকে সেবা করার অন্তর্ভুক্ত কী?
৪ “চিত্ত-সঙ্গত” এই অভিব্যক্তিটি গ্রীক্ শব্দ লোজিকস থেকে অনুবাদ করা হয়েছে, যার মানে হল “যুক্তিসম্পন্ন” অথবা “বুদ্ধিমান।” ঈশ্বরের লোকেদের বলা হয়েছে যে তারা যেন বাইবেল-ভিত্তিক সংবেদের ব্যবহার করে। বিভিন্ন ধরনের পূর্বনির্ধারিত নিয়মগুলির উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত না নিয়ে তারা যেন বাইবেলের মানগুলিকে বিচক্ষণতার সাথে বিবেচনা করে দেখে। বাইবেলের “ব্যাকরণ”, অথবা এর মানগুলি একে অপরের সাথে কিভাবে সম্পর্কযুক্ত এ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করার প্রয়োজন তাদের রয়েছে। এইভাবে তারা তাদের যুক্তিগত ক্ষমতার সাহায্যে ভারসাম্যমূলক সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।
৫ এর মানে কি এই যে খ্রীষ্টানদের কোন নিয়ম নেই? অবশ্যই না। খ্রীষ্টীয় গ্রীক শাস্ত্র স্পষ্টভাবে প্রতিমাপূজা, যৌন অনৈতিকতা, খুন করা, মিথ্যা কথা বলা, ভুতুড়িয়া, রক্তের অপব্যবহার ইত্যাদি আরও নানাধরনের পাপ করতে নিশেধ করে। (প্রেরিত ১৫:২৮, ২৯; ১ করিন্থীয় ৬:৯, ১০; প্রকাশিত বাক্য ২১:৮) তবুও, ইস্রায়েলের ক্ষেত্রে যতটা না প্রয়োজন ছিল তার চাইতেও অনেক বেশি প্রয়োজন যে আমরা যেন আমাদের যুক্তি করার ক্ষমতাকে অবশ্যই ব্যবহার করি এবং বাইবেলের মানগুলিকে প্রয়োগ করি। নতুন ভাষাকে রপ্ত করার মতোই, এর জন্য প্রয়োজন হয় সময় ও প্রচেষ্টার। কিভাবে আমরা আমাদের এই যুক্তির ক্ষমতাকে গড়ে তুলতে পারি?
আপনার যুক্তি করার ক্ষমতাকে গড়ে তুলুন
৬. বাইবেল অধ্যয়নের অন্তর্ভুক্ত কী?
৬ প্রথমত, আমাদের বাইবেলের আন্তরিক ছাত্র হতে হবে। ঈশ্বরের অনুপ্রাণিত বাক্য “শিক্ষার, অনুযোগের, সংশোধনের, ধার্ম্মিকতা সম্বন্ধীয় শাসনের নিমিত্ত উপকারী।” (২ তীমথিয় ৩:১৬) আমাদের কখনই সবসময় আশা করা উচিত নয় যে একটি মাত্র বাইবেল পদের মধ্যে সমস্যার উত্তর পাওয়া যাবে। বরঞ্চ, আমাদের হয়ত বিভিন্ন শাস্ত্র পদগুলির উপর যুক্তি করতে হতে পারে যেগুলি সেই নির্দিষ্ট পরিস্থিতি বা সমস্যার উপর আলোকপাত করে। সেই বিষয়ের উপর ঈশ্বরের চিন্তাধারাকে আমাদের গভীরভাবে খুঁজে বার করতে হবে। (হিতোপদেশ ২:৩-৫) আমাদের বিষয়টিকে বোঝারও প্রয়োজন আছে, কারণ “জ্ঞানবান শুনিবে ও পান্ডিত্যে বৃদ্ধি পাইবে।” (হিতোপদেশ ১:৫) একজন জ্ঞানবান ব্যক্তি কোন একটি বিশেষ বিষয়কে আলাদা করে দেখতে পারে এবং এর সাথে অপরের সম্পর্ককে উপলব্ধি করতে পারে। জিগসো ধাঁধাঁর মতো সে বিভিন্ন অংশগুলিকে একসাথে রাখে এবং তারপর সে সম্পূর্ণ চিত্রটি দেখার চেষ্টা করে।
৭. শাসনের ক্ষেত্রে কিভাবে পিতামাতারা বাইবেলের মান সম্বন্ধে যুক্তি করতে পারে?
৭ উদাহরণস্বরূপ, পিতা-মাতা হওয়ার বিষয়টি চিন্তা করুন। হিতোপদেশ ১৩:২৪ পদ বলে যে, যে পিতা তার পুত্রকে ভালবাসে “সে সযত্নে শাস্তি দেয়।” শুধুমাত্র বাহ্যিকভাবে যদি আমরা এটিকে দেখি, তাহলে এই শাস্ত্র পদটিকে ভুলভাবে প্রয়োগ করা যেতে পারে এটা বুঝানোর জন্য যে কঠোর শাস্তি দেওয়া বাঞ্ছনীয়। তথাপি কলসীয় ৩:২১ পদ একটি ভারসাম্যমূলক উপদেশ দেয়: “পিতারা, তোমরা আপন আপন সন্তানদিগকে ক্রুদ্ধ করিও না, পাছে তাহাদের মনোভঙ্গ হয়।” পিতামাতারা যারা তাদের যুক্তির ক্ষমতাকে ব্যবহার করে এবং এই মানগুলির সাথে তার সামঞ্জস্য বজায় রাখে তারা কখনও এমন শাসনের আশ্রয় নেবে না যাকে “অপব্যবহার” বলা যেতে পারে। তারা তাদের সন্তানদের প্রতি ভালবাসা, সহানুভূতি এবং সম্মানসূচক ব্যবহার প্রকাশ করবে। (ইফিষীয় ৬:৪) অতএব, পিতামাতা হিসাবে অথবা অন্য যে কোন বিষয়ই হোক না কেন, যার সাথে বাইবেলের মানগুলি জড়িত আছে, সেগুলির সাথে অন্যান্য সম্পর্কিত বিষয়গুলিকে বিবেচনা করার মাধ্যমে আমরা আমাদের যুক্তি করার ক্ষমতাকে গড়ে তুলতে পারি। এইভাবে আমরা বাইবেলের যে মানগুলি রয়েছে তার “ব্যাকরণ”-কে রপ্ত করতে পারব, অর্থাৎ বুঝতে পারব যে ঈশ্বরের সঙ্কল্প কী এবং তা কিভাবে সম্পাদন করা যায়।
৮. আমোদপ্রমোদের ক্ষেত্রে কিভাবে আমরা কঠোর ও বদ্ধমূল ধারনাগুলিকে এড়িয়ে যেতে পারি?
৮ দ্বিতীয় উপায় যার মাধ্যমে আমরা আমাদের যুক্তি করার ক্ষমতাকে গড়ে তুলতে পারি তাহল কঠোর ও বদ্ধমূল ধারনা গ্রহণকে এড়িয়ে চলার দ্বারা। অটল দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের যুক্তি করার যে ক্ষমতা তার বৃদ্ধিকে ব্যাহত করতে পারে। আমোদপ্রমোদের বিষয়টি চিন্তা করুন। বাইবেল জানায়: “সমস্ত জগৎ সেই পাপাত্মার মধ্যে শুইয়া রহিয়াছে।” (১ যোহন ৫:১৯) এর মানে কি এই যে সমস্ত বই, সিনেমা অথবা টেলিভশনের অনুষ্ঠান যা জগতের দ্বারা প্রকাশিত হয় সেগুলি দূষিত ও পৈশাচিক? এই ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি একেবারেই যুক্তিসঙ্গত নয়। অবশ্য, কিছু ব্যক্তি হয়ত নিজেদের এই ধরনের টেলিভিশন, সিনেমা অথবা জাগতিক বইয়ের থেকে আলাদা রাখার চেষ্টা করবে। এটা হচ্ছে তাদের অধিকার এবং এই নিয়ে তাদের সম্বন্ধে সমালোচনা করা উচিত নয়। কিন্তু তারাও যেন অপরকে এই ধরনের কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য চাপ না দেয়। সমিতির দ্বারা প্রকাশিত প্রবন্ধের মধ্যে বাইবেলের মানগুলি দেওয়া রয়েছে যা আমাদের সাহায্য করতে পারে আরাম ও আমোদপ্রমোদের ক্ষেত্রে সঠিক বাছাই করতে। এই মানগুলিকে অগ্রাহ্য করে নিজেদের জগতের যে আমোদপ্রমোদ অর্থাৎ অনৈতিক চিন্তাধারা, অতিরিক্ত অপরাধ অথবা ভুতুড়িয়া কার্যকলাপের মধ্যে জড়িয়ে ফেলা হবে অত্যন্ত মূর্খামী। প্রকৃতপক্ষে, আমোদপ্রমোদের ক্ষেত্রে সঠিক নির্ণয় নেওয়ার জন্য আমাদের প্রয়োজন যুক্তি করার ক্ষমতাকে ব্যবহার করা যাতে করে বাইবেলের মানগুলিকে আমরা প্রয়োগ করতে পারি এবং ঈশ্বর ও মানুষের সম্মুখে আমাদের পরিষ্কার সংবেদ থাকে।—১ করিন্থীয় ১০:৩১-৩৩.
৯. “সূক্ষ্মচৈতন্য” বলতে কী বুঝানো হয়?
৯ আজকের অধিকাংশ আমোদপ্রমোদ খ্রীষ্টানদের পক্ষে উপযোগী নয়।a অতএব আমাদের এমনভাবে হৃদয়কে প্রশিক্ষণ দিতে হবে যাতে তা “দুষ্টতাকে ঘৃণা” করে এবং আমরা যেন প্রথম শতাব্দীর কিছু লোকের মত না হয়ে পড়ি যারা “চিত্তে অন্ধীভূত” হয়ে পড়েছিল। (গীতসংহিতা ৯৭:১০; ইফিষীয় ৪:১৭-১৯) এই সব বিষয়ের উপর যুক্তি করার জন্য আমাদের “তত্ত্বজ্ঞানে ও সর্ব্বপ্রকার সূক্ষ্মচৈতন্যে” পরিপূর্ণ হওয়ার প্রয়োজন আছে। (ফিলিপীয় ১:৯) যে গ্রীক শব্দটি “সূক্ষ্মচৈতন্য” হিসাবে অনুবাদিত হয়েছে তার অর্থ হল “তীক্ষ্ণ নৈতিক পর্যবেক্ষণ।” এই শব্দটি আক্ষরিকভাবে মানুষের ঈন্দ্রানুভূতিকে বুঝাচ্ছে, যেমন তার দৃষ্টি। অতএব যখন আমোদপ্রমোদ অথবা অন্য কোন বিষয় উত্থাপিত হয় যেখানে ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন হয়ে পড়ে, তখন আমাদের নৈতিক মূল্যবোধ যেন এমনভাবে নিবদ্ধ হয় যাতে করে আমরা কেবলমাত্র যা স্পষ্ট বিষয় সেটিকেই না দেখি কিন্তু তারই সাথে অস্পষ্ট বিষয়গুলির প্রতিও যেন আমাদের দৃষ্টি না এড়ায়। একই সাথে অযৌক্তিকভাবে আমরা যেন বাইবেলের যে মান তার প্রয়োগকে এড়িয়ে চলি এবং অন্য ভাইদের যেন এই একই জিনিস করার জন্য চাপ না দিই।—ফিলিপীয় ৪:৫.
১০. গীতসংহিতা ১৫ অধ্যায়ে বর্ণিত যিহোবার ব্যক্তিত্ত্বকে আমরা কিভাবে বুঝতে পারব?
১০ তৃতীয় উপায় যার মাধ্যমে আমরা আমাদের যুক্তি করার ক্ষমতাকে গড়ে তুলতে পারি তা হল যিহোবার চিন্তাধারাকে উপলব্ধি করা এবং তা গভীরভাবে হৃদয়ের মধ্যে গেঁথে তোলা। তাঁর বাক্যের মধ্যে যিহোবা তাঁর ব্যক্তিত্ব ও মানগুলিকে প্রকাশ করেছেন। উদাহরণস্বরূপ, গীতসংহিতা ১৫ অধ্যায়ে আমরা পড়ি যে কিধরনের ব্যক্তিকে যিহোবা তাঁর তাঁবুতে অতিথি হিসাবে আহ্বান করবেন। সে এমন ধরনের ব্যক্তি হবে যে ধার্মিকতার অনুশীলন করে, হৃদয়ে সর্বদা সত্য কথা বলে, প্রতিজ্ঞা করার প্রতি বিশ্বস্ততা বজায় রাখে এবং কখনও স্বার্থপরভাবে অপরের সুযোগ নেয় না। এই গীতটি পড়ার সময় নিজেকে প্রশ্ন করুন, ‘এই গুণগুলি কি আমার মধ্যে আছে? যিহোবা কি তাঁর তাঁবুতে আমাকে অতিথি হিসাবে আমন্ত্রণ জানাবেন?’ আমাদের বিচক্ষণ আরও বেশি দৃঢ় হয়ে ওঠে যখন আমরা যিহোবার পথ ও চিন্তাধারার সাথে নিজেদের মানিয়ে নি।—হিতোপদেশ ৩:৫, ৬; ইব্রীয় ৫:১৪.
১১. ফরীশীরা কিভাবে “ন্যায়বিচার ও ঈশ্বর-প্রেম উপেক্ষা” করেছিল?
১১ এই বিশেষ ক্ষেত্রে ফরীশীরা সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছিল। ফরীশীরা নিয়মের শিল্পগত কাঠামোটি বুঝতে পেরেছিল কিন্তু তার “ব্যাকরণটি” বুঝতে পারেনি। তারা নিয়মের খুঁটিনাটি মুখস্থ বলতে পারত কিন্তু এর পিছনে যে ব্যক্তিত্ব ছিল তাকে বুঝতে পারিনি। যীশু তাদের বলেছিলেন: “তোমরা পোদিনা, আরুদও সকল প্রকার শাকের দশমাংশ দান করিয়া থাক, আর ন্যায় বিচার ও ঈশ্বর-প্রেম উপেক্ষা করিয়া থাক!” (লূক ১১:৪২) তাদের কঠোর মন ও কঠিন হৃদয় থাকার দরুন ফরীশীরা তাদের যুক্তি করার ক্ষমতাকে ব্যবহার করতে ব্যর্থ হয়েছিল। তাদের অসম যুক্তিধারা প্রকাশ পায় যখন তারা যীশুর শিষ্যদের বিশ্রামবারে শস্য ছেঁড়া ও তা খাওয়ার জন্য সমালোচনা করে; অথচ যখন তারা যীশুকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে চক্রান্ত করে তখন তাদের সংবেদ এতটুকু দংশায় নি!—মথি ১২:১,২, ১৪.
১২. ব্যক্তি হিসাবে যিহোবার সাথে আমরা কিভাবে অতিরিক্তরূপে পরিচিত হতে পারি?
১২ আমরা ফরীশীদের থেকে আলাদা হতে চাই। ঈশ্বরের বাক্য সম্বন্ধে আমাদের যে জ্ঞান তা যেন আমাদের অবশ্যই সাহায্য করে যিহোবাকে ব্যক্তি হিসাবে তাঁর সাথে আরও ভালভাবে খাপ খাইয়ে নিতে। এটা আমরা কিভাবে করতে পারি? বাইবেল অথবা বাইবেল-ভিত্তিক সাহিত্যের কিছু অংশ পড়ার পর, অনেকে উপকৃত হয়েছে যখন তার এই প্রশ্নগুলি নিয়ে চিন্তা করেছে যেমন, ‘এই তথ্যটি যিহোবা এবং তাঁর গুণাবলী সম্বন্ধ আমাকে কী শিখায়? অপরের সাথে ব্যবহারের ক্ষেত্রে কি করে আমি যিহোবার এই গুণগুলিকে প্রতিফলিত করতে পারি?’ এই প্রশ্নগুলির উপর ধ্যান আমাদের মধ্যে যুক্তি করার ক্ষমতাকে গড়ে তুলবে এবং আমাদের সাহায্য করবে “ঈশ্বরের অনুকারী” হতে।—ইফিষীয় ৫:১.
ঈশ্বর ও খ্রীষ্টের দাস, মানুষের নয়
১৩. কিভাবে নৈতিক নির্দেশদাতাদের মতো ফরীশীরা কাজ করেছিল?
১৩ প্রাচীনদের উচিত, যারা তাদের অধীনে আছে, তাদের যুক্তি করার ক্ষমতাকে ব্যবহার করতে দেওয়া। মণ্ডলীর সদস্যেরা মানুষের দাস নয়। “যদি এখনও মানুষকে সন্ত্তষ্ট করিতাম,” পৌল লেখেন, “তবে খ্রীষ্টের দাস হইতাম না।” (গালাতীয় ১:১০; কলসীয় ৩:২৩, ২৪) এর বিপরীতে, ফরীশীরা চাইত লোকেরা যেন বিশ্বাস করে যে ঈশ্বরের চাইতে মানুষের অনুমোদন পাওয়া অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। (মথি ২৩:২-৭; যোহন ১২:৪২, ৪৩) ফরীশীরা নৈতিক নির্দেশ দাতার ভূমিকাটি গ্রহণ করেছিল যারা নিজস্ব নিয়মগুলিকে আবিষ্কার করত এবং একজন কতটা সঠিকভাবে তা পালন করছে তার ভিত্তিতে তাকে বিচার করত। যারা ফরীশীদের অনুকরণ করত তাদের বাইবেল-ভিত্তিক যে সংবেদ তা দুর্বল হয়ে গিয়েছিল এবং বস্তুতপক্ষে তারা মনুষ্যের দাস হয়ে পড়েছিল।
১৪, ১৫. (ক) প্রাচীনের কিভাবে দেখাতে পারে যে তারা মেষেদের সহকর্মী? (খ) সংবেদের বিষয়টি প্রাচীনেরা কিভাবে দেখবেন?
১৪ আজকে যারা খ্রীষ্টীয় প্রাচীন তারা জানে যে মেষেরা প্রধানত তাদের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য নয়। প্রত্যেক খ্রীষ্টানের উচিত তাদের নিজস্ব ভারকে বহন করা। (রোমীয় ১৪:৪; ২ করিন্থীয় ১:২৪; গালাতীয় ৬:৫) এটাই হওয়া উচিত। যদি মেষেদের সদস্যেরা মানুষের দাস হয় এবং কেবলমাত্র তারা যা বলছে তাই করে, তাহলে তারা কী করবে যখন সেই সব ব্যক্তিরা তাদের কাছে থাকবে না? ফিলিপীয়দের জন্য আনন্দ করার কারণ পৌলের ছিল: “তোমরা সর্ব্বদা যেমন আজ্ঞাবহ হইয়া আসিতেছ, তেমনি আমার সাক্ষাতে যেরূপ কেবল সেইরূপ নয়, বরং এখন আরও অধিকতররূপে আমার অসাক্ষাতে, সভয়ে ও সকম্পে আপন আপন পরিত্রাণ সম্পন্ন কর।” তারা প্রকৃত পক্ষে খ্রীষ্টের দাস ছিল, পৌলের নয়।—ফিলিপীয় ২:১২.
১৫ সংবেদের ক্ষেত্রে, তাই, প্রাচীনেরা, যারা তাদের অধীনে রয়েছে তাদের হয়ে কোন সিদ্ধান্ত নেয় না। তারা বাইবেলের মানটি যা এই বিষয়টির সাথে অন্তর্ভুক্ত তা বুঝিয়ে দেয় এবং যে ব্যক্তিবিশেষেরা এর সাথে যুক্ত তাদের তারা উৎসাহ দেয় সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে নিজেদের যুক্তি করার ক্ষমতাকে ব্যবহার করতে। এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব, কিন্তু তবুও এটি এমন একটা জিনিস যা ব্যক্তিবিশেষকেই বহন করতে হবে।
১৬. সমস্যার সমাধান করার জন্য ইস্রায়েলে কি ধরনের নিয়ম ছিল?
১৬ সেই সময়ের কথা চিন্তা করুন যখন যিহোবা ইস্রায়েলেদর পথপ্রদর্শক হিসাবে বিচারকদের ব্যবহার করেছিলেন। বাইবেল আমাদের জানায়: “তৎকালে ইস্রায়েলের মধ্যে রাজা ছিল না; যাহার দৃষ্টিতে যাহা ভাল বোধ হইত, সে তাহাই করিত।” (বিচারকর্ত্তৃগণ ২১:২৫) তবুও পরিচালনার ক্ষেত্রে তাঁর লোকেদের জন্য যিহোবা সাহায্য যুগিয়েছিলেন। প্রত্যেকটি শহরের মধ্যে প্রাচীন ব্যক্তি ছিল যারা প্রশ্ন ও সমস্যার সম্বন্ধে অভিজ্ঞতার সাথে সাহায্য দিতে পারত। তাছাড়াও, লেবীয় পুরোহিতেরা লোকেদের, ঈশ্বরের নিয়ম সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়ার দ্বারা উত্তম এক শক্তি হিসাবে কাজ করত। যখন বিশেষ কোন সংকটময় পরিস্থিতির উদ্ভব হত, তখন প্রধান পুরোহিত ইউরিম ও থামিমের মাধ্যমে ঈশ্বরের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারত। শাস্ত্রের প্রতি অন্তর্দৃষ্টি (ইংরাজি) নামক বইটি মন্তব্য করে: “যে ব্যক্তিবিশেষেরা এই ব্যবস্থাটিকে গ্রহণ করত, যারা ঈশ্বরের নিয়ম সম্বন্ধে জ্ঞান নিত ও তা প্রয়োগ করত, তাদের সংবেদ সাধারণত সঠিকভাবে পরিচালিত হত। সেই ক্ষেত্রে তার পক্ষে ‘নিজের দৃষ্টিতে যা ভাল তা করার’ ফল খারাপ হত না। যিহোবা লোকেদের সুযোগ দিয়েছিলেন ইচ্ছা বা অনিচ্ছাকৃত মনোভাব পোষণ করতে এবং সেই অনুসারে কাজ করতে।”—খন্ড ২, পৃষ্ঠা ১৬২-৩.b
১৭. কিভাবে প্রাচীনেরা দেখাতে পারে যে তারা নিজেদের নয় কিন্তু ঈশ্বরের মান অনুসারে উপদেশ দিচ্ছে?
১৭ ইস্রায়েলীয় বিচারক ও পুরোহিতদের মতো, মণ্ডলীর প্রাচীনেরাও সমস্যার মোকাবিলা করার জন্য অভিজ্ঞতার সাথে সাহায্য এবং মূল্যবান উপদেশ দিয়ে থাকে। এক এক সময় তারা ‘সম্পূর্ণ সহিষ্ণুতা ও শিক্ষাদান-পূর্ব্বক অনুযোগ, ভর্ৎসনা, চেতনা’ দিয়ে থাকে। (২ তীমথিয় ৪:২) এটা তারা করে থাকে নিজেদের নয় বরং ঈশ্বরের মান অনুসারে। এটা কতই না কার্যকারী হতে পারে যখন প্রাচীনেরা হৃদয়কে স্পর্শ করতে চেষ্টা করার ক্ষেত্রে এক উত্তম উদাহরণ স্থাপন করে!
১৮. হৃদয়কে স্পর্শ করা প্রাচীনদের জন্য বিশেষকরে কেন কার্যকারী?
১৮ হৃদয় হচ্ছে আমাদের খ্রীষ্টীয় কার্যকলাপের “ইন্জিন”। অতএব বাইবেল আমাদের বলে: “কেননা তাহা হইতে জীবনের উদ্গম হয়।” (হিতোপদেশ ৪:২৩) প্রাচীনেরা যারা হৃদয়কে উদ্দীপিত করে, তারা দেখতে পায় যে মণ্ডলীতে যারা আছে তারা তাদের সাধ্যমত ঈশ্বরের কাজ করার জন্য অনুপ্রাণিত হয়। তারা অপরের দ্বারা প্ররোচিত হয়ে নয় কিন্তু নিজের থেকেই তা শুরু করবে। যিহোবা জোর করে বাধ্যতা চান না। তিনি সেরকম বাধ্যতাই চান যা প্রেমপূর্ণ হৃদয় থেকে আসে। এই ধরনের হৃদয়ের দ্বারা-অনুপ্রাণিত কাজকে প্রাচীনেরা উৎসাহ দেন এবং মেষেদের সাহায্য করে তাদের নিজস্ব যুক্তি করার ক্ষমতাকে গড়ে তুলতে।
“খ্রীষ্টের মন” গড়ে তোলা
১৯, ২০. খ্রীষ্টের মনকে গড়ে তোলা কেন আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ?
১৯ শুধুমাত্র ঈশ্বরের নিয়মকে জানাই যথেষ্ট নয়। “আমাকে বিবেচনা দেও,” গীতরচক নিবেদন করেন, “সর্বান্তঃকরণে তাহা পালন করিব।” (গীতসংহিতা ১১৯:৩৪) যিহোবা তাঁর বাক্যে “খ্রীষ্টের মন”-কে প্রকাশ করেছেন। (১ করিন্থীয় ২:১৬) নিজের যুক্তি করার ক্ষমতাকে ব্যবহার করার দ্বারা যিহোবাকে সেবা করার ক্ষেত্রে, যীশু আমাদের জন্য এক উত্তম আদর্শ রেখে গেছেন। তিনি ঈশ্বরের নিয়ম ও মানকে বুঝতে পেরেছিলেন এবং তা নিখুঁতভাবে প্রয়োগ করেছিলেন। তাঁর আদর্শ সম্বন্ধে চিন্তা করার দ্বারা আমরা ‘সেই প্রশস্ততা, দীর্ঘতা, উচ্চতা ও গভীরতা কি, এবং জ্ঞানাতীত যে খ্রীষ্টের প্রেম তা জানতে সমর্থ হব।’ (ইফিষীয় ৩:১৭-১৯) হ্যাঁ, বাইবেল থেকে আমরা যীশু সম্বন্ধে যা শিখি তা শিক্ষাগত জ্ঞানের চাইতেও আরও অনেক বেশি; এটি আমাদের পরিষ্কারভাবে জানায় যে যিহোবা নিজে কিধরনের ব্যক্তি।—যোহন ১৪:৯, ১০.
২০ সুতরাং, যখন আমরা ঈশ্বরের বাক্য অধ্যয়ন করি, তখন আমরা কোন একটি বিষয়ের উপর যিহোবার চিন্তাধারাকে উপলব্ধি করতে পারি এবং একটি ভারসাম্যমূলক সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারি। এরজন্য প্রচেষ্টার প্রয়োজন হবে। আমাদের ঈশ্বরের বাক্যের এক মনযোগী ছাত্র হতে হবে এবং যিহোবার ব্যক্তিত্ব ও মান সম্বন্ধে অনুভূতিশীল হতে হবে। আমরা যেন রূপক অর্থে এক নতুন ব্যাকরণ শিখছি। তবুও, যারা তা করে তারা পৌলের এই উপদেশটিকে মেনে চলবে যেখানে তিনি বলেন “আপন আপন দেহকে জীবিত, পবিত্র, ঈশ্বরের প্রীতিজনক বলিরূপে উৎসর্গ কর, ইহাই তোমাদের যুক্তি-সঙ্গত আরাধনা।”—রোমীয় ১২:১.
[পাদটীকাগুলো]
a সেই সব আমোদপ্রমোদগুলি যার মধ্যে পৈশাচিক, অনৈতিক অথবা বিকৃত যৌন বিষয়বস্তু রয়েছে এমনকি তথাকথিত সেই সব পারিবারিক আমোদপ্রমোদগুলি যা এমন কিছু বিষয়কে প্রশ্রয় দেয় যা খ্রীষ্টানদের পক্ষে অনুমোদন যোগ্য নয় এগুলিকে অবশ্যই এড়িয়ে চলতে হবে।
b ওয়াচটাওয়ার বাইবেল অ্যান্ড ট্র্যাক্ট সোসাইটি অফ নিউইয়র্ক ইন্ক দ্বারা প্রকাশিত।
আপনি কী শিখলেন?
◻ সা.শ. ৩৩ সালে ঈশ্বরের পরিচর্যার ক্ষেত্রে কোন্ পরিবর্তন আসে?
◻ আমরা আমাদের যুক্তি করার ক্ষমতাকে কিভাবে গড়ে তুলতে পারি?
◻ কিভাবে প্রাচীনেরা মেষেদের সাহায্য করতে পারে ঈশ্বরের ও খ্রীষ্টের দাস হতে?
◻ “খ্রীষ্টের মন” কেন আমাদের গড়ে তোলা উচিত?
[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]
প্রাচীনেরা অপরকে সাহায্য করে নিজেদের যুক্তি করার ক্ষমতাকে ব্যবহার করতে